Posts

Showing posts from June, 2013

আবার কোলোন

Image
সক্কালসক্কাল একগাদা গোলমাল দিয়ে দিন শুরু হল। চা ফুরিয়ে গেছে। শনিবার ইউটিউব দেখতে গিয়ে বাজারে যাওয়ার সময় হয়নি। রবিবার এখানের সব দোকানপাট বন্ধ। তার মানে আমাকে রবিবার সকাল, রবিবার বিকেল, সোমবার সকাল চা-হীন কাটাতে হবে। এতেও যদি মেজাজ গরম না হয় তবে কীসে হবে? দ্বিতীয় ঝামেলাটা হল টিকিট কাটতে গিয়ে। সারি সারি খাঁ খাঁ টিকিট কাউন্টারের একটার সামনে গিয়ে যেই না বলেছি, আমাকে অনুগ্রহ করে কোলোন শহরের একটা টিকিট দেওয়া হোক, মহিলা পাথরের মত মুখ করে বললেন, টিকিট কাটার লাইন দেওয়ার জন্য যে টিকিটটা কেটেছ সেটা কোথায়? হোয়াআআআআট? আমাদের দেশে লোককে হাতে পায়ে ধরে লাইন দিতে রাজি করানো যায় না, আর এ দেশে লোকে সেধে লাইন দিতে চাইলে বলে, আগে টিকিট দেখাও না হলে লাইন দিতে দেব না। আমি ভদ্রমহিলার উঁচোনো তর্জনী লক্ষ্য করে ঘরের ঠিক মাঝখানে রাখা একটা মেশিনের কাছে গিয়ে একটা লাল রঙের বোতাম টিপলাম। খচাৎ করে একটা কাগজ বেরোল। তাতে দেখি লেখা ৩১৯২, কাউন্টার ৪। বোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখি সেটা ওই মহিলারই কাউন্টার। তারপর মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন, আমি ওঁর দিকে। ত্রিসীমানায় কাকপক্ষীটিও নেই।

সাপ্তাহিকী

Image
উৎস In the long run, the sharpest weapon of all is a kind and gentle spirit.                                                                                                       ---Anne Frank This is water. ছোটবেলার আঁকিবুঁকি। আমিও তো তাই বলি। কেউ বলেছিল লিংকন খুন হয়েছিল বলে, কেউ বলেছিল ঘড়ির আবিষ্কর্তা ওই সময়ে জন্মেছিল বলে। আসল কারণটা এ’দুটোর একটাও নয়। নতুন ঘড়ির কাঁটা দশটা দশে রাখার আসল কারণটা জানতে হলে ক্লিক করুন। একটা ভীষণ সত্যি কথা। জিরাফেরা কেমন করে স্নান করে? জিরাফেরা কেমন করে ঘুমোয়? বিদ্রোহী। চোখকে বোকা বানানো এত সোজা ভাবিনি। গন্ধচুরি। এ সপ্তাহের গান। শচীনকত্তা, সাহির লুধিয়ানভি, রফি, গীতা দত্ত। স্বর্গ কি বেশি দূরে হতে পারে? ভালো হয়ে থাকবেন। মা’র কথা শুনে চলবেন। দেখা হবে, টা টা।

প্রথম এগারো

Image
আমি ভাবলাম কুইজ দেখে দেখে সবাই হেজেমজে গেছে, তাই প্রশ্ন বানানো ছেড়ে দিয়ে মহানন্দে ছিলাম। কিন্তু কিছুদিন ধরে ই-মেলে, এবং গতকাল কমেন্টেও, গুটিগুটি একজন-দুজন কুইজ সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। পরীক্ষা দিতে লোকজন এত ভালোবাসে কে জানত। মাস্টারমশাই/দিদিমণি মাত্রেই জানেন উত্তর লেখার থেকে ঢের শক্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করা। বেথুনে মাইক্রো পড়াতেন এম ডি। একদিন লাস্ট পিরিয়ডে মোনোপ্‌সনিস্টিক মার্কেটের ক্লাস চলছিল। আমরা সবাই ব্ল্যাকবোর্ডের থেকে ঘড়ির দিকে বেশি তাকাচ্ছি দেখে এম ডি খুব দুঃখ পেয়ে বলেছিলেন, তোমাদের তো না পড়লেও চলবে, কিন্তু আমাকে রোজ পড়া তৈরি করে আসতেই হবে, সে আমি চাই না চাই। মোদ্দা কথা হল এতদিনের অনভ্যেসে আমার প্রশ্নপত্র বানানোর প্র্যাকটিস আর উদ্যম দুটোতেই জং ধরে গেছে, কাজেই কুইজের এখন চট করে দেখা পাওয়া মুশকিল। তবে অন্যরকম একটা খেলা করা যেতে পারে। তাতে পৃথিবী সম্পর্কে জেনারেল নলেজ হয়তো বাড়বে না, কিন্তু অবান্তরের লেখক পাঠক সকলেই একে অপরের হাঁড়ির খবর আরও একটু বেশি জানতে পারবেন। সেটাই বা কম কীসে? প্রথমে আমি লিখছি, এরপর লিখবেন আপনারা। ১. প্রথম স্কুলঃ সত্যভারতী শিশুতী

