tag:blogger.com,1999:blog-70023500566199978952024-03-19T09:20:41.989+05:30অবান্তরKuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.comBlogger2095125tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-80214594707187823832024-03-13T11:54:00.010+05:302024-03-13T15:15:42.515+05:30আনরিলেটেবল অতীতচারণা। Happening by Annie Erneux। Scenes from a Childhood by Jon Fosse।<div class="p2"><br /></div><div class="p2">বন্ধু বলল, ফেসবুকের অমুক কবির কবিতা পড়েছিস?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বানান না জানলেও আমরা সবাই যেমন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচেই থাকি তেমনি ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট না থাকলেও (এবং ফেক থেকে আড়ি পাতায় বহুদিন ক্ষান্ত দিলেও, অন গড ফাদার মাদার) আমরা সবাই আসলে ফেসবুকেই আছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কাজেই ভদ্রলোকের কবিতা পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। বা, না পড়ে থাকার সুযোগ হয়নি। লোকে হোয়াটস্অ্যাপ বায়োতে সেঁটেছে। মাদার্স ডে আর ছটপুজোয় লাগসই লাইন তুলে ফরওয়ার্ড করেছে। তাদের কিছু কিছু আমিও রি-ফরওয়ার্ড করেছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">স্বীকার করলাম। পড়েছি রে। বিশ্বস্ত লোকজনকে ফরওয়ার্ডও করেছি। হাসির চোটে চোখ থেকে নীল অশ্রু ছিটকে বেরোনো ইমোজি সহযোগে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অনির্বাণ ভট্টাচার্য এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন <i>ভালো অভিনেতা/ পরিচালক হওয়া সত্ত্বেও</i> (ইটালিকসের অংশটা তিনি বলেননি, পরের বাক্যের সঙ্গে সাযুজ্যরক্ষার্থে আমি জুড়েছি) উনি দর্শক হিসেবে জটিল নন। ওঁর সবই ভালো লাগে। আমার আবার ঠিক উল্টো। স্রষ্টা হিসেবে যেমনই হই না কেন ভোক্তা হিসেবে নিক্তি হাতে বসে আছি। মাপ মনের মতো না হলেই নাক কুঁচকে বাতিল করব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বন্ধুর ভঙ্গিতে কবির কবিতা সম্পর্কে আসন্ন অ্যাপ্রিসিয়েশনের আঁচ পেয়ে আগেভাগে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে দিলাম। যাতে বন্ধু চিটেড ফিল না করেন। মনে না করেন যে সেই অষ্টাশি সাল থেকে একসঙ্গে টিফিন খাওয়া সত্ত্বেও কুন্তলা ফাঁদ পেতে তাস দেখাতে বাধ্য করল? তারপর আমার কবিতার রুচি নিয়ে মুচকি হাসল?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বন্ধু বুদ্ধিমান, সে সব দিকে গেলেন না। আমার সঙ্গে একমতই হলেন। ঠিকই বলেছিস, কাব্যশক্তি কম। ঠিকই বলেছিস, সস্তা আবেগ। ঠিকই বলেছিস, ন্যাকা টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তবু কোথাও রেসোনেট করল, জানিস।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভদ্রলোকের বোধহয় বাঁকুড়া সিরিজের কিছু কবিতা আছে। সে সব কবিতায় বাঁকুড়ার কিছু জায়গার নাম আছে যে জায়গাগুলোতে বন্ধু কুড়ি বছরেরও বেশি আগে চাকরিসূত্রে থাকত। জীবনের প্রথম চাকরি। জীবনে প্রথমবার বাইরে থাকা। কাজেই জায়গাগুলো সম্পর্কে বন্ধুর মনে তলতলে ফিলিং আছে। স্বাভাবিক। মুনিরকা জায়গা হিসেবে যেমনই হোক মুনিরকা নিয়ে কবিতা লিখলে সে কবিতা পড়ে আমার হৃদয়ের কোষে টান পড়ার চান্সও হাই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বন্ধু ফোন রেখে দিলেন। আমার সন্দেহটায় নতুন করে স্ট্যাম্প মেরে। নস্ট্যালজিয়াকেন্দ্রিক লেখা, লেখা হিসেবে কেমন হচ্ছে যাচাই করা কঠিং। মারাত্মক কঠিং। আমার শৈশবের জাবরকাটা যদি কারও ভালো লাগে সে ভালোলাগার সঙ্গে আমার লেখার অ্যাকচুয়াল গুণপনার সম্পর্ক নেই। যেমন শাহরুখ খানের কামব্যাক সিনেমার হিট হওয়ার সঙ্গে সিনেমার গুণমানের সম্পর্ক নেই। আমি সাধারণতঃ ভালো লাগবে না বা খুব খারাপ লাগবে জেনেও অর্চিষ্মানের সঙ্গে সিনেমায় যাই। ডক্টর স্ট্রেঞ্জ গেছি। অ্যাভেঞ্জারসঃ এন্ডগেম গেছি। যাই একটা সহজ হিসেব কষে। সিনেমাগুলো দেখার অর্চিষ্মানের ভালোলাগা আমার খারাপ লাগার থেকে বেশি। অর্থাৎ সংসারের নেট ভালোলাগা পজিটিভ। একই যুক্তিতে অর্চিষ্মান খবর শোনে কানে ইয়ারফোন গুঁজে। কারণ জোরে জোরে টিভিতে খবর শোনার আমার ডিসইউটিলিটি অর্চিষ্মানের ইউটিলিটির থেকে বেশি। অর্থাৎ সংসারের নেট খারাপলাগা পজিটিভ। প্যালেস্টাইন ধ্বংস হচ্ছে কি না, কারডাশিয়ানদের ইমপ্ল্যান্টে ইনফেকশন ঘটছে কি না, পিয়ানো বাজিয়ে ইউভান পাপা মাম্মাকে (রাজ চক্রবর্তী-শুভশ্রী গাঙ্গুলি ফর দ্য আনইনিশিয়েটেড) প্রাউড করছে কি না, আমার কিস্যু যায় আসে না। যে সব খবরে যায় আসে যেমন কাঞ্চন মল্লিক দ্বিতীয় স্ত্রীকে ডিভোর্সের মূল্য কত ধরে দিয়েছেন (ছাপ্পান্ন লাখ) সে সব আমি উদ্যোগ নিয়ে খোঁজ নিয়ে নেব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান বলেছিল, শোনো আমি তো পাঠান হলে দেখতে যাব। পাঠান রিলিজ করবে খবর পাওয়া ইস্তক এই মুহূর্তটার অপেক্ষায় আঙুলে টিকটিকি করে বসে ছিলাম। কিন্তু অর্চিষ্মান সাধে আমার সোলমেট না। বলল, একাই যাই বুঝলে। তুমি তো এমনিতেই হলে গিয়ে এইও আপনি কথা বলছেন কেন, এইও আপনি আমার সিটে লাথি মারলেন কেন মূর্তিতে থাকো। পাঠানের হলে যা চলবে তোমার ব্রেকডাউন হয়ে যাবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমি বললাম, অ্যাবসলিউটলি। পাঠান এবং পাঠানের হল এনজয় তো দূর, সহ্য করার পূর্বশর্ত শাহরুখ খানের প্রতি কাছাখোলা আবেগ। সে আবেগ আমি ওঁর প্রতি কোনওদিন বোধ করিনি। অত সপ্রতিভ লোকের প্রতি আবেগ আমি সাধারণতঃ বোধ করি না। অর্চিষ্মান করে। যদিও ওর পার্টনার নির্বাচন সে বিচারে কৌতূহলোদ্দীপক। অর্চিষ্মান পাঠান হলে দেখতে গেল। জওয়ান গেল না। নেটফ্লিক্সে দেখল। হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে রাহুল ডানকি দেখতে যাওয়ার জন্য জপাল যখন লিখল, না বস্ হেবি খারাপ রিভিউ, আমি যাচ্ছি না। মনে মনে মুচকি হাসলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একই যুক্তিতে স্মৃতিচারণামূলক সাহিত্যের মান পাঠকের রিঅ্যাকশন দিয়ে বিচার করা টাফ। ধরা যাক আমি নিচের লেখাটা লিখলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">হাওড়া, হালুয়া, লিলুয়া, বেলুড়, বালি, উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর, কোন্নগর, রিষড়া।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">হালুয়া শব্দটা হয়তো কারও স্মৃতিতে কিছু ঝিকিয়ে তুলবে। দীর্ঘ ঘর্মাক্ত দুপুর। দমবন্ধ ভিড়। প্যাচপেচে ঘাম। বলা নেই কওয়া নেই তিনটে ট্রেন ক্যান্সেলের পর তারকেশ্বর ঢুকছে তিনে। হয়তো লেখাটা পড়ার সময় পাশের ট্যাবে ট্যাক্স ফাইল খোলা। সেই মুহূর্তের আবেগে হয়তো তাঁর আমার লেখাটাও মাস্টারপিস মনে হবে। তিনি এসে লেখার নিচে লিখে যাবেন, মাসিমা আপনার লেখাটা ছুঁয়ে গেল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এ পর্যন্ত সব ঠিকই থাকবে। কাউকে আঘাত না দিয়ে নিজের মত প্রকাশে ভুল থাকতে পারে না। ভুল হবে এই সব কমেন্ট পড়ে যদি মাসিমা সন্দেহ করতে শুরু করেন অ্যাকচুয়ালি তিনি মন্দ লেখেন না। এত ভালো লেখা সত্ত্বেও যারা মাসিমার লেখা পড়ছে না তারা হয় হিংসুটে নয় নিরক্ষর। মারাত্মক ভুল হবে। মারাত্মক স্যাডও।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1" style="text-align: center;">*****</div>
<div class="p2" style="text-align: center;">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম শিল্পের মানবিচারে রিলেটিবিলিটি সুবিধের থেকে অসুবিধে বেশি পাকায়। একটা স্মৃতিচারণামূলক সৃষ্টি তখনই সন্দেহাতীত উতরোয় যখন তা পাঠকের রিলেটিবিলিটির বাইরে থাকে। যেমন ধরা যাক, অক্ষয় মালবেরি। ওই শৈশবকৈশোরের সঙ্গে আমার শৈশবকৈশোরের আকারেপ্রকারে কোনও মিলই নেই। অক্ষয় মালবেরি আমার বুকের ভেতর কোনও চেনা ছবির জন্ম দেয় না। তবু অক্ষয় মালবেরি পড়ে আমি আকুল হই। শব্দচয়নে, বাক্যগঠনে, দৃষ্টিপাতে অক্ষয় মালবেরি আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়। আমাকে ছুঁয়ে যায়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বা সামার অফ সিক্সটিনাইন। উনিশশো পঁচাশি সালে রেকর্ড হয়ে বেরোনোর পর থেকে সারা পৃথিবীতে যত মিলিয়ন লোক সামার অফ সিক্সটি নাইন শুনেছেন এবং আরও যত মিলিয়ন লোক শুনবেন ও উদ্বেলিত হবেন তাঁদের ক'জন উনিশশো ঊনসত্তর সালে কয়েকটি ক্যানাডিয়ান ককেশিয়ান কিশোরকিশোরীর সঙ্গে জুটে গানের দল খোলার সঙ্গে রিলেট করতে পারেন? ব্রায়ান অ্যাডামস নিজেও পারেন না। উনিশশো ঊনসত্তরে অ্যাডামসের বয়স ছিল দশ। প্রেম করা, ব্যান্ড খোলার বয়সে পৌঁছতে তাঁর নিজেরই কয়েক বছর দেরি। কাজেই নিশ্চিত হয়ে বলা যায় সামার অফ সিক্সটি নাইন একটি সত্যিকারের ভালো গান।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1" style="text-align: center;">*****</div>
<div class="p2" style="text-align: center;">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দুটো স্মৃতিধর্মী বই যা আমার কাছে আগাপাশতলা আনরিলেটেবল অথচ আমাকে ছুঁয়ে গেছে, তাদের কথা বলে পোস্ট শেষ করব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"><b><span style="font-family: georgia;">Happening</span></b></div>
<div class="p1"><b><span style="font-family: georgia;">Annie Erneux</span></b></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">স্থান, ক্যাথলিক ফ্রান্স। কাল ১৯৬৩। অ্যাবরশন আইনসিদ্ধ হতে তখনও চার বছর। পাত্র তেইশ বছরের অ্যানি। অ্যানি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যের ছাত্রী। অ্যানি আবিষ্কার করেছে অ্যানি প্রেগন্যান্ট। উলের কাঁটার সাহায্যে নিজেই ব্যাপারটা ডিল করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অ্যানি লোক খুঁজতে বেরিয়েছে। এমন লোক যে অ্যানিকে হেল্প করবে “টু গেট দিস থিং আউট অফ মাই বডি।”</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সবাইকে অ্যাপ্রোচ করা যায় না; যাদের অ্যানি সাহস বা বিশ্বাস করে অ্যাপ্রোচ করে কেউ ঘৃণায় শিউরে ওঠে, কেউ বলে স্যালুট কমরেড, কেউ অ্যানিকে একটা বিশেষ টাইপ ভেবে নিয়ে উৎসাহিত হয়। অবশেষে একজন ডাক্তারের খোঁজ পাওয়া যায়। প্রপার ডাক্তার। গাইনোকলজিস্ট। অ্যানির মাবাবা গ্রামে মুদির দোকান চালান। অ্যানি শুধু প্রথম জেনারেশন না, চোদ্দগুষ্টিতে ইউনিভার্সিটির মুখ দেখা প্রথম ইন্ডিভিজুয়াল। বন্ধুর কাছ থেকে ফিজের টাকা ধার করে অ্যানি ডাক্তারের চেম্বারে যায়। ডাক্তারবাবু বলেন আমি তো তোমার গর্ভপাত করবই না, এমন কারও খোঁজও দেব না যে করবে। অ্যানি উঠে চলে আসছে, প্রেসক্রিপশন টেনে ওষুধ লিখে দেন ডাক্তার। এটা তোমার পিরিয়ড ফেরাতে হেল্প করবে। অ্যানি ওষুধ খেতে শুরু করে। পিরিয়ড ফেরে না। অ্যানি খোঁজ নিয়ে জানে ওষুধটা গর্ভস্থ ভ্রুণকে শক্তিশালী করার।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অবশেষে একজন হাতুড়ের খবর আসে। মহিলা হাতুড়ে। গলির ভেতর ক্লিনিক খুলে পাইকারি রেটে অ্যাবরশন করেন। কেসপিছু আকাশছোঁয়া দাম নেন; যে কোনও দিন জেলে যাওয়ার আগে লুটেপুটে কামিয়ে নেওয়ার আশায়। অ্যানি আবার টাকা ধার করে গলির ক্লিনিকে যায়। বাকি কথাবার্তার আগে মহিলা টাকা গুণে পকেটে পোরেন। জানতে চান, সঙ্গে কেউ নেই? নেই, বলে অ্যানি স্টিলের স্ল্যাবে শুয়ে পড়ে। মহিলা যা করার করেন। বেসিক্যালি, অ্যাবরশন ইনডিউস। বাড়ি যাও, যা হওয়ার হয়ে যাবে। বলে নেক্সট রোগীর জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। অ্যানি হোস্টেলে ফিরে আসে। কিছুই হয় না। অ্যানি আবার মহিলার কাছে যায়। আবার স্টিলের স্ল্যাব। আবার মহিলা যা করার করেন। এতে কাজ না দিলে আর কিছুতেই দেবে না। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কাজ দেয়। এক রাতে হোস্টেলের বাথরুমে তিনমাসের ভ্রূণ অ্যানির শরীর থেকে নির্গত হয়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জায়গাটা পড়ে বই বন্ধ করে খানিকক্ষণ বসে থাকতে হয়েছিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শিল্পের ক্ষেত্রে একটা কথা চালু আছে, কনটেন্ট যত বেশি পার্সোন্যাল বা লোক্যাল হয় অ্যাপিল তত ইউনিভার্সাল হবে। কারণ পরিস্থিতি, প্রতিষ্ঠান, প্রথা ভিন্ন ভিন্ন হলেও ইমোশনের স্তরে দেশকালরংলিঙ্গ ব্যাতিরেকে মানুষ একইরকম আচরণ করে। অ্যানি আর্নো ব্যাপারটাকে ইমোশনাল স্তরে ছাড়ার রিস্কও নেন না। 'আ গার্ল'স স্টোরি'তে হলিডে ক্যাম্পে প্রেমহীন পুরুষের সঙ্গে জীবনের প্রথম যৌনতার অভিজ্ঞতা, সিম্পল প্যাশন-এ অবৈধ প্রেমিকের সঙ্গে প্রেমপূর্ণ যৌনতার বর্ণনা আর্নো যেভাবে দেন, 'হ্যাপেনিং'-এ মাঝরাত্তিরে একা হোস্টেলে গর্ভপাতের বর্ণনাতেও আর্নো একই জায়গা থেকে দেন। শরীরের। উনিশশো তেষট্টির ক্যাথলিক ফ্রান্স রিলেট করতে পারবি না? পরিবারে প্রথম উচ্চশিক্ষার (মধ্যশিক্ষাও টু বি ফেয়ার) মুখ দেখা মেম্বার হওয়ার রিলেট করতে পারবি না? প্রিম্যারিটাল সেক্স, অবাঞ্ছিত গর্ভের লজ্জা, একঘরে হওয়ার আতংক, জেলে যাওয়ার বাস্তবের সঙ্গে রিলেট করতে পারবি না? অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঙ্গে রিলেট না করে যাবি কোথায়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বই হিসেবে বেরোনোর একুশ বছর পর 'হ্যাপেনিং' চলচ্চিত্র হয়ে মুক্তি পায়। একজায়গায় দেখলাম লিখেছে "অ্যাবরশন ড্রামা"। সিনেমার ঘরানাবিভাজনের ভাষায় জিনিসটা ড্রামা হতে পারে, জানি না, কিন্তু অ্যানি আর্নোর নামের পাঁচশো মাইলের মধ্যে ড্রামা শব্দটা শুনলে অস্বস্তি লাগে। আমার পড়া সবথেকে নন-ড্রামাটিক লেখক অ্যানি আর্নো। একেবারে বিগতস্পৃহ ভাষায় যাহা ঘটিয়াছে তাহা লিখে দিলে যে কী আশ্চর্য ভিসুভিয়াসের জন্ম দেওয়া যায় আর্নোকে আবিষ্কারের আগে আমি জানতাম না। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কুণাল সেনের ‘বন্ধু’ -র রিভিউ করতে গিয়ে এই 'হ্যাপেনিং' থেকেই একটা প্যারাগ্রাফ কোট করেছিলাম। সেই প্যারাটা আবার তুলে দিচ্ছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"><span style="font-family: georgia;">When I write, I must guard against lyrical outbursts such as anger or pain. I would not want crying and shouting to feature in this text because they barely featured in my life at the time. Above all I wish to capture the impression of a steady row of unhappiness, conveyed by a pharmacist’s inquisitive attitude or the sight of a hairbrush by a steaming basin of water. The distress I experience on recalling certain images and on hearing certain words is beyond comparison with what I felt at the time: these are merely literary emotions; in other words they generate the act of writing and justify its veracity.</span></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শুধু গর্ভপাতের সিনটাই বই মুড়ে চোখ বুজে বসে থাকতে বাধ্য করেনি, আরেকটা দৃশ্যও করেছিল। দ্বিতীয়বার গর্ভপাত ত্বরান্বিত করার প্রক্রিয়া শেষে অ্যানি স্টিল স্ল্যাব থেকে উঠে পড়ে বেরোনোর জন্য রেডি হচ্ছে। হাতুড়ে মহিলা অ্যানিকে জিজ্ঞাসা করছেন আজও সে একা এসেছে কি না। অ্যানির ঘাড় নাড়ছে। মহিলা হাতের জিনিসপত্র নামিয়ে বলছেন, চল। বলে অ্যানির সঙ্গে স্টেশন পর্যন্ত হেঁটে হেঁটে আসছেন। টুকটাক কথা হচ্ছে। কোনওটাই অ্যানির অনগোয়িং সমস্যা নিয়ে নয়। স্টেশন এসে যাচ্ছে। মহিলা অ্যাবাউট টার্ন করে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পাঠক জানেন এই মহিলার সঙ্গে অ্যানির আর কোনওদিন দেখা হবে না। পাঠক এও জানেন গর্ভসঞ্চারের পরও অ্যানিকে নিয়মিত বাড়ি যেতে হয়েছে এবং তাঁর যে ঋতু হচ্ছে না সেটা নিজের মায়ের কাছ থেকে লুকোনোর জন্য অ্যানির অ্যাংক্সাইটি কতখানি আকাশ ছুঁয়েছে। এত সব জানাজানির পর পাঠকের চোখে দুজনের ওই স্টেশন অবধি একসঙ্গে হেঁটে আসার দৃশ্যটা নানারকম রঙে প্রতিভাত হতে পারে। আমারও হয়েছিল। গর্ভপাতের রক্তাক্ত দৃশ্য এবং এই নিরীহ হাঁটার দৃশ্য, দুটোই আমার মধ্যে ইমোশনের জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু সে সব ইমোশন আমার মগজের নিজস্ব কলকাঠি ও কন্ডিশনিং, অ্যানি আর্নো তাদের দায় নেবেন না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">উনিশশো তেষট্টিতে ফ্রান্সে গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল। দু'হাজার সালে 'হ্যাপেনিং' বই হয়ে বেরোনোর সময় লোকে ভুলেই গেছে বেআইনি গর্ভপাত খায় না মাথায় দেয়। কাজেই প্রশ্ন উঠেছে এই বিষয়ে এখন এত ঘটা করে লেখার মানে কী? যখন বিপদ কেটেই গেছে তখন সেই নিয়ে সাহিত্যচর্বণ ফিয়ারমংগারিং-এর পর্যায়েই পড়বে না কি? অ্যানি আর্নো একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গর্ভপাত লিগ্যাল হয়ে গেছে বলেই আরও বেশি করে এই কথাগুলো বলা দরকার। বিপদ কেটে গেলেই বিপদের মাত্রাটা অধিকাংশ সময় ঠিক মাপা যায়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তাছাড়া এতদিনে নিশ্চয় আর কারও বুঝতে বাকি নেই যে বিপদ আসলে কখনই কাটে না। ঘাড়ের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। সে জন্যই বিপদের চেহারা চেতনায় দগদগ করা দরকার।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1" style="text-align: center;">******</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"><span style="font-family: georgia;"><b>Scenes from a Childhood</b></span></div><p dir="ltr" style="line-height: 1.38; margin-bottom: 0pt; margin-top: 0pt;"><span style="font-family: georgia; font-variant-alternates: normal; font-variant-east-asian: normal; font-variant-numeric: normal; font-variant-position: normal; vertical-align: baseline; white-space-collapse: preserve;"><b>Jon Fosse</b></span></p>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গার্ডিয়ান পত্রিকা (অনলাইন) আমার মতো পাঠকদের জন্য ‘হোয়্যার টু স্টার্ট উইথ’ নামের একটা সিরিজ চালায়। ২০২৩ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ের পর সেখানেই ফস সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেছিলাম। বহুদিন ধরেই ভদ্রলোক নোবেলের লাইনে ছিলেন। অবশেষে শিকে ছিঁড়েছে। ভদ্রলোক নাটক লিখেছেন প্রচুর। উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতাও বাদ দেননি। গার্ডিয়ান প্রায় ছাত্রবন্ধুর মতো করে ‘এনট্রি পয়েন্ট’, ‘ইফ ইউ ওনলি রিড ওয়ান’, ‘ ইফ ইউ আর ইন আ রাশ’ পয়েন্ট করে করে ইয়ন ফসের সৃষ্টিসম্ভারের সঙ্গে পাঠকদের পরিচয়ের পথ সুগম করে দিয়েছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একটাও বই না পড়ে মাত্র একটাই বই পড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া অসম্ভব। তাড়ায় আছি দাবি করাটাও মিথ্যাচার হবে। কাজেই এন্ট্রি পয়েন্ট দিয়েই শুরু করলাম। গার্ডিয়ান পত্রিকার মতে, ফসের এন্ট্রি পয়েন্ট হল সিনস্ ফ্রম আ চাইল্ডহুড। উনিশশো সাতাশি থেকে দু’হাজার তেরোর মধ্যে ফসের লেখা পাঁচটি রচনার সংকলন। সংকলনটি প্রথম ছেপে বেরিয়েছিল ১৯৯৪ সালে। গোড়াতে শুধুমাত্র লেখকের শৈশবকৈশোরের কতগুলি দৃশ্য নিয়েই তৈরি হয়েছিল বইটি। পরে আরও কিছু রচনা যোগ হয়। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তাদের মধ্যে একটি নভেলা ‘অ্যান্ড দেন মাই ডগ উইল কাম ব্যাক টু মি’। নভেলাটা একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা, যা আমার প্রিয়। সুস্যান ক্লার্কের 'পিরানেসি' এই দৃষ্টিকোণের একটি চমৎকার উদাহরণ। যদিও পিরানেসি অনেক বেশি খেলানো, অনেক বেশি সালংকারা। ফসের প্রোটাগনিস্টের ভয়েস অনেক বেশি খণ্ডিত, চাঁচাছোলা। সংকলনের আরেকটি লেখা ‘ড্রেম্ট্ ইন স্টোন’ও এই একই ভয়েস ব্যবহার করে লেখা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তবে সংকলনের সেরা লেখাগুলো, অনেক লোকের সঙ্গে আমিও একমত, সিনস্ ফ্রম আ চাইল্ডহুড। এই লেখাগুলোর একেকটা চ্যাপ্টার একেকটা দৃশ্য। ফসের শৈশবকৈশোরের কতগুলো র্যান্ডম দৃশ্য। একটা চ্যাপ্টার/দৃশ্য যদি তিন লাইনের তো অন্য চ্যাপ্টার/দৃশ্য দু’পাতার। দৃশ্যগুলো কতখানি র্যান্ডম বুঝতে পারবেন চ্যাপ্টারের নাম দিয়ে। মাই গ্র্যান্ডমাদার ইজ লাইং ইন বেড। ইট হ্যাজ স্টপড স্নোয়িং। এভরিবডি প্রব্যাবলি নোজ দ্যাট। একটি দৃশ্যের সঙ্গে পরের দৃশ্যের কোনও সংযোগ নেই। কাল পরম্পরা মেন্টেন করা নেই। কেন যে ওই দৃশ্যটা ফসের মনে থাকল সেটার যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নেই। যেমন ধরুন একটা চ্যাপ্টার হচ্ছে,</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"><span style="font-family: georgia;">BICYCLE AND GUITAR CASE<br /></span></div>
<div class="p2">
<span style="font-family: georgia;"><span class="s1"></span><br /></span></div>
<div class="p1"><span style="font-family: georgia;">Asle was riding around on the roads on his mother’s old bicycle, he’d repainted it blue. He almost always had a guitar case in his hand. As he rode the bike his long hair fluttered behind him.</span></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ফসের লেখায় মিউজিক ঘুরে ফিরে এসেছে। এই বইতে তো এসেইছে, রিভিউ পড়ে জেনেছি যে ওঁর সৃষ্টিতে ফিরে ফিরে আসা থিমের মধ্যে সংগীত অন্যতম। অন্যান্য থিমের মধ্যে ধর্মবিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতা, স্মৃতির কথা বার বার উঠে এসেছে। সংগীতসংক্রান্ত একটি দৃশ্য বা চ্যাপ্টার 'আই জাস্ট কান্ট গেট দ্য গিটার টিউনড'। ঠিক যা নাম, ঘটনাও এক্স্যাক্টলি তাই। একটা ছোট ফাংশান মতো হচ্ছে। পুকুরপাড়ে-বটগাছের-তলায়-তক্তা-বাঁধা ছোট না, একটাই-ঘরে-নাচিয়ে-বাজিয়ে-দর্শক-সবাই-এঁটে-গেছে ছোট। নাচের দল রেডি। দর্শক রেডি। বাজিয়েরা বাজনা রেডি করছে। প্রধান চরিত্র নিজের গিটার বাঁধছেন। জি স্ট্রিং ঠিক বাজছে না। সেটা টিউন করছেন। করতে গিয়ে তার ছিঁড়ে গেছে। উঠে গিয়ে গিটার কেস থেকে এক্সট্রা তার বার করে এনে, লাগিয়ে, ফের টিউনিং শুরু করেছেন। বাকিরা যে যার নিজের যন্ত্র বাঁধছে। একজন বলছেন, আরেকটু টাইট কর। প্রধান চরিত্র পেগের কান আরেকটু মোচড়াচ্ছেন। আরেএএকটু। বাকি বাজনারা একে একে প্রস্তুত হচ্ছে। ভিড় জমা প্রায় শেষ। প্রধান চরিত্র এখনও টিউন করছেন। বন্ধু বলছেন আরেকটু টাইট দে। সাবধানে দিস। প্রধান চরিত্র সাবধানে টাইট দিচ্ছেন। এবং পটাং করে তার ছিঁড়ে যাচ্ছে। তাঁর নিজের আর এক্সট্রা তার নেই। বন্ধুরও নেই। কারও নেই। বাজনা কী করে হবে? প্রধান চরিত্র ওই জগঝম্পের মধ্যে চিৎকার করে বাকি বাজিয়েদের জিজ্ঞাসা করছেন। কেউ উত্তর দিচ্ছে না, কেউ দিচ্ছে। নেই। প্রধান চরিত্র উঠে আবার ব্যাকস্টেজে যাচ্ছেন। নিজের গিটার কেস খুলে খুঁজে দেখছেন, ম্যাজিকালি যদি একটা তার এসে উপস্থিত হয়। হয়নি। আরেকজন বাজিয়েও ব্যাকস্টেজে। প্রধান চরিত্র তাঁকে বলেন একটু দেখতে যদি একটা এক্সট্রা জি স্ট্রিং থাকে তাঁর। তিনি তাঁর বাক্স হাঁটকান। নেই। কী হবে? কী আর হবে পাঁচটা তার দিয়েই বাজাতে হবে। দ্যাট'ল প্রব্যাবলি ওয়ার্ক, হি সেজ। পিপল আর অলরেডি হিয়ার, আই সে। দ্যাট'ল ওয়ার্ক, হি সেজ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গল্প শেষ। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গুডরিডস-এ সিনস্ অফ আ চাইল্ডহুডের প্রথম রিভিউটাই ওয়ান স্টার। একজন লিখেছেন, এটা আর যাই হোক লেখা হয়নি। এবং যেহেতু নোবেলজয়ীর লেখা ভালো লাগে না বলতে গেলে কনফিডেন্সে টান পড়ে, ডিসক্লেমার দিয়েছেন যে তিনি নিজেকে সিরিয়াস পাঠক বলেই মনে করেন, প্রচুর উচ্চমার্গের লেখা তিনি পড়েছেন কিন্তু এটা ভালো লেখা নয়। বাংলায় ওঁর অনুভূতিটা বলতে গেলে বলতে হয় ওঁর মনে হয়েছে ফস-এর লেখার সাহিত্যমূল্য মুদির দোকানের ফর্দর সমান। উদাহরণ হিসেবে তিনি নিচের চ্যাপটারটা তুলে দিয়েছেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"><span style="font-family: georgia;">ASLE WANTS A DOG OF HIS OWN</span></div>
<div class="p2">
<span style="font-family: georgia;"><span class="s1"></span><br /></span></div>
<div class="p1"><span style="font-family: georgia;">On Sundays when he was little Asle and his parents used to go for walks. They used to walk past a little house and the man who lived there had a little white dog with black spots. Whenever they walked past the house the dog leaped over Asle, who patted it and talked to it. Asle wants a dog for himself so badly but his mother says he can’t have one. Asle wants a dog of his own.</span></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রিভিউয়ার লিখেছেন, এটা তাঁর আট বছরের ছেলেও লিখতে পারবে। কেন এ কথা মনে হতে পারে বোঝা শক্ত নয়, কিন্তু আমি একমত নই। বোঝাই যাচ্ছে প্রচুর লোকেই একমত নয় কারণ ফস নোবেল পেয়ে গেছেন। নোবেল কোম্পানি ইয়ন ফসের গদ্যকে কাব্যিক বলেছে শুনলে উক্ত রিভিউয়ার বিষম খেতেন নির্ঘাত। কিন্তু আমি নোবেল কোম্পানির সঙ্গে একমত। ফস গদ্যে কবিতা লেখেন। এবং "কাব্যিক" বলতে আমরা যা বুঝি তার একশো মাইলের মধ্যে না গিয়ে। ওই যে বাজিয়ের দল রেডি। নাচিয়ের দল রেডি। দর্শক রেডি। এদিকে আমার গিটারের তার ছিঁড়ে যাচ্ছে একের পর এক। ফসের লেখার আরেকটা মেজর থিম নাকি "<span style="font-family: georgia;">the anxiety of the stale-mate of action.</span>" অথচ অ্যাংক্সাইটি শব্দটা একবারও দাঁতের ফাঁক দিয়ে বার করেননি ফস গোটা লেখায়। কারণ, তিনি সেই মুহূর্তে থেমে ভাবছেন না যে আমার অ্যাংক্সাইটি হচ্ছে। তাছাড়া শুধু অ্যাংক্সাইটি তো নয়, এটাও তো আমি বুঝতে পারছি যে অবশেষে আমাকে ছ'টার বদলে পাঁচটা তার দিয়েই বাজাতে হবে। এই যে পরিণতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা থাকা সত্ত্বেও চেষ্টার অসহায়তা, কোলাহলে বধির পারিপার্শ্বিকতায় নিজের চাওয়া জানাতে জানাতে চারপাশে একাকীত্বের পাঁচিল ক্রমশঃ উঁচু হয়ে ওঠা, এই সমস্ত এক কথায় অপ্রকাশিতব্য অনুভূতির ঘাড় ধরে পাঠকের বুকের ভেতর হাজির করা, এত কম শব্দে, এ জিনিস কবি ছাড়া হয় না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একজন লেখকের ভয়েসের ব্যক্তিত্ব নিয়ে যদি ভাবি, ফসের লেখা আশ্চর্য রকম একলা, অন্তর্মুখী। সংকলনে 'হাউ ইট স্টার্টেড' বলে একটি রচনার কথা না বলে শেষ করতে পারছি না।এই লেখাটা পড়ে আনরিলেটেবিলিটির ব্যাপারটা প্রথম ঘা দিয়েছিল। বেসিক্যালি, স্থানীয় প্যাস্টরের স্ত্রীর আয়োজন করা ইউথ গ্রুপের পার্টিতে একদল টিনএজার দল বেঁধে গেছে (আনরিলেটেবল)। দলের মধ্যে অল্প প্রেম প্রেম চলছে (আনরিলেটেবল)। এবং একটা পয়েন্টের পর একটা খেলা শুরু হয় যেখানে র্যান্ডমলি চোর ডাকাত বাবু পুলিসের কাগজ তোলার স্টাইলে ছেলেমেয়েরা একে অপরকে চুমু খাবে (ইললিগ্যাল)। গ্রুপের মধ্যে একটি মেয়েকে ফসের গোপনে পছন্দ, প্রকাশের প্রশ্নই ওঠেনি (রিলেটেবল)। ফস ধরেই নিয়েছেন সে মেয়ের তাঁকে চুমু খাওয়ার পালা আসবে না। কিন্তু, এল। মেয়েটি ফসের সামনে এসে দাঁড়াল। চুমু খেল। সমুদ্র গর্জন করছে। লোনা হাওয়া বইছে। চুমু শেষ। মেয়েটি সরে যাচ্ছে। পার্টি ভেঙে যাচ্ছে। সবাই বাড়ি ফিরছে। মেয়েটি অন্য একটি ছেলের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সামনে সামনে হাঁটছে। একটু পেছনে ফস অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাঁটছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চ্যাপ্টার শেষ। আমি বই বন্ধ করে বসে আছি। অর্চিষ্মানের শেষরাতের ঘুমের দীর্ঘ শ্বাস পড়ছে। আমার সমস্ত শরীর থেকে 'বাবাগো' বেরিয়ে আকাশেবাতাসে মিশে যাচ্ছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দু’হাজার সাত সালের সংস্করণের শেষে জোড়া নোটস্ ফ্রম দ্য অথর-এ ফস লিখছেন, <span style="font-family: georgia;">In writing Scenes from a Childhood, my goal was to write about my own childhood, the way things really happened. That turned out to be impossible for me. What I wrote was similar to my own experience in some ways, but not a single one of these pieces ended up being entirely accurate. I cannot help writing fiction. </span></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কুণাল সেনের ব্লগের একটা পোস্ট মনে পড়ল। কুণাল একবার ভেবেছিলেন ডিজিটাল ডায়রি লিখবেন। লেখা শুরু হল। নতুন দিনের লেখা শুরু করার আগে তাঁর অভ্যেস ছিল আগের দিনের লেখা আরেকবার পড়া। কয়েকদিন পর কুণাল আবিষ্কার করলেন তিনি শুধু পড়ে ক্ষান্ত দিচ্ছেন না। তিনি আগের দিনের লেখাটা সারাচ্ছেন। খুব সাধারণ সারানো। কমা সেমিকোলন। বা একটা শব্দ। বা একটা বাক্য। একটা প্যারা। বিষয়টার ডেঞ্জারটা যে কোনও দৃষ্টিবান লেখকের মতো কুণাল সেনেরও নজর এড়ায়নি। তিনি শুধু ভাষা এডিট করছেন না, তাঁর স্মৃতি, যা হয়তো সন্দেহজনক টু বিগিন উইথ, এডিট করছেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমরা শুধু গল্প বলতে বা পড়তে ভালো বাসি না। আমরা নিজের জীবনটাকেও গল্প না করে তোলা পর্যন্ত ছাড়ি না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com10tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-67141802104185632052024-02-19T11:48:00.013+05:302024-02-20T13:43:06.136+05:30 নভেম্বর (২)
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh0VM4eYKULXb-IeVN_MVw404Us3waZQDytQMZTqu0btEfSzZ7yyktwckDxNL3RCU9qh5teoag9UGt2aO3KVpMOZy4OsCh2KmGcO5afBXvObsACUQw8bZeyR091yf7iH26TU_aglq0e9V7NkIE01rw4J52J_x4o-ZcVSCscSZZQhP6DNaEo6AQALkLQY56t/s4000/cat.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="4000" data-original-width="3000" height="640" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh0VM4eYKULXb-IeVN_MVw404Us3waZQDytQMZTqu0btEfSzZ7yyktwckDxNL3RCU9qh5teoag9UGt2aO3KVpMOZy4OsCh2KmGcO5afBXvObsACUQw8bZeyR091yf7iH26TU_aglq0e9V7NkIE01rw4J52J_x4o-ZcVSCscSZZQhP6DNaEo6AQALkLQY56t/w480-h640/cat.jpg" width="480" /></a></div><div class="p2"><br /></div><div class="p1">বাবা বললেন, জগদ্ধাত্রী পুজোতে আসিসনি অনেকদিন। নাকতলার মামার পঁচাত্তর বছরের জন্মদিন উদযাপনের দিনও ছিল কাছাকাছি। দুটো মিলিয়ে বাড়ি যাওয়া হল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দুটোতেই ভালো জামাকাপড় পরার ব্যাপার আছে। আজকাল সাজের দিকে মন গেছে খুব। সাজ অর্থে টিপ। কুর্তা শাড়ি জিনস, বাকি শরীরে যাই থাকুক, কপালে একখানি টিপ ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোই না। একটি নির্দিষ্ট রঙের, নির্দিষ্ট সাইজের টিপ। মা যেটা পরতেন। মায়ের মেয়ে হতে পারিনি। পারব না। আয়নায় আচমকা চোখ পড়ে গেলে যদি এক সেকেন্ডের জন্য নিজেকে বোকা বানাতে পারি সেই আশায় টিপ পরা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">টিপসর্বস্ব সাজের সুবিধে হচ্ছে ব্যাপারটা সরল ও সস্তা। সাজগোজের দাম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একবার বিপদে পড়েছিলাম। কসৌলি গেছিলাম। ফেরার পর অফিসে ফলাও করতে সহকর্মী হাহাকার করলেন। আগে বললে না? কসৌলিতে নাকি কসমেটিকসের কুটিরশিল্পের রমরমা। ওঁর কোন বন্ধু গিয়েছিল, গোটা মাসের মর্নিং অ্যান্ড নাইট বিউটি রুটিনের মালমশলা চারশো টাকায় কিনে এনেছে। যেটা দিল্লিতে এনি ডে চার হাজার।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যখনকার কথা তখন চুল কাটার সময় ঘনালে অর্চিষ্মানকে ধরি। তোমার নাপিত আমার চুল কেটে দিতে পারবে না? স্ট্রেট কাঁচি চালিয়ে দেওয়া তো। অর্চিষ্মান হিংসুটেমো করে। না কুন্তলা, পারবে না। শুধু সস্তার জন্য বলি না। যদিও সস্তাও একটা কনসার্ন। আমার নাপিত চুলে হাত দিলেই পাঁচশো টাকা। এক ইঞ্চি ছাঁটছি না ন্যাড়া হচ্ছি ম্যাটার করে না। টাকা দিতে গিয়ে দেখি বিল হয়েছে ছ'শো। পাঁচশো ফর ট্রিমিং, একশো ফর ব্লো ড্রাইং। একশো টাকা বেশি দেওয়ার থেকেও ছিঁচকেমোটা গায়ে লাগে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অন্য কারণটা আরও জোরদার। পার্লারে গেলে নিজেকে যে রকম কুৎসিত মনে হয় তেমনটা আর জীবনে কোথাও মনে হয় না। আমি বলব, চুল কাটব। রং করাব না, ঢেউ খেলাব না। তাঁরা বলবেন, এই এবড়োখেবড়ো, দাগছোপ, ট্যাঁরাব্যাকা, এগুলোও সব এ রকমই এবড়োখেবড়ো, দাগছোপ, ট্যাঁরাব্যাকাই থাকবে? আমি গোড়ালি ঠুকে বলব, থাকবে থাকবে থাকবে। তাঁরা শ্রাগ করে, দুই হাত তুলে, চোখ ঘুরিয়ে কাঁচির খোঁজে যাবেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমার ধারণা অর্চিষ্মানের সেলুনে, যার কাচের দরজার গায়ে উল্টোনো চাঁদের মতো করে লেখা 'বাবু সেলুন', সেখানের ভাইব অনেক পজিটিভ। সন্দেহ যে সত্যি সেটার প্রমাণ পেলাম যেদিন অর্চিষ্মান চুলদাড়ি কেটে হাসি হাসি মুখে ফিরল। বাবুর তিনজন পুত্রকন্যা, যাদের বয়স চার থেকে দশ, এমনিতে বিহারে থাকে, গরমের না কীসের ছুটিতে বাবার কাছে বেড়াতে এসেছে। অর্চিষ্মান বলল, যা মজার যদি দেখতে। বাবুর একজন সহকারী আছে। তার কাছে সবাই লাইন দিয়ে বসে নখ কাটছে। সহকারী খুব খেলিয়ে, নানারকম যন্ত্রপাতি মেলে বসে, ক্রিম, লোশনটোশন খুলে ছোট ছোট তিনজোড়া হাতের পরিচর্যা করছে আর নানারকম রসিকতা করছে। হাতের মালিকদের উত্তেজনা তুঙ্গে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পার্লারে আর যাই না। নিজের চেহারা নিয়ে লো এস্টিমে ভুগতে নিজেই কাফি, টাকা দিয়ে লোক রাখার দরকার নেই। তার মানে এই নয় যে মাথায় জটা নিয়ে ঘুরছি। প্রসেনজিতের বোন কৃষ্ণা, নিয়মিত চুল ছেঁটে দিয়ে যায়। আমি দরজা খুলে ঘাড় তিনতলার দিকে তুলে 'কৃষ্ণা কৃষ্ণা' বলে পাড়া মাথায় করি, কৃষ্ণা ওপর থেকে ভদ্রস্থ গলায় বলে, 'হ্যাঁ দিদি'। আমি বলি, 'আজ টাইম হবে গো?' কৃষ্ণা অ্যাফার্মেটিভ নয় নেগেটিভে জবাব দেয়। অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় হলে আমি চিরুনি আর পুরনো খবরের কাগজ সাপ্লাই দিই, ও ওর কাঁচি নিয়ে আসে। কৃষ্ণা বিউটি পার্লারের কাজের ট্রেনিং নিয়েছিল। এখন মাসাজ, ভুরু ছাঁটা ইত্যাদির ফ্রি ল্যান্স করে। চুল কাটার অর্ডার খুব একটা আসে না। ও খুব উত্তেজিত থাকে সে জন্য আমার চুল কেটে দেওয়ার অর্ডার পেলে। পারিশ্রমিক যা নেয় সেটা আর লজ্জায় বলছি না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এত কথা বললাম প্রসাধন সংক্রান্ত খরচখরচাসংক্রান্ত আমার প্রায়োরিটি বোঝানোর জন্য। একবারও দাবি করছি না যে সবার এই প্রায়োরিটি থাকতে হবে। আমি যে রোজ পঞ্চান্ন টাকা দিয়ে নাট ক্র্যাকারের দুশো গ্রামের গোটা প্যাকেট একা সাঁটাই সেটা কারও প্রায়োরিটি না হতে পারে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের প্রায়োরিটি আলাদা হওয়াই স্বাভাবিক। বুদ্ধির পরিচয় হচ্ছে অন্যের প্রায়োরিটিতে বিচলিত না হওয়া।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এখনও নই, দশ বছর আগেও বুদ্ধিমান ছিলাম না। সহকর্মীর প্রসাধনসংক্রান্ত খরচের প্রায়োরিটিতে বিস্ময় চেপে রাখতে পারিনি। চার হাজাআআআর! বলে চোখ কপালে তুলে ফেলেছিলাম। সহকর্মী আমার থেকে এককোটি গুণ স্মার্ট ও কুল, খোলা হেসে উঠেছিলেন। ওই টেবিলেই আরেকজন ছিলেন যিনি প্রায় আমারই মতো ইনসিকিওর এবং ডিফেন্সিভ। তিনি ধরেই নিলেন যে এইবার আমি "মুখে রংমাখা খারাপ, বই পড়া ভালো" নামের হাই হর্সে চড়ে হইহই করে আসব। মুখ মেঘের মতো করে বলে উঠেছিলেন, নিজেকে প্রেজেন্টেবল রাখতে গেলে এইটুকু খরচ নেসেসারি। ইফ ইউ আর কমফর্টেব্ল উইথ বিয়িং আনপ্রেজেন্টেবল তাহলে অবশ্য . . . </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আরও যাও মনের ভাব মুখে প্রকাশ করতে। পারি না, কিন্তু জানি অধিকাংশ কনভারসেশনেই ইনভলভ্ড হওয়ার একমাত্র রাস্তা হচ্ছে টিফিনবাক্স খুলে খাওয়া আর মাথা ওপর নিচে ননকমিটাল নাড়া।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সেদিন বাড়ি ফিরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। তারপর আরও কতবার দাঁড়িয়েছি। ব্রাশ করতে করতে, মুখ ধুতে, আয়না মুছতে বা নিজেকে দেখতেই। কোনওবার নিজেকে আনপ্রেজেন্টেবল মনে হয়নি। দিব্যি মানুষের মতো। দুটো কান, একটা নাক, ওষ্ঠাধর, দুটো ভুরু, কপাল, চোখ, চশমা, গাল, সে গালে আবার ব্রণস্মৃতির আলপনা। মন্দ কী? মচৎকার, অ্যাকচুয়ালি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">টিপের আরও একটা সুবিধে, সর্বত্র লভ্য। দু'নম্বরেই একজন হাসিখুশি দিদির দোকান থেকে মাঝে মাঝে গ্লু-স্টিক, রিফিল, খাম ইত্যাদি কিনি। এই জিনিসপত্রগুলো থাকে দোকানের ভেতর, দেওয়ালে সাঁটা তাকে। আর কাউন্টারের ওপর রাখা থাকে সারি সারি লিপস্টিক, নেলপালিশ, হার দুল টিপ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কিন্তু দিদির দোকান থেকে টিপ কেনা যাবে না। কারণ পয়েন্টটা টিপ না, পয়েন্টটা হল মায়ের অক্ষম অনুকরণ। বাড়ি গিয়ে একদিন বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ বিজলীদিকে বগলদাবা করে বেরোলাম। বাবাকে জিজ্ঞাসা করলাম কিছু লাগবে কি না। বাবা ভেবে বললেন, সামনের ঘরের ঘড়ির ব্যাটারি ফুরিয়ে গেছে, মনে থাকলে আনিস। পাছে ভুলে যাই, আগে ব্যাটারি কিনলাম। তারপর টিপের দোকানের দিকে রওনা দিলাম। মা যে দোকান থেকে টিপ কিনতেন সেই দোকান থেকে এক বছরের টিপের সাপ্লাই নিয়ে যাব। আমার জন্মেরও আগের দোকান। আছে এখনও, কিন্তু বন্ধ। পার্মানেন্টলি বন্ধ বলে মনে হল না। কারণ সামনের বারান্দায় বাজার বসেনি আর শাটারটাও ধুলোধূসরিত না। যেন পার্মানেন্টলি বন্ধ হয়ে না যায় ঠাকুর। পৃথিবীতে এখনও কিছু থাক যা আমার থেকেও পুরনো।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পাশেই আরেকটা দোকানে আংটা থেকে টিপের পাতার সারি ঝুলছে। ঢুকলাম। আমার যা চাই নেই। ভদ্রলোক এমন খেঁচিয়ে কথা বললেন। একটার জায়গায় দুটো প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে যদি রাগ হয়ে যায় তাহলে তো বিপদ। বেরিয়ে এলাম। নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম, লোকে ক্রমাগত আজাইরা প্রশ্ন করে করে ভদ্রলোকের মেজাজ খাদের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, আমি কিছু এক্সট্রা বোকামো করিনি। ইট'স নেভার মি, ইট'স অলওয়েজ দেম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দু'দুবার বাধা পড়ল, টিপের প্ল্যান ক্যান্সেল করব কি না ভাবছি, বিজলীদি কনুই ধরে টানল। এটায় একবার দেখি সোনা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দোকানটা ছোটবেলা থেকে দেখছি কিন্তু মা কোনওদিন এই দোকান থেকে টিপ কেনেননি। এই মুহূর্তে কোনও খদ্দের নেই। কাউন্টারের ওপারে এক ভদ্রমহিলা বসে আছেন। একফালি দোকান। ভদ্রমহিলা দু'পাশে হাত ছড়িয়ে দাঁড়াতে পারবেন না। কিন্তু ঠাসা জিনিস। মেঝে থেকে সিলিংজোড়া ক্যাবিনেটে কোটি কোটি প্লাস্টিকের বাক্সে ঠাসা দুল, হার, টিপের পাতা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কাউন্টারের এপারের দুটো খালি টুলে আমি আর বিজলীদি বসলাম। বললাম, টিপ আছে? সুরুচি কোম্পানির? মেরুন রং? সাইজ পাঁচ নম্বর?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আছে আছে। ভদ্রমহিলা এই বাক্স ওই বাক্স টেনে বার করতে লাগলেন। ব্র্যান্ড মিলল, রং মিলল না। রং মিলল, সাইজ মিলল না। ভদ্রমহিলা ওই ছোট্ট জায়গায় উবু হয়ে, উঁচু হয়ে, বসে, হাফ বসে আমার ফরমায়েশি টিপ খুঁজতে গিয়ে হাঁসফাঁস হয়ে গেলেন। আমারই খারাপ লাগতে লাগল। সুরুচির জায়গায় সুতৃপ্তি হলে, মেরুনের বদলে খয়েরি হলে, পাঁচ নম্বরের বদলে ছ'নম্বর হলে যে ব্রহ্মাণ্ডের একটি চুলও এদিক থেকে ওদিক হবে না সে সত্যটা বুকের মধ্যে বিঁধতে থাকল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বললাম, থাক থাক, অত ঝামেলার দরকার নেই। এটাই বেশ কাছাকাছি হয়েছে। ভদ্রমহিলা বললেন, আরে কাছাকাছি হলে হবে, একেবারে ঠিকটা বার করতে হবে। আমার তো এটাই কাজ। অবশেষে বিজয়ীর ভঙ্গিতে একটা বাক্স হাতে ভদ্রমহিলা কাউন্টারের ওপর ভেসে উঠলেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সুরুচি। মেরুন। পাঁচ নম্বর।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">থ্যাংক ইউ বলে নুয়ে পড়ছি, ভদ্রমহিলা জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাড়ি কোথায় গো? বললাম। ওই মোড়টা চেনেন? ওই রিকশা স্ট্যান্ডটা? ওই স্কুলটা? আমার বাড়ি স্কুল পেরিয়ে তিন নম্বর। একতলা, সাদা দেওয়ালে নীল বর্ডার। তাড়াতাড়ি জুড়লাম, দু'হাজার এগারো সালের অনেক আগে থেকেই ওই রং। একদম ছোটবেলায় হলুদসবুজ ছিল। তারপর থেকে সাদানীল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভদ্রমহিলা পাঁচ সেকেন্ড ভেবে বললেন, যে বাড়ির গেটের সামনে ঝুপসি আমগাছ?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ঝুপসি আমগাছ। ভীষণ খুশি হয়ে সায় দিলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমি তো রোজ ও বাড়ির সামনে দিয়ে বাইকে করে আসি। আবার বোকার মতো চোখ কপালে তুলতে যাব, মহিলা বললেন, মানে আমার ছেলে বাইকে করে দিয়ে যায়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শরীর ঘোরালেন মহিলা। শোকেসের বাক্সের ভিড়ে গোঁজা সাদাকালো ছবিটা দেখেছি টুলে বসামাত্রই। নিরীহ ও সিরিয়াস মুখের ভদ্রলোক, প্লাস্টিকের সাদা ফুলের মালা পরে সোজা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমার স্বামী। দেড় বছর আগে চলে গেলেন। ছেলেরা চাকরিবাকরি করে। ব্যবসায় ইন্টারেস্ট নেই। খদ্দের খোঁজা শুরু হল। জলের দরও উঠছে না। কেউ বলে বেশি দাম। কেউ বলে অতটুকু জায়গায় কী হবে। আমার শরীর খারাপ। বিছানা থেকে উঠতে পারি না। বললাম, একটা লোক রেখে চালা। ছেলেরা বলল, বিশ্বাসী লোক এখন কে খুঁজে বার করবে মা? লোকের পেছনেও তো আমাদেরই দৌড়তে হবে। বাদ দাও ও সব ঝামেলা। এমনও নয় যে দোকান দারুণ চলছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমি (আমি নই, ভদ্রমহিলা) বললাম, এখনই কিছু করিস না, আমাকে ক'দিন দেখতে দে। চল্লিশ বছরের দোকান। কত কষ্টের দোকান। যখন কিচ্ছু ছিল না, তোরাও ছিলি না, এই দোকান ছিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সেই থেকে ছেলে সকালবেলা অফিস যাওয়ার আগে বাইকে করে দোকানে দিয়ে যায়। সারাদিন দোকানে থাকি। লোকজন আসে। বেচাকেনা হয়। বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে আসি। সন্ধেবেলা ছেলে আবার বাইকে করে নিয়ে যায়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অনতিদূরে লেভেল ক্রসিং-এর গেট খুলল, বন্ধ হল। আবার খুলল। মানুষের জীবনের দাম যে গত তিরিশপঁয়ত্রিশ বছরে বেড়েছে রিষড়ার লেভেল ক্রসিং দেখলেও টের পাওয়া যায়। আগে ডাণ্ডা ফেলা থাকলেও দিয়ে পাশের ফোঁকর দিয়ে পায়ে হেঁটে তো বটেই, সাইকেল বাইকও মহানন্দে যাতায়াত করত। ফোঁকর বুজিয়ে দেওয়া হয়েছে, সাইকেল যদি বা গলতে পারে, বাইক নেভার। কাজেই যখন গেট খোলে, একটি আশ্চর্য গুলজারের জন্ম হয়। সরু মোটা হর্ন, চিৎকার, দাদা এগোন চিৎকার। ব্যস্তসমস্ত লোক থাকলে অনুরোধ বর্ণময় হয়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সে সব রংবেরঙের কলরবের মধ্যে বসে বসে আমরা গল্প করতে লাগলাম। ভদ্রমহিলা বললেন, আচ্ছা একটা কথা বলব? বললাম, নিশ্চয় বলবেন। ভদ্রমহিলা বললেন, তুমি ঠিক এই টিপটাই পরতে চাও বুঝেছি, কিন্তু আরেক রকমও ট্রাই করতে পার। সাইজ একই থাকুক, শুধু মেরুনের জায়গায় কফি কালার। নিজের কপালে আঙুল ছোঁয়ালেন। এই যে আমি যেটা পরে আছি । ফর্সা কপালের নরম, পাতলা ত্বকে গাঢ় একটি টিপ ফুটে আছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একটা নিয়ে গিয়ে পরেই দেখ না। মানাবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নিলাম। কফিও নিলাম, মেরুনও নিলাম। সুরুচিও নিলাম, সুতৃপ্তিও নিলাম। পাঁচ নম্বর তো নিলামই, সাহস করে ছ'নম্বরও নিলাম এক প্যাকেট। সব মিলিয়ে ছাব্বিশটাকা বিল হল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বিজলীদিকেও গছালাম দু'পাতা কফি কালার। মা থাকলে মায়ের জন্যও নিতাম। মায়ের রিঅ্যাকশন কী হবে জানা সত্ত্বেও। মা চিরদিন আঙুলকাটা মোজা পরে এসেছেন, যা গোড়ালি ছাড়িয়ে এক বিঘৎ ওপর পর্যন্ত যায়। রিসেন্টলি জেনেছি মোজার রংটাকে "পিচ কালার" বলে, আমরা চিরদিন "স্কিন কালার" বলে এসেছি। একবার কী ভেবে, নিজের সঙ্গে মায়ের জন্যও ক'জোড়া অ্যাংকল সকস্ কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। মা হাসির চোটে খাট থেকে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলেন। এখন আমি এই পুঁচকে মোজা পরব সোনা? তুই পর।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">টিপের পাতা দেখলেও মা তাই বলতেন। এখন আমি মেরুন ছেড়ে কফিরঙের টিপ ধরব সোনা? তুই পর। মায়ের কথা শুনব বলেই কফি রঙের টিপ পরেই এই মুহূর্তে কফিশপে কফি খেতে খেতে টাইপ করছি। মামার জন্মদিনের ফাংশানেও ওই টিপ পরেই গেছিলাম। জগদ্ধাত্রী ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলামও ওই টিপ পরেই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1" style="text-align: center;">*****</div>
