Posts

Showing posts from February, 2013

শরীরের ভাষা

জে এন ইউ তে গিয়ে যে কত কিছু নতুন শিখেছিলাম, এখনও ভাবতে গেলে মাথা ঘুরে যায়। একুশ বছর ধরে মা যেসব জিনিস বকেঝকে, আদর করে শিখিয়েছিলেন, সেগুলো আনলার্ন করে আবার নতুন করে শিখতে ঘাম ছুটে গিয়েছিল। মা শিখিয়েছিলেন, যখন হাঁটবে তখন খেয়াল রাখবে প্রতিবার পা তোলা আর ফেলার মাঝে যেন চটিটা রাস্তা থেকে পুরোটা উঠে আসে। তুমি চলেছ আর তোমার চটির গোড়ালি রাস্তা ঘষটাতে ঘষটাতে বীভৎস খ্যাস্‌খ্যাস্‌ আওয়াজ করে চলেছে, ও রকম হাঁটার থেকে না-হাঁটা ভালো। আরও শিখিয়েছিলেন, দাঁড়ানোর সময় সোজা হয়ে দাঁড়াবে, হাতের কাছে গাছ কিংবা দেওয়াল পেলেই কেষ্টঠাকুরের মতো এলিয়ে পড়বে না। বসার সময়ও নিজের মেরুদণ্ডের ওপর ভরসা করবে, পাশের লোকের গায়ের ওপর গা ঢেলে দেবে না। কথা বলা নিয়েও আমার মায়ের ছুঁৎমার্গ তুঙ্গে ছিল। ‘প্রতিবেশী’র ‘প্র’, ‘কর্তৃপক্ষ’র ‘র্তৃ’ স্পষ্ট শোনা না গেলে কিংবা ‘অনুস্বর’কে ‘উনস্বর’ বলে চালাতে গেলে আমার মা প্রায় মূর্ছিত হয়ে পড়তেন। শুনেটুনে তীর্থদা আমার ছোটবেলাটার ওপর ভীষণ করুণা দেখিয়ে বলল, “তোর মা তো মা কম, মুসোলিনি বেশি মনে হচ্ছে।” আমি “তবেই বোঝো” মুখ করে কাঁচুমাচু হয়ে বসে রইলাম আর তীর্থদা হাত

লিংকন না কাই পো চে?

Image
উৎস গুগল ইমেজেস গত সপ্তাহে আমি একটা অত্যাধুনিক গান শোনার যন্ত্র উপহার পেয়েছি। ওই যে যেসব যন্ত্রগুলো কানে গুঁজে চললে পৃথিবীর বাকি লোকের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা যায়, চেনাঅচেনা কারও চোখের দিকে তাকাতে হয় না, চোখেমুখে বেশ একটা কঠিন কুলনেস ফুটিয়ে চলাফেরা করা যায়, এবং আনমনা হয়ে বড়রাস্তা পার হওয়ার সময় গাড়িচাপা পড়ে মরবার সমস্ত রাস্তা পরিষ্কার হয়, সেই রকম একটা যন্ত্র। খুশিতে ডগমগ হয়ে হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা যেই নিয়েছি, দোকানদার বললেন, “ওহো দাঁড়ান দাঁড়ান, এর সঙ্গে একটা ফ্রি জিনিসও তো আছে।” আমি রুদ্ধশ্বাসে ফ্রি জিনিসটার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। আসলের থেকে সুদের আদর সবসময়েই বেশি। দোকানি ড্রয়ার খুলে ক্রেডিট কার্ডের মতো দেখতে কী একটা জিনিস বার করে আমার হাতে গুঁজে দিলেন। খুলে দেখি সেটা পি ভি আর সিনেমার একটা পাঁচশো টাকার কুপন। আনন্দে আমার শুধু নাচতে বাকি ছিল। সিনেমা দেখতে আমার ভীষণ ভালোলাগে । আর তার থেকেও বেশি ভালোলাগে হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে। শেরাটনে খাওয়া নয়, ব্যাংকক পাটায়া ঘোরা নয়, ফেসবুক খুঁজেখুঁজে সৃজিত-চন্দ্রিল-সুমন-রূপমকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট প