সকালের শপথ

Image
গ্র্যাজুয়েট স্কুলে পড়ার সময় হঠাৎ আমার যোগা ক্লাসে ভর্তি হওয়ার মতি হয়েছিল। একগাদা সময় ফেলে ছড়িয়ে নষ্ট করছিলাম, কোনও কাজে মন বসছিল না। শরীরের দিকে নজর দিলে যদি মনের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় সেই আশায় গুটি গুটি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট যোগা ক্লাসে গিয়ে নাম লিখেছিলাম। সে ক্লাসে রকমারি আসন শেখা ছাড়াও সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে হত, শ্রীমদ্ভগবদগীতার দার্শনিক ব্যাখ্যা লিখে টার্মপেপার জমা দিতে হত। এই যোগা ক্লাসে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারটা আমি সাধারণত চেনা কাউকে বলতাম না। দেশে থাকতে ফিরে চাইনি, বিদেশে গিয়ে যোগা শিখছি, এটা লোকে যে সিম্পলি আদিখ্যেতা বলে উড়িয়ে দেবে সে নিয়ে আমার কোনও সন্দেহই ছিল না। কিন্তু আমি সত্যিই চেয়েছিলাম আমার অখণ্ড অনন্ত সময় নিয়ে একটা কিছু করতে। যে কাজের শেষে অন্তত কিছু আউটপুট চর্মচক্ষে দেখতে পাওয়া যাবে। সে ক্লাসের কিছু কিছু আসন এখনও মনে আছে। এখনও ন’মাসেছ’মাসে ভোরবেলা উঠে ইন্টারনেট ছেড়ে মেঝেতে মাদুর পেতে হাতপা টানাটানি করি, এবং মাত্র পাঁচ মিনিটে সারা শরীরে এবং মনে কি অদ্ভুত জোর আর ভালোলাগা আসে সেটা দেখে নতুন করে আপ্লুত হই। শপথ নিই, এবার থেকে র

আজ ভোরে

এই মুহূর্তে এখানে পাখির ডাক ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই। চতুর্দিকে ভয়ানক ব্যস্ত কিচিরমিচির। পাখির বাচ্চাদের আবার সারাবছরই মর্নিং স্কুল। এখন খুব হুড়োহুড়ি চলছে নিশ্চয় বাসায়। মা পাখির মেজাজ টং হয়ে আছে। ট্যাঁফো করলেই কানমলা। কান খাড়া করলে ভীষণ আস্তে তবলার টুং টাং শোনা যাচ্ছে। ঘরের দরজাটা ভালো করে টেনে বন্ধ করা হয়নি বোধহয়। আমার ফ্লোরে আপাতত টেরেসা ছাড়া আর কেউ নেই। আশা করি এই আওয়াজে ওর ঘুম ভাঙবে না। এক্ষুনি আরেকটা শব্দ শুরু হল। ইলেকট্রিক কেটলের জল ফুটতে শুরু করেছে। প্রথমে ধীরে, তারপর প্রবল তেজে। জলের গবগবানিতে তবলার মিহি টুংটাং ডুবে মরেছে। আমি কেটল তুলে সাবধানে লাল কাপের ওপর কাত করি। কাপের লাল গায়ে লিপ্টনের টি ব্যাগের হলুদ রঙের টিকি এলিয়ে পড়ে আছে। বেশ ইস্টবেংগল ইস্টবেংগল একটা ব্যাপার হয়েছে কিন্তু। রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে একটু অপেক্ষা করি। যাতে ব্যবহৃত টি ব্যাগটা রান্নাঘরের বিনেই ফেলে রেখে যাওয়া যায়। নিজের ঘরটা যত আবর্জনামুক্ত রাখা যায় ততই ভালো। ঘরের ময়লা ঝাঁট দিয়ে রাস্তায় ফেলার আজীবনের শিক্ষা এত সহজে কি যায়? মিনিমাম তিন মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। না হলে সকাল