<div class="p2" style="text-align: center;">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্রথমটা উচ্চাশা ছিল চন্দননগরে যাওয়ার। অনেক ছোটবেলায় গেছিলাম একবার। বিজলীদি, শ্যামলী দুজনেই চন্দননগরের মেয়ে। দুজনেই উৎসাহী ছিল আমাকে চন্দননগরের ঠাকুর দেখতে নিয়ে যাওয়ায়। রিষড়া অনেকদিন ধরে জগদ্ধাত্রী পুজোয় সেকেন্ড চন্দননগর হওয়ার চেষ্টা করছে। অক্ষম চেষ্টা। ফ্রেঞ্চটেঞ্চ নিয়ে চন্দননগরের ঐতিহ্যই আলাদা। রিষড়ার ঐতিহ্য, কাল যা বললাম, রঘু ডাকাত আর হুব্বা শ্যামল। ভিড় টানতে রিষড়ায় পুজোর হুলাবিলা শুরু হয় নবমী থেকে। অষ্টমী পর্যন্ত সবাই চন্দননগরের ঠাকুর দেখে নিয়ে তারপর রিষড়ায় আসবে, এই যুক্তিতে। বছরের পর বছর এ জিনিস চলতে চলতে এমন হয়েছে, অনেককে বলতে শুনেছি, চন্দননগরের ষষ্ঠী তো অমুকদিন শুরু হচ্ছে জানি, আমাদের ষষ্ঠী যেন কবে?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বাড়িতে গেলে বিছানা থেকে নামতেই অর্ধেক এনার্জি খরচ হয়ে যায়, ট্রেনে চড়ে চন্দননগর গিয়ে হেঁটে হেঁটে ঠাকুর দেখার কল্পনাতেই কান্না পাচ্ছিল। এদিকে কমিট করে ফেলেছি। শরীরমনের শলায় ঠিক সময় গা গরম হল, সঙ্গে ঘং ঘং কাশি। কাশি থামিয়ে বললাম, আমি পারব, কখন বেরোতে হবে বল। সেন্টেন্স শেষ না হতে হতে আবার কাশির বন্যা। সবাই আদাকুচি নিয়ে দৌড়ে এসে বলল, পাগল নাকি, এই শরীরে কেউ বেরোয়? মশারির ভেতর শুয়ে শুয়ে ফোনে ইউটিউব দেখ সোনা, কোথাও বেরোতে হবে না। সমস্ত মনের জোর খরচ করে চোখেমুখে হতাশা ফোটালাম। বাবা বললেন, আচ্ছা, না হয় একবেলা বেরোনো যাবে। চন্দননগরের প্রশ্নই ওঠে না, এমনকি রেললাইনের ওপারের ভিড়ভাট্টায় যাওয়ারও দরকার নেই। এপারের কয়েকটা প্যান্ডেল দেখা হবে, ব্যস।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তাই দেখা হল। রিষড়ার প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে এবার সাসটেনেবিলিটির আঁচ। ঝাড়লন্ঠনের বদলে ঝাড়। দিল্লি রোডের পাশের বাঁশবন খালি করে এনে প্যান্ডেলে পুঁতে দিয়েছে। রাতের রেনফরেস্টের ফিলিং আনার জন্য টিমটিমে দু'চারটে টুনি জোনাকির মতো জ্বলছে নিভছে। ঝাড়ের ভেতর থেকে উঁকি মারছে বাঘ ভাল্লুক, ডাল থেকে ঝুলছে বাঁদর। একসাইডে ছোট পুকুর থেকে কুমীরের করাল হাঁ-মুণ্ডু ভেসে রয়েছে। গণ্ডার আছে, জলহস্তী আছে, পেঙ্গুইনও দেখলাম একটা প্যান্ডেলে। সর্বপ্রজাতিসমন্বয়। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বাগপাড়ার প্যান্ডেলের সামনে চমৎকার একটা শাড়ি (আর কফি কালারের টিপ) পরে বিজলীদি দাঁড়িয়ে ছিল। ছোটবেলায় বাগপাড়ার প্যান্ডেলে প্রত্যেকবছর একটা সারপ্রাইজ থাকত। কোনও বছর মা দুর্গা স্কার্টব্লাউজ পরতেন, কোনও বছর দিব্যা ভারতীর মতো দেখতে হতেন, এক বছর মেধা পাটকরের লুক অ্যালাইকও হয়েছিলেন মনে আছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এ বছর জগদ্ধাত্রী ঠাকুরের মুখে বিশেষ কিছু সারপ্রাইজ দেখলাম না, তবে প্যান্ডেল খুবই কায়দার। যে রকম কায়দার প্যান্ডেলে ঘন ঘন অ্যানাউন্স করতে হয়, দয়া করে প্যান্ডেলের গায়ে হাত দেবেন না, আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা চারদিকে চরকি ঘোরা ঘুরছেন, প্যান্ডেলে হাত ছুঁইয়েছেন কি আপনাকে অপমানের একশা করবেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">স্বেচ্ছাসেবীতে মনে পড়ল। বাগপাড়ায় পৌঁছনোর আগে একটা প্রায়ান্ধকার গলির ভেতর একটা ছোট প্যান্ডেলে ঢুকেছিলাম। প্যান্ডেলটা আছে যে বুঝিনি। বাবা বললেন শর্ট কাট হবে তাই গলিতে ঢুকেছিলাম। প্যান্ডেল বেরিয়ে পড়ল। ছোট প্যান্ডেল, ছোট বাজেটে যত্ন করে সাজানো। জগদ্ধাত্রীও বড় প্যান্ডেলের মত ডাকাবুকো নন, নার্ভাস হেসে বেদীর সামনে মেঝের একটা বিন্দুতে টানা টানা দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছেন। সিংহের পিঠে চড়ে আছেন তো কি, ভক্তদের সঙ্গে আই কনট্যাক্ট করার লজ্জা পুরো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। দেখছি, এমন সময় বাবার দিকে একজন স্বেচ্ছাসেবী দৌড়ে এলেন। হাইট আড়াই ফুট, মাথায় ভাইসার টুপি, ক্লাবের নাম লেখা ফ্রি-সাইজ ব্যাজ বুকের পুরোটা ঢেকে ফেলেছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বাবার দিকে ঘাড় প্রায় সমকোণে তুলে স্বেচ্ছাসেবী বললেন, দাদু, ঠাকুর দেখা হয়ে গেলে ওই দরজা দিয়ে বেরোতে হবে। স্বেচ্ছাসেবীর ছোট তর্জনী ফলো করে প্যান্ডেলের গায়ে সেলোটেপ সাঁটা এ ফোর কাগজটা চোখে পড়ল, যাতে বাহাত্তর ফন্টে 'বাহির' লেখা আছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বাবা বললেন, নিশ্চয় দাদু, ওই দরজা দিয়েই বেরোব। আশ্বস্ত হয়ে স্বেচ্ছাসেবী চেয়ারে গিয়ে বসলেন। পা মাটি থেকে এক বিঘত ওপরে দুলছে। দেখা শেষ করে নির্দিষ্ট দরজা দিয়ে বেরোচ্ছি, প্যান্ডেলে নতুন দর্শনার্থী ঢোকার শব্দ হল। অমনি স্বেচ্ছাসেবী চেয়ার ছেড়ে তাঁদের দিকে দৌড়ে গেলেন। পেছন ফিরে দেখলাম ঘাড় প্রায় সমকোণে তোলা, ছোট তর্জনী 'বাহির'-এর দিকে নির্দেশ করছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ততক্ষণে সন্ধে গাঢ় হয়েছে। রাস্তার দুপাশে আলোর ময়ূর পূর্ণ মহিমায় পেখম মেলেছে। বাবা জানালেন নেক্সট গন্তব্য নাকি মিউনিসিপ্যালিটির ইম্পরট্যান্ট কোনও ভদ্রলোকের ক্লাব। কাজেই বাজেট আনলিমিটেড। প্যান্ডেলে ঢোকার গলি ওপচানো লাইন ধীরে এগোচ্ছে। লাইনের সামনে দিকে সবার হাতে মোবাইল আকাশে। যদিও মূর্তি সেখান থেকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কাজেই মূর্তির ছবি তুলছে না কেউ। কীসের তুলছে বুঝলাম আরেকটু এগিয়ে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গলির দুপাশে মানুষপ্রমাণ পুতুল দাঁড় করানো। নিশ্চয় কোনও রোমহর্ষক ঘটনা পুতুলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কাঠগড়ার আভাস পাচ্ছি কাজেই হয় ক্ষুদিরাম নয় ধনঞ্জয়। ধৈর্য ধরে এগোলাম। কালো কোট পরা একজন উকিল পুতুল, কয়েকজন পুতুলের হাতে প্ল্যাকার্ড। ব্রিটিশ ভারত ছাড়ো। যাক, ধনঞ্জয় নন। কয়েকজন পুলিস লাঠি তুলে উদ্যত। কাঠগড়ায় একজন ডোরাকাটা ফতুয়া আর হাফ প্যান্ট পড়ে দাঁড়ানো। উকিলের মেক আপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বদ লোক, কয়েদীর মেক আপ দেখেই বীর। গলির অন্তে লাস্ট পুতুলটি, অর্থাৎ ক্ষুদিরাম, গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলছেন। পুতুলগুলো কেমন অবিকল জ্যান্ত মানুষের মতোই বানিয়েছে সে নিয়ে বিজলীদির কানে কানে বলতে যাব, এমন সময় স্পষ্ট দেখলাম, এই এখন কফিশপের টেবিলটপের জিগজ্যাগ মোজাইক যে রকম স্পষ্ট দেখছি, ক্ষুদিরাম চোখের পাতা ফেললেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ক্ষুদিরাম জ্যান্ত। পুলিশ জ্যান্ত। উকিল জ্যান্ত। জনতা জ্যান্ত। সকলে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বাবা বললেন এরা সবাই নাকি যোগব্যায়াম করেন তাই এতক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন। ভদ্রলোকদের ক্ষমতা আছে, পলকও ফেলছেন অনেক পরপর। তবু যখনই ক্ষুদিরাম চোখের পাতা ফেলছেন জনতা হই হই করে উঠছে। ফ্ল্যাশ চমকাচ্ছে ঘন ঘন। কেউ কেউ আবার কিউরিয়াসভাবে ব্যাপারটার ভিডিও তুলছেন। গুজগুজ ফুসফুস চলছে, ক্ষুদিরামের বয়সটা একটু বেশি হয়ে গেছে না?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্যান্ডেলের দিকে হাঁটলাম। এই রোমহর্ষক আর্ট ফর্মটা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়েছিলাম কী করে? ছোটবেলায় প্যান্ডেলে জ্যান্ত দুর্গা সরস্বতী দেখেছি কত। কিন্তু এখন হর্ষের থেকে হরর বেশি জাগছে। বিজলীদির কনুই ধরে টানছি কিন্তু বিজলীদি পাত্তা দিচ্ছে না, হাসি হাসি মুখে ছবি তুলছে। বলছে, রাইকে কাল নিয়ে আসব। রাই হচ্ছে বিজলীদির দশ বছরের নাতনি। বাবাও উত্তেজিত। উঁকিঝুঁকি মেরে বোঝার চেষ্টা করছেন ক্ষুদিরাম ফাঁসির দড়ি থেকে ঝুলছেন কী করে। বলছেন, বুঝলি সোনা, বুঝলে বিজলী, পায়ের তলায় ট্রান্সপারেন্ট বাক্সমতো কিছু রেখেছে। না হলে ইমপসিবল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একা একাই প্যান্ডেলের ভেতর ঢুকে পড়লাম। এখন মাটির প্রতিমা দেখে প্যালপিটেশন কমাতে হবে। একমুহূর্তের জন্য একটা ভয়ানক সন্দেহ গুঁড়ি মেরেছিল বুকের ভেতর। না বাবা। জগদ্ধাত্রী নিথর। পাষাণবৎ। ঠুঁটো। ঠাকুরদেবতাদের ঠিক যেমন আমি পছন্দ করি। তাঁদের জ্যান্ত হয়ে ওঠার মজা কুন্তী অহল্যা টের পেয়েছেন। আর কাউকে যেন না পেতে হয়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">লাস্ট স্টপ ব্রহ্মানন্দ স্কুলের মাঠ। সে মাঠে পুজোর লাগোয়া মেলা বসে। মেলায় ডিনার সেরে বিজলীদি নিজের বাড়ি চলে যাব, আমি আর বাবা আমাদের বাড়ি চলে আসব। ডিনারের আগে আরও একটা মজা হবে অবশ্য, তবে শুধু আমার।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শকুন্তলা কালীবাড়ির মেলায় আমাকে নিয়ে সেজকাকু জায়ান্ট হুইলে চড়েছিলেন, নেমে বলেছিলেন, এই শেষ সোনা, আর কোনওদিন আমাকে চড়তে বলবি না, বাপ রে বাপ রে বাপ। সেজকাকু হাতে চকোলেট বোমা ফাটাতেন আর পাড়ায় কারও বাড়িতে ডাকাত পড়লে খালি হাতে সেদিকে দৌড়ে যেতেন। তারপর আমি আর কাউকে আমার সঙ্গে জায়ান্ট হুইল চড়তে জোর করিনি। আগেরবার মনসা না আর কোনও দেবীর পুজোয় ওই ব্রহ্মানন্দের মাঠেই সম্পূর্ণ একা চড়তে হল। গোটা হুইল খালি। একা আমি ঘুরছি। এবার অন্ততঃ কিছু লোক আছে। পাশের কাত করে রাখা বড় গোল জায়গায় জোড়া জোড়ায় লোক গাড়িতে বসে এলোপাথাড়ি ঘুরছে। গাড়িতে গাড়িতে ধাক্কা খাচ্ছে। আবার সরে আসছে। লোকজনের মুখ দেখে মনে হচ্ছে ব্যাপারটা খুবই থ্রিলিং। কিন্তু আমার কখনও উৎসাহ হয়নি এগুলোতে চড়ার। কারণ আমার ছোটবেলায় আমি এই খেলাটা খেলিনি। আর আমি নতুন থ্রিল খুঁজছি না। পুরোনো থ্রিল ফিরে পেতে চাইছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">টিকিট কেটে খাঁচার ভেতর ঢুকলাম। পনেরো থেকে কুড়ি বছরের কিছু পাটকাঠি সাইজের ছেলে গোটা ব্যাপারটার তত্ত্বাবধান করছে। একজন একটা দুলন্ত খোপ স্টেডি করে ধরল। ঢুকে গেলাম। অলরেডি দুটো মেয়ে বসে আছে। এত ছোট আর এত রোগা যে খুঁটিয়ে না দেখলে মিস হয়ে যেতে পারে। আমি মেয়েদুটোর উল্টোদিকের বেঞ্চে বসলাম। এই বয়সের মেয়ে দেখলে পারসোন্যাল বাউন্ডারি ক্রস না করে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। নাম জিজ্ঞাসা করলাম। ক্লাস নাইনের অস্মিতা মোদক আর ক্লাস সিক্সের দীপা দাস। অস্মিতা বলল, ওরা নাকি শিওর হতে পারছিল না এটাতে চড়বে না পাশেরটায়। কোনওটাতেই আগে চড়েনি কোনওদিন। সাহস করে এটাতেই চড়েছে। আমি বললাম, ভেরি গুড চয়েস। কীসের সঙ্গে কীসের তুলনা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এক পাক ঘুরতে না ঘুরতে নাগরদোলা থামল। আমাদের ঠিক পরের খোপে এক ভদ্রমহিলা ও পুরুষসঙ্গী উঠেছিলেন, হাত তুলে নেমে গেলেন। অস্মিতা জিজ্ঞাসা করল, আপনি নেমে যাবেন না তো? তাহলে আমরাও নেমে যাব। আমি বললাম, শেষ না দেখে নামছি না। গ্যাঁট হয়ে বসে থাক।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">হুইল ঘুরে চলল। আমরা স্মলটক করে চললাম। দুজনেরই পরীক্ষা শুরু হবে সামনের সপ্তাহে। দীপা সন্দেহ প্রকাশ করছিল, যদি ঠাণ্ডা লেগে যায়। আমি যথাসাধ্য আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। লাগবে না মনে হয়, হলে ক্যালপল খেয়ে নেবে। কথোপকথন রীতিমত উচ্চগ্রামে চালাতে হচ্ছিল কারণ মেলা থেকে জনতা, মাইক থেকে কিশোরকুমার গলা ফাটিয়ে চেল্লাছিলেন। নাগরদোলা মাঝে মাঝে থামছিল। লোক উঠছিল, নামছিল। একবার থামল, যখন আমি অস্মিতা আর দীপা একেবারে টঙে। আশপাশের সমস্ত বাড়ির মাথা ছাড়িয়ে, সমস্ত নারকেল গাছের মাথা ছাড়িয়ে। খালি তিন নম্বরের ট্যাংক আমাদের থেকে লম্বা। আর চাঁদ। নিচে কাত হওয়া গোকার্ট থেকে জনতার উচ্ছ্বাস লাফ দিয়ে আমাদের ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করল। কিশোরকুমার গাইতে লাগলেন, মিলনতিথির পূর্ণিমা চাঁদ ঘোচায় অন্ধকার। পূর্ণিমার বদলে নবমীর আধখাওয়া চাঁদ মাথায় নিয়ে আমি, অস্মিতা আর দীপা, শূন্যের মধ্যে অল্প অল্প দুলতে লাগলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নামার আগে অস্মিতা আমাকে বলল, আপনি ছিলেন ভাগ্যিস। আমি বললাম, তোমরা ছিলে ভাগ্যিস।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তারপর মেলার দোকানে যখন বসে ঢাকাই পরোটা খাচ্ছি, বাবা বললেন, সোনা, দেখ তোর বন্ধুরাও এসেছে। এখানে আমার বন্ধু কোথা থেকে এল ভেবে আমি মুখ তুলে গেটের দিকে তাকালাম। অস্মিতা আর দীপা একটা ছেলের সঙ্গে ঢুকছে। আমিও তাকিয়েছি আর ছেলেটাও ওদের খোঁচা মেরে আমার দিকে দেখাচ্ছে। অস্মিতা আর দীপা আমাকে দেখে হাসিমুখে হাত নাড়ল। আমিও জোরে জোরে হাত নাড়লাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com6tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-78470663388057861172024-02-14T10:30:00.007+05:302024-02-14T10:30:00.122+05:30আজকের জন্য<p> </p>
<div style="text-align: center;"><iframe allow="accelerometer; autoplay; clipboard-write; encrypted-media; gyroscope; picture-in-picture; web-share" allowfullscreen="" frameborder="0" height="315" src="https://www.youtube.com/embed/3mUjg9je2Lc?si=eG8ZgIy7f5M_TOrr" title="YouTube video player" width="560"></iframe></div><div style="text-align: center;"><br /></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com8tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-63856555497327824642024-02-12T16:37:00.002+05:302024-02-12T21:27:06.861+05:30নভেম্বর<div class="p2"><br /></div><div class="p2">আমাদের ওদিকে চিরকালই হিংসার ঐতিহ্য জ্বলজ্বলে। রিষড়ার জাগ্রততম ভগবান সিদ্ধেশ্বরী কালীঠাকুর, যার থানে নিয়মিত মুণ্ডু কাটা পড়ত। রিষড়ার বিখ্যাততম বাসিন্দা রঘু ডাকাত। ব্রাত্য বসুর সিনেমা 'হুব্বা' মুক্তি পেয়েছে, এবার রঘুবাবুর জনপ্রিয়তা কমতে পারে। হুব্বা শ্যামলও, এখনও যদি কেউ না জেনে থাকেন, আমাদের পাড়ার লোক। শ্বশুরবাড়ির পাড়ার গুণ্ডার সিনেমা দেখার জন্য অর্চিষ্মান পাগল হয়ে উঠেছে। এদিকে 'হুব্বা' দিল্লিতে এখনও রিলিজ করেনি, করবে কি না বোঝা যাচ্ছে না। ওয়ার্স্ট কেসে হইচইতে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার দেখতে হবে। যেখানেই দেখি না কেন অবান্তরে প্রতিক্রিয়া দেব। উইথ ব্যক্তিগত অ্যানেকডোট। যার খোঁজ ব্রাত্য বসুর রিসার্চারদের পক্ষে পাওয়া অসম্ভব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রঘু, হুব্বা দুজনেই গত হয়েছেন, পাড়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নতুন সিন্ডিকেট। দাপটের আঁচ পেলাম বাড়ি গিয়ে। আমার আর মায়ের শোয়ার ঘরের সিলিং ফ্যানের পাশেই একটা এস-হুক থেকে ঝুলছে মায়ের পুরোনো শাড়ি দিয়ে বানানো প্রকাণ্ড পুঁটলি। আগের বছর তিনটে পাকা কাঁঠাল চুরি হয়ে যাওয়ার শোক বাবা কাটাতে পারেননি। এ বছর কলার একটা কাঁদি মোটামুটি কাঁচকলা স্টেজে যাওয়া মাত্র কেটে এনে ঘরের ভেতর সিলিং থেকে ঝুলিয়ে পাকানোর ফন্দি এঁটেছেন। সফলও হয়েছেন। আমি থাকতে থাকতেই কলা পেকে গিয়েছিল। নামিয়ে খাওয়া হল। বাবা বললেন, একেবারে খাঁটি অরগ্যানিক, সোনা। বাজারে পাবি না। খেলাম গোটা দুয়েক। সত্যি, খুবই মিষ্টি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সিন্ডিকেটের সাম্প্রতিকতম অ্যাটাকটাও ঘটল আমি থাকতে থাকতেই। দিল্লিতেই থাকি বা রিষড়াতে, আমার ঘুম ভাঙার সময় সাধারণতঃ চারপাশ অন্ধকার এবং নিস্তব্ধ থাকে। দিল্লিতে ভদ্রতার ধার ধারি না, রিষড়াতে ভীষণ পা টিপে টিপে, অন্ধকারে মোবাইলের টর্চ জ্বেলে দাঁতে কামড়ে ধরে তার আলোয় দরজাটরজা গ্রিলটিল খুলি। এত সার্কাসের কোনও দরকারই নেই। ভেতরের বাথরুমে গেলেই হয়। আবার হয়ও না। হয় না যে তাতে মানুষের চরিত্র (বা হয়তো আমার চরিত্রই) প্রকাশ পায়। ছোটবেলায় ভাবখানা ছিল আমাদের বাড়িতে যে বাথরুম "অ্যাটাচড" না সেটাই মরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ। এখন টোটাল পালটি খেয়েছি। বাথরুমের মতো একটা বিকট জিনিস ঘাড়ের ওপর নিয়ে না বসে থাকতে পারাটা থাকাটা প্রিভিলেজ বলে গণ্য করি। কাজেই ভোর চারটের সময় ওই রকম কসরত করে দরজার খিল আর গ্রিলের তালা খুলতে গিয়ে অবধারিত ধুমধাম করে ফেলি। ভণ্ডের মতো "সরি সরি" বলি আর শ্যামলী ভদ্রলোকের মতো আশ্বাস দেয়। সোনা, অত আস্তে করতে হবে না, আমি জেগে আছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সেদিন আমি সবার ঘুম ভাঙানোর আগেই সবাই আমার ঘুম ভাঙালো। শুয়ে শুয়েই কনফিউজড হলাম। বাইরে এখনও তো তেমন আলো দেখা যাচ্ছে না অথচ প্রচুর লোকের গলা শোনা যাচ্ছে। শৈশবের একটা ট্রমা খাঁচা খুলল। ডাকাত পড়েছে নির্ঘাত কারও বাড়িতে। আমাদের বাড়িতেই নাকি কে জানে। অবশ্য আমাদের বাড়িতে কিছু নেওয়ার নেই। কলার কাঁদিটা গাছে থাকলে তবুও না হয়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রাস্তায় কে যেন অট্টহাস্য করছে। বুচিদিদি। ডাকাত পড়লে এত হাসতে পারত না মনে হয়। মশারি থেকে বেরোলাম। জানালা আধইঞ্চি ফাঁক করে চোখ ঠেকালাম। রাস্তায় বেরোনোর অবস্থায় নেই প্রথমতঃ, তাছাড়া ঘুম থেকে উঠেই এত লৌকিকতার মধ্যে পড়লে রিকভারিতে সারাদিন লেগে যাবে। বাবা রাস্তায়, শ্যামলী রাস্তায়, বুচিদিদিদের গোটা বাড়ি রাস্তায়, ঠাকুরকাকু রাস্তায়, রত্নাকাকিমা রাস্তায়, বুবুন, বুবুনের বউ সবাই রাস্তায়। যা বুঝলাম, বুবুনদের কলাগাছ থেকে মোচা লুঠ হয়ে গেছে। এবং ঘটনাটা ঘটেছে বেশ অনেকক্ষণ আগেই। জমায়েত ভাঙছে। অর্থাৎ ঘটনাটা ঘটেছে শেষরাতে। শেষরাতে টের পাওয়া গেল কী করে? ঠাকুমা থাকলে তাও না হয় বুঝতাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ততক্ষণে শ্যামলী ঘরে চলে এসেছে। আমাকে দেখে বলল, আরে যা কাণ্ড হল সোনা। বললাম, কী করে টের পাওয়া গেল? শ্যামলী বলল, গঙ্গারাম চেঁচাল। গঙ্গারামের বাবামা আন্দামান থেকে এসেছিলেন কুড়ি বছর আগে, বুবুনদের পাশের বাড়িটা কিনে। আমাদের পাড়ার টাইমেলাইনে কুড়ি বছরের নাগরিকত্ব ইজ নাথিং। তার ওপর ওঁরা তেমন মিশুকেও না। কাজেই গঙ্গারামের আসল নাম কেউ জানত না, আন্দামানবাড়ির ছেলে বলেই কাজ চালাত। বছরখানেক আগে বাড়ি গিয়ে প্রথমবার সবাইকে ছেলেটিকে "গঙ্গারাম" সম্বোধন করতে শুনে অবাক হই। ওর নাম গঙ্গারাম বুঝি? এতদিনে জানা গেল? তাতে শ্যামলী খুব হেসেছিল। বলল, ছেলেটা নাকি সন্ধেবেলা কী একটা সিরিয়াল দেখে যাতে চিৎকার করে "গঙ্গারাআআআআম" গান হয়। তাই শ্যামলী ওর নাম রেখেছে গঙ্গারাম। শ্যামলীর দেখাদিখি বাকিরাও ওকে আজকাল গঙ্গারাম বলে উল্লেখ করছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বেলা হতে রত্নাকাকিমার হাঁকডাক শুনে বাবা বেরোলেন। ফিরলেন বিজয়ীর ভঙ্গিতে ইয়ালম্বা থোড় নিয়ে। কলাগাছ যেহেতু ওষধি গাছ একবার ফল হওয়ার পর তার আর কোনও কার্যকারিতা নেই। উল্টে যাতায়াতের পথে যতবার চোখ পড়বে যন্ত্রণা হবে। উপড়ে ফেলাই বুদ্ধিমানের। তাই কাকিমারা গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোটি কোটি থোড় বেরিয়েছে। সেগুলো বিতরণ করছেন। বাবা বললেন, দেখলি সোনা, ভাবছিলাম আজ তরকারি কিছু নেই, বাজারে যেতে হবে। কেমন জুটে গেল। আমাকে আজ বাজার যেতে হবে না বলেই বুবুনদের মোচা চুরি হয়েছে। থোড় থোড় পে লিখ্খা হ্যায় খানেওয়ালে কা নাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যে সাইজের থোড়, দু'দিন ধরে খাওয়া হল। মুগডালে দেওয়া হল। আলু দিয়ে ভাজাভাজা করা হল। আরও কত কিছু কত রকম করে যে রান্না হয় বাড়িতে। দুপুর যত এগোয়, টেবিলে বাটির লাইন লেগে যায়। ঢাকনা তুলে তুলে দেখি। মা থাকলে বকতেন। একেবারে খাওয়ার সময় যা দেওয়া হবে খাবে সোনা। তুলে তুলে দেখবে না। মাও নেই, আমার সহবতও লোপ পেয়েছে। শুধু তুলে দেখি না, ফিংগার ফুড যেমন হিঞ্চে শাকের বড়া, ডালের বড়া, শিউলি পাতার বড়া ইত্যাদি দেখলে একটা তুলে খেয়েও ফেলি। বকুনির বদলে বিজলীদি, মীরামাসি, শ্যামলী যে যখন থাকে বাটি নিয়ে দৌড়ে আসে। বাটিতে নিয়ে খাও সোনা, বলে একটার বদলে চারটে বড়া বাটিতে তুলে দেয়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একদিন ছোট বাটিটার ঢাকনা তুলে দেখি ঘন সবুজ রঙের পেস্ট মতো কী একটা। আশপাশ ফাঁকা দেখে তর্জনীর ডগায় নিয়ে জিভে ছোঁয়ালাম। ধনেপাতা বাটা। সাধারণ খাবার, কিন্তু আমার কাছে নয়। এমন নয় যে দিল্লির ভাড়াবাড়িতে ধনেপাতা আসে না কিংবা বেটে খাওয়ার জন্য মিক্সি নেই। ধনেপাতাও আছে মিক্সিও আছে, যেটা নেই তা হল আমার উদ্যোগ। প্রসেনজিৎ "কী হবে?" জিজ্ঞাসা করলে পাঁচ সেকেন্ড সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বলি, আলুভাজা। আলুভাজা ছাড়াও যে কিছু রান্না হয় আমাদের বাড়িতে তার কৃতিত্ব অর্চিষ্মানের। মেনু তৈরিতেও অর্চিষ্মান আমার থেকে বেটার। নানারকম ভেবে বার করে। আজ পোস্তবাটা, কাল খিচুড়ি, পরশু চাউমিন। হয়তো এটাও সারভাইভ্যালের তাগিদ। না হলে ওকে রোজ আলুভাজা দিয়েই সারতে হত।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শাক থেকে শুরু করে ডাল তরকারি হয়ে টক দই সবই ছিল। আমি ধনেপাতাবাটা দিয়েই অর্ধেক ভাত খেয়ে ফেললাম। অন্ততঃ পাঁচবার বললাম, বাবা কী ভালো লাগছে খেতে। সেই থেকে বাবা রোজ ধনেপাতা আনিয়ে বাটালেন। একদিন কচুবাটা হল, একদিন খারকোল পাতা বাটা, একদিন পোস্তবাটা। কিন্তু ধনেপাতাবাটা রোজ হল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একদিন খেতে বসে বললাম, আচ্ছা বাবা ছোটবেলায় আরেকরকম বাটা হত মনে আছে? আমাদা বাটা? আমাদা বানানটা এভাবে লিখলাম কারণ অনেকদিন পর্যন্ত আমার মাথাতেই আসেনি যে আমাদা বলে কোনও বস্তু নেই, ব্যাপারটা আম ও আদার সন্ধি। বা হয়তো সন্ধিও নয়। হয়তো দুটো সম্পূর্ণ আলাদা শব্দ। আম আদা। যেমন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বললাম, যদিও খুঁজিনি, সি আর পার্কে নির্ঘাত পাওয়া যায় না। রিষড়া বাজারে পাওয়া যায় গো?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বাবা আর বিজলীদি দৃষ্টি বিনিময় করল। বিজলীদি বলল, দাদা দা'টা কোথায়? বাবা বললেন, সিঁড়ির তলায় দেখ তো। সেদিনই তো ধার দেওয়া হল। আমি মাথা নিচু রেখে পাতের ভাত নাড়াচাড়া করলাম। সামান্য আমাদা বাটা খেতে চাওয়ার পরিণতি এত দূর? বিজলীদি ধীরেসুস্থে সিঁড়ির তলার দিকে এগোল। বাবার তর সইছে না। টেবিলে বসেই চেঁচাচ্ছেন, পেলে? বিজলী? পেলে? বিজলীদি বলল, হ্যাঁ দাদা। কোনও কারণে বিজলীদির গলাটা সিঁড়ির তলা থেকে আসছে না। বাগানের দিক থেকে আসছে। আমাদের খাওয়া শেষ। বাবা বললেন, চ' একটা জিনিস দেখবি সোনা? এখন যা বলবে করব বাবা। বাগানের দিকে হাঁটছি বাবার পেছন পেছন। ঈশান কোণের নারকেল আর ডুমুর গাছটার মাঝের জমিতে ফোয়ারার মতো কয়েকটা পাতা, শুকিয়ে উঠেছে। বিজলীদি উবু হয়ে বসে কোপ মারছে। দৌড়ে গেলাম। ওড়নাটা দিয়ে জোরে জোরে হাওয়া করতে লাগলাম। ওখানটায় যা মশা, ইজিলি উড়িয়ে নিয়ে যাবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পরদিন সব ভাত ধনেপাতাবাটা আর আমাদাবাটা দিয়েই খেয়ে নিয়েছিলাম। বিজলীদি নানারকম সাধছিল। ডাল নাও সোনা? আলুরদম? মোচা? বাবা বললেন, ওর যা পছন্দ তাই খেতে দাও। এ সব পায় না। বিজলীদি বলল, কেন তোমাদের ছেলেটা কী যেন নাম, ও পারে না? আমি বললাম, না না প্রসেনজিতের দোষ না। যা বলি সব করে দেয়। পোস্ত বাটে তো মিক্সিতে। বাবা মাথা নাড়লেন। ধুস, মিক্সিতে এ সব হয় নাকি। শিলনোড়া লাগে। যদি বলিস ওদিকে যাওয়ার সময় নিয়ে যেতে পারি, ট্রেনে অসুবিধে হবে না। বাবাকে নিরস্ত করলাম। অত পরিশ্রম করতে হবে না। আমি জোগাড় করে নেব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দোনামনা হয়েছিল। এই সব স্পেশালিটি অ্যাপ্লায়েন্সেসের কি সত্যি দরকার আছে? বাড়ি পরিষ্কারের একটা থিওরি শুনেছি, যে জিনিসটা গত ছ'মাস ব্যবহার হয়নি নিশ্চিত থাকা যায় নেক্সট ছ'বছরও সেটার দরকার পড়বে না। যাকে ছ'মাস মনে পড়েনি তাকে চিরজীবনের মতো ভুলে যাওয়াই ভালো। অর্চিষ্মান আর আমার শিলনোড়াবিহীন সংসারের বয়স বারো হতে চলল, তার আগে আমার একলার রান্নাঘরেও শিলনোড়া ছিল না কখনও। হয়তো কেনাই সার হবে। কতদিনই বা আর বাঁচব। তারপর মনে হল বেশিদিন বাঁচব না বলেই শিলনোড়ার শখটা মিটিয়ে ফেলা দরকার। দাদুর দোকানের উল্টোদিকে সিঁড়ির নিচে একজন এ ধরনের যন্ত্রপাতি নিয়ে বসেন। ওঁর টেবিলে নারকেলকুরুনি, ডালঘুঁটুনি সব দেখেছি, শিলনোড়া মনে পড়ছে না। অ্যামাজন থেকেই অর্ডার করব ভাবলাম। কিন্তু অধিকাংশেরই মাপটাপ ঠিক করে লেখা নেই। পাছে খেলনাবাটি এসে উপস্থিত হয় কিংবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিলনোড়া সেই ভয়ে প্রসেনজিৎকেই বললাম। প্রসেনজিৎ অ্যামাজনকে অন্তর থেকে অবিশ্বাস করে। তার থেকেও কম বিশ্বাস করে আমাকে। বলল, তুমি আবার এ সব কিনতে যেয়ো না। কী আনতে কী নিয়ে আসবে। আমি গোবিন্দপুরী থেকে ভালো দেখে এনে দেব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্রতীক্ষায় আছি। একটা কিছু ঘটবে জীবনে অবশেষে। অর্চিষ্মানকে হুমকি দিয়েছি, এবার থেকে বাজারে যা দেখব কিনে এনে বেটে খেয়ে ফেলব। অর্চিষ্মান বাংলাদেশ গিয়ে গিয়ে বাটাপ্রেমিক হয়ে উঠেছে। বলছে, একদিন চিংড়িবাটা খাব। দারুণ খেতে। তুমি সেদিন কালোজিরে বাটা করিয়ো। সেটাও খারাপ না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মাঝে আরেকবার সংশয় জেগেছিল। যেদিন অর্চিষ্মানকে সেই বেড়ালের ভিডিওটা পাঠালাম। যে ভিডিওটায় একজন একটা আনারস মাঝখান থেকে আড়াআড়ি কেটে, ওপরের অংশের ভেতরটা কুরিয়ে ফেলে দিয়ে সেটাকে একটা হেলমেটের আকার দিয়ে পোষা বেড়ালের মাথায় পরিয়েছেন। আনারসের পাতাগুলো মুকুটের পালকের মতো জেগে আছে। এত সুন্দর ভিডিও। দুটো টিক পড়ে গেছে অর্থাৎ অর্চিষ্মান দেখেছে। অথচ কোনও রিঅ্যাকশন নেই। রিপ্লাই তো ছেড়েই দিলাম। অর্চিষ্মানের আশায় বসে থেকে থেকে বাঁ দিকের কনট্যাক্ট লিস্ট বেয়ে উঠলাম নামলাম। যাকেই খোঁচাই না কেন, কমবেশি ফলভোগের সম্ভাবনা। শেষটা তিন্নিকে লিখলাম, তোর বাড়িতে শিলনোড়া আছে? তিন্নি উত্তর দিল, শিলনোড়া, বঁটি, বড় ছুরি রাখি না বাড়িতে। কখন কার ওপর রাগ হয়ে যায়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তিন্নির উত্তরটা ভাবালো। বছরদুয়েক আগে একটা বাড়াবাড়ির পর আমি সম্পূর্ণভাবে অহিংস হয়ে ওঠার কিরে কেটেছি। ডায়েটিং করলে যেমন চিপস না কেনাই ভালো, মদ ছাড়লে যেমন বারে না যাওয়াই ভালো, হিংসার পথ একবার ছেড়ে আবার যেচে বাড়িতে শিলনোড়া ঢোকানোটা অবিমৃষ্যকারিতা হবে না তো? প্রসেনজিৎকে বারণ করে দেব?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">করিনি। মহাত্মা গান্ধী মনে এলেন। চারপাশে অস্ত্রশস্ত্র সাজিয়ে বসে থাকলেই যাচাই হবে, সত্যি সত্যি অহিংস হয়ে উঠতে পেরেছি কি না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="p2"><br /></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com10tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-17261783623577659682024-02-02T19:34:00.015+05:302024-02-04T12:42:17.438+05:30Bondhu: কুণাল সেন<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="p2"><br /></div>
<div class="p1"><div style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjp_7RvW_QRoJf8Vd0NMn7QDvYTSvd4DKRs-0hWRmQfz5CSje-TXfDiyujtARu5euLpdAjS0zX_IhvVA4yTFhgL2loJ0My1RYQZ8cBdw9Lkcaf1pWBK4BBzlV3G8sZQz1lcTPSR3ysInhM3u8TSBNksUkybu668D5erWpX7EEvblCryjChJcLeuOzgSp6YM/s1800/Bondhu.jpeg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1800" data-original-width="1200" height="640" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjp_7RvW_QRoJf8Vd0NMn7QDvYTSvd4DKRs-0hWRmQfz5CSje-TXfDiyujtARu5euLpdAjS0zX_IhvVA4yTFhgL2loJ0My1RYQZ8cBdw9Lkcaf1pWBK4BBzlV3G8sZQz1lcTPSR3ysInhM3u8TSBNksUkybu668D5erWpX7EEvblCryjChJcLeuOzgSp6YM/w426-h640/Bondhu.jpeg" width="426" /></a></div><div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মানের জন্মদিনের আগের দিন পৌঁছল তিন্নির পাঠানো কেক। পরের দিন 'বন্ধু'। অ্যাকচুয়ালি, '<span style="font-family: georgia;">Bondhu</span>'। বইটা ইংরিজি, কিন্তু বইয়ের নাম বন্ধু-র ইংরিজি 'ফ্রেন্ড' নয়। কারণ 'বন্ধু' এখানে একটা নামবাচক বিশেষ্য, প্রপার নাউন। যে নামে কুণাল সেন তাঁর বাবা মৃণাল সেনকে ডাকতেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">'বন্ধু' তিনটি বিভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ 'বন্ধু'। দ্বিতীয় ভাগ 'ফিল্মমেকার'। তৃতীয় ভাগ 'ফাদার'। একজন মানুষের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্রোনোলজিক্যালি বলে যাওয়ার থেকে একেকটা দিকে একেকবারে আলো ফেলায় সে দিকটা অনেক ভালো করে আমাদের নজরে পড়ে। এ বিন্যাসের হয়তো অন্য কারণও ছিল। কুণাল সেনই লিখলেন নাকি অন্য কোথাও পড়লাম - তৃতীয় প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে আমরা অধিকাংশই সম্পূর্ণ বিস্মৃত হব। ঠিকই। ঠাকুরদার মায়ের শুধু নাম জানি, চপলা। আর একটা ছবি। আর একটা গল্প। একটাই গল্প। বরিশালের মাঠে তরোয়াল চালাতে চালাতে এক যাত্রাভিনেতার তরোয়ালশুদ্ধু স্টেজ থেকে ভদ্রমহিলার কোলে পড়ে যাওয়ার গল্প। ঠাকুমাও কিছু গল্প বলেছেন বটে কিন্তু সে সবই অত্যাচারিত বউমার পার্স্পেকটিভ থেকে জাঁদরেল শাশুড়ির গল্প। নৈর্ব্যক্তিক সোর্স থেকে জানা গল্প ওই একটি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যেটা বলতে চাইছি যে বায়োগ্রাফির ক্লাসিক স্টাইলে মৃণাল সেনের জীবনের গোড়া থেকে শুরু করে লিখতে গেলে পারম্পর্যে ফাঁক পড়তে পারত। তাছাড়া 'বন্ধু' গতানুগতিক অর্থে যাকে জীবনী তাও তো নয়। একজন ছেলের বয়ানে পিতার স্মৃতিচারণ। সে স্মৃতিচারণে সেই পিতা, বা 'বন্ধু'র, খ্যাতির দিকটিও যেমন উঠে এসেছে, তেমনই উঠে এসেছে একজন মানুষের অন্তরপুরের দৃশ্যাবলী।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সে দৃশ্যাবলীর টানেই বইটা পড়তে বসা। একজন বিশ্বমানের বাঙালির বিহাইন্ড দ্য সিনস্ সম্পর্কে কৌতূহল। উইকিপিডিয়া পেজ এবং বিখ্যাত উত্তরসূরীদের ইন্টারভিউ থেকে পাওয়া তথ্য ও মিথের অতিরিক্ত কিছু তাঁর নিকটতম মানুষের কলম থেকে জানার উৎসাহ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">উৎসাহ আশাতীত তৃপ্ত হয়েছে। কারণ এ ধরণের 'নন-জীবনী' সফল ভাবে লিখতে গেলে তথ্যকেন্দ্রিকতা, নৈর্ব্যক্তিকতা, সত্যমুখিতা ইত্যাদি ব্যতিরেকে একটি বিশেষ স্কিল প্রয়োজন হয়। কুণাল সেন বইয়ের ভূমিকাতে যেটাকে "স্টোরিটেলিং" বলে চিহ্নিত করেছেন এবং যে স্কিল কুণাল সেনের দরকারের বেশি বই কম নেই। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নাকতলার বাবাও 'বন্ধু' পড়েছেন। তিন্নি বলল, "হুস্ হুস্ করে"। বাবার সঙ্গে ঝাণ্ডা উড়িয়ে একমত, বইটা পড়লে মৃণাল সেনের থেকে কুণাল সেনের প্রতি বেশি আগ্রহ জাগে। সেটার একটা কারণ হতে পারে যে মৃণাল সেন কী বা কেন অল্প হলেও আমরা অবগত ছিলাম, কিন্তু 'বন্ধু' কুণাল সেনকে এমন এক আশ্চর্য উজ্জ্বলতায় দাঁড় করায় যা অধিকাংশ বাঙালির কাছেই অজানা বলে আমার ধারণা। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কুণাল সেনের ক্ষমতার পরিচয় পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। একদম শুরুতে শৈশবের একটি ঘটনার স্মৃতিচারণা করছেন তিনি। কলকাতা শহরের শীতের ভোর। শেষরাতও বলা যেতে পারে। মৃণাল সেন ছেলেকে ঘুম থেকে তুলছেন, গীতা সেন সোয়েটার টুপি পরিয়ে দিচ্ছেন, তারপর মৃণাল সেন ছেলেকে নিয়ে ফার্স্ট ট্রামে চড়ে ময়দানে যাচ্ছেন। ঘোর কুয়াশা। হাত ছেড়ে দিয়েছেন মৃণাল সেন, কুণাল বাবাকে দেখতে পাচ্ছেন না, ভয় পেয়ে "বন্ধু" বলে ডেকে উঠছেন, আর অমনি মৃণাল সেন, এই তো আমি, বলে এসে পড়ছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জায়গাটা পড়লে কুয়াশা, শীতের শেষ রাতে কলকাতার গলি, দূর থেকে আসা ফার্স্ট ট্রামের ঘটাং ঘটাং, কুয়াশা সব শুনতে, দেখতে পাওয়া যায়। স্মৃতিচারণাটি ভালো লেখার "ইভোকেটিভ" গুণে গুণান্বিত তো বটেই, জীবনীকেন্দ্রিক লেখার পক্ষে একটি চরম দরকারি গুণেও। পারিবারিক পরিসরে ঘটা এই একটিমাত্র ঘটনা থেকে আমরা মৃণাল সেন নামের মানুষটির একটি মোক্ষম ছবি দেখতে পাই। একজন সংসারী মানুষ, একজন বাৎসল্যময় মানুষ, একজন অ্যাডভেঞ্চারাস মানুষ এবং সর্বোপরি একজন অরিজিন্যাল মানুষ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কিছু গল্প চেনা। সেই যে গীতা সেন ভাতের জল বসিয়েছেন, মৃণাল সেন চাল কিনতে বেরিয়েছেন। গীতা সেন জল চাপিয়ে বসে আছেন। এদিকে বন্ধু এসে ফাঁস করে দিয়েছেন যে মৃণাল সেন চালটাল কিছু কিনতে যাননি, আড্ডা মারছিলেন। তারও বেশ কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফিরে এসে মৃণাল সেন যখন খুব বলছেন যে অনেক খুঁজেও চাল জোগাড় করা যায়নি ততক্ষণে গীতা সেন জলটল ফেলে দিয়ে উঠে পড়েছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অজানা গল্পও আছে। গীতা সেন যে উত্তরপাড়া ভদ্রকালীর মেয়ে (অতএব অনুপকুমারও যে উত্তরপাড়া ভদ্রকালীর ছেলে) জানা ছিল না। স্কুলের অর্ধেক মেয়ের বাড়ি ছিল ও পাড়ায়। নাটক করতে উত্তর কলকাতায় যেতেন গীতা সেন। বাসভাড়া থাকত না, হেঁটে উত্তরপাড়া ফিরতেন, সঙ্গে নাটকের দলের কেউ না কেউ থাকত। মৃণাল সেনও থাকতেন কোনও কোনও দিন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গল্প বলার ক্ষমতা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন কুণাল, বইয়ের গোড়াতেই সে কথা স্বীকার করেছেন। রসবোধও। সেটা অবশ্য উনি লেখেননি, পাঠকের কাছে আপসেই স্পষ্ট। 'বন্ধু'র ছত্রে ছত্রে অনুচ্চকিত ও রুচিপূর্ণ হিউমার। মৃণাল সেনের রসবোধ অসামান্য ছিল, জমিয়ে গল্প বলতে পারতেন। এমন সব গল্প যেখানে হাসির পাত্র তিনি নিজে। যেমন ধরা যাক, মৃণাল সেনের কোনও একটা সিনেমা প্রকাশ পেয়েছে (মনে হচ্ছে ভুবন সোম, কিন্তু এই ঠাণ্ডায় লেপ থেকে বেরিয়ে ওই ঘর থেকে বই এনে কনফার্ম করতে ইচ্ছে করছে না)। সমস্ত স্রষ্টার মতোই মৃণাল সেনও উন্মুখ হয়ে রয়েছেন ফিডব্যাকের আশায়। আমি কোনার্ক ভ্রমণ বৃত্তান্ত লিখে ঘণ্টায় চারবার চেক করি কমেন্ট পড়ল কি না, মৃণাল সেন একটা আস্ত তাও ওই লেভেলের সিনেমা বানিয়ে ফিডব্যাকের জন্য উন্মুখ হবেনই। এই প্রসঙ্গে কুণাল সেন লিখেছেন যে বিখ্যাত হওয়ার আগে যদি বা সৎ ফিডব্যাকের আশা থাকে, বিখ্যাত হওয়ার পর সে আশা সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দেওয়াই ভালো। সবাই ভালো বলতেই ব্যস্ত। সে রকম অসৎ ফিডব্যাকও আসছে না। মৃণাল সেন অসহিষ্ণু ও মরিয়া। এমন সময় বাড়িতে একজন পরিচিত লোক এলেন। সবাই জানে যে তিনি 'মৃণাল সেন সুলভ' সিনেমার ধারকাছ ঘেঁষেন না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এই ভদ্রলোক হয়তো 'ভালো লাগে না' বা 'বুঝতে পারি না' যুক্তিতে ওই ধরণের সিনেমা দেখতেন না, আমি এমন একজনকে চিনতাম যিনি নীতিগত ভাবে অ্যাওয়ার্ড উইনিং সিনেমা দেখতেন না। এমনকি যে পরিচালকের একটিও সিনেমা জীবনে একটি ফিল্মি পুরস্কারও পেয়েছে - ভেনিস, লোকার্নো, কান, কানাইপুর - সে পরিচালককে আজীবনের মতো দ্রষ্টব্যের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিতেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সেনবাড়ির পরিচিত ভদ্রলোক ব্যানার্জিবাড়ির পরিচিত ভদ্রলোকের মতো গেরিলা ছিলেন না। তিনি সিনেমাটা দেখেছিলেন। মৃণাল সেন জানতেন যে ইনি তাঁর টার্গেটেড অডিয়েন্স নন। তবু নেই মামার থেকে কানা মামা ভালো লজিকে তাঁর কাছেই জানতে চেয়েছিলেন সিনেমাটা ভদ্রলোকের কেমন লেগেছে। ভদ্রলোক শরীরের সমস্ত ডিপ্লোমেসি খরচ করে বলেছিলেন, আমার কিন্তু অত খারাপও লাগেনি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আরেকটা গল্প এখনও মনে পড়লে একা ঘরে মুচকি হেসে ফেলছি। একবার সেনপরিবার একটি ভাড়াবাড়িতে উঠে যান যার সমীপে একটি বালিকা বিদ্যালয় ছিল। এ বাড়িতে ফিল্মি লোকজন আসে এই খবর ছড়ানোর পর টিফিন হলেই বিদ্যালয়ের সবক'টি জানালার শিক ধরে বালিকারা ওঁদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। অনেকদিন দাঁড়িয়ে থাকার পর যখন কোনও তারকাকেই দেখা গেল না, জানালা ক্রমে ফাঁকা হয়ে গেল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মৃণাল সেন শহুরে মানুষ ছিলেন। গ্রাম্য, শহুরে এই শব্দগুলোর অনেক রকম দ্যোতনা হয়। এখানে শহুরের দ্যোতনা হচ্ছে মৃণাল সেন শহর পছন্দ করতেন। শহরের জনবাহুল্য, জ্যামজট, ক্যাঁচরম্যাঁচর উপভোগ করতেন এবং না পেলে মিস করতেন। স্ক্রিপ্ট লেখার জন্য নির্জন জায়গায় যাওয়ার অ্যাটেম্পট নিয়েছিলেন, সে নিয়েও মজার গল্প আছে। সারাদিন কোটি কোটি লোক বাড়িতে এসে আড্ডা মারত। মৃণাল সেন আড্ডা খুবই পছন্দ করতেন কিন্তু আড্ডার চোটে কাজ করার সময় হত না। ভোর চারটেয় উঠে কাজে বসতেন। কুণাল সেন লিখছেন, তাতেও সুবিধে হত না কারণ কাজ থামিয়ে তাপস সেনের সঙ্গে একটি দীর্ঘ ফোন-আড্ডা চলত। বিশুদ্ধ বাঙাল ভাষায়। ততদিনে মৃণাল সেন পৃথিবীর সবার সঙ্গে নদীয়ার বাংলায় কথা বলতে শুরু করেছেন, খালি তাপস সেনের সঙ্গে ওই সকালবেলার আড্ডাটার জন্য বাঙাল তুলে রেখেছেন। ওয়ার্ম ফাজি ফিলিং হয়েছিল, মানছি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বালক কুণালের পড়ার জায়গা ছিল ওই বসার ঘরেই। পড়তে বসে যাবতীয় আড্ডা কানে ঢুকত। পড়ায় বিঘ্ন ঘটার ব্যাপারটা অগ্রাহ্য করে কুণাল সেন সে সব আড্ডার স্মৃতিতে প্রশ্রয়ই পোষণ করেছেন। স্বাভাবিক। বিশ্বের দরজা খুলে যাচ্ছে, বিভিন্ন বিষয়ে বৌদ্ধিক আদানপ্রদান কানে ঢুকছে আর আড্ডার ফুর্তি তো আছেই। সব থেকে বড় কথা, সার্বিক আড্ডার চরিত্র এবং আড্ডার আঁশ ছাড়ালে আলটিমেটলি মনুষ্যচরিত্র সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা গড়ে উঠছে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমরা আকছার দুটো সময়কে পাশাপাশি তুলনা করি। এই সময়ের লোককে ওই সময়ের নিরিখে বিচার করি। দাবি করি গ্লোবালাইজেশনের আগে মানুষের কোয়ালিটি বেটার ছিল, মার্ক জুকারবার্গ না জন্মালে অধিকাংশ মানুষ দেবতা হত। শেফালি জরিওয়ালার 'কাঁটা লাগা'-র ভিডিওর নিচে নাইন্টিজ কিডজ্রা নিয়মিত আছাড়িপিছাড়ি খান। দোজ ওয়্যার দে ডেজ, নো ফোন, নো ইনস্ট্যাগ্রাম, নো পলিটিক্যাল কারেক্টনেস, নো ফেকুলার ফেমিনিস্টস, ওনলি গুড মিউজিক অ্যান্ড মাম্মি কা হাথ কা খানা। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এটা মানতে লোকের বুক ফেটে যায় যে ঝামেলাটা ইন্সটাগ্রামের নয়, মানুষের। আর ইন্সটাগ্রামের লোগো মাসে মাসে আপডেট হলেও মানুষ একশো বছরেও আপডেট হয় না, কাজেই রক হয়ে যায় ফেসবুক, স্কেলটা খালি ওয়ার্ল্ডওয়াইড। বাঙালি সিনেমার সেই স্বর্ণযুগেও লাগানিভাঙানি, ঘোঁটপাকানি প্রবল ছিল। কুণাল সেন লিখেছেন, তাঁদের বাড়ির বসার ঘরে কিছু লোক এসে জানেন তো অমুক চিত্রপরিচালক আপনার নামে এই বলেছেন, তমুক চিত্রপরিচালকের চ্যালারা আপনার চ্যালাদের নামে এই বলেছে, সারাদিন চালিয়ে যেতেন। কুণাল সেন নিশ্চিত, উল্টোদিকেও অবিকল এই নাটক চলত। কে জানে এই লোকগুলোই করত কি না। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রবীন্দ্রনাথ নাকি শেষ বয়সে লিখে গিয়েছিলেন, খ্যাতি প্রেতের অন্ন। যত খ্যাতি বাড়ে, পরগাছা বাড়ে। তত ক্ষীণ হয় সমমনস্ক, সমরুচির মানুষদের সঙ্গে কথা বলার স্কোপ। যত স্তাবক বাড়ে তত বন্ধুরা আড়ালে চলে যায়। শিখরে একাকীত্বের শীতলতা প্রবল। একবার কথোপকথনের সময় মৃণাল সেন সত্যজিৎকে একটা প্রশ্ন করেছিলেন। কথোপকথনটা নিশ্চয় বাংলায় হয়েছিল, কিন্তু যেহেতু 'বন্ধু'তে কুণাল সেন ইংরিজিতে লিখেছেন কাজেই আমিও ইংরিজিতেই লিখছি। মৃণাল সেন সত্যজিৎকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ডোন্ট ইউ ফিল লোনলি? সত্যজিৎ উত্তর দিয়েছিলেন, টেরিব্লি সো।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কুণাল সেন লিখেছেন, একটা বয়সের পর তিনি তাঁর বাবাকে এই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন করেছিলেন। কাদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন তিনি? কাদের জায়গা দিচ্ছেন? এঁরা তো কেউ বুদ্ধিতে, চিন্তায় তাঁর নখাগ্রও নয়। স্রেফ প্রতিফলিত মহিমায় মহিমান্বিত হতে ঘুরঘুর করছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কাকে সময় দেব আর কাকে দেব না, দাম্ভিক শুনতে লাগলেও, টপ থ্রি লাইফ স্কিলের একটা। ও জিনিস আয়ত্ত না করতে পারলে দুঃখ আছে। মৃণাল সেন বিশ্বমানের ছিলেন, তাকে ঘিরে ভনভনানিও সেই লেভেলের ছিল। পাড়া লেভেলের হরেদরেদেরও এই বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত বলে আমার ধারণা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সেনপরিবারের জীবনযাপন নিরাভরণ ছিল। এক্ষুনি লাফিয়ে পড়ে কেউ না কেউ বলবে আভরণ নিরাভরণ আপেক্ষিক। আম্বানির মেয়ের বিয়ের বাজেট আমার কাছে অশ্লীল হলে আমার বিয়ের বাজেটও অগুন্তি লোকের কাছে অশ্লীল। হক কথা। তা সত্ত্বেও, এ বিষয়টায় কিছু শব্দ খরচ করছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভাড়াবাড়ির এককামরার ফ্ল্যাট, বসার ঘরে কুণাল সেন পড়ছেন, মৃণাল সেন কাজ করছেন, সারাদিন আড্ডা চলছে। এমনকি কুণাল সেন যখন বড় হয়ে গেছেন, বান্ধবী আসছে বাড়িতে, দুজনকে প্রাইভেসি দিতে একটিমাত্র শোওয়ার ঘর দুজনকে ছেড়ে দিচ্ছেন গীতা ও মৃণাল। বড় বাড়িতে উঠে যাওয়ার কথা উঠছে, টাকা জমানো হচ্ছে, যতদিনে টাকা জমছে ততদিনে মনোমত বাড়ির দাম বেড়ে যাচ্ছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমি ঘটনাটাকে গ্লোরিফাই করছি না। বড় বাড়ি থাকলে, আলাদা কাজের ঘর থাকলে কে বলতে পারে মৃণাল সেন হয়তো আরও বেশি, আরও ভালো সিনেমা বানাতে পারতেন, বিশ্বের দরবারে বাঙালির মুখ আরও উজ্জ্বল করতে পারতেন। যেটা পয়েন্ট আউট করছি সেটা হচ্ছে প্রায়োরিটির মইতে টাকার অবস্থানের কথা। ইউটিউবের বাংলা সিনেমার রিভিউ চ্যানেলগুলোর প্রতিটিতে দশম অবতার, রক্তবীজের দুটো করে রিভিউ ভিডিও আপলোড হয়েছে (ট্রেলার ভিডিও আর প্রোমোশনাল ভিডিও বাদ দিয়ে)। তেরো মিনিট সতেরো সেকেন্ডের প্রথম ভিডিওতে সিনেমাটা কেমন হয়েছে, পরিচালনা আকাট না মূর্খ, লাইট স্ট্রোব না বাউন্স, সাউন্ড সিংক না ডাবিং, গল্প ঢিলে না টানটান, অভিনয় ভালো না বস্তাপচা, ডায়লগ চালাক না ওপরচালাক, সে সবের তুল্যমূল্য আচারবিচার। পরের দিন একটা নতুন ভিডিও-য় সতেরো মিনিট তেরো সেকেন্ড ধরে দুটো সিনেমার কালেকশন নিয়ে ডিপ ডাইভ। সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারভিউ, নিউজ পোর্টালে পরিচালকদর একে অপরের নাম না নিয়ে ও নাম্বার ভাঁড়িয়েছে, এ হাউসফুল শো-এর সংখ্যা বাড়িয়েছে মর্মে চুলোচুলি তো ছেড়েই দিলাম। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আবার কথা উঠবে। সিনেমা একটা রিসোর্স-ইনটেনসিভ শিল্প। একজন টাকা দিয়েছেন, তাঁর টাকা উদ্ধার করে দেওয়াটা পরিচালকের কর্তব্য। সে সব মহৎ মোটিভেশনের কথা যদি বাদও দিই, স্রেফ দক্ষতা ভাড়া নিতে গেলেও বাজেট লাগে। হয়তো স্ক্রিপ্ট ও সংলাপের জন্য ট্রেইন্ড লেখক ভাড়া নেওয়ার ক্ষমতা নেই বলে গল্প এ রকম ছেতরে যায়, ডায়লগ শুনলে 'ছেড়ে দে মা' ভাব হয়। ভুল বানানওয়ালা বই ছেপে বেরিয়ে যায়, হয়তো কোয়ালিফায়েড এডিটর বেশি টাকা চায় বলে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আবার সেটা যদি হত তাহলে সব একশো কোটির সিনেমাই বসে দেখা যেত। ঝাঁ চকচকে বেস্টসেলার বই দু'পাতা পড়ে "গড়পাড়ের ছেলে, তুমি দ্যাখালে ভায়া" বলে উঠে পড়তে হত না। আবারও চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের কথা টুকে বলতে হয়, বোকা লোককে ডবল টাকা দিলে সে বুদ্ধিমান সিনেমা বানাবে না, ডবল বোকামো করবে। কাজেই টাকার সঙ্গে যেমন গুণমানের সম্পর্ক আছে তেমন আবার নেইও। টাকার অভাব অন্য কিছু দিয়ে চাপা দেওয়া না গেলে বুদ্ধির দৈন্যও টাকা দিয়ে চাপা দেওয়া যাবে না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">উঁচু মানের বুদ্ধির চর্চা, সংস্কৃতিচর্চা যারা করেছেন তাঁরা কেউই টাকাকে মাথায় বসাননি। হৃষীকেশ মুখার্জি (যদিও তিনি পরে বম্বে গিয়ে বিস্তর টাকাপয়সা করেছিলেন), তাপস সেন, মৃণাল সেন, নৃপেন গাঙ্গুলি, এবং আরও সমসাময়িক সহশিল্পীরা দলে দলে দুনিয়াদারির তোয়াক্কা না করে বাঁচছে, কী খাবে, চাকরি কী পাবে নিয়ে বিলকুল মাথা ঘামাচ্ছে না, এটা কী করে সম্ভব? কুণাল নিজেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ব্যক্তিগত প্রোগ্রামিং একটা ফ্যাক্টর বটেই। রিস্ক, সিকিউরিটি ইত্যাদি শব্দের মানে প্রত্যেকের কাছে আলাদা আলাদা। কুণাল সেন আরেকটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সকলেই যেহেতু সময়ের সন্তান, হয়তো গোটাটাই এঁদের ব্যক্তিগত খেয়াল না। এঁদের প্রত্যেকের একটা বিশেষ রাজনৈতিক বিশ্বাস, আদর্শ কমন ছিল। পুঁজিকে পুজোর বেদীতে না বসানোর স্পর্ধা ছিল। সেই স্পর্ধা, সেই আদর্শটার থেকে সময়ের বিশ্বাস উঠে যাওয়াও কি কালেকশনের শেষ কথা হয়ে ওঠার একটা কারণ?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একটা লোককে দেখে সে কী রকম হবে সেটা নাকি মৃণাল সেন বলে দিতেন এবং সে আইডেন্টিফিকেশন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্ভুল হত। মৃণাল সেন নাকি এটাও বলতেন একজন পরিচালকের বাড়ির ভেতরটা দেখলে বলে দেওয়া যায় লোকটা কী ধরণের সিনেমা বানাবে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">লাইনটা পড়ে মাথায় টিং টিং বাল্ব জ্বলল। সপ্তাহকয়েক আগে ইউটিউবে একটি বাংলা পডকাস্ট দেখছিলাম। সমকালীন বাংলা সিনেমার একে সিরিয়াস তায় সফল পরিচালকের ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন, থুড়ি, পরিচালকের সঙ্গে আড্ডা মারছিলেন পডকাস্টার। কথায় কথায় তাঁর আসন্ন মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার কথা উঠল। যেটাকে মৃণাল সেনের একটি বাংলা সিনেমার সিকোয়েল বললেও বলা যেতে পারে। অরিজিন্যাল সিনেমার চরিত্রদের নিয়ে নতুন গল্প।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সিনেমা বানানোর সিদ্ধান্তের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে পরিচালক বললেন সমসাময়িক পরিচালকদের মতো বায়োপিকের নামে 'গো অ্যাজ ইউ লাইক' আয়োজন না করে (ঠিক এ ভাবে বলেননি) মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষে তিনি ইন্টেলেকচুয়ালি সুপিরিয়রতর (আবারও, প্যারাফ্রেজ) রাস্তায় হেঁটেছেন। এ সিনেমাটির মাধ্যমে সেনমহাশয়ের সামাজিক, রাজনৈতিক দর্শনকে হোমাজপ্রদানই তাঁর উদ্দেশ্য।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এত বুদ্ধি খরচ করে একজন একটা সিনেমা বানিয়েছে, সে সিনেমা আমার না দেখার প্রশ্ন ওঠে না। কেমন দেখলাম, সিনেমা মৃণাল সেনের দর্শন প্রতিফলিত হল কি না লিখতে বসলে আজও পোস্ট পাবলিশ করা যাবে না । বরং বাড়ির আকার ইজুক্যালটু সিনেমার প্রকার সংক্রান্ত মৃণাল সেনের স্টেটমেন্টটার সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়টি নিয়ে বিলাবিলা করা যাক।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যদিও আড্ডা, একটুআধটু টাফ কোশ্চেন না করলে থাম্বনেলে রোমহর্ষক ফন্টে ক্লিকবেট দেওয়া যাবে না। পডকাস্টার জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা শুনলাম আপনি সম্প্রতি একটি খুব দামি বাড়িতে উঠে গেছেন, সে ব্যাপারে যদি কিছু বলেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্রশ্নটা নতুন না। শিল্পীদের পয়সাকড়ি থাকা উচিত কি না, থাকলেও আপার লিমিট কত, বেশি বড়লোক হয়ে গেলে শিল্পীর সততা চোট খায় কি না, সমাজে শিল্পীর দারিদ্র্য ফেটিশাইজ করার প্রবণতা আছে কি না (মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুমুহূর্ত বাংলা সংস্কৃতিশালায় মিথ হয়ে ওঠা যার বহুব্যবহৃত উদাহরণ) নিয়ে যুগে যুগে হইচই চলেছে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নবারুণ ভট্টাচার্য গাড়ি চড়ে যাতায়াত করেন জেনে কেউ নাকি মন্তব্য করেছিল, এই তো অবস্থা, বিজন ভট্টাচার্যের ছেলে, মারুতি চড়ে ঘুরছে। নবারুণ বলেছিলেন, নাহ্, বিজন ভট্টাচার্যের ছেলে ঘেমেনেয়ে বাসেট্রামে ঝুলে ঝুলে ঘুরলে দারুণ হত।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অগ্রগণ্য পরিচালক জানালেন, তাঁর বিলাসী বাড়িতে শিফট করার উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন ছেলেমেয়েদের ফিল্ম পরিচালনায় আসতে উদ্বুদ্ধ করা। অর্থাৎ ভবিষ্যতের যে সব সম্ভাবনাময় পরিচালক, যাঁরা বাংলা সিনেমার নতুন ভাষা তৈরি করবেন, ফ্রন্টিয়ার ভাঙবেন, বিশ্বের দরবারে বাংলা সিনেমার হৃত মহিমা পুনরুদ্ধার করবেন তাঁরা যদি নার্ভাস বোধ করেন যে সিনেমা বানাব? যদি সাউথ সিটিতে ফ্ল্যাট না কিনতে পারি? নাহ্, তার থেকে এম বি এ-ই পড়তে যাই। নয়তো আই টি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যাকগে মরুকগে। মৃণাল সেনের একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যা 'বন্ধু' না পড়লে আমি জানতে পারতাম না, সেটার বিষয়ে বলে পোস্টটা শেষের দিকে নিয়ে যাই। বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে, নিজের অসাধারণত্ব সম্পর্কে নিজের ধারণা থাকা। কুণাল সেন বলছেন, যখন কেউ চিনত না তখনও মৃণাল সেন জানতেন তিনি সাধারণ নন। যখন সত্যজিৎ রায় বিশ্বস্বীকৃত এবং মৃণাল সেনকে কেউ চেনে না তখনও তিনি সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার সমালোচনা করেছেন। ঘটনাটাকে শুধু সেলেব্রিটির সমালোচনা করার উপমা দিলে আজকের যুগে ব্যাপারটার খুব একটা দাম থাকবে না। কারণ আজকাল নিন্দে করার জন্য কোনও ক্রেডেনশিয়াল লাগে না। আমিও সবার নিন্দে করে বেড়াই। এই যে আগের প্যারায় করলাম। করলাম কারণ আমার একটা আনলিমিটেড ইন্টারনেট কানেকশন আছে, ব্যস্। তখন নিন্দে করতে গেলে গম্ভীর পত্রিকায় সারবত্তাসম্বলিত প্রবন্ধ লিখতে হত, তাও আবার কে বলতে পারে হয়তো ইংরিজিতে। সে সাহসের সঙ্গে আজকালকার সমালোচনার সাহসের তুলনা করা যায় না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যদি ধরেও নিই সিনেমা সম্পর্কে মৃণাল সেনের পড়াশোনা, ব্যুৎপত্তি ছিল বলে সত্যজিৎ রায়কে ইনটিমিডেটিং লাগেনি, কুণাল সেন জানিয়েছেন জীবনের সব ক্ষেত্রেই এই আত্মসচেতনতার ছাপ পড়ত। ফোন সারানো, ইলেকট্রিকের সমস্যা, রোজকার জীবনযাপনের দিনরাতেও মৃণাল সেন কখনও নিজেকে বিস্মৃত হতেন না এবং সেটা "মৃণাল সেন" হয়ে ওঠার অনেক আগে থেকেই। কুণাল স্বীকার করেছেন, এই কনফিডেন্স কোথা থেকে আসে তিনি জানেন না। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমার সন্দেহ (এবং মনখারাপ) এ জিনিস নিয়ে জন্মাতে হয়। বহির্জগতের ভ্যালিডেশন বা জাজমেন্টের ভরসায় না থেকে আমি কী সেটা নিজে জানা। এ জিনিস বিরল। বেশিরভাগ মানুষই জঙ্গলের অলৌকিক গাছের মতো, কেউ দেখলে আছে, না দেখলে নেই। কেউ হাততালি দিলে আমি ভালো, হাততালি না দিলে পাতে দেওয়ার অযোগ্য, এ থেকে মুক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা সব ভুক্তভোগীই জানে। চাইলেই সে মুক্তি পাওয়া যায় কি না অধিকাংশ ভুক্তভোগীরই অজানা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">'বন্ধু' পড়ার ফাঁকে ফাঁকে অ্যানি আর্নোর <span style="font-family: georgia;">'Happening'</span>-ও পড়া চলছিল। নিজের জীবনের একটা ঝঞ্ঝাবাত সময়ের কথা লিখতে বসে আর্নো লিখছেন, </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">"<span style="font-family: georgia;">When I write, I must guard against lyrical outbursts such as anger or pain. I would not want crying and shouting to feature in this text because they barely featured in my life at the time. Above all I wish to capture the impression of a steady row of unhappiness, conveyed by a pharmacist’s inquisitive attitude or the sight of a hairbrush by a steaming basin of water. The distress I experience on recalling certain images and on hearing certain words is beyond comparison with what I felt at the time: these are merely literary emotions; in other words they generate the act of writing and justify its veracity.</span>"</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কুণাল সেনের ভাষা লিটারেরি ইমোশন বর্জিত। কেউ বলতে পারে হয়তো রক্তমাংসের জীবনের কথা, নিজের চোখে দেখাশোনা ঘটনা লিখছেন বলেই কাগুজে আবেগের আশ্রয় নিতে হয়নি। হয়তো বানানো চরিত্রের ইমোশনও বানিয়ে লিখতে হয়। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমার তা মনে হয় না। আমরা অধিকাংশ সময়ে নিজের জীবনটাকেও বানানো জীবনের মতো করেই বাঁচি। লেখাটেখা দূর অস্ত, প্রেম, দুঃখ, শোক, ঈর্ষা সৎভাবে অনুভবই করি না। নাটকনভেল থেকে টুকে কাজ চালাই। আর যদি ফিলই না করতে পারলাম লিখব কী করে। যাঁরা পারেন তাঁরা ওই জন্য অর্ডিনারি নন, এক্সট্রাঅর্ডিনারি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">'বন্ধু'র ছত্রে ছত্রে লেখকের এক্সট্রাঅর্ডিনারি জীবনবোধ, বুদ্ধি, দৃষ্টির ছাপ। এবং মায়ার। জীবনাশ্রয়ী সাহিত্যের ক্ষেত্রে সততার প্রসঙ্গটা ওঠেই। সঙ্গে সঙ্গে নির্মমতার প্রসঙ্গ। সততার সঙ্গে সামহাউ সর্বদাই একটা নেগেটিভ আবেগের ধ্বজা ওড়ে। নির্মম সত্য। ব্রুটাল অনেস্টি। অভিজ্ঞতায় দেখেছি যাঁরা নিজেদের সততায় ইমপ্রেসড, নির্মমতার প্রতি তাঁদের চোরাগোপ্তা টান আছে। অনেস্টির থেকে ব্রুটালিটির ভাগটাই যেন বেশি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এইখানেও কুণালের দৃষ্টি আশ্চর্য উজ্জ্বল উদ্ধার। একবারও যেমন তিনি তাঁর চারপাশের মানুষদের দেবতা করে তোলার চেষ্টা করেননি, তাঁদের প্রতি কোনওরকম নালিশও ফুটে বেরোয়নি। নেই বলেই বেরোয়নি, ও জিনিস চাপা দেওয়া যায় না। কাছের লোকদের নিয়ে লিখতে গেলে পুজো বা নালিশ, দুটো অ্যাভয়েড করাই কঠিন। 'বন্ধু'-তে মৃণাল সেনের রুথলেস নাস্তিকতার কথা যেমন এসেছে, বাড়ির লোকের বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ না করার তাঁর প্রাণপণ চেষ্টার কথাও। ছোটবেলায় পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে কুণালের সরস্বতীপুজোর অ্যাডভেঞ্চার, রাত্রিজাগরণের অ্যাটেম্পট এবং সে বিষয়ে বাবাছেলের একটি অসামান্য আদানপ্রদানের স্মৃতিচারণ আছে। একজায়গায় কুণাল লিখছেন, তিনি কৃতজ্ঞ যে মৃণাল সেন কোনও মত চাপিয়ে না দিয়ে ছেলেকে নিজের মতো, নিজের মতে অবিশ্বাসী হয়ে ওঠার সুযোগ দিয়েছেন। সবসময় যে এই চেষ্টায় সফল হতে পেরেছেন তাও নয়। বাড়িতে এক বছর সরস্বতীপুজোর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েও, শেষটায় সুসজ্জিতা সরস্বতীর ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট গুঁজে দেওয়ার রসিকতার লোভ সামলাতে পারেননি। কাছের লোকেরা কষ্ট পাবেন জেনেও। আবার এই মৃণাল সেনই, বহু বছর পর রাশিয়ায় গিয়ে যখন দেখছেন স্তালিনের মূর্তির মুখে অবলীলায় সিগারেট গুঁজে দিচ্ছে নতুন প্রজন্ম, টলে যাচ্ছেন। এই দ্বন্দ্বগুলোর কথা কুণাল লিখছেন কিন্তু বিচারের দাঁড়িপাল্লা নিয়ে বসছেন না। মৃণাল সেন অগোছালো ছিলেন, গীতা সেনের দু'দণ্ড বিশ্রামের নিভৃতি ছিল না, গীতা সেনের প্রথাগত শিক্ষার খামতি, ইংরিজি বলতে না পারা নিয়ে চাপা টেনশনের প্রসঙ্গ যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে গীতা সেনের শৈল্পিক বুদ্ধি ও সংবেদনশীলতার প্রতি মৃণাল সেনের অটল শ্রদ্ধার প্রসঙ্গ। বোঝা যায়, কী অসম্ভব ভালোবেসেছেন কুণাল সেন এই দুটি মানুষকে। এতই ভালোবেসেছেন যে তাঁদের অস্তিত্বের খরখরে, অমসৃণ দিকগুলো তুলে ধরতে একটুও অস্বস্তিতে ভোগেননি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">'বন্ধু'র শেষ পাতাগুলো পড়ছিলাম সকাল ছ'টা নাগাদ। দিন ছোট হতে শুরু করেছে, বাইরে আলো ফোটেনি। গীতা সেন শেষ শয্যায়, মৃণাল সেনকে জরা গ্রাস করেছে। দ্রুত ফুরিয়ে আসছে বর্ণময়, দীর্ঘ, একনিষ্ঠ পার্টনারশিপ অথচ সে ভাঙন টেরও পাচ্ছেন না আরেকজন। ওই জায়গাটা পড়ে হাতপা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। কত কিছু যে টেকেন ফর গ্র্যান্টেড নিয়েছি, নিচ্ছি প্রতিমুহূর্তে। গীতা সেন চলে যাওয়ার পর মৃণাল সেনের শেষের কয়েক বছরের অসীম একাকীত্ব, তারপর সেটাও ফুরিয়ে গেল। সব কাজ সেরে ফিরে শিকাগোর বাড়ির চাবি খুলে ঢোকার পরের মুহূর্তটা জাস্ট দুটো বাক্যে বর্ণনা করেছেন কুণাল সেন। ওহ্। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আলো কখনওই নিজের দিকে ঘোরাননি, কিন্তু ছোট ছোট ঘটনার মাধ্যমে কুণাল সেনের শৈশব, বড় হয়ে ওঠা, দেশছাড়া, দীর্ঘ প্রবাস মিলিয়ে 'বন্ধু'তে তাঁর জীবনের একটা আউটলাইন ফুটে উঠেছে। তাঁর জীবনবোধ, মনন, চেতনার আভাসও। প্রবাসে পাড়ি দেওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই বাঁধন আলগা হচ্ছে। বন্ধুর সিনেমার প্রথম দর্শক এবং বিশ্বস্ত সমালোচক আর থাকছেন না। সম্পূর্ণ হওয়ারও হয়তো অনেক পরে ছবিগুলো দেখার সুযোগ হচ্ছে, দর্শকের মতো। বিখ্যাত ব্যক্তির সন্তান হিসেবে খ্যাতির সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়েও আলোচনা করেছেন। লিখেছেন মৃণাল সেনের ইংরিজি ভাষ্যে বাঙালি টানের কথা। দীর্ঘদিন অ্যামেরিকায় থাকা সত্ত্বেও কুণাল সেন অ্যাকসেন্ট বদলানোর চেষ্টা করেননি, মনে হয়েছে আগের জীবনটার সঙ্গে একটা এলিয়েনেশন ঘটবে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পড়ার দিনক'টা বইটা টেবিলই রাখা থাকত। টেবিলল্যাম্পের হলুদ বৃত্তের জাস্ট বাইরে। কাজের ভঙ্গি করতাম আর আড়চোখে মলাটের আউট অফ ফোকাস ছবিটার দিকে তাকাতাম। বইটা পড়তে পড়তে একটা বিষাদ ক্রমশঃ বাসা বাঁধছিল। একটা সময়। কয়েকটা লোক। আরও অনেক কিছু যা চিরদিনের মতো চলে গেছে। গো ওয়েন্ট গন। যত পায়ে ধরো, মাথা খুঁড়ে মরো, সে রকমটি আর হবে না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আলোছায়ামাখা ছবিটার দিকে আড়চোখে তাকাতে তাকাতে আমি রিয়েলাইজ করলাম আরও একটা জিনিস হয় না এখন। বাঙালি পুরুষদের আর এ রকম দেখতে হয় না। এই চোখ। এই আত্মবিশ্বাস। এই দীপ্তি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সেই থেকে অর্চিষ্মানকে জপাচ্ছি, ধুতি অবধি না যাও, অন্ততঃ বাঙালি পাঞ্জাবী, প্রেফারেবলি সাদা, আঁকাজোকা গদ্যপদ্য বিহীন, পরা শুরু কর। হাতা গুটিয়ে। আপাততঃ জিনসের ওপরেই পরো। ধাতে সয়ে গেলে ধুতিতে না হলেও পাজামায় শিফট করতে পারো। আমিও শাড়িতে শিফট করে যাচ্ছি। হ্যান্ডলুমটুম না, রিষড়া বাজারের তনুশ্রী বস্ত্রালয়ের শাড়িতে। আঁকাজোকা গদ্যপদ্য বিহীন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">'বন্ধু' পড়িয়ে তিন্নি যে লেভেলে পুণ্য করেছে, সে পুণ্যের ভাগ আমারও চাই। তাই চোঙা নিয়ে বিজ্ঞাপন করে বেড়াচ্ছি। আপনাদেরও বলছি। 'বন্ধু' একটি পড়ার মতো বই। না পড়লে চমৎকার একটা কিছু মিস হয়ে যাওয়ার মতো বই। ‘বন্ধু’ পড়ুন এবং পড়ান।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com12tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-19510596818795243832024-01-11T21:50:00.009+05:302024-01-23T21:37:15.121+05:30পুরী ৬ (শেষ): স্নানযাত্রা ও সূর্যমন্দির