সমত্বদর্শন

Image
উৎস

জোলার গল্প

-মা, একটা গল্প বল না। -এক দেশে মালতী নামের এক মেয়ে ছিল। -না না, মালতীর গল্প বিচ্ছিরি, অন্য গল্প বল। -আচ্ছা, এক দেশে দুই বন্ধু ছিল। তাদের একজনের নাম সেরিবা আর আরেকজনের নাম সেরিবান। -তারা মাথায় ঝুড়ি চাপিয়ে বাসনকোসন ফেরি করে বেড়াত, আর সেরিবা যেমন বদমাশ ছিল, সেরিবান তেমন ভালো লোক ছিল। ও গল্পটাও আমার মুখস্থ আছে। নতুন গল্প বল। -উম্‌ম্‌ম্‌, আচ্ছা শোন্‌। অনেককাল আগে এক দেশে এক বোকা জোলা ছিল। -জোলা কী? -মুসলমান তাঁতিকে জোলা বলে। এটাও জানিস না? রামোঃ। -আচ্ছা আচ্ছা, তারপর সেই জোলার কী হল বল। -জোলা একদিন বনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে... -কোথায়? -সে আমি কী জানি, যাচ্ছে কোথাও একটা। হয়তো মহাজনের থেকে টাকা ধার নিয়েছিল, শোধ দিতে যাচ্ছে। কিংবা রাজবাড়িতে রানিমার মসলিন শাড়ির অর্ডার সাপ্লাই দিতে যাচ্ছে। -তারপর? -বন বেশি বড়ও নয়, আবার বেশি ছোটও নয়। এই ধর্‌ মাঝারি সাইজের। হেঁটে পেরোতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। জোলা সেদিন সকালে উঠে বউকে বলল, “বউ, আমাকে কয়েকটা পিঠে বানিয়ে দিয়ো তো, যদি পথে যেতে যেতে খিদে পায় তো গাছের তলায় আরাম করে বসে খাব।” বউ আকাশ থেকে পড়ে বলল, “ওমা, এইটুকু

The Oscars 2013: Best Picture Nominees as Pie Charts

Image
উৎস

Dis or Dat

Image
অজর না অমরঃ অজর কিনলে না বিসলেরিঃ বিসলেরি দুরন্ত না রাজধানীঃ রাজধানী টাইগার না পার্লে জিঃ পার্লে জি পিং না ফোন কলঃ ফোন কল পাখির খাঁচা না অ্যাকোয়ারিয়ামঃ হুম্‌ম্‌, অ্যাকোয়ারিয়াম । আত্মবিশ্বাসী+অ্যারোগ্যান্ট না ভীতু+ভদ্রঃ ভীতু+ভদ্র বোকা বন্ধু না বুদ্ধিমান শত্রুঃ বুদ্ধিমান শত্রু সাইক্লিং না সাঁতারঃ সাইক্লিং সালসা না গুয়াকামোলেঃ সালসা পাণ্ডা না পেঙ্গুইনঃ কুং ফু পাণ্ডা! স্নেক না সলিটেয়ারঃ স্নেক হট না রিচঃ রিচ রিচ না ফেমাসঃ ফেমাস ঝলমলে রিসর্ট না ছমছমে ডাকবাংলোঃ ছমছমে ডাকবাংলো ফিক্সড ডিপোজিট না মিউচুয়্যাল ফান্ডঃ ফিক্সড ডিপোজিট। এস বি আই-এ হলেই সবথেকে ভালো। রিওয়াইন্ড না পজঃ পজ না-ভেবে-বলা না না-বলে-ভাবাঃ না-বলে-ভাবা ভালোবাসার-কাজে-অন্যদের-থেকে-খারাপ-হওয়া না খারাপলাগার-কাজে-অন্যদের-থেকে-ভালো-হওয়াঃ  খারাপলাগার-কাজে-অন্যদের-থেকে-ভালো-হওয়া ডিপ্রেশন না ডায়েরিয়াঃ ডায়েরিয়া গেঁটেবাত না অ্যালজাইমারঃ গেঁটেবাত মহাকাশচারী না ভূ-পর্যটকঃ ভূ-পর্যটক আইটেম সং না ভক্তিগীতিঃ ভক্তিগীতি রোম না প্যার

