Posts

Showing posts from December, 2015

আসাম ১/ কাজিরাঙ্গার পথে

Image
একদিন তরুণ ঔপন্যাসিক সুব্রত সেনগুপ্ত এই পত্রিকার দপ্তরে এসে খুব উৎকণ্ঠিত ও চিন্তিত ভাবে বললেন, একটু আগে শিবরাম চক্রবর্তীকে দেখলুম, ফুটপাথে শুয়ে আছেন, বোধহয় খুবই অসুস্থ, তারপর আস্তে আস্তে এখানেই এলেন...। আমি খোঁজাখুঁজি করে দেখলুম, তিনি চারতলায় ক্যাশিয়ারবাবুর কাছে একটা টুলে বসে আছেন। আমি প্রথমে সন্তর্পণে জিজ্ঞাসা করলুম, শিবরামদা, আপনি কেমন আছেন? উনি বললেন, এই তো, খুব ভাল আছি, এই মহীর পাশে বসলে শীত করে না। চারদিকে টাকার গরম তো! এরপর জিজ্ঞেস করলুম, আপনি নাকি ফুটপাথে শুয়ে পড়েছিলেন? উনি অবাক হয়ে বললেন, হ্যাঁ, তাতে কী হয়েছে? যেন বিকেলবেলা ফুটপাথে শুয়ে পড়া একজন বিখ্যাত লেখকের পক্ষে অতি সাধারণ ঘটনা! ফের জিজ্ঞেস করলাম, হঠাৎ রাস্তায় শুতে গেলেন কেন! উনি বললেন, বুঝলে চাঙ্গোয়ার সামনে ইচ্ছে হলো রাস্তায় একটু বসি, বেশ ভালো গন্ধ তো! তারপর বসে থাকতে থাকতে শুয়ে পড়লুম, বেশ ভালো লাগে, শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখা যায়, আগে কোনওদিন দেখিনি...তারপর একটি ছেলে বুঝলে, লেখে-টেখে বোধহয়, আমার হাত ধরে তুলল, তারপর আমার হাত ধরে ধরে আসতে লাগল…বুঝলে, ছেলেটির বোধহয় স্বাস্থ্য খারাপ, নিজে হাঁটতে পারছিল না, তাই আমাকে ধরে ধরে...।

বেড়ানোর আগে

কে কত ভালো বেড়াবে তা নির্ভর করে কে কত ভালো লিস্ট বানাবে তার ওপর। এটা আমার বাবার মত। আমার বাবা খুব ভালো লিস্ট বানান। লোকে বলবে তা তো বানাবেনই , তোমার বাবা যখন। কিন্তু বাবার লিস্টের সঙ্গে আমার লিস্টের কোনও মিল নেই। প্রথমত , বাবার লিস্টের কোনও খাতা নেই। দ্বিতীয়ত এবং ইমপরট্যান্ট অমিলটা হচ্ছে রোজ সকালে উঠে সে লিস্টে আগামী ষোলঘণ্টায় ষোলহাজার কাজ গোঁজার অ্যাম্বিশন নেই বাবার , কাজেই রোজ রাতে সে লিস্টের দিকে তাকিয়ে হাত পা পেটের ভেতর সেঁধোনো প্যানিকও নেই। কী করবেন আর কী করবেন না , সারাজীবনের নিরিখেই বাবার সে ধারণা খুব স্পষ্ট , প্রতিদিনের নিরিখে তো বটেই। সেই কাজগুলো একটা নির্দিষ্ট ছন্দে , নিয়মিত করে যাওয়াই বাবার লিস্ট। যেমন সকালে উঠে মশারির ভেতর বসে বসেই কর গুনে গায়ত্রীমন্ত্র বিড়বিড় করবেন বাবা। (বাবা মোটেই ধার্মিক নন , বহুদিন হল পৈতেও ত্যাগ দিয়েছেন , কিন্তু পৈতের দিনে শেখানো সকালে উঠে বিড়বিড়িয়ে গায়ত্রী মন্ত্র বলার অভ্যেসটা ছাড়তে পারেননি। ) তারপর এককোয়া রসুন সহযোগে এক বড় গ্লাস জল খাবেন। দাদু মারা যাওয়ার পর মা ঠাকুমা দাদুর বিটকেল ভারি কাঁসার গেলাস তুলে রাখার ষড়যন্ত্র করেছিলেন , বাবা তাত