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রাস্তায় বিগ বাজার গোছের একটা দোকানে দাঁড় করালেন পূর্ণচন্দ্র। কাল সকালে স্নানের উপযুক্ত চটি জামাকাপড় কিনতে হবে। জুতো খুলে ঢুকতে হল। এদিকে দোকানের মেঝেজোড়া কাঁটা কাঁটা কার্পেট। কিছু আনকমফর্টেবল। ঢোকার মুখে আরেক ড্রামা। এক বালতি জল রাখা ছিল; একটা ফুল সাইজ গরু এসে সে জলে মুখ দিতে গিয়ে পাশাপাশি দাঁড় করানো খানসাতেক সাইকেল ফেলে দিয়েছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মানের সাইজের ফুল ট্র্যাকপ্যান্টস পাওয়া গেল না। হাফপ্যান্ট ওর আছে। আমার পোশাকগুলোর সবক'টার বুকেই চুমকির প্রজাপতি কিংবা হেলো কিটি। এক ভদ্রলোক, দোকানেরই কর্মচারী, এমন কিছু শিশু নন, আমার সমবয়সী বা বছর পাঁচেক বড়ও হতে পারেন, কাউন্টারে কনুই রেখে কোমর বেঁকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমনিই। দুটো বাচ্চা ছেলেমেয়ে আমাদের জিনিসপত্র দেখানোর দায়িত্ব দিব্যি পালন করছিল। উনি অধিকন্তু ন দোষায়। আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুব ক্রিটিক্যালি দৃষ্টি ওঠাচ্ছিলেন নামাচ্ছিলেন এবং মতামত প্রকাশ করছিলেন কোন সাইজ ম্যাডামের "আ যায়েগা।" ফ্রাস্ট্রেটিং হচ্ছে এঁরা বদ নন, জাস্ট সোশ্যাল সেনসিটিভিটি নেগেটিভে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জামার আশা ছেড়ে চটির সন্ধানে নামলাম। অর্চিষ্মানকে দিব্যি সুন্দর একজোড়া হালকা ধূসর চপ্পল বার করে দিল। আমার কপালে কুটকুটে লালের ওপর গোলাপি স্ট্রবেরির সারি। ছেলেমেয়েদুটো এত কিছু বার করে, ভাঁজ খুলে দেখিয়েছে এবং একটাও কিনিনি যে শপথ করেছিলাম এবার যা-ই দেখাবে কিনে নেব। অর্চিষ্মান বলল, একটা ভালো ভাবো। চুরি যাবে না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পুরী ঢোকার পর বাজারের রাস্তা ধরতে বলেছিলাম। এপাশের জানালা দিয়ে আমি, ও পাশেরটা দিয়ে অর্চিষ্মান পাহারায় ছিলাম। প্রথম ফুচকার গাড়িটা অর্চিষ্মানের দিকেই পড়ল। পূর্ণচন্দ্র আমাদের নামিয়ে নমস্কার করে চলে গেলেন। প্রথম ফুচকাটা খেয়ে একবার, দ্বিতীয় ফুচকাটা খেয়ে লজ্জার মাথা খেয়ে আরেকবার "অর থোড়া মিরচি দে না প্লিজ" অনুরোধ করলাম। দু'বারই অনুরোধ রক্ষিত হওয়ার পরেও ব্যাপারটা ফিকা রয়ে গেল। ভদ্রলোক আমার ওপর ভরসা করতে পারলেন না বোধহয়। আগের বার মটর কা পানি খেয়ে অজ্ঞান হওয়ার মতো ভালো লেগেছিল। খুঁজলাম, পেলাম না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভুবনেশ্বরে গেলে ওডিয়া খাবার খেতে সবাই ওডিশা হোটেলে যায়, আমরাও গেছি। এবার কনফারেন্স চলাকালীন একটা নতুন দোকানের সন্ধান পেয়েছে অর্চিষ্মান। ওটিডিসি-র রেস্টোর্যান্ট, নিমন্ত্রণ। এত ভালো লেগেছে যে অন্ততঃ পাঁচ বার ফোনে বলেছে পুরীতে যদি থাকে খাব, না হলে প্লেন ধরার আগে ভুবনেশ্বরেই খাব। ওডিশা গিয়ে নিমন্ত্রণ-এ না খেলে জীবনের ষোল আনা বৃথা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পান্থনিবাসে সকালে ঘর খুঁজতে গিয়ে দেখেছি ওঁদের আছে নিমন্ত্রণ রেস্টোর্যান্ট। ডিনার খেতে ওখানেই গেলাম। ফাঁকা। এত কষ্ট হয়, সরকারি জায়গা ফাঁকা দেখলে। আপনারা পুরী গেলে দলে দলে পান্থনিবাসের রেস্টোর্যান্ট নিমন্ত্রণ-এ খেতে যাবেন। চমৎকার রান্না। পরিবেশক জানালেন, স্ট্রিক্টলি শিলে বাটা মশলা দিয়ে রান্না কি না, তাই এত ভালো। এঁদের রান্নাঘরে গুঁড়ো মশলার প্রবেশ নিষিদ্ধ। ঠাকুমা শুনলে আশ্বস্ত হতেন। দোতলার ভেতরে বাইরে দু'জায়গাতেই বসার ব্যবস্থা। বারান্দাতেই বসলাম। বাঁদিকে বাগান পেরিয়ে সেই পার্ক সকালে যেখানে ভদ্রলোক কপালভাতি করছিলেন। দিনের আলোয় সমুদ্র দেখা যায়। এখন শুধু শোনা যাচ্ছে। মেনু দেখে অর্চিষ্মান বলল, ভুবনেশ্বরের মেনুর থেকে অল্প আলাদা। বৈচিত্র্যও নাকি অল্প কম। সমস্যা নেই, আমাদের চাওয়াও বৈচিত্র্যপূর্ণ নয়। আমি ভেজ থালি নিলাম, অর্চিষ্মান মাটন থালি। বৈচিত্র্যের খাতিরে শুরুতে দুটো ব্লু লেগুন আর একটা আলুভাজা না কী যেন নেওয়া হল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">খাওয়া শেষ হল। ফুরফুরে হাওয়া ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। আরও দু’গ্লাস ককটেল নিয়ে দুজনে বসে রইলাম। অন্ধকারে সমুদ্র গর্জন করতে লাগল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1" style="text-align: center;">*****</div>
<div class="p2" style="text-align: center;">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আর আধদিন বাকি। পুরী যাওয়ার আমার সবথেকে বড় কারণটাও। সমুদ্রস্নান। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শৈশবের আনন্দ আজকাল দুটো মাত্র বিশুদ্ধ ফর্মে আমার কাছে ফিরে আসে। এক, জায়ান্ট হুইল। দুই, সমুদ্রস্নান। নভেম্বরে বাড়ি গিয়েছিলাম। বাবা বললেন, অনেকদিন জগদ্ধাত্রী পুজোয় আসিসনি। রিষড়া অনেকদিন ধরেই জগদ্ধাত্রী পুজোয় সেকেন্ড চন্দননগর হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। প্রতি বছরই ব্রহ্মানন্দ স্কুলের মাঠে পুজোর মেলায় জায়ান্ট হুইল আসে। শুধু জগদ্ধাত্রী পুজো না, সব পরবেই আসে। বাবা আর বিজলীদি নিচে দাঁড়িয়ে রইল; আমি চড়লাম। যত আনন্দ হবে কল্পনা করেছিলাম প্রতিবারের মতো তার থেকে এক কোটিগুণ বেশি হল। আমার বসার খোপে সহযাত্রী ছিল ক্লাস নাইনের অস্মিতা মোদক আর ক্লাস সিক্সের দীপা দাস। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দ্বিতীয় ফর্ম হচ্ছে সমুদ্রস্নান। স্পেসিফিক্যালি, পুরীর সমুদ্রে। জলে পা দিলেই দেখি ওই তো ওইখানে ঠাকুমা ঢেউয়ের ধাক্কায় গড়িয়ে যাচ্ছেন, ওইখানে পিসি নোনাজল গিলে মুখ ছ্যাতরাচ্ছে, বাবা ভাসতে ভাসতে চলে গেছেন কতওওওদূঊঊঊর, মা গত তিন ঘণ্টা ধরে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন, সোনা এই ঢেউটা কিন্তু লাস্ট, এদিকে নিজে ওঠার নাম করছেন না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমার প্রিয়জনদের, যাঁদের অধিকাংশই মাধ্যাকর্ষণের মায়া কাটিয়ে দেওয়ালে ঝুলেছেন, রিষড়ার বাড়ির ঘরদোর বারান্দায় ছাদে যেমন পারি পুরীর সমুদ্রতটেও সমান তীব্রতায় মনে করতে পারি। পৃথিবীর আর কোথাও পারি না। আমার ধারণা সেই টানেই আমার এতবার পুরীর সমুদ্রের কাছে যেতে ইচ্ছে করে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নিজের আনন্দ তো আছেই। একেবারে ছোটবেলার মতো আনন্দ। সে আনন্দ বর্ণনা করার মতো টাইপিং-এর জোর আমার নেই। অর্চিষ্মান সমুদ্রস্নান নিয়ে অত ইমপ্রেসড ছিল না গোড়াতে। নাকতলার মা যদিও শুনেছি সমুদ্রস্নানে খুবই আগ্রহী, অর্চিষ্মানের ধাত বাবার মতো। তটে দাঁড়িয়ে চটি চশমা পাহারা দিতে দিতে স্মিতহাস্যে বাকিদের বালখিল্যপনার আমোদ নেওয়া।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মানের ধাত বদলানোর চেষ্টা করিনি আমি। নিজের যে চরিত্রটা টপ টু বটম পছন্দ করি, এত পছন্দ করি যে নিজের মুখে সে কথা বলতে লজ্জা পাই না, সেটা হচ্ছে যে আমি আমার শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু দিয়ে জানি ও মানি, পৃথিবীর প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের নিজস্ব মাইন্ড আছে এবং সে মাইন্ড যখনতখন যত্রতত্র চেঞ্জ করার সম্পূর্ণ ও সার্বভৌম অধিকার আছে। জীবনে নিজের ছাড়া কোনও প্রাপ্তবয়স্কের মাইন্ড বদলাতে এনার্জি ব্যয় করিনি আমি। অর্চিষ্মানকে সমুদ্রস্নানে টেনে নামানোরও না। অসীম আত্মবলিদানে অর্চিষ্মান নিজেই সমুদ্রে নেমেছে। গোয়াভ্রমণে গিয়ে। সে গল্প আগে করেছি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পরপর সাত জন্মে একই লোকের সঙ্গে বিয়ে হলে শুনেছি দম্পতি একে অপরের মতো দেখতে হয়ে যায়। দশ বছরে অতটা না হলেও কিছু তো হয় বটেই। আমার ধারণা, গোড়াতে আমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য সমুদ্রে নামলেও অর্চিষ্মান ব্যাপারটা ক্রমশঃ উপভোগ করতে শুরু করেছে। ঠিক যেমন আজকাল আলুসয়াবিনের তরকারি খেয়ে মাঝে মাঝে মুখ ফসকে বাহ্ বলে উঠছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">টাইপিং থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা গত বারো বছরে কোন কোন জায়গায় আমি তোমার মতো হয়ে উঠেছি? অর্চিষ্মান বলল, তুমি বল। তোমার কি মনে হয়, কোনখানটায় তুমি আমার মতো হয়ে উঠেছ? বললাম, আরে আমার মাথায় আসছে না বলেই তো জিজ্ঞাসা করছি। উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে টুইটারে ফেরত গেল। অর্থাৎ কোনখানটাতেই ওর মতো হয়ে উঠতে পারিনি আমি। হয়ে ওঠা আমার কম্ম নয়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এ বারের স্নানে অর্চিষ্মানের এক নতুন গুণের সন্ধান পেলাম। স্নান দিয়ে মানুষ বিচার। অর্চিষ্মানের দাবি জীবনসমুদ্র কে কী ভাবে সাঁতরাবে তার একটা নির্ভুল আন্দাজ পাওয়া যায় রিয়েল সমুদ্র কে কী ভাবে সাঁতরাচ্ছে তা থেকে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যেমন ধরা যাক ওর নিজের সমুদ্রস্নান। তীরের কাছে দাঁড়িয়ে বা ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসে বসেই তেজ কমে আসা ঢেউয়ে গা ভেজানো। উত্তেজনা কম; ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রায় নিল। আমার স্নানপ্রক্রিয়া, বলা বাহুল্য, ঠিক তার উল্টো। যেখানে ঢেউ বড় বড় এবং ভরাডুবি গ্যারান্টি। এবং এই ভরাডুবির দিকে বীরবিক্রমে এগিয়ে যেতে যেতে নাকি আমি সম্পূর্ণ বিস্মৃত হই অর্চিষ্মান বেঁচেছে না মরেছে, হোটেলে চলে গেছে না ঢেউয়ে ভেসে গেছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এ অভিযোগ আগাগোড়া মিথ্যে। আমি এগোচ্ছিলাম এবং ক্রমাগত পেছন ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলাম। মানছি, সেটা অর্চিষ্মানের সেফটির ওপর নজর রাখতে নয় কারণ ও যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সুনামি না এলে সেখানে সেফটির সমস্যা হওয়ার কথা না। আমি তাকাচ্ছিলাম অর্চিষ্মানের অ্যাপ্রুভালের আশায়। অর্চিষ্মানের মুখ গম্ভীর হতে শুরু করছে দেখলেই স্ট্যাচু হচ্ছিলাম। ভেসে যাচ্ছি না দেখে সাহস পেয়ে অর্চিষ্মান মাঝে মাঝে এসে যোগ দিচ্ছিল। যেটা আমি ওকে বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছিলাম সেটা হচ্ছে তীরের কাছে নাকানিচোবানি অনেক বেশি। পায়ের তলার বালি যত সরবে, আকচাআকচি, হাঁকপাঁক তত কমবে। শান্তি বাড়বে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তাছাড়া আজকাল একা একা খুব বেশি দূরে যাওয়া সম্ভবও নয়। বাবা যে রকম যেতেন। গত চল্লিশ বছরে মানুষের জীবনের দাম বেড়েছে। হুইসলওয়ালা প্রহরীরা দশ গজ দূরে দূরে পাহারায় আছেন। কেউ বাহাদুরি দেখানোর চেষ্টা করা মাত্র তীব্র সিটিতে গোটা বিচের ঘাড় কালপ্রিটের দিকে ঘুরিয়ে হিউমিলিয়েশনের হদ্দমুদ্দ করছেন। অর্চিষ্মানকে বললাম, আর যাই করি, সিটি খাব না, প্রমিস।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"> অর্চিষ্মানের অসুবিধেটা অবশ্য আমার বোকা সাহস দেখিয়ে দূরে গিয়ে স্নান করাতে নয়। আশেপাশের স্নানার্থীদের "হারিয়ে" তাদের থেকে দূরতর বিন্দুতে গিয়ে স্নান করার বাহাদুরি দেখানোয়। ঠিক যে মোটিভেশন থেকে আমি সি আর পার্কের চেনা ফুচকাওয়ালার ফুচকায় ঝাল বাড়াতে বাড়াতে এমন একটা অমানুষিক পর্যায়ে নিয়ে গেছি যে আমাকে দূর থেকে আসতে দেখলে ছেলেগুলো কাঁচালংকা কুচোতে বসে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এটার ব্যাখ্যাও অনেকবার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যারা জীবনের বড় বড় যুদ্ধে জেতে তাদের এই সব ছোটখাটো জেতায় কিছু এসে যায় না। সে সব যুদ্ধে গোহারা হেরেছি বলেই ফুচকার ঝালে আর সমুদ্রে কে কত দূরে যেতে পারে-র যুদ্ধে অবিসংবাদিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য হেদিয়ে মরছি। কিছুতে তো একটা জিততে হবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তারপর ধরা যাক, আশেপাশের সব কাপলই জাপটাজাপটি করে, অন্ততঃ হাত ধরে স্নান করছিলেন। আমরা যে সেটা করি না, সেটাও অর্চিষ্মানের মতে সিগনিফিক্যান্ট। এমন নয় যে বিয়ের দশ বছর পর বলে করছি না, ছ'মাস পরেও করতাম না। না করার আমার দিক থেকে বৈজ্ঞানিক কারণটা বলেছি। যে ঢেউ অর্চিষ্মানের কোমর অবধি পৌঁছয়, আমার সেটা মাথার ওপর দিয়ে যায়। ওকে জাপটে স্নানে নামলে আমার ঘোল (বা জল) খাওয়া অবশ্যম্ভাবী। অর্চিষ্মানের মতে ব্যাপারটা শুধু লজিস্টিক্যাল নয়। আমাদের স্নানের ধরণ আমাদের সম্পর্কের চরিত্রের একটি সত্য উদ্ঘাটন করে। সেটা হচ্ছে পার্টনার হলেও দুজনেই নিজের নিজের জীবন নিজে সামলাতে পছন্দ করি। কোন এক কয়েন টসে দু'জনের জীবনের মাঝখানের ট্র্যাকদুটো জড়িয়েমড়িয়ে গেছে ঠিকই, তাতে দু'জনেরই দিনরাতগুলো মসৃণতর হয়েছে সেও ঠিক, তবু দু'জনেই মনের ভেতর থেকে জানি, একা এসেছি,একা যাব। কেমন যেনটেন নয়, আদতেই আলাদা আলাদা সব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অনেক নারীপুরুষই নুলিয়া এবং টায়ার নিয়ে স্নানে নামছিলেন। এক্সপার্ট সঙ্গে থাকার প্রত্যাশিত সুবিধেগুলোও তাঁরা পাচ্ছিলেন। ঢেউটেউ পেরিয়ে, একেবারে শান্ত জায়গায় গিয়ে টায়ারে দুই হাত লটকে ভাসতে পারছিলেন। কিন্তু এক্সপার্ট সঙ্গে থাকার অসুবিধেও কম না। সম্পূর্ণ কনট্রোল এক্সপার্টের হাতে। দশ না পনেরো মিনিটের স্লট হয় বোধহয়, তার পর 'আমার শখ মেটেনি, আর পাঁচ মিনিট প্লিইইইইইজ' বলাটলা চলবে না। কান ধরে এক্সপার্ট তীরে তুলে আনবেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গোল্ডেন বিচে স্নানের সুবিধে হচ্ছে সমুদ্রস্নান পরবর্তী কলের জলের স্নানের এবং জামাকাপড় বদলানোর জায়গা। অর্চিষ্মান গেল। আমারও টিকিট ছিল, কিন্তু আমি যে যাব না গোড়া থেকেই জানতাম, অর্চিষ্মানকে আগে বলিনি। লাস্ট মোমেন্টে গিয়ে বললাম, তুমি যাও, আমি হাওয়ায় শুকিয়ে নেব। ওই খোপ খোপ বাথরুমে প্রতি পাঁচ মিনিটে একজন করে স্নান করতে ঢুকছে, আমি ওর মধ্যে নেই। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যে সদাশিব ভুবনেশ্বর থেকে আমাকে নিয়ে এসেছিলেন, তিনিই আমাদের ভুবনেশ্বর পৌঁছে দেবেন। প্লেন রাত আটটায়, কিন্তু কোনার্ক হয়ে যাব বলে এগারোটাতেই বেরিয়ে পড়ব। অর্থাৎ এখনও ঘণ্টা দেড়েক বাকি। অর্চিষ্মান বলল, শোন, আমি ভাবছি একবার মন্দিরের দিকটা ঘুরে আসব। তুমি হোটেলে রেস্ট নিতে চাইলে নাও। কিংবা কফিশপটপেও বসতে পার। পাশেই একটা সিসিডি মতো দেখলাম না?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তিরিশ সেকেন্ড থতমত হয়ে রইলাম। মন্দিরে যাওয়াটা যে পুরীভ্রমণের একটা অংশ সেটা এতদিনে আমার সিস্টেম থেকে বেরিয়ে গেছে। আমার কাছে পুরী মানে সমুদ্র আর সমুদ্রের ধারে বসে চমচম খাওয়া। মন্দিরে আমি শেষবার ঢুকেছি বোধহয় স্কুলের শেষ দিকে। তারপর লায়েক হয়ে ঠিক করেছি ওটা আমার কাছে জরুরি ব্যাপার না। উদাস মুখে বলেছি, তোমাদের ইচ্ছে হলে যাও, আমি হোটেলে শুয়ে থাকছি বা সমুদ্রের ধারে বসে থাকছি। বাবামা মুচকি হেসে চলে গেছেন। বিপ্লবের ঠেলা জাগলে সেটাকে বেরিয়ে যেতে দেওয়াই ভালো। দমন করতে গেলে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভেবে দেখলাম। অনিবার্য ও আসন্ন মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে ভেজ না ননভেজ, ফেলুদা না ব্যোমকেশ, আস্তিক না নাস্তিক এ সব ইমমেটেরিয়াল। মন্দিরে যাওয়ার কস্ট নোংরা আর ভিড়। বেনিফিট, বেড়ানোর শেষ দেড়ঘণ্টা অর্চিষ্মানের সঙ্গলাভ এবং যুগলে পাণ্ডার লাঠির বাড়িভক্ষণ। বললাম, চল, আমিও যাই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গেলাম আর ভগবানের সঙ্গে আমার একটা মিল বেরিয়ে গেল। ভগবান আমার মতোই হিংসুটে। বিশ্বশুদ্ধু মজা নিংড়ে তারপর তাঁর জন্য শেষের একঘণ্টা, ও সব উনি অ্যালাউ করেন না। রবিবার ছিল বলে কি না জানি না, স্পেশাল তিথিটিথিও থাকতে পারে, এক অসামান্য লম্বা লাইনের সম্মুখীন হলাম। কিলবিল করছে ভিড়। ফোনে দেখাচ্ছে দশটা তিন, একঘণ্টায় এই লাইন পেরিয়ে, মন্দিরে ঢুকে ঠাকুর দেখে বেরিয়ে এসে হোটেলে পৌঁছনো অসম্ভব। ফিরতি পথে হাঁটা শুরু করলাম। অর্চিষ্মান পেছন ফিরে ফিরে মন্দিরের চুড়োর ছবি তুলছিল। বেচারা। পরেরবার আগে জগন্নাথের সঙ্গে দেখা করে তারপর অন্য কথা, মনে মনে স্থির করেছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পুরী যাওয়ার আগে ফুডকা চ্যানেলে কয়েকটা ক্যাফের নাম শুনেছিলাম, যাওয়ার সময় হয়নি। ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ী মুন্নাভাই মাটন পয়েন্টেরও সুখ্যাতি করেছিলেন। প্ল্যান ছিল ফেরার পথে অর্চিষ্মান ওখানে লাঞ্চ করে নেবে। আমার জন্যও নিশ্চয় কিছু থাকবে, না থাকলে পরে অন্য কোথাও খেয়ে নেব। মুন্নাভাই মাটন-এ পৌঁছে দেখি কর্তৃপক্ষ তখনও টেবিলের ওপর পেঁয়াজ টমেটোর পাহাড় বানিয়ে কাটাকুটি খেলছেন। অর্চিষ্মানের দিনটাই খারাপ। জগন্নাথদর্শনও হল না, মাটনভক্ষণও মিস। কে জানে কার মুখ দেখে উঠেছে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ফেরার রুট চন্দ্রভাগা বিচ হয়ে কোনার্ক ঘুরে ভুবনেশ্বর। চন্দ্রভাগা বিচটা সুন্দর বেশ। আগে গেছি কিনা মনে করতে পারলাম না। বেশ ভিড়। স্নান জমে উঠেছে। বিচে উট ঘুরছে। দূরে লাল নীল হলুদ নৌকোদের পার্কিং লট।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান লম্বা লম্বা পা ফেলে নৌকোর জটলার দিকে যাত্রা করল। আমার কায়দার জুতো (আমার পক্ষে যতখানি কায়দা সম্ভব) বালিতে হাঁটার পক্ষে উপযুক্ত না। রাগ রাগ হচ্ছিল, কী দরকার এত এক্সপ্লোরেশনের। পরিষ্কার ফাঁকা জায়গা ওর পোষাবে না। যেখানে কাঁইমাঁই সেখানে ঢুকতে হবে। এই যে মন্দির দর্শনের ইচ্ছে এটা জগন্নাথের টানে যত না তার থেকে বেশি ভিড়ের টানে। রিয়েল ইন্ডিয়া। মুখে বলে না, কিন্তু আমি শিওর। কোনদিন বলবে, চল কুন্তলা, কুম্ভমেলা ঘুরে আসি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">হঠাৎ থামল। আরেকটু হলে ওর পিঠে গোঁত্তা খেয়ে আমার থ্যাবড়া নাক আরও থেবড়ে যেত। পেছন ফিরে কাঁচুমাচু মুখ করে বলল, আর গিয়ে দরকার নেই। আমার আরেকটা গুণ হচ্ছে অদরকারি প্রশ্ন না করা, কাজেই ওক্কে বস্ বলে পেছন ফিরলাম। তখন নিজে থেকেই বলল অনতিদূরেই নাকি একজন বালির ওপর বসে বড়বাইরে সারছিলেন। সমুদ্র, মানুষ, উট কাউকে লজ্জা পাচ্ছিলেন না। বললাম, বেশ হয়েছে। একটা কথা গুরুজনের মনে রেখো। ইন্ডিয়া ভালো। রিয়েল ইন্ডিয়া দূর থেকে ভালো।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কোনার্ক সবাই গেছে তাই বর্ণনা করছি না। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে আকাশের গায়ে ওই তিনকোণা মন্দিরটি প্রথম দেখার মুহূর্ত আমার প্রায় সমুদ্র দেখার প্রথম মুহূর্তের সমান মুগ্ধতার। শিশুকালে অভূতপূর্ব ম্যানেজ করতে পারতাম না, বলতাম অতপূর্ব। সেই লেগ্যাসি মেন্টেন করে আমার মা আজীবন অভূতপূর্বকে অতপূর্ব বলে এসেছেন। অফ কোর্স, প্রকাশ্যে না; যেখানে আমি আর মা শুধু সেখানে। সঙ্গে থাকলে কোনার্কের মন্দির প্রথম দেখার মুহূর্তে মা নিশ্চয় বলে উঠতেন, অতপূর্ব, না রে সোনা? </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কোনার্কের মন্দির দূর থেকে অতপূর্ব। কাছ থেকেও অতপূর্ব। কিন্তু সবথেকে অতপূর্ব আমার লাগে চাকাগুলো। সামনে দাঁড়ালে অদ্ভুত ফিলিং হয়। দিল্লির জাদুঘরে গেলেও এ জিনিস হয়। হরপ্পা মহেঞ্জোদারোর থানোসের মতো দাড়িওয়ালা লোকটার মুখ, কিংবা সেই ষাঁড়ের মূর্তি; বেসিক্যালি ইতিহাস বইয়ের পাতায় দেখা ছবি রক্তমাংসে দেখলে জিনিসগুলোর প্রাচীনত্ব বা সৌন্দর্য ছাপিয়ে বাড়তি সম্ভ্রম জাগে। সম্ভবতঃ আমার মনের খুব গভীরে একটা সন্দেহ আছে যে বইতে লেখা জিনিসপত্র বইতেই থাকে, রিয়েল লাইফে নয়। তার মানে এই নয় কিন্তু বইতে পৃথিবী গোল লেখা আছে বলে আমি মনে মনে বিশ্বাস করি আসলে পৃথিবী ফ্ল্যাট। আশা করি বোঝাতে পেরেছি। দা ভিঞ্চি রিয়েল, মোনালিসা রিয়েল জানার পরেও মোনালিসার ছবির সামনে সত্যি সত্যি দাঁড়ালে বিশ্বাসঅবিশ্বাস মিলিয়ে যেমনটা হয়, কোনার্কের চাকাগুলোর, চাকাগুলোর স্পোকে আমগাছের পাতা গলা রোদ্দুরের ঝিলিমিলির সামনে দাঁড়ালে তেমনটা হয় আমার। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্রচুর দর্শনার্থী গাইড নিয়ে চলেছেন। একদল, গাইড যা বলছে মুখ বুজে শুনছেন। আরেকদল ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ করতে করতে চলেছেন, কেমন ধরেছি-র স্বর্গীয় আনন্দ সর্বাঙ্গ চুঁইয়ে পড়ছে। ছায়াদেবীর ছোট্ট মন্দিরটা মেন মন্দিরের তুলনায় কিছুই না। তবু ওই মন্দিরটায় দাঁড়িয়ে তাকালে মেন মন্দিরের মহিমা যেন সহস্রগুণ বৃদ্ধি পায়। অনেকটা ছায়ায় বসে রোদের দিকে তাকিয়ে থাকার মতোই। মেন মন্দিরের গোটা গায়ে খাঁচার ঠ্যাকনা পরানো। কয়েকটা মূর্তি নতুন তৈরি করে সাঁটা হয়েছে মনে হল। মন্দিরের পেছনে একটা গাছের ছায়ায় বসলাম। একটা কুকুর, আয়ুর শেষ প্রান্তে। একসঙ্গে দশ পা হাঁটার ক্ষমতা নেই। হাঁটছে আর থামছে। হাঁপাচ্ছে। যেন আর বেশি কষ্ট না পেতে হয় সূর্যঠাকুর। শেষটা শান্তির হোক।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ফোন পেয়ে সদাশিব গাড়ি নিয়ে এলেন। এবার সোজা ভুবনেশ্বর। মাঝে একবার খেতে থামা। সকালে দু'ঘণ্টা ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ তারপর রোদে হাঁটাহুটি; ক্লান্ত ছিলাম। খেয়ে গাড়িতে ওঠার পাঁচ মিনিটের মধ্যে যে যার জানালার কাচে মাথা ঠেকিয়ে কাদা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জেগে দেখি বাইরেটা সপসপে ভেজা। কখন বৃষ্টি নেমেছে। আমার একটা তুক আছে। আমার ভালোলাগার, বা আমার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ কোনও জায়গায় পৌঁছনো বা ছেড়ে আসার সময় বৃষ্টি হয়। বারবার এর প্রমাণ পেয়েছি। এবারের পুরী বেড়ানোটাও সেই যুক্তিতে আমার জীবনে অনেকদিন পর্যন্ত একটা ভালোলাগার চিহ্ন হয়ে থাকবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বৃষ্টিতে প্ল্যান চেঞ্জ করতে হল। সময়ের অনেক আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছব। অর্চিষ্মানের ইচ্ছে ছিল ভুবনেশ্বরে ঘোরার। ওটিডিসি-র নিমন্ত্রণ রেস্টোর্যান্টে যাওয়া যেত। খিদে নেই, টাইমপাসের খাওয়া। এই বৃষ্টিতে সে সব ঘোরাঘুরির মানে হয় না। সোজা এয়ারপোর্টে ঢুকলাম। অর্চিষ্মানের সুটকেস ড্রপ করতে হবে, সে বাবদে সিকিউরিটি চেক তখনও খোলেনি। চার্জিং স্টেশন খুঁজে কফি, ইডলিমিডলি নিয়ে বসলাম। ফোন চার্জ ভি হল, লোক দেখা ভি হল। একটা গর্বিত পায়রা ঘুরে ঘুরে খাবার পাওয়া যায় কি না দেখছিল। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বয়নিকা-র চিলতে শোরুমে ঢুকলাম। বেড়াতে গিয়ে কেনাকাটির অভ্যেস নেই। নিজের বাড়িতে রাখার জায়গা নেই। অন্যদের জন্যও কিনি না কারণ তাঁরা না জানলেও আমি জানি তাঁদের বাড়িতেও রাখার জায়গা নেই। তবু সময় কাটাতে ঢুকলাম। কী সুন্দর সুন্দর শাড়ি, পাঞ্জাবী। আমি অর্চিষ্মানকে পাঞ্জাবী গছানোর, অর্চিষ্মান আমাকে শাড়ি নিদেনপক্ষে কুর্তা গছানোর ব্যর্থ চেষ্টা করল। অর্চিষ্মানের ফোনে নোটিফিকেশন এল, বোর্ডিং স্টার্টিং। বেরোচ্ছি, দরজার কোণে কোমরছোঁয়া কাপড়ের থাকে পা ঠেকল। নরম সুতির সাদা জমির ওপর কলাপাতা সবুজ, বাসন্তী হলুদ, গোলাপি লাল। অর্চিষ্মানের জন্য একটা কচি কলাপাতা, আমার জন্য একটা গোলাপি লাল প্রিন্টের গামছা কিনে ব্যাগে পুরে গেটের দিকে রওনা দিলাম। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"> (শেষ)
</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="p2"><br /></div><div class="p2"><br /></div><div class="p2"><br /></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/puri20231.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ১</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/blog-post_15.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ২</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/blog-post_18.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৩</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/puritrip2023.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৪</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2024/01/chilika2023.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৫</span></a></div>
<div class="p1"> </div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com13tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-82221653532915690332024-01-03T20:16:00.005+05:302024-01-23T21:35:16.165+05:30পুরী ৫ঃ চিলিকা ঘোরা ও ফেরা
<div class="separator" style="clear: both; text-align: left;"><br /></div>
<div class="p1">বাবা শিখিয়েছিলেন বাইরে গিয়ে গাড়ি, বাস, অটো যা-ই চড়বি, নম্বরটা সবার আগে মুখস্থ করবি। আমাদের বোটের নম্বরও মুখস্থ করেছিলাম, এখন মনে নেই। এখন শুধু মনে আছে নৌকোর মুখে বাঁধা লাল চেলি, ঝিরি ঝিরি সোনালি পাড়। নৌকোয় নেমে ছাউনির তলায় বসলাম। অর্চিষ্মান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জেটির ওপর ডাঁই করা লাইফজ্যাকেটের দিকে থটফুল দৃষ্টিপাত করতে লাগল। জ্যাকেটগুলো যা ধুলোধূসরিত, ডুবে গেলেও আমি ও জিনিস গায়ে ঠেকাব না। পূর্ণচন্দ্র বললেন, এ হাঁটুজল, পড়লেও ডুববেন না। কিন্তু এ সাঁতার না জানা শহরের ছেলে। বলল, এমারজেন্সি পারপাসে থাক। পূর্ণচন্দ্র উবু হয়ে পাহাড় ঘেঁটে দুটো জ্যাকেট, যাদের কমলা রং তখনও বোঝা যাচ্ছে, বেছে দিলেন। পরার দরকার নেই, সঙ্গে রেখে দেন। মাঝি ছেলেটা একটা লম্বা বাঁশ দিয়ে নৌকো জলে ঠেলে, লাফ দিয়ে নৌকোয় উঠে আমাদের মাঝখান দিয়ে স্প্রিন্ট টেনে অপর প্রান্তে পৌঁছে গেল। সে প্রান্তে একটা লম্বা ডাণ্ডা, মাথায় সুদর্শন চক্র সাঁটা। এঞ্জিন চালু করতে চক্র বনবন ঘুরতে শুরু করল। আস্তে করে চক্রটাকে জলের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে হাল ধরল ছেলেটা। পূর্ণচন্দ্র চেঁচিয়ে বললেন, সব ভালো করে দেখিয়ে দিবি, নো কমপ্লেন। <div class="p2" style="text-align: center;">
<span class="s1"></span><br /></div>
</div><div class="p1"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjgkAYs_1muJCW50VS98ARG4QTm7rOSJh8vVKg5uub5i3MStpMQ_IO7ickhq6P5Ukm9izK1DyY3agNdECKeuFAWpuwfJM2YmsIUNfBuJLI9ppWLMECKxoTHFYE1SoTTp71SNrhX7_JVHz-ViN4FNWzKENehCKQzUCEIt7UGtsUbhY0cNsxYKYcVWRFB2mxf/s1280/Chilikanouko4.jpeg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"></a><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhbJI_f-b7356hNqyqbrlmXBq9XPnD4IZpHA5udAnnz9aGrGuKx7Oh9lypfOyaxqDk-9IxELy_ciaefeCWlhIjbv2-cTA2JmLHsn152qEy_OZPiKN87qNcdczmgGjERzLfTd7SZo5UFLu7r7hgfNqGu5GETXgN7RYUtPXt01URD9jrC_P6tdcvxrcxoyBE7/s1280/Chilikamajhi.jpeg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="720" data-original-width="1280" height="360" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhbJI_f-b7356hNqyqbrlmXBq9XPnD4IZpHA5udAnnz9aGrGuKx7Oh9lypfOyaxqDk-9IxELy_ciaefeCWlhIjbv2-cTA2JmLHsn152qEy_OZPiKN87qNcdczmgGjERzLfTd7SZo5UFLu7r7hgfNqGu5GETXgN7RYUtPXt01URD9jrC_P6tdcvxrcxoyBE7/w640-h360/Chilikamajhi.jpeg" width="640" /></a></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্রথম দ্রষ্টব্য ক্র্যাব আইল্যান্ড। আমাদের লাল চেলি বাঁধা নৌকো পারে ঠেকতেই একজন দৌড়ে এলেন, দুই হাতে দুটো ছোট গামলা। একটা গামলার ভেতর বালি, ওপরে জাল। বালির ওপর পাঁচটা কাঁকড়া তুরতুর বাইছে। জোয়ারভাঁটার কী একটা ব্যাপার আছে, কোনও একটা ঘটলে কাঁকড়ারা দলে দলে তটে উঠে আসে। আমরা ঠিক উল্টো সময়টায় গেছি যখন কাঁকড়ারা দলে দলে তটে উঠে আসে না, কাজেই গামলা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভদ্রলোক কাঁকড়া দেখিয়ে বর্ণনা শুরু করলেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ঘাবড়ে গেলে আমি চুপ করে যাই আর অর্চিষ্মান প্রশ্ন শুরু করে। এটা কী ব্যাপার? ভদ্রলোক বললেন, কেন? ক্র্যাব আইল্যান্ডে এসেছেন, ক্র্যাব দেখছেন? অর্চিষ্মান ওর আলট্রা শান্ত গলাটায় বলল, এভাবে দেখতে হবে? ন্যাচারাল কাঁকড়া দেখানোর কথা তো।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এইবার ভদ্রলোক একটা ফিলজফি এইট হান্ড্রেড লেভেলের প্রশ্ন ছুঁড়লেন। কাঁকড়া গামলার বাইরে থাকলে ন্যাচারাল আর গামলায় থাকলে ন্যাচারাল নয়? চিড়িয়াখানায় যে বাঘ দেখতে যান সেগুলো কি সব আনন্যাচারাল?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কথোপকথনটা বেশিক্ষণ চললে আমাকে লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই চিলিকায় ঝাঁপাতে হত, থ্যাংকফুলি ভদ্রলোক কাঁকড়া ছেড়ে ঝিনুকের গামলায় মন দিলেন। ব্যাপারটা মারাত্মক অ্যাবরাপ্টলি ঘটল। একটা ঝিনুক তুলে নিয়ে লুঙ্গির গিঁটে গুঁজে রাখা একটা ছোট ডাণ্ডা বার করে ঠাঁই করে ঝিনুকটা ফাটিয়ে দেখাতে লাগলেন ভেতরে কেমন করে মুক্তো পাওয়া যায়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমরা চমকে উঠতে উঠতেই ভদ্রলোক আরেকটা ঝিনুক তুলে নিয়েছেন এবং আবার ঠাঁই শব্দে ফাটিয়ে ফেলেছেন। অর্চিষ্মান এই শো এনজয় করার অবস্থায় ছিল কি না জানি না কিন্তু আমি আধমরা হয়েছি বুঝতে পেরেই ও হয়তো 'থামুন থামুন' বলে উঠল। আমিও সামলে নিয়ে প্রতিবাদে যোগ দিলাম। ঝিনুকগুলো হয়তো মৃতই ছিল, কিন্তু সেক্ষেত্রেও সেগুলোকে ফাটিয়ে ফাটিয়ে মুক্তো উৎপাদনের প্রণালী প্রত্যক্ষ করার কৌতূহল আমার নেই। ভদ্রলোক ঠাণ্ডা চোখে পাঁচ সেকেন্ড তাকিয়ে কাঁকড়া আর ঝিনুকের গামলা নিয়ে হাঁটা দিলেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgJZIqqZXBTQK-IKNvEKDUkBrWscD6xqnCwFv3YvrEdlPmvJzkQttu9rpyzUU88ujDmDhxn1xdl0v-immzjr5hr1SOTYgSqu5RqsKzQtzYH1HUd-MVLMtYuz8htxkqCv04km6Kl-z2A5qXJXhUJ-f4tv3G-o718VATqiJV_8rcNmYGUvjxRnGkCTP0KOtPp/s1280/Chilika3.jpeg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="682" data-original-width="1280" height="342" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgJZIqqZXBTQK-IKNvEKDUkBrWscD6xqnCwFv3YvrEdlPmvJzkQttu9rpyzUU88ujDmDhxn1xdl0v-immzjr5hr1SOTYgSqu5RqsKzQtzYH1HUd-MVLMtYuz8htxkqCv04km6Kl-z2A5qXJXhUJ-f4tv3G-o718VATqiJV_8rcNmYGUvjxRnGkCTP0KOtPp/w640-h342/Chilika3.jpeg" width="640" /></a></div><div class="p1"></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পরের দ্রষ্টব্য শুশুক। শুশুক আগে স্বচক্ষে দেখিনি কিন্তু শুশুকের বুদ্ধির দৌড় নিয়ে নানা অলৌকিক গল্প শুনেছি। বুদ্ধিমান প্রাণীদের গল্প আমাকে সর্বদাই আকৃষ্ট করে। সবাইকেই করে আই গেস। সেই হাতির গল্প তো সবাই জানে। মাহুত হাতির মাথায় নারকেল ফাটিয়েছিল বলে অনেক বছর পর যখন সবাই, বিশেষ করে সেই মাহুত, গোটা ঘটনাটা ভুলে গেছে, সেই হাতি সেই মাহুতকে খুঁজে বার করে মাহুতের মাথায় নারকেল ফাটিয়েছিল। হাতির বুদ্ধির কিউট গল্পও পড়েছি লীলার বইতে। ছানা হাতি জঙ্গলের ধারে শেড বা দোকান বা বড় ঝোপের আড়ালে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করত। ফাঁকা রাস্তা দিয়ে সাইকেলে চড়ে লোক গেলেই বেরিয়ে গুঁতো মেরে সাইকেলশুদ্ধু আরোহীকে ধরাশায়ী করে ছোট ল্যাজ তুলে দৌড়ে আবার লুকিয়ে পড়ত।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এ রকম আরেকটা বুদ্ধিমান প্রাণীর গল্প পড়েছিলাম, অক্টোপাস। বিশ্বকাপে ভবিষ্যদ্বাণী করা বুদ্ধিমান অক্টোপাস পল না, আরেকজন। এ নাকি ঘুমোনোর সময় কেউ ঘরে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটালে একটা শুঁড় বাড়িয়ে খটাস করে সুইচ নিভিয়ে আবার নিদ্রা যেত।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ডলফিন নাকি বুদ্ধিতে প্রায় মানুষের সমান। তার প্রমাণ ইউটিউবের রিলে প্রায়ই পায়। একটা রিলে দেখেছিলাম একটা পুলে অনেকগুলো ডলফিন থাকে। ডলফিনদের দেখাশোনার জন্য স্টাফ আছে। একটি বিশেষ নারী ডলফিন, অন্য স্টাফেরা খাবার দিতে ঢুকলে ঘাপটি মেরে থাকে। একটি সুপুরুষ তরুণ অ্যাটেন্ডেন্ট ঢুকলেই টপ স্পিডে দৌড়ে, সাঁতরে আই গেস, পুলের ধারে এসে সারা শরীর আঁকিয়েবাঁকিয়ে আকুলতা প্রকাশ করে। প্রায় জল থেকে উঠে পড়ে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে। ক্যাচ হচ্ছে, সুপুরুষের গার্লফ্রেন্ডও ওই অফিসেই কাজ করে। সেই মেয়েটি খাবার দিতে এলে এই নারী ডলফিনটি জল ছিটিয়ে মেয়েটিকে গোবরভেজা ভেজায়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এইরকম হিংসুটে, পজেসিভ ডলফিনের পাশাপাশি অ্যাকোয়ারিয়ামে কাচের এপাশে দাঁড়িয়ে থাকা বালকবালিকাদের হাইফাইভ দেওয়া ভালো ডলফিনও দেখেছি। সবরকম দেখা কাটাকুটি হয়ে ডলফিন সম্পর্কে একটা ভারসাম্যে পৌঁছেছিলাম, যেটা মারাত্মক টলে গেছে একটি তথ্যে। ডলফিনদের মধ্যে গ্যাংরেপ নাকি একটি প্রচলিত যৌনাচার। একটি মহিলা ডলফিনকে কোণঠাসা করে একদল পুরুষ ডলফিন তাঁদের যৌনচাহিদা চরিতার্থ করে। কনসেন্ট ফনসেন্টের কোনও গল্পই নেই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এইবার, ব্যাপারটার অনেক রকম বিশ্লেষণ হতে পারে। ডলফিনদের অ্যাকশনটার না, ডলফিনদের অ্যাকশন শুনে আমার রিঅ্যাকশনটার। ডলফিনদের অ্যাকশনটা আমি আমার সেই ডিকশনারি দিয়ে জাজ করছি যাতে গ্যাং, রেপ, কনসেন্ট এই প্রতিটি শব্দ তাদের নিজস্ব দ্যোতনা নিয়ে বিরাজ করছে। আমার লিঙ্গপরিচয়ও সে রিঅ্যাকশনে কনট্রিবিউট করেনি এটা হতে পারে না। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সেটা করার কথা না। আমার ক্লাস নাইন নাগাদ, যে শর্টকাট গলি দিয়ে বিদ্যালয়ের ফরটি পারসেন্ট বালিকা যাতায়াত করত, সেই গলিসংলগ্ন মাঠে একটা "পাগল" কিছু না পরে দাঁড়িয়ে থাকত। সেই একই মাঠে অন্ততঃ সাতটা গরু কিছু না পরে ঘুরে ঘুরে ঘাস খেত। কিন্তু "পাগল" এবং গরুর প্রতি আমাদের, দিদিভাইদের, পাড়ার লোকদের রিঅ্যাকশনে একশো আশি ডিগ্রি তফাৎ হয়েছিল। কারণ আমরা সবাই জানতাম আমাদের সেন্সিবিলিটি এবং সামাজিক নিয়মকানুন গরুদের নিয়মকানুনের থেকে আলাদা এবং একপক্ষের অন্যপক্ষের নিয়ম মানার কোনও দায় নেই। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একই যুক্তিতে ডলফিনদের যৌনাচারকেও আমার সেন্সিবিলিটি দিয়ে বিচার করা অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক হতে পারে। কিন্তু যদি বলি যে ডলফিনদের গ্যাংরেপের ব্যাপারটা কানে আসার পর থেকে ডলফিনদের প্রতি আমার মনোভাবে বদল ঘটেনি ডাহা মিথ্যাচার হবে। যে চোখে মানুষকে দেখি (নিজেকেও বাদ দিই না), সেই চোখে ডলফিনকে দেখতে শুরু করেছি। স্বচক্ষে ওই সিচুয়েশনের সামনে পড়তে হবে না মোটামুটি সেই কনফিডেন্স নিয়েই শুশুক পয়েন্টের দিকে যাত্রা শুরু করলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhiPnEUnbYmVUJK7oCpg-ToLmMoi6o_Hjd9kJnzQPtpF5rS5ZiHuvKtVaAZjlsEjTU8P6zaLY2un0PqsqWBL7rhLV09pObczbOIVG-cxOUZGm0PWLhFsqmLtZVXVQwpmJ7ciCtHQqhit8iTqrw1X7_W7jtVpbc2rOKiUvr2q0OGSEKsrXXe7WUQuOM3RkyH/s1280/Chilikanouko4.jpeg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="720" data-original-width="1280" height="360" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhiPnEUnbYmVUJK7oCpg-ToLmMoi6o_Hjd9kJnzQPtpF5rS5ZiHuvKtVaAZjlsEjTU8P6zaLY2un0PqsqWBL7rhLV09pObczbOIVG-cxOUZGm0PWLhFsqmLtZVXVQwpmJ7ciCtHQqhit8iTqrw1X7_W7jtVpbc2rOKiUvr2q0OGSEKsrXXe7WUQuOM3RkyH/w640-h360/Chilikanouko4.jpeg" width="640" /></a></div><br /><div class="p1"><br /></div>
<div class="p1">আদিগন্ত ধূসর জলের ভেতর লম্বাগলা সারস। জেগে আছে না ঘুমোচ্ছে বোঝা মুশকিল। সারসের ঠ্যাঙের এতখানিই জেগে আছে, পূর্ণচন্দ্রের দাবির সত্যতা প্রমাণ হচ্ছে। এ জলে পড়লে ডুবব না। বেশিরভাগ বোটই ফিরছে। ঝাঁকে ঝাঁকে বোটের ইঞ্জিনের আওয়াজে প্রাণপাখি ওড়ার উপক্রম। আকাশেও অনেক রকম পাখি উড়ছে। পাখিটাখি একেবারে চিনি না, কাক চড়াই শালিখ শকুন লেভেলের ছাড়া। কাজেই এই সব রঙিন ঠোঁট, রঙিন পালকওয়ালা পাখিদের নাম ধরে ডাকার সাহস করছি না। কয়েকটা বোট থেকে দয়ালু দর্শনার্থীরা খাবার ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছেন আর অমনি হল্লা করে সব পাখি বোটনিকটস্থ জলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মাঝে মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে দৃশ্যে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছিলাম। চিপস কেনার দূরদর্শিতাটা দেখানো উচিত ছিল। অর্চিষ্মান ছবি তুলে মনোরঞ্জনের চেষ্টা করছিল। এই পোস্টের সব ছবিই ওর তোলা। এমন সময় দূরে জলের ভেতর কতগুলো ডাণ্ডা পোঁতা দেখা গেল। ডাণ্ডা ঘিরে ঘুরঘুর করছে কয়েকটা বোট। আমাদের কর্ণধার এইদিকে, ওইদিকে, চিৎকার শুরু করলেন। এবং বুঝলাম আমি আবার সেই চেনা বিপদটায় পড়েছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চশমার পাওয়ার হাই বলেই হোক বা ট্যালা বলে, ঘাড়ের একেবারে ওপর, খুব প্রকট, খুব সশব্দ কিছু না ঘটলে আমি মিস করে যাই। তেতাল্লিশ বছরে একটাও উল্কাপাত দেখেছি মনে পড়ে না, কারণ আমার রেজিস্টার করার পক্ষে ব্যাপারটা টু মাচ দ্রুততায় ঘটে। টিভিতে যেমন দেখায়, দুধসাদা ডলফিনরা নীল জল থেকে লাফিয়ে উঠে আমাকে হাই ফাইভ না দিলে যে আমার দ্বারা ডলফিন দেখা না হয়ে উঠতে পারে সে সংশয় ছিলই। আবার ওই ইনফরমেশনটা পাওয়ার পর ডলফিনের হাইফাইভ পাওয়া আদৌ সৌভাগ্যজনক হবে কি না সে নিয়েও সংশয় ছিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যেটা নিয়ে সংশয় ছিল না সেটা হচ্ছে আমার থেকে অর্চিষ্মান ডলফিন আগে দেখতে পাবে। পেলও। মাঝি ছেলেটি ততক্ষণে চুপ করে গেছে। কেনই বা খামোকা গলায় রক্ত তুলবে। আমাকে ডলফিন দেখানোর ওর তো কোনও পারসোন্যাল ইন্টারেস্ট নেই। বাকি যাত্রীরা ডলফিন দেখতে না পেলেও ওর যতখানি যাবে আসবে, আমি দেখতে না পেলেও এক্স্যাক্টলি ততখানিই যাবে আসবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">থ্যাংকফুলি, এত কিছুর পরেও অর্চিষ্মান এখনও আমার প্রতি অতখানি বিগতস্পৃহঃ হয়ে ওঠেনি। জলের বোতল নামিয়ে রেখে, টলমল বোটে দাঁড়িয়ে উঠে, বাঁ হাতে আমার ঘেঁটি শক্ত করে ধরে ডান হাতের তর্জনী বাড়িয়ে বলল, সোজা তাকিয়ে থাক। এইবার ছেলেটা যেমন হাল ধরে নৌকো ঘোরাচ্ছিল, অর্চিষ্মান আমার ঘেঁটি ধরে তেমন ঘোরাতে লাগল আর আমি স্পষ্ট দেখতে লাগলাম, চকচকে কালো পিঠের শুশুকরা ঘোলা জলের মধ্য থেকে ঘাই দিয়ে উঠছে। উঠেই ডুব দিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। একবার তো একসঙ্গে দুটো শুশুককেও একসঙ্গে দেখলাম। শুশুকদের মসৃণ, পিচ্ছিল পিঠে চিকচিকে রোদটোদ দেখে মনটা কেমন নরম হয়ে এল। ভগবানের জীব। দোষে গুণে মানুষ। দোষে গুণে শুশুক। যদি নিজেকে দেখে ভয় না পাই, তাহলে শুশুকদের দেখে ভয় পাওয়ার কারণ নেই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অ্যানথ্রোপোমরফিজমের অ্যাটাকে মানসচক্ষে দেখলাম জলের নিচে ডলফিনদের আস্ত পাড়া। পাড়ার সবাই চিৎপাত হয়ে দুপুরের ভাতঘুম পোহাচ্ছে আর একেকজনকে ঠেলা মেরে ওপরে পাঠাচ্ছে, যে এবার তোর পালা। তখন সে ধুত্তেরি বলে উঠে এসে দুবার অতিকষ্টে ডিগবাজি খেয়েই আবার নিচে চলে যাচ্ছে। পাশের শুশুককে লাথি মেরে উঠিয়ে বলছে, যা যা, ডিগবাজি খেয়ে আয়। ছাগলগুলো এখনও হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে আর হাততালি দিচ্ছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শুশুকদর্শনের তৃষ্ণা মিটিয়ে ফিরতি যাত্রা শুরু হল। নেক্সট একঘণ্টা ধূসর জলের মরু পেরোনোর জন্য তৈরি হলাম। বাঁশে মাথা ঠেকিয়ে হাল ছেড়ে বসেছি, টুপিটা সেটাও কমফর্টেবলি করতে দিচ্ছে না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কিন্তু সবাই জানে যখন ওয়ার্স্ট-এর জন্য প্রিপারেশন থাকে তখনই বেস্ট জিনিসপত্রগুলো ঘটতে থাকে। এই বেস্ট জিনিসটাও, বিরক্তিকর রকম পতিব্রতা শোনালেও, অর্চিষ্মান-প্রণোদিত। ছাউনির বাইরে, নৌকোর মুখের কাছাকাছি, সম্ভবতঃ আমাদের মতো আনফিট যাত্রীদের ওঠানামার সুবিধের জন্যই, দুটো তক্তা পাতা ছিল। অর্চিষ্মান গিয়ে একটা তক্তার প্রান্ত থেকে হাঁটু ঝুলিয়ে শুয়ে পড়ল। একটু পরেই চোখ ঝলসে গিয়ে উঠে আসবে ভেবে অপেক্ষা করলাম। অর্চিষ্মান উঠে আসার নামগন্ধ করল না। উল্টে মিনিট দশ পরে ঘাড় উঁচু করে আমাকে বলল, এখানে এসে শোও।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পাশের পাটাতনটায় বডি ফেললাম। আমার পাঁচ ফুট দু’ইঞ্চি শরীরের পা, ঝুলিয়ে শোওয়ার উপযুক্ত নয়, কাজেই পাটাতনের ওপর বাবু হয়ে বসে, তারপর শুলাম। শোয়ামাত্র মাত্র নীল আকাশ চোখের সামনে উন্মোচিত হল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জীবনে এমন অনেক জিনিস থাকে যেগুলো সর্বক্ষণ মিস করি। বুকের মধ্যে একেকটা মানুষের শেপের গর্ত হয়ে গেছে চিরদিনের মতো, সর্বক্ষণ তারা হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আবার এমন অনেক জিনিস আছে, যাদের অনুপস্থিতি টের পেতে গেলে তার কাছে এসে দাঁড়াতে হয়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্রকৃতি যেমন। বড় গাছের ছায়ায় যতবার বসি, প্রতিবার, প্রতিবার টের পাই, যে ঠিক এই কাজটা করারই দরকার ছিল আমার। অনেকদিন আগে। রোজ করার দরকার ছিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যে মুহূর্তে নৌকোয় অর্চিষ্মানের পাশে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুলাম, নীল আকাশ নয়নপথে উন্মুক্ত হল, মনে পড়ল এই আকাশ, টোয়েন্টি ফোর সেভেন, ঘুমিয়ে ও জেগে ঘুমিয়ে থাকার প্রতিটি মুহূর্তে আমার দৃষ্টির ঠিক কয়েক ইঞ্চি ওপরে অপেক্ষা করে। চোখ তুলে দেখি না। দেখিনি কতদিন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অথচ দেখার দরকার থাকে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মানের চোখ কেন ধাঁধাচ্ছে না বুঝলাম। রোদের তেজ কমে এসেছে। নীল আকাশে সাদা সাদা ছেঁড়া মেঘের গুচ্ছ। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হচ্ছে নৌকো দাঁড়িয়ে আছে। যেই না ডানদিকে, বাঁদিকে মাথা ঘোরাচ্ছি, সাঁই সাঁই করে গাছপালা সরে সরে যাচ্ছে। আবার ঘাড় সোজা করলেই অচঞ্চল আকাশ। নিথর নৌকো। জীবনের পারস্পেকটিভ নিয়ে গভীর উপলব্ধি খুঁজে বার করার ধান্দায় ছিলাম, তারপর নিজেকে ধমকে আকাশ দেখায় কনসেনট্রেট করলাম। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg5qkfP4Jk47JwNpDE48q2UMl0d38VSIYi6Mo0FjYriAQ7fTXmrSFwfVopP4WGxt2DJwj4imIJC0hsbTwcAu7La9c-5tyz1TFY1_rHXmYDhalWfjMCpB2HR06r6wLFa31u3eGcKBE8bLlFdUPbYVeFJSzkVKje5E8GRiG2phIoHWwhdKK8_40GxmLaecQj8/s1280/Chilikanouko5.jpeg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="720" data-original-width="1280" height="360" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg5qkfP4Jk47JwNpDE48q2UMl0d38VSIYi6Mo0FjYriAQ7fTXmrSFwfVopP4WGxt2DJwj4imIJC0hsbTwcAu7La9c-5tyz1TFY1_rHXmYDhalWfjMCpB2HR06r6wLFa31u3eGcKBE8bLlFdUPbYVeFJSzkVKje5E8GRiG2phIoHWwhdKK8_40GxmLaecQj8/w640-h360/Chilikanouko5.jpeg" width="640" /></a></div><div class="p1"></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একজায়গায় অনেকগুলো বোট গজল্লা করছিল। হয়তো কোনও পয়েন্ট। খুব সম্ভব কোনও পয়েন্ট। কারণ যদিও প্যাকেজ ছিল চারটে দ্রষ্টব্যের, ফাইন্যালি আমাদের তিনটে দ্রষ্টব্য দেখানো হয়েছিল। ঘাঁটালাম না। অর্চিষ্মানও ঘাঁটালো না। বোঝাই যাচ্ছে গুঁতোগুঁতি করে দ্রষ্টব্য দেখার থেকে আকাশের তলায় শুয়ে থাকাটাই ওর কাছেও বেশি পছন্দের। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শেষমেশ একটা তীরে এসে বোট ভিড়ল। ততক্ষণে আমার ভেতর স্থিতিজাড্য সেট ইন করেছে, ভাবলাম অর্চিষ্মানকে বলি তুমি গিয়ে দেখে আসো কী দেখার। মাইন্ড চেঞ্জ করলাম। নামলাম। এখানে কী দেখার তখনও শিওর নই। কয়েকটা ঝুপড়িতে চেয়ার পাতা। দড়িতে টাঙানো লালনীল পেটমোটা চিপসের ব্যাগ। লালহলুদ ম্যাগি। অনেকক্ষণ কিছু খাইনি। চোখ সরিয়ে হেঁটে চললাম। হাঁটতে হাঁটতে ঢেউয়ের শব্দ কানে এল। তারপর চোখের সামনে সমুদ্র উন্মুক্ত হল। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhEECIlLkobvVeWUffT1eVfONJKVRasDLyONAWStqXC7KbCJgNTWgvrVbgShR0axt86a8x131NCedXNlbgpkFdYGoTLO2sSIlml4qgngczqQnRNkLqt6jYMmyQwmLzvHqhGXc9_oTRFiWZ2aW3DVjsYL8HEHNn1oWyj8ICznz5ouiC3H7Q_ZEnmQ9V0AJT3/s1280/Somudro1.jpeg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="720" data-original-width="1280" height="360" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhEECIlLkobvVeWUffT1eVfONJKVRasDLyONAWStqXC7KbCJgNTWgvrVbgShR0axt86a8x131NCedXNlbgpkFdYGoTLO2sSIlml4qgngczqQnRNkLqt6jYMmyQwmLzvHqhGXc9_oTRFiWZ2aW3DVjsYL8HEHNn1oWyj8ICznz5ouiC3H7Q_ZEnmQ9V0AJT3/w640-h360/Somudro1.jpeg" width="640" /></a></div><div class="p1"></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEitynIXKgLNEC8GwxSFFqjfARRl0S0YPyziGfBdNSbOf-9m4f5FOkomeHRabA1GnuZ-EoWMLPgky9x6AnSAyizuFeOpIUGXkjh3Dzk4hGCT4-oP8dfs2tq7m_k_CzMuA31hqDfWx6Mv3uW4nn2kXbLlo69D4_mAswT3GPh2YrfJIotr7mitlpY1eM1PNIi7/s1280/Somudro2.jpeg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="720" data-original-width="1280" height="360" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEitynIXKgLNEC8GwxSFFqjfARRl0S0YPyziGfBdNSbOf-9m4f5FOkomeHRabA1GnuZ-EoWMLPgky9x6AnSAyizuFeOpIUGXkjh3Dzk4hGCT4-oP8dfs2tq7m_k_CzMuA31hqDfWx6Mv3uW4nn2kXbLlo69D4_mAswT3GPh2YrfJIotr7mitlpY1eM1PNIi7/w640-h360/Somudro2.jpeg" width="640" /></a></div><div class="p1"></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ঢালু তট, সোনালি বালি, নীল সাদা ঢেউ। গর্জন। হাওয়ায় নোনা গন্ধ। কী যে সুন্দর। কী যে শান্তির। এখানে একটাই ঝুপড়ি। দোকানের লাল রঙের নীলকমল চেয়ারে বসে কফির অর্ডার দিলাম। কয়েকজন টুরিস্ট সমুদ্রের কাছে নেমে খুব হল্লা করছেন। জোয়ান স্বামী, ফাটোফাটো যুবতী স্ত্রীকে পাঁজাকোলা করে ছবি তুলছেন। দুটো কুকুর ঘুরঘুর করছিল। সবাই মিলে পার্লে জি খেলাম। তরুণ বাবা (জোয়ান স্বামীর থেকে আলাদা একজন) কোলে গেঁড়ি শিশু নিয়ে চড়াই তট ভেঙে উঠে এলেন। লোকে কত ফ্রেন্ডলি হয়, গেঁড়ির কিউটনেসে মুগ্ধতা প্রকাশ করতেই আমার কোলে তাকে ট্রান্সফার করে দিলেন। আহ্লাদিত হলাম। কারণ ওই সাইজের বাচ্চা কোলে নিলে বাচ্চার থেকে যে কোলে নিচ্ছে তার আরাম বেশি হয়। সতেরো সেকেন্ড পর গেঁড়ি ঠোঁট ফুলিয়ে, চোখ খুব জোরসে টিপে (যাতে জল বের হয়) বাবার দিকে দু’হাত প্রসারিত করল। সরি সরি বলে তাকে বন্দীদশা থেকে মুক্তি দিলাম। এঁরা রাঁচি থেকে এসেছেন। কলকাতায় প্রচুর চেনা লোক। জিজ্ঞাসা করলেন স্নান করেছ কি না, বললাম কাল করার ইচ্ছে। করলে গোল্ডেন বিচে করব। হোপফুলি, স্বর্গদ্বারের থেকে ফাঁকা থাকবে। তরুণ বাবা বললেন, ওঁরাও নাকি একই যুক্তিতে কাল সকালে গোল্ডেন বিচে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। দেখা হবে, বাচ্চা ফেরত নিতে নিতে বলল তরুণ বাবা। আমরাও বললাম, দেখা হবে। জানা সত্ত্বেও যে সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু এ তো দেখা হওয়ার প্রতিশ্রুতি নয়, দেখা হলে ভালো লাগার স্বীকারোক্তি। আর কোনওদিন দেখা হবে না। আরও একটা নো স্ট্রিংস অ্যাটাচড কথোপকথন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জেটিতে পূর্ণচন্দ্র অপেক্ষা করছিলেন। চারটে বেজে গেছে, পাঁচটার কাছাকাছিও হতে পারে। পূর্ণচন্দ্র বললেন, তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন, না হলে আবার।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">খিদে পেয়েছিল। রান্নাও তৈরি ছিল। রান্না খুবই ভালো। অর্চিষ্মানের চিংড়ি ভালো, আমার ডাল তরকারি ভালো। ঢ্যাঁড়সের তরকারিটা অনেকদিন মনে থাকার মতো ভালো। পূর্ণচন্দ্র আনচান করছিলেন, বেরোনোর জন্য। যদিও তখনও আলো আছে বেশ। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যাত্রা শুরু করেই দাঁড়াতে হল অবশ্য। কয়েকটা মেয়ে। স্কুলের ওপর দিক। দুয়েকজন কলেজ হলেও হতে পারে, পথ আটকে দাঁড়িয়েছে। পূর্ণচন্দ্র অনুবাদ করে দিলেন, চাঁদা চাই। গ্রামে পুজো হবে। গাড়ি আটকে চাঁদা চাওয়ার ব্যাপারটা আগে ফেস করিনি। টাকা বার করতে শুরু করলাম। আমি যত দিতে রাজি, মেয়েগুলোর তার থেকে বেশি চাই। মেয়েগুলো মুখেচোখে একটা রুক্ষভাব ফুটিয়ে রেখেছে কিন্তু আমার সঙ্গে আই কন্ট্যাক্ট করতে পারছে না। দূরে কয়েকটা ছেলে গোল হয়ে বসে এদিকে তাকিয়ে আছে। মেন্টর হতে পারে, নাও পারে। বললাম, এর থেকে বেশি আমি দেব না। পূর্ণচন্দ্রকে বললাম, গাড়ি চালান। মেয়েগুলো রাস্তা ছেড়ে দিল। আমার চোখে তখনও চোখ রাখতে পারেনি। যেদিন পেরে যাবে সেদিন যা চাইবে তা-ই যে বিনা বাক্যব্যয়ে দিয়ে দেব তাও জানি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সন্ধে নামছে। রাস্তায় প্যান্ডেল। আলো। স্পিকারে গান। একেকটা প্যান্ডেলে বেশ বড় মূর্তি। হাতির পিঠে দেবী। পূর্ণচন্দ্র বললেন, গজলক্ষ্মী। দুপাশের খালি মাঠে পোঁতা বোর্ডে লেখা ‘ক্যাটল রেস্টিং প্লেস’। আবার সেই জলাজমির মাঝেমাঝে হেলে পড়া বিদ্যুতের খাম্বা। ওপারে সূর্য নামছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পূর্ণচন্দ্র গান চালিয়ে দিয়েছিলেন। অধিকাংশ বেড়ানোর গাড়িতে গান চালাতে বললে এমন কিছু অদ্ভুত গান চালাতে থাকে যে গানগুলো চোদ্দপুরুষে শুনিনি। সে সব আশ্চর্য ম্যাদামারা প্রেমের (বা বিরহের) গান। শুনলেই মনে হয় গায়ককে (বা যার হয়ে গায়ক গাইছেন) তাঁকে ঝাঁকিয়ে বলি এত লো এনার্জিতে প্রেম হয় না, আরেকটু সতেজ হোন। না হলে সারাজীবন এই কান্নাই কেঁদে যেতে হবে। পূর্ণচন্দ্রর গানগুলো সে রকম না। ফুলব্লাডেড প্রেমের এবং ফুলব্লাডেড বিরহের গান। যে রকম গান এক সময় বলিউডে লেখা হত। দিলবর মেরে কবতক মুঝে অ্যায়সা হি তড়পাওগে, ম্যায় আগ দিল মে লাগা দুংগা যো পল মে পিঘল যাওগে, কী কনফিডেন্স ভাবুন। কিংবা ল্যাং খেয়ে সোজা অভিশাপ। জ্বলে মন তেরা ভি কিসি কো মিলন কো অনামিকা তু ভি তরসে। যত বুড়ো হচ্ছি এই ধরণের শক্তপোক্ত, সলিড প্রেমে বিশ্বাস বাড়ছে। কাঁদোকাঁদো, নিড়বিড়ে প্রেম অসহ্য।