রোববার

Image

সাপ্তাহিকী

Image
উৎস চাঁদ মানুষ। কালাহারির পাখির বাসা। ভালোবাসা কারে কয়? সাবওয়ে। সারা বিশ্বের আমলারা।   শুধু সার্ফ করলেই চলবে? নিয়মকানুন জানতে হবে না? কী সাংঘাতিক! এ সপ্তাহের গান এই রইল।  কেমন লাগল জানাবেন। সোমবার আবার দেখা হবে। ততদিন ভালো হয়ে থাকবেন। 

এর পরেও যদি আপনার হাই না ওঠে তবে আপনি দেবতা

জিনের খেলা

Image
জিনের খেলা, যতবারই দেখি না কেন, নতুন করে চমকে যাই। ওই লিকপিকে ডি এন এ-র প্যাঁচেপ্যাঁচে যে অতখানি শয়তানি আঁটা থাকতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস হয় না। কিন্তু আজ সকালে অফিসের গেটের মুখে এসে যখন ট্যাক্সিটা ঘ্যাঁচ করে থামল, আর আমি ব্যাগের ভেতর এদিকওদিক হাতড়ে বুঝলাম যে মানিব্যাগটা চুপটি করে বাড়িতে টেবিলের ওপরেই শুয়ে আছে, আমি তাড়াহুড়ো করে ওকে ফেলে রেখে বেরিয়ে যাচ্ছি দেখেও স্রেফ শত্রুতা করেই আমার পিছু ডাকেনি, তখন বিশ্বাস করতেই হল। বিশ্বাস করতে হল যে সময় তিরিশ বছর এগোলেও, রিকশার জায়গায় ট্যাক্সি, রিষড়ার জায়গায় দিল্লি এমনকি শাড়ির জায়গায় স্কিনি জিন্‌স এসে ঘাড়ে চাপলেও---আমি হুবহু আমার মায়ের মেয়ে রয়ে গেছি। আমার মা, নিয়মিত পার্স ভুলে বাড়ি থেকে বেরোতেন, তারপর স্টেশনের পাশে কেষ্টদা’র দোকান থেকে বাসভাড়া ধার নিয়ে অফিস যেতেন। অফিস থেকে ফেরার সময় আবার যোগমায়ামাসির থেকে ফিরতি বাসভাড়া ধার নিতে হত। আমি তো মরমে ট্যাক্সির সিটের সঙ্গে মিশে গেলাম। ট্যাক্সিওয়ালা একে ভীষণ ভদ্র, তার ওপর মুখচেনা। তিনি আমার থেকেও বেশি লজ্জা পেয়ে বললেন, “আরে কোই বাত নেহি ম্যাডাম, শামকো লে লেঙ

শহুরে কুইজের উত্তর

এইখানে। 

শহুরে কুইজ

Image
সিনেমাগ্রাফঃ Jamie Beck শোনো বন্ধু শোনো...প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা... ইতিকথা আমি বলব, শহরের নাম আপনারা বলবেন। রাজি? লেগে পড়ুন। আপনার হাতে সময় আছে মোটে একটা গোটা দিন। এই এখন থেকে শুরু করে কলকাতায় বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা, আর ক্লিভল্যান্ডে বুধবার রাত তিনটে পর্যন্ত। কমেন্টস্‌ ততক্ষণের জন্য আমি পাহারা দেব। অল দ্য বেস্ট। ***** ১. একটি নদী, একটি সবুজ পার্ক, আগুন হাতে একটি সবুজ নারী, পাহারারত দুটি সিংহ—যাদের একটির নাম ধৈর্য, অন্যটির তিতিক্ষা, পাঁচটি বরো, কিং কং। ২. ২০,০০০,০০০ লোক। প্রায় ততগুলোই সাইকেল। এককালে এই শহরের নাম ছিল দাদু। সত্যি বলছি। সিনেমার নামও বলতে হবে? ওকে। বিদায়, পরিচিতা।   ৩. গনগনে আগুন, প্যানপেনে বেহালা। ৪. আকাশভরা মেঘ, মিনারভরা ডানাছাঁটা দাঁড়কাক, কালো ভালুকের চামড়ার টুপি পরা প্রহরী, খুনে নাপিত। ৫. বিপ্লবের জন্মভূমি, দশহাজার ডুবো গাছের গুঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সৌধ, ইতিহাসের দীর্ঘতম অবরোধের সাক্ষী, গভীর রাতের গোধূলি, ক্যাথরিন। ৬. আইনস্টাইনের কোলে বসে ছবি তোলার শখ হয়েছে? তাহলে এই শহরে আসা ছাড়া গতি নেই। ***** সময় শেষ। এই