৩৫ বছরের জন্মদিনে আমি যা যা করলাম

Image
ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কাশ্মীরে বরফ পড়ায় আমাদের দিল্লির আকাশও বেশ ক'দিন মেঘলা ছিল। শুক্রবার লাঞ্চে বেরিয়েও দেখেছি চারদিক কেমন স্যাঁতসেঁতে, ভেজা ভেজা। এদিকে আমার পঁয়ত্রিশ বছরের জন্মদিন পড়েছে সোমবার। যা উদযাপন করার শনিরবিতেই করতে হবে। তাই বেশ টেনশনে ছিলাম। কিন্তু ভালো লোকদের সবসময় ভালোই হয়। তাই রবিবার সকালবেলা হতে না হতেই ঝলমলে রোদ্দুরে আমাদের বারান্দা ভেসে গেল। আমি সেই সুযোগে আমার গাছগুলোকে একটু রোদে শুকোতে দিলাম। তারপর অটো ডেকে বেরিয়ে পড়লাম। যাব পুরানা কেল্লা। রবিবার দুপুরে ওই তল্লাটে হইহই করছে ভিড়। সুখের বিষয় সে ভিড়ের অধিকাংশই এসেছে চিড়িয়াখানায়। আমরা টিকিট কেটে কেল্লায় ঢুকলাম। ঢুকেই ডানদিকে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ছোট্ট মিউজিয়াম। কেল্লার মাটি খুঁড়ে পাওয়া প্রচুর ভাঙাচোরা শিল্পসামগ্রী, যন্ত্রপাতি, গয়না, মূর্তি সাজানো আছে। পুরানা কেল্লার মাটির তলা থেকে পাওয়া এসব জিনিসপত্রের সবথেকে পুরোনোগুলোর বয়স যিশুর জন্মের প্রায় একহাজার বছর আগে। তারপর মৌর্য, শুঙ্গ, শক-কুষাণ, গুপ্ত, গুপ্ত-পরবর্তী যুগ, রাজপুত, দিল্লি সুলতানাত এবং শেষে মুঘল যুগের জিনিসপত্র রাখা আছে মিউজিয়াম

Cities of Sleep

Image
"আজাদ ওহ্‌ হ্যায় যো আপনি মর্জি সে শোয়ে অওর জাগে।" স্বাধীনতার একটা সংজ্ঞা যে এই ভাবেও দেওয়া যেতে পারে , সেটা আগে জানতাম না। সিটিস অফ স্লিপ দেখতে গিয়ে জানলাম। পরের চুয়াত্তর মিনিট ধরে আরও অবশ্য অনেক কিছু জানা হল। যে শহরে উঠিবসি খাইশুই , তার একটা সম্পূর্ণ অন্য চেহারা , অন্য অর্থনীতি , অন্য রাজনীতির দিক জীবনে প্রথমবার দেখলাম। অথচ এমন নয় যে সেই শহরটা বা শহরের সেই দিকটা আমার চোখের আড়ালে ঘটছে। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের ফ্লাইওভারের মাঝখানের বিভাজিকাতে নোংরা লেপকম্বলের ঢিপি দেখেছি। জুলাই-এর গরমে দেখেছি , এই ডিসেম্বরের ঠাণ্ডাতেও দেখছি। এও জানি যে ওই ঢিপির নিচে একজন মানুষ আছে। দুপাশ দিয়ে এই ছুটন্ত গাড়ির পাইপ দিয়ে অনর্গল বেরোনো ক্লোরোফ্লুরোকার্বনের বিষ , সাইলেন্সারহীন মোটরবাইকের অশিষ্ট আত্মবিশ্বাসকে কাঁচকলা দেখিয়ে ভোঁসভোঁস করে ঘুমোচ্ছে। ইন ফ্যাক্ট , তাকে ঘুম থেকে তুলে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে এই শব্দ আর গরম হাওয়ার ঝাপটে তার অসুবিধে হচ্ছে কি না তাহলে সে চোখ কপালে তুলে বলতে পারে , অসুবিধে ? এসব তো হেল্প করে মশাই! ওই যে ছুটন্ত গাড়ি থেকে দমকা গরম হাও

সাপ্তাহিকী

Image
The test of a first-rate intelligence is the ability to hold two opposed ideas in mind at the same time and still retain the ability to function. F. Scott Fitzgerald "You have one year off from your job to write whatever you please. Merry Christmas. " ২০১৩তে Yvonne Brill নামে একজন রকেট বিজ্ঞানীর মৃত্যুর পর নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছিল “She made a mean beef stroganoff, followed her husband from job to job and took eight years off from work to raise three children. The world’s best mom,’ her son Matthew said. পরের প্যারাগ্রাফে --- [she] was also a brilliant rocket scientist who in the early 1970s invented a propulsion system to keep communications satellites from slipping out of their orbits. ভালো না অবিচুয়্যারিটা? অস্ট্রেলিয়ান বেস্টসেলিং লেখক Colleen McCullough -র মৃত্যুর পর যেটা ছাপা হয়েছিল সেটা অবশ্য আরও সরেস। “Plain of feature and certainly overweight, she was, neverthele