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পূর্ণচন্দ্রের গাড়ির স্পিড বেড়েছে । শুধু পূর্ণচন্দ্র না, দুপুরে আসার পথে গাড়িগুলোর চালে যে দুলকি ছিল, ঝেড়ে ফেলে সকলেই সাঁইসাঁই ছুটেছে। চুপচাপই ছিলাম, কিন্তু সামনের গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে উল্টোদিক থেকে আসা ফুলস্পিড লরির পাশ গলে যখন পূর্ণচন্দ্র লুইস হ্যামিলটনের স্মুদনেসে বেরিয়ে এলেন, গলা দিয়ে অনৈচ্ছিক ‘বাবাগো’ বেরিয়ে গেল। পূর্ণচন্দ্র বললেন, এই রাস্তাটুকু একটু র্যাশ ড্রাইভিং করতেই হবে ম্যাডাম। আমাদের আরেকটু আগে বেরোনো উচিত ছিল। জায়গাটা ভালো না। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ফাঁকা রাস্তার মাঝখানে সাদা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকা কেসটেস নাকি? অর্চিষ্মান টুইটার থেকে মুখ তুলে কান খাড়া করল। টুইটার থেকে ব্রেক নিতে হলে ও ট্রু হরর স্টোরির পডকাস্ট শোনে। সে সব পডকাস্টে ফাঁকা হাইওয়েতে সাদা শাড়ি পরা পেত্নীর বাজার মারাত্মক তেজী। আমরা ছাড়া পৃথিবীর সবাই নাকি দেখেছে। কারও কারও বাইকের পেছনে নাকি পেত্নী পিলিয়ন রাইডিং -ও করেছেন। বাইক একটুও স্লো না করা সত্ত্বেও, ফুলস্পিডে রানিং বাইকের পেছনে উঠে, ঘাড়ে ঠাণ্ডা ফুঁ দিতে দিতে অনেকটা রাস্তা গেছেন। অর্চিষ্মান মাঝরাত পর্যন্ত এগুলো শোনে তারপর ঘরের সবক'টা লাইট জ্বালিয়ে, চিলচিৎকার করে সানডে সাসপেন্সে ড্যাং ক্যাং গ্যাং চালিয়ে ঘুমোতে যায়। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জানালার বাইরে উল্কার স্পিডে ছুটে যাচ্ছে একটাদুটো গাড়ি। দিগন্তের কাছে আকাশ গেরুয়ার থেকে ধূসরের দিকে যাচ্ছে। মেঠো পথ ধরে রাস্তায় উঠে আসছে উদাসী গরুর দল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ওই লাস্টের আইটেমটাই নাকি ডেঞ্জারাস। আর মিনিটদশেকের মধ্যে নাকি কোটি কোটি ক্যাটল দু’পাশের মাঠ থেকে উঠে এসে হাইওয়ে ছেয়ে ফেলবে। পূর্ণচন্দ্র বললেন, রাস্তায় দাগ দেখছেন না? কাচে নাক ঠেকিয়ে দেখলাম, সত্যি কালো পিচে পোলকা ডটের প্যাটার্ন। সব নাকি গব্য গোবরের। প্রতিদিন সন্ধে ছ’টা বাজলেই গরুদের শিফট শেষ হয়, শুরু হয় চিলিকা টু পুরীর রাস্তার জ্যাম। সে জ্যামের মতো জ্যাম। আধঘণ্টার রাস্তা আড়াইঘণ্টায় পার হয়েছেন, পূর্ণচন্দ্র নিজে। গাড়ি থামিয়ে কতবার নেমে ঠেলে ঠেলে গরু সরিয়েছেন। সব ড্রাইভারই সরান। সেই বুমলা যাওয়ার সময় যেমন বরফের রাস্তায় পাঁচ মিনিট পর পর থেমে গাড়ি ঠেলার ট্র্যাডিশন, এখানে গরু ঠেলার। পূর্ণচন্দ্র বললেন, আপনারা এখানকার লোক নন তাই জানেন না। ন্যাশনাল নিউজ না হলেও, চিলিকা টু পুরীর হাইওয়ের এই গরুঘটিত জ্যাম নাকি লোক্যাল প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক, সোশ্যাল মিডিয়ার রেগুলার ব্রেকিং নিউজ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সূর্য অস্ত গেল। সন্ধের ছায়া আকাশের কমলার শেষটুকু টপ করে গিলে নিল। আর আমরা স্পষ্ট দেখলাম, দু’পাশের মাঠ থেকে উঠে আসছে ছায়া ছায়া অশরীরীরা। তাদের দুটো শিং, চারটে পা, একটা ল্যাজ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="p2"><br /></div><div class="p2"><br /></div><div class="p2"><br /></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/puri20231.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ১</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/blog-post_15.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ২</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/blog-post_18.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৩</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/puritrip2023.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৪</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2024/01/purikonark2023.html?sc=1706023651623#c5827187471340596752" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৬</span></a></div><div class="p2"><br /></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com10tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-43574676400101973942024-01-02T17:05:00.005+05:302024-01-02T20:09:55.316+05:30তিন্নির জন্য<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ইয়ে দুখ কাহে খতম নহি হোতা বে-র মতো আমারও এখন ভাবখানা হচ্ছে ইয়ে পুরী ভ্রমণবৃত্তান্ত কাহে খতম নহি হোতা বে। আড়াই দিনে এত কিছু করেছি ভেবে নিজেই অবাক। যখন অ্যাকচুয়ালি ঘুরছিলাম তখন তো সময়টা ফস করে ফুরিয়ে গিয়েছিল। লিখতে গিয়ে এত স্মৃতি ঝাঁকানি খাওয়া বোতলের লিমকার মতো বেরোচ্ছে কেন, কোথা থেকেই বা বেরোচ্ছে জগন্নাথই জানেন। হয়তো আমিও জানি। বুড়ো হয়েছি তার আর একটা প্রমাণ। এক কণা কথা ফেনিয়ে ফেনিয়ে এক পাহাড় করে তোলার রাইট অফ প্যাসেজটাটা পেরিয়ে গেছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তিন্নি খুবই ভদ্র ননদ, সেটা মুখের ওপর সোজা বলতে পারছে না। ঘুরিয়ে তা দিচ্ছে, নতুন বছরের নতুন রেজলিউশনের পোস্টের জন্য। জিজ্ঞাসা করলাম তুই কি রেজলিউশন নিলি বল, তাতে দুঃখী গলায় বলল, সেটাই তো ঝামেলা হয়ে গেছে, তোরা কে কী রেজলিউশন নিলি জানালে তাদের মধ্যে থেকে একটাদুটো পছন্দ করে নিজের জন্য রাখতে পারি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রেজলিউশন নিয়ে আমার এ বছর একটা স্ট্র্যাটেজি ছিল। রিভার্স সাইকোলজি। বছরের পর বছর আমাকে রেজলিউশনরা ঘোল খাওয়ায়, এ বছর রেজলিউশনদের আমি ঘোল খাওয়াব। প্রেমকে যেমন ঘৃণা দিয়ে ঘোল খাওয়ানো যায় না, উদাসীনতা লাগে, রেজলিউশনকে ঘোল খাওয়ানোর উপায় হচ্ছে আস্তে করে তাকে কাটিয়ে দেওয়া। তোমার যদি আমাকে ছাড়া চলে যায়, আমারও চলে যাবে। অত হাঁকপাকের কিছু নেই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তবু একমাত্র ননদের মুখ চেয়ে রেজলিউশনের ব্যাপারটা তলিয়ে ভেবে দেখতে হল। এক তারিখ সকালে। এত শর্ট নোটিসে নিজের মাথা থেকে রেজলিউশন ভেবে বার করা শক্ত। দিল্লির এই ঠাণ্ডায় ভোর পাঁচটার সময় অন্ধকার ঘরে, পয়েন্ট ফাইভ ওয়াটের নীল আলোর মধ্যে শুয়ে কঠিন কাজ করা আমার রেজলিউশন নয়। হাতের কাছে সেকেন্ড বেস্ট অপশনটা কাজে লাগাতে হল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তিন্নির ভাই। ঠেলা মেরে জিজ্ঞাসা করলাম, দু'হাজার চব্বিশে তোমার রেজলিউশন কী? পাঁচবার ঠেলার পর লেপের ভেতর থেকে ক্ষীণস্বরে শোনা গেল, সারভাইভ্যাল। নতুন বছর যে নতুন নতুন হরর উন্মোচন করবে, কোনওমতে সেগুলোকে ডজ করে দু'হাজার পঁচিশের এক তারিখের সকালবেলায় তোমার এই অত্যাচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রাণটুকু কোনওমতে জিইয়ে রাখা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বললাম, হ্যাঃ। এই তোমার নতুন বছরে চাওয়া? কিচ্ছু বদলাতে ইচ্ছে করে না? নিজেকে খুঁড়ে ভেতর থেকে নিজের বেটার সংস্করণ বার করে আনতে ইচ্ছে করে না? মনের গোপনে কোনও স্বপ্ন বুড়বুড়ি কাটে না? আমাকে বলতে হবে না, তবু বল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">উত্তর স্পষ্ট শোনার জন্য অর্চিষ্মানের মাথা থেকে লেপ টেনে সরালাম। অর্চিষ্মান এক চোখ খুলল। অন গড ফাদার মাদার, কুন্তলা, নো বুড়বুড়ি, নো গুড়গুড়ি। নাথিং। কারণ আমি জানি কিছু বদলাবে না। কারণ আমার অপারেটিং সিস্টেমটা সেম থাকবে। যে সিস্টেমটা নিয়ে আমি গত বছর, তার আগের বছর, তার আগের বছর, এমনকি কাল পর্যন্ত ফাংশান করেছি সেই ধুধধুড়ে অপারেটিং সিস্টেমে আজ সকাল থেকে সম্পূর্ণ একটা নতুন প্রোগ্রাম রান করানোটা পাগলের কল্পনা ছাড়া আর কিছু না। কাল পর্যন্ত টুইটারে ডুমস্ক্রোলিং আজ সকালে মেডিটেশন, এ হয় না। হয়নি কোনওদিন। যারা ভাবে হওয়া সম্ভব, তাদের চিকিৎসা দরকার।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বলে চোখ বুজে ফেলল। লেপ দিয়ে মাথাটা ঢেকে ফেলল। অল্প নাকও ডাকতে শুরু করল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে শুয়ে রইলাম। রেজলিউশন সরে গিয়ে মগজে আর একটা ভাবনা ঘুরতে শুরু করল। অপারেটিং সিস্টেমের অ্যালেগরিটা মচৎকার। আমি নিজে উপমাটুপমায় জঘন্য। অথচ আমি ঘটা করে কাড়ানাকাড়া বাজিয়ে লেখক হব বলে বুক বাজাচ্ছি আর ভালো ভালো অ্যালেগরি, মেটাফর, সিমিলি মাথায় আসছে তার যার যে সাচ্চা বাঙালির বাচ্চা হয়েও যে জীবনে এক লাইন ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এর অ্যাটেম্পট নেয়নি। ফেসবুকে না, টুইটারে না, ওয়েবজিন, স্কুলের ওয়াল ম্যাগাজিনে না। গদ্য না, পদ্য না, হাইকু না, লিমেরিক না। এমনকি এক লাইন প্রেমপত্রও না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কয়েক জন্ম আগের একটা ঘটনা মনে পড়ল। অবান্তরের প্রথম ব্লগ সংকলন বেরিয়েছিল সৃষ্টিসুখ থেকে। বইমেলায় বুক রিডিং না কীসের আয়োজন হয়েছিল। আমাকে আমার বই থেকে দুটো পিস রিডিং পড়ার স্লট দেওয়া হয়েছিল। আমি প্লেনে চড়ে সেই অসপিশাস ইভেন্ট অ্যাটেন্ড করতে গিয়েছিলাম। ভরদুপুরে কুটকুটে সবুজ রঙের সিল্কের শাড়ি পরে মেলায় ঘুরেছিলাম। একা না। বন্দ্যোপাধ্যায়কে মর্যাল সাপোর্ট দিতে করতে মিত্র ও সেনগুপ্তরাও সেজেগুজে গিয়েছিলেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গোটা অনুষ্ঠান চেয়ারে না বসে দোকানের সবথেকে পেছনের দরজার কোণা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল অর্চিষ্মান। যাতে ওর দিকে তাকিয়ে কেউ হাসলেই ও এক দৌড়ে সোজা নাকতলা গিয়ে থামতে পারে। ওর কাছাকাছি আরও এক ভদ্রলোক ঘুরঘুর করছিলেন। তিনিও বাংলা সাহিত্যের উপস্থিত সেবায়েতদের মধ্যে পড়েন না। নিতান্ত কাজের লোক। তামাশা চুকলে গেট বন্ধ করবেন জাতীয়। পাঠ বেশ খানিকক্ষণ চলার পর, ব্যাপারটা আর কতক্ষণ বাকি আছে সেটা মাপতেই বোধহয় অর্চিষ্মানকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনার পড়া হয়ে গেছে?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান উত্তর দিয়েছিল, আমি কিছু লিখিনি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভদ্রলোক নাকি তিন মিনিট হাঁ বন্ধ করতে পারেননি। হাঁ-এর অংশটুকু অর্চিষ্মান রং চড়িয়েছে হতে পারে আমাকে খোঁচানোর জন্য, কিন্তু মুখে হাঁ না হলেও মনে মনে যে হাঁ হয়েছিলেন ভদ্রলোক সে নিয়ে আমার তখনও কোনও সন্দেহ ছিল না, এখন তো আরওই নেই। গল্প না লিখলে কেউ গল্পপাঠের আসরে যায় না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যাই হোক, অর্চিষ্মান লেপ চাপা দিয়ে নাক ডাকতে শুরু করার পর লাগসই উপমা অ্যাপ্লিকেশনে আমার আর অর্চিষ্মানের ক্ষমতার ফারাক নিয়ে ভাবলাম। ভাবতে ভাবতে মন খারাপ হল, সেলফ পিটিতে মগজ ছেয়ে গেল, মনে হল বেঁচে থেকে লাভ নেই। অর্চিষ্মানের লেপ সরিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করলাম। অর্চিষ্মান এ বার দু'চোখ পুরো খুলে, আমার দিকে সোজা তাকিয়ে, স্পষ্ট কেটে কেটে বলল, কুন্তলা, আমি রেজলিউশন নিই না নিই, নতুন বছরে তোমার একটা রেজলিউশন নেওয়া আশু দরকার। হিংসুটেপনা কমানোর।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বলে এমন ভঙ্গিতে উল্টোদিক ফিরে শুল যে বুঝলাম নেক্সট পনেরো মিনিট ঠেলাঠেলি রিস্কি হতে পারে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মানের উপদেশটা একেবারে আজাইরা না। আমার হিংসুটেপনা সত্যিই কমানো দরকার। একত্রিশে নতুন বছরের ইভ পালন করতে ফোর এস-এ গিয়েছিলাম। ডেফ কল-এর চেনা ঠেক। ভেবেছিলাম নির্ঘাত জায়গা পাব না। পৌঁছে বুঝলাম, আমাদের কাছে যেটা রাত, অর্থাৎ সাড়ে আটটা, পার্টি ক্রাউডের কাছে সেটা দুপুর, কাজেই তখনও জায়গা পাওয়া যাচ্ছে। দোতলার কোণায় নিজেদের গুঁজে দিলাম। গুছিয়ে ঠাণ্ডা পড়েছিল। মোলায়েম হিট চলছিল। পরিবেশকরা ঝলমলে টুপি পরে পরিবেশন করছিলেন। নিচে একদল বিদেশী প্রবাসে বসে নতুন বছর আপ্যায়নের দুঃখ ভুলতে প্যাঁ প্যাঁ ভেঁপু বাজাচ্ছিলেন। আমরা আলুভাজায় ঠোকর মারতে মারতে লোক দেখছিলাম আর গপ্প মারছিলাম। আচমকা অর্চিষ্মান জিজ্ঞাসা করল, জীবনের কোন সময়টার কথা মনে পড়লে তোমার নস্ট্যালজিক লাগে?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভেবে ভেবে বললাম গোটা দুই ফেজের কথা। অর্চিষ্মানও বলল। তার মধ্যে একটা আমাদের বিয়ের পরের কয়েক বছরের দিল্লিবাস। অর্চিষ্মানের মতে, ওটা ওর জীবনের একটা শ্রেষ্ঠ নির্মল আনন্দের, স্ট্রেস ফ্রি ফেজ। দুজনে বসে বসে সেই সময়টার সকালবিকেল দুপুরসন্ধের কথা মনে করতে লাগলাম। আর আমি ক্রমশঃই বুঝতে পারলাম সময়টার প্রতি আমিও কী পরিমাণ নস্ট্যালজিক। প্রিয় নস্ট্যালজিয়ার অংশ হিসেবে অর্চিষ্মানের সঙ্গে কাটানো একটা সময়ের কথা আমিও বলেছি, কিন্তু সে সময় অন্য শহরের। যত আলোচনা এগোতে থাকল, দিল্লির ওই সময়টা যত আমার চোখে স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল। ঘুরছি, ফিরছি, অটো চড়ছি, জে এল এন স্টেশনে মেট্রো ঢুকছে। গলা উঁচিয়ে ঘাড় আঁকিয়েবাঁকিয়ে দেখার চেষ্টা করছি কামরার ভিড়ে অর্চিষ্মান আছে কি না। ট্রেন থেমেছে, ভিড় নেমেছে, ভিড় উঠেছে, দরজা বন্ধ হওয়ার টিং বেজেছে, এমন সময় দেখতে পেয়েছি কুড়ি হাত দূরে অর্চিষ্মানও প্ল্যাটফর্মে নেমে এদিকওদিক তাকাচ্ছে। প্রাণপণে হাত নেড়ে দুজনে দুজনকে ট্রেনে উঠে পড়ার ইশারা করে দৌড়ে যে যার সামনের কামরায় উঠে পড়ছি, কানের চামড়ায় বন্ধ হওয়া দরজার ঝাপটা লাগছে। মুচকি হাসতে হাসতে ওদিক থেকে ভেস্টিবিউল পেরোতে পেরোতে অর্চিষ্মান আসছে, বত্রিশ পাটি বার করে এদিক থেকে ভেস্টিবিউল পেরোতে পেরোতে আমি এগোচ্ছি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ফোর এস-এর হট্টগোল, ভেঁপু, পেছনের টেবিলে ক্রমশঃ লাউড থেকে লাউডতর হতে থাকা মেয়েগুলোর হাসির ভেতর বসে আমি টের পেলাম ওই দাঁত বার করা তেত্রিশ, চৌত্রিশ, পঁয়ত্রিশের কুন্তলার প্রতি হিংসেয় আমার শরীরের ভেতরটা ভরে উঠছে। যে অর্চিষ্মানের নস্ট্যালজিয়ার অংশ হয়ে উঠতে পেরেছে। আমি পারিনি। অন্ততঃ এখনও জানি না পারব কি না কোনওদিনও।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অন্যকে হিংসে অনেকেই করে, নিজেকেই নিজে হিংসে করতে অর্ডার দিয়ে বানানো হিংসুটে লাগে। নতুন বছরে হিংসে কমানোর রেজলিউশন নেওয়া যার পক্ষে একটুও অযৌক্তিক নয়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একটা রেজলিউশন জোগাড় হল। হিংসুটেপনা কমানোর। খুবই শক্ত রেজলিউশন। এক, হিংসুটেপনা মাপা যায় না। পয়লা জানুয়ারি দু'হাজার চব্বিশে হিংসের স্কেলে আমি কোথায় না জানলে একত্রিশে ডিসেম্বর দু'হাজার চব্বিশে হিংসের স্কেলে উঠলাম না নামলাম মাপব কী করে? তাছাড়া চাইলেই কি হিংসের স্কেলে ওঠানামা করা যায়? শিশুদের শুনেছি প্রেমভালোবাসা অ্যাটাচমেন্ট ইত্যাদি ভালোভালো ইমোশন জন্মানোর আগে হিংসে জন্মায়। বয়সের গুণতি মাস পেরিয়ে বছরে পৌঁছনোরও বেশ আগে। কাজেই হিংসে আমার ব্যক্তিত্বের শাঁস। অর্চিষ্মানের ভাষায় অপারেটিং সিস্টেমের অংশ। সেটাকে কি এত সহজে বদলানো যায়? আদৌ? অফ কোর্স, আই ক্যান অলওয়েজ ফেক ইট, টিল আই মেক ইট। একই কথা বাংলায় অনেক সুন্দর করে বলেছিলেন চোখের বালি-র অন্নপূর্ণা। "যেন ভুলিয়াছিস এই ভাবটা বাহিরে প্রাণপণ রক্ষা করিতে হইবে - আগে বাহিরে ভুলিতে আরম্ভ করিস, তাহলে ভিতরেও ভুলিবি।"</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দু'হাজার চব্বিশে বুকের ভেতর টের পেলেও হিংসুটেপনার কথা মুখে আনব না। দু'হাজার পঁচিশে না হলেও তিরিশে পৌঁছে হয়তো বুকের ভেতরেও একটু হিংসুটেপনা কমবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নিচ্ছিই যখন, আর একটাও নিই। মিষ্টি ছাড়ার। চা কফিতে চিনি খাই না কুড়ি বছর হয়ে গেল কিন্তু রসগোল্লা, সন্দেশ, রাবড়ি, কেক, সেগুলো এবার বিসর্জন দেওয়ার সময় এসেছে। ডাক টের পাচ্ছি বুকের ভেতর।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কাজেই তিন্নি, আমার তরফ থেকে দুটো রেজলিউশনের আইডিয়া দিতে পারি তোকে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এক, মিষ্টি ছাড়ব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দুই, হিংসুটেপনা ছাড়ব। ওয়েল, কমাব। অন্ততঃ ভান করব যে কমিয়েছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একটা অদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমার সঙ্গে এক প্রফেশনাল কমেডিয়ান, তাও আবার সাহেব কমেডিয়ানের কথোপকথন হয়েছিল। তিনি আমাকে প্রথম তিনের মহিমার ব্যাপারটা ধরিয়ে দিয়েছিলেন। চুটকিতে যে একটা বারে প্রত্যেকবারই একজন বাঙালি, একজন উড়িয়া আর একজন পাঞ্জাবি ঢোকেন (ওঁর ক্ষেত্রে একজন ইংরেজ, একজন ফ্রেঞ্চ, একজন জার্মান), কমেডিয়ানের মতে ব্যাপারটা ফ্লুক না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জোকস অলওয়েজ সাউন্ড বেটার ইন থ্রিজ। পরে ইউটিউবের হোম ডেকরেশনের টিপসেও দেখেছি, ডেকোরেটররা সর্বদা তিনের ওপর জোর দিচ্ছেন। দেওয়ালে তিনটে ছবি বা গ্যালারি ওয়ালে তিনের গুণিতকে, কফিটেবিলে তিন রকম হাইটের তিনটে শো পিস, বুকশেলফে তিনটে বই। তারও পরে রাইটিং-এর টিপস অ্যান্ড ট্রিকসেও তিনের মর্ম বোঝানো হয়েছে। যার প্রয়োগ আগের বাক্যে এবং এই প্যারাগ্রাফেও করার চেষ্টা করেছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কাজেই দুটো রেজলিউশন নেওয়ার বদলে তিনটে নেব। দুটো ছাড়ার রেজলিউশন ব্যালান্স করতে তিন নম্বরটা, ঠিক ধরার নয়, বাড়ানোর নেব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দু'হাজার তেইশে, অনেক বছর পর, বইয়ের থেকে আমি মানুষের সঙ্গে বেশি সময় কাটিয়েছি। যতটা কল্পনা করেছিলাম বিষয়টা তার থেকেও বেশি অসুবিধের। দু'হাজার চব্বিশের আমার স্লোগান, মানুষ কমাও বই বাড়াও।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নেব না নেব না করেও তিনটে রেজলিউশন নেওয়াই হয়ে গেল। দেখা যাক বছর শেষে কী দাঁড়ায়। আপনারা আমার মতো রেজলিউশন নিয়ে বা অর্চিষ্মানের মতো না নিয়ে, যার যার নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম মেনে, দু'হাজার চব্বিশের যাবতীয় হর্ষ ও হরর জাপটে আপনাদের বেস্ট জীবনটা বাঁচুন। আমি আপনি অর্চিষ্মান তিন্নি, আমরা সবাই এমন বাঁচি যেন অনেকদিন, অনেকবছর পর দু’হাজার চব্বিশের আমিটার দিকে ফিরে তাকালে আমাদের সবার অল্প অল্প হিংসে হয়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">হ্যাপি নিউ ইয়ার।</div><div class="p1"><br /></div><div class="p1"><br /></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com12tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-44428787294170820462023-12-26T13:35:00.005+05:302024-01-23T21:32:17.011+05:30পুরী ৪ঃ চিলিকা
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তখন অলরেডি প'নে দশটা বাজে। খুব দৌড়ে হোটেলে ফিরে চুল আঁচড়ে বেরোতেও সাড়ে দশটা বেজেই যাবে। বিশ্বনাথের মতে সাড়ে দশটায় বেরোলে আরামসে চিলিকা প্যাকেজ সেরে সন্ধের আগেই ফিরতে পারব। আড়াইঘণ্টার মোটে রাস্তা। যেতে আসতে আড়াই আড়াই পাঁচবার চা খাওয়ার জন্য থামলেও । এদিকে বাবা বলছে, চিল্কা প্যাকেজ টুরের বাস নাকি সকাল সাতটায় বেরিয়ে যায়। দশ মিনিট পর জানাচ্ছি বলে বিশ্বনাথের ফোন ছাড়লাম। গল্পের খেই ছিঁড়ে গেছে। বসে বসে চিলিকা যাওয়ার প্রোস অ্যান্ড কনস ভাবছি। বললাম, একটা প্রোস হচ্ছে যে সেই ছোটবেলা থেকে এতবার পুরী এসেছি একবারও চিল্কা দেখিনি, দেখা হয়ে যাবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান বলল, অ্যাঁ! চিল্কা দেখোনি মানে কী?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ছোটবেলা থেকে চিল্কা বলে এসেছি, এখনও চিলিকার থেকে চিল্কা শব্দটাই আমার বেশি সুন্দর লাগে। যেমন ডেঙ্গির থেকে ডেঙ্গু । যেমন মান্যতার থেকে স্বীকৃতি। কিন্তু সে তো আমার এখনও প্লুটোকে গ্রহ ভাবতে ভালো লাগে। তা বলে তো আর সময়ের দৌড়ে পিছিয়ে পড়া যায় না। সেই বাবদে এবার থেকে চিল্কাকে চিলিকাই বলব। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পূর্ণচন্দ্র এলেন গাড়ি নিয়ে। বেড়াতে যাওয়ার সময় আমাদের শরীর থেকে প্রোক্র্যাস্টিনেশনের সমস্ত চিহ্ন অন্তর্হিত হয়। সাড়ে দশটাতে লাফ মেরে গাড়িতে ঢুকলাম। যাত্রা শুরু হল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভুবনেশ্বর থেকে পুরী যাওয়ার পথের শুরুতে যেমন গোড়ায় একটা শহর পেরোতে হয়েছিল, এখানে শুরু থেকেই প্রকৃতি। ক্ষেত, মাঠ, বাঁশবন। বনের ছায়ায় চায়ের গ্লাস হাতে বিশ্রামরত মানুষ। এ দৃশ্য ভুবনেশ্বর টু পুরী রুটেও দেখেছি। পুরুষই বেশি। জোড়ায় জোড়ায়। কখনও সখনও ত্রইকাতেও। হাতে গ্লাস, পাশে ফ্লাস্ক। স্ট্রেস রিলিভের টোটকার লিস্টে প্রথম আইটেম থাকে স্লো ইয়োর লাইফ। আমার লাইফ আর স্লো করলে কোমায় চলে যাব। তবু ওঁদের তাড়াহীন জীবনের দিকে তাকিয়ে হিংসে হচ্ছিল। আমি পয়দায়েশি হিংসুটে, সেটাই প্রধান কারণ, অফ কোর্স। কিন্তু অপ্রধান কারণও একটা আছে। এই ফিলিংটা মনের ভেতর দিনের পর দিন ক্রমশঃ জোরদার হয়ে উঠছে যে রোজ সেকেন্ডের পর সেকেন্ড, মিনিটের পর মিনিট, ঘণ্টার পর ঘণ্টা, সকালের পর দুপুর, দুপুরের পর বিকেল, বিকেলের পর রাত্রি যেটা আমার সঙ্গে ঘটছে সেটা আসলে আমার সঙ্গে ঘটছে না। ঘটছে অন্য কারও সঙ্গে। আমি অন্য কারও একটা জীবন বাঁচছি। কাজ সারছি। ভাবছি চট করে সেই অন্য লোকটার জীবনের কাজগুলো সেরে নিয়ে অবশেষে একদিন নিজের জীবনটার সঙ্গে ক্যাচ আপ করব। বাড়ির ছাদে জ্যোৎস্নাহীন রাতে হাঁটতে হাঁটতে, বেলেঘাটার ছোটঘরটার জানালা দিয়ে বাতাবিগাছের পাতা ভিজিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে, আমার সে নিজস্ব জীবন, মগজের ভেতর ঝাঁকিদর্শন দিয়ে মিলিয়ে যায়। সে জীবনের আরেকটা রূপ আমার সামনে সত্যি হয়ে উঠল। ঝিরিঝিরি বাঁশের বনে বসে সখাসখীদের সঙ্গে বেলা দশটার সময় চা খেতে খেতে গল্প জমানো, বা নীরবতা উপভোগের থেকে আদর্শ জীবন কি আর হয় কিছু? সত্যি কি আর কিছু চাওয়ার থাকে?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রিয়েলাইজেশনটা অর্চিষ্মানের সঙ্গে ভাগ করব বলে হাঁ করেছি, অর্চিষ্মান মুচকি হেসে বলল, ভালোই আছে লোকজন, সকাল সকাল শুরু হয়ে গেছে। বললাম, শুরু হয়ে গেছে মানে? অর্চিষ্মান বলল, বোতল গ্লাস খুঁলে বসেছে দেখলে না?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমার কনফিউশন দেখে এবং শুনে অর্চিষ্মান সেই লুকটা দিল, যেটা ও দিনে তিনবার আমার প্রতি নিক্ষেপ করে। সকাল দশটায় বাঁশবনে মশার কামড় খেতে খেতে কেউ চা খায় না কুন্তলা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বাঁশবনের ঝিরিঝিরিতে বসে চা খাওয়ার উদাস কল্পনাটা আমাকে যতটা টেনেছিল,সকাল সকাল মশার কামড় খেতে খেতে তাড়ি খাওয়ার অপশনটা ততটা অ্যাপিলিং লাগল না। ওটা আমার ফিউচার এবং রিয়েল জীবনের বাকেট লিস্ট থেকে বাদ দিয়েছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভারতবর্ষের সব রাজ্যই নির্ঘাত কমবেশি ধার্মিক। কিন্তু ওডিশায় আক্ষরিক অর্থেই কত যে ঈশ্বর, গুণে শেষ করা যায় না। যে মোড়ই বেঁকি না কেন, একেকজন ঈশ্বর, একেকটি বাজখাঁই মন্দিরে বিরাজ করছেন। আমাদের যেমন রেলের জমি দখল করার জন্য একটা মাথা মসৃণ করা শিলনোড়া পুঁতে চারদিকে চারটি খুঁটি পুঁতে অ্যাসবেস্টস চাপিয়ে “শিবমন্দির” খাড়া করা হয়, সাতদিনে একবার ফুলজল পড়ে কি না সন্দেহ, সে রকম নয়। তিনতলা জমকালো মন্দির। ধাঁই ধাঁই কাড়ানাকাড়া বাজছে, মাইকে মন্ত্র পড়া হচ্ছে, ভক্তরা নোংরা রাস্তার ওপরেই সাষ্টাঙ্গ হচ্ছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মূর্তির প্রতি এঁদের অবসেশনটাও ইন্টারেস্টিং। পৌত্তলিক দেশে সেটাও হয়তো প্রত্যাশিত। মনীষীদের মূর্তি হলে তবু বোঝা যায়, কিন্তু রাস্তার মাঝে মাঝে র্যান্ডম দুই অতি নিরীহ নারীপুরুষের মূর্তি। কোনও সুসন্তান, মা বাবার স্মৃতি অমলিন রাখতে বাড়ির সামনে বা মোড়ের মাথায় তাঁদের মর্মরমূর্তি স্থাপন করেছেন। পুরী হোটেলের গেটের পাশেও আছে বাই দ্য ওয়ে। হালদার দম্পতির মর্মরমূর্তি। এখানে আমার বাঙালি বায়াস কাজ করেছে নিশ্চয়। এই লোকেশনে এই রকমের একটি ইন্সটিটিউশন বানিয়ে যাওয়ার ভিশন দেখিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের মূর্তি স্থাপন হওয়াই উচিত। আমার মতো বেড়ে পাকাদের রিভিউ যাই হোক, পুরী হোটেল যে একটা হোটেলের মতো হোটেল এবং পুরী ট্যুরিজমের একটি শিরদাঁড়া, সেটা অনস্বীকার্য।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চিলিকা যে কত বড় তার আইডিয়া পেলাম যখন বোটিং পয়েন্টে পৌছনোর অনেকক্ষণ (কতক্ষণ আগে ভুলে গেছি, আধঘণ্টা চল্লিশ মিনিট তো হবেই) দু'পাশের জলাজমি দেখিয়ে পূর্ণচন্দ্র বললেন, দেখুন, চিলিকা শুরু হয়ে গেল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অবশেষে, চা খাওয়ার জন্য থেমেটেমে, চিলিকার কাছাকাছি পৌঁছনো গেল। অর্চিষ্মান দৌড়ে প্যাকেজের টিকিট কেটে আনল। চারটে নাকি পয়েন্ট দেখাবে। ক্র্যাব আইল্যান্ড, একটা সি- মাউথ, তিন নম্বরটা ভুলে গেছি, চার নম্বর এবং এই গোটা অভিযানের স্টার অ্যাট্র্যাকশন, শুশুক।ডলফিন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">টিকিট কাউন্টারে পৌঁছনোর আগে একটি দোকানের সামনে পূর্ণচন্দ্র গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলেন। দোকান মানে একটা খালি ঘর। খাবার অর্ডার দিয়ে গেলে ফেরার পথে খাবার পাওয়া যাবে। এক ভদ্রলোক সবেগে বেরিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে দুটো ল্যামিনেটেড এবং আলুভাজা মেনু আমার আর অর্চিষ্মানের হাতে গুঁজে দিলেন। অর্চিষ্মান একটা চিংড়ি থালির অর্ডার দিল, পূর্ণচন্দ্র ফিশ থালি, আমি ভেজ। ভদ্রলোক আমাকে ফিশ থালি পুশ করার চেষ্টা করলেন, দারুণ নাকি স্বাদ। ফ্রেশ ফিশ, ফ্রেশ তেলমশলায়, ফ্রেশ কষানো। নুয়ে পড়ে বললাম, বুঝতে পারছি লাইফটাইম মিস হচ্ছে, কিন্তু আমার হাত পা বাঁধা। ভেজ ছাড়া গতি নেই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দীর্ঘ সাঁকোর অন্তে অপেক্ষারত বোট। সাঁকো শুরুর মুখে আশু ট্রিপের জরুরি প্রভিশনের সম্ভার সাজিয়ে এক ভদ্রলোক বসে আছেন। জল, কোল্ড ড্রিংকস, স্লাইসড কেক, চিপস। শেষের আইটেমটা নিতে উৎসাহ দিলেন দোকানের মালিক। অনেকক্ষণের নাকি ধাক্কা। তাঁর ভেস্টেড ইন্টারেস্টের কথা মনে রেখে কান দিলাম না। ভুলই করলাম। চিলিকাভ্রমণ দীর্ঘ নয়। অতি দীর্ঘ এবং কিঞ্চিৎ বোরিং। খিদে না পেলেও সময় কাটানোর জন্য চিপস থাকলে কাজে দিত।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জলের বোতল সঙ্গে নেওয়ার সাজেশনটা ভাগ্যিস শুনেছিলাম। দুজনের জন্য দুটো কেনা হল। হাইড্রেটেড থাকতে হবে। অর্চিষ্মান আর পূর্ণচন্দ্র সাঁকো ধরে চলতে শুরু করলেন। অনুসরণ করব, থমকালাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দোকানের অল্প দূরে, দুটো খোখো-র খুঁটি মতো। উপযুক্ত দূরত্ব মেন্টেন করে তিনটি দড়ি টানটান খাটানো। তিনটি দড়িতে জামা শুকোনোর ক্লিপ দিয়ে সারি সারি টুপি সাঁটা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">টুপি ব্যাপারটার প্রতি আমি কোনওদিন কোনওরকম আকর্ষণ বোধ করিনি। একাদশীর সকালবেলা থেকে মা উলের বউটুপি পরাতে শুরু করাতেন সেটা টুপির প্রতি আমার আজীবনের অ্যাপাথির উৎস হতে পারে। কিন্তু আমার ধারণা আমার ষষ্ঠেন্দ্রিয়, যা জীবনে ছ'বারও অ্যাকটিভ হয়েছে বলে মনে হয় না, সেটা আমাকে ওই ছোটবেলাতেই কানে কানে বলে গেছিল যে আজীবন তোমাকে অনেক, অসংখ্য, অযুত ফিগারেটিভ টুপি পরতে হবে। উইদাউট কনসেন্ট। সেই জন্যই হয়তো আমি রিয়েল টুপির প্রতি কোনওদিন আগ্রহ বোধ করিনি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">স্মরণীয় অতীতে (স্মৃতি বলছে অ্যাডাল্ট জীবনে ওই একবারই) রিয়েল টুপি পরার কথা মনে পড়ছে, রণথম্ভোরের জিপ সাফারিতে। ক্যামোফ্লেজ রঙের, যাতে বাঘ বনের গাছপালার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে এবং খোলা জিপের ওপর ফ্রি বুফের আনন্দলাভ থেকে বিরত থাকে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দুজনকে দুটো টুপি দেওয়া হয়েছিল। একমাইল লম্বা একটা খাদের ওপারে পাহাড়ের গুহায় ডোরাকাটা ল্যাজ নড়তে দেখে অর্চিষ্মান ভয় পেয়ে এমন লাফাল, ওর টুপিটা জঙ্গলে কোথায় উড়ে গেল। কাজের খুব চাপ থাকলে অনেকদিন কল্পনা করেছি একটা ছানা বাঘ অর্চিষ্মানের সে হারানো টুপি খুঁজে পেয়েছে, এবং রোদে বেরোনোর আগে নিজের মাথায় পরে নিচ্ছে। রণথম্ভোরের পর আর রিয়েল টুপি পরেছি বলে মনে পড়ে না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কিন্তু ওই দুপুরের ঝলমলে সোনালি রোদ, শব্দ শুষে নেওয়া অন্তহীন শান্ত জলরাশি, আর দুই খুঁটির মধ্যে তিনসারি ঝলমলে টুপি দেখে আমি টুপি, রিয়েল টুপি, পরার ব্যাপারটা আরেকবার তলিয়ে কনসিডার করলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অধিকাংশ টুপিই ঝলমলে, ভিড়ের মধ্যে যাতে টপ করে খুঁজে পাওয়া যায়। চওড়া বারান্দার বেড় দেওয়া যাতে চিলিকার রোদ থেকে রং বাঁচানো যায়। টুপির মাথা ও বারান্দার সংযোগস্থলে রংবেরঙের রিবন। লার্জ এবং এক্সট্রা লার্জ বো বাঁধা। তাতেও যদি লোকে না তাকায় সেই ভয়ে হ্যালো, ওয়েলকাম, হ্যাপি বার্থডে, বিউটিফুল, বাটারফ্লাই ইত্যাদি ফিলগুড শব্দ চনমনে ইংরিজি অক্ষরে ছাপা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান ও পূর্ণচন্দ্রের গলা ক্ষীণ হয়ে আসছে। আর দেরি চলবে না, যা করার দ্রুত করে ফেলতে হবে। এমন সময় টুপিটা চোখে পড়ল। প্রায় পরশপাথর চোখে পড়ার মতোই। সেই টুপি যার শরীরের একটি বিন্দুও ঝকমকে নয়, আধইঞ্চি রিবনও যার শরীরে লেপ্টে নেই, একটি অক্ষরও যার গায়ে ছাপা নেই। আমার ব্যক্তিত্বের খাপে খাপ একটি বেরং, বোরিং টুপি। টুপিটা ওখানে দাঁড়িয়েই পরে নিলাম। তারপর দোকানিকে গিয়ে বললাম কত দিতে হবে? দোকানি আমার দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, এগুলো ভাড়ার টুপি, এখন কিছু দিতে হবে না, ফিরে কুড়ি টাকা দিয়ে দেবেন। বলতে বলতেই তাঁর মুখে এমন একটা হাসি ফুটে উঠল যাতে মনে হলে কুড়ি টাকাটা না পেলেও কিছু এসে যাবে না, ওঁর যা উশুল হওয়ার হয়ে গেছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সাঁকোতে উঠলাম। পায়ের শব্দে অর্চিষ্মান পেছন ফিরে তাকাল। প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোন বার করে আনল। তুলে ধরে দু'হাজার তেইশের পুরী ট্রিপের প্রথম ফোটোটা তুলল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সে ছবি অবান্তরে ছাপার প্রশ্নই ওঠে না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="p2"><br /></div><div class="p2"><br /></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/puri20231.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ১</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/blog-post_15.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ২</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/blog-post_18.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৩</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2024/01/chilika2023.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৫</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2024/01/purikonark2023.html?sc=1706023651623#c5827187471340596752" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৬</span></a></div><div class="p2"><br /></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com7tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-27494446722251953792023-12-18T12:16:00.003+05:302024-01-23T21:07:45.993+05:30পুরী ৩ঃ কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পুরীর বিচে সূর্যোদয় দেখার আনন্দ যারা দেখেছে সবাই জানে। সে আনন্দের জন্য অ্যালার্ম দিয়ে উঠতে আমার আপত্তি নেই। এদিকে অর্চিষ্মানের মতে পুরীর বিচের পাঁচশো মিটারের মধ্যে শুয়ে, অ্যালার্ম বন্ধ করে যতক্ষণ ইচ্ছে ঘুমোনোর আনন্দও কম নয়। একসঙ্গে থাকতে থাকতে দুটো লোক একে অপরকে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করে। বদলায়। যার ব্যক্তিত্বে পাপোষভাব প্রবল, স্বাভাবিকভাবে তার বদলই বেশি ঘটে। কাজেই আমিও আজকাল অ্যালার্ম দিয়ে উঠে সূর্যোদয় দেখতে বেরোনোর বদলে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোনোই প্রেফার করি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যদিও ওই তীব্রতা এবং ফ্রিকোয়েন্সির ট্রাকের হর্নের মধ্যে অর্চিষ্মানের পক্ষেও ঘুমোনো অসম্ভব। চা খেয়ে বেরোলাম। হোটেলের সামনে স্নানের ধুম। ঢেউয়ের থেকে মানুষ বেশি। লোকের মজা যে সংক্রামক, সে নিয়ে ইউটিউব রিল দেখেছি। নিউ ইয়র্ক সাবওয়েতেই হবে, কারণ সব রিল ওখানেই শুট হয়। একটা স্টেশন থেকে একজন পেশাদার অভিনেতা মোটামুটি ফাঁকা একটা ট্রেনে উঠলেন। উঠে উল্টোদিকের দরজার কাছে চলে গেলেন তারপর কানে এয়ারপড গুঁজে ফোন স্ক্রোল করতে শুরু করলেন। এই পর্যন্ত কোনও বিস্ময় নেই। তারপর ভদ্রলোক হাসতে শুরু করলেন। যেমন আমরা হাসির রিল দেখে হাসি। আমাকে জোর করে হাসতে বললে আমি ফ্রিজ করে যেতাম বা এমন বাড়াবাড়ি করে গড়াগড়ি খেয়ে হেঁচকি তুলে হাসতাম যে সবাই ভয় পেয়ে দৌড়ত। এই ছেলেটি আমি নয়, পেশাদার অভিনেতা। হাসি পাচ্ছে অথচ পাবলিক প্লেসে হাসি চাপার চেষ্টা করেও পারছে না, অল্প অল্প, দমকে দমকে হাসি বেরিয়ে আসছে, সেই ভাবটা পারফেক্ট ফোটাতে পেরেছিল। ছেলেটার হাসি বা হাসি চাপার চেষ্টা দেখে প্রথমে একদু’জন করে, তারপর চার পাঁচ, ন’দশ করে গোটা কামরা হোহো হাসতে শুরু করল। এবং এই সোশ্যাল এক্সপেরিমেন্ট দ্বারা প্রমাণ হল যে হাসি, মজা, আমোদ ইত্যাদি আবেগ সংক্রামক।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মাঝবয়সী কয়েকজন মহিলা, ওডিশারই মনে হল, স্নানে নেমেছেন। এবং পণ করেছেন যাই হোক না কেন একে অপরের হাত ছাড়বেন না। পুরীর সমুদ্রে স্নানের জন্য এর থেকে খারাপ স্ট্র্যাটেজি আর হয় না। একজন পড়লে বাকিদের পড়া ছাড়া সমস্ত বিকল্প বন্ধ। আবার এটাও যেহেতু সত্যি যে পড়াতেই বেশি আনন্দ, তাই এঁরা ঢেউয়ের ধাক্কায় পড়ছেন এবং ওঠার উপক্রম করতে করতে (হাত ধরে) আরেকটা ঢেউ এসে যাচ্ছে, আবার ধরাশায়ী হচ্ছেন এবং এই করে করে উঠতেই পারছেন না। এই উঠতেই না পারাটা এঁদের মধ্যে অপরিসীম ফুর্তির জন্ম দিচ্ছে এবং এঁরা ননস্টপ হেসে চলেছেন, আশপাশের স্নানার্থী এবং ভয়্যারিস্টিক দর্শনার্থীদেরও হাসির উৎস হচ্ছেন। আমরাও মিনিটদুয়েক সে আনন্দ উপলব্ধ করে হাঁটা লাগালাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">স্নানের প্ল্যান ছিল না। এমনি হাঁটব। একবার বি এন আর হোটেলে থেকেছিলাম, তার সামনের বিচটা, বেসিক্যালি পান্থনিবাসের সামনের বিচ ফাঁকা ছিল মনে আছে। সেদিকেই হাঁটতে থাকলাম। অনতিদূরে বালির ওপর এক ভদ্রলোক বুকে হাঁটছেন। দুজনেই দেখেছি, কিন্তু ব্যাপারটা ভালো বুঝতে পারিনি। এগিয়ে বুঝলাম শরীরচর্চা হচ্ছে। ভদ্রলোক বালির ওপর উপুড় হয়ে শুয়েছেন, দুই হাতে ভর দিয়ে আপার বডি উত্তোলন করেছেন। বেসিক্যালি, অর্ধ ভুজঙ্গাসন। এবার ওই অবস্থায় দুই হাতে লাফিয়ে লাফিয়ে গোটা শরীরটাকে টেনে টেনে চলেছেন। চলেছেন সমুদ্রের উল্টোদিকে, কাজেই চড়াই উঠতে হচ্ছে। জিনিসটা করতে কী পরিমাণ জোর (শরীর এবং মনের) খরচ হচ্ছে টের পেয়ে আমাদের হাঁটার স্পিড আপসে কমে গেল। প্রায় কুড়ি হাত মতো গিয়ে ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন এবং হেঁটে হেঁটে আবার শুরুর জায়গায় ফিরে এলেন। উপুড় হয়ে শুলেন, অর্ধ ভুজঙ্গাসন হলেন, শুরু হল সেই অমানুষিক পরিশ্রম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">উঠে দাঁড়ানোর সময় ভদ্রলোকের ঘর্মাক্ত রোদে পোড়া শরীরটি আমাদের নজরে পড়েছিল এবং সেই পুরোনো প্রবাদটি আবার স্বমহিমায় সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। পরিশ্রমের বিকল্প নেই। ভেরিফাই না করলেও শিওর আর যে কথাটা আমাদের দুজনেরই মাথায় এসেছিল সেটা হচ্ছে নাটক্র্যাকার খেতে খেতে, নেটফ্লিক্স দেখতে দেখতে সুতনু বা সুতনুকা কাউকে দেখলেই যে বলাবলি করি, চল বডি বানাই, সেটা করতে এর পর থেকে লজ্জা হওয়া উচিত।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অনতিদুরে লাল গামছার খণ্ড উড়ছে। ওডিশায় গামছা কাঁঠালিকলার সাবস্টিটিউট। গামছা থেকে একটা দড়ি বেরিয়ে বালির ওপর দিয়ে সমুদ্রে ঢুকে গেছে। মাছ ধরার জালের ও রকম দড়ি বিচের যত্রতত্র ছড়ানো। কাজেই সেটাও নিপাত্তা করেছি। করে যেই না দড়িতে পা রেখেছি, চারদিক থেকে প্রবল চিৎকার শুরু হল। অর্চিষ্মান বাঁদিকে তাকাল, আমি ডানদিকে। বাঁদিক থেকে একজন কর্তৃপক্ষ টাইপ লোক হাত নেড়ে অর্চিষ্মানকে দড়ির পেছনে যেতে বললেন, ডানদিক থেকে একটি অবভিয়াসলি বাঙালি পরিবার, দড়ির এক ইঞ্চি এপারে স্নানরত, সে পরিবারের একটি মেয়ে, কত হবে তিরিশ ম্যাক্স, চোখমুখ ঘুরিয়ে হাত নাড়িয়ে আমাকে বলল, দড়ির ওপারে গেলেই টাকা দিতে হবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চোখ ঘুরিয়ে প্রোলেতারিয়েত বন্ডিং ব্যক্ত করলাম। মেয়েটা হাসল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমাদের হেনস্থা আরেকজনও প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ক্ষীণতনু ভদ্রমহিলা, খটখটে শুকনো। আমাদের মতো অন্যদের দেখে ভিক্যারিয়াস স্নানের আনন্দ নিতে বেরিয়েছেন। তিনি উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপারটাকে আরেকটু বিস্তৃত করলেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দড়ির ওপারটা হচ্ছে গোল্ডেন বিচ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। ওই বিচেও ঢোকা যায়, স্নান করা যায়, কিন্তু ফি-এর বিনিময়ে। সরকার টাকা পান, খদ্দের পান পরিষ্কার, ভিড়হীন বিচ। এটা খুব পুরোনো সিস্টেম বলে মনে হলে না। আগের বার ওই বিচেই স্নান করেছিলাম, টাকা দিতে হয়েছিল বলে তো মনে পড়ল না। মহিলার আমাদের সঙ্গে আলাপের ইচ্ছে তখনও ফুরোয়নি। বললেন, আপনারা কোথা থেকে আসছেন? এই প্রশ্নটার উত্তর আমরা সর্বদাই খেলিয়ে দিই। বলি যে আমরা আদতে পশ্চিমবঙ্গের, কিন্তু থাকি দিল্লিতে। মহিলা ওডিশারই লোক। মহিলা বললেন, ইজ দিস ইয়োর ফার্স্ট টাইম ইন পুরী? উত্তরে দাঁত বার করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। মহিলা বুঝলেন। অফ কোর্স, মেনি টাইমস। তারপর টা টা করে এগিয়ে গেলেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এই ধরণের ইন্টারঅ্যাকশন আমার প্রিয়। নামধাম জানার অবকাশ নেই। কারণও না। মোলাকাতটা আমার মনে থাকতেও পারে, আবার নাও পারে। যথার্থে নো স্ট্রিংস অ্যাটাচড। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গোল্ডেন বিচের দিকে হাঁটার একটা কারণ ছিল। কাল রাতের শব্দের সমুদ্রের মধ্যে ঘুমের দুঃস্বপ্ন আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল পান্থনিবাসে গিয়ে সম্ভাব্য খালি ঘরের খোঁজ নিতে। বিচ ছেড়ে রাস্তায় উঠে এলাম। এক কাপ চা নিয়ে বড় রাস্তায় উঠলাম। একটু এগিয়ে ডানদিকে বেঁকলেই চওড়া ফাঁকা রাস্তা। পুরী হোটেলের সামনেটার মতো গ্যাঞ্জাম না। যে কোনও জায়গায় সকালবেলা হাঁটার আমার একটা ফেভারিট অংশ হচ্ছে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য। সাইকেলে, রিকশায়, ভ্যানে, পদব্রজে। স্নান করে, পেতে চুল আঁচড়ে দলে দলে চলেছে। মুখ দেখে আমি আর অর্চিষ্মান প্রেডিক্ট করার চেষ্টা করি কার হোমওয়ার্ক হয়েছে, কার হয়নি। মনে হয় সবাইকে ডেকে বলি, কত কিছু শিখবে এখনও, জীবন কত দিকে ধাইবে, কত কিছু ঘটবে, বুকের মধ্যে কত আনন্দ টের পাবে, কত দুঃখ, কত সুখ, কত অসুখ, কত ঠিক, কত ভুল। সব মিলিয়ে একটা রুদ্ধশ্বাস, ব্রেকনেক যাত্রা শুরু হবে আর ক’দিনের মধ্যেই। বলি না, অফ কোর্স। পুরো পাগল হয়ে যাব যেদিন, বলব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রাস্তার দুপাশে সরকারি অফিস। এখানে বাঙালি আগ্রাসন অ্যালাউ করা হয়নি, নামটাম সব ওডিয়ায় লেখা। অনেকখানি জমিঘেরা সুন্দর বাড়ি। অধিকাংশই একতলা। থাক থাক তিনকোণা জানালা। কম্পাউন্ডে আমগাছের প্রতিপত্তি। কয়েকটা অন্য বড় গাছও আছে, তেঁতুলপাতার মতো পাতা, তবু শিওর হতে পারি না। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গোল্ডেন বিচের প্রবেশপথের বাইরের রাস্তার ধারে যোগা ম্যাট পেতে ব্যায়ামের আসর বসেছে। ধরে নেওয়া যায় ব্যায়ামবীরেরা সকলেই স্বাস্থ্যের উন্নতি চান, কিন্তু যে উপায়ে তাঁরা এই উন্নতিসাধনে লিপ্ত হয়েছেন, যোগবিশারদ বা শরীরচর্চাবিদ না হয়েও নব্বই শতাংশ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, লক্ষ্যভেদ কঠিন। এর আগে কী ব্যায়াম হচ্ছিল জানি না, কিন্তু আমরা যখন তাঁদের দেখলাম, নব্বই শতাংশ নিজের নিজের ম্যাটের ওপর শুয়ে আছেন। চিত হয়ে, কাত হয়ে, উপুড় হয়ে। পাশের লোকের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে হলে জাস্ট এদিক থেকে ওদিকে গড়িয়ে যাচ্ছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এ প্রসঙ্গে দুটো গল্প মনে পড়ে গেল বলে নিই। চেনা একজন বিপাসনা ক্যাম্পে গেছিল দশ দিনের জন্য। আমরা তো খুব উৎসাহ নিয়ে, কী হল কী হল বল, বলে গ্লাস বাগিয়ে বসেছি। সে জানাল যে ঢোকার মুখে জেলে যেমন হয়, ফোনটোন সব বাজেয়াপ্ত করে নিল নেক্সট দশ দিনের জন্য। শুনেই অর্চিষ্মান ঘোষণা করল, আমি যাচ্ছি না, তুমি যেতে হলে যাও। ও সিঁড়ি উঠতে উঠতে পর্যন্ত টুইটারে ডুমস্ক্রোলিং করে, ওর পক্ষে ফোন ছাড়া বাঁচা সত্যিই শক্ত। বললাম, দাঁড়াও এখনই হাল ছেড়ো না। টোটাল মৌনব্রতর ব্যাপারটা আগেই জানা ছিল। সেটা আমার আর অর্চিষ্মানের খুব অসুবিধে হবে বলে মনে হয় না। আমাদের একসঙ্গে যাওয়ায় সে বাবদে সুবিধে খুব হবে না। চেনা লোক গেলে পাশাপাশি কটেজে থাকতে দেওয়া হয় না, যাতে রাতের বেলা দেওয়ালে টোকা মেরে চিটিং না করা যায়। আমার একটাই অসুবিধে লাগল, ধ্যানের পরিমাণটা মারাত্মক বেশি। খেপে খেপে প্রায় দশ বারো ঘণ্টা। একটা ঘরে সবাই সোজা হয়ে ধ্যানমুদ্রায় বসে থাকবে। মাইকে মৃদু গলায়, নিচু ডেসিবেলে গাইড বলে চলবেন, ব্রিইইদ ইইইইইন, ব্রিইইদ আআআউট। শুনতে শুনতে তোমার সমস্ত শরীরের মধ্যে থেকে যত টক্সিক চিন্তা ভাবনা বেরিয়ে যাবে। শরীরের গিঁট খুলে যাবে, মাথার জট ছেড়ে যাবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান যখন জিজ্ঞাসা করল, এটা শুয়ে শুয়ে করা অ্যালাউড? বুঝলাম এ জন্মে বিপাসনায় যাওয়ার (অন্ততঃ যুগলে যাওয়ার) স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দ্বিতীয় গল্পটা আরেক প্রিয়জনের থেকে শোনা। সেও খুব সিরিয়াসলি যোগব্যায়ামের ক্লাস করে। সেও বলছিল, যেদিন ক্লাসের সূচিপত্রে যোগনিদ্রা থাকে, ফুল ক্লাস প্রেজেন্ট প্লিজ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমার একটা থিওরি আছে। যদি স্বাস্থ্যচর্চাকারীরা কাছাকাছি থাকেন, খাবারের দোকান, পার্টিকুলারলি অস্বাস্থ্যকর খাবারের দোকান ক্যান নট বি ফার বিহাইন্ড। লোকে জিম থেকে বেরিয়েই আণ্ডাপরাঠা খায়, পার্কে দশ চক্কর মেরেই গেটে পার্ক করা ঠেলায় খাস্তা কচুরি। দিল্লিতে আমাদের একটা প্রিয় সাউথ ইন্ডিয়ান দোকান আছে, মাইসোর ক্যাফে, হোল ইন দ্য ওয়াল। কখনও কখনও সক্কাল সক্কাল ইডলি দোসা ফিল্টার কফি মেদু বড়া খেতে যাই। দোকানটা দিল্লির সাইকেলউৎসাহীরা প্রায় দত্তক নিয়ে ফেলেছেন। ডেকাথলন থেকে কেনা ফ্লুরোসেন্ট সবুজ লিক্রা জ্যাকেট, লাইটওয়েট এরোডায়নামিক রেসিং হেলমেট, মাউন্টেন বাইক জুতো, সাইকেলের খোপে গোঁজা এরগোনোমিক গ্রিপ, ওডোর কন্ট্রোল, ফ্রেশ ফিলিং ওয়াটার বটল। ডেকাথলনের। অর্চিষ্মান কিনেছিল একটা। আমি গাপ করেছি। নাটক্র্যাকার খেতে খেতে গলায় নুন আটকালে পাশ থেকে তুলে চুমুক দিই। সকাল সাতটা নাগাদ দোকানের সামনে ফুল গিয়ার পরিহিত সাইক্লিস্টদের জ্যাম লেগে যায়। ছোট দোকান, ঢোকার জায়গা থাকে না, তার মধ্যে আমাদের মতো অলম্বুষরা টেবিল দখল করে থাকলে তো আরওই চমৎকার। কিন্তু তাঁরা যথার্থ স্পোর্টসম্যান, বীরের মতো বাইরের ঠাণ্ডায় দাঁড়িয়ে প্লেট প্লেট গরমাগরম কুড়কুড়ে মেদু বড়া আর গ্যালন গ্যালন ফিল্টার কফি খেয়ে এতক্ষণের ক্যালরি খরচের শোধ তোলেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যথারীতি, আমার থিওরি ফুলপ্রুফ। মোড়ের মাথায় একজন দিদি, এক কড়াই তেলে চমৎকার অস্বাস্থ্যকর জিনিস ভেজে ভেজে তুলছেন আর ডাঁই করে পাহাড়ের মতো রাখছেন। পাছে যোগব্যায়ামের দল এসে আমাদের আগেই সব ভাজাভুজি ফুরিয়ে ফেলেন, তাড়াতাড়ি অর্ডার দিলাম। বড়া, পুরী, পরোটা, ইডলি সবই আছে। যাই নেবেন, চল্লিশ টাকা। আমি মেদু বড়া ফ্যানাটিক, অর্চিষ্মান শিঙাড়া। আমার প্লেটে এক হাতা সম্বর, এক হাতা চাটনি ছড়িয়ে, অর্চিষ্মানের সামোসা ঘিরে একহাতা ছোলে ঢেলে দিদি আঙুল তুলে দেখালেন, রাস্তার ওপারে গাছের ছায়ায় দুটি লাল টুকটুকে নীলকমল চেয়ার পাতা। সম্বর টইটম্বুর প্লেট দুই হাতে ধরে পা টিপে টিপে রাস্তা পেরোচ্ছি, একটা অন্ততঃ বারো সিটার এস ইউ ভি এসে হর্ন দিতে লাগল। অদ্ভুত।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চল্লিশ টাকায় চারটে ফ্রিসবির সাইজের মেদু বড়া। শেষ করতে সময় লাগবে। অসুবিধে নেই। সামনেই একটা গেস্টহাউস। কোন একজন বাবাজীর নামে। গেস্টহাউস থেকে এক বাঙালি পরিবার বেরোলেন। খুব জল্পনা চলল। দিদির থেকেই ব্রেকফাস্ট খাবেন নাকি অটো চড়ে গ্রিনার প্যাশ্চরের সন্ধানে বেরোবেন। বেরোনোই স্থির হল। বাবা বোধহয় ক্রমাগত ঠকে যাচ্ছেন, তাই মেয়েকেই ফাইন্যান্সের রাশ ধরতে হয়েছে। কড়া গলায় বলল, পঞ্চাশ টাকার এক টাকাও বেশি দেবে না, বাবা। গেস্টহাউসের রোদেলা বারান্দায় আড়াইফুট সাইজের বালিকা। বাবামা এখনও রেডি হচ্ছেন বোধহয়। বালিকা রেডি। হলুদ জামা, কালো সানগ্লাস, বেগুনি চুড়ি, দুই ঝুঁটিতে গোলাপি ফিতে। অর্চিষ্মানের খাওয়া হয়ে গেছে। উঠে গিয়ে চায়ের কথা বলে এল। মেদু বড়া শেষ না হতে হতেই চা চলে এল। চা খেলাম। মাথার ওপর তেঁতুলপাতা মার্কা পাতাওয়ালা গাছটা ঝিরিঝিরি হাওয়া দিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একসময় বড়া এবং চা শেষ হল। খেয়ে টাকা দিয়ে টিস্যু দিয়ে চেপে চেপে ঠোঁট মুছছি, বিশ্বাস করবেন না, উল্টোদিক থেকে সেম এস ইউ ভি-টা এসে হর্ন দিতে লাগল। অদ্ভুত।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পান্থনিবাসের মাঠ আর সমুদ্রতটের মাঝখানে সুন্দর টানা বাগান। হাঁটার রাস্তা। খাটো সবুজ বেড়া দিয়ে চৌকো চৌকো ভাগ। একেকটা ভাগের দু’পাশে লাল পাথরের প্রশস্ত বেঞ্চি। আমাদের যেহেতু কোনও এজেন্ডা নেই লাল বেঞ্চে বসার সময় আছে। অবশেষে একটা খোপের একটা বেঞ্চ খালি পাওয়া গেল। একটাই ক্যাচ। উল্টোদিকের বেঞ্চে একজন ভদ্রলোক বসে প্রাণায়াম করছেন। পা টিপে টিপে উল্টোদিকের বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। ভদ্রলোকের নিভৃত ওয়েলনেস চর্চায় বিঘ্ন ঘটানোর জন্য খুবই অপরাধবোধ হচ্ছিল। ফিসফিস করে আলোচনা চালাতে লাগলাম। মাঝে মাঝে আমার গলা অল্প জোর হয়ে যাচ্ছিল, অর্চিষ্মান অমনি আমার হাতে চিমটি কাটছিল। গলা নামিয়ে ভদ্রলোকের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখছিলাম কপালভাতি করতে করতে ভদ্রলোক কড়া দৃষ্টি হানছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অবশেষে উনি হাল ছেড়ে মাঠ ছাড়লেন। আমরাও স্বাভাবিক গলায় গল্প করতে লাগলাম। গল্প না, তর্ক। একজনের মত ছিল যে নিজের কাজের সঙ্গে যদি সর্বক্ষণ সেই কাজের বেস্ট নমুনার তুলনা করি তাহলে সেই কাজ পৃথিবীর সামনে আনতে এমন কমপ্লেক্স হবে যে আর এনেই ওঠা যাবে না। আরেকজনের মত ছিল যে অতশত তুলনায় না গিয়ে ক্রমাগত সেই কাজটা, খারাপ হলেও, প্রোডিউস করে যাওয়া। এবং নিজের স্বস্তির মাত্রা বুঝে সে জিনিস লোকচক্ষুর সামনে আনা। কারণ ক্রমাগত অভ্যাসে কাজের কোয়ালিটি বাড়তে বাধ্য।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অনেক যুগ আগে, যখন সকলেই ব্লগ লিখত, এক ভ্রমণব্লগারের মুখবন্ধে পড়েছিলাম, তিনি ব্লগ লেখার সম্পূর্ণ বিপক্ষে। কারণ ব্লগ পড়তে তাঁর মারাত্মক বোরিং লাগে। তবু তিনি ভ্রমণব্লগ কেন লিখতে শুরু করেছেন? কারণ কী করলাম, কী খেলাম, কী ভাবলাম ইত্যাদি হ্যাজানো বোরিং ব্লগে যা যা কাজের তথ্য পাওয়া যায় না সেগুলো প্রোভাইড করা। ট্রেনের সময়, প্লেনের সময়, বাসের ভাড়া, হোটেলের দাম। কয়েকটা দ্রষ্টব্য জিনিসের বর্ণনা যদি দিতেই হয় নিতান্ত দেওয়া যেতে পারে। স্ট্রিক্টলি দু'লাইন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভদ্রলোকের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। নিজেরা যখন নতুন কোনও জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করি ওই ধরণের ব্লগগুলোই খুঁজে দেখি। ওগুলোই কাজে লাগে। যে তথ্যগুলো আমার বেড়াতে যাওয়ার ব্লগের একশো মাইলের মধ্যেও পাওয়া যায় না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ধ্রুপদী ছাপা পত্রিকার পারস্পেক্টিভ থেকে ভাবলেও, অবান্তরের ভ্রমণসংক্রান্ত ব্লগপোস্টগুলো স্ট্রেট ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে যাবে। একে তো কাজের তথ্য নেই, তার ওপর ক’কাপ চা খেলাম, তাতে চিনি নিলাম কি না, কে বিচে চান করতে করতে চেঁচিয়ে কী বলল, কোন এস ইউ ভি কতবার হর্ন দিল, কে ক'রাউন্ড কপালভাতি করল, ক’রাউন্ড অনুলোমবিলোম, হু কেয়ারস?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মাঝে মাঝে ভাবনাটা আমার মাথাতেও আসে না তা না। কিন্তু তারপর ভাবি, পত্রিকায় না লিখে অবান্তরে যে লিখছি সে তো এই জন্যই। সাপ ব্যাং বিচ্ছু, যা খুশি লিখব। কোনও ক্রিটিকের তোয়াক্কা না করে ছাপিয়ে দেব। আর সেটাই যদি করব, তাহলে ওই কপালভাতির এপিসোডটা আমাকে লিখতেই হবে। ওই সকালের এলিয়ে বসে থাকাটা, দূরে সমুদ্র, ভদ্রলোকের কপালভাতি করতে করতে আমাদের দিকে টেরিয়ে টেরিয়ে দেখা, আমাদের ভয়ে ভয়ে গলা নামিয়ে কথা বলা, ওই মুহূর্তটা ছাড়া দু’হাজার তেইশের পুরী ট্রিপ অর্থহীন। ওই মুহূর্তটা পৃথিবীর আর সবার কাছে যত বোরিং, আমার কাছে ততটাই ইন্টারেস্টিং। আর আমার কাছে যেটা ইন্টারেস্টিং, সেটা আমি না লিখলে আর কে লিখবে?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ফোন বাজল। বিশ্বনাথ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কী করছেন? কী প্ল্যান আজকের?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"> কী আবার প্ল্যান। সকাল থেকে যা করছি, সারাদিন তা-ই করব। ওখান থেকে উঠে আবার কোথাও একটা গিয়ে বসব। সেখান থেকে উঠে আবার কোথাও। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সেটাই বললাম। এই তো, বসে বসে সমুদ্র দেখছি। কোনও প্ল্যান নেই। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চুয়াল্লিশ পার সেন্ট বিস্ময়, ছাপ্পান্ন পার সেন্ট বীতরাগ মিশিয়ে বিশ্বনাথ বললেন, কী যে এত সমুদ্র দেখেন আপনারা। সেই একঘেয়ে। তার থেকে গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। চিলিকা ঘুরে আসুন।</div><div class="p1"><br /></div><div class="p1"><br /></div><div class="p1"><br /></div><div class="p1"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/puri20231.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ১</span></a></div><div class="p1"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/blog-post_15.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ২</span></a></div><div class="p1"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/puritrip2023.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৪</span></a></div><div class="p1"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2024/01/chilika2023.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৫</span></a></div><div class="p1"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2024/01/purikonark2023.html?sc=1706023651623#c5827187471340596752" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৬</span></a></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com14tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-64894447629168391742023-12-15T17:14:00.001+05:302024-01-23T21:04:57.650+05:30পুরী ২ঃ অর্চিষ্মানের সঙ্গে দেখা<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পান্থনিবাসকে গাল পাড়লাম, পুরী হোটেলেও কেউ ফোন তুলছিলেন না। অর্চিষ্মানের কাছে কাঁদুনি গাইতে গেলাম, সে 'ওরে বাবা কুন্তলা এখন টাইম নেই, পরে দেখছি' বলে কাটিয়ে দিল। তক্ষুনি বাবা ফোন করলেন। ভালনারেবল্ মোমেন্টে বেরিয়ে পড়ল। এই তো পুরী যাব ভাবছি, এদিকে কোথাও ঘর নেই।<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চেনা অনেক বাবা এই তথ্যটাকে জাস্ট একটা তথ্য হিসেবে নেবেন। নৈরাশ্যবাদী বাবা হলে বলবেন, এত ঘনাঘন বুকিং করে যাওয়া যায় নাকি? আশাবাদী বাবা হলে বলবেন, চেষ্টা করতে থাক, পেয়ে যাবি নিশ্চয়। গীতা পড়া বাবা হলে বলবেন, চেষ্টা করার কর, পেলে যাবি, না পেলে যাবি না। <div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমার বাবা এই টাইপের নন। আমার মাও এই টাইপের ছিলেন না। আমার মা হ্যান্ডস্ অন মা এবং হ্যান্ডস্ অন শাশুড়ি ছিলেন। একবার অর্চিষ্মানের জন্ডিসের খবর পেয়ে মা গোটা আষ্টেক বাতাবিলেবু পৌঁছতে আজকের ট্রেনে দিল্লি এসে কালকের ট্রেনে আবার ফিরে গিয়েছিলেন।<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বাবা মায়ের মতো বাড়াবাড়ি করেন না। বাবা আমার জীবনের বাছাবাছা ক্ষেত্রে হ্যান্ডস্ অন। পড়াশোনা, কেরিয়ারের ক্ষেত্রে একেবারেই হ্যান্ডস্ অফ। সেই অ আ ক খ স্টেজ থেকেই। কেন, সে নিয়ে অবচেতনে কোনও ব্যাখ্যা তৈরি হয়েছিল নিশ্চয়। এক বিরল দিনে বাবা বাড়িতে ছিলেন এবং মা ছিলেন না। আমি ইংরিজির 'বিউটিফুল' বানানটা নিয়ে ফাঁপরে পড়েছিলাম। অথচ হোমওয়ার্ক শেষ করতে হবে। বাবার শরণ নিতে হল। বাবা বলে দিলেন। আমি লিখে নিলাম। মা বাড়ি ফিরলেন। মায়ের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করলাম, এই বানানটা বাবা বলে দিয়েছে, ঠিক আছে মা?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আবার আমার জীবনের অনেক ক্ষেত্রে বাবা অসুবিধেজনক রকম হ্যান্ডস্ অন। এই গল্পটা অনেকবার বলেছি, আবার বলব। চার বছর বয়সে বাবা স্থির করলেন সোনার সাঁতার শেখার বয়স হয়েছে। এবং বাবা যেভাবে শিখেছেন সোনাকেও সেই ভাবেই শিখতে হবে। মাঝখানের বত্রিশ বছরে পৃথিবী যে বদলে গেছে, রেললাইনের ওপারে একটা সাঁতার শেখার স্কুল খুলে গেছে, সেখানে নীল স্বচ্ছ দিঘিতে ট্রেনড প্রফেশনালদের কাছে রিষড়ার তামাম শিশুরা সঠিক টুপি পরে সঠিক টেকনিকে সাঁতার শিখছে এই সব কনসিডার করা হবে না। আমাকে সাঁতার শিখতে হবে বাবার টেকনিকে। বাবা আমাকে জলে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন। দিয়ে ঘাটে দাঁড়িয়ে গুলতানি মারবেন। আড়চোখ আমার দিকে রাখতেও পারেন, নাও পারেন। প্রথম সাতদিন "সাঁতার" থেকে ফিরে রান্নাঘরে মায়ের কাছে দাঁড়িয়ে কাঁদতাম। পরের সাতদিন কাঁদতাম না। তারপর ঝুলোঝুলি করতাম যে আমি যে পুকুর পারাপার করতে শিখেছি, রান্না সারা আর অফিস যাওয়ার মাঝের ফাঁকে মাকে গিয়ে সেই কেরামতি হাসিহাসি মুখে দাঁড়িয়ে দেখতে হবে। মা ঘাড় পেতেছিলেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমাকে সাইকেল শেখানোর সময়েও বাবার আশ্চর্য এনার্জি দেখা গিয়েছিল। ততদিনে বাবার টাইপ জেনে ফেলেছি। আমাদের স্কুলে প্রার্থনার সময় একটা পাঠের ব্যাপার থাকত। এক খেলাঘর ভর্তি চোখ বুজে বসে থাকা মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে একজনকে কিছু জ্ঞানের কথা রিডিং পড়তে হত। আমিও পড়েছি বারকয়েক। একটি পাঠের বিষয় ছিল শেখা। পৃথিবীতে তিন রকমের শেখা হয়। দেখে, শুনে, ঠেকে। বাবা বিশ্বাস করতেন তৃতীয় রকমের শেখায়। সাইকেল শিখতে চাও? আছাড় খাও। সাঁতার শিখতে চাও? হাবুডুবু খাও। আমি বাবার থেকে এককদম এগিয়ে বিশ্বাস করি আসলে পৃথিবীতে শেখা বলেই কিছু হয় না। আছাড়ই খাও বা হাবুডুবু, হন্যেই হও বা ল্যাজেগোবরে, আসলে কিচ্ছু শিখবে না। এক গাড্ডায় বারবার পড়বে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বাবার হ্যান্ডস অন হওয়ার আরও অনেক উদাহরণ আছে। হায়ার সেকেন্ডারির পর আমার জন্য স্কুটি কিনে এনেছিলেন। ফটফটে দিনের বেলায় বাবা আমাকে স্কুটিসহকারে মাঠে নিয়ে যেতেন এবং নিয়ম করে রোজ পঞ্চাশ পাক ঘোরাতেন। পাড়ার লোকেরা মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে, 'দারুণ হচ্ছে মেজদা,' ইত্যাদি বলে বাবাকে উৎসাহ দিত। আমার ভাগ্যেও উৎসাহ জুটত, তবে মানুষের না। স্কুটি চড়ে ফুল স্পিডে স্টেশনের দিকে উড়ে যেতাম, পাড়ার এবং পাশের পাড়ার কুকুররা ঘেউ ঘেউ করতে করতে পেছন পেছন ছুটত। তারপর ধরুন টাইপ করা। বাড়িতে বাবার উদ্যোগেই বেশ শুরুর দিকে কম্পিউটার এসেছিল। ঢবকা ডেস্কটপ। সেই ডেস্কটপে আমার বসতে পাওয়ার একমাত্র শর্ত ছিল টাইপিং শেখা। প্রপার টাইপিং। কি-বোর্ডের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দু’আঙুলের খটাখট না। বাবা ছিলেন জর্জ টেলিগ্রাফ জেনারেশনের প্রোডাক্ট। টাইপিস্ট স্টেনোগ্রাফার হয়ে ঢুকে অফিসের সিঁড়ি বেয়েছেন। ততদিনে অথরিটির চোখে চোখ রেখে দাঁড়ানোর বদভ্যেস থেঁতলে দেওয়া হয়েছে কাজেই আমি বিনা প্রতিবাদে সপ্তাহের পর সপ্তাহ 'আ কুইক ব্রাউন ফক্স জাম্পড ওভার দ্য লেজি ডগ' টাইপ করে গিয়েছিলাম। বাবা টাইপস্কুলের চারপাঁচ ব্যাচের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন টাইপিস্ট ছিলেন শুনেছি। স্পিড এবং অ্যাকিউরেসি দু'দিক থেকেই। অ্যাকিউরেসি জানি না, স্পিডের ব্যাপারটা মোটামুটি ম্যানেজ করেছিলাম। ডেস্কটপে বসে ব্রাউন ফক্স আর লেজি ডগ টাইপ করার অন্ততঃ বছর দশেক পর একদিন বাড়িতে ল্যাপটপে টাইপ করছি, বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, এ তো আমার থেকে বেটার স্পিডে টাইপ করে। বাবার মুখটা এখনও মনে আছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বাবাকে আমার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে সর্বদা হ্যান্ডস অফ-ই ভেবেছি, কিন্তু আমার জীবনের রিসেন্ট একটি সুনামিতে বাবার স্টেপ আপ করা আমাকে চমকে দিয়েছে। বাবাকে "হাড়ে হাড়ে চেনা"র গর্ব গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আসলে আমরা কাউকেই চিনি না। রক্তের লোক হলেও।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যাই হোক, মোদ্দা কথা, পুরী হোটেলে বুকিং পাওয়া যাচ্ছে না বাবাকে জানিয়ে ফোন রেখে দিলাম। দশ মিনিট পর বাবার ফোন এল। লিখে নে সোনা। পুরী হোটেলের নম্বর, ইমেল। পুলিন পুরী হোটেলের নম্বর, ইমেল। আরও যেন কী একটা হোটেলের নম্বর, ইমেল। লিখে নিলাম। পনেরো মিনিট পর হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ। প্লিজ কল মিস্টার বিশ্বনাথ দাস, পার্সন ইন চার্জ অফ পুরী হোটেল ট্র্যাফিক ডেস্ক। বাবা নাকি এর মধ্যে বিশ্বনাথবাবুর সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন। বিশ্বনাথ জানিয়েছেন ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। আমাকে খালি আজ সন্ধে সাড়ে সাতটার সময় ফোন করে কথা বলতে হবে। সন্ধে সাড়ে সাতটার সময় আমরা সাকেতের পি ভি আরে বসে এত জঘন্য একটা সিনেমা দেখছিলাম যে নামটা খুব ভেবেও মনে করতে পারছি না। পরদিন বেলা দশটা নাগাদ ফোন করলাম। আধঘণ্টার মধ্যে বুকিং-এর অ্যাডভান্সের রিসিটের ছবি ফোনে এসে গেল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অরিজিন্যাল প্ল্যানের একটাই তফাৎ ঘটল। বিশ্বনাথ জিজ্ঞাসা করলেন ভুবনেশ্বর থেকে আমার পুরী আসার প্ল্যান কী? বললাম, কেন বিজু পটনায়েক এয়ারপোর্ট থেকে বারামুন্ডি বাসস্ট্যান্ড, বারামুন্ডি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে চড়ে পুরী হোটেল। কপাল ভালো হলে জানালার সিটে বসে। বললাম, চিন্তা করবেন না, আমার কোনও অসুবিধে হবে না, এভাবে আগেও গেছি। তাতে বিশ্বনাথ বললেন যে আমার সুবিধেঅসুবিধে নিয়ে ওঁর কাঁচকলা। উনি আমাকে ঘর বুকিং-এ ফেভার করলেন, কাজেই আমিও যদি ওঁর গাড়ি ভাড়া নিয়ে ওঁকে ফেভার করি তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়িপাল্লায় সমান হয় আরকি। বলা বাহুল্য, এ ভাবে বলেননি। খুবই চার্মিং গলায় বলেছিলেন যে আমরা গাড়ি পাঠিয়ে দিতে পারি, সেই গাড়িতে যদি আপনি হোটেলে আসেন তাহলে আমরা খুবই খুশি হব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান বলল, কুন্তলা বাড়াবাড়ি না করে গাড়িতে যাও। বাবা বললেন, গাড়িতেই যা, না হলে খারাপ দেখায়। তাই আমি আমার প্রো-পাবলিক ট্রান্সপোর্ট স্ট্যান্স ত্যাগ দিয়ে বিশ্বনাথের পাঠানো সদাশিবের গাড়ি চড়ে পুরী হোটেলে চললাম। ভাড়া বাসের থেকে মারাত্মক রকম বেশি লাগল। সময় বাসের সমানই লাগল। জানালার বাইরে বাসের সমান ভিউ দেখা গেল। ফাউয়ের মধ্যে গাড়িটা এসি আর মাঝরাস্তায় সদাশিবের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গাড়ি থামিয়ে চা খাওয়ার সুবিধে। মুখ্য সুবিধেটা বিশ্বনাথবাবুর সঙ্গে ভদ্রতা। একটা প্রিভিলেজের অংশ না হলে যে ভদ্রতাটা আমি করতে পারতাম না। কাজেই প্রমাণ হল ভদ্রতা করতে হলেও প্রিভিলেজ লাগে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">হোটেলে পৌঁছনোর আগে একটা মুহূর্ত যতবার পুরী গেছি ততবার চমকেছে, জীবনে আরও যতবার পুরী যাব ততবার চমকাবে। আকাশটা আচমকা অনেকটা লম্বা হয়ে যাওয়ার মুহূর্তটা। কী করে হয় কে জানে। কারণ দৃষ্টি আটকে হাবিজাবি কনস্ট্রাকশন,ঝুপড়ি। তারই মধ্যে পেছনের আকাশটায় একটা কিছু ঘটে, বুকের ভেতর নিশ্চিত টের পাই এই হাবিজাবি হরেদরের ওপারে একটা ভীষণ আশ্চর্য জিনিস আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মোড় ঘুরে দুটো বিল্ডিং পরেই পুরী হোটেল। তার মধ্যেই ঘাড় ঘুরিয়ে ঝুপড়ির ফাঁক দিয়ে যতখানি দেখা যায় সমুদ্র দেখে নিলাম। রিসেপশনের কাজ সারলাম। একজন এলেন ব্যাগ বয়ে দিতে। বওয়ার কিছুই ছিল না। আড়াই দিনের ট্রিপের মালপত্র আমার ব্যাকপ্যাকেই ঢুকে যায়। আর কাঁধে একটা পার্স, যা গুণবিচারীর থেকে দর্শনধারী বেশি। চেক ইন করা ছেড়ে দিয়েছি অনেকদিন। কনভেয়ার বেল্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, সবার ব্যাগ আসছে, চারপাশ থেকে সহযাত্রীদের ভিড় ক্রমশঃ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, কানেক্টিং ফ্লাইটের সময় ঘনিয়ে আসছে, আমার ব্যাগের দেখা নেই, নির্ঘাত কেউ আমার ব্যাগ নিজের ভেবে তুলে নিয়ে চলে গেছে, কিংবা প্লেনে ওঠেইনি। অলরেডি শট নার্ভ সিস্টেমের ওপর এতসব ফালতু চাপ বরদাস্ত করতে আমি রাজি নই। চেক ইন অ্যাভয়েড করার জন্য ইউটিউব দেখে মিলিটারি কায়দায় ব্যাগ প্যাক করা প্র্যাকটিস করেছি । সবাই জামা ভাঁজ করে, আমি রোল করি। সত্যিই জায়গা বাঁচে। তা বলে কি যাঁদের কোট প্যান্ট ব্লেজার প্যাক করতে হয় তাঁরা ওভাবে রোল করতে পারবেন? কিংবা প্রাণে ধরে পাটোলা বা পৈঠানি শাড়ি? কিন্তু আমার সুতির কুর্তি, সুতির টিশার্ট, জিনসের প্যান্ট গিল্ট ফ্রি হয়ে রোল করা যায় এবং ব্যাকপ্যাকের তলায় কোথায় যে ঢুকে যায় দেখাও যায় না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সাহায্যের অফার রিফিউজ করে নিজের ব্যাগ নিজেই বয়ে ভদ্রলোকের পিছু পিছু অ্যাসাইনড ঘরে ঢুকে এলাম। তখনও ঘর বাছা ঠিক হয়েছে না ভুল হয়েছে বুঝতে পারিনি, কারণ প্রথমেই দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে এসেছি এবং নিজের চোখে দেখারও আগে ফোন বাগিয়ে একটা ফটাস করে ছবি তুলেছি। এত ফটাস যে ফোনটা সোজা করে ধরারও টাইম হয়নি। হোয়াটসঅ্যাপে আপলোড করার আগে এডিটের অপশনে গিয়ে বেঁকা সমুদ্র স্ট্রেটেন করে, এক সেকেন্ড ভেবে একটু এনহ্যান্সও করে দিলাম। একমিনিটের মধ্যে অর্চিষ্মানের রিপ্লাই এল, কীঈঈঈঈ নীঈঈঈঈল। অল্প অপরাধবোধ হল। লিখে পাঠালাম, ঠিক এতটাও নীল নয়। কিন্তু যথেষ্ট নীল আর যথেষ্ট বড়। সত্যিকারের সমুদ্রের মতোই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভদ্রলোক ততক্ষণ সময় নষ্ট না করে কোথায় জল, কোথায় তোয়ালে, কোথায় এক্সট্রা চাদর বালিশ এইসব গড়গড়িয়ে বলে বেরোনোর উপক্রম করছেন। দাঁড়ান দাঁড়ান, আর্তনাদ করে বারান্দা থেকে দৌড়ে এলাম। টিভিটা কী করে চালাতে হয় বলে দিয়ে যান প্লিজ। ভদ্রলোক মুখে বিতৃষ্ণার ভাব ফুটিয়ে বললেন, বাংলা চ্যানেল তো, বলে চারপাঁচবার রিমোটের বোতাম টিপলেন। নর্থ পোলে স্কি মাস্ক পরে দাঁড়িয়ে থাকলেও যে আমাকে বাঙালি বলে বোঝা যাবে সে নিয়ে সন্দেহ এতদিনে ঘুচেছে, তবু প্রত্যেকবার কেউ আমাকে বাঙালি ধরে ফেললে কেমন দমে যাওয়া ফিলিং হয়। এত গ্লোবাল সিটিজেন হওয়ার ইচ্ছে, কেবল চেহারাটা শয়তানি করে সব মাটি করছে। ততক্ষণে স্ক্রিন জুড়ে জি বাংলা, কালারস বাংলা, রূপসী বাংলা, স্টার জলসা, এ বি পি আনন্দ, সোনি আট। বুকের মধ্যে ঢেউ তোলা উচ্ছ্বাস চাপা দিতে দিতে বললাম, যে কোনও একটা চালিয়ে দিয়ে চলে যান। ভদ্রলোক বললেন, একটু ওয়েট করুন। টিভিটা গরম হোক। বলে বেরিয়ে গেলেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">টিভি গরম হল। ভদ্রলোককে যে কোনও একটা চ্যানেল বলেছিলাম বটে, আসলে জানতাম কোনটা দেখব। সোনি আট। সি আই ডি-র বদলে ক্রাইম পেট্রোলের ম্যারাথন চলছে। অল্প দমলাম, বেশি না। জামাকাপড়, জুতো ছেড়ে ফোন তুলে রিসেপশনের নম্বর ডায়াল করে চায়ের অনুরোধ জানাতে তাঁরা জানালেন সুইচবোর্ডে একটা সুইচ আছে দেখুন ঘণ্টার ছবি আঁকা, সেটা টিপলেই বয় আপনার দরজায় হাজির হবে, যা চাই বলে দেবেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">লেবার অ্যাবান্ডেন্ট ইকনমির আদর্শ ব্যবস্থা। প্রতি তলায় করিডরের কোণে এক ভদ্রলোক সকাল ছ'টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন, বেল বাজলে এসে চাহিদা শুনে যোগানের ব্যবস্থা করবেন। তাঁকেই বললাম চায়ের কথা। চা এসে গেল, আমি দরজা এঁটে বিছানায় আধশোয়া হয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে ক্রাইম পেট্রোল দেখতে থাকলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এবং টের পেলাম যতটা ফুর্তি হওয়ার কথা ততটা হচ্ছে না। কারণ একটা বিকট হল্লা বন্ধ জানালাদরজা ভেদ করে ফুর্তিতে বাগড়া দিচ্ছে। হল্লার উৎসটাও জানি। একটু আগে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সমুদ্রের ছবি তোলার সময় দৃষ্টিরেখার সামান্য ডানদিকে বালির ওপর প্যান্ডেলটা। কিছু একটা পুজো হচ্ছে। স্থানমাহাত্ম্যের কথা মাথায় রেখে শ্রাদ্ধও হতে পারে। প্যান্ডেলের মাল্টিকালার বিচার করলে প্রথমটাই মোর প্রব্যাবল। সেই প্যান্ডেলের ভেতর থেকে প্রবল আবেগে মন্ত্রোচারণ মাইকের মাধ্যমে ভেসে আসছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এইখানে আমি একটা ওপিনিয়ন দেব। যে কোনও ধার্মিক অনুষ্ঠানে মাইক বন্ধ করে দেওয়া উচিত। হ্যাঁ, এর মধ্যে ভোরবেলার উদাসী আজানও পড়বে। আমরা শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে শুনলেও এবং শুনে নস্ট্যালজিয়ায় মাখোমাখো রচনা ফেসবুকে নামালেও মনে রাখতে হবে আওয়াজটা কারও বাড়ির কাছে এবং হতেই পারে তাঁর ভোর চারটের সময় ও জিনিসের খপ্পরে পড়ার কোনও ইচ্ছে নেই। একই ট্রিটমেন্ট মাইকে অঞ্জলির মন্ত্র পড়ানোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমাদের ছোটবেলায় লোকে এত ধার্মিক ছিল না, সিরিয়াসলি। ওইটুকু তো পাড়া, একসঙ্গে পঁচিশজন অঞ্জলি দেয় কি না সন্দেহ, ঠাকুরমশাইয়ের বুমিং ভয়েসই যথেষ্ট ছিল। এখন মাইক ছাড়া নাকি চলছে না। বাবা শুনলাম এই মাইকে মন্ত্র পড়ার বিরুদ্ধে প্রস্তাব রেখেছিলেন। তাতে কমিটি থেকে নাকি জানানো হয়েছে, না মানে মেজদা, পুজোর সময় মন্ত্র শোনা গেলে বেশ একটা ভক্তিভক্তি ভাব সারা পাড়ায় ছড়িয়ে থাকবে। বাবাকে তো আর 'আই অ্যাম প্রাউড অফ ইউ'বলা যায় না, বাবা ভাববেন মেয়ের পাগলামির ওষুধে আর বাগ মানছে না, কিন্তু স্রোতের বিরুদ্ধে বাবার মতপ্রকাশে মনে মনে খুশি হয়েছিলাম। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মতপ্রকাশের কারণ জেনে অবশ্য একটু দমে গিয়েছিলাম। ব্যাপারটার এগেইন্সটে দাঁড়ানোর পেছনে আমার যেমন একটা অবিশ্বাসের উদযাপন আছে, তোমার বিশ্বাসের উদযাপন করতেই হয় নিজের বাড়ির ভেতর কর, মাইকের গজাল মেরে আমার বাড়িতে (এবং ভাইসি ভার্সা) ঢুকিয়ো না, বাবার অতসব প্রগতিশীল স্ট্যান্ড না। বাবার প্রধান আপত্তি, মন্ত্রোচ্চারণের নামে “ধ্যাষ্টামি”টা প্রতিহত করা। মোড়ের মাথায় চোঙা লাগিয়েছে, আমাদের পুরোনো টিভির ভলিউম হায়েস্টে নিয়েও বাবা তারক মেহতা কি উল্টা চশমা-র ডায়লগ শুনতে পাচ্ছেন না, কাজেই হাল ছেড়ে মিউট করে মন্ত্রই শুনছেন। আমাকে বলছিলেন, বুঝলি সোনা, অঞ্জলি হচ্ছে। নতুন পুরুত বলছে “শরণ্যে ত্রম্”। বলে গ্যাপ দিচ্ছে। সবাই সমস্বরে বলছে "শরণ্যে ত্রম্"। পুরুত আবার বলছে, "বকে গৌরী"। আবার গ্যাপ। সবাই ভক্তিভরে বলছে "বকে গৌরী"। এটা শোনার পর থেকে বাবা মাইকে মন্ত্র পড়ার বিরুদ্ধে ফুট সোলজারিং করছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একই লজিকে গানও বন্ধ হওয়া উচিত। ভোর চারটে থেকে পাড়া কাঁপিয়ে 'মহুয়ায় জমেছে আজ মৌ গো' কিংবা দশমীরাতের বিষাদ খানখান করে 'দো ঘুঁট মুঝে ভি পিলা দে শরাবি'ও ক্যান্সেল। স্বীকার করছি এটা ক্যান্সেল হলে আমার গলায় অল্প দলা পাকাবে। কিন্তু নিয়ম ইজ নিয়ম। আমার অপছন্দের সব বন্ধ হবে আর পছন্দের সব যেমন চলার তেমন চলবে তা তো হয় না। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তাছাড়া গান বন্ধ করা নিয়ে যুক্তি টলমল করলে অর্চিষ্মানের সেই সহকর্মীর কথা মনে করি। পকেট ফর্টির হাতে গোনা পাঞ্জাবী ফ্যামিলির মধ্যে একটি ফ্যামিলির সদস্য। অর্চিষ্মান অতশত না জেনে, বা জেনেও ব্লাইন্ড স্পট নিয়ে যাকে খুব রসিয়ে রসিয়ে বলেছিল, কাল রাতে আমি (অর্চিষ্মান) আর আমার বউ কেমন রাত একটা পর্যন্ত অঞ্জন দত্তর (আ বেংগলি সেলেব্রিটি) রাত দেড়টা পর্যন্ত প্রোগ্রাম শুনেছিলাম। প্রোগ্রাম অন্তে, রাত দেড়টার সময় এক প্যান্ডেল ওপচানো বাঙালি মিলে (আমি না, আমার বউ) ছলছল কণ্ঠে ‘পুরানো সেই দিনের কথা”, (আ নস্ট্যালজিক টেগোর সং, হুইচ মোস্ট লিভিং বেঙ্গলিস ক্যান সিং ফ্রম মেমোরি) গেয়েছিল। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মেয়েটি সুচারু ঘাড় নেড়ে বলেছিল, পাতা হ্যায়। কারণ প্যান্ডেলের চোঙাটা ওদের বাড়ির দিকেই ঘোরানো ছিল। দু'সেকেন্ডের নীরবতা পেরিয়ে অর্চিষ্মান বলেছিল, আই অ্যাম রিয়েলি সরি। ইট মাস্ট বি হরিব্ল্। তাতে মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলেছিল, আরে কুছ নহি ইয়ার, পাঁচ দিনই তো হ্যায়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যতবার অন্য ভাষার, অন্য ধর্মের, অন্য সংস্কৃতির এবং অন্য সামাজিক ক্রস-সেকশনের উৎসবের উল্লাস আমার মধ্যে দাঁতকিড়মিড়ের জন্ম দেয়, অর্চিষ্মানের সেই কলিগের কথা ভাবি, রাত দেড়টায় যার বাড়ির দিকে তাক করা লাউডস্পিকারে পাঁচশো লোক গলা ছেড়ে বেসুরে “আয় রে তবে আয় রে সখা” চিল্লিয়েছিল, যাদের মধ্যে আমিও ছিলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শব্দের আরও একটা বৈশিষ্ট্যের কথা নিশ্চয় সবাই জানেন। একই ভলিউমে শব্দ হতে থাকলে সেটা কিছু সময় পরে জোরে প্রতিভাত হয়। মানে ধরুন কানে স্পটিফাইয়ে ট্রু ক্রাইম গুঁজে ঘুমোতে গেলাম। প্রথমটা মনে হল কিছুই শুনতে পাচ্ছি না, খুনের সময় খুনী ভিকটিমের গলা কত জোরে কতক্ষণ টিপে ধরে ছিল এই সব রোমহর্ষক ডিটেল মিস হয়ে যাচ্ছে, তখনও ভলিউম বাড়াই না। কারণ পাঁচ মিনিট বাদে এই অপ্রতুল ভলিউমই স্পষ্ট ও যথেষ্ট হয়ে উঠবে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একই লজিক অনুসরণ করে প্যান্ডেলের মন্ত্রোচ্চারণ ক্রমশঃ জোর থেকে আরও জোর থেকে আরও জোর হয়ে ঘণ্টাচারেক পর সহ্যাতীত হয়ে দাঁড়াল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমার গ্র্যান্ড আইডিয়া ছিল যে অর্চিষ্মান যতক্ষণ ভুবনেশ্বরে বোর হবে আমি একা একা বেরিয়ে পুরী (অন্ততঃ পুরী হোটেলের আশপাশ) এক্সপ্লোর করব। হাঁটতে হাঁটতে হয়তো কোনও একটা তিনমাথার মোড় আসবে, সেটার একটা ধরে নাকবরাবর হাঁটব, চোখ আলগোছে ফেলে রাখব ডানদিকে, ফাইন্যালি একটা পয়েন্ট আসবে যেখান থেকে ডাইনে বাঁয়ে সামনে পেছনে অসংখ্য রাস্তা গেছে। তারই কোনও একটা ধরে আনতাবড়ি ঘুরব। বেশ হিউয়েনসাং হিউয়েনসাং ফিলিং আসবে। ক্লান্ত হলে কোনও একটা সি ভিউওয়ালা দোকানে ঢুকব। প্রেফারেবলি কফি শপ। টুং টাং বিলিতি গান বাজবে। জানালার বাইরে আদিগন্ত নীলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দেব। মগজে দুএকটা গভীর ভাবনা, তিনচারটে সলিড উপলব্ধি কি আর আসবে না? সেগুলো নিয়ে নাড়াচাড়ার ওম পোহাব আর দীর্ঘশ্বাস ফেলব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বাস্তবে, ওই প্রচণ্ড আওয়াজ আর খটখটে রোদ্দুরে মেজাজ এমন খিঁচড়ে গেল যে আমি আর বেরোলাম না। ব্যাকগ্রাউন্ডে ক্রাইম পেট্রোল চালিয়ে চোখ বুজে, মাথা দপদপানি নিয়ে চিৎপাত হয়ে রইলাম। খিদের খ না থাকা সত্ত্বেও স্ট্রেস ইটিং এর হাঁড়িকাঠে মাথা পেতে দুপুরবেলা এক প্লেট ফ্রায়েড রাইস, সন্ধেবেলা একপ্লেট, আটটা কোস্টারের সাইজের ভেজ পকোড়া খেয়ে ফেললাম। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রাত আটটা নাগাদ রুমের বেল বাজল। সঙ্গে সঙ্গে দরজায় দুমদাম বেতালা তবলার বোল। নিশ্চিন্তে দরজা খুললাম। অর্চিষ্মান ঘরে ঢুকে ব্যাগ ছুঁড়ে ঘরের কোণে ফেলে বিছানায় ধপাস করে বসে বলল, স্বর্গদ্বার যে একটা রিয়েল শ্মশান, জানতে না তো? </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কোণে বসে থাকা দাদাকে ডেকে এক পট চা, চিনি সাইডে, আনতে বলে দরজা ভেজিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কবে জানলে?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান বলল, আসতে আসতে মালটিপল চিতা জ্বলতে দেখলাম। তখন ক্লিক করল। ভাবা যায়? এতদিন পুরী আসছি, এই পাড়ায় থাকছি, অথচ নামকরণের সার্থকতাটাই মিস করে গেছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মানের বয়সে না হলেও, আমিও বেশ বড় বয়সেই রিয়েলাইজ করেছিলাম যে স্বর্গদ্বার ব্যাপারটা আক্ষরিক স্বর্গের দ্বার। চেপে গিয়ে অর্চিষ্মানের লেট উপলব্ধি নিয়ে যতখানি হাসা যায় হাসলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রাতে এদিকওদিক না ঘুরে পুরী হোটেলের রেস্টোর্যান্টেই খাওয়া ঠিক হল। </div></div></div></div>খাবারের অর্ডার দিয়ে খামোকাই তিনকোণা ভাঁজের একটা টিস্যু তুলে নিয়ে শুকনো ঠোঁট আবার শুকনো করে মুছে টেবিলের ওপার থেকে মাথা ঝুঁকিয়ে মুচকি হেসে অর্চিষ্মান বলল, হোটেলটা খুবই “অ্যান্টি-রোম্যান্টিক।"
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আর বলামাত্র পুরী হোটেল সংক্রান্ত যে অস্বস্তিটা এতক্ষণ আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল সেটা পূর্ণ গ্লোরিতে আমার সামনে দাঁড়াল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এমন কিন্তু নয় যে আমি আর অর্চিষ্মান ভয়ানক রোম্যান্টিক কাপল, নিভৃত গুনগুনের জায়গা না পেলে গুমরে মরি। রোম্যান্টিক জায়গা বলতেই যে ছবিগুলো ভেসে ওঠে, টিমটিমে আলো, টুংটাং বাজনা, “ডেট”-এর ভেনু হিসেবে ওই রকম জায়গা আমরা পছন্দও করি না। যে জায়গায় চারদিকে কোলাহলের দেওয়াল সেখানেই আমাদের আড্ডা জমে ভালো। যেমন ধরা যাক, অন্ধ্র ভবনের ক্যান্টিন, সারাভানা ভবন, বা শুক্রবার রাতে ডিফেন্স কলোনির ফোর এস বার। যেখানে চারপাশের হল্লাগুল্লার চোটে দুজনকে প্রায় চেঁচিয়ে কথা বলতে হয় উইথ ফুল কনফিডেন্স যে কেউ আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছে না বা শুনতে চাইছেও না। ওই সব জায়গায় বসে, কোলাহলের নিশ্ছিদ্র গোপনীয়তায় আমরা আমাদের জীবনের জটিল জট অনেক ছাড়িয়েছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পুরী হোটেলের অ্যামবিয়েন্সের অনিভৃতির কালপ্রিট ভিড় নয়। কারণ এর থেকে অফিসটাইমের হাওড়া কিংবা শেয়ালদা স্টেশনও বেশি রোম্যান্টিক। আনরোম্যান্টিকতার উৎস অর্চিষ্মানের মতে ভিড়ের কম্পোজিশন। ওর ভাত মাটন (যেমন হওয়ার কথা) আমার হট অ্যান্ড সাওয়ার স্যুপ (বেশ খারাপ) এসে যাওয়ার পর অর্চিষ্মান বলল, চারদিকে তাকিয়ে, আহ্ অত অবভিয়াসলি না, দেখো, নিজেই বুঝতে পারবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দেখলাম। আমরা ছাড়া বাকি সমস্ত ইউনিটই মিনিমাম দুই প্রজন্ম থেকে শুরু করে, দু’তিনটে টেবিলে তো খুব সম্ভব চারপ্রজন্মও মনে হল। বাচ্চা চেঁচাচ্ছে, মা কান মুলছে, দুই কিশোর কাজিনে চোখাচোখি চলছে, ঠাকুমা/বড়ঠাকুমার মাংকিক্যাপের ফাঁক থেকে বেরোনো অবতল গাল প্রবল আন্দোলনে খাবার চিবোচ্ছে। পাশের টেবিলে সদ্য কৈশোর শেষ করা মেয়ে তার মায়ের সঙ্গে এসে বসল। ফোন আকাশে তুলে, ঘাড় সাতাশি ডিগ্রিতে বেঁকিয়ে খানসতেরো সেলফি তোলা শেষ হলে মেনু খুলে খাবার বাছতে বসল। মা গর্জন করে উঠলেন, এই জন্য তোর বাবার সঙ্গে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। আড়ি পাতছি টের পেয়ে আমার দিকে বিষদৃষ্টি হেনে মেয়েটি মাকে “শ্শ্শ্” বলল। মা ফোনে চিৎকার করলেন, তুমি কোথায়, অর্ডারটা কী করে দেওয়া হবে?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মোদ্দা কথা হচ্ছে, গোটা ব্যাপারটার মধ্যে এত ঘোরসংসারী ভাব, যে আমাদের মতো অল্পসংসারীদের পক্ষে অস্বস্তিজনক।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">খাওয়া শেষ করে বিচে নামলাম। অহংকারই পতনের মূল। যে জিনিসগুলো নিয়ে গর্ব করেছি জীবনে ঠিক সেই সেই জায়গাগুলোতেই চড় খেয়েছি। তবু শিক্ষা হয়নি। পোস্টের শুরুতে নিজের প্যাকিং-প্রাওয়েস নিয়ে অত পেখম মেললাম, পুরীতে যাচ্ছি অথচ বালিতে হাঁটার চটি প্যাক করিনি। কাল সকালে দু'জোড়া চপ্পল কিনতে হবে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জুতো খুলে হাতে নিলাম। আবছা অন্ধকারে বালির ওপর সন্দেহজনক ছায়াছায়া এড়িয়ে হাঁটছি। শ্রীরামপুর কালভার্টে কোমরজল পেরোনোর সময় মা বলতেন, এগুলো কিন্তু জল নয়, জানিস তো সোনা? এই মুহূর্তে থাকলে নিশ্চয় বলতেন, এগুলো কিন্তু বালি নয়, জানিস তো সোনা? </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বিচের এই জায়গাটায় দীপাবলীর মতো আলো। রথের মেলার মতো ভিড়্। মাছের বাজারের মতো গন্ধ। ঘন ঘন শাঁখের আওয়াজ। সম্ভাব্য ক্রেতাদের ডেমো দিচ্ছেন বিক্রেতারা। দূরে দু'তিনটে লাল হলুদ সবুজ আলোর বিম তরবারির একে অপরকে কাটাকুটি করছে। হাই এনার্জি গীতবাদ্যের আওয়াজ, এত দূর থেকে কথা সুর আলাদা করা যাচ্ছে না, কিন্তু উচ্চসংস্কৃতির চর্চা যে হচ্ছে না সেটা বোঝা যায়। অর্চিষ্মান বলল, চল চল দেখে আসি কী মজা হচ্ছে। জুতো পরে রাস্তায় উঠে পড়লাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ওই জায়গাটায় কোনও উড়িয়া গর্গকে নিয়ে গেলে তার বিপি কী পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে ভাবতেও শংকা হয়। অধিকাংশ দোকানের নাম বাংলায় লেখা। ষোল আনা বাঙালি থেকে শুরু করে ভজহরি মান্না, সব চেনা দোকান শাখা মেলেছে। সকলেই বাংলায় কথা বলেন, বাংলায় কথা বললে উত্তর দেন। হাঁটতে শুরু করলাম। সাগরিকা হোটেল দেখে অবভিয়াস রেফারেন্সটা চালাচালি করলাম। আসল স্বর্গদ্বার, যেটা অর্চিষ্মান কয়েকঘণ্টা আগে আবিষ্কার করেছে, পেরিয়ে গেলাম। তখনও একাধিক চিতা জ্বলছে ভেতরে। ওই পরিস্থিতিতে যে ক্লিশেতম কথাটা মাথায় আসার সেটাই এল। দেওয়ালের ওপারে কিছু লোক ছাই হয়ে যাচ্ছে আর বাইরে মাছভাজা, শঙ্খধ্বনি, টোটোর হর্ন, সাইকেডেলিক আলোর নাচ, কানফাটানো "শীলা কি জওয়ানি" (ততক্ষণে গানের লিরিক্স উদ্ধার করতে পেরেছিলাম)। একটু পর গানের সঙ্গে নাচটাও দেখব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এই যারা নাচছে, খাচ্ছে, হাসছে, নিজেদের ছাড়া বিশ্বশুদ্ধু লোকজনকে জাজ করতে করতে হাঁটছে, এরা প্রত্যেকে জানে আর কয়েক বছরের মধ্যে (মাস, দিন বা ঘণ্টাও হতে পারে) নিজেরাও দাউ দাউ জ্বলবে। এই জানাটা তাদের আচরণে এককুচি প্রভাবও ফেলছে না। এটা জীবনের জয়ের লক্ষণ নাকি টোটাল পাগলামির?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ব্র্যাকেটে আদি লেখা তিন চারটে নৃসিংহ খাজা সেন্টার পেরোলাম। অবশেষে গানবাজনা, আলোর তলোয়ারের উৎস গোচর হল। একটা লক্ষ্মীঠাকুর বিসর্জনের জন্য এসেছে। একটা ভ্যানে আলমারি সাইজের স্পিকার, আলোর তলোয়ারের উৎসও সেই ভ্যানে। একটা ভ্যানে ডিজাইন করা আলোর কলকা। একটা ভ্যানে মালক্ষ্মী। তিনটে ভ্যানের সন্নিকটে তিনটে দল। প্রথম ভ্যান, যেখানে আলোর তরবারি বিচ্ছুরিত হচ্ছে আর আলমারি সাইজের স্পিকার থেকে গান বাজছে তার সামনে চার পাঁচটি ছেলের দল নাচছে। নাচ বলাটা ইউফেমিজম। শরীরের মধ্যে ভূমিকম্প বলাটাই উচিত। বোঝাই যাচ্ছে বাহ্যিক অনুঘটকের সাহায্যে নাচিয়েদের শারীরিক এবং মানসিক শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ানো হয়েছে, বা উল্টোটা। বাহ্যিক অনুঘটক শারীরিক এবং মানসিক ক্লান্তির সমস্ত বোধ কিছুক্ষণের জন্য উধাও করে দিয়েছে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দ্বিতীয় ভ্যানের আলোর কল্কার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ট্র্যাডিশনাল ওডিশি ড্রেস পরা কয়েকজন বাদক। কাঁসি এবং গলায় ঝোলানো ছোট ঢাক বাজাচ্ছেন। কান খাড়া করে খেয়াল করেছি, দু'হাতের মধ্যে দাঁড় করানো ভ্যানের বলিউডি অপসংস্কৃতি তাঁদের তাললয়ের বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি ঘটাতে পারছে না। টুপি খোলার মতোই ক্ষমতা। তিন নম্বর ভ্যানে মালক্ষ্মীর মূর্তির সামনে যাঁরা দাঁড়িয়ে আছেন নিঃসন্দেহে পূজারী। হাতে প্রদীপ এবং ঝালর এবং ঘণ্টা। দশ হাত দূরের 'শীলা কি জওয়ানি" এবং পাঁচ হাত দূরের ঢোল ও কাঁসি থেকে সম্পূর্ণ ইমিউনড হয়ে মগ্ন মুখে ঘণ্টা নেড়ে মালক্ষ্মীর বিদায়কালীন আরতি করে চলেছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দূরে একটা ক্যাফের নাম লাল আলোয় ঝলমল করছে। মিত্র ক্যাফে। খিদে একটুও নেই, তবু অর্চিষ্মান ঢুকল। দেখি যদি কফি আর টুকটাক কিছু পাওয়া যায়। ও সব বাহানা, আসলে পদবীতুতো পার্শিয়ালিটি। কফিটফি কিছু নেই। পাওয়া যাবে শুধু ভেজ থালি, মটন থালি, চিকেন থালি, ফিশ থালি। অর্ডার দিতে হলে নেক্সট দশ গোনার মধ্যে দিতে হবে কারণ কিচেন বন্ধ হয় হয়। রিসেপশনের ছেলেটা মেনুকার্ড বাগিয়ে ধরে এক, দুই, তিন গুনতে শুরু করল, অর্চিষ্মান হার মেনে বেরিয়ে এল। বারান্দার দেওয়ালে এক ভদ্রলোকের ছবি খুব মালাটালা পরিয়ে টাঙানো। অর্চিষ্মানকে কনুইয়ের গুঁতো মেরে বললাম, তোমার কোনও কাজিন দাদুটাদু নাকি? অর্চিষ্মান বলল, তোমার প্রাণঘাতী রসিকতাগুলো বন্ধ কর প্লিজ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">হাঁটতে হাঁটতে এত অবধি গেলাম যেখানে বিসর্জনের গীতবাদ্য প্রায় অশ্রুত হয়ে এসেছে। আলোর দূষণও অদৃশ্য। অন্ধকারে ঢেউয়ের শব্দ, ঢেউয়ের মাথায় কুচিকুচি ভাঙতে থাকা সাদা। মিনিটদশেক দাঁড়িয়ে রইলাম। পেছনে একটা পরিত্যক্ত বাড়ি, ভুজঙ্গনিবাসের মতোই, সামনের জমিতে লম্বা লম্বা ঘাস গজিয়ে গেছে। বাড়িটার পাঁচিলঘেঁষা ছোট বোর্ড। সম্পূর্ণ ওড়িয়াতে লেখা। কাজেই বাড়িটা কেন, কীসের, অজানাই রয়ে গেল। বোর্ডটা আদৌ বাড়িটার পরিচয়জ্ঞাপক কি না তাই বা কে বলতে পারে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একটা টোটো এল। উঠে পড়লাম। আবার মিত্র ক্যাফে পেরোনো হল। লক্ষ্মীঠাকুর তখনও জলে পড়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে, নাচিয়েদের এনার্জি তখনও টইটম্বুর। হোটেলের মেন গেট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কয়েকজন দাঁড়িয়ে গজল্লা করছিলেন। আমাদের দেখে গেট খুলে দিলেন। ওপরে এসে জামাকাপড় ছেড়ে বিছানায় বডি ফেললাম। সমুদ্রের এত কাছে, অথচ ঢেউয়ের শব্দ প্রায় অশ্রুত। মনে হচ্ছিল মাঝরাস্তায় বিছানা পেতে শুয়ে আছি আর চারপাশ দিয়ে হর্ন বাজিয়ে অসংখ্য টোটো, অটো, রিকশা, কোটি কোটি লোক, শাঁখের বেচাকেনা করতে করতে, মাছভাজা চিবোতে চিবোতে মিছিল করে চলেছে। আর সব ছাপিয়ে বিসর্জনের ভ্যান থেকে আকাশবাতাস কাঁপিয়ে বাজছে, আমি কলকাতার রসগোল্লা, ও আমি কলকাতার রসগোল্লা।</div><div class="p1"><br /></div><div class="p1"><br /></div><div class="p1"><br /></div><div class="p1"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/puri20231.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ১</span></a></div><div class="p1"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/blog-post_18.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৩</span></a></div><div class="p1"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/puritrip2023.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৪</span></a></div><div class="p1"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2024/01/chilika2023.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৫</span></a></div><div class="p1"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2024/01/purikonark2023.html?sc=1706023651623#c5827187471340596752" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৬</span></a></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com8tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-90105867863777238972023-12-14T14:07:00.002+05:302023-12-14T14:09:55.025+05:30তেতাল্লিশ<div class="p2" style="text-align: center;">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অনেকটা মেরে আনা গেছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1" style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgw3TwwFYRBdBymP4KEbcmPUvKojwSkZSvaQUFWkElJpoRZwOOUHdGASLUr-3HWung5m4ndSkvKQIZSr_kvSDg8wyJgoWpu-a_Q6j2e_BE908kKUTKrk0XLT3OMxL0LT-SVLAVZ7ilsWX3UUQ8m6USac1AVn93P8xD7E8IqsPCRIUn0odOETRfSLl7sh-Sf/s1280/puri_2023.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="720" data-original-width="1280" height="360" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgw3TwwFYRBdBymP4KEbcmPUvKojwSkZSvaQUFWkElJpoRZwOOUHdGASLUr-3HWung5m4ndSkvKQIZSr_kvSDg8wyJgoWpu-a_Q6j2e_BE908kKUTKrk0XLT3OMxL0LT-SVLAVZ7ilsWX3UUQ8m6USac1AVn93P8xD7E8IqsPCRIUn0odOETRfSLl7sh-Sf/w640-h360/puri_2023.jpg" width="640" /></a></div><div style="text-align: center;"><span style="font-size: x-small;">আলোকচিত্রীঃ অর্চিষ্মান মিত্র</span></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com22tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-38647637729178844362023-12-06T12:34:00.007+05:302024-01-23T21:01:23.989+05:30পুরী ১ঃ সদাশিবের সঙ্গে দেখা
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মানের কনফারেন্স শেষ হতে বেলা চারটে বাজবে (পরে ছ’টা দাঁড়াল)। সকালের ফ্লাইটে ভুবনেশ্বর পৌছে এয়ারপোর্টে বসে বোর হওয়া যায়। অর্চিষ্মানের হোটেলে পৌছে বোর হওয়া যায়। 'আমার বউ এসে আমার ঘরে কয়েকঘণ্টা থাকবে' বলতে অর্চিষ্মানের প্যালপিটেশন হলে অন্য হোটেলে বসে বোর হওয়া যায়। নয়তো সোজা পুরী চলে গিয়ে বোর হওয়া যায়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বোরডমের সঙ্গী হিসেবে হোটেলের টিভিতে সি আই ডি-র থেকে সমুদ্র বেটার। সোজা পুরীই যাওয়া স্থির করলাম। পান্থনিবাসেই খোঁজ নেওয়া হয়েছিল প্রথমে। ওয়েবসাইট খুলল না। ফোনও তুললেন না কেউ। গিয়ে দেখলাম ওঁদের একটা গোটা উইং সারানো হচ্ছে। বাকি উইং ফুল। অর্চিষ্মান সমুদ্রতটস্থিত অন্যান্য হোটেলের সাজেশন দিয়েছিল, আমি বললাম, পুরী হোটেল। এমন ভাবে বললাম যাতে অর্চিষ্মান বুঝতে পারে যে এটাই শেষ কথা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এত হোটেল থাকতে পুরী হোটেল কেন সেটা রহস্য আবার রহস্য নয়ও। সে রহস্যের চাবিকাঠি রয়েছে, সব রহস্যের চাবিকাঠিই আজকাল যেখানে পাওয়া যাচ্ছে, শৈশবে। লোকে মাধ্যমিকে ছড়াচ্ছে, অফিসে ধ্যাড়াচ্ছে, সম্পর্কটমপর্কের দিকে তো তাকানো যাচ্ছে না, সব পোস্ট-শৈশব ট্রমা সিন্ড্রোম। যত গ্যাঁড়াকল বাবামা পাকিয়ে রেখেছেন। বিশেষ করে মা। যখন গলা মোটা করা উচিত ছিল গালে চুমু খেয়েছেন, যখন গালে চুমু খাওয়া উচিত ছিল পিঠে স্কেল ভেঙেছেন, উঠতে বসতে শুতে ঘুমোতে ইতিহাসের নম্বর থেকে শুরু করে বসে আঁকোতে ঘোষবাবুর মেয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন, 'আই অ্যাম প্রাউড অফ ইউ' ইত্যাদি অস্ত্যর্থক আশ্বাসের বদলে 'আবাআআর সুপারহিট মুকাবলা দেখছিস্’ জাতীয় নঞর্থক হুংকারে আমরণ ট্রমার সৃষ্টি করেছেন, বাচ্চার ঘ্যানঘ্যানানি থেকে একমুহূর্তের মুক্তির জন্য নির্বিচারে জেমস্ পপিন্সের হাই ফ্রুকটোজ সুগার চাটিয়েছেন, জন্মদিনের পায়েসটা পর্যন্ত অরগ্যানিক ওয়াইল্ড মধু দিয়ে বানানোর কেয়ার করেননি, প্রোটিনটোটিনের পারসেন্ট নিয়ে মাথা ঘামানো তো ছেড়েই দিলাম। ছাঁদাবাঁধা ইস্কুলে পাঠিয়ে ইতিহাস ভূগোল ভৌতবিজ্ঞানে নম্বর পাইয়ে ভেবেছেন কেল্লা ফতে করলেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আজকালকার মাবাবারা ওই সব ভুল করছেন না। সবার বাচ্চাই অলটারনেটিভ স্কুলে যাচ্ছে। একটা অলটারনেটিভ স্কুলের কথা শুনলাম, মাসে দু’লাখ টাকা মাইনে, এদিকে বাথরুম নেই। মাঠ আছে। যাও, গর্ত খোঁড়ো, কাজ সেরে, মাটি চাপা দিয়ে, সালফেট প্যারাবেন ফ্রি অর্গ্যানিক সয়েল ঘষে হাত ধুয়ে ফেরত আসো। এক ট্রিপে সাসটেনেবিলিটি, সেলফ সাফিশিয়েন্সি, জীবনভরের 'আই অ্যাম বেটার দ্যান এভরিবডি এলস্' হাই হর্স রাইডিং ফ্রি। আমাকে যিনি খবরটা দিলেন তাঁর মেয়ের স্কুলের মাইনে এক লাখ, তাই এখনও ফ্লাশ ব্যবহার করতে হচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলাম, দুই স্কুলের তফাৎ বোঝা যায়? তিনি চোখ গোল করলেন, বোঝা যায় না আবার? আমার মেয়ে তো এখনও কিছু কথা শোনে। ওই স্কুলের গেট থেকে, দেওয়ালে, সিলিং-এ, দরজায় ছাপ্পান্ন ফন্টে মোটো ছাপা, ডাউট এভরিথিং। পড়তে বস বললে স্যাক্সোফোন বাজাতে বসবে, স্যাক্সোফোন কোথায় বললে বই নিয়ে আসবে, কাউকে প্রণাম কর বললে সেমিনার নামিয়ে দেবে কেন বয়সে বড় হওয়াটা শুধুমাত্র প্রণাম করার ক্রাইটেরিয়া হতে পারে না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দুয়ে দুয়ে চার করে ফেললাম। আমার চারটাকা মাইনের সিসনর্ম্যাটিভ নিউরো-কনভার্জেন্ট বালিকা বিদ্যালয়ে একটার বেশি দেড়টা প্রশ্ন করলেই কান মুলে দেওয়া হত, “বাধ্য” ছিল পৃথিবীর সেরা সার্টিফিকেট। গত সপ্তাহে বাড়ি ঘুরে এলাম, বাবা এই তেতাল্লিশ বছরের বুড়ো মেয়েকেও বললেন, প্রণাম কর। যাকে প্রণাম করতে বললেন পঁয়ষট্টি শতাংশ প্রব্যাবিলিটি সে আমার থেকে বছরদুয়েকের ছোট। সেও প্রতিবাদ করল না, আমিও আর ঘাঁটালাম না, প্রণাম করে ফেললাম। আমার “বাধ্য” অর্জন অটুট রইল। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এত হোটেল থাকতে পুরী হোটেলের পেছনেও আমার শৈশব এবং, বলা বাহুল্য, মা। পুরী যখনই যাওয়া হত হলিডে হোম জাতীয় জায়গায় থাকা হত। বি এস এন এল-এর, তখন ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকম ছিল, হলিডে হোম। ক্যালকাটা টেলিফোনসের হলিডে হোমও হতে পারে, অত ডিটেলস মনে রাখার বয়স ছিল না আমার। যারই হোক না কেন, হলিডে হোমগুলো হত সমুদ্র থেকে একটু ভেতর দিকে। বড় বড় অনেকগুলো ঘর থাকত। সবথেকে লোভনীয় ফিচার ছিল রান্নাঘর। সবাই উল্লসিত হতেন, দু’বেলা টাটকা শাকসবজি মাছমাংস আনা হবে, তারপর সেগুলো “সবাই মিলে” রান্না করে খাওয়া যাবে। যা ফুর্তি হবে, শেষ হয়েছিল ঘটিগুলোকে, থুড়ি, মোহনবাগানকে পাঁচ গোল দেওয়ার সময়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এই “সবাই মিলে” রান্নাবান্না করাটা একটা গ্রস আন্ডারস্টেটমেন্ট, বলাই বাহুল্য। যারা বাড়ির রান্নাঘরে রান্না করতেন, হলিডে হোমের রান্নাঘরেও রান্নাটা তাঁরাই করবেন, কিন্তু রান্নাঘরটা যেহেতু বদলে যাবে, সামহাউ তাঁদের দারুণ আনন্দ হবে। অ্যাকচুয়ালি আনন্দ হবে কি না সেটা তাঁদের থেকে কখনও ভেরিফাই করা হয়েছে বলে মনে পড়েনি। এটা আরেকটা কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার। কখন, কোথায়, কীভাবে রান্না করলে আনন্দ বেশি হবে, বা কী রান্না করলে ঝামেলা কম হবে (ভাতে ভাত বসিয়ে দাও, বেশি ঝামেলার দরকার নেই), বা রান্না সম্পর্কে যে কোনও তাত্ত্বিক বক্তব্য তাঁদেরকেই রাখতে দেখেছি, যাঁরা রোজকার রান্নাটা করেন না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আবার গোটা জীবন রান্নাঘরে কাটানো লোকও দেখেছি, যাঁরা পুরীর হলিডে হোমে "সবাই মিলে" রান্নাবান্না করে খাওয়ার প্রস্তাবে বালিকার মতো উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠতেন। তখন তাঁদের শ্রেণীশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতাম। এখন দৃষ্টি নরম হয়ে এসেছে। হয়তো সত্যিই তাঁদের রান্না করতে এত ভালো লাগত যে বাড়িতে রান্না করে আশ মিটত না, বাইরে গিয়েও রান্না করতে ইচ্ছে করত। বা করতে করতে রান্না করাটাই তাঁদের আইডেন্টিটির পার্ট হয়ে গিয়েছিল। পুরী যাচ্ছি বলে তো আইডেনটিটি বাড়িতে ফেলে যাওয়া যায় না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কোনও একবারের বিরল পুরী যাত্রায় আমরা হলিডে হোমে না থেকে পুরী হোটেলে থেকেছিলাম। একটা হোটেল, যেখানে কাউকে রান্না করতে হয় না। বারান্দায় বসে হাঁটু নাচাতে নাচাতে সমুদ্র দেখো। খিদে পেলে ফোন করে ঘরে খাবার আনাও, নয়তো নিচে বিচে গিয়ে মাছভাজা আর চমচম খাও, নয়তো হোটেলের নিজস্ব রেস্টোর্যান্টে সুন্দর সুন্দর চেয়ারটেবিলে বসে, 'এই লাও সেই লাও' বিনীত হুকুম কর। আরও বিনীত আর ভদ্র কাকুরা কাচের প্লেটে যা চাই সব নিয়ে আসবেন। তখন পৃথিবীতে যাঁকে সবথেকে বেশি ভালোবাসতাম (এখনও বাসি), সেই বেড়ানোটায় তাঁকে এত খুশি দেখেছিলাম এবং টের পেয়েছিলাম যে এই খুশিটার পেছনে সম্ভবতঃ হোটেলটার একটা ভূমিকা আছে। সেই টের পাওয়াটা আমার চেতনায় পুরী হোটেলকে একটি দীপ্তিবলয়ের মধ্যে স্থাপিত করেছিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পুরী হোটেল নিয়ে এত কথা বলছি কারণ এবার পুরী হোটেলে থাকার আমার সিদ্ধান্তটা ব্যাকফায়ার করেছিল এবং গোটা বাষট্টি ঘণ্টা অর্চিষ্মান “বলেছিলাম” কলার তুলে ঘুরেছিল। সে বিষয়ে পরে বিস্তারে বলব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আপাততঃ এয়ারপোর্ট থেকে বেরোই। হোটেলের পক্ষ থেকে সদাশিববাবু গাড়ি নিয়ে আসবেন আমাকে কালেক্ট করতে। হোয়াটসঅ্যাপে গাড়ির নামধাম এসে গেছে, যার মধ্যে আমার কাজে লাগবে শুধু নম্বর। হোয়ার মেসেজে গাড়ির রকমও মেনশনড ছিল কিন্তু রকম শুনে গাড়ি চেনার চেষ্টা এ জীবনের মতো ত্যাগ দিয়েছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"><strike>এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে, </strike>সেই শেষরাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে, টি থ্রি-র কার্ণাটিক ক্যাফেতে বসে ফিল্টার কফি খেয়ে, উইন্ডো সিটে বসে আক্ষরিক আকাশবাতাস দেখতে দেখতে, পাঁচদিনের অদর্শনের পর অর্চিষ্মানের সঙ্গে দেখা হওয়ার ফুরফুরে ফিলিংটা অবশেষে অন্তর্হিত হল। এয়ারপোর্টের লাগোয়া রাস্তায় কোটি কোটি গাড়ির স্রোত। কেউ যাত্রী নামাচ্ছে, কেউ যাত্রী তুলছে, কেউ কী করছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। যাই করুক না কেন, করার সময়সীমা সাড়ে তিন সেকেন্ড অতিক্রম করলেই একজন রোগা পুলিস একটা তেলচকচকে, লম্বা বাঁশ আস্তে করে তাদের বনেটে ঠেকাচ্ছেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রাস্তাও একটা না। দুটো প্যারালাল। একটা এয়ারপোর্টের লাগোয়া। একটা ছোট্ট বুলেভার্ড মতো জিনিসের ওপারে আরেকটা রাস্তাও আছে। সেটা দিয়েও স্রোতের মতো গাড়ি আসছে। সদাশিবের গাড়ি কোন স্রোতে আসবে আমি শিওর নই। এটা ততটাও সমস্যা নয়, ফোনে ক্লিয়ার করে নেওয়া যায়। ভাবতে ভাবতেই সদাশিব আমাকে ফোন করলেন। তুলে 'হ্যালো' বললাম এবং বলামাত্র শেষ এবং আমার মতে গোটা পরিস্থিতির সবথেকে অপ্রত্যাশিত এবং অনতিক্রম্য সমস্যাটির সৃষ্টি হল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জনা চারপাঁচের একটি দল। চোখে পড়েছে গেট দিয়ে বেরোনোর সময়ই। মেরুন সোনালি ইউনিফর্ম, সেম কম্বিনেশনের টুপি। কারও হাতে ড্রাম, কারও বিউগল, কারও প্রকাণ্ড কাঁসি। বাকি সমস্যাদের মতোই আমিও তাঁদের দেখেছি এবং দেখেও আমার জীবনে তাঁদের কনসিকোয়েন্স গ্রসলি আন্ডারএস্টিমেট করেছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমি 'হ্যালো' বলামাত্র তাঁরা তাঁদের বাদ্যযন্ত্রসমূহ বাজাতে শুরু করলেন। কোনও কৃতী সন্তান ফিরছেন মনে হয়, অভ্যর্থনার ব্যবস্থা হচ্ছে। আমি চিৎকার করে "কুছ শুনাই নেহি দে রহা হ্যায়" বললাম। ওদিক থেকে ফোন কেটে গেল। বাজনাও থেমে গেল। এবং ঠিক এই ঘটনাটার পুনরাবৃত্তি হল, একবর্ণ বাড়িয়ে বলছি না, মিনিমাম চারবার। সদাশিবের ফোন আসা, আমার ফোন তোলা, সদাশিবের কথা বলতে শুরু করা, জগঝম্প শুরু হওয়া, সদাশিবের ফোন কেটে দেওয়া এবং জগঝম্প থেমে যাওয়া। ওঁরা ও রকম খেপে খেপে বাজাচ্ছিলেন কেন কে জানে। কৃতী সন্তানের অ্যারাইভালের আগে রিহার্সাল দিচ্ছিলেন? তাহলেও তো টানা বাজানোর কথা। মনে হয় কৃতী সন্তানকে কেউ চেনেন না, তাই বারবার ফলস্ স্টার্ট হচ্ছিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একটা কথা মাথায় রাখতে হবে এইসব দুর্ঘটনার সম্ভাবনা সম্পর্কে আমি একেবারে অচেতন ছিলাম না। দু'বেলা অ্যাংজাইটির ওষুধ খাই, আমার মানসিক অবস্থার জন্য প্রতিকূলতম পরিস্থিতি অ্যানটিসিপেট করে প্রস্তুত থাকা আমার ডি এন এ-র প্যাঁচে ঢুকে গেছে। সে রকম একটা প্রতিকূলতা হচ্ছে ভিড়ের মধ্যে কাউকে চিনে বার করা। কলেজে পড়ার সময় অনেক বন্ধুকে দেখেছি কনফিডেন্টলি যে চৈত্র সেল চলাকালীন হাতিবাগানে মিট আপ স্থির করতে। কেমন মজা হবে সেই কল্পনায় ভাসতে ভাসতে ফোন রেখে দিতে। ফোন রাখা আর দেখা হওয়ার মাঝের আঠেরো ঘণ্টা ডান হাতের নখ দিয়ে খুঁটে বাঁ হাতের ছাল তুলে না ফেলতে। বন্ধুর থেকে বেশি, এমনকি সোলমেট হয়ে ওঠার বেশ কিছু সিম্বল প্রকট হয়ে ওঠা সত্ত্বেও, সকাল দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে হাওড়া স্টেশনের দশ থেকে এগারো নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝখানে দাঁড়াতে বলেছিল বলে একজনের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে আমাকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সদাশিব তো টোটাল অচেনা। গেমপ্ল্যান ঠিক করে রেখেছিলাম। ফোন করে বলব অমুক নম্বর গেটের সামনে দেখবেন বাসন্তীর ওপর সাদা সুতোর কাজ করা জামা পরে একজন দাঁড়িয়ে আছে, খরখরে শনের মতো সাদা চুল, লাল টিপ, ভোঁতা নাক, ব্যক্তিত্বহীন চিবুক। এতেই যথেষ্ট স্পেসিফিক হবে মনে হয়েছিল। এর মধ্যে মিউজিক্যাল ওয়েলকাম কমিটি, পুলিস, তেলমাখানো বাঁশ ইত্যাদি হার্ডল কল্পনা করিনি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান এই সব সময় থাকলে সুবিধে হয়। আমার সমস্ত শংকার সত্যি হওয়ার স্টেপ বাই স্টেপ পরিণতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে থাকে। আচ্ছা ধর, সদাশিবকে তুমি চিনতে পারলে না। কী হবে? আমি বলব, সদাশিব রেগে যাবেন। তখন অর্চিষ্মান বলবে, উফ্ ওই সব ভেগ, ইমোশনাল কনসিকোয়েন্স না। অ্যাকচুয়ালি কী ঘটবে সেটা বল। আমি বলব, সদাশিব রেগে যাবেন, ভীষণ রেগে পুরী ফেরত চলে যাবেন। অর্চিষ্মান বলবে, ওকে। তখন তুমি কী করবে? আমি ভেবে বলব, উবার ডেকে আমিও পুরী চলে যাব। অর্চিষ্মান বলবে, ব্যস। মিটে গেল। </div><div class="p1"><br /></div>
<div class="p1">এত কিছু করতে হল না। আমি যে মুহূর্তে চোখ সরু করে গাড়ির নম্বর চিনতে পারলাম, সদাশিবও সেই মুহূর্তে উইন্ডস্ক্রিনের ওপার থেকে হাত তুললেন। গাড়িতে উঠে পড়লাম। সাড়ে তিন কেন, দেড় সেকেন্ডও লাগল না। কোথায় যেন ঠং করে বাঁশে বনেটে কন্ট্যাক্ট হল। সদাশিবকে বললাম, লোকজনের কোনও সিভিক সেন্স নেই। দেখছে এত জ্যাম, তবু গড়িমসি করবে। বাজনা শুরু হল। কোলের ওপর তর্জনীর তাল তুললাম। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জানালার বাইরে ভুবনেশ্বর সরে সরে যেতে লাগল। বিবেকানন্দ রোড সম্ভবতঃ নাম রাস্তাটার, সেই রাস্তায় কতগুলো ঘমাসান বাড়ি দেখলাম। শহর ছেড়ে মাঠঘাট আকাশবাতাস ক্ষেত বাঁশবন শুরু হল। ক্ষেতে ইলেকট্রিকের পোল পোঁতা। পোলগুলো সব একদিকে হেলে রয়েছে। জোর ঝড় হয়েছিল? বড় রাস্তায় মেশা ছোট রাস্তার মোড়ের বটগাছ গুঁড়ি ঘিরে বাঁধানো বেদীতে ছোট করে ছাঁটা চুলের বালিকা ফ্রক পরে, পা ঝুলিয়ে বসে আছে। পাশে প্লাস্টিকব্যাগ। কল্পনা করি ওই প্লাস্টিকের ভেতর আছে গানের খাতা। ও অপেক্ষায় আছে একটা ভ্যান কিংবা টোটোর, চেনা রাস্তা বলে মাবাবা নিশ্চিন্তে একা ছেড়ে দিয়েছেন। বিনুনিবাঁধা বালিকার সাইকেলের ঝাঁক গাড়ি পার হয়ে উল্টোদিকে চলে যায়। এসি গাড়ির বন্ধ জানালায় নাক ঠেকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে যতক্ষণ পারা যায় দেখি। ভেতর থেকেও ওদের অট্টহাসি শুনতে পাই। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জনপদ আসে। শ্যেনচক্ষু থাকি, এস বি আই-এর নীল বোর্ডের লাস্ট লাইন, কিংবা হোসিয়ারির দোকানের মাথায় রণভির সিং-এর আবক্ষ ছবির নিচে কোথাও যদি খুদি খুদি করে ইংরিজিতে জায়গাটার নাম পাই। আমার একটা গোপন অযৌক্তিক বিশ্বাস হচ্ছে, সুন্দর নামওয়ালা জায়গা আর সুন্দর নামওয়ালা মানুষ সুন্দর হয়। আসাম, ওডিশা আমার এই বিশ্বাসের পালে জোর হাওয়া দিয়েছে। মায়ের মুখে গৌরীপুরের মাঠের নাম শুনেই আমি জানতাম এই মাঠ রূপসী না হয়ে যায় না। বা যে দ্বীপের নাম মাজুলি, সে আর কত কুরূপ হবে? তেমনি একটা জায়গার নাম যদি হয় কোরাপুট, সূর্য পশ্চিমে উঠলেও সে কুদর্শন হতে পারে না। বা ভিতরকণিকা। কিংবা ময়ূরভঞ্জ। একটা দোকানের বোর্ডে লেখা দেখলাম 'সত্যবাদী সাইকেল শপ'। মনে করে রাখলাম। অর্চিষ্মানকে বলব। একটু এগিয়ে দেখলাম 'সত্যবাদী হার্ডওয়্যার স্টোর'। মিনিট পাঁচেক পর 'সত্যবাদী পুলিস স্টেশন' দেখে সত্যিটা স্পষ্ট হল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ফোন বার করে দেখলাম, রাস্তার মিনিট তিরিশ মতো বাকি। ভুবনেশ্বর থেকে পুরী যেতে লাগে দেড় ঘণ্টা। অন্ততঃ তিনঘণ্টা যদি জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা না যায়, তাহলে আর বেড়াতে গিয়ে লাভ কী? রাস্তাটাকে লম্বা করার আশায় রিয়ারভিউ আয়নায় চোখ রেখে জানতে চাইলাম, চা পাওয়া যাবে কোথাও?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আস্ক অ্যান্ড ইউ শ্যাল রিসিভ। সদাশিব জানালেন, যাবে। একটু পরে, ভালো চা পাওয়া যাবে। আমি বললাম, হ্যাঁ হ্যাঁ কোনও তাড়া নেই। মিনিট পাঁচের মধ্যেই বাঁদিকে একটা দোকানের দলের সামনে গাড়ি স্লো হল। দরজা খুলে নামতে যাব, সদাশিব আমার আগে নেমে পড়লেন। আপনি বসুন, আমি এনে দিচ্ছি। না না সেকি, বললাম। কানে নিলেন না। সাহস বেড়ে গেল। জানালা নামিয়ে বললাম, চিনি ছাড়া হবে কিনা একটু জিজ্ঞাসা করুন না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কথোপকথনের পর সদাশিব মুখ ঘুরিয়ে জানালেন, রেডিমেড পাওয়া যাবে না তবে বানিয়ে দেওয়া যাবে। আমি বললাম, না না সে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে, চিনিশুদ্ধুই খেয়ে নেব। সদাশিব বললেন, আপনার তাড়া আছে বুঝি? আমি বললাম, আমার তো কোনও তাড়াই নেই। কখনওই থাকে না (এটা জোরে বলিনি), ভাবলাম আপনার যদি থাকে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চিনি ছাড়া চায়ের অর্ডার দিয়ে দোকানের সামনের টুলে বসলেন সদাশিব। বারদুয়েক সাধলাম, চা বা টা কোনও বিকল্পতেই ঘাড় পাতলেন না। আমি গাড়ির দরজা খুলে, বাইরের দিকে পা ঘুরিয়ে বসলাম। চা এসে গেল। একটা কুকুর গোল্লা পাকিয়ে শুয়ে রইল। একটা মাছি ভোঁ ভোঁ করে ঘুরে গোটা দৃশ্যের একমাত্র সাইন্ডস্কেপ তৈরি করল। বুকের ভেতর খতিয়ে, খুব খতিয়ে খননকার্য চালিয়ে, মগজের কোণায় কোণায় সার্চলাইট ফেলে দেখলাম, এক্স্যাক্টলি ওই মুহূর্তটায় আমার সত্যিই কোনও দুঃখ নেই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="p2"><br /></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/blog-post_15.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ২</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/blog-post_18.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৩</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2023/12/puritrip2023.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৪</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2024/01/chilika2023.html" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৫</span></a></div><div class="p2"><a href="https://abantor-prolaap.blogspot.com/2024/01/purikonark2023.html?sc=1706023651623#c5827187471340596752" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">পুরী ৬</span></a></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com18tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-42498909045867071902023-11-23T19:59:00.021+05:302023-12-05T10:26:21.689+05:30দশম অবতার ও রক্তবীজ<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"><i>*স্পয়লার আছে। স্পয়লার ছাড়া কিছু নেই।*</i></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"><b>দশম অবতার</b></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শহরে সিরিয়াল কিলিং হচ্ছে। সিরিয়াল কিলার যীশু। যীশুকে ধরতে নেমেছেন বড় পুলিস প্রসেনজিৎ, বাংলাসিনেমার আইকনিক থ্রিলারের আইকনিক অ্যান্টিহিরো প্রবীর রায়চৌধুরী। সঙ্গে নিয়েছেন মেজ পুলিস অনির্বাণকে, যিনি বাংলাসিনেমার অতটাও আইকনিক নয় থ্রিলারের ততটাও আইকনিক নন দারোগা বিজয় পোদ্দার। যিনি ভিঞ্চিদা-র কেসে ভিঞ্চিদাকে ধরতে অক্ষম হলেও সত্যিটা ফিগার আউট করে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সকলেই দেখতে পাচ্ছে যীশু খুনগুলো করছেন, কাজেই হু নিয়ে কোনও ডাউট নেই। হাউ-ও ক্লিয়ার। কয়েকটা খুন রিয়েলটাইমে দেখানো হয়েছে। হোয়াই-ও না বোঝার কিছু নেই। সমাজের ময়লা পরিষ্কার হচ্ছে। মাঝে মাঝে সাদাকালোতে এক ভদ্রলোক একটি বাচ্চাকে দশাবতারের গল্প শোনাচ্ছেন, বাচ্চাটির মুখের সঙ্গে যীশুর মুখের মিল আছে, কাজেই খুনের আন্ডারলায়িং দশাবতারের অ্যাংগলটাও দর্শক ধরে ফেলেছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দর্শক ধরে ফেলবেন আর প্রসেনজিৎ পারবেন না তা তো আর হয় না। বাইশে শ্রাবণে বাংলা কবিতায় প্রসেনজিতের বুৎপত্তি দেখে বাঙালি টলে গিয়েছিল, দশম অবতারে হিন্দু পুরাণ নিয়ে এক্সপার্টাইজে হিলে যাবে। স্পটে পড়ে থাকা পুঁতির মালা, খুনের অস্ত্র, রকম ইত্যাদি থেকে তাঁর দেড় সেকেন্ড লেগেছে ধরতে যে ব্যাপারটার সঙ্গে বিষ্ণুর দশ অবতারের সম্পর্ক আছে। প্রসেনজিতের বাড়ি দেখে সন্দেহ হয় ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রিভিলেজ, কালচারাল পুঁজি ইত্যাদি আছে। পুঁজি থাকলেই যে ব্যুৎপত্তি থাকতে হবে তেমন কোথাও লেখা নেই, থাকলে বিস্ময় কম আরকি। যেটা বিস্ময়ের সেটা হচ্ছে বাইজি পাড়ায় বড় হয়ে উঠে বিজয় পোদ্দার যে শুধু হিন্দু মিথোলজি ঝড়াক্সে কোট করেন তাই না, অন্যান্য বাইজীদের বাচ্চাদের পড়াতে বসিয়ে যে স্পিডে মাথার ভেতর গতিবেগ ইনটু সময় করে পলুটোর দূরত্ব বার করেন, হয় বিজয় পোদ্দার জিনিয়াস নয় বিজয় পোদ্দারের মা। ওই পরিবেশে ছেলেকে এমন তালেবর বানিয়েছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">হু হল, হাউ হল, হোয়াইও হল। বাকি রইল যীশুকে ধরা। সশরীরে পাকড়াও করে হাতে হাতকড়া পরানো। সুপারকপেরা অফিসে বসে হিন্দু মিথোলজি নিয়ে বোলচাল মারছেন এমন সময় একজন সাইকায়াট্রিস্ট, (সাইকোলজিস্ট বোধহয়, ব্যাকস্টোরি যা দেখাল ওই গোলযোগে ডাক্তারি পড়ার সময় পাননি শিওর) এসে খবর দিলেন যে খুনী তাঁর পেশেন্ট। নাম অমুক, ঠিকানা তমুক। ঠিকানায় রেড করতে যাওয়া হল, সাইকোলজিস্ট সমভিব্যাহারে। মহিলার কাছ থেকেই ইনফরমেশন পেয়ে মহিলাকেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া ভালো দেখায় না। গিয়ে দেখা গেল ঠিকানা ভুয়ো।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রাস্তাঘাটে, দোকানপাটে যীশুর পোস্টার সাঁটা হল। বাজার থেকে ফেরার পথে যীশু সে পোস্টারের সামনে পড়ে ছাতা দিয়ে মুখ আড়াল করলেন। সুপারকপেদের একজনের সাইকোলজিস্টের প্রতি কেমনকেমন জাগল, অন্যজন অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রেমের জোয়ারের বালির বাঁধ দেওয়ার অক্ষম চেষ্টা করলেন। ইনফর্মার ফোন করল। স্যার লোকটা তো ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যীশু স্ট্র্যান্ড রোডের একটা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে প্রফেটের মতো ডানা মেললেন। হাওড়া ব্রিজের ভিউ ফাটাফাটি, কলকাতা আক্ষরিক তিলোত্তমা। তারপর যীশু কী যেন করতে বাড়ি থেকে নেমে আরেকবার রাস্তায় বেরোলেন, আবার নির্ঘাত কেউ ফোন করে খবর দিল, অমনি দুই সুপারকপ আড্ডা থামিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যীশুকে তাড়া করলেন। যীশু স্কুটারে, সুপারকপেরা এস ইউ ভি-তে। এইখানে নাকি বাংলা সিনেমার একটা আইকনিক শট তোলা হয়েছে। রিভিউ শুনে দেখতে গেছি বলে ধরতে পেরেছি। ক্যামেরা একটা গাড়ির ভেতর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে গেল। এই একই শট নাকি মন্দারেও ছিল, খালি গাড়ির বদলে অটো। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তারপর যীশু স্কুটার থেকে আর সুপারকপেরা এস ইউ ভি থেকে নেমে পড়লেন। এবার ভরসা এগারো নম্বর। এবার বিশুদ্ধ দৌড়। ক্যামেরায় কলকাতার অলিগলি কবিতার মতো ফুটে উঠল। পুলিসের কলিশনে খাঁচা খুলে পাখি উড়ে গেল, ক্যারিয়ার ভেঙে দুধের ক্যান গড়াগড়ি খেল। রুদ্ধশ্বাস চেজ। যীশুকে ধরতে প্রসেনজিৎ আর অনির্বাণের জিভ বেরোনোর জোগাড়। যীশুকে দেখে সন্দেহ হচ্ছিল লাস্ট দেড় বছর সিঁড়ি বেয়ে একতলা দোতলা করেননি, এদিকে প্রসেনজিৎ তিরিশ বছর নাকি ভাত ছোঁননি। পাঁচ বছরে যদি ফুচকা খান, একটা খান। একপ্লেট না, একটা ফুচকা। একটা, একলা, একাকী ফুচকা। অনির্বাণ অবশ্য একটা ইন্টারভিউতে বলেছেন তাঁর বডি বলিউডি নয়। শোভন-বৈশাখী সহ পরপর পাঁচজন বাঙালি সেলিব্রিটির ফিটনেস ভিডিও দেখার পর ইউটিউবে অনির্বাণের ভিডিওটার রেকমেন্ডেশন এসেছিল। অনির্বাণের বডি যেমনই হোক তাঁর বয়সে জোরে দৌড়নো এমন কিছু কঠিন ব্যাপার না, তাছাড়া আরেকটা ইন্টারভিউতে অনির্বাণ বলছিলেন যে দৌড়তে না জানলেও দৌড়নোর অভিনয় করা যায়। এবং হাসিকান্নার অভিনয়ের মতো দৌড়নোর অভিনয়েরও ভালোখারাপ হয়। শাহরুখ খানের উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, শাহরুখের দৌড়টার মধ্যে একটা স্কিল আছে। আমি সিলিংফ্যানের দিকে তাকিয়ে শাহরুখের দৌড় কল্পনা করার চেষ্টা করেছিলাম। দুটো মনে পড়েছিল। একটা অগ্নিকাণ্ডের ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘দিল সে রে’ গানটায় মনীষা কৈরালার হাত ধরে। দুই, সম্ভবতঃ কভি খুশি কভি গম সিনেমাতেই হবে, দৌড়ে দৌড়ে জয়া বচ্চনের কাছে আসা। নাহ্, অনির্বাণ ইজ রাইট, ভালোই দৌড়োন ভদ্রলোক। বিশ্বসিনেমায় দৌড়ের প্রসঙ্গ উঠলে, বলা বাহুল্য, টম ক্রুজের নাম উঠবে। আমার ব্যক্তিগত একটা ফেভারিট দৌড় সিনেমার পর্দায় দৌড়েছেন শবররূপী শাশ্বত। সিঁড়ি বেয়ে, ড্রামের পাহাড় টপকে, কনটেনারের ছাদ থেকে ছাদে লাফিয়ে। শাশ্বতর দৌড় দেখে আমার ধারণা আমি ভালো দৌড়, বা ভালো দৌড়ের অভিনয়ের শর্তটা ফিগার আউট করেছি। গোটা শরীরটা সন্নিবদ্ধ ভাবে দৌড়য়। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত একই দিকে একই লক্ষ্যে ধাবিত হয়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রিসেন্টলি আমাকেও দৌড়তে হল। নয়ডার ক্ষেতের বর্ডারে দিওয়ালির লাঞ্চ খেতে গিয়েছিলাম। ছোট ছোট দল বেঁধে বড় বড় গরুরা ঘোরাঘুরি করছিল। দোকানের দু'পাশে দিওয়ালি ডেকোরেশন হিসেবে গাছপালা রাখা ছিল। একটা দল তাদের বেশি কাছাকাছি চলে যেতে কর্তৃপক্ষ তাড়া দিলেন, অমনি একটা বড় সাইজের গরু শিং নেড়ে হরিণের মতো লাফ মেরে আমার দিকে ধেয়ে এল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">'থ্রি মেন ইন আ বোট'-এ একটা রসিকতা ছিল যে মেয়েদের কোনও কাজে পাঠানোর থেকে সে কাজ নিজেরাই গিয়ে করে আসা ভালো কারণ মেয়েরা যাবে, যেতে যেতে রাস্তায় গরু এসে পড়বে, তখন সেই তোমাকেই যেতে হবে গরু তাড়াতে। ফালতু এক্সট্রা কাজ। এই জায়গাটা পড়লে আমার একটুও রাগ হয় না কারণ আমাকে যদি আপনি কোনও কাজে পাঠান আর গরু এসে পড়ে, আমি আমার সমস্ত ইগো বিসর্জন দিয়ে, সমানাধিকারের জন্য এত দিনের এত কষ্টের সংগ্রামের মুখে চুনকালি লেপে মাঠ ছাড়ব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এখানে তো কাজটাজ ছিল না। দোকানের খাতায় ওয়েটিং লিস্টে নাম লিখিয়ে রোদ সেঁকছিলাম। এমন সময় গরুর তাড়া। আমি দৌড়বীর নই, অভিনয়েও আশ্চর্যরকম কাঁচা। কাজেই মাথা, ধড়, ডান হাত, বাঁ পা, বাঁ হাত, ডান পা চতুর্দিকে ল্যাগব্যাগ করতে করতে দৌড়তে হল। গলা দিয়ে অনৈচ্ছিক 'বাবাগোওও'-ও বেরিয়েছিল খুব সম্ভবতঃ। রাহুল, 'কিছু করবে না, চাপ নিয়ো না' জাতীয় আশ্বাসের ধার ধেরেছিল, অর্চিষ্মান সাড়ে তিনমিনিট পর অতিকষ্টে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, গরুফরু তো তুশ্চু, ও নাকি ছোটবেলায় দৌড়ে অ্যালসেশিয়ানকে হারিয়েছিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"> যাই হোক, অবশেষে প্রসেনজিৎ আর অনির্বাণ যীশুকে প্রায় ধরে ফেলেছেন, আমি ভাবছি সবে তো সিনেমা শুরু হল, তাহলে কি এটা যীশু নন, যীশুর যমজ ভাই, অমনি রেললাইন। অর্চিষ্মানের দিকে তাকিয়ে 'যাক বাবা' বলতে বলতে না বলতে যীশু লাইন পার হয়ে গেলেন, ঝাঁইঝাঁই করে মেলট্রেন এসে গেল, ট্রেনের এপারে দুই সুপারকপ বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তারপর এক কপের প্রেম হল, প্রেমিকাকে ইমপ্রেস করতে বাইজিবাড়ির ছেলের পান থেকে গোলাপি চিউয়িংগামে শিফট হল, রিলকের কবিতা হল, দুই সুপারকপের মধ্যে আবেগপ্রবণ মারামারি হল এবং যীশু ধরা পড়লেন। মারাও পড়লেন। প্রসেনজিৎকে ফাইন্যাল রিপোর্ট লেখা গছিয়ে অনির্বাণ জয়ার সঙ্গে প্রেম করতে নর্থবেংগলে কাটলেন। আমি ভাবছি, আবাআআআআআর নর্থ বেংগল। ঝাড়গ্রামের দিকটাও খুব রোম্যান্টিক শুনেছি, নায়কনায়িকাকে ওইদিকে পাঠালেও তো পারে। লাস্টে নর্থ বেংগল বাছার কারণটা স্পষ্ট হল, কিন্তু সেটা লাস্টেই উন্মোচন করব। তার আগে হু, হাউ, হোয়াইয়ের পর হোয়াই (২)-এর যে টুইস্টটা উন্মোচিত হল সে প্রসঙ্গে বলি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বলতে গেলে সিনেমার শুরুতে ফিরতে হবে। শুরু মানে একেবারে শুরুতে। উৎসর্গপত্রে। যেটাতে লেখা ছিল (প্যারাফ্রেজ) আগাথা ক্রিস্টি, যিনি আমাকে (পরিচালককে) রহস্য গল্পের এ বি সি শিখিয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে এ বি সি হচ্ছে এ বি সি মার্ডারস্। একলা একটা পিন খুঁজে বার করার থেকে অনেক পিনের মধ্যে থেকে একটা পিন খুঁজে বার করা শক্ত, এ বি সি মার্ডারস-এর সেই থিওরিতেই দশম অবতারের খুনগুলো হচ্ছে। এ বি সি-র চতুর ওয়ার্ডপ্লে এখানে ইস্যু না, ইস্যু হচ্ছে বাক্যের অন্য দুটি শব্দ। আগাথা এবং ক্রিস্টি। ক্রিস্টির থেকে যদি কিছু শেখার থাকে (বা শেখা সম্ভব হয় আদৌ, ওঁর অধিকাংশ ট্রিকই সাধারণ মানুষের পক্ষে শেখা অসম্ভব বলে আমার বিশ্বাস) সেটা হচ্ছে যত বেশি সন্দেহভাজন, তত বেশি পাঠক/দর্শককে ধন্দে রাখার সম্ভাবনা। এখানে সন্দেহ করার ক্যান্ডিডেট দুজন পুলিস, একজন খুনী আর একজন সাইকোলজিস্ট, যে যেচে তদন্তের মধ্যে নিজেকে গুঁজেছে। টুইস্টটা এর পর আন্দাজ করতে না পারলে চিন্তার কথা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আরেকটা ব্যক্তিগত গল্পও এই বেলা গুঁজে দিই। আমি আর বাবা একদিন টিভি দেখতে দেখতে রুটি তরকারি খাচ্ছিলাম। টিভিতে সি আই ডি গোছের কিছু একটা চলছিল। সি আই ডি নাও হতে পারে কারণ উইকি বলছে আটানব্বই সালে সি আই ডি শুরু হয়েছে আর আমার স্মৃতিতে ওই মুহূর্তের আমি ডেফিনিটলি আঠেরোর থেকে কম। হয় স্মৃতি ভুল বলছে নয় প্রোগ্রামটা সি আই ডি নয়। অসুবিধে নেই কারণ আমার বয়স বা অনুষ্ঠানটার সি আই ডি হওয়া কোনওটাই ঘটনাটার পক্ষে অপরিহার্য নয়। অপরিহার্য খালি আমি, বাবা, টিভি, টিভিতে খুনখারাপির সিরিয়াল, খুনী আর পুলিস। এক বা একাধিক খুন হয়ে গেছে, খুনীকে ধরতে পুলিস নাকানিচোবানি খাচ্ছে, আমরা রুটিতরকারি চিবোচ্ছি, এমন সময় একজন নিরীহ চেহারার লোক এসে পুলিসকে বলছে, যদি আপনাদের তদন্তে কোনও সাহায্য হয় তাই এলাম। বাবা বলল, এ খুনী। আমি বললাম, কেন? বাবা বলল, জীবনের একটা সত্য জেনে রাখ সোনা, যে পুলিসের কাছে যেচে আসে সে-ই খুনী হয়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যাই হোক। টুইস্ট উন্মোচন হল। অনির্বাণ চুল ছিঁড়ছেন, কনফিডেন্সের কবচকুণ্ডল চিরে বড় হয়ে ওঠা জনিত যাবতীয় ক্ষত, যাবতীয় আত্মসংশয় নৃসিংহ অবতার হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। এদিকে রিপোর্ট লিখতে বসে প্রসেনজিৎও অসঙ্গতি আবিষ্কার করে অনির্বাণকে পাগলের মতো ফোন করার চেষ্টা করছেন আর এই সব কনফিউশনের মধ্যে জয়া আহসান মেরেছেন ঝাঁপ। হাফ ঝাঁপ, হাফ ওড়া।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গল্প শেষ। এবার প্রতিক্রিয়া। 'রিভিউ' তো ছেড়েই দিন, প্রতিক্রিয়া দিয়েও পার পাওয়া যাচ্ছে না আজকাল। এই অবান্তরেই কোন একটা সিনেমার প্রতিক্রিয়ার নিচে একজন বলেছিলেন, অসম্ভব মৃদুকণ্ঠে, যে সিনেমার ভালোমন্দ কি শুধু গল্পে? এ রকম একটা সুপার টেকনিক্যাল মাধ্যম, এত রিচ হিস্ট্রি, ফিলোজফি, জিওগ্রাফি, সেগুলো না জেনেই মুখ খোলা...আমি তাঁর মুখের কথা কেড়ে নিয়েই বলেছিলাম, একেবারে ঠিক। কিন্তু আমি যেহেতু কিছুই জানি না, তাই আমার মতামতে পাত্তা দেওয়ারই দরকার নেই। আমি তো উল্টে আরওই বলব, এই সিনেমাগুলো যে এখনও দেখি এবং দেখে আবার তিনহাজার শব্দের হ্যাজ নামাই তাতেই আরও প্রমাণ হয় যে আমাকে সিরিয়াসলি নেওয়া কতখানি সময় নষ্ট। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অনেকের রিভিউতে শুনলাম দশম অবতার তাঁদের ভালো লাগেনি কারণ তদন্তের অংশটা ভালো করে দেখানো হয়নি। অনেকের বোরিং লেগেছে। তার কারণ হিসেবে আমার মনে হল হয়তো এটা দায়ী হতে পারে যে ক্যারেকটারদের ইনট্রোডিউস করার জন্য বড় বড় সিন রাখা হয়েছে যেগুলোর গল্পের সঙ্গে কোনও সম্পর্কই নেই। যেমন ধরা যাক, বিজয় পোদ্দারের ক্লাস নেওয়ার অংশটা। তারপর অফিস যাওয়ার পথে গুলি ছুঁড়ে ট্র্যাফিক জ্যাম ছাড়ানোর দৃশ্যটা। একদিক থেকে এই দৃশ্যগুলো কাজের কারণ ক্যারেকটার বিল্ডিং হচ্ছে, কিন্তু আবার আরেকদিক থেকে অকাজের কারণ গল্প কিছুই এগোচ্ছে না। এফিশিয়েন্ট সিন হচ্ছে সেগুলো যেগুলোতে দুটো উদ্দেশ্যই সাধিত হয়। তারপর, ক্লাইম্যাক্সে দড়াম করে হিরোহিরোইনকে প্রাকবিবাহ মধুচন্দ্রিমায় পাঠানোর সিদ্ধান্তটাও অনেকের অদ্ভুত লাগতে পারে। সে নিয়েও আমার মনে হয় না অত চুলচেরাচিরির কিছু আছে। স্টুডিয়োর/শহরের বদ্ধ পরিবেশে একটানা শুটিং সুপারহিরোহিরোইনদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, তাছাড়া পাহাড়ে না গেলে পাহাড় থেকে ঝাঁপ মারার (হাফ ঝাঁপ, হাফ ওড়া) শট নেওয়া হবে কী করে। আমি অবশ্য একটা বিকল্প কল্পনা করেছি। সমুদ্রে নিয়ে গিয়ে জয়াকে ঝাঁপ দেওয়ালেও হত। জয়ার পানপাতা মুখ জলে ভেসে আছে, এর সঙ্গে বিসর্জনের মেটাফরটা যেত ভালো। যাই হোক, এই সব সিদ্ধান্ত আলটিমেটলি পরিচালকের।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমি মনে করি না দশম অবতার ভালো না মন্দ সে সব বিচারের জন্য এগুলো আদৌ ধর্তব্য। আইনস্টাইন বলেছিলেন না, আমরা মাছকে বলি সাইকেল চালাও তারপর, ধুস তুমি জিনিয়াস নও বলে মাথা নাড়ি, দশম অবতার যাঁদের খারাপ লাগছে তাঁদের বিচারের মাপদণ্ডও ওই গোত্রের। তাঁরা কোনদিন বলে বসবেন, শচিন তেন্ডুলকরের মতো বাজে দাবাড়ু দুনিয়াতে দুটো জন্মায়নি। কিংবা কুন্তলা? আরে ও তো একটা আগাপাশতলা ফ্লপ সাঁতারু।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"> সে সব যদি না বলেন তাহলে দশম অবতারকেও খারাপ সিনেমা বলা যাবে না। দশম অবতার কেমন হয়েছে বিচার করতে হলে আগে জানতে হবে দশম অবতার কী হতে চেয়েছিল। এক, বাংলা সিনেমার প্রথম কপ ইউনিভার্স হতে (শুনলাম এই ইউনিভার্সে আরও মিনিমাম দুটো সিনেমা তৈরি হবে) দুই, প্রসেনজিৎ অনির্বাণের ব্রোম্যান্সে টলিউডের নায়িকাদের, বিশেষ করে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের বুকে চাক্কু বিঁধিয়ে দিতে (একটিইউটিউব ভিডিওর শিরোনামে দেখেছি), তিন এবং সর্বোপরি, প্রসেনজিৎকে দ্বিতীয় পুরুষ সিনেমায় পার্ট না দেওয়ার প্রায়শ্চিত্ত করতে। প্রসেনজিৎ এমন ক্ষুধিত নায়ক যে দ্বিতীয় পুরুষ রিলিজ করা এবং রিলিজ করে বাংলা সিনেমার তৃতীয় আইকনিক থ্রিলার হয়ে ওঠার পর সৃজিত মুখার্জিকে ফোন করেন। এবং জানতে চান, এই সিনেমায় প্রবীর রায়চৌধুরী কেন নেই। তখন পরিচালক মাথা চুলকে বলেন, আসলে বাইশে শ্রাবণে প্রবীরবাবু নিজেই নিজের মাথায় গুলি মেরেছেন দেখানোটা একটু প্রিম্যাচিওর হঠকারিতা হয়ে গেছে। নো প্রবলেম, একটা প্রিকোয়েল বানালেই হবে। পরিচালক বুদ্ধিমান, ঠেকে শিখেছেন, ট্র্যাজিক এন্ডিং-এর লোভে পড়ে দশম অবতারে কোনও হিরোকে বলিদান দেননি। কাজেই এর পরের সিনেমাগুলো সিকোয়েল বানালেই চলবে। যদি না যীশু ফোমোতে ভোগেন আর ফোন করে বেঁচে ওঠার বায়না করেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">উপরোক্ত প্রতিটি টু ডু-তেই দশম অবতার সাফল্যের সঙ্গে টিক মারে, কাজেই দশম অবতারকে খারাপ সিনেমা বললে আপনার হিংসুটেমোই প্রকাশ পাবে। দশম অবতার একটি আদ্যন্ত সফল এবং আগাপাশতলা সার্থক সিনেমা। রিভিউতে বা প্রতিক্রিয়ায় যে যাই বলি না কেন, আসলে আমাদের এগুলোই ভালো লাগে, কারণ আমরা টিকিট কেটে এগুলো দেখতে যাই, দেখে এসে এগুলো নিয়ে তিন হাজার শব্দের হ্যাজ নামাই। নিজের পদবীঘটিত চুটকিটা বিজয় পোদ্দার যতক্ষণ ধরে চালিয়ে যান এবং যতক্ষণ ধরে চুটকিটা চলে ততক্ষণ ধরে নেহরু প্লেস পিভিআর-এর তেত্রিশজন দামড়া দর্শক যে রেটে কুটোপাটি হন, তাতে প্রমাণ হয় যা হচ্ছে ঠিকই হচ্ছে, যা চলছে তাই চলা উচিত। উই ডিজার্ভ দ্য চুটকিজ অ্যান্ড সংস্কৃতি উই গেট।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"><b><br /></b></div><div class="p1"><b><br /></b></div><div class="p1"><b>রক্তবীজ</b></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভারতবর্ষের বাঙালি প্রেসিডেন্ট বাড়ির দুর্গাপুজো অ্যাটেন্ড করতে এসেছেন। সেই গ্রামেই (কিংবা পাশের গ্রামে) ইসলামিক জঙ্গিরা বোমা বাঁধার ঘাঁটি গেড়েছে, দশমীর দিন ফাটানো হবে। বানাতে বানাতেই বিস্ফোরণ। লোক্যাল পুলিস (কাঞ্চন মল্লিক অ্যান্ড গ্যাং) তদন্তে এলেন। কাঞ্চন পুলিস হলেও কমিক রিলিফ, তদুপরি কিউট। কথায় কথায় সুর করে "বাঁকাচাঁআআদ" বলেন। ব্যাপার সিরিয়াস, কাঞ্চনের কম্ম নয় বুঝে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হেভিওয়েট বাইকে চড়িয়ে মেজ পুলিস মিমি চক্রবর্তীকে পাঠালেন। মিমির ফিগার যতখানি মেয়েদের মতো, বাকিটুকু ততখানিই মেয়েদের মতো নয়। হেভিওয়েট বাইক তো বললামই। মুখের ভাষা শুনলে সিগমা মেলরাও কানে আঙুল দেবেন। ভায়োলেন্সের কল্পনায় জিভের জল সুরুৎ টানেন। বিয়েটিয়ের কথা উঠলে “আহ্ মা, আবার শুরু করলে” বলে ফোন কেটে দেন। এমনকি কোনও কোনও সিনে তো ছেলেদের থেকেও বেশি ছেলেদের মতো। সকালবেলা মর্নিংওয়াকে গিয়ে বড় পূলিস আবীর চ্যাটার্জিকে দৌড়ে হারিয়ে দেন। এবং তুলে ফেলেন। খালি বাচ্চার কষ্ট সইতে দেখলে নিজেকে সামলাতে পারেন না, সে ইসলামিক জঙ্গির বাচ্চা হলেও, জড়িয়ে ধরেন। পুলিসই হও, বাইকই চালাও আর প্যান্টে গুঁজে শার্টই পর, মেয়ে হয়ে জন্মেছ যখন কারও চোদ্দপুরুষের সাধ্য নেই মাতৃত্বকে চাপা দেওয়ার। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দেখুন, এ গল্পও স্পয়েল করার কিছু নেই। বোমা তো আর ফাটবে না। ইসলামিক জঙ্গিরা যত বদের বাসাই হোন না কেন, হিন্দুস্তান এবং হিন্দুদের যত খতরোঁতেই রাখুন না কেন, তাঁদের উদ্দেশ্য অ্যাকচুয়ালি সিদ্ধ হবে, ভাসানের প্রসেশনে বোমা অ্যাকচুয়ালি ফেটে যাবে, মাদুর্গার উইগ চড়বড় করে জ্বলবে, লক্ষ্মীসরস্বতীর সোনার অঙ্গ পুড়ে ছাই হবে, গনেশের শুঁড় খসে পড়বে, কার্তিক গলে ময়ুরের সঙ্গে মিশে যাবেন, প্রেসিডেন্ট ছত্রাকার হয়ে পড়বেন, ফাইন গরদের ধুতি দিয়ে পার্শিয়ালি ঢাকা নিতম্ব (আমি বানাচ্ছি না, রাজীব গান্ধীকে ওই দেখেই শনাক্ত করতে হয়েছিল, আনন্দবাজারের ফার্স্ট পেজে সে ছবিও বেরিয়েছিল) ছাড়া বাকি কোন অঙ্গ কোথায় ছিটকে পড়েছে খুঁজে পাওয়া যাবে না, এদিকে বিধর্মী, ম্লেচ্ছ টেররিস্টরা গড়াগড়ি খাওয়া পুজোর ঘট দিয়ে রক্ত তুলে তুলে ঢকঢক খাবে আর ধাঁইধাঁই নাচবে, এই সব দেখালে পুজোর পুরো মজা কিরকিরে। পুজোতে বই রিলিজ করিয়ে, এত প্রোমোশন করে, সতীর্থ পরিচালকদের নাম না করে চিমটি কেটে, ইউটিউবে, পডকাস্টে নিজেদের স্ট্রাগলের গল্প বলে, ফেস্টিভ্যালে কারা যায় জনগণের ম্যান্ডেটই আমাদের প্রাইজ বলে বলে মুখে রক্ত তুলে ওঁরা এ সব দেখাতে নামেননি। কাজেই চিন্তা করবেন না। পুজোর একটা গাঁদাফুলের আধখানা পাপড়িও এদিক থেকে ওদিক হবে না, প্রেসিডেন্টের টাকের একটি অদৃশ্য চুলও এদিক থেকে ওদিক হবে না, মাদুর্গার শাড়ির একটি প্লিটও ঘেঁটে যাবে না। তিনি সপরিবারে সসম্মানে ঢাকঢোল সহযোগে বিদায় যাবেন। ক্ষমতাসীন লোকেরাও ক্ষমতাতেই থাকবেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রক্তবীজের একটা বেসিক স্ট্যান্ড হচ্ছে ক্ষমতার প্রতি মমতা। প্রেসিডেন্ট ভালো। প্রেসিডেন্টের দিদি ভালো। বনেদী পরিবার ভালো। উঁচু বর্ণ ভালো। ছোট পুলিস ভালো। মেজ পুলিস ভালো। বড় পুলিস ভালো। বড় পুলিস আবীরের খালি একটা দোষ ছিল, সিগারেট খাওয়া, লাস্ট সিনে সেটা থেকেও মুক্ত হলেন। অর্চিষ্মানের চোখ এড়িয়ে দুই হাতে টিকটিকি করে বসে ছিলাম, প্লিজ, প্লিজ, যেন সিগারেটের প্যাকেটটাকে ঘৃণাভরে রাজপথের ঝাঁট দেওয়া রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে যাওয়ার সোয়্যাগটুকু আবীরকে শিবুবাবু অ্যালাউ করেন, আমার আশংকা সত্যি করে আবীর গুটগুট করে একটা ডাস্টবিনের কাছে গিয়ে সেখানে প্যাকেটটা ফেললেন। হায় রে বাঙালি হিরো, মুগ্ধ পরিচালকেরা তোমাকে চিরকাল গুড বয় করেই রেখে দিল, হট বয় আর হতে দিল না। </div>
<div class="p2"><br /></div>
<div class="p1">সিনেমা শেষ হওয়ার পর জেনেরালি আমি সিটে বসে থাকি, এত লোক কষ্ট করে বানিয়েছেন তাঁদের নামটা অন্ততঃ পড়া বা পড়ার চেষ্টা করা কর্তব্য মনে হয়। অর্চিষ্মান তাড়া দিতে থাকে, ওঠো ওঠো, অটো বুক করতে হবে, ওদিকে আবার গেট বন্ধ হয়ে যাবে। সেদিন আমি ওঠার তোড়জোড় করছি, পাশের লোকের সাড়াশব্দ নেই। কী গো যাবে না, বলে খোঁচা মেরে দেখি অর্চিষ্মান আতংকিত মুখে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও তাকালাম। একপাশে নাম চলছে, একপাশে খবরের কাগজের কাটিং সরে সরে যাচ্ছে। প্রণব মুখার্জি মাথার পেছনে হাত দিয়ে এলিয়ে বসে আছেন। খাগড়াগড় ব্লাস্ট। আরও কত রকম ব্লাস্ট। ইসলামিক সন্ত্রাসের ডকুমেন্টেশন। বাংলায়। বাংলার পশ্চিমে, এগোতে এগোতে, উঠতে উঠতে কাশ্মীর। ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে আফগানিস্তান, ইরান (আমার এক্স্যাক্ট জায়গাগুলো মনে নেই, স্বীকার করছি)। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান বলল, মানেটা কী? আমি বললাম, উফ, মানে আবার কী। ওই যে আবীরের ধপধপে শার্টের ধপধপে হাতা বেয়ে দু'ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ল দেখলে না, সেই থেকে আবার কোটি কোটি টেররিস্ট গজাবে। বছরের পর বছর ধরে গজিয়েছে, গজাচ্ছে এবং আরও গজাবে। শুধু সিনেমায় না, বাস্তবে। তোমার পাছে বিশ্বাস না হয় তাই শিবুনন্দিতা হাতেকলমে প্রমাণ দেখাচ্ছেন। এবং শুধু বর্ধমানে না, ভারতে না, আফগানিস্তানে না, যেখানে যেখানে এদের একফোঁটা রক্তও পড়বে, সেখানে সেখানেই এরা পিলপিল করে গজাবে কারণ এরা এ রকমই। ওঠো ওঠো, অটো পাওয়া যাবে না্ ওদিকে আবার গেট বন্ধ হয়ে যাবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রক্তবীজ বানানোর আসল কারণ হচ্ছে এটাই। ওরা কেমন সেটা আন্ডারলাইন করে, ঘষে ঘষে, চোখের পাতা টেনে ধরে বুঝিয়ে দেওয়া। ওরা টেররিস্ট। ওরা গরিব। ওরা কালো। ওরা অশিক্ষিত। ওরা হাফ জোম্বির মতো, প্রতিশোধের স্লোগান বলতে বলতে জীবন কাটায়। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আর ওদের কাউন্টারে আমাদের যে রিপ্রেজেন্টেশনটা রক্তবীজ তুলে আনে সেটাই আসল খেলা। আমরা প্রেসিডেন্ট। আমরা ব্রাহ্মণ। আমরা ফর্সা। আমরা ইংরিজিতে শশী থারুর, বাংলায় সুনীতিকুমার। দৃশ্যের জাক্সটাপোজিশনও অব্যর্থ। এই সিনে ওরা রক্তলটপট খুন সেরে উঠতে না উঠতে পরের সিনে আমাদের পুজোর শাঁখ, ধূপের ধোঁয়া, ভিক্টর ব্যানার্জির স্মিতমুখে পারফেক্ট উচ্চারণে মন্ত্রোচ্চারণ। ওখানে বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে চামড়া ফেটে লাল থকথকে মাংস, এখানে প্রেসিডেন্টের ফর্সা পা মাটিতে পড়লে চোখ সরু করে কনফার্ম করতে হয়, পড়ছে তো? নাকি হাফ ইঞ্চি ওপর দিয়েই... ওরা এমন খারাপ, যে দেশের খাবে সে দেশেরই সর্বনাশ করে, আমরা এমন ভালো যে যারা আমাদের দেশেরই খেয়ে আমাদের দেশেরই সর্বনাশ চায় তাদেরও ক্ষমা করে দিই। ভালো মুসলমানদের থেকে পুজোর সামগ্রী কিনি, বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে পুষি, হুইলচেয়ারে বসে নতুন জামা বিতরণ করি। 'যে দেশেতে তরুলতা সকল দেশের চাইতে শ্যামল' -এর সিমিলার আবেগে এই সিনেমায় একটা সংলাপও আছে, এ দেশে "ক্ষমতাবানেরা ক্ষমা করতে জানে।" তা বলে কি আর যা খুশি ক্ষমা করে দেব? সীমার মধ্যে ত্যাঁদড়ামি করলে ক্ষমা করব। সীমা পেরোলেই "যদা যদা হি ধর্মস্য" স্লোগান দিতে দিতে ত্রিশূল হাতে লাফিয়ে পড়ব। </div><div class="p1"><br /></div>
<div class="p1"> লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, যেখানে ওদের মেয়েরা অ্যাদ্দিনেও বোরখা কেটে বেরোতে পারছে না, আমাদের বালিকারা সেই পঞ্চাশ বছর আগে থেকেই ফায়ারব্র্যান্ড ফেমিনিস্ট, সমাজটমাজকে কাঁচকলা দেখিয়ে নিজে নিজেই চণ্ডীপাঠের এজেন্সি নিয়েছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বলেছিলাম হ্যাপি এন্ডিং। অ্যাকচুয়ালি না। ঠাকুর দেখার মজা কিরকিরে হবে না, কিন্তু যতখানি বুকধুকপুক মিশলে এই পাঁচদিনের আমোদ আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে, ঠিক ততটুকু মিশিয়ে তবেই হলের দরজা খুলবে। ওই দু'ফোঁটা রক্ত, আমার বাড়ির পাশেই পড়ল কি? আমি যতক্ষণ পপকর্ন চিবোতে চিবোতে সিনেমা দেখছিলাম পাশের সিটেই কি কোনও রক্তবীজ...? </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দুটো সিনেমা দেখলে তুলনা করতেই হয়। সবাই করছে। কালেকশনের অ্যামাউন্টে কে কত জল মেশাচ্ছে সে নিয়ে টুইটারে কুরুক্ষেত্র বেধে গেছে। আমারও একটা মতামত না দিলে ভালো দেখায় না। আমার মতে, রক্তবীজ দশম অবতারের থেকে অনেক বেশি এন্টারটেইনিং। অনেক টানটান, গল্প ফাস্ট মুভ করে, কিছু কিছু জায়গা তো পজিটিভলি থ্রিলিং। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তবু রক্তবীজের পাশে আমি দাঁড়াতে পারলাম না। সমস্যাটা রক্তবীজের না। হামি, পোস্ত, বেলাশেষে, বেলাশুরু, প্রাক্তন এবং রক্তবীজ দেখার পর ক্লিয়ার যে আমার সঙ্গে উইন্ডোজ প্রোডাকশনের অর্থাৎ শিবুনন্দিতার একটা খুব গোড়ায়, গভীরে, অমিল আছে। ওঁরা যত টানটান সিনেমাই বানান না কেন, যত এন্টারটেইনিং, যত শৈল্পিক, যত পপুলার, ব্যাপারটার সঙ্গে আমার একটা নীতিগত ঝামেলা থাকবে। দৃষ্টিগত ফারাক থাকবে। সে সব ফারাক অগ্রাহ্য করে আর্ট অ্যাপ্রিশিয়েট করা যায় কি না সে নিয়ে আমার থেকে অনেক বুদ্ধিমান লোক অনেক কথা বলে গেছেন। আমি শুধু বলছি যে আমি অত পরিণত দর্শক না হতে পারি, এ সব সিনেমাও সে লেভেলের আর্ট না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দশম অবতার বোরিং এবং বাচাল। রক্তবীজ বিষাক্ত। আমার ভোট দশম অবতারের পক্ষে রইল। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com26tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-51594779527176224782023-11-01T20:52:00.012+05:302023-11-23T20:00:22.101+05:30পুজো ২০২৩ <div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সপ্তমী</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কোঅপারেটিভ প্যান্ডেলে প্রতি বছর বিজলী গ্রিল স্টল দেয়। আজ বিলম্বিত ব্রেকফাস্টে রাধাবল্লভী ওখানে খাব। তারপর কিছু কেনাকাটি আছে। নিজেদের, তার থেকেও জরুরি দুটো বাচ্চার জামা কেনা। এত খারাপ প্ল্যানিং আমাদের যে পুজোর আগে কিনে ওঠা যায়নি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কোঅপারেটিভের প্যান্ডেল খুবই কায়দার আর জমকালো (সি আর পার্কের তুলনায় কায়দার, কলকাতার তুলনায় নয়) কিন্তু আমাদের ঠিক ফ্যামিলিয়ার ফিল হয় না। তা বলে বাদ দেওয়া যায় না। সারাবছর তো নিজেদের ফিলিংসকে প্রাধান্য দিয়েই মরলাম, এই ক’দিন মাদুর্গা অ্যান্ড কোম্পানির ফিলিংসকে প্রাধান্য দিয়ে ঘোরাঘুরি করা দরকার।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্রতিমার সামনে ভিড়। নর্ম্যাল সময় ভিড় দেখলে দৌড়ই, কিন্তু এই কদিন ভিড় দেখতে বা ভিড়ের অংশ হতেই রাস্তায় বেরোনো। ফাঁক গলে গলে যথাসম্ভব সামনে গেলাম। মাথায় নতুন গামছা বেঁধে ঠাকুরমশাই পুজো করছেন। কাকিমাজেঠিমারা (অর্থাৎ আমার বয়সীরা) শাড়ির ওপর নতুন গামছা পেঁচিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। তাঁদের একজনকে ঠাকুরমশাই বলছেন, অমুকটা জোগাড় আসতে বলুন, না হলে নাকি ওঁর মনে শান্তি হচ্ছে না। না হওয়াই স্বাভাবিক। পৃথিবীর কোনও পুজোর আয়োজনেই কোনও পুরোহিতের কোনওদিন শান্তি হয় না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মাইকে টোকা পড়ল। হ্যালো হ্যালো চেক চেক ওয়ান টু থ্রি। একজন পাজামাপাঞ্জাবী পরা লোক গলা ঝেড়ে বললেন, মহাসপ্তমীর শেষ অঞ্জলি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে। আপনারা সবাই মাঠ থেকে প্যান্ডেলে চলে আসুন। আমি আর অর্চিষ্মান তাকাতাকি করলাম। লাস্ট কবে অঞ্জলি দিয়েছি মনে নেই। কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে সেটা একটা কনসার্ন। “কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে” লাইনটা অর্থহীন। ফাংশান সন্ধেবেলা থাকলে সকাল থেকে ওই বাক্যটা পাড়া কাঁপিয়ে মাইকে বলে যাওয়া হত। তবে আমাদের তাড়া নেই। ঢোকার আগে দেখেছি বিজলী গ্রিলে এখনও পেঁয়াজ কাটা চলছে। তাছাড়া এ তো আর মফঃস্বলের মুখমোছা পাড়া নয়, এখানে প্রফেশনালিজম বলে একটা বস্তু আছে। সে জন্যই হয়তো মিনিট সাতেকের মধ্যে অঞ্জলি শুরু হল। তার মধ্যে আমরা জুতো খুলে রেখে এলাম। ঘাড় পাতছিই যখন ভালো করে পাতাই ভালো।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জুতো খুলে আসা আর অ্যাকচুয়াল অঞ্জলি শুরু হওয়ার মধ্যে যা যা ঘটার সে সব ঘটল। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো সবাই শুনছে দু’নম্বরে তারকেশ্বর ঢুকছে, একজন থাকবেই যে অ্যানাউন্সমেন্টের ইকো ফুরোতে না ফুরোতে ঘাড়ের কাছে ফিসফিস করে বলবে, ব্যান্ডেল ঢুকছে বুঝি? এক নম্বরে? এখানেও সেম কেস। ঘোষণা চলছে, তার মধ্যে টেন্স গলায় লোকজন জিজ্ঞাসা করছে, কী বলল দাদা, অঞ্জলি শেষ হল না শুরু হচ্ছে, কততম রাউন্ড। এর পর আর ক'বার হবে। এটা কি সপ্তমীর অঞ্জলি নাকি অষ্টমী পড়ে গেছে। আচ্ছা আপনার কি মনে হয় শুরু হওয়ার আগে আমি চট করে বাড়ি থেকে জামাটা পাল্টে আসতে পারি। অর্চিষ্মানকে দেখলে একটা ভ্রম হয় যে এ লোকটার ব্লাড প্রেশার আজীবনের মতো নিচু তারে বাঁধা, শত টানাটানিতেও চড়বে না, কাজেই সবাই সব প্রশ্ন এসে অর্চিষ্মানকেই করছে। অর্চিষ্মান খুব শান্ত গলায় সে সব প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমি অন্যদিকে দেখছিলাম। সামনের সারিতে পুত্রকন্যা জামাইবউ নাতিপুতি এবং মাতৃয়ার্ক। মাতৃয়ার্ক উতলা মুখে হাত নেড়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। কুড়ির আশেপাশে একটা মেয়ে, বুকে কর্মকর্তার ব্যাজসাঁটা, এগিয়ে এসে ঝুঁকে পড়ে জানতে চাইছে ব্যাপারটা কী। কান খাড়া করলাম। পুজা চঢ়ানা হ্যায়। স্পেশাল পুজো। স্পেশাল আশীর্বাদ। বাকিদের থেকে বেশি নেকনজর। মেয়েটা একটা হলুদ পোস্টইট আর পেন নিয়ে এসেছে, এখানে নাম লিখে দিন। মাতৃয়ার্ক একমুহূর্ত থমকালেন। বাংলা নেহি আতি। মেয়েটা বলছে, আপনি হিন্দিতে লিখুন। আমরা পুজো দিয়ে দেব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"> আড়ি পাততে গিয়ে ফুলবেলপাতা মিস হয়ে গেছে। ক্রাউডসার্ফিং করতে করতে ক্রমশঃ দূরে চলে যাওয়া ঝুড়ি থেকে একটা সিংগল গাঁদা নিয়ে আমার হাতে ঠুসে দিলেন পাশের ভদ্রলোক। অর্চিষ্মানের হাতের ফাঁক দিয়ে সাদা হলুদ সবুজের মেডলি। অন্ততঃ একটা বেলপাতা যদি ছিনতাই করা যায় ভেবে হাত খুলে দেখি মোটে একটাই বেলপাতা। একটা পাতা ছিঁড়ে নেওয়ার আইডিয়া মাথায় এসেছিল, তারপর সংশয় জাগল তিনটে অক্ষত পাতা না থাকলে অঞ্জলি এফেক্টিভ হয় কি না হয়। দুজনেরই আধখ্যাঁচড়া হওয়ার থেকে বাড়ির একজনের ফুল পুণ্য হওয়া ভালো। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মাইকে 'ওম্' ধ্বনিত হল। তাড়াতাড়ি মন ঘোরালাম। মন্ত্র খুবই সোজাসাপটা। মানুষের সঙ্গে গিভ-এর যে ভড়ংটা করতে হয় সে সব ত্যাগ দিয়ে কেবলই টেক টেক টেক। অবশ্য জগতের জননীকে আমার তরফ থেকে কীই বা দেওয়ার থাকতে পারে। মনপ্রাণ দিয়ে চাইলাম। মুদ্রাং দেহি, ধনং দেহি-র জায়গাটায় অর্চিষ্মানকে কনুইয়ের ঠেলা দিতে গিয়ে দেখি ও-ও আমাকে কনুইয়ের ঠেলা দিচ্ছে। যশং দেহি বলার সময় শরীরের সমস্ত রক্তবিন্দুর মনোযোগ সংহত করলাম। আর কিচ্ছু যদি নাও দাও, ফেমাস করে দাও মা। পুত্র চাওয়ার জায়গাটায় বললাম নট অ্যাপ্লিকেবল। বলিদান, গোব্রাহ্মণ ইত্যাদির বেলা বললাম, আই অ্যাম নট আ পার্টি টু দিস। ঝুড়িতে অঞ্জলির ফুল ফেরত চলে গেল, ফ্রেশ ফুলের ঝুড়ি এল। তক্কে তক্কে থেকে একটা সাদা ফুল একটা বেলপাতা নিলাম। এই করে তিন রাউন্ড সমাপ্ত হল। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একটু পরে অটো চড়ে যেতে যেতে অর্চিষ্মান ছিদ্রান্বেষীর মতো খুঁজতে বসেছিল কী কী চাইতে মন্ত্ররচয়িতারা ভুলে গেছেন। আচ্ছা ওটা চেয়েছিল? বললাম, চেয়েছিল। সেটা? সেকেন্ড রাউন্ডের প্রথমেই তো চাইল মনে নেই। তারপর বললাম, এরা সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি ধরে চাইতে চাইতে চাওয়াটাকে পারফেক্ট করে ফেলেছে, ভুল ধরতে পারবে না। অর্চিষ্মান হেরে যাওয়া মুখ করে অটোর ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অঞ্জলি শেষ হল। যে ভদ্রলোক প্রথম রাউন্ডে আমাকে গাঁদাফুল সাপ্লাই দিয়েছিলেন, হইহই করে অঞ্জলি দিচ্ছিলেন। অর্চিষ্মান যেমন কেউ যেন দেখে না ফেলে মুখ করে দিচ্ছিল, সে রকম না। ঝুড়িটুড়ি পাসটাস করছিলেন, জোরে জোরে মন্ত্র পড়ছিলেন। তিনি শান্তিজল নেওয়ার আগেই চলে যাচ্ছেন দেখে পিছু ডেকে ফেললাম, আরে শান্তিজল নেবেন না? অর্চিষ্মান বলল, ওরে বাবা কুন্তলা, তোমার কী? আমি বললাম, আহা যদি পরে মনে পড়ে আফসোস হয়? অর্চিষ্মান বলল, হবে না। হয়তো ভদ্রলোকের জলে অ্যালার্জি। আমি হাঁ করে থেকে নিজের শান্তিজলে কনসেন্ট্রেট করলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বিজলী গ্রিলের বাবুদের পেঁয়াজ কাটা শেষ হয়নি। বাঙালির এই জন্য কিছু হবে না। তিনটে দোকান পেরিয়ে রূপসা আহার আর্লি বার্ডের ফায়দা তুলছে। উঁকিঝুঁকি মেরে রাধাবল্লভীর যা সাইজ দেখলাম, এক প্লেটেই হয়ে যাবে আমাদের। মেনুতে লেখা আছে রাধাবল্লভী আলুরদম, কিন্তু তখনও আলুরদম নামেনি, লুচি তরকারির তরকারি দিয়েই খেতে হবে। তাই খেলাম। দুটোই ভালো ছিল। অর্চিষ্মান একটা ফিশ ফ্রাই নিল। সেটাও নাকি ভালো।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তবে খারাপ কি আর হয় না। পাশের দোকান থেকে অর্চিষ্মান বান্টা নিয়ে এল। কতদিনের বাসি লেবু চিপেছে কে জানে, বান্টা হয়ে গেছে করলার জুস। অর্চিষ্মান দুটো গ্লাসই নীল ড্রামে ফেলে এল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রাধাবল্লভীটা খারাপ তেলে ভেজেছিল মনে হয়, শপিং মলে ঢুকতে ঢুকতে কেমন শরীর খারাপ করতে লাগল, কফি শপে ঢুকে বসলাম। বসে 'একে দেখো, তাকে দেখো' করতে করতে এক ঘণ্টা কেটে গেল। 'সর্বনাশ' বলে দৌড়ে যা যা কেনার কিনে নিলাম অটো ডেকে বাড়ি চললাম। যেটা মাথায় ছিল না সেটা হচ্ছে এই পাঁচদিন সি আর পার্কে ঢোকা বেরোনোর পঁচানব্বই শতাংশ রাস্তা বন্ধ, অটোটা বিশ্ব ঘুরে, নর্ম্যাল ভাড়ার ডবল ভাড়া তুলে, অলকনন্দার মোড়ের ব্যারিকেডের সামনে নামিয়ে চম্পট দিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ব্যারিকেডের সামনে বাইকওয়ালারা বিনতি করছেন, এমারজেন্সি হ্যায়, যানে দিজিয়ে, ততোধিক বিনীত স্বরে পুলিস বলছেন, অসম্ভব। এক্সকিউজ মি, সরি বলতে বলতে ব্যারিকেড গলে বাড়ির দিকে দৌড়তে লাগলাম। কুড়ি মিনিটের মধ্যে নেহরু প্লেসের পি ভি আর-এ দশম অবতার-এর শো। বাড়ি গিয়ে ব্যাগ রেখে কালকাজী পর্যন্ত হেঁটে যেতে হবে অটো নিতে। সে রাস্তাতেও উত্তাল জ্যাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সিনেমা শুরু হওয়ার তিরিশ সেকেন্ড আগে যে হাঁপাতে হাঁপাতে সিটে বডি ফেলতে পারলাম, নির্ঘাত সকালের অঞ্জলির কেরামতি। সিনেমা কেমন, কী বৃত্তান্ত সে এখন থাক। গত কয়েকদিনে আরও একটি সাড়া ফেলা বাংলা সিনেমা দেখেছি, পরের কোনও পোস্টে দুটো নিয়েই লিখব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ফেরার পথে ডি ব্লকে ঢুকেছিলাম। রাত গভীর। ভাঙা হাট। ম্যাজিক শো শুরু হচ্ছিল। টুপি থেকে রুমাল বেরোল, আয়না ফুঁড়ে পায়রা। খানিকক্ষণ বসে বাড়ি চলে এলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অষ্টমী</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কমলার সামনে উল্টোদিক থেকে আসা একটা অটোর ভেতর অশোকাঙ্কুর, অপরাজিতা, জ্যোতিষ্মান। আমরা জোরে জোরে হাত নাড়লাম। ওরা সি আর পার্কে ঠাকুর দেখতে এসেছে। কাল সন্ধেবেলা আমরা যখন দশম অবতার দেখছিলাম, পৃথিবীর যত চেনা লোক সি আর পার্কে এসে উপস্থিত। কাকিমাকে নিয়ে রাহুল এসেছিল। অর্চিষ্মানের অফিসের গ্রুপ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ভালো লেগেছে ওদের? যেন সি আর পার্কের পুজো খারাপ লাগলে আমার পার্সোন্যাল দায় থেকে যাবে কিছু। অর্চিষ্মানের সহকর্মী সুদর্শন বলেছে, ভালো লেগেছে, কিন্তু এত বাঙালি! দিল্লিতে বাঙালি আছে জানা ছিল ওর, কিন্তু এত বাঙালি, যেদিকে তাকাও স্বর্গমর্ত্যপাতাল ফুঁড়ে পিলপিল করে বেরিয়ে আসা বাঙালি, তাদের বাংলায় কলকলানি দেখেশুনে সুদর্শনের মাথা ভোঁ ভোঁ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সুদর্শন আবার খাদ্যরসিক। ভীমেশ্বরার রেকো ও-ই দিয়েছিল। বলেছে, ফুড ইজ গুড। অনেক কিছুই খেয়েছে তবে ওর সব থেকে ভালো লেগেছে, ওই যে যেটা ফ্রায়েড। অর্চিষ্মান বলেছে, ফ্রায়েড তো সবই। তখন বলেছে, না না ওই যে ভেতরে আণ্ডা দেওয়া চৌকোমতো ফ্রায়েড পরোটা, সেটা বেস্ট।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান সায় দিয়েছে। হ্যাঁ ওটা ভালো বটে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আজ নয়ডা যাচ্ছি। রাহুলের বাড়ি। কাকিমা দুপুরে খিচুড়ি খাওয়াবেন। মিষ্টি কেনার উদ্দেশ্যে প্রথম গেলাম অন্নপূর্ণায়। পাড়ার দোকান। শত শত টাকার মিষ্টির খদ্দেরদের টপকে আমাদের চব্বিশটাকার সিঙাড়ার বায়না মেটান। আমাদের আজন্মের আনুগত্য ওঁদের প্রতি। কিন্তু আমাদের পছন্দের মিষ্টি সব শেষ। খালি রংচঙে রসের মিষ্টি পড়ে আছে। নেক্সট স্টপ কমলা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। দোকানের ভেতর দাঁড়ানোর জায়গা নেই। মিষ্টি সব শেষ। থার্ড অ্যাটেম্পট অ্যারিস্টোক্র্যাট। বাড়িওয়ালার যত অনুষ্ঠান হয়, শ্রাদ্ধ, বাৎসরিক, জন্মদিন, সবেতে অ্যারিস্টোক্র্যাটের প্যাকেট আসে। এই অ্যারিস্টোক্র্যাটের প্রতিষ্ঠাতা নাকি গল্প হলেও সত্যি-র রবি ঘোষের মতো কয়েকটা হাতাখুন্তি নিয়ে এসে এ পাড়ায় উঠেছিলেন। ক্রমে অ্যারিস্টোক্র্যাট নামের সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দই, ছানার জিলিপি,কাঁচাগোল্লা। আমাদের তিনটে ফেভারিটই পাওয়া গেল। উবার এসে গেল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দুপুরে কাকিমা খাওয়ালেন খিচুড়ি, লাবড়া, খেজুর আমসত্ত্ব টমেটোর চাটনি, কাজু দেওয়া পায়েস। আর বেগুনি। সি আর পার্কে বেগুনি পাওয়া যায় না, ভদ্রস্থ বেগুনি তো ছেড়েই দিলাম। কাকিমা গরম গরম ভাজলেন, আমার হাতের তেলো ঢেকে ফেলা সাইজের একেকটা। আটটা মতো খেলাম। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নবমী</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নবমী ধোঁয়া ধোঁয়া। কোথায় গেলাম। কী খেলাম। বাড়িতে খাইনি ফর শিওর। খালি মনে আছে, রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ফিসফিস করে অর্চিষ্মান বলছে, কুন্তলা, প্যান্ডেলে কাবাব খেতে যাচ্ছি, তুমি যাবে? আমি কোনওমতে হাত তুলে না বলছি। তোমার জন্য কিছু আনব? এবার জোরে জোরে হাত নাড়ছি। প্রশ্নোত্তর পর্বটা এবার শেষ হোক।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কে জানে কতক্ষণ পর আবার ঘুম ছিঁড়ে অর্চিষ্মানের গলা। ট্যারো কার্ডের দোকানে প্যান্ডেলের থেকেও বেশি ভিড় হয়েছে, বুঝলে। কাল থাকবে না মনে হয়। অসামান্য নাচ হল। একজন নাকি খুব জমিয়েছিলেন গান দিয়ে। গোটা প্যান্ডেল পুরীর সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ভাসছিল। এক চোখ খুলে জানতে চাইলাম, তুমি ভাসলে? বলল, নাঃ। ধুস বলে পাশ ফিরলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দশমী</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বাবা পাড়ার প্রতিমার ছবি পাঠিয়েছিল ষষ্ঠীতেই। আজ আরও দুটো ছবি। প্রথমটায় বাবা একা, মাইক হাতে হেসে হেসে কী সব বলছে। দ্বিতীয়টায় মণ্ডপের বারান্দায় আশেপাশের আরও কিছু চেনা লোকের সঙ্গে বাবা আর বুচিদিদি। বুচিদিদি একটা ফাটাফাটি শাড়ি পরে খুব হেসে হেসে বাবার হাত থেকে কী একটা নিচ্ছে। জানা গেল, কুইজ কম্পিটিশনে বাবা এবার কুইজ মাস্টার ছিল। কুইজে বুচিদিদি ফার্স্ট হয়ে দুশোটাকা প্রাইজ পেয়েছে। ছবিটা সেই প্রাইজ দেওয়ানেওয়ারই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নবপল্লীর ঠাকুর সেই যে পঞ্চমীতে মুখে কাগজ চাপা দেওয়া দেখেছি, ব্যস। দেখে, লাঞ্চ করে বাড়ি ফিরব। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এখানে দশমীর একটা খারাপ ব্যাপার, আমাদের যেমন যতক্ষণ পারি রাখি, এখানে তেমন কতক্ষণে ফেলি ভাব। দুপুর হয়নি ঠিক করে, সব প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে বরণ শুরু হয়ে গেছে। দুয়েকটা শুভ বিজয়াও এসে হাজির হোয়াটসঅ্যাপে। এখনও উত্তর দিইনি। আমার বিজয়া হবে আমার পাড়ার, আমার আসল পাড়ার, ঠাকুর পুকুরে পড়ার পর। সেটা হতে রাত ন’টা। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আজ আবার ভীমেশ্বরা। কারণ ভীমেশ্বরায় সুদর্শনের রেকোমেন্ডেশন ছিল বিরিয়ানির। বিরিয়ানি শুরু হয়ে বেলা সাড়ে এগারোটার পর থেকে। ষষ্ঠীর সকালে মিস হয়ে গেছে। অর্চিষ্মান এবার নিল দোন্নে বিরিয়ানি, অর্থাৎ শালপাতার বাটিতে পরিবেশন করা বিরিয়ানি, যদিও এঁরা প্লেটেই দিয়েছিলেন। আমি ভীমেশ্বরা স্পেশাল ভেজ থালি। ফেরার পথে সি আর পার্কে ঢুকে দুটো ঠাকুরের প্রসেশন দেখলাম। টেম্পো চলেছে। সামনে নৃত্যরত মানুষের ভিড় নিয়ে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শরীর ছেড়ে দিয়েছিল। তবু সন্ধে নাগাদ নিজেদের ঠেলে তুললাম। আর একটা বেলা। টেনে দিতে হবে। মেলা গ্রাউন্ডের মাঠে সকাল থেকে পুকুর খোঁড়া হচ্ছে। প্লাস্টিক পেতে জল ঢালা হবে, সেখানে মাদুর্গা অ্যান্ড কোম্পানি বিসর্জন যাবেন। ব্যাপারটা হতভম্ব করার মতোই, কিন্তু বয়সের অ্যাডভান্টেজ, হতভম্ব হতে হতে একসময় বোঝা যায় আর কিছুতেই হতভম্ব হওয়ার নেই। আজ রাস্তায় যারা বেরিয়েছে সবারই হাবভাব আমাদের মতো। আর শক্তি নেই, কিন্তু নিংড়ে নিতে হবে। মেলা গ্রাউন্ডের প্যান্ডেলের সামনে সাদা ঘোড়াটাও নির্ঘাত তাই ভাবছে। পঞ্চমীর সন্ধে থেকে যে খুশি এসে পিঠে চড়ছে। ঘোড়াটা কি বুঝতে পারছে আজই শেষ? দুটো ছোট বাচ্চা এখন ঘোড়ার পিঠে। ঘোড়াটার আনন্দ হচ্ছে না, বাচ্চাদুটোরও মুখচোখে আবছা আতংক। আনন্দ হচ্ছে কেবল বাবামায়ের। যাঁরা ছবি তুলছেন, হাততালি দিয়ে বাচ্চাদের দৃষ্টি ক্যামেরার দিকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন, নিজেরা হেসে বাচ্চাদের হাসতে উদ্বুদ্ধ করছেন। অবশ্য বাবামাও পুঁচকে। ওঁদেরও আনন্দ হোক।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দু’নম্বর মার্কেটের ওপর দিয়ে পঞ্চান্নটা বন্দেভারত ছুটে গেছে মনে হচ্ছে। অন্নপূর্ণার সামনে স্ট্যাম্পিড হল বলে। কর্তৃপক্ষ দাদা দু’হাত তুলে বলছেন, মিষ্টির গাড়ি সাবিত্রীতে পৌঁছে গেছে, আর পাঁচ মিনিট। অর্চিষ্মান ভিড়ের ওপর দিয়ে দেখে এসে বলল, রসগোল্লা ছাড়া আর সব ফাঁকা। আমি বললাম, মিষ্টি আসবে বলছে তো। অর্চিষ্মান বলল, এলে আর রক্ষা থাকবে না, এখন যা আছে তাই নিয়েই কাটি। আমিতুমিই তো খাব। তাও বটে। রসগোল্লা নিয়ে সরে আসছি, টেম্পো এসে থামল। পেছন ফিরে তাকানোর সাহস হল না। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">লোকে এমন খাচ্ছে যেন খাবার দোকানগুলো এক বছরের মতো বিসর্জনে যাচ্ছে। মার্কেটের মাঝখানে উঁচু মতো জায়গাটা, যেখানে কালীপুজো হয়, চেয়ার টেবিল পেতে দিয়েছে। কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে খুব রংচঙে পাঞ্জাবী পরে বসে খাচ্ছে। অর্চিষ্মান বলল, ওরা কি জানে ওদের পায়ের তলায় কত কোটি ইঁদুরের গর্ত? মুচকি হেসে চেনা ফুচকার দোকানের দিকে এগোলাম। যেখানে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে খেতে আমরা ইঁদুরগুলোর ছোটাছুটি দেখি। ফুচকার দোকান ফুল দিয়ে সাজানো। আমরা এগোতেই সবাই হাসিমুখে বলল, কুপন নিয়ে আসুন। কী কাণ্ড। দাদা উল্টোদিকে টেবিল পেতে কুপন নিয়ে বসেছেন। গলা ভেঙে চৌচির। বাকিদের জন্য পঞ্চাশ, আপনাদের জন্য চল্লিশ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্যান্ডেলে ঢুকলাম। নাচ চলছে। ঢাক বাজছে। এ পাড়ায়, এখানকার অন্য পাড়াগুলোতেও এখন শুধু মেয়েরা নাচে। আমাদের পাড়ায় তখন শুধু ছেলেরা নাচত। প্রথমবার যখন টিয়া নাচতে নেমে পড়েছিল, ওই কানফাটানো ঢাক আর কাঁসির আওয়াজ ছাপিয়ে আমাদের ছোট টিউবলাইটজ্বলা প্যান্ডেলে নীরবতা গমগম করেছিল। এখন নিশ্চয় অনেক মেয়ে নাচে। বেশ কয়েকবছর ধরে পুজোর দায়িত্ব কাকিমাজেঠিমাদের হাতে। কাকুজেঠুদাদারা থাকেন, কিন্তু কমিটির মূল দায়িত্ব মহিলাদের।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মেয়েদের ভিড়ের তফাতে একজন পুরুষ, শার্ট প্যান্ট পরা, লেট পঞ্চাশ, নিজের মনে নাচছেন। ঘুরে ঘুরে নাচছেন। বাকিদের নাচে যেমন শুধু শরীরের এনার্জি এবং উত্তাপ ক্ষয় করাটাই উদ্দেশ্য, ভদ্রলোকের নাচে সেটা নেই। ওঁর দুই হাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে টের পেলাম ভদ্রলোক আসলে একটা অদৃশ্য ধুনুচি হাতে ধরে আছেন। হাত উঠছে, নামছে, ভদ্রলোক ঘুরছেন। সোমকাকুর কথা মনে পড়ল। পাড়ার কোনও রসুনজয়ন্তী, স্পোর্টসে, পনেরোই আগস্ট আর তেইশে জানুয়ারিতে, গরমের ছুটির ফাংশানে, লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাদিবসে, সোমকাকুকে আমি কখনও দেখিনি। বাড়ি কোথাও তাও শিওর ছিলাম না। সোমকাকুকে কেবল দেখা যেত ভাসানের আগে। সবার নাচগান শেষ হওয়ার মুহূর্তে, সোমকাকু আসতেন। হনহনিয়ে হেঁটে ভিড়ের রিং ভেদ করে মণ্ডপ থেকে নামিয়ে রাখা প্রতিমার সামনের ফাঁকা জায়গায় ঢুকে দাঁড়াতেন। দাদাদের মধ্যে কেউ একটা দৌড়ে ধুনুচি এনে দিত। আগের নাচিয়েরা সরে গিয়ে, উৎসাহী ভিড়কে সরিয়েটরিয়ে জায়গা একেবারে ফটফটে খালি করে দিত। ঢাকিকে সরিয়ে ঢাকে গিয়ে দাঁড়াত জহরদা, নাকি অন্য কেউ, মনে পড়ছে না, মোটামুটি পাড়ার কেউ, এবং ভালো বাজান এমন কেউ। নাচ শুরু হত। অনেকক্ষণ ধরে ঘুরে ঘুরে নাচ চলত। আলাপ থেকে শুরু হয়ে গত হয়ে ঝালা। ঝালায় পৌঁছলে জ্বলন্ত ধুনুচি থেকে আগুনের ফুলকি জোনাকির মতো উড়ে উড়ে প্যান্ডেল ছেয়ে যেত, আমাদের চুলেটুলেও এসে পড়েছে কত। কাকুর পা যেখানে যেখানে পড়তে পারে, সেখান সেখান থেকে জ্বলন্ত নারকেলের ছোবড়া তৎপরতায় সরিয়ে দেওয়া হত। তবু পা পড়েই যেত, কাকুকে মুখব্যাদান করতে দেখিনি কোনওদিন। নাচ শেষ করে ধুনুচি নামিয়ে বুকের কাছে হাত জড়ো করে কয়েক সেকেন্ডের প্রণাম সেরে জুতো পরে ভিড়ের রিং ভেদ করে সোমকাকু বেরিয়ে যেতেন, সমান স্পিডে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এই ভদ্রলোকও কোনও পাড়ার সোমকাকু ছিলেন সম্ভবতঃ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চালচিত্রের অধিকাংশটাই খুলে নেওয়া হয়েছে। হলুদ ক্রেন দাঁড়িয়ে আছে প্যান্ডেলের ভেতর। লম্বা গলা আশীর্বাদের ভঙ্গিতে দুর্গার মাথা ছুঁয়ে। এখানেও বদল। আমাদের পাড়ার ঠাকুর, এমন কিছু ছোট নয় এটার থেকে, পাড়ার দাদা কাকু জেঠুরা মিলেই নামাত। খুব যে ভালো আইডিয়া ছিল বলছি না। বেদী থেকে প্যান্ডেলে নামানো তাও একরকম। শুকনো বেদী, শুকনো সিঁড়ি, শুকনো মাটি। সবথেকে বড় কথা, বাহকরা তখনও সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে। বৃষ্টির বছরে প্যান্ডেলের অংশটুকু পাটাতন পাতা থাকত। কিন্তু প্যান্ডেল থেকে পুকুর পর্যন্ত পৌঁছনোর মাঠটুকু কাদায় কাদা। নাচানাচি সেরে সেখানে ঠাকুর তুলে নিয়ে যাওয়াটা, তাদের পক্ষে যাদের সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারাটা ততক্ষণে একটা মির্যাকল, যতটা রিস্কি মনে হচ্ছে তার থেকেও বেশি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্রতিমার সামনে থেকে সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হল। হলুদ গেঞ্জিপরিহিত চালক ক্রেন চালু করলেন। প্রতিমা দুলে উঠল। ঢাক জোরে বেজে উঠল, নাচের দলের হুংকার আর ভিড়ের হাহাকার মিশে গেল বাতাসে। এইটা অবিকল। প্রথম যখন সবাই নিচু, বাঁশে হাত দিয়ে, কেউ একজন চেঁচিয়ে বলছে রেডি? রেডি, সেই আর সবাই হেঁইও বলে টেনে তুলছে, আর আমরা দেখছি ঠাকুর দুলে উঠল, পাড়ার সবাই সুস্মিতা সেন, সবার দুই হাত ছিটকে মুখে চাপা। বাচ্চাগুলো গলা ফাটিয়ে চেল্লাচ্ছে 'আসছে বছর আবার হবে', কিন্তু সবাই জানে আবার হবে না, রাইট? রাইট? আমাদের জীবন ছিঁড়েখুঁড়ে যারা চলে গেল, যা যা চলে গেল, আসছে বছর কেন, কোনও বছর ফিরে আসবে না। তেতাল্লিশ ছুঁয়ে ফেলা বুকের ভেতরের আলোছায়ায় এখন চব্বিশ ঘণ্টা নাচেন শাহিদ কাপুর, ওয়ান ওয়ে হ্যায় ইয়ে জিন্দেগি কি গলি, এক হি চান্স হ্যায়… যো ভি যাতা হ্যায় যাতা হ্যায়, ও ফিরসে আতা নেহি। আবার নড়ে উঠেছে হলদে গাড়ির গলা, আবার দুলে উঠেছে মূর্তি, এবার বোধহয় মাটির সঙ্গে সমস্ত সংযোগ ছিন্ন, মুখ একেবারে নত হয়ে পড়েছে, তবু হাসি মোছেনি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এ হাসি থেকে চোখ ফেরানো যায় না, এ হাসি চোখে দেখা যায় না। চোখ বন্ধ করে ফেলি। ভেতর থেকে ঠেলা মেরে চাওয়া বেরিয়ে আসে। শত শত বছরের মুখস্থ করা চাওয়া নয়, যেটা আমার সত্যি সত্যি চাই। যাচ্ছই যখন, অর্থহীন, এলোমেলো দিনের পর দিন যোগ করা এই জীবনটা উপড়ে নিয়ে যাও। যদি দিতেই পারো, সাহস দাও। অসীম, অনন্ত, অশেষ সাহস। সামনের বছর যেন বুক ফুলিয়ে ষোল অ্যান্ড অ্যাবাভ ক্যাটেগরিতে নামতে পারি। অর্চিষ্মান যেন পরের বছর প্যান্ডেলশুদ্ধু লোকের সঙ্গে ঢেউয়ের মতো ভাসতে পারে। মাস্ক টুপি ছাড়াই দুজনে গটগট করে ট্যারো রিডিং-এ ঢুকতে পারি। নিজের পয়সায় নিজে কুসংস্কার পালন করছি কার চোদ্দপুরুষের কী বলে জানতে চাইতে পারি ভবিষ্যৎ ঠিক কতটা অন্ধকার। যদি দিতেই চাও, বিশ্বাস দাও। অন্ধ, অটল, অক্ষয় বিশ্বাস। তোমার ওপর না। নিজের ওপর।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বেরিয়ে আসি। প্রতিমা এখন ট্রাকে উঠে বেড়াতে বেরোবে। ঘুরে ফিরে এসে মাঠের মাঝখানে প্রস্তুত অস্থায়ী পুকুরে ভাসান যাবে। কিন্তু আমরা আর থাকব না। বাড়ির দিকে হাঁটি। চেনা পথটুকু পেরিয়ে গ্রিলগেট। গ্রিলগেট পেরিয়ে চেনা গলিটুকু হেঁটে সিঁড়ি। সিঁড়িতে উঠতে উঠতে ঢাক কানে আসে। আর বেশিক্ষণ না। চাবি ঘুরিয়ে ঘরে ঢুকি। অর্চিষ্মান ধপাস করে খাটের ওপর চিৎপাত হয়। হয়ে গেল। আমি ছিটকিনি তুলে চাবি হুকে ঝুলিয়ে রাখি। হয়ে গেল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com19tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-15931614411551511432023-10-28T15:29:00.001+05:302023-10-30T08:29:07.578+05:30পুজো ২০২৩
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পঞ্চমী</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যদিও রেজলিউশন নিয়েছিলাম যে ফেলুদাব্যোমকেশের পাশ থেকে সরে দাঁড়াব কিন্তু দাঁড়াব কোথায়? আবার শোনা যাচ্ছে এটা অনির্বাণের লাস্ট ব্যোমকেশ। পাছে ইতিহাস মিস করে হাত কামড়াই, হইচই-তে দুর্গ রহস্য খুলে বসতে হল। গোড়াতে গুলিয়ে যাচ্ছিল, মনোযোগ দিচ্ছিলাম না বলেই নিশ্চয়, কে উত্তমকুমার, কে ব্যোমকেশ। অর্চিষ্মান বুঝিয়ে দিল। অনির্বাণ ব্যোমকেশ। কাল্পনিক ব্যোমকেশ। অনির্বাণ কাল্পনিক না। অনির্বাণ রিয়েল। উত্তমকুমারও রিয়েল। সত্যজিৎ রিয়েল। চিড়িয়াখানা সিনেমাটাও রিয়েল। নিজের জীবনের কেস নিয়ে বানানো সেই রিয়েল সিনেমা দেখতে গেছে কাল্পনিক ব্যোমকেশ। গিয়ে মবড হচ্ছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গোটা সিরিজটা যদি ব্যাখ্যা করতে করতে দেখতে হয় সেই ভয়েই বোধহয় অর্চিষ্মান বলল, চল বেরোই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সন্ধে থেকে প্যান্ডেলের গানের চোটে জানালা কাঁপছে। রাস্তায় ভিড়। ঘোলে চুমুক দেওয়ার মতো করেই বলাবলি করি, পঞ্চমীতেই এই্, শনিরবি কী হবে বুঝতে পারছ? আজ তো আসল পুজো না তাই টি শার্ট জিনস পরেই বেরোলাম। অর্চিষ্মানও সেই ধুদ্ধুড়ে জামাই পরেছে অথচ আমাকে বলছে, ভালো জামা পরলে না? বললাম, কাল পরব। ষষ্ঠীতে নতুন জামা পরতে হয়। ঠাকুমা বলেছে। না-পরা জামা একটাই আছে, আজ পরে ফেললে কাল থাকবে না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জুতো গলাতে গলাতেও ফিরে এলাম। টি শার্ট ছেড়ে একটা ভালো জামা, নতুন না, কিন্তু ভালো, গলালাম। পঞ্চমী বলে কথা, একেবারে কালাপাহাড় হলে ভালো দেখায় না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আজ কলেজ স্কোয়্যারের উত্তরটা কভার করব, কাল দক্ষিণ, পরশু শ্রীরামপুর, তরশু কোন্নগর এই সব হবে না। হওয়াতে চাওয়ালে হয়। আজ সি আর পার্ক, কাল নয়ডা, পরশু গুড়গাঁও, তরশু কাশ্মীরী গেট, কিন্তু অত এনার্জি নেই। আমরা বেসিক্যালি সি আর পার্কের প্যান্ডেলগুলো দেখব। পঞ্চমী টু দশমী, ওই পাঁচটা প্যান্ডেলেই। প্যান্ডেল একই থাকবে। আমরা একই থাকব। আমাদের চারপাশের ভিড় বদলাবে। প্যান্ডেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বদলাবে। গুড এনাফ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পাড়ার ঠাকুর দিয়েই শুরু করা ভালো। পাড়া মানে গুগল ম্যাপের মতে পাড়া। এ ছাড়া পাড়া শব্দটা আমার মধ্যে যা যা অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করে তার কোনওটার সঙ্গেই মিল নেই এই জায়গাটার। ঢাক বাজছে। বাড়ির উল্টোদিকের গেট দিয়ে মাঠে ঢোকা যাবে না। সিকিউরিটি দিদি দাঁড়িয়ে হাই তুলছেন। ঘুরে মেন গেট দিয়ে ঢুকলাম। আজ লাইন নেই অ্যাট লিস্ট।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আরে এই মূর্তিটা দেখেছি তো। দিনতিনেক আগে এই মূর্তিটার টেম্পোর পেছনে আমার অটো আটকেছিল। আরও অনেক অটো, টোটো, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, গাড়ির মতো। টেম্পোর আগেপিছে বাইকবাহিনী লগা হাতে তার তুলতে তুলতে আসছিল। তারপর ফাঁক পেয়ে অটোভাইসাব মাদুর্গাকে ওভারটেক করলেন। একবার সন্দেহ হয়েছিল প্রতিমাটা মেলা গ্রাউন্ডেরই কি না, শিওর ছিলাম না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ঢাক বাজছে। বাবামায়েরা গেঁড়ি বাচ্চাকে ঘাড়ে তুলে ভিড়ের মাথার ওপর দিয়ে দেখাচ্ছে। কিছু লোক নাচছে। কিছু লোক ভুরু কোঁচকাচ্ছে। কিছু লোক ভুরু কুঁচকে ভাবছে, ইস যদি নাচার সাহস থাকত। এগুলো যা বুঝেছি, প্রতিবর্ত ক্রিয়া। চল্লিশ বছর আগেও হত। চল্লিশ বছর পরেও হবে। মোবাইলটোবাইল বাদ দিলে ভেতরটা তো বদলায়নি, বদলায় না। প্যান্ডেলের বাইরে মাঠের বাকিটাও গত কে জানে কত বছরের মতোই। অর্থাৎ, কোণার দিকে যেখানে কাবাবটাবাবগুলো থাকার কথা সেখানেই আছে, বিরিয়ানি, দোসার স্থানাংকেও বদল ঘটেনি, মাঠের মাঝখানে গুচ্ছ বেঁধে কফি, ঝালমুড়ি, চুসকি যেমন থাকে। অর্চিষ্মান মুহ্যমান। খেয়ে বেরিয়েছি। কাল অর্থাৎ চতুর্থীতে রাহুল এসেছিল একগাদা খাবারদাবার নিয়ে। খেয়ে যা বেঁচেছে আরও তিনদিন চলবে। লিট্টি চোখার একটা না, দুটো স্টল বসেছে। আগুনের ওপর তারের জালি, জালির ওপর গোল গোল লিট্টি। আমরা দুজনেই বিশ্বাস করি #ইস্টইঅরওয়েস্টবিহারিখাবারইজদাবেস্ট। অর্চিষ্মান ইনকনসোলেবল হয়ে পড়ল। এই মুহূর্তে পেটের মাথায় বন্দুক ধরলেও লিট্টি খাওয়া সম্ভব নয়। যাই একটু কাছ দিয়ে হেঁটে আসি অ্যাট লিস্ট। বলে উনুনের খুব কাছ দিয়ে হেঁটে গেল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এইচ ব্লকের গেটের কাছে ট্যারো কার্ড রিডিং-এর স্টল। অর্চিষ্মান এদিকওদিক তাকাচ্ছে। বলছে, শোনো, ফাঁকা দেখে আসতে হবে, কেউ দেখে ফেললে কেস। আমি যখন রিডিং করাব তখন তুমি আমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে থাকবে, তুমি যখন রিডিং করাবে আমি আড়াল করে দাঁড়িয়ে থাকব। বললাম, হ্যাঁ আর রণথম্ভোরে সাফারিতে একটা ফ্লপি টুপি দিয়েছিল মনে আছে, চিবুকের তলায় দড়ি বাঁধা? সেই টুপিটা আর মাস্ক পরে আসলে কারও চেনার চান্স নেই। যদি না তোমার হাইট দেখে ধরে ফেলে। দোকানের খুব কাছে দাঁড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে এই সব বলাবলি করছি, এমন সময় একজোড়া মা মেয়ে দোকানে ঢুকলেন। ভালো করে দেখব বলে ঘাড় ঘোরাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল। হতেই ওঁরা সেই হাসিটা হাসলেন যেটা আমরাও ওঁদের জায়গায় থাকলে হাসতাম। হাসির মানে হচ্ছে, আমরা এ সব বুজরুকিতে বিশ্বাস করি ভাববেন না যেন, জাস্ট টাইমপাস।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান শেষটায় না পেরে একটা মুড়ি অর্ডার করে ফেলল। অর্থাৎ ভাইসাবকে গিয়ে বলল, ভেলপুরি দিজিয়ে। দোকানের সামনের বোর্ডটা তো পরবে পরবে বদলানো যায় না, সেখানে চনমনে অক্ষরে ভেলপুরিই লেখা আছে। আস্তে করে বললাম, ঝালমুড়ি। অর্চিষ্মান বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ, ঝালমুড়ি, ঝালমুড়ি দিজিয়ে। তারপর বলল, দুটোর মধ্যে যে তফাৎ আছে ভুলে যাই। এই সব কমেন্টে রিঅ্যাক্ট করা ছেড়ে দিয়েছি অনেকদিন। কোনদিন বলবে, রবীন্দ্রনাথের যে দাড়ি ছিল মনেই থাকে না। আমাকে কালা খাট্টা চুসকি খাওয়ার জন্য তা দিল খুব, খেলাম না। কারণ প্রতিবারই খাই আর খেয়েই মনে হয়, যত আনন্দ হওয়ার কথা ছিল ততটা তো হল না। স্প্রাইটের মিনি বোতল কিনে মাঠ ছাড়লাম। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রাস্তার দুপাশে মুড়ি, কচুরি, রোল, বিরিয়ানি। হার, দুল, বেলুন, মুখোশ, আলোর শিং। আচার, মুখশুদ্ধি, চুরন। চুরনের ঠেলার ওপার থেকে এক ভদ্রলোক, কথা নেই বার্তা নেই, মুচকি হেসে ভুরু নাচাচ্ছেন। ঠিক দেখলাম কিনা কনফার্ম করতে তৃতীয়বার তাকিয়ে টের পেলাম, ও হরি, ইনি আমার বাঁধা ভুট্টাবিক্রেতা। কনটেক্সট কী ইম্পরট্যান্ট। ভুট্টার ঠেলা চুরনের ঠেলা হয়ে গেছে বলে রোজ বিকেলে দেখা একটা লোককে চিনতে পারছি না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কালীমন্দিরের ঠাকুরের মুখ কাগজঢাকা। আমাদের মেলা গ্রাউন্ডের চালচলন ঘোর কমার্শিয়াল। মায়ের মুখ ঢাকাফাকার ব্যাপার নেই। মন্দিরে প্রত্যাশিতভাবেই নিয়মনিষ্ঠার জাঁক, পঞ্চমীতে প্রতিমার মুখ দেখা নিষিদ্ধ। পাশে স্টেজ বেঁধে গান হচ্ছে। মাসখানেক ধরেই হচ্ছে। প্রতিবছরই পুজোর আগে অ্যানুয়াল সাংস্কৃতিক নাচগানের প্রতিযোগিতা চলে। কয়েকদিন আগে এক নম্বর মার্কেটে অর্চিষ্মানের ছবি তোলাতে এসে ঢুকেছিলাম। সেদিন লিটল চ্যাম্পস, অর্থাৎ ক্লাস সিক্স থেকে টেনের বাংলা ও হিন্দি গানের কম্পিটিশন চলছিল। মোটা চশমা পরা, কদমছাঁট বাচ্চারা খুব দরদ দিয়ে 'এ কোন সকাল, রাতের চেয়েও অন্ধকার' গাইছিল। এক প্লেট বেগুনি নিয়ে পেছনের দিকের দুটো চেয়ারে বসে খেতে খেতে শুনেছিলাম। প্রায় সব গানই শুধু জানি না, মুখস্থ। অর্চিষ্মান আবার কোনও গানই নাকি শোনেনি। বাঙালির ছেলের যখন এ সব গান শোনার কথা তখন উনি পিয়ার প্রেশারে দুলে দুলে পিংক ফ্লয়েড মুখস্থ করছিলেন। মন্দিরের বাইরে বড় ব্যানারে এ বছরের কম্পিটিশনের নির্ঘণ্ট। অর্চিষ্মানকে বললাম সামনের বছর আমি এটায় নাম দিচ্ছি। বলে 'ষোল অ্যান্ড অ্যাবাভ' ক্যাটেগরিটার দিকে দেখালাম। বলে নিজেই সম্ভাব্য কথোপকথন কল্পনা করতে লাগলাম। প্রথমেই জিজ্ঞাসা করবে নির্ঘাত, আপনার বাচ্চা কোন ক্যাটেগরিতে কমপিট করবে ম্যাম? অর্চিষ্মান বলল, তারপর তোমার নাম এন্ট্রি করে ইমিডিয়েটলি ক্যাটেগরির নাম বদলে ষোল টু পঁচিশ করে দেবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যাই হোক, আজ বোধহয় সেই ষোল অ্যান্ড অ্যাবাভ-এর ফাইন্যাল । একটি ছেলে, পঁচিশ মতো বয়স, খুব দরদ দিয়ে 'মন মাঝি রে' গাইছে। এই গানটা যে পরের পাঁচদিন কত প্যান্ডেলে শুনলাম। কম্পাউন্ডে যে কারণেই ঢোকা হোক না কেন, অর্চিষ্মান একবার মন্দিরে ঢুঁ মারবেই। আমার সন্দেহ অর্চিষ্মানের মধ্যে একটা সুপ্ত ভক্ত প্রহ্লাদ আছে, বুড়ো হলে দাঁতনখ বার করবে। মন্দিরের টাইলস সর্বদাই এত ঠাণ্ডা থাকে মনে হয় শুয়ে পড়ি। ওই জন্যই অত লোক সাষ্টাঙ্গ হয় কি? বাবার কোলে চড়া বাচ্চারা জোরে জোরে ঘণ্টা বাজাচ্ছে। পেছনের মাঠে বাঁশ পোঁতাপুঁতি হচ্ছে। কাল থেকে জগঝম্প শুরু হবে। আসব। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নবপল্লী আর ডি ব্লকের ঠাকুরের মুখও নিউজপেপার ঢাকা। কোঅপারেটিভের ঠাকুরটাও আজ থাক। কাল হবে। এখন বাড়ি যাওয়া যাক। পুরোনো পাড়ার রাস্তা ধরে ফিরি। রাস্তার এই অংশটায় পেছনের প্যান্ডেলের আলো ফুরিয়েছে অনেকক্ষণ, সামনের প্যান্ডেলের আলো শুরু হয়নি। কিংস আইসক্রিমের এই আউটলেটটা আগে ছিল? অর্চিষ্মান বাটারস্কচ কাপ আইসক্রিম নিল, আমি কেসরপিস্তা স্টিক কুলফিতে স্টিক করলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ষষ্ঠী</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এখনও ছ’টা বাজেনি। ঢাক বাজছে। বোধহয় পুজো হচ্ছে। কোন প্যান্ডেলে কে জানে। জানা থাকলে গেলে হত। না থাক। কাজ প্রচুর। অ্যাকচুয়ালি, পুজো নাও হতে পারে। ঢাকের শব্দটা মোবাইল। ঢাকিরা এলেন বুঝি কোনও প্যান্ডেলে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মানকে খুঁচিয়ে তুললাম। ষষ্ঠীর সকাল মজাহীন ভালো দেখায় না। ভালো কিছু ব্রেকফাস্ট করে কাজ শুরু করা যাক। এত সকালে দোসা ইডলি ছাড়া কিছু খাওয়া শক্ত, পাওয়াও মুশকিল। এত সকালে মজা করার ইচ্ছে হলে সাধারণত আমরা জাগারনাট বলে একটা দোকানে যাই। অর্চিষ্মান দাঁত মাজতে মাজতে বলল ওর অফিসের কে নাকি বলেছে সিপি-তে একটা নতুন দোকান খুলেছে, সাউথ ইন্ডিয়ান এবং ভালো। বলে টুথব্রাশ গালে গুঁজে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে ভিষ্ ভিষ্ করতে লাগল। আমি বললাম, ভিষ্ণুদাস বালাপোরিয়া? অর্চিষ্মান চোখ ঘোরাল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কনট প্লেস লোকেশন সেট করে জোম্যাটোতে বি এইচ টাইপ করলাম। খুব আস্তে আস্তে যাতে জোম্যাটো ধরতে না পারে যে আমি বি এইচ এর পরের অক্ষরগুলো জানি না। তার আগেই অটো সাজেশনে দোকানটার নাম বলে দেয়। ট্যাকটিক্স কাজে দিল। বি-এর পর তিন সেকেন্ড গ্যাপ দিয়ে এইচ টাইপ করাতেই সাজেশনে ভীমেশ্বরা এসে গেল। আজকাল ভোরে বা গভীর রাতে অটো নিলে ঠাণ্ডা লাগে। তাই উবার গো ডাকা হল। ফাঁকা রাস্তায় উড়ে গেলাম। মেনু স্ট্যান্ডার্ড। একটাই ক্যাচ। বেশি ভালো ভালো খাবারগুলো লাঞ্চে পাওয়া যায়, সকালে শুধু দোসা ইডলি উত্থাপাম। আমি ভীমেশ্বরা স্পেশাল দোসা্ অর্ডার করলাম, অর্চিষ্মান সেএএএই মাইসোর মসালা। লাস্টে ফিলটার কফি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বিকেলে প্রসেনজিৎ দেরি করে এল। ষষ্ঠীতেই ছুটি নেবে বলেনি। বলেনি বলেই ফোন করে হাঁকাহাঁকিও ভালো দেখায় না। একঘণ্টা পর দেখি বেল বাজছে। মাঞ্জা দেওয়া পাঞ্জাবী পরে প্রসেনজিৎ। বলল, কত মজা হল আনন্দমেলায়। আঠেরো নম্বর টেবিল, মেনু সিম্পল, পাওভাজি আর বিটের হালুয়া। তিন বাটি হালুয়া, বাটির বিরাটত্ব বোঝাতে দুই হাত ছড়াল, সব শেষ। মুখ চুন করলাম। শেষ? অর্চিষ্মান বলেছিল আনন্দমেলায় খাবে। প্রসেনজিৎ বলল, এই রে, বল তো দৌড়ে গিয়ে কিনে আনি, যদি কিছু পাই। বললাম, দরকার নেই। তারপর বললাম, এত ভালো জামা পরে কাজ করতে হবে না। হেসে উড়িয়ে হাতা গুটিয়ে ঝাঁটার খোঁজে গেল। অন্ততঃ রান্নাটা বাদ দাও, বললাম আমি। কোনওরকম উদারতা থেকে নয়। কাল কান মুলেছি। বাড়িতে আর খাচ্ছি না। সি আর পার্কের প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে যে প্যান-ইন্ডিয়ান কুইজিনের বিস্ফোরণ ঘটেছে তাকে বৃথা যেতে দেওয়া যায় না। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মেলা গ্রাউন্ডে এক মহিলা গাইয়ে আসর জমিয়েছিলেন। সোহাগ চাঁদবদনি ধনী, পিন্ডারি পলাশের বন ইত্যাদি গান ওয়ান পয়েন্ট ফাইভ স্পিডে গেয়ে ভিড়কে নাচতে উদ্বুদ্ধ করার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, কেউ নাচছে না। ইতিহাস পরীক্ষার দিন ভূগোল পড়ে চলে যাওয়ার পর সেকেন্ড মোস্ট ফ্রিকোয়েন্ট দুঃস্বপ্ন আমার। আমি লাফিয়েঝাঁপিয়ে ডিগবাজি খেয়ে লোকজনকে চাঙ্গা করতে একশা হচ্ছি, এদিকে সবাই কাঠ হয়ে বসে সোজা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হাই তুলছে। ওই জন্য আমি কক্ষনও দর্শকাসনে বসে (বা এক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে) হাই তুলি না। জোরে জোরে হাততালি দিই। এঁকেও দিলাম। দিয়ে খাবারের খোঁজে গেলাম। অর্চিষ্মান চিকেন টিক্কা আর শামি কাবাব খেল, আমি আলুর চপ। খেয়েদেয়ে আবার চেনা রুটে চেনা পরিক্রমা। কালীমন্দিরের পেছনের মাঠে বাঁশ পোঁতা শেষ, সাইকেডেলিক আলো বনবন ঘুরছে। কলকাতা থেকে গানের দল নাচের দল সব এয়েচে, ভিড় উপচে পড়ছে। আমাদের এখানে ম্যাজিক ওয়ার্ড, কলকাতা। বাজারে যান, একই উচ্ছের দুটো ঢিপি। একটা এখানকার। অন্য ঢিপিটা কলকাতার, বলার সময় দুই হাত ছিটকে বুকের কাছে জড়ো। দাম ডবল। আমরা ভিড় গলে ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছতে পৌঁছতে গানের অনুষ্ঠান শেষ, নাচ শুরু। মেন দিদিমণি দুর্গা সেজেছেন, মেন দাদাভাই অসুর। বাকি সবাই পেছনে সারি বেঁধে গ্রামবাসী। টিমপ্লেয়ার নই বলেই এই সব নাচের দল গানের দল দেখলে অস্বস্তি হয়। যে যত ভালোই নাচুক না কেন, আসলে তো দাদামণিই সামনে নাচবেন। যে যত সুরেই গাক, গলাভাঙা দমফুরোনো দিদিমণিই মাইক পাবেন। যাই হোক, ষষ্ঠীর দিন এ সব হাবিজাবি কথা ভাবতে নেই। মহিষাসুরের পোশাকটা আমার মন টেনেছে, অর্চিষ্মানকে পরের পুজোয় ওই ডিজাইনের একটা জামা বানিয়ে দেব। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমাদের সামনে দুই পুলিসদিদি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাচ দেখছিলেন। আমরাও দেখলাম। নাচগান যথেষ্ট ভালো হওয়া সত্ত্বেও হাসাহাসি করলাম। ওটার সঙ্গে নাচগানের কোয়ালিটির কোনও সম্পর্ক নেই, আমাদের স্বভাবের আর ফুর্তির আছে। এই সব অনুষ্ঠানে নাচের মাঝেমাঝে গ্রন্থনা টাইপের একটা ব্যাপার হয়। গলা কাঁপিয়ে কিছু গভীর কথা, কোটেশনখচিত। মেটেরিয়ালিস্টিক হবেন না। সত্যের পেছনে ছুটুন। শুভ দিয়ে অশুভকে মারুন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চল্লিশ পেরিয়ে আমার মধ্যে একটা গ্যাদগেদে ব্যাপার জন্মেছে, পুজোয় বেপাড়ার লোক দেখলে মনের ভেতর অতিথি আপ্যায়নের ভাব জেগে ওঠে। বাঙালি বাচ্চা ভেঁপু বাজালে কান চেপে অকুস্থল ত্যাগ করি, কালকাজী থেকে বাবামা দিদির সঙ্গে আসা লেহেঙ্গা চোলি পরা চারবছর বয়সী ছোট বোন, ভেঁপু আমার কানের মধ্যে ঢুকিয়ে বাজালেও মনে হয়, আহা, বাচ্চা। মনে হয় বলি, আসুন আসুন, ঠাকুর দেখুন, কী খাবেন বলুন। কোর্মা থেকে কচুরি, সব আছে। একটা জিনিস দেখেছি, বাঙালি পুজো যে সব অবাঙালিরা দেখতে আসেন, বিশেষ করে ননভেজ হওয়া সত্ত্বেও নভরাত্রিতে যাঁদের ম্যান্ডেটরি পুরিসুজি, দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে তাঁদের চৈত পরব। বাঙালিরা খাবে কী, কালকাজীর যত সর্দারজী হোল ফ্যামিলি নিয়ে ফিশফ্রাই ফুরিয়ে ফেলছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বাচ্চাদের দেখতে তো অবভিয়াস কারণেই ভালো লাগে। স্কুলের শেষ থেকে কলেজের শুরুর বয়সটাও চমৎকার। হয় দু'জন হাতে হাত গলিয়ে, নয় দল বেঁধে ঘুরছে। উড়ছে বলাই সঙ্গত। অর্চিষ্মানকে বলি, এরা কিন্তু আমাদের দেখতে পাচ্ছে না। আমরা এদের কাছে সমস্ত অর্থেই অদৃশ্য। ইনভিজিবল। অর্চিষ্মান বলল, ঠিক যেমন বুড়োবুড়িরা আমাদের কাছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অপরাধবোধ ঘোচাতে আবার খেতে হল। ফুচকাটা ফুচকা বলেই খাওয়া গেল। চা-টা চা হওয়া সত্ত্বেও খাওয়া গেল না। প্রফিট মার্জিন বাড়াতে এক গঙ্গা জলে এক চিমটি চা দিয়ে ফুটিয়েছে। জঘন্য। সে চা-ও শান্তিতে দাঁড়িয়ে খাওয়ার উপায় নেই। লোকে এদিকওদিক থেকে ধাক্কা মারে। ধাক্কা না মারলেও কার ফোনের ফ্রেমে কখন ঢুকে পড়ছি খেয়াল রাখতে প্রাণান্ত। ভঙ্গিটা রাখি, সরি সরি, দেখতে পাইনি আপনারা ছবি তুলছিলেন, আমাদের একটু দৌড়ে চলে যেতে দিন, আসল ফিলিংটা হচ্ছে ওই সব ভয়ানক ছবিতে চিরজীবনের মতো এক্সট্রা হয়ে থেকে যেতে চাই না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একটা ভালো ব্যাপার ঘটল। কে জানে কত বছর পর অর্চিষ্মান একটা প্রশংসাবাক্য দাঁতের ফাঁক থেকে বার করল। প্রশংসা ও করে ঘনঘনই, কিন্তু সেগুলো শুনতে সন্দেহজনক। যেমন, হাফচেনা কেউ দূর থেকে হাসিমুখে এগোচ্ছে দেখলে বলে, তোমার তো হ্যাজাতে ভালো লাগে, লৌকিকতাটা তুমিই কর। বা, ভালো ম্যানিপুলেট করলে তো সিচুয়েশনটা। আজ গলা ঝেড়ে বলল, তোমার সঙ্গে পুজো দেখতে বেরোনোর সুবিধে আছে। বললাম, কী সুবিধে শুনি? বলল, দেড় সেকেন্ড পরপর ছবি তুলে দিতে হয় না। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বলেই কনুই টানল। অত ভিড়ের মধ্যে কী দেখাচ্ছে বুঝতেই লেগে গেল পনেরো সেকেন্ড। তারপর দেখতে পেলাম। একজোড়া মামেয়ে। দেখান কারণটাও বুঝলাম। দুই প্রজন্ম একরকমের দেখতে হলে সেটা অর্চিষ্মানের কাছে ফ্যাসিনেটিং প্রতিভাত হয়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এই জুটির একজন আরেকজনের থেকে বছর পঁচিশ-তিরিশের বড়। একজন মোটার দিকে একজন টিংটিং। একজনের খোঁপা আরেকজনের ববছাঁট। এ ছাড়া আর কোনও অমিল নেই। নাক মুখ চোখ হাসি, কন্ট্রোল সি কন্ট্রোল ভি। একটা মানুষ, নিজের ভবিষ্যতের ভার্শান সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে। আরেকটা মানুষ, নিজের অতীতকে নিয়ে। প্রতিমাকে পেছনে রেখে একটা সেলফি তোলার চেষ্টায় রত। প্যান্ডেলের ওই পরিস্থিতিতে ব্যাপারটা রীতিমত স্ট্রাগল, হয় তোলার মুহূর্তে কেউ ঠাকুরের মুখ ব্লক করে দিচ্ছে, নয়তো সোজা ধাক্কা। দুজনের আরেকটা মিল। ধাক্কাখাওয়া ছবি দেখে বিচলিত হওয়ার বদলে হেসে ওড়াচ্ছেন, নতুন একটা জায়গা পছন্দ করে দাঁড়াচ্ছেন।<</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভালোবাসা খুব একটা শক্ত ব্যাপার নয়। অনেকদিন পাশাপাশি রেখে দিলে, রক্তের সম্পর্কটম্পর্ক থাকলে তো হয়েই গেল, অভ্যেস, দেওয়ানেওয়া মিলিয়েমিশিয়ে একধরণের ভালোবাসা তৈরি হয়েই যায়। যেটা তৈরি হয় না, যেটা তৈরি করা যায় না, সেটা ভালোলাগা। এ যদি আমার কেউ না হত, এর সঙ্গে যদি আমার কোনও দেওয়ানেওয়া থাকত না, তবু কি আমার একে ভালো লাগত? সে রকম কারও সঙ্গে যদি কপালগুণে জুটে যাওয়া যায়, রক্তের সম্পর্ক থাকলে তো কথাই নেই, একটা স্পেশাল কিছু ঘটে। কেমন স্পেশাল, কতটা স্পেশাল যার ঘটে সে জানে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">খুকখুক হাসির শব্দ। দুটো মাথা, একটা কাঁচা, একটা কাঁচাপাকা, ফোনের ওপর ঝুঁকে হাসছে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চোখ সরিয়ে নিলাম। অর্চিষ্মানকে বললাম, চল বেরোনো যাক।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1" style="text-align: center;">*****</div>
<div class="p2" style="text-align: center;">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যদিও পুজোর তিনদিনের গল্প বাকি রইল, কিন্তু পুজো শেষ, লক্ষ্মীপুজোও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শুরু হল বলে। শুভ বিজয়াটা এবার না সারলেই নয়। আপনাদের সবার জন্য অনেক ভালোবাসা, ভালোচাওয়া আর কোলাকুলি রইল। সব ভালো হোক।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com20tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-5451213456905181362023-10-15T12:08:00.013+05:302023-10-15T12:50:14.232+05:30লাভ ল্যাংগোয়েজ ও চেস্ট অফ ড্রয়ারস<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><div class="p2"><br /></div><div class="p1">ফেসবুকে যেমন লাইক, মধ্যবিত্ত বাঙালি আত্মীয়সম্মিলনে তেমন নতুন জামাকাপড়। অনেক বছর পর পর দেখা হওয়ার ক্যান্ডিডেটদের জমায়েতে প্রত্যাশিতভাবেই জামার পিসের প্রাধান্য। মাসছয়েক বা বছরখানেক বাদে বাদে দেখা হলে ঝুঁকি নিয়ে রেডিমেড। ফোনাফুনি যত কমছে, সামনাসামনি আড্ডা দেওয়া যত প্রাগৈতিহাসিক হচ্ছে, তত বাড়ছে ফেসবুকে একে অপরের ছবিতে লাইক আর দেখা হলে গিফট। আজকাল নেমন্তন্ন পর্যন্ত শান্তিতে খেতে যাওয়ার উপায় নেই, লোকে রিটার্ন গিফট না গছিয়ে ছাড়ছে না। কেন, ভেবে বার করেছি। বা চেষ্টা করেছি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষের লাভ ল্যাঙ্গোয়েজ অর্থাৎ ভালোবাসার পাঁচটা ভাষা। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">১। প্রশংসাবাক্য।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">২। কোয়ালিটি টাইম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">৩। সেবা </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">৪। গিফট।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">৫। আদর। সমাদরটর নয়। বিশুদ্ধ গায়ে পড়া কাইন্ড। স্কিন টু স্কিন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অফ কোর্স, পাঁচ নম্বরটা সবথেকে ট্রিকি এবং সতর্কতার দাবিদার। গ্রহীতার রিঅ্যাকশন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সংশয় থাকলে কল্পনাতেও স্থান দেওয়া উচিত নয়। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্রশংসাবাক্যের ঝামেলা হচ্ছে, ট্যাক্স লাগে না। কানাকে পদ্মলোচন বললাম, খোঁড়াকে উসেইন বোল্ট, অর্চিষ্মানকে লাইফ অফ পার্টি, কুন্তলাকে পরিশ্রমী। লাভের এ ল্যাংগোয়েজে ভরসা করে পাগলে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দু'নম্বরটা আবার মারাত্মক কস্টলি। সময় দুর্মূল্য নয়, অমূল্য। খরচ করার আগে বিস্তর ভাবনাচিন্তা দরকার। দিল্লিতে বসে কাজের নামে ভ্যারেন্ডা ভাজব নাকি রিষড়া গিয়ে বাবাকে সঙ্গ দেব? বাড়িটা ঝেড়েমুছে নিয়মিত রং করাব? ছাদে লাউডগা আর জমিতে পালংশাক ফলাব? ট্রেসপাসার বেড়ালগুলোর দিকে কটমটিয়ে তাকাব? বাপরে বাপ, অনেক সময়ের ব্যাপার। তার থেকে চট করে পাঁচমিনিট ফোনে কথা বলে নেওয়া বেটার। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, ইভন বেটার।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সেবাটেবার প্রশ্নই নেই। আমার সেবা কে করে তার ঠিক নেই। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্থাৎ ভালোবাসা প্রকাশের জন্য চার নম্বরটাই সেফেস্ট। জিনিস কেনো আর গছাও। হ্যাঁ, টাকা লাগে। কিন্তু সবাই জানে, জীবনে টাকা জিনিসটাই আসলে সবথেকে সস্তা। বাবাকে সশরীরে দেখতে না গিয়ে অ্যামাজন থেকে করাচী বিস্কুট পাঠিয়ে দাও দেড় কিলো। বিনাপয়সার রেওয়াজে না বসে আরও স্পিডের ইন্টারনেট কিনে নাও। ইউটিউব ফ্রি থেকে প্রিমিয়ামে আপগ্রেড কর। নিজে গাওয়ার ঝামেলায় না গিয়ে শুয়ে শুয়ে বাকিদের অ্যাড ফ্রি নাচাগানা স্ক্রোল করে আনন্দ ওঠাও। মাসের পর মাস যাদের ফোন করে 'কেমন আছ?' জিজ্ঞাসার কল্পনাও মনে স্থান দাওনি, দেখা হওয়ার দেড় মিনিটের মধ্যে নতুন জামার প্যাকেট হাতে ঠুসে দাও।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মুশকিল হচ্ছে যে রেটে জামা আসে সে রেটে তো জামা বেরোয় না। আর লোকে ভালোবেসে দিচ্ছে বলেই যে আমি বেশি বেশি জামাকাপড় পরে ফেলব তাও নয়। কারণ যত জামা তত মাড়, তত ইস্ত্রি, তত রং মিলিয়ে শায়া ব্লাউজ ওড়না, সেগুলোর সদ্ব্যবহার করতে তত বেশি বেশি লোকসমাজে মেশামিশি। কাজেই আমি ঠিক তিনটে জামা পরে জীবন কাটাই। আত্মীয়সম্মিলনেও যাই। একটা পরে যাই, তিনটে নিয়ে ফিরি। এদিকে আমার জামা রাখার জায়গা তো হাউস অফ লিভস-এর সেই বাড়িটার মতো নয়, যে ধীরে ধীরে আয়তনে বাড়তে থাকে, কাজেই সেগুলো রাখার জায়গা একসময় ফুরোয়। একজন অভিজ্ঞ লোককে জিজ্ঞাসা করলাম, এত জামা কোথায় রাখেন? বললেন, কেন আলমারিতে? বললাম, আলমারি ভরে গেলে? তিনি বললেন, কেন, আরেকটা আলমারি কিনে আনি? </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমাদের আলমারি নেই। এখানকার ভাড়াবাড়িগুলোর দেওয়ালে বিল্ট-ইন আলমারি থাকে। তাতেই কাজ চালাই। বা চালাতাম। ডি ব্লকের বাড়িতে সব ঘরে আলমারি ছিল। অর্থাৎ, দুটো। আই ব্লকের বাড়িটায় ঘর বেশি কিন্তু আলমারি মোটে একটা। ভেবেছিলাম আঁটিয়ে নেব। বেসিক্যালি তো তিনটে তিনটে ছ’টা জামা। সেগুলো রাখতে একটা আলমারির দুটো তাকের বেশি লাগার কথা নয়। যেগুলো পরি না, যেমন বিয়েতে পাওয়া জরি বসানো শাড়ি আর চুমকি বসানো সালওয়ার কামিজ, দশ বছর ছুঁইনি নেক্সট দশেও চান্স নেই, খাটের নিচের গুহায় থাকবে যেমন থাকার। আউট অফ সাইট, আউট অফ মাইন্ড।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কিন্তু আর পারা গেল না। আত্মীয়স্বজনদের ভালোবাসা এবং ভদ্রতায় দেওয়াল আলমারি অবশেষে ফাটোফাটো হল। একটা আপাতসহজ ব্যবস্থা ছিল। যাঁদের প্রয়োজন আছে তাঁদের ডেকে দিয়ে দেওয়া। পুরোনো দিলে পুরোনো, নতুন দিলে নতুন। মুশকিল হচ্ছে আমার অভিজ্ঞতায়, সমাজসেবা দানধ্যান শক্ত কাজ। পরিশ্রমেরও। প্রথম পরিশ্রম, লোক জোগাড়। ত্রাণ সেক্টরের এন জি ও-দের সাউথ দিল্লি শাখায় শাখায় অল ক্যাপসে নোটিস, জামাকাপড় দেওয়া বন্ধ করুন। চতুর্দিকে সিসিটিভি, মাঝরাত্তিরে চুপি চুপি গাঁঠরি বেঁধে বাড়ির যাবতীয় ধুদ্ধুড়ে জামা ফেলে দিতে গেলেই ক্যাঁক। মাংকি ক্যাপও বাঁচাতে পারবে না, অটোর নাম্বারপ্লেট ছবিতে উঠে যাবে। অটোভাইসাবকে জেরা করে আমি পর্যন্ত পৌঁছতে পাঁচমিনিট। ওর মধ্যে আমি নেই। আর তো মোটে ক'টা দিন, তাদের মধ্যে আবার কয়েকটা জেলে থেকে নষ্ট করতে চাই না। এক দম্পতি ঘোরাঘুরি করতেন পাড়ায়, দেখা হলেই বলতেন পুরোনো যা আছে দিয়ে দাও। অর্চিষ্মান আজ দেব কাল দেব করে ঘোরাল, এখন তাঁরা কোথায় চলে গেছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রাস্তা একটাই। নতুন আলমারি কেনা। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আলমারি বলতে আমি এ যাবত একরকম জিনিসই বুঝে এসেছি। গোদরেজের স্টিলের আলমারি। ভুষো রঙের, ঘরের কোণে অ্যাটেনশনের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে। ছোটবড় শেলফ। সবথেকে নিচেরটায় জরুরি ফাইলপত্র, মাঝের আর ওপরটায় মায়ের শাড়িব্লাউজ, বাবার পাজামাপাঞ্জাবি শার্টপ্যান্ট, আমার ফ্রক স্কার্ট। রডে ঝোলানো হ্যাঙারে বাবার ভালো জামা, মায়ের ভালো শাড়ি। আমার ভালো বাজে সবই শেলফে গোঁজা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আলমারিটা মা বাপের বাড়ি থেকে এনেছিলেন। ঠিক পণ নয় কারণ শ্বশুরবাড়ি থেকে চাওয়া হয়নি। পণ তো দূর, বিয়েটাই চাওয়া হয়নি। জাত মিলছিল না। অবশ্য জাত মিললেই যে পণ চাওয়া হত নাও হতে পারে। আমার জেঠুজেঠির বিয়ে জাতগোত্র লগ্নতিথি কুষ্ঠিঠিকুজি আরও যা যা মেলানো সম্ভব সমস্ত মিলিয়ে হয়েছিল। সে বিয়েতে পণের ব্যাপার ছিল কি না জেনে দাদুঠাকুমাকে শেড দেওয়া অনুচিত। যাই হোক, বাবামা বিয়ের সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। তখন সবাই 'কী আর করা যাবে, আজকালকার ছেলেমেয়ে' বলে বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। গুষ্টিশুদ্ধু আত্মীয় তিনদিন আগে থেকে এসে মেঝেতে বিছানা পেতে ঘুমোল, বাস ভর্তি করে বরযাত্রী গেল, বিয়েবৌভাতে কবজি ডুবিয়ে খেল। খুঁতখুঁতটাও রয়ে গেল। সম্ভবতঃ সেই কারণেই (আমি শিওর ওই কারণেই) বাবামা বিয়ের পরের আট মাস হিন্দমোটরের একটা ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। ওই আটমাস কাকাপিসিরা দেখ না দেখ ব্যাগ গুছিয়ে, 'যাই বউদির বাড়ি দুদিন থেকে আসি' বলে রিষড়া থেকে হিন্দমোটরে চলে আসত। মা অফিস থেকে ফিরে দেখতেন ননদদেওরেরা, যে যখন থাকত, হয় মশারি কেচে রেখেছে, নয়তো উনুন ধরানোর জন্য সমস্ত কয়লা ভেঙে রেখেছে, নয়তো সারা বাড়ির ঝুল ঝেড়ে রেখেছে। বৌদির যাতে কাজ কমে। আমার ঠাকুমাদাদু অনেক কিছু ছিলেন, বোকা ছিলেন না। আটমাস পর দাদু একদিন হিন্দমোটরে গিয়ে বললেন, বাড়ি চল। মাবাবা 'বাঁচা গেছে' বলে দৌড়ে রিষড়া চলে এলেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পণ চাওয়া না হলেও, বিয়েতে মা খাটবিছানা জাজিমতোশক আলমারি নিয়েই এসেছিলেন। দিদিমা ততদিনে গত হয়েছিলেন, বোনের বিয়ের দায়িত্ব ছিল দাদাদের হাতে। মা মরা বোনকে যে তাঁরা একবস্ত্রে বার করে দেননি সেটা প্রমাণের দায় তাঁদের ছিল নিশ্চয়, কাজেই তাঁরা এ সব স্ট্যান্ডার্ড আইটেম সহযোগেই বোনকে বিদায় করেছিলেন। সেই গোদরেজ আলমারি, সেই সাতাত্তর সাল থেকে আমাদের বাড়িতে এখনও বিরাজ করছে। যাঁর আলমারি তিনি চলে গেছেন। বাবাকে তো বটেই, যা রকমসকম ও আলমারি আমাকেও, 'টাটা বাইবাই, আবার যেন দেখা না পাই' বলবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তবু কেনার সময় ও রকম আলমারি কেনার কথা মাথায় এল না। এক, জায়গার অভাব। জামা রাখার জায়গা নেই, আলমারি রাখার জায়গা কোত্থেকে পাব? তাও অত লম্বা? প্রতি দেওয়ালে হয় সুইচবোর্ড, নয় টিভি, নয় ছবি। ব্রেনকে খুব খাটিয়ে অবশেষে টিভির নিচে একটা ফাঁক বেরোল। মানে বার করতে হল। একটা টেবিলমতো পাতা ছিল সেটাকে কোণায় গুঁজতে হল। সোজা গোঁজা গেল না, কাত করে গুঁজতে হল। এই সব করে যে জায়গাটা বেরোল তাতে লম্বা আলমারি আঁটবে না। বেঁটে আলমারি কিনতে হবে। যেগুলোকে চেস্ট অফ ড্রয়ারস বলে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দ্বিতীয় কারণ, কেন যেন মনে হল ওই ধরণের গাবদা স্টিলের আলমারির পক্ষে আমরা 'টু কুল'। আমাদের বাড়িতে ধাতব ফার্নিচার নেই। গোটা দুই কাঠের (যেগুলো মা বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন) বাকি সব এঞ্জিনিয়ারড উড। চারপাঁচ বছর কাটতে না কাটতেই প্রত্যাশিতভাবেই শরীরে জরা প্রকট হতে শুরু করেছে। তবু আমাদের বুদ্ধি পাকেনি। কার্যকারিতা চুলোয় দিয়ে কোহেসিভ লুকের পেছনে পড়ে আছি। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চেস্ট অফ ড্রয়ারস নিয়ে রিসার্চ করে কয়েক সপ্তাহ নষ্ট করলাম। শর্টলিস্ট করে অর্চিষ্মানকে পাঠালাম। একটা পছন্দ হল। অর্ডার করলাম। অনলাইন। পাঁউরুটি পর্যন্ত অনলাইন কিনি, আলমারি কিনতেই বা কী। ইউটিউবে একটা রিলে কমেডিয়ান বলছিলেন, এক গ্লাস পানি ভি জোম্যাটো সে মাংগাতা হুঁ। আমাদের অবস্থাও প্রায় সে রকমই। জল পর্যন্ত নামিনি, কফি রেগুলারলি আনিয়ে খাই। সপ্তাহে অন্ততঃ দুবার। চায় পয়েন্ট বলে একটা দোকান আছে কালকাজীতে, কখনওই বন্ধ থাকে না। অথচ দোকানের বর্ণনায় কোথাও ২৪*৭ লেখা নেই। সে রকম ২৪*৭ একটা মোমোর দোকান আছে। রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে অথচ একটাও চোঁয়াঢেঁকুর ওঠেনি এমন হলে সেই দোকান থেকে আমরা কুড়কুড়ে ফ্রায়েড মোমো আনাই। চায় পয়েন্ট-এ সে রকম কোথাও লেখা নেই, অথচ রাত সাড়ে এগারোটাতে অর্ডার করে কফি পেয়েছি, ভোর পাঁচটা দশেও। একদিন অ্যালার্ম দিয়ে আড়াইটের সময় উঠে অর্ডার করে দেখতে হবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চেস্টের ডেলিভারির মুহূর্ত থেকে গোলমাল শুরু হল। খবর না দিয়ে ভাইসাবেরা হাজির হলেন, আমি আর অর্চিষ্মান তখন থার্ড ওয়েভ-এ বসে কাজের নামে ইউটিউব দেখছি। ভাগ্যিস পাশের পাড়াতেই। আলতো অফার করেছিলাম, আমি যাব? তুমি না হয় আরাম কর। চোখ ঘুরিয়ে অর্চিষ্মান বাড়ি গেল ডেলিভারি নিতে। ভাইসাব নাকি টেম্পোর মাথা থেকে দমাস করে প্যাকেট রাস্তায় ফেলেছিলেন। অ্যাসেম্বল করতে মনোজজী এলেন। প্যাকেট খুলে কপাল চাপড়ালেন। একটা শেলফের কোণার চলটা উঠে গেছে। অর্চিষ্মান দাবি করল দমাস শুনেই নাকি ও বুঝেছিল এ রকম কিছু একটা ঘটবে। চলটার ছবি তুলে আফটারগ্লো ফিল্টার অ্যাপ্লাই করে ভেন্ডারের সাইটে আপলোড করলাম। বিনা বাক্যব্যয়ে নতুন শেলফ চলে এল। মনোজজী আবার এলেন। কাজে লাগলেন। আড়াই মিনিটের মধ্যে সি আর পার্ক কাঁপানো হাহাকার। 'কেয়া হুয়া কেয়া হুয়া' বলতে বলতে দৌড়ে গিয়ে দেখি মুখমণ্ডলে আতংক বিষাদ মাখামাখি। কথা বলার অবস্থা নেই, অঙ্গুলিনির্দেশ করলেন। আরও একটা শেলফ, অরিজিন্যাল প্যাকেজের, ভেঙে প্রায় দু'খানা। আগের শেলফের চলটা আবিষ্কার করে আমরা এত মুহ্যমান হয়ে পড়েছিলাম যে বাকিগুলো চেক করিনি। আবার ছবি, আবার আফটারগ্লো, আবার আপলোড। ভারতবর্ষের কাস্টমার সার্ভিস একটা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, নতুন তাক চলে এল, নো কোয়েশ্চনস আস্কড।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এই যে মনোজজী আসছিলেন যাচ্ছিলেন, একেবারে ভস্মে ঘি ঢালা হচ্ছিল না। জুতোর বাক্সের চারটের মধ্যে দুটো তাক ভেঙে পড়েছিল, সারিয়ে দিলেন। বুককেসের একটা তাকে বোকার মতো একইসঙ্গে পরশুরাম, ত্রৈলোক্যনাথ, সন্দীপন উপন্যাস ১ ও ২, লীলা মজুমদার ১ ২ ও ৩ সমগ্র রেখেছিলাম, সে তাক ধনুকের মতো বেঁকে নিচের তাকের বইয়ের মাথা ছুঁয়ে ফেলেছিল। ঠিক করে দিলেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মা যে কাঠের বুককেসটা বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন সেটাতে বিশ্বের সমস্ত সমগ্র চাপালেও টসকাবে না। তবু কাঠের জিনিসের দাম দেখে এমন ছ্যাঁত করে ওঠে যে ফার্নিচারের নামে এই সব এঞ্জিনিয়ারড উডের ধ্যাষটামো কিনে আনি। মাশুলও গুনি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শিক্ষা জিনিসটা আর যারই হোক, আমার হওয়ার নয়। এই যে চেস্টটা কিনলাম, মারাত্মক স্লিক। এক চামচ চর্বিও নেই। অর্থাৎ হ্যান্ডেলও না। প্রত্যেকবার টানার সময় দুই হাত সাতচল্লিশ ইঞ্চি ছড়িয়ে ড্রয়ারের দুই প্রান্ত ধরে টানতে হবে। শক্তপোক্তের কথা তো ছেড়েই দিলাম। তিনটে শেলফে তিনশো তিনশো করে করে ন'শো গ্রাম জামা রাখলাম, ওইরকম দুই হাত ছড়িয়ে টানতে গিয়ে ড্রয়ার একদিকে কাত হয়ে পড়ল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্রথমবার ফেল করাতেই আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম এ জিনিস টিকবে না, বিদায় কর। ভুল হয়ে গেছে কান মুলে হার স্বীকার কর। পয়সা নষ্ট হয়েছে বলে আরও পয়সা ঢেলো না। অর্চিষ্মান বলল, সারানো যায় কি না দেখি একবার। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মনোজজী এলেন। বললেন, আমি বেটার স্ক্রু এঁটে দিয়ে যাচ্ছি। দেখবেন সারা পাড়ার জামা রাখলেও টসকাবে না। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মনোজজী গেলেন, সাবিত্রী পর্যন্তও পৌঁছননি, আমি ড্রয়ারে সব জামাকাপড় তুলে পরীক্ষা পার্পাসে টানতেই বেটার স্ক্রু মটকে গেল। জামাকাপড়শুদ্ধু গোটা ড্রয়ার আমার সাতচল্লিশ ইঞ্চি ছড়ানো দুই হাতের মধ্যে। ধীরে হলেও মাধ্যাকর্ষণ ডেফিনিটলি জিতছে। যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যে প্রতিক্রিয়াটা আমার প্রথম জাগে, পরিস্থিতিটার কারণটাকে আছড়ে ভাঙার, সেটা চরিতার্থ করতে গেলে আমার দু'পায়ের পাতাই চূর্ণ হবে। ডিপ ব্রিদিং করতে করতে কোনওমতে উল্টোদিকে ঘুরে গোটা জিনিসটা খাটে নামিয়ে রাখলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শরীরমগজের মধ্য দিয়ে রাগের সুনামি বইতে লাগল। রাগটা অর্চিষ্মানের কিংবা মনোজজীর ওপর নয়, অন গড ফাদার মাদার। নিজের ওপর। যোগ না শিখে দুয়ে দুয়ে পাঁচ আশা করলে একরকম সান্ত্বনা থাকে। ক্যালকুলাস পেরিয়ে এসে দুয়ে দুয়ে যোগ করে বাইশের জন্য বসে থাকলে?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নিজের ওপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা যায় না। আত্মসংরক্ষণের খাতিরে অন্য কারও ওপর ট্রান্সফার করতে হয়। জামাকাপড়গুলো বিছানার ওপর লাইন দিয়ে সাজালাম যাতে অর্চিষ্মান টের পায় চেস্টটা ফেলে দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্তে আমি ঠিক ছিলাম, ও ভুল। ঘরে ঢুকে অর্চিষ্মান বলল, ওরে বাবা, এ সব কী হয়েছে? উদাস গলায় বললাম, যা হওয়ার ছিল। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মনোজজী এলেন। আমি বললাম, আরেকবার চেষ্টা করে দেখুন। একেবারে নতুন কেনা, ফেলে দিতে গায়ে লাগছে। অর্চিষ্মান বলল, এটাই লাস্ট অ্যাটেম্পট, এবার না সারলে টান মেরে ফেলে দেব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মনোজজী বললেন, তওবা তওবা, ফেলবেন কেন? ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্রেংথের চ্যানেল বসিয়ে দিয়ে যাচ্ছি, ফেলতে হবে না। আমরা বললাম, এত নির্মেদ বডিও চাই না, হ্যান্ডেল বসিয়ে দিন। মনোজজী বললেন, এটা ভালো আইডিয়া। তিনটে ড্রয়ারের মাঝখানে একটা করে হ্যান্ডেল বসিয়ে দিচ্ছি। লুকস্ ভি জ্যাদা খারাব নেহি হোগা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সমস্বরে আর্তনাদ করলাম। লুকস্ যিতনা খারাব হো সকে উতনা হি খারাব চাহিয়ে। তিনটে ড্রয়ারের মাঝখানে একটার বদলে দুই হাত ভদ্রভাবে ছড়ানোর দূরত্বে দুটো করে ছ'ছটা হ্যান্ডেল পোঁতা হল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দুটো শিক্ষা হয়েছে। অ্যাট লিস্ট, হওয়া উচিত। এর পর থেকে ফার্নিচার কিনলে স্ট্রিকটলি বিশুদ্ধ কাঠের কিনব (কিংবা স্টিলের) অ্যাফর্ড করতে না পারলে কিনব না। জামাকাপড় জুতো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব। নো মোর এঞ্জিনিয়ারড উড ননসেন্স।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দ্বিতীয় শিক্ষা ফার্নিচারের রকমসংক্রান্ত। সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতিতে যে সব ফার্নিচার ব্যবহার হয় সে ছাড়া আর কোনও রকম কিনব না। জামাকাপড় রাখতে হলে কাবার্ড, ওয়ার্ডরোব, চেস্ট অফ ড্রয়ারসের ধ্যাষ্টামোর বদলে পরিষ্কার গোদরেজের আলমারিতে রাখব। রোজের ব্যবহারের জামাকাপড়ের জন্য আলনা থাকবে। খোলা। উন্মুক্ত, ফুরফুরে আলনা। সামনের রডগুলোতে শার্ট প্যান্ট কামিজ সালওয়ার বুক ফুলিয়ে হাওয়া খাবে। পেছনের রডগুলোতে অল্প লজ্জা পেয়ে মোজা রুমাল অন্তর্বাস।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আসল শিক্ষাটা অবশ্য অন্য। স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়ার সুপারফিশিয়াল প্রগতি বাদ দিলে ঠাকুমাদাদুদের সঙ্গে আমাদের জীবনের কিস্যু তফাৎ নেই। বাবামাদের সঙ্গে তো নেইই। বাড়ির স্টোরেজ সমস্যার যে সমাধান তাঁদের কাজে দিয়েছিল সেটা আমাদেরও দেবে। নতুন করে চাকা আবিষ্কারে নামার কোনও দরকার নেই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মনোজজীকে আর স্মরণ করতে হয়নি। হ্যান্ডল ধরে কমফর্টেবলি টানাটানি ঠেলাঠেলি করা যাচ্ছে। তিনটে তাকই ভরে উঠেছে। আমাদের জামাগুলো একটু হাতপা ছড়িয়ে আরাম করে শুতে পেরেছে। অর্চিষ্মান এবেলা ওবেলা মনে করাচ্ছে ওর অপার ধৈর্য আর হাল না ছাড়া ইত্যাদি ভালো ভালো গুণের জন্যই এ মির্যাকল সম্ভব হচ্ছে। এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বার করে দিচ্ছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পুজোও এসে গেছে। খবর পাচ্ছি সবাই শপিং করতে বেরোচ্ছে্। বুক ধুকপুক করছে। লাভ ল্যাংগোয়েজে ছিপি তো দিতে পারব না। দেওয়ার দরকারও নেই। লাভ জিনিসটা এখনও দোকানে কিনতে পাওয়া যায় না। তাছাড়া কীই বা হবে? ক'মাস বাদে আরেকটা আলমারি কিনতে হবে। কিনব। এবার স্ট্রিক্টলি গোদরেজ। স্থানসংকুলান নিয়ে একটা গোলমাল বাধতে পারে, তারও সমাধান আছে। একটা বড় বাড়িতে শিফট করে গেলেই হবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com7tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-77188312114590552602023-10-04T11:04:00.006+05:302023-10-04T12:58:16.539+05:30মিরর, মিরর<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><div class="p2"><br /></div><div class="p1">গরমের ছুটি বা পুজোর ছুটিতে বেড়িয়ে ফেরা হচ্ছিল। একটা ফ্যামিলি মাঝরাস্তা থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন। বাবা মা, ছেলে মেয়ে। যতদূর মনে পড়ে একাধিকই ছিল। আমাদের কুপে পৌঁছে শার্টের পকেট থেকে টিকিট বার করে বাবা এদিকওদিক তাকাতে লাগলেন। সব বার্থ অকুপায়েড। লোকটি ভদ্র, চেঁচামেচি না করে টিটিইকে ডাকলেন। টিটিই এবং সহৃদয় সহকর্মীরা টিকিট পরীক্ষা করে বললেন, এ কী, এ তো কাল গভীর রাতের ট্রেনের টিকিট। আপনি এ এম পি এম গুলিয়ে পরের দিনের ট্রেনে উঠে পড়েছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">স্টেশনটা বড় গোছেরই ছিল। এত কাণ্ড হতে হতেও ট্রেন ছেড়ে দেয়নি। নাকি দিয়েছিল? মনে নেই। দিলেও পরের স্টেশন আসতে বেশিক্ষণ লাগেনি। মোদ্দা কথা, ভদ্রলোক অচিরেই লটবহর লোকলস্কর নিয়ে নেমে গিয়েছিলেন। সামনে তো পেটভরে উপদেশ দিয়েইছিল, ভদ্রলোক সপরিবার নেমে যাওয়ার পরেও উত্তেজনার যেটুকু ঢেউ বাকি ছিল তাতে দুলতে দুলতে কামরাশুদ্ধু লোক বলাবলি করছিল, কী অবস্থা, অ্যাঁ? একটু খেয়াল করবে তো। কতগুলো টাকা নষ্ট। কেউ কেউ, কী আর করা, কিছু পাবলিক এ রকম বেখেয়াল, ইত্যাদি মতামত দিচ্ছিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমি দিইনি। মতামতের অভাবের জন্য নয়। আমাকে যে কারিকুলামে বড় করা হচ্ছিল তাতে আমার থেকে ভিন্ন (বেসিক্যালি, বড়) এজ গ্রুপের কথাবার্তায় ঢুকে পড়ে নিজের মত প্রকাশ আউট অফ সিলেবাস। কাজেই চুপ করে দেখছিলাম। ভদ্রলোকের মুখ। ভদ্রলোকের স্ত্রী, পুত্রকন্যার মুখচোখ। পুত্রকন্যারা আমারই এজ গ্রুপের। আমার সেম ট্রেনিং-এই বড় হচ্ছিল মনে হয়। বাবার দায়িত্বে ভুল ট্রেনে উঠে পড়ে বেড়াতে যাওয়া মাটি হওয়ার ডিস্যাপয়েন্টমেন্ট স্রেফ চুপ করে গিলে ফেলছিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ইন্টারেস্টিং লেগেছিল মহিলার চুপ করে থাকাটা। লাফিয়ে পড়ে দোষারোপ করতে হবে বলছি না, কিন্তু এই সব পরিস্থিতিতে যা স্বাভাবিক রিঅ্যাকশন, ইস্ কী ভুল হয়ে গেল, ইস্ কত টাকা নষ্ট হল, ইস্ বড়মাসি কী মনে করবে, এই সব হাহুতাশও তিনি করছিলেন না। ছেলেমেয়েদের মতো স্পিকটি নট হয়ে ছিলেন গোটা এপিসোড। এবং সেটা ঠিক স্টোইসিজমে বিশ্বাস করেন বা মহাকালের নিরিখে এ সব সমস্যা তুশ্চু টাইপের জ্ঞানার্জনের ফলে বলে মনে হয়নি আমার। উনি চুপ ছিলেন কারণ বেড়াতে যাওয়া, টিকিট কাটা ইত্যাদি গোটা প্রক্রিয়াটায় ওঁর উপস্থিতি এতই কম যে প্রক্রিয়াটার কোথাও গোলমাল ঘটলে সেটায় রিঅ্যাক্ট করার অধিকারী উনি নিজেকে মনে করেননি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একটিমাত্র পরিস্থিতিতে পাত্রপাত্রীদের দেখে তাদের যাবতীয় ইতিহাসভূগোল নিয়ে এতগুলো নিঃসংশয় সিদ্ধান্তে পৌঁছনো দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ভবিষ্যতে কী লেভেলের জাজমেন্টাল হতে চলেছি।। আমার কঠোরতম জাজমেন্টটি তোলা ছিল ভদ্রলোকের প্রতি। ভদ্রলোকের বিচলিত এবং সামান্য লজ্জিত মুখের দিকে তাকিয়ে আমি দুটো সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম। এটা ওয়ান-অফ ঘটনা না। ভদ্রলোক এ জিনিস আগেও ঘটিয়েছেন, পরেও ঘটাবেন। এ এম পি এম গোলাবেন, সময়ের হিসেব না রাখতে পেরে ট্রেন মিস করবেন। এটা যত না ভুল তার থেকে বেশি টাইপ। (অধিকাংশ ভুলই তাই, যে কারণে কেউ একটা ভুল জীবনে মাত্র একবার করে না।) দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটা হচ্ছে, এই টাইপের লোকের স্বামী এবং পিতা হওয়ার কোনও যোগ্যতা নেই। আমি আর যাকেই করি, এই টাইপের লোককে বিয়ে করব না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">লোককে একটা কি দেড়টা পরিস্থিতিতে দেখে টাইপ ধরে ফেলার খেলাটা এখনও আমার ভেতরে চলতে থাকে। বদলানোর তাগিদ টের পাই না, কারণ, এক, ওটা আমার টাইপ আর টাইপ অত টপ করে বদলানো যায় না। দুই, বহুদিন ধরে লোককে টাইপকাস্ট করতে করতে প্র্যাকটিসটায় বেশ পারফেক্ট হয়ে উঠেছি। চট করে ভুল হয় না। আর সবথেকে জরুরি উপকারটা হচ্ছে তিন নম্বর। লোককে টাইপকাস্ট করে ফেললে তার প্রতি প্রত্যাশা ও প্রতিক্রিয়া কাটছাঁট করে নেওয়া যায়। এনার্জি বাঁচে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একমাত্র যে বদলটা ঘটেছে সেটা হল, কীসে ভালো স্বামী হয় কীসে ভালো বাবা, সেটা অত ঝপাং করে বুঝে ফেলা যায় না এই চেতনার উন্মেষ। বাজারে যে রকম রোমহর্ষক বর আর বাবাদের নমুনা দেখি, সে তুলনায় টিকিটের টাইম গুলিয়ে ফেলে বেড়াতে যাওয়া মাটি করার অপরাধ তুশ্চু। ভদ্রলোক হয়তো দয়ালু। ক্ষমাশীল। ভদ্র। বউবাচ্চাকে মন থেকে ভালোবাসেন। স্বার্থপর নন। এই গুণগুলো থাকলেই তিনি চমৎকার বাবা ও বর। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কিন্তু চন্দ্রিল ঠিকই বলেন, তত্ত্ব আর সত্য অনেকসময়েই আলাদা হয়। তত্ত্ব দিয়ে জানি একসঙ্গে থাকার জন্য শেষের গুণগুলোই বিবেচ্য হওয়ার কথা, কিন্তু এ সত্যও জানি, এই টাইপের লোকের সঙ্গে থাকতে আমার ভীষণ কষ্ট হত। এ এম পি এম গুলিয়ে ভুল ট্রেনে উঠে পড়ছে, সাড়ে দশটায় বলে একবারও সাড়ে এগারোটার আগে বাড়ি থেকে বেরোতে পারছে না, প্রাণপণ দৌড়ে ছেড়ে দেওয়া ট্রেনে উঠছে, প্লেনে ওভাবে ওঠা যায় না বলে মিস করছে, লোকের এই সব কিউট দোষের গল্প যত হাসি হাসি মুখে শুনি, বুকের ভেতর ঢেঁকির পাড় পড়তে থাকে। জোর বাঁচা বেঁচেছি। এ সব পাবলিক যতই রূপে কার্তিক গুণে গণেশ হোন না কেন, সঙ্গে থাকতে গেলে আমি ছবি হয়ে যেতাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভদ্রলোকের কথা, ট্রেনের ওই ঘটনাটার কথা মনে পড়ল পরশু। যেদিন জয়পুরের বদলে চণ্ডীগড়ের ট্রেনে চড়ে বসে ছিলাম সেদিনও মনে পড়তে পারত। পড়েনি। পরশু আমরা স্থির করলাম দীর্ঘ রোগভোগের পর এবার আবার শরীরমনকে রোদহাওয়া খাওয়ানোর সময় এসেছে। পুজোর মুখে একগাদা বাংলা সিনেমা আসবে, অন্ততঃ সেই রকমই আমাদের আশা, যেগুলো দেখে হুলিয়ে নিন্দে করব। আপাততঃ দেখার মতো একটাই সিনেমা চলছে, আ হন্টিং ইন ভেনিস। হ্যালোউইন পার্টি-র ওপর লুজলি বেসড পোয়্যারো মিস্ট্রি। চলছে পি ভি আর প্রমেনাড-এ, বাড়ি থেকে প্রচুর দূর। খুশিই হলাম। বেড়ানো হবে। নেহরু প্লেস পর্যন্ত গেলে অসুখের অন্ত যথাযথ সেলিব্রেট করা হবে না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সকাল দশটা পঞ্চান্নর শো। খুশি বাড়ল। ফাঁকা হলে সিনেমা দেখার সুবিধে আছে। লোকে চিৎকার করে ফোনে কথা বলে না, আমার সিটের পেছনে ক্রমাগত লাথি মারে না। অর্চিষ্মান অনেকদিন পর্যন্ত আমার এই দাবি ফাইট করছিল। এটা কি সম্ভব? সব শোতে সবাই তোমার সিটের পেছনে লাথি মারছে? আমি বলেছি, আরে মারছে তো দেখাই যাচ্ছে, আমি কি মিথ্যে কথা বলছি? চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে হার মেনে আজকাল হলের সবথেকে পেছনের রোয়ের সিট কিনতে শুরু করেছে অর্চিষ্মান। কিন্তু এ শোয়ের যা দামের বিন্যাস, শেষ রোয়ের টিকিট কাটা বাড়াবাড়ি। আশায় বুক বাঁধলাম, সকালের শোতে এই সিনেমা দেখতে কেউ আসবে না। হল ফাঁকা থাকবে। আমি মাঝের রোতে বসেও লাথি-ফ্রি সিনেমা দেখার আনন্দ উপভোগ করব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পাঞ্জাবী মলের সজ্জা আমার এত খারাপ লাগে। অবশ্য কলকাতার কিছু শপিং মলের সাজও মারাত্মক। পাঞ্জাবী বাঙালি নির্বিশেষে তার মানে শপিং মলের সজ্জা বিকট হওয়াটাই দস্তুর। মেঝে এত চকচকে, ভয় হয় পিছলে পড়ে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ না করি। চারপাশে ঘুমন্ত ফুড কোর্ট জাগছে। কর্মচারীরা কেউ কাঁধ আর কানের মধ্যে ফোন চেপে টাইয়ে ফাঁস লাগাচ্ছেন, কেউ ঝাঁট দিচ্ছেন, কেউ শাটার তুলছেন। আমরা সিনেমা হলের সোনালি আলপনা দেওয়া বিরাট বিরাট কাচের গেটের দিক এগোলাম। আজকাল খুব ঘটা করে নমস্কার করার চল হয়েছে এই সব জায়গায়। একটা অল্পবয়সী ছেলে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, হেসে নমস্কার করল। আমরাও হেসে নমস্কার করে ফোন বাড়িয়ে ধরেছি, সে টিকিটটা দেখে কনফিউজড মুখে বলল, লেকিন সার, ইয়ে তো পি এম হ্যায়, এ এম নেহি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ছেলেটার প্রাণে দয়ামায়া আছে। আমাদের মুখ দেখে বলেছিল, আপনারা হরর দেখতে চান, আমি খোঁজ নিচ্ছি এই শোতে হরর চলছে কি না ইত্যাদি, আমরা না না বলে অকুস্থল ত্যাগ করলাম। তারপর ফাঁকা মলেই এদিকসেদিক ঘোরা হল। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় দুজনেই ডিসওরিয়েন্টেড হয়ে গিয়েছিলাম। শান্ত হওয়ার জন্য একটা আশু মজার দরকার ছিল। সিনেমা দেখা ছাড়া মজা বলতে খাওয়া। প্রসেনজিৎ হওয়ার রেজলিউশন একবেলার জন্য স্থগিত রাখতে হবে। এদিকে খাওয়ার দোকান খুলবে সেই বারোটায়। একটা খোলা পাওয়া গেল, বিশেষ সুবিধের না। মানে আমার পক্ষে সুবিধের না। নিরামিষ বলতে খালি একগাদা কিনুয়া স্যালাড, কিনুয়া টিক্কি, কিনুয়া প্যানকেক। ওখানেই ঢুকলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দোকানে গেলে সাধারণতঃ এমন খাবারই নেওয়া হয় যা দুজনে খেতে পারি, অর্থাৎ ভেজ। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে অর্চিষ্মানকে চেপে ধরে কিনুয়া প্যাটি খাওয়ানোর মতো পাষণ্ড আমি নই। বললাম, যা অর্চিষ্মান, খা লে আপনি ননভেজ। অর্চিষ্মান উত্তেজনা আর খুশি যথাসম্ভব চেপে রেখে পেপেরোনি পিৎজা অর্ডার করল। একা একবারে পারবে না, প্যাক করিয়ে নিতে হবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমার কিন্তু তার কেটে গিয়েছিল। কিনুয়া প্যাটি চিবোতে চিবোতে আড়চোখে অর্চিষ্মানের দিকে তাকাতে থাকলাম। যুগযুগান্ত আগের ট্রেনের ভদ্রলোকের মুখের সঙ্গে অর্চিষ্মানের মুখ মেলাতে লাগলাম। আমার সমস্ত ইনটুইশন কি ব্যর্থ হয়েছে? এতবার ট্রায়াল অ্যান্ড এরর করে কি শেষমেশ আমি এমন লোককেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছেছি যে এ এম পি এম গুলিয়ে সিনেমার শো মিস করে? নিজের মুখের কল্পনায় বার বার ভদ্রমহিলার মুখ ভেসে উঠতে লাগল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কিন্তু আমার সঙ্গে ভদ্রমহিলার একটা বেসিক তফাৎ আছে। ভদ্রমহিলার মুখ দেখে যে আমি ধরতে পেরেছিলাম যে এই টিকিটের ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন, তাঁকে যেদিন য'টার সময় রেডি হয়ে থাকতে বলা হয়েছে তিনি যে সেদিন ত'টার সময় সংসারের কাজ সেরে ছেলেমেয়েদের রেডি করে নিজে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়েছেন, আমার সঙ্গে তো সে রকমটা ঘটেনি। অর্চিষ্মান আর আমার দেড়খানা মিলের আধখানা মিল হচ্ছে কনফিডেন্স দুজনেরই তলানিতে। যে কোনও টিকিট ইত্যাদি কাটার ব্যাপার থাকলেই আমরা একশোবার করে দেখো দেখো করে অপরকে জ্বালিয়ে খাই। জ্বালাতনের রেসিপিয়েন্ট প্রত্যেকবারই যারপরনাই বিরক্তি প্রকাশ করে। এত দেখেশুনে শেষে কি না এমন একজনের পাল্লায় পড়লাম যে একটা সিনেমার/ট্রেনের/প্লেনের/একজিবিশনের টিকিট একা কাটতে পারে না? </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এই পার্টিকুলার দোকানটার একটা মজা আছে, সেটা হচ্ছে প্রচুর আয়না। সিলিং-এ, দেওয়ালে, পামগাছের পেছনে, সিটের কোণে। যতবারই যাই, কোনও একটাতে চোখ পড়ে গিয়ে আঁতকে উঠি। কোনও একটা অপ্রত্যাশিত দেওয়াল বা কোণাঘুঁজি থেকে এক পাকাচুল বুড়ি চশমাভর্তি জাজমেন্ট নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। চেনা চেনা মুখ কিন্তু ঠিক প্লেস করতে না পারার সোয়া সেকেন্ডে হৃদপিণ্ড বিট মিস করে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অনেকদিন পর পর যাওয়া হয় বলে এবং আমার ধারণা রেগুলারলি আয়নাদের লোকেশন চেঞ্জ করা হয় বলে, এ আঁতকে ওঠা প্রস্তুতি নেওয়া অসম্ভব। এবারও পারলাম না। কিনুয়া গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে প্লেটে ছত্রাকার হয়েছিল। ছুরিকাঁটা দিয়ে তোলা যায় না, এদিকে খাবার নষ্ট করা কিংবা ছড়িয়েছিটিয়ে খাওয়ার পারমিশন নেই নিজের। কাজেই সেই সব গুঁড়ো তুলে খাওয়ার জন্য চামচ চাই। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হাত তুলেছি এমন সময় আবার আয়নার অ্যাম্বুশ। পাকাচুল, জাজমেন্টাল বুড়ির আচমকা আত্মপ্রকাশ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সোয়া সেকেন্ডের শক সামলে অর্চিষ্মানের দিকে চোরা চাহনি দিলাম। হাসি হাসি মুখে পেপেরোনি পিৎজা খাচ্ছে। হাসির আড়ালের অমোঘ কারুণ্য আমার দৃষ্টি এড়ালো না। কারণ আজ ওই সোয়া সেকেন্ডের পিলেচমকানোর মধ্যেই বুড়ির টাইপটা ধরে ফেলেছি। আমি কার পাল্লায় পড়েছি জানি না, অর্চিষ্মান ডেফিনিটলি এমন একজনের পাল্লায় পড়েছে যে এ এম পি এম গুলিয়ে একটা সিনেমা পর্যন্ত ঠিক করে দেখে উঠতে পারে না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পুনশ্চঃ রাতের শোতে সিনেমাটা আবার দেখতে গিয়েছিলাম। এবার ভালো করে টিকিট পরীক্ষা করে গিয়েছিলাম, ভুল হয়নি। সকালের শো হলে কী হত জানি না, রাতের শোতে ভিড় হয়েছিল। আমার পেছনে লোক বসেছিল এবং লাথিও মেরেছিল। বেশ জোরে। অ্যাকচুয়ালি, লাথির থেকেও খারাপ। পা এত ছড়িয়ে বসেছিল যে তার উজালায় কাচা ধপধপে সাড়ে তিন কেজির স্নিকার্স আর আমার সিটের পিঠের মাঝখান থেকে আমার ঝুঁটি টেনে বার করতে হয়েছিল। ঘটনাটা মনে পড়ল দিনদুয়েক পর। অর্চিষ্মান হাতের কাছে ছিল না, হোয়াটসঅ্যাপেই জানাতে হল। নীল টিক দেখে বুঝলাম মেসেজটা তক্ষুনি পড়া হয়েছে। যদিও উত্তর এল দশ মিনিট পর। একটা কোটেশন। <span style="font-family: georgia;">If you run into an asshole in the morning, you ran into an asshole. If you run into assholes all day, you're the asshole. </span></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">উত্তর দেওয়ার, বলা বাহুল্য, প্রয়োজন বোধ করিনি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com4tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-33380655002720839742023-09-25T17:54:00.013+05:302023-09-25T21:53:13.368+05:30ভাইর্যাল ফিভার ও প্রসেনজিতের ডায়েট<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><div class="p2"><br /></div><div class="p1">অর্চিষ্মানের গা যেই না গরম হল, গলা খুশখুশ, গা টনটন - রেডি হলাম। দু'ঘরের ঘেরাটোপে এ ভাইর্যালের কবলে একজন পড়লে অন্যজন পালানোর আশা থাকে না। পরদিন থেকে আমারও হল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দিনতিনেক পর চোখ খুলে বিছানার দু’প্রান্ত থেকে একে অপরের দিকে তাকানো গেল। তারপরের বিবরণী ধীর হলেও ক্রমোন্নতির। আপাততঃ দুজনেই বিপদসীমার বাইরে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জ্বরজারির সবই খারাপ না। প্রথম তিনদিন বাদ দিলে শারীরিক কষ্টের সঙ্গে সঙ্গে মজাও হল। শুয়ে শুয়ে ইউটিউবে বাংলা সেলেব্রিটিদের ইন্টারভিউতে স্ট্রাগলের কাঁদুনি আর মূল্যায়ন না হওয়ার হাহাকার শুনলাম। হইচইতে নিখোঁজ দেখলাম, নেটফ্লিক্সে দেখলাম কোহ্রা। জানি সবাই দেখে ফেলেছে, অর্চিষ্মান অন্ততঃ পাঁচশোবার বলেছে দেখো দেখো, কেন যে দেখিনি কে জানে। কী ভালো, বাবাগো। সবই ভালো, সবাই ভালো, কিন্তু সুভিন্দর ভিকি মহাশয়কে দেখে আমি বুঝভম্বুল, এত ভালো অভিনয় কী করে করে লোকে? তারপর চন্দ্রিলের লীলা, সত্যজিৎ, বিভূতিভূষণ, ডিসটোপিয়া নিয়ে বক্তৃতা আবাআআর শুনে, উৎসব, শুভ মহরৎ, তিতলি, উনিশে এপ্রিল আর সোনার কেল্লা আবাআআর দেখলাম। এবার কিছু পড়লে হয়। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"> দ্য নিউট্রাল বিয়েতে পেয়েছিলাম। আমাদের বৌদ্ধিক লেভেল সম্পর্কে আরও একটি ভুল এস্টিমেশনের লজ্জাজনক রিমাইন্ডার। দশ বছর ধরে শুরু করতে পারিনি। এখন শুরু করার সময় নয়। জলের গ্লাস পর্যন্ত পাঁচ সেকেন্ড পেরোলে হাতে ভারী ঠেকছে কাজেই সুকুমারসমগ্রও বাদ। বিষাদও দ্রুত নিরাময়ের পরিপন্থী, কাজেই নো পথের পাঁচালী, নো বেল জার। অলরেডি সর্বাঙ্গে ব্যথা, হো হো হাসিও চলবে না। সুকুমারসমগ্র আরেকবার বাদ, থ্রি মেন ইন আ বোটও। কাঁড়ি কাঁড়ি গোয়েন্দাবই, হয় মোটা, নয় বেশি মোটা। জট পাকাতে, ছাড়াতে বড় বেশি সময় লাগান লেখকরা। অর্চিষ্মানের তাকে কোটি কোটি সায়েন্স ফিকশন, কবে থেকে ভাবছি একটা একটা করে শেষ করব, ঝামেলা হচ্ছে অধিকাংশ সাইফাইওয়ালারাও কম কথায় সারতে পারেন না। কল্পবিজ্ঞানের ছোটগল্প যা যা আছে সে সবও সমগ্র বা সংকলন। পাতলা বই বলতে কবিতা। সেগুলো আবার ও ঘরে। উঠে যাওয়ার কথা ভাবতেই মাথা ঘুরছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভাবতে ভাবতেই দেখি অর্চিষ্মান উঠে টলতে টলতে ও ঘরের দিকে চলেছে। কান খাড়া করলাম। বুককেসের পাল্লা খোলার আওয়াজ। কয়েকবছর আগে পর্যন্ত ভাবতাম আমরা সোলমেট তাই একসঙ্গে একই ভাবনা মাথায় আসে। ভাবতাম মানে আমি ভাবতাম। অর্চিষ্মান এখনের মতোই তখনও আমার থেকে একশোগুণ বুদ্ধিমান ছিল, ও এ সব ভাবত না। বলত, সোলমেট না হাতি, এক কথা মাথায় আসার একমাত্র কারণ হচ্ছে আমরা ডিপ্রেসিংলি আনঅরিজিন্যাল। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">খানদুয়েক চটি বই নিয়ে ফিরল অর্চিষ্মান। একটা উড়ে আমার নাকের দিকে আসছে টের পেয়ে তাড়াতাড়ি মাথা সরালাম। চশমাটা খুঁজে পরতে পরতে বললাম, সুনীল না শক্তি? তারপর চশমা পরে দেখি সুনীলও না শক্তিও না, টিনটোরেটোর যীশু।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভুলেই গিয়েছিলাম। ফেলুদা সমগ্র আছে বাড়িতে, স্ট্যান্ড অ্যালোনও যে কেনা আছে কয়েকটা ভুলেই গিয়েছিলাম। টিনটোরেটোর যীশুর প্রথম পাতায় লাইব্রেরির স্ট্যাম্প। পাড়ার লাইব্রেরির। দেখেই বুক ছ্যাঁত করে উঠেছে, এনে ফেরত দিতে ভুলে গেছি নাকি। তারপর মনে পড়ল। পৌষমেলায় লাইব্রেরির স্টল বসে, রোগা বই তিরিশ মোটা বই পঞ্চাশ দরে বিক্রি হয়, সেই স্টল থেকে কেনা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমি টিনটোরেটোর যীশু, অর্চিষ্মান সোনার কেল্লা নিয়ে দু'জনে দু'পাশ ফিরে শুয়ে রইলাম। চেনা গল্প, প্রিয় চরিত্রদের সঙ্গলাভ করতে করতে আমাদের মন শরীর দুইই ভালো হতে লাগল। ঠিক করলাম ফেলুদার সব আলাদা আলাদা বইগুলো কিনে রাখব। হোপফুলি জীবনের এটাই শেষ জ্বর নয়, নেক্সট জ্বরগুলোতে কাজে লাগবে। এমন সময় পিঠে টোকা মেরে নিজের বইটা আমার হাতে দিয়ে অর্চিষ্মান বলল, দেখো। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সোনার কেল্লা-র কপিটা অপেক্ষাকৃত নতুন। তার মানে রোগামোটা দরে কেনা নয়। ভাবছি কী দেখার আছে, পাতা এদিকওদিক ওল্টাচ্ছি, অর্চিষ্মান বলল, আরে প্রথম পাতাতেই আছে যা দেখার। খুলে দেখি দুজনের নাম, সালতারিখ সহযোগে। আমারই হাতের লেখা। আমার তরফ থেকে অর্চিষ্মানকে জন্মদিনের গিফট। বিয়ের আগে। হয়তো দিল্লিতে বইটা নেই বলে আফসোস করেছিল কোনওদিন, হয়তো সে দিনও জ্বর এসেছিল ওর, কাজেই আমি জন্মদিনে ওকে এই বইটা গিফট করেছিলাম। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সালতারিখগুলো দেখলে অবাক লাগে। আমি তো সম্পূর্ণ অন্য মানুষ ছিলামই, অর্চিষ্মানও সম্ভবতঃ অন্য কেউ ছিল। ওই অর্চিষ্মানকে আমার ভালো লাগত বোঝাই যাচ্ছে। না হলে আর জন্মদিনে বই দিচ্ছি কেন, তাও আবার সোনার কেল্লা। ইন্টারেস্টিং হচ্ছে ওই কুন্তলাটিকেও আমার ভালো লাগত। কী চমৎকার হাতের লেখা। অথচ ওই কুন্তলার কি নিজেকে ভালো লাগত? সম্ভবতঃ না। সম্ভবতঃ নিজেকে একটা আদ্যোপান্ত ফেলিওরই মনে হত। এখনকার কুন্তলাকে আমার যেমন লাগে। তখনকার কুন্তলাকে আমার ফেলিওরটেলিওর কিছুই লাগছে না। কী পরীক্ষা চলছিল তাই মনে নেই, পাশফেল দূরের কথা। দশ বছর পর এখনকার পরীক্ষাগুলোও দাঁতনখ হারাবে। আমার রেজাল্টও অবান্তর হয়ে যাবে। কে বলতে পারে, হয়তো মনে হবে ফেলের বদলে আসলে পাশই করছিলাম আমি এই সময়টায়, নিজের অগোচরে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমাদের প্রসেনজিৎ খুবই হেল্পফুল এবং সহমর্মী। এ ক'দিন ওর কাজের বাইরের কাজও করে দিচ্ছিল নিজে থেকেই। বাতলে দিচ্ছিল কী খেতে হবে কী খাওয়া উচিত হবে না। একদিন অর্চিষ্মান ঘুমোচ্ছিল, আমাকে বলল, দাদার থেকে তোমার জ্বর বাধল তো? এর পর থেকে দাদার জ্বর হলে ওই ঘরে বার করে দেবে। লোকে কী বলবে অত ভাবাটাবার দরকার নেই। বা এই ঘরে ফেলে রেখে নিজেও ওই ঘরে চলে যেতে পার। ওষুধটষুধ দিতে হলে মাস্ক পরে এসে কাজ সেরে চলে যাবে। বলে টাটা করে চলে গেল। অর্চিষ্মানের ঘুম ভাঙার পর প্রসেনজিতের উপদেশের ব্যাপারে ওকে বললাম। অর্চিষ্মান বলল, একদিন তুমি ঘুমিয়ো তো, অ্যাট লিস্ট ঘুমোনোর ভান কোর, দেখব আমাকে কী টিপস অ্যান্ড ট্রিকস দেয়। অর্চিষ্মানের ধারণা ওকেও আমাকে ফেলে পালানোর বুদ্ধিই দেবে। আমি শিওর নই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আরামটারামের সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা উপকারও হয়েছে আমাদের। মানে আমরা উপকার বলে ধরছি আরকি। ক'দিন ধরে দুজনেরই কিঞ্চিৎ ওজন কমানোর আবছা ইচ্ছে হচ্ছিল। আবছা বলছি কারণ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কোনও স্টেপ নিইনি। দাদুর দোকানের শিঙাড়া খেতে খেতে, ওজন কমলে ভালো হয় টাইপের কপোলকল্পনা। জ্বরের ধাক্কায় দুজনেই হালকা হয়ে গেছি খানিকটা। একটা হেডস্টার্ট যখন পাওয়াই গেল সেটা মেন্টেন করার জন্য অ্যাট লিস্ট কিছু উদ্যোগ নেওয়া যাক ভাবতে ভাবতেই ইউটিউবের সাজেশনে প্রসেনজিতের ইন্টারভিউ চলে এল। আমাদের প্রসেনজিৎ না, অফ কোর্স। টালিগঞ্জের প্রসেনজিৎ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মনে হতে পারে যে রেটে বাঙালি সেলেব্রিটিদের ইন্টারভিউ দেখে বেড়াচ্ছিলাম প্রসেনজিতের সাজেশন আসাটা সময়ের অপেক্ষা, কিন্তু আমি ঘটনাটাকে নিয়তি বলেই দেখছি। প্রসেনজিতের বয়স এখন নাকি ষাট। ষাট বছরে আমাকে প্রসেনজিতের মতো দেখতে লাগার বর পাই যদি, জীবনের অধিকাংশ চাওয়া ছেড়ে দেব। জেনেটিক লটারির ফলাফল বদলানো যাবে না, পুরুষকারের অংশটুকু নিয়ে রিসার্চ করলাম। ভদ্রলোক তিনশো পঁয়ষট্টি দিন দেড়ঘণ্টা ধরে জিম করেন। ওয়েল, পুরুষকারের এই অংশটুকুও বাদ। খাওয়াদাওয়ার অংশটুকুতে ভরসা ছিল। আমি ফুডি নই। বাঁচার জন্য খাই। খাওয়ার সুখ ছাড়তে আমার কষ্ট হয় না। প্রসেনজিৎ গত কুড়ি বছর ধরে ভাত খান না, কুছ পরোয়া নেই, আমিও খাব না। স্রেফ শশা আর দইয়ের ওপর থাকেন। নো প্রবলেম, থেকে যাব। বাইরে খান না, চপকাটলেট, ভাজাভুজি সব বাদ। অসুবিধে নেই, ছেড়ে দেব। ফুচকা খেতে ভালোবাসেন, অনেক বছর বাদে বাদে ভীষণ ইচ্ছে করলে মোটে একটা খেয়ে সাধ মেটান।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রিসার্চ বন্ধ করে চানাচুরের শিশি খুললাম। এ পরীক্ষাতেও আমার পাশ করা হল না। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com8tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-66975107958885364402023-09-18T13:52:00.010+05:302023-09-20T11:10:30.253+05:30মেমেন্টো মোরিঃ শারদীয়া কৃত্তিবাস ১৪৩০<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><div class="p2"><br /></div><div class="p1">অন্যেরা উপন্যাস কেমন করে লেখেন তো জানি না, আমি কোনওদিন লিখলে কেমন করে লিখব সে নিয়ে একটা কপোলকল্পনা ছিল। অনেক ফেঁদেটেদে। সাড়ে বেয়াল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতা পেঁয়াজরসুন দিয়ে কষিয়ে। যত মনের কথা উগরে, যত গায়ের ঝাল ঝেড়ে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তারপর মে মাস নাগাদ একদিন শৈলেন, প্রতিভাসের কৃত্তিবাসের শৈলেন সরকার, ফোন করে বললেন, উপন্যাস লেখেন?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বললাম, রোজই ভাবি লিখব লিখব। শৈলেন বললেন, আর না ভেবে লিখে ফেলুন। অল্প লোভ আর অনেক ভয় হল। লোভ কারণ আমার কল্পনায় উপন্যাস লেখা একটা রোমহর্ষক ব্যাপার। ভয় কারণ এত কঠিং কাজ শিওর আমার দ্বারা হবে না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তারপর শৈলেন অ্যাকচুয়াল হাসির কথাটা বললেন। কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজারের একটা শারদীয়া উপন্যাস লিখতে হবে। আপনাকে সময় দেওয়া হবে দেড়মাস। অর্থাৎ কি না ছয় সপ্তাহ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জয়পুর ভ্রমণের একটা দু'হাজার শব্দের পর্ব নামাতে আমার লাগে সাতদিন। তাও ডাল কচুরি খেলাম না পেঁয়াজ কচুরি, কফি খেলাম না লস্যি, কোন অটোভাইসাব আমাকে কী দাগা দিলেন-এর ফিরিস্তি। যদি সেই স্পিডেও লিখি, আর যদি শব্দসীমার লোয়ার লিমিটও ধরি, কুড়ি হাজার শব্দ স্রেফ টাইপ করতেই আমার লেগে যাবে দশ সপ্তাহ। তারপর ধরুন গল্পে তো কুন্তলা সকালবেলা দু'নম্বর মার্কেটে গিয়ে দাদুর কচুরি আর অন্নপূর্ণার বোঁদে খাচ্ছে লেখা যাবে না, কিছু চরিত্র আকাশ থেকে পেড়ে আনতে হবে। তাদের প্রেমভালোবাসা, ল্যাং, প্রতিশোধ ভাবতে হবে। টাইপ করতে হবে। কাটপেস্ট করতে গিয়ে আদৌ পেস্ট হল কিনা, নাকি দু'বার পেস্ট হয়ে গেল চেক করতে হবে। মোটামুটি ছ'মাস থেকে ন'মাসের ধাক্কা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রাজি হয়ে গেলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পরদিন সকালে উঠে লিখতে বসলাম। মাথার মধ্যে একটা গল্পের হালকা ছায়া ছিল, সেটাকেই বাড়াব। ওয়ার্ড লিমিট সেট করলাম। রোজ এত শব্দ আর গল্পের এতখানি করে লিখব। মেন্টেন করতে পারলাম না। দুয়েকদিন লেখা কমপ্লিটলি বাদ পড়ল। লেগে রইলাম। অবশেষে একেকটা দিন ওয়ার্ড লিমিট পার হয়ে যেতে শুরু হল। একটা ভিন্ন টাইমফ্রেমে গল্পটা ফেললাম। পঞ্চাশ সালে মেয়েরা কী ঘড়ি পরে কলেজে যেত এইসব আজাইরা প্রশ্ন করে ইন্দ্রাণী, তিলকমামা, দিদিমণিকে ব্যতিব্যস্ত করলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চার সপ্তাহ দু'দিন পার করে তিনদিনের দিন ঘুম থেকে উঠে চোখ খোলারও আগে টের পেলাম হচ্ছে না। আমার না-দেখা সময়ে গল্প ফেলে উতরোনো, এই সময়সীমায়, আমার ক্যালিবারের লেখকের কর্ম না। গল্প এনে ফেললাম এক্স্যাক্টলি আমার সমসময়ে। ষোল হাজার শব্দ ফেলে দিলাম। যা লেখা হয়েছিল তার হাজারচারেক বাঁচানো গেল, বাকি ষোল (অ্যাকচুয়ালি, আরও বেশি কারণ এডিট করতে বসে বাদ পড়বে) আমাকে দেড় সপ্তাহে লিখতে হবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একজন প্রফেসর বলেছিলেন, যে কোনও ফিল্ড সার্ভেতে, প্যানেল ডিসকাশনে, ইন্টারভিউতে, ফোকাস গ্রুপে, একটা প্রশ্ন তিনি করেনই। হোয়াট সারপ্রাইজড ইউ? লিট রিভিউ লিখতে গিয়ে, হেঁটে হেঁটে জঙ্গল থেকে স্যাম্পল কালেক্ট করতে গিয়ে, ডেটাকে হুলা হুপের মধ্য দিয়ে ছোটাতে গিয়ে হোয়াট সারপ্রাইজড ইউ?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জীবনের প্রথম উপন্যাস (ডিসক্লেমার আসছে) সম্পূর্ণ করতে গিয়ে ওই মুহূর্তটা আমার সবথেকে বিস্ময় ও সারপ্রাইজের। এই যে প্রায় শেষ ল্যাপে গিয়ে আমি ওই অ্যামাউন্টের শব্দ ফেলে দিয়ে গল্পটা নতুন করে লিখতে শুরু করলাম, ডেডলাইনে কাজ শেষ করা নিয়ে নিজের ওপর বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা না থাকা সত্ত্বেও, আমি একটুও ভয় পেলাম না। কেন পেলাম না তাও জানি। কারণ ভয় পাওয়ার আমার সময় ছিল না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ডেডলাইন আমি মেন্টেন করতে পারিনি। এক সপ্তাহ পেছোতে হয়েছিল। বলা বাহুল্য, আমি নভিস লেখক, প্রবেশনে ছিলাম। অর্থাৎ, যদিও কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেই লেখার প্রস্তাব এসেছিল, লেখা রিজেশনের অধিকার তাঁরা নিজেদের কাছে রেখেছিলেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সেটাও আরেকটা বিস্ময়। অত তেড়েফুঁড়ে লিখেছিলাম বলেই বোধহয় মুভ অন করে যাওয়া সারপ্রাইজিংলি সোজা হয়েছিল। অন্য কাজের ফাঁকে ফাঁকে কখনওসখনও লেখাটা উঁকি দিত। যদি অ্যাকসেপ্টেড হয়েই যায়? একদিন সন্ধেবেলা সিলেক্ট সিটি ওয়াকের এসক্যালেটরে পা রাখব, ফোন বাজল। অ্যাকসেপ্টেড।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অভিনন্দনটন্দন, কেয়া বাত, দ্যাখালে বটে-র ধার দিয়ে গেল না অর্চিষ্মান। খাওয়াও বলে নিকটবর্তী স্টারবাকসে ঢুকে পড়ল। গিজগিজে ভিড়, কিন্তু একদম কর্নারের দুজনের বসার একটা টেবিল খালি পেয়ে গেলাম। অর্ডার দেওয়ার লাইন কাটার চেষ্টা করল একটা বান্ধবীওয়ালা ছেলে, বিন্দুমাত্র বিচলিত হচ্ছি না টের পেয়ে লাস্ট মোমেন্টে 'পহেলে আপ' বলে কোমর ঝুঁকিয়ে সরে দাঁড়াল। মনে পড়ল, এই স্টারবাকসটার জায়গায় অনেক বছর আগে কফি বিন অ্যান্ড টি লিভস্-এর শাখা ছিল। অর্চিষ্মানের কাঁধের ওপর দিকে মলের বাইরের দিকের যে কাচের দেওয়াল, তার পাশের সিটটায় মায়ের সঙ্গে বসে কত কফি আর অমলেট আর স্যান্ডউইচ খেয়েছি। মা শুনলে খুশি হত?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান প্রায়ই জিজ্ঞাসা করে, ট্যাটু করালে কী ট্যাটু করাব। ট্যাটু আমি কোনওদিন করাব না। আহা, যদি কেউ মাথায় বন্দুক ধরে? তাহলে প্রজাপতি না, চাঁদের ষোলকলা না, অর্চিষ্মানের অ তো মেরে ফেললেও না। ইয়েস, নো, ব্রিদও না। লিখলে একহাতের কবজির কাছে লিখে রাখব মেমেন্টো মোরি। রিমেমবার, ইউ উইল ডাই। অন্য হাতে আমোর ফাতি। লাভ অফ ফেট।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ট্যাটু করাইনি। কিন্তু প্রথম উপন্যাসের নাম 'মেমেন্টো মোরি' রেখেছি। ব্যাপারটা 'হাই ভোল্টেজ স্পার্ক' লেভেলের হচ্ছে কি না সে নিয়ে বুকধুকপুক ছিল এবং গোড়াতে কর্তৃপক্ষের একাংশ নামটা নিয়ে আপত্তিও জানিয়েছিলেন। পালটাতে বললে পালটাতেই হত। স্রেফ নাম পছন্দমতো দিতে পারলাম না বলে উপন্যাস কুরবানি দিয়ে দেওয়ার কনভিকশন বা কমিটমেন্ট আমার নেই। তারপর কর্তৃপক্ষের আরেক তরফ থেকে গ্রিন সিগন্যাল এসে গেল। যাক বাবা। এবার জীবনের শেষ উপন্যাসের নাম 'আমোর ফাতি' রেখে মরতে পারলেই বেশ বলিউডি অন্ত হবে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">উপন্যাস উপন্যাস বলছি বটে, লেখাটা উপন্যাস ক্যাটেগরির আন্ডারেই পত্রিকাতে ছাপা হয়েছে বটে, কিন্তু আমি কি সত্যিই উপন্যাস লিখেছি? একুশ হাজার শব্দের একটা লেখা কি উপন্যাস হতে পারে? ইংরিজি সাহিত্যের বাজারে, যেটা আমি ধরে নিচ্ছি আন্তর্জাতিক সাহিত্যের সবথেকে বড় বাজার, হারগিজ না। পঞ্চাশ হাজার না পেরোলে নো উপন্যাস, পঞ্চাশ হাজারও বেয়ার মিনিমাম, আশি হাজার হলে মোটামুটি ভদ্রস্থ একটা কিছু দাঁড়িয়েছে ধরে নেওয়া যায়। কাজেই আমি একটা বড় গল্প বা বিরাট বড় ছোটগল্প লিখেছি। সত্যিকারের উপন্যাস, স্যাডলি, আমি এখনও লিখে উঠতে পারিনি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ঘাবড়াচ্ছি না। এখনও লিখিনি, কপালে থাকলে লিখে ফেলব। এটাও যেমন লিখে ফেললাম। কেমন লিখেছি সে নিয়ে অত মাথা ঘামাচ্ছি না। এক, পাঠকের বিচারে ভালোমন্দ আমার হাতে নেই, দুই, আজ থেকে বছরখানেক পরে, ইন ফ্যাক্ট, এখনই লেখাটা আবার নিজে পড়লে 'ধরণী দ্বিধা হও' মনে হবে সেও গ্যারান্টি। যত ভুল, যত ইন্ডালজেন্স ছিটকে ছিটকে গুলির মতো চোখে এসে বিঁধবে। মনে হবে যে যে লেখাটা পড়েছে বা লেখাটার দিকে দৃকপাত পর্যন্ত করেছে, একটা ন্যাতাবালতি নিয়ে তাদের দৃষ্টি এবং স্মৃতি থেকে লেখাটার যাবতীয় অস্তিত্ব ঘষে ঘষে মুছে ফেলি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কিন্তু এই সত্যিটা তখনও সত্যি থাকবে, যে, যে সময়ে আমি লেখাটা লিখেছিলাম, সেই সময়ের আমি, ওই সময় ও পরিস্থিতির সমস্ত সুবিধে, অসুবিধে, সীমাবদ্ধতা নিয়ে আবার লিখতে বসলে এটাই লিখত। ওই কুন্তলার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ছিল, সে সবটা দিয়েছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শুধু গায়ের ঝালটা মনের মতো ঝাড়া হয়নি। সেটার জন্য আরেকটা উপন্যাসের অ্যাটেম্পট নিতে হবে মনে হচ্ছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পত্রিকাটি কিনে পড়তে চাইলে লিংক নিচে রইল।</div>
<div class="p1"></div></div><p><a href="https://prativash.com/products/%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80-%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A6%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE-%E0%A7%A7%E0%A7%AA%E0%A7%A9%E0%A7%A6?fbclid=IwAR1lc6FZkFHaitJ5_o38CIlN6xQI51BZVOSDfqe5Am2OMEgfXyTRZp2rymo" target="_blank"><span style="color: #2b00fe;">শারদীয়া কৃত্তিবাস ১৪৩০ </span></a></p><p><br /></p>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com14tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-56309778150116293502023-09-16T11:13:00.027+05:302023-09-16T16:54:55.378+05:30জয়পুর ৬ (শেষ): জ্যামিতিবাক্স ও যন্তরমন্তর<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><div class="p2"><br /></div><div class="p1">সকালে উঠে যথারীতি অসামান্য ভালো ব্যবহারের সঙ্গে চা পেলাম। হয় দুপুরবেলা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা সেট অফ কর্মীরা আর টি ডি সি গনগৌরের দখল নেন, নয়তো ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড কেস।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আজ শেষ দিন। বিকেল পাঁচটা পঁয়তাল্লিশে আজমের শতাব্দী জয়পুর জংশনে ঢুকবে, আমাদের তুলে (যদি না অন্য ট্রেনে উঠে বসে থাকি) পাঁচটা পঞ্চাশে দিল্লির দিকে রওনা দেবে। যা করার তার আগে করে নিতে হবে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">শুরুতেই মিসঅ্যাডভেঞ্চার। চাঁদপোল বাজারের মিশ্র রাজাজি কা রাস্তায় মহাবীর রাবড়ি ভাণ্ডার। ইউটিউবে দেখেছি ইয়াবড় বেজারের রুটি আর আলুর তরকারি খাচ্ছে সবাই বসে, সঙ্গে রাজস্থানী কুইজিনের কাঁঠালিকলা, গোটাগোটা লংকার আচার। লাস্টে রাবড়ি। সকাল প'নে নটা নাগাদ পৌঁছে দেখি দোকানের ঝাঁপ ফেলা, বাইরে দাঁড়িয়ে একজন টুথব্রাশ চিবোচ্ছেন। সাড়ে এগারোটায় খুলবে। ধুত্তেরিকা বলে যন্তরমন্তরের দিকে এগোলাম। বেশি দূর না, হেঁটেই যাব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এঁরা যে ব্যবসা করতে জানেন, ভালোবাসেন, বোঝা যায়। শহর জুড়ে বাজার। গমগমে, জমজমে। চৌমাথার এক কোণে ফুলের বাজার পেরিয়ে, একে একে খুলতে থাকা দোকানের সামনের ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে যন্তরমন্তরে পৌঁছলাম।টিকিটের দাম প্রণামীকাটিং। বাহান্ন টাকা, বেয়াল্লিশ টাকা, একষট্টি টাকা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যন্তরমন্তর দেখলেই আমার মনে হয় দৈত্যদের জ্যামিতিবাক্স খুলে সব পড়ে গেছে। উপমাটা র্যান্ডম না। আমি আর সোমা দাস একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে হয় বেশি আস্তে কিংবা বেশি জোরে হেঁটে ফেলেছিলাম। মোট কথা প্ল্যাটফর্মে একটা ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। আপনি যদি লোক্যাল ট্রেনে কখনও দীর্ঘ সময় ধরে যাতায়াত করে থাকেন জানবেন, দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন ছেড়ে দেওয়া যায় না। এর সঙ্গে তাড়াহুড়োর সম্পর্ক নেই। আপনার গন্তব্যের উপযুক্ত একটি ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে আর আপনি দুলকি চালে ভাবছেন এটা গেলে ক্ষতি নেই পরেরটা তো আসবে, এ অসম্ভব। টের পেয়েছিলাম প্রায় শৈশবেই। মা হাওড়া, আমি উত্তরপাড়া, কাজেই আমরা এক ট্রেনেই যেতাম। রবিকাকু লেভেল ক্রসিং-এর এপারে নামিয়ে দিতে না দিতে প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢুকত এবং মা দৌড়তে শুরু করতেন। আমার ফিনফিনে কবজি চেপে ধরে। প্রথম প্রথম মিনমিনে গলায় চেঁচাতামও, ছুটছ কেন, এটা তো হরিপাল, আমাদের ব্যান্ডেল তো পরে আসবে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মা পরে আফসোস করতেন। তোকে কত অত্যাচার করেছি সোনা। ওইটুকু মেয়েকে নিষ্ঠুরের মতো ছুটিয়েছি। সময়ের দাস না হয়ে সময়কে নিজের দাস বানানোর মূল্যবান শিক্ষা দিতে ফেল করেছি। মাকে বলতাম, আরে তুমি তো আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য ছোটাওনি। মজা দেখানোর জন্যও না। তোমার ততদিনে ট্রেন দেখলেই ছুটতে শুরু করার কন্ডিশনিং হয়ে গেছে। ইউ ওয়্যার হেল্পলেস।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ঘটনার সময় আমার ক্লাস সিক্স, সোমা ক্লাস এইট, দুজনেরই কন্ডিশনিং সমাপ্ত। কাজেই ট্রেন দেখে দুজনেই দৌড়তে শুরু করলাম। ট্রেন ভোঁ দিয়ে দিয়েছে, দরজায় ঝুলন্ত ভিড় 'আরও জোরে, আরও জোরে' চেঁচাচ্ছে, এমন সময় ট্রেনের নাকের ডগায় পৌঁছে সোমার ব্যাগের খোলা চেন থেকে ক্যামেলের কমলাহলুদ জ্যামিতিবাক্স ছিটকে পড়ল। কাঁটা, কম্পাস, চাঁদা, সেট স্কোয়্যার, স্কেল, পেনসিল ছত্রাকার হয়ে গেল উত্তরপাড়া আপ প্ল্যাটফর্মে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একটা গণ 'যাআআআহ'-এর ঢেউ উঠে মিলিয়ে গেল। সোমার মুখটা এখনও স্পষ্ট। চাকা বসে যাওয়ার পর কর্ণের মুখের কাছাকাছিই হবে। সোমা উবু হয়ে মালপত্র কুড়োতে শুরু করল, আমি দৌড়ে দৌড়ে অল্প দূরে গড়িয়ে যাওয়া পেনসিল রবারটবারগুলো কুড়িয়ে আনতে শুরু করলাম। কুড়োতে কুড়োতেই টের পেলাম, ট্রেনটা থেমে আছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু ট্রেনের জালিকাটা জানালার ওপার থেকে একজোড়া চোখ আমাদের দেখছে। যেটা টের পাইনি সেটা হচ্ছে অত দয়ালু দৃষ্টি জীবনে খুব বেশি পড়বে না আমাদের ওপর। পলাতকেরা সব জ্যামিতিবাক্স বন্দী হল, সোমার ব্যাগের চেন বন্ধ হল, ঝুলন্ত কাকুজেঠুরা দরজা ছেড়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে রাস্তা খালি করে রেখেছিলেন, দৌড়ে প্রথম কামরার গেটের কাছে আসতেই, 'উঠে পড় কিচ্ছু হয়নি' টাইপের উৎসাহবাণী দিলেন। উঠে পড়লাম, ড্রাইভারের কামরা থেকে একজোড়া চোখ উঁকি মেরে ভেতরে ঢুকে গেল, ভোঁ বাজিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যন্তরমন্তর দেখলেই আমার সেই ছত্রাকার জ্যামিতিবাক্স মনে পড়ে। তফাৎ শুধু বাক্সটা সোমার না, কোনও ছুটন্ত দৈত্যবালিকার। বাক্স খুলে কাঁটাকম্পাসগুলো এদিকসেদিক, সেট স্কোয়্যারটা উঁচিয়ে রয়েছে আকাশে। সে সব ছত্রাকার যন্ত্রপাতির ফাঁকফোঁকর দিয়ে গলে গেলাম। অন্য সব জায়গায় গাইড না নিলেও একরকম, ঝাড়লন্ঠনের ম্যানুফ্যাকচারিং ডেট না জানলেও তার সৌন্দর্য একই থাকে, কিন্তু এই প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানের টুলকিট কেউ না বুঝিয়ে দিলে কঠিন। তবু আমরা নিজেরাই ঘুরছিলাম। অর্চিষ্মান বোর্ড পড়ে, যন্ত্রপাতিগুলোর কর্মপদ্ধতি বোঝার এবং আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল। আমি হাই তুলছিলাম। গাইডরা ব্যস্ত হয়ে দর্শনার্থীদের দল নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিলেন। প্রায় চল্লিশ শতাংশ দর্শনার্থী বিদেশী। কারও কারও উত্তেজিত দৌড়োদৌড়ি দেখে কৌতূহলী হলাম। রহস্য উন্মোচন হল। রাশিচক্রের বারোটির নামে বারোটি থাম, সবাই দৌড়ে দৌড়ে নিজের নিজের জন্মরাশির থামের সামনে দাঁড়িয়ে, থাম জড়িয়ে, রাশির নামের প্লাকের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে, এক পা হাওয়ায় তুলে, হাঁ করে উত্তেজনা বুঝিয়ে ছবি তুলছেন। বাজার অল্প খালি হলে আমরাও ছবি তুললাম, তবে অত শরীর বেঁকানোচোরানো বা মুখভঙ্গির কনফিডেন্স আমাদের নেই, আমাদের পোজ বলতে সোজা দাঁড়িয়ে ক্যামেরার দিকে অকওয়ার্ড হাসি। সে ছবি আর দেখাচ্ছি না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অনতিদূরের দোকান থেকে দুটো মসালা শিকঞ্জি আর একটা ভেজ প্যাটিস কিনে বেঞ্চে বসা গেল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বেড়াতে গিয়ে যে সবসময় পাঁচশো বছরের পুরোনো ইট কাঠ কংক্রিট কাচ সেরামিকের ভাঙাচোরা কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসই দেখতে হবে, সে রকম মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি। মানুষও দেখা যায়। সমসাময়িক, সাধারণ মানুষ। কিচ্ছু কম এন্টারটেনিং না। উল্টোদিকের বেঞ্চে একটি রাজস্থানী ফ্যামিলি (খুব সম্ভব) এসে বসল। মা বাবা ছেলে মেয়ে আর বোধহয় ছেলেমেয়ের মাসিপিসি বা কাকাজেঠু টাইপের কারও ফ্যামিলি, মোট কথা দুটো পরিবার। সব টিনএজার কি তার থেকে একটু বড় বাচ্চা, ডেফিনিটলি বিলো বাইশ। শান্ত, ভদ্র অথচ ক্যাবলা না। আধুনিক সাজপোশাক কিন্তু ডিসট্র্যাকটেড না। সর্বক্ষণ ফোন খুটখুট করছে না। 'আই অ্যাম টু কুল ফর দিস' মুখ করে দূরে দাঁড়িয়ে কান খোঁচাচ্ছে না। বাবা মা পিসি মাসিদের ছায়ায় বেঞ্চে বসিয়ে নিজেরাই দৌড়ে দৌড়ে সব অর্ডারটর্ডার দিয়ে খাবার এনে, বসে শান্ত হয়ে খেয়ে নিজেদের এবং বাকিদের কাগজের প্লেট জড়ো করে ডাস্টবিনে ফেলে আবার খুশি খুশি মুখে পরবর্তী গন্তব্যের দিকে চলে গেল। কে বলে নতুন জেনারেশনের কিছু ভালো নেই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্যাটিসের দোকানে দুটি মেয়ে কাজ করছিল। দোকানের বাইরে এক ভদ্রলোক কার্টন তুলে এখান থেকে ওখানে রাখছিলেন। ফোনে কথা বলছিলেন। তিনজনের ডি এন এ-এর কমনত্ব আঁচ করতে তিন সেকেন্ডও লাগবে না। শান্ত, নিভুনিভু বড় মেয়েটি দোকানের পেছন দিকে শিকঞ্জিটিকঞ্জি বানাচ্ছিল, প্যাটিস মাইক্রোওয়েভে গরম করছিল। ফ্রন্টিয়ার সামলাচ্ছিল ছোট মেয়েটি। খুব জোর হায়ার সেকেন্ডারি। নিজের কাজকে ভালোবাসলে কেমন দেখতে লাগে, তার পারফেক্ট নমুনা। যা বুঝলাম, মেয়েটা দোকান চালানোর সঙ্গে সঙ্গে স্পোকেন ইংলিশে শানও দিচ্ছে। এমন যদি কেউ দোকানের দিকে তাকায়ও যাকে দেখে সন্দেহ হতে পারে পাসপোর্ট ইন্ডিয়ান নয়, লাফিয়েঝাঁপিয়ে টুপি নেড়ে, হ্যালো স্যার, ওয়েলকাম ম্যাম, হোয়াট ক্যান আই ডু ফর ইউ। তার মানে এই নয় যে ইন্ডিয়ান পাসপোর্টওয়ালাদের অবহেলা করছিল। আমাদের সঙ্গেও চনমনে হয়েই কথা বলছিল, নিখুঁত সার্ভিস দিচ্ছিল, কিন্তু ইংরিজি বলার সুযোগ এলে এনার্জি আকাশে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কাল যে ইস্যু নিয়ে সম্পত কচুরি ভাণ্ডারের মুণ্ডুপাত করছিলাম, এই মেয়েটির অ্যাটিচিউড তার পারফেক্ট অ্যান্টিডোট। কোটি কোটি ইউটিউব রিভিউ, হিডেন জেমের শিরোপা নিয়েও সম্পত ঝিমোচ্ছে আর এই বাচ্চা মেয়েটা একটা জেনেরিকস্য জেনেরিক দোকানে বসে, কোল্ডড্রিংকসের অ্যাডে অক্ষয়কুমারের হাসিতে যার নাম পর্যন্ত চাপা পড়ে গেছে, কী অসামান্য কাস্টমার সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। ওই দোকানের অন্ততঃ টোয়েন্টি পার সেন্ট বিক্রি মেয়েটার ডিরেক্ট অবদান। যেমন, আমরা শিকঞ্জি অর্ডার করার পর হাসিহাসি মুখে জিজ্ঞাসা করেছিল, ইউ ওয়ান্ট প্যাটিস? টোটালি ফ্রেশ। প্যাটিস খাওয়ার আমাদের কোনও দরকারই ছিল না তখন, মেয়েটা বলল বলে নিয়ে নিলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ওই বয়সে আমি কী ছিলাম সেটা মনেও করতে চাই না, স্যাড হচ্ছে আমি এই বুড়ো বয়সেও এ রকম নই। এই সব ভেবে হাল্কা বিষণ্ণ হচ্ছি এমন সময় বাবার ফোন শেষ হয়ে গেল। তিনি দোকানে ঢুকে পড়ে মেয়ের দিকে সোজা তাকিয়ে বললেন, পঢ়াই নেহি করনা হ্যায় কেয়া? মেয়েটার মুখের আলো যে দ্রুততায় নিভল, শিকঞ্জির গ্লাস দিয়ে মুখ যথাসম্ভব আড়াল করে খুব হাসলাম কারণ পড়তে বসার কথা শুনলে আমাদের মুখের চেহারা এখনও এক্স্যাক্টলি ওই রকম হয়। দেশকালবর্ণপ্রজন্ম নির্বিশেষে পড়তে বসাটা একই রকম ট্রমাটিক। মেয়েটার মতো স্মার্ট হলে ওই মুহূর্তে বাবাকে গিয়ে বলতাম পঢ়াই করে আপনার মেয়ের যা শিক্ষা হবে তার থেকে অনেক বেশি হবে এই দোকানে পাঁচশো রকম লোককে প্যাটিস আর শিকঞ্জি খাইয়ে। কিন্তু আমি স্মার্ট নই, তাই চেপে গেলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">বারোটায় চেক আউট। ব্যাগ গুছিয়েই বেরিয়েছি, গিয়ে জাস্ট সই করে, বাকি টাকা মিটিয়েই বেরিয়ে পড়ব। কিন্তু তার আগে খেতে হবে। চেক আউট করে খাওয়া যায়, কিন্তু আমাদের ইচ্ছে চেক আউট করে আর ঘোরাঘুরি না করে সোজা, ঠিকই ধরেছেন, কিউরিয়াস লাইফ ক্যাফে-তে গিয়ে ঢোকা, সেখান থেকে সময়মতো বেরিয়ে স্টেশন চলে যাওয়া। অচেনা দোকান এক্সপ্লোর করতে গিয়ে সকালে বাধা পড়েছে, চেনা দোকানেই গেলাম। লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। সেম টেবিলেই বসলাম। জয়পুরে গিয়ে রাজস্থানী থালি না খেয়ে ফেরাটা অন্যায়, কিন্তু এল এম বি-তে থালি পেতে পেতে লাঞ্চটাইম অর্থাৎ সাড়ে এগারোটা। তখন এগারোটা দশ বা পনেরো। ওয়েট করার মানে হয় না। তাছাড়া আমাদের সি পি-র রাজস্থালীর থালিও তো মন্দ নয়, ওটাও তো রাজস্থান থেকে যাওয়া লোকেরাই রাঁধেন, জয়পুরের থালির থেকে আর কত আলাদা হবে। এই সব সান্ত্বনা দিয়ে অন্য খাবারই অর্ডার করলাম। ছবিগুলো কোন ফোনে কে জানে তাই দেখাতে পারছি না, কী খেয়েছিলাম সে স্মৃতিও হাতড়াতে হচ্ছে। ডাল কচুরিটা সম্পর্কে নিশ্চিত। যেটা আমি নিয়েছিলাম। যদিও সর্বত্র লেখা আছে এল এম বি-র পেঁয়াজ কচুরি বিখ্যাত, গতকাল খেয়ে ভালোও লেগেছে, কিন্তু এঁদের ডাল কচুরি আমাকে শুইয়ে দিয়েছে। কচুরি খেলাম, যত পারা যায় লাল চাটনি সবুজ চাটনি খেলাম, চা তো আছেই। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ব্যস। আমাদের জয়পুর ঘোরা এসেনশিয়ালি ওখানেই ফুরোল। কত কিছু হল না। বেশিরভাগই হল না। অ্যালবার্ট মিউজিয়াম দেখা হল না। জয়পুরের কোটি কোটি বাজারের একটায় দেড়শো না কত বছরের পুরোনো খেলনার দোকানের খবর পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম রংচঙে ঘাগরাপরা একটা মেয়েপুতুল কিনে আনব, কাবার্ডের ওপর কেনিয়া না ঘানা থেকে অর্চিষ্মানের আনা বেগুনি গায়ে ছোট ছোট কালো ফুল আঁকা পুঁচকে জলহস্তীটার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে। টিভি দেখতে দেখতে একটা লম্বা লাঠি দিয়ে মাঝেমাঝে খোঁচাব, কোমর বেঁকিয়ে নাচতে শুরু করবে। মেয়েটার নাম রাখব বাসন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভোর ভোর বেরিয়ে গুলাবজীর চা আর আমূল বাটারলেপা মোটা পাউরুটি খাওয়া হল না। শহরের বাইরে গুলাব চাঁদের ডেয়ারিতে কেসর পিস্তা মাখন নামের ডেজার্ট পাওয়া যায়, পিওর মাখন চৌকো করে কেটে পেস্তাবাদামটাদাম ছড়ানো, চামচ দিয়ে কেটে কেটে লোকে মুখে পোরে আর চোখ বুজে উঃ আঃ করে। দেখেই শরীরের ভেতর কেমন করছিল, ভাবুন, স্রেফ মাখন চামচ দিয়ে কেটে কেটে খাওয়া, কিন্তু অর্চিষ্মান দেখে থেকে খাবে বলে লাফাচ্ছিল। খাওয়া হল না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নাহারগড় ফোর্টের কিনারে দাঁড়িয়ে অনেক নিচে ছড়ানো গোলাপি বাড়িঘরদোরের মধ্যে জেগে থাকা যন্তরমন্তরের ত্রিভুজের দিকে তাকিয়ে 'হাজার হাজার ডক্টর হাজরা' ফিসফিস করা হল না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কলকাত্তা চাট সেন্টারে খাওয়া হল না। দিল্লি বোম্বাই চণ্ডীগড়ের লোকেরা জয়পুর বেড়াতে গিয়ে ওই ঠেলার চাট খেয়ে, ভিডিও করে ইউটিউব ভরিয়ে দিচ্ছে, আর আমরা পাটুলি আর রিষড়া থেকে গিয়ে আরেকটু উদ্যোগ নিয়ে কলকাত্তার চাট খেতে যেতে পারলাম না। চাটের সঙ্গে কলকাতার কোনও সম্পর্কই নেই, প্রোপ্রাইটরের বাপদাদা কে কবে কলকাতায় এসে ঘাঁটি গেড়েছিলেন, আবার ফিরেও গেছেন, শুধু ছেড়ে আসা শহরটার নাম এখনও লিখে রেখেছেন দোকানের মাথায়। আর যদি কখনও ফিরে যাওয়া না হয়?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">জয়পুরেও আবার ফেরা হবে কি? এত কাছে থাকি, না হওয়ার কোনও কারণ নেই। কিন্তু আবার যাওয়ার কথা মাথায় এলে হয়তো মনে হবে, দূর কী একশোবার করে একই জায়গায় যাওয়া, অন্য কত জায়গা আছে আনএক্সপ্লোরড। জয়পুরও যে আনএক্সপ্লোরডই রয়ে গেল, কত জিনিস দেখা হল না, খাওয়া হল না, অভিজ্ঞতা করা হল না, সেটা সম্ভবতঃ ম্যাটার করবে না। সমস্ত না-হওয়ার মতো এই না-হওয়াগুলোর ওপরেও জীবন সময়ের ব্যান্ডেড সেঁটে দেবে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1" style="text-align: right;">শেষ</div></div><p style="text-align: right;"><br /></p>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com4tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-44410505331405532002023-09-13T14:19:00.008+05:302023-09-15T19:02:15.944+05:30জয়পুর ৫ঃ বেগুনি হাতি, বান্টা, কুমার শানু
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"><br /></div><div class="p1">আমের প্যালেস ঘোরা শেষ, অরিজিন্যাল ই রিকশা দাদা একবার ফোন করে ফেলেছেন, কিন্তু রামসিংজী ছাড়বেন না, আরেকটা জায়গায় যেতে হবে। সমস্ত টুরিস্ট স্পটের একচেটিয়া, শপিং পয়েন্ট। সকলেই বলেন, কিনতে হবে না, শুধু দেখবেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তিনতলা দোকানের বাইরে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ঘটল। এক ভদ্রলোক ব্লক প্রিন্টিং করে দেখালেন। সে অসামান্য ব্যাপার। শাকপাতা থেকে নিষ্কাশিত সবুজ রঙে ব্লক চুবিয়ে কাপড়ে চেপে ধরে হাতির বর্ডার আঁকলেন। তারপর আরেকটা ব্লক ফুলটুল থেকে নিষ্কাশিত বেগুনি রঙে চুবিয়ে সাবধানে আগের হাতির শুঁড়ে শুঁড় আর ল্যাজে ল্যাজ মিলিয়ে চেপে ধরতেই সবুজ আউটলাইনের ভেতর বেগুনি বডিওয়ালা হাতি রেডি। তারপর গোটা কাপড়টা আরেকটা কী জলে চুবোলেন, ব্যাকগ্রাউন্ড রং হয়ে গেল। একঘণ্টা শুকিয়ে চুবোলে নাকি রং আরও বেশি ফুটত। দেখেশুনে এমন হাহাকার হল। এই কাজটা কেউ আমাকে করতে দাও গো। কিচ্ছু চাইব না, ঘ্যানঘ্যান করব না, খালি এককোণে বসে রঙে ব্লক চুবোব আর হলুদ সবুজ গোলাপি বেগুনি হাতি আঁকব। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">লিফটে করে ক’তলায় যেন গেলাম। ওঁরা এত কিছু দেখাতে চাইলেন, বেডকভার, ওয়াল হ্যাংগিং, পেখমমেলা ময়ূর, আমার কুর্তি, অর্চিষ্মানের শার্ট। আমরা বললাম, টেইম নেই টেইম নেই, বলে ছুটে চললাম। সত্যিটা হচ্ছে, এত সাধাসাধির উত্তরে না করার মতো চরিত্রের জোর আমার নেই। কিনতেই যদি হয় এমন একটা কিছু কিনতে হবে যা অ্যাকচুয়ালি কাজে লাগবে। ময়ূর আর ওয়াল হ্যাংগিং ওখানেই বাদ। জামাকাপড় পরতেই হয়, কাজেই কুর্তাই বেস্ট অপশন। অর্চিষ্মান কিছুতেই শার্টের জন্য ঘাড় পাতল না। ভদ্রলোক বললেন, কী মাপের? বললাম, কেন আমার? ভদ্রলোক দেড় সেকেন্ডে সম্পূর্ণ নন-ক্রিপি ভাবে আমাকে আপাদমস্তক মেপে চেঁচালেন, অমুক নম্বরওয়ালা বান্ডিল নিকাল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কুর্তার ঢিপি কাউন্টারে আছড়ে পড়ল। ভদ্রলোক হাসি হাসি মুখে, এইটা দেখুন, বলে প্যাকেট খুলতে যাচ্ছিলেন, আটকালাম। জাস্ট বাণ্ডিলটা ছড়িয়ে রাখুন। রাখলেন। আমি মাথার ভেতর দ্রুত আপনবাপনচৌকিচাপন খেলে একটা সবুজ আর একটা তুঁতে কুর্তার পলিথিন তুলে নিয়ে বললাম, প্যাক করুন প্লিজ। বলে নিজেরাই চেক আউট কাউন্টারের দিকে দৌড়লাম। এদিক ওদিক থেকে বেডকভার, ময়ূর, পাথরের প্রলোভন ছিটকে ছিটকে এল, কান দিলাম না। দাম দেওয়ার সময়ও থামিনি সম্ভবতঃ, জায়গায় দাঁড়িয়ে জগিং করছিলাম। প্যাকেট হাতে পেয়ে আবার দৌড় শুরু হল। উজ্জ্বল আলোকিত কানাগলির মধ্য দিয়ে ভিডিওগেমের মতো আমরা দৌড়ে চললাম, একজায়গায় গিয়ে নো এক্সিট, আবার উল্টো পথে দৌড় দৌড়, লিফটে ঢুকে গ্রাউন্ড ফ্লোর টিপতে যাব, একী আপনি কে, সেকেন্ড ফ্লোরের বোতাম টিপছেন কেন, কারণ এখানে আছে বিশ্বের নিখুঁততম তাজমহলের রেপ্লিকা, তাই বুঝি, কী আর করা, নেমে বাঁ দিকে বেঁকে দূরে কাচের ঘরের মধ্যে তাজমহলের রেপ্লিকা, নিখুঁতই বটে কিন্তু ততক্ষণে উচ্চকিত হতে শুরু করেছে পাথর আর গ্রহরত্নের সেলস পিচ, আবার উল্টোপথে ছুট ছুট, কী মুশকিল লিফটটা আসে না কেন, এসে গেছে, টিং শব্দে দরজা খুলে গেছে, ঢুকে পাগলের মতো ডোর ক্লোজ-এর ত্রিভুজ টিপছি, একটা গলা চিৎকার করে বলছে, ম্যাডাম, ফ্রি মে হাথ দিখানা থা কেয়া?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দোকানের বাইরে গাছের নিচে গজল্লা করছিলেন, রামসিংজীর পাওনা চুকিয়ে কপালে হাত ঠেকিয়ে আমের প্যালেসের পর্ব শেষ হল। এবার আমাদের রিকশা ভাইসাবকে খুঁজে বার করতে হবে, কিন্তু তার আগে ঠাণ্ডা, জলীয় কিছু ভেতরে ঢালা দরকার। দিল্লিতেও অসভ্য গরমের সঙ্গে ডিল করি বছর বছর, কিন্তু রাজস্থানী রোদের ব্যাপার আলাদা। সেই যে একটা অ্যাড হত, সূর্য মাথার ভেতর স্ট্র দিয়ে সব এনার্জি শুষে নিচ্ছে, সেই রকম ব্যাপার। প্যালেসের গেটের বাইরে মসালা ছাস মরুভূমিতে বৃষ্টির ফোঁটার মতো অদৃশ্য হয়েছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এমন সময় ফট্। ঘাড় ঘোরানোরও আগে চিনেছি। এবং হাঁটতে শুরু করেছি। অর্চিষ্মানেরও চোখে পড়েছে ততক্ষণে। আরে, বান্টা পাওয়া যাচ্ছে, বলতে বলতে ও-ও খুশি হয়ে দৌড়ল আমার পাশে পাশে। ই-রিকশা ভাইসাবও বান্টালাভার। সবাই মিলে বান্টা খাওয়া হল। বান্টা আমার ক্ষেত্রে অনেকটা ফুচকার মতো। জীবনে এমন কোনও বান্টার দেখা পাইনি, যার সঙ্গে আলাপ বাড়াতে ইচ্ছে হয়নি। ভালোমন্দ ইমমেটেরিয়াল। যদিও এই বান্টাটি ফার্স্টক্লাস ছিল। ভালোমন্দের বাছ না করলেও ভালোমন্দের বিচার আমার আছে। অনেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ মশলা, টপিং ইত্যাদি দেন, সেগুলো অবান্তর বলেই মনে করি। বেসিক যে মশলাটি ব্যবহার হয় ক্ল্যাসিক বান্টায়, সেটাই বেস্ট। বান্টা খেয়ে ফিরতি যাত্রা শুরু হল। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjHylWt4Cm6xSfsEVQ2zsvGkH0ucq9r_e7QWs8Muq9bENhEfXmNHrQ4Vy5objBp7JD4_RV90NmgoW9Hiwa72dksCkPwu_c-b_PitH6kVq6FgoS6PDUWQg6Ugnp684R42iTCXG17fQ0TL-ge2LfORd2Gz3zOZ3CRpUJgzj9rNhGQVSMJdtpFSQZFZ7eGZLXh/s3880/Jalmahal.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="2472" data-original-width="3880" height="408" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjHylWt4Cm6xSfsEVQ2zsvGkH0ucq9r_e7QWs8Muq9bENhEfXmNHrQ4Vy5objBp7JD4_RV90NmgoW9Hiwa72dksCkPwu_c-b_PitH6kVq6FgoS6PDUWQg6Ugnp684R42iTCXG17fQ0TL-ge2LfORd2Gz3zOZ3CRpUJgzj9rNhGQVSMJdtpFSQZFZ7eGZLXh/w640-h408/Jalmahal.jpg" width="640" /></a></div><div class="p2"><br /></div>
<div class="p1">জলমহলে থামা হল। নাহারগড়ের ছায়াছায়া পাহাড়ের পাহারায়, মান সাগর লেকের মাঝখানে অপূর্ব এক প্রাসাদ। ভাইসাবের সকালের সতর্কতাবাণী সত্যি। জলটা প্যাথেটিক নোংরা। গন্ধ বেরোচ্ছে। খোঁজ নিলাম বোটিং হয় কি না, হয় না। খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে চলে এলাম। লাঞ্চের সময় হয়েছে, লাঞ্চ হয়নি। হওয়ানোর ইচ্ছেও নেই। ওই গরম আর ওই রোদে খাওয়ার কথা মাথাতেও আসছে না। আরেক গ্লাস করে বান্টা খাওয়া যাক। রাজস্থানে সর্বত্র বান্টা। এই বান্টাটাও ভালো তো বটেই, সমস্যাটা যা বললাম, বাহার বেশি। কী একটা লংকাবাটা মতো মিশিয়েছিলেন ভদ্রলোক। খারাপ না, জাস্ট বাহুল্য। এঁর বোতল খোলার পদ্ধতিটা আগে দেখিনি। একটা হাওয়া বার করা সাইকেলের টায়ারের টিউবের মতো জিনিস বোতলের মুখে চেপে ধরলেন, চোঁওওও শব্দ হল, ফট করে বোতল খুলে গেল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">হোটেল ফিরে স্নান সারলাম। বেশিক্ষণ নিজেদের সময় দেওয়ার ইচ্ছে নেই, কারণ এখন ঘুমোলে ঘুমিয়েই পড়ব। চা বলা হল, এল না। আমরা আশাও করছিলাম না, জাস্ট যেটা ঘটছে সত্যিই ঘটছে কিনা সেটা কনফার্ম করার জন্যই অর্ডার দেওয়া। তারপর ‘চল বেরোনো যাক’ বলে বিছানা থেকে নিজেদের ছিঁড়ে তুলে বেরিয়ে ফেললাম। গন্তব্য গতকালের কিউরিয়াস লাইফ ক্যাফে। ঘণ্টাতিনেক থেকে আবার একটু বেরোনোর ইচ্ছে আছে। অর্চিষ্মানের বান্টা হজম হয়ে গিয়েছিল বোধহয়, বলল, ক্যাফের উল্টোদিকে ওই দোকানটায় যাবে? </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কোন দোকানটা?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান মনে করাল। কফিশপের পাড়াটা আমাদের চমৎকার লেগেছিল। গতকাল অটো থেকে নেমে দোকানে ঢোকার আগে হেঁটে হেঁটে একটু এদিকওদিক গিয়েছিলাম। তখনই বেকারিটা চোখে পড়েছিল। বিরাট ছড়ানো বারান্দার ওপারে নর্ম্যাল একটা বাড়ি। নাম জয়পুর বেকারি না কী যেন । বাইরেটা এত কম চকচকে যে ভরসা জাগে ভেতরটা নিশ্চয় দুর্দান্ত হবে। ভেতরটাও খোলামেলা। যা বুঝলাম, পাড়ার পুরোনো দোকান। অর্চিষ্মান একটা পেস্ট্রি আর একটা চিকেন না মাটন প্যাটিস নিল, আমি ভেজ প্যাটিস। বাড়ির জন্য চিজ পাফ, কুকিস নেওয়া হল। বোকার মতো ব্যাকপ্যাকে পুরে আনতে গিয়ে অধিকাংশই গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গিয়েছিল, যাকগে নিজেরাই খেয়েছি, অসুবিধে হয়নি। খেয়েটেয়ে ক্যাফেতে ঢুকে পড়লাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ফিরে আসার পর একদিন অর্চিষ্মান টুইটার থেকে দম নেওয়ার জন্য মাথা তুলে বলল, বরুণ গ্রোভারও জয়পুরে বেড়াতে গিয়ে তিনটে জায়গায় গেছে,বুঝলে। অমুক জায়গা, তমুক জায়গা আর কিউরিয়াস লাইফ ক্যাফে। বলেই আবার ভুস করে ডুবে গেল। ক্যাফেটা সত্যি ভালো, আমার কথা বিশ্বাস না হলে বরুণ গ্রোভার সাক্ষী। যাই হোক, ক্যাফেতে বসে কাজ শুরু করার আগে ইউটিউব দেখছি, অর্চিষ্মান ঝুঁকে পড়ে বলতে লাগল, একজন টুইটার সেলেব নাকি আমাদের পাশের টেবিলে এসে বসেছেন। চমৎকার সব ওক জোক লেখেন, পড়ে অর্চিষ্মান গড়াগড়ি খেয়ে হাসে। আমি বললাম, যাও গিয়ে বল যে আপনার কনটেন্ট আমার ভালো লাগে, তাতে অর্চিষ্মান এমন মুখ করল যেন প্যারাশুট ছাড়া প্লেন থেকে লাফাতে বলেছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">খিদে ছিল না। বোর হয়ে মাশরুম ব্রুশকেটা অর্ডার করলাম। আমার ভালো লাগল, অর্চিষ্মান একেবারে মুগ্ধ। পাঁচটা দিয়েছিল। দুটো খেয়ে ভীষণ বেশি অন্যদিকে তাকিয়ে বসে রইল। আমিও দুটো খেলাম। খেয়ে বললাম, লাস্টেরটা তুমি খেয়ে নাও, আমি খেলে আমার পেট ফেটে যাবে। সব কথা এত বাড়িয়ে বল কেন দেখি, বলে খুব আরাম করে তিন নম্বরটা খেল অর্চিষ্মান। বলল, বাড়ি এসে নাকি বানাবে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সন্ধে পেরিয়ে গেল। আমাদের ইচ্ছে অ্যালবার্ট মিউজিয়ামটা দেখার, যাতায়াতের পথে দেখেছি, অপূর্ব বিল্ডিং। ভেতরটাও ভালোই হবে নিশ্চয়। কিন্তু ক্লান্ত লাগছিল। ভেবেচিন্তে ঠিক করলাম, থাক। টুকটাক খেয়ে হোটেলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ব।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মানের সম্পত কচুরিতে খাওয়ার খুব শখ। ইউটিউবে অনুভব সাপরার দিল্লি ফুড ওয়াকস চ্যানেলে দেখেছি। সম্পতে আরও ভ্যারাইটির কচুরি ভাজা হয় নিশ্চয়, কিন্তু বিখ্যাত হচ্ছে 'বিনা ছিলকে কা আলু'র কচুরি। সম্পতের দোকান একেবারে বিশুদ্ধ গলির ভেতর। গলির মুখে অটো ছেড়ে দিলাম। বাকি পথটুকু হেঁটে যাব। হাঁটা শুরু করে মিনিট পাঁচেক পরেই এমন একটা জিনিস চোখে পড়ল যেটার জন্য আমি উন্মুখ হয়ে ছিলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পাতাসি। আমার বাকেট লিস্টে আছে, ফুচকার একশো আট রূপ না দেখে মরব না। জয়পুরে ফুচকা ভজিত হন পাতাসি নামে। দেখতেশুনতে, খেতে দিল্লির পানিপুরির মতোই। ইউটিউবে জয়পুরের বিখ্যাত পাতাসিওয়ালাদের স্টল দেখেছি। একজনকে ভীষণ মনে ধরেছিল। তাঁর ফুচকা দুই ভ্যারাইটির। এস পি = স্পাইসি ফুচকা। ডি এস পি = ডেঞ্জারাস স্পাইসি ফুচকা। আমাদের যা ভাবগতিক, ডি এস পি-র পিছু ধাওয়া করার এনার্জি হবে না। কাজেই নর্ম্যাল স্পাইসিই হোক। ফুচকা মন্দ হলেও খাই, কিন্তু এঁরটা যে ভালো হবে সে নিয়ে সন্দেহ নেই। কারণ মহিলা ক্লায়েন্টেলের উপস্থিতি। চেহারা বলে দিচ্ছে, স্থানীয় মহিলা। রোজ বাড়ি ফেরার পথে খেয়ে ফেরেন। ফুচকার কোয়ালিটির আলটিমেট সার্টিফিকেট।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এঁর ভালোত্বের আরও প্রমাণ পাওয়া গেল। ফুচকাওয়ালাদের কাছ থেকে আমি কখনওই শুকনো চাই না। চেনারা তো আপসেই দেন, ইনি অচেনা হয়েও নিজে থেকেই দিলেন। এটা ওঁর মহত্ব তো বটেই, একটু কলার তুলেই বলছি ফুচকা কনজিউমার হিসেবে আমার কোয়ালিটির সার্টিফিকেটও। অভিজ্ঞতায় দেখেছি যদি খদ্দের সজ্জন হয়, ফুচকাওয়ালারা যেচে ফাউ শুকনো অফার করেন। আমার একটা গুপ্ত গর্বের জায়গা হচ্ছে আজ পর্যন্ত সমস্ত অচেনা ফুচকাওয়ালাই আমাকে ওই ফাউটি অফার করেছেন। যেদিন করবেন না বুঝব আমার তরফ থেকে খামতি হয়েছে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ফুচকা খেয়ে হাঁটা শুরু করলাম। সরু গলি। দু’পাশে বাড়ি, বন্ধ দোকান। বড় রাস্তার আলো পেছনে পড়ে। গলির ভেতরে দূরে দূরে টিমটিমে ল্যাম্পপোস্ট। ভারতবর্ষের শহরের এই চরিত্রটা বারবার দেখেছি। একটা বোম্বেটে, জমজমাট রাজপথের দশ হাতের মধ্যে একেবারে নিভন্ত গলি। সম্পতের দোকান বেসিক্যালি হোল ইন দ্য ওয়াল। কিন্তু লক্ষণ ভালো, প্রচুর লোক্যাল লোক। সন্ধেবেলার ভাজাভুজি খেতে এসেছেন। রাজস্থানীদের একবস্তা বেসন আর একগঙ্গা তেল দিলে ওঁরা বিশ্বজয় করে আসতে পারেন। প্রকাণ্ড লোহার কড়াইয়ে তেলের সমুদ্রে ভাজা হচ্ছে রোগা গাঠিয়া, মোটা গাঠিয়া, রোগা সেউ, মোটা সেউ, প্লেন বুঁদি, মসালা বুঁদি, আরও পঞ্চান্ন রকম জিনিস। আমরা (অ্যাকচুয়ালি অর্চিষ্মান, কারণ আমি সত্যিই ফাটো ফাটো) এ সব খাব না। অর্চিষ্মান খাবে কচুরি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এখানে কথাটা বললে মনে হবে আমি পার্টিকুলারলি সম্পতের ভদ্রলোকদের সম্পর্কে বিষোদ্গার করছি, কিন্তু সে রকম না। আমরা গোমড়ামোতে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ভাঙতে পারি। হেসে কথা বলা তো অনেক দূর, আমরা আই কনট্যাক্ট করি না, আমাদের এনার্জি মাটির তলা দিয়ে বয়। খুব স্