মণির ই-মেল

আমার ফোন আবার হারিয়ে গেছে। আমি প্রথমটা টের পাইনি। ঘণ্টা ছয়েক পরে মনে হল, অনেকক্ষণ ফোনটা বাজেনি তো। আমার মা তো এতক্ষণ তাঁর একমাত্র সন্তানের সঙ্গে কথা না বলে থাকার লোক নন। তখন ব্যাগ ঝাড়লাম, ড্রয়ার হাঁটকালাম, বিছানা উল্টোলাম। কোত্থাও নেই। তখন স্কাইপ খুলে কাঁদতে বসলাম। অর্চিষ্মান বলল, আবার গেছে? বাঃ। দাঁড়াও আমি ফোন করে দেখি। এই না বলে স্পিড ডায়াল টিপে ফোন কানে ধরে গম্ভীরমুখে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে বসে রইল। আমি চোখ মুছে নাক টেনে বললাম, তুমিও যেমন।। আমার ফোন কি আর এতক্ষণে বাজার অবস্থায় আছে? এতক্ষণে তার দোমড়ানো মোচড়ানো সিমকার্ড কোন জার্মান ট্র্যাশবিনে মুখ গুঁজড়ে পড়ে আছে দেখ গে যাও। আর তক্ষুনি অর্চিষ্মান শাম্মি কাপুরের মত একখানা লাফ দিয়ে বলে উঠল, ইট্‌স্‌ রিংগিং!  (সিনেমার নাম বলতে পারলে ফ্যান্টাস্টিশ্‌, না পারলেও ক্ষতি নেই।) অ্যাঁ! সিরিয়াসলি? আমি বললাম, শিগগিরি স্পিকারে দাও, একটু শুনি! তারপর স্কাইপের এপারে বসে বসে আমি ওপারে স্পিকার ফোনে আমার হারানো ফোনের রিংটোন শুনতে লাগলাম। ইস্‌, বেচারা ফোনটা না জানি কোথায় অবহেলায় অনাদরে একা একা পড়ে আছে। খুব

অ-সাধারণ

Allegrotherapy from patrizia santangeli on Vimeo .

কোলোন

Image
আমাদের দ্বিতীয় সাপ্তাহিক এক্সকার্শনের গন্তব্য ছিল কোলোন। জার্মানির চতুর্থ বৃহত্তম শহর। বন থেকে মোটে আধঘণ্টার ট্রেনের রাস্তা। শুক্রবার অ্যালফন্‌স্‌ সবাইকে টিকিট দিয়ে দিয়েছিল। দুপুর দেড়টার ট্রেন। আমরা ঠিক করলাম একটা নাগাদ সবাই ইনফো পয়েন্টের সামনে জড়ো হব। সকলে এসে যাওয়ার পর কমলা রঙের বাক্সে টিকিট পাঞ্চ করে আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম। কাঁটায় কাঁটায় দেড়টার সময় ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢুকল। উঠে দেখি বেশ ভিড়। আমি আমার লোকালট্রেনের বিদ্যে কাজে লাগিয়ে গোড়াতেই একটা সিট বাগিয়ে আরাম করে বসে পড়লাম। তবে জানালার ধার পেলাম না এই যা দুঃখ। জানালার পাশে বসে একটা ছেলে সারারাস্তা ম্যাকনাগেট্‌স্‌ খেতে খেতে চলল। কোলোনেই অ্যালফন্‌সের বাড়ি। কথাই ছিল অ্যালফন্‌স্‌ কোলোন সেন্ট্রাল স্টেশনে দুপুর দুটো নাগাদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। সেন্ট্রাল স্টেশনের কোথায়? ঠিক ধরেছেন, ইনফো পয়েন্টের সামনে। আপনাদের মনে নেই হয়ত, কিন্তু এই কোলোনেই আমি দিন চোদ্দ আগে প্রথম এসে নেমেছিলাম। নিয়ম মেনে যাত্রার শুরুতেই আমি নিজের একটা ফোটো তুলিয়ে নিলাম। দেখুন তো কেমন দেখাচ্ছে। তারপর একটা বাসে চেপ