IQ

Image
উৎস 

Things I am Loving

Image
১. তালাশ সিনেমায় রাম সম্পথের সংগীত। সিনেমাটা হলে গিয়ে দেখেছি, রানি মুখার্জিকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি, লাস্ট সিনে করিনা কাপুরের ভূত মৎস্যকন্যা হয়ে এসে আমির খানের প্রাণদান করছে দেখে হোহো করে হেসেওছি, কিন্তু এতসব করতে গিয়ে গানগুলোর দিকে আর ঠিক করে নজর দেওয়া হয়নি। তারই প্রায়শ্চিত্ত করতে এখন সারাদিনরাত সে গান কানের ভেতর লুপে বাজছে। চেনা লোকেরা আমার আদিখ্যেতা দেখে ঠোঁট বেঁকাচ্ছে। বলছে এর থেকে ভালো কত গান তো হয়েছে হিন্দি সিনেমায়, আরও কত হবে। হয়তো ঠিকই বলছে, কিন্তু আমার এতেই মন মজেছে। রাম সম্পথের নিজের গলায় “লাখ দুনিয়া কহে” আর সোনা মহাপাত্র এবং রবীন্দ্র উপাধ্যায়ের দ্বৈতকণ্ঠে “জিয়া লাগে না” বিশেষ করে ছুঁয়ে গেছে। আপনারা নিশ্চয় গানগুলো শুনে ফেলেছেন, তবুও একটা গানের লিংক নিচে দিলাম। ২. আমাদের পাড়ার দোকানে চায়ের সঙ্গে যে বিস্কুটটা দেয় সেটা। কোনওদিন গোল হয়, কোনওদিনও আয়তাকার কিংবা বর্গক্ষেত্র, কিন্তু প্রত্যেকদিনই সমান ভালো খেতে লাগে। কালোজিরে দেওয়া, ফুসকো মতো। বাড়িতে আরাম করে বসে মহার্ঘ লপচু চায়ের সঙ্গে মহার্ঘতর ব্র্যান্ডেড বিস্কুট খেয়ে যে আরাম হয় না, ওপচানো ডাস্টবিনের

ধ্রুবসত্য

Image
উৎস 

দিল্লি, দার্জিলিং আর উটি

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম দিল্লি হঠাৎ দার্জিলিং হয়ে গেছে। শুধু আজই নয়, কালও দেখেছিলাম, পরশুও। লেপ ঠেলে বেরিয়ে, হাওয়াই চটির বদলে বরফঠাণ্ডা পাথরের মেঝেতে পা দিয়ে আঁতকে উঠে, জানালার পর্দা সরিয়ে, কাঁচভর্তি কুয়াশায় তর্জনী দিয়ে আঁক কেটে ওপারে কাঞ্চনজঙ্ঘার বদলে কেবল পার্কের বটগাছ চোখে পড়ছে। আর কোনও তফাৎ নেই। দিল্লিতে খেপেখেপে বেশ ক’বছর কাটিয়ে অবশেষে আমি শহরটার আবহাওয়ার একটা আন্দাজ করতে পেরেছি। ছ’মাস পাগলের মতো গরম, তিনমাস পাগলের মতো ঠাণ্ডা, আর বাকি তিনমাস বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, বসন্তের একটা জগাখিচুড়ি। ভয়ানক কনফিউসিং, কিন্তু আবার ভীষণ ভালোও। সারাদিন ধরে আমার সব প্রিয় ব্যাপারগুলো ঘটে চলেছে। সকালবেলা মুখ খুললেই গ্যালগেলিয়ে সাদা ধোঁয়া, দুপুরবেলায় কুয়াশাটুয়াশা কেটে গিয়ে মিষ্টি ঝলমলে পুজোপুজো রোদ্দুর---সেই রোদে গা সেঁকতে সেঁকতে কুড়কুড়ে খেতে যে কী মজা---সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফেরার পথে কার্তিক মাসের মানানসই মনখারাপ আর জানালার ওপারে পার্কের কৃষ্ণচূড়া আর পলাশ আর অমলতাসের শাখায় সারাদিনভর নির্ভেজাল বসন্ত। কিন্তু এ রকম আবহাওয়ার খারাপ দিকটা হচ্ছে যে অফিসে যাওয়ার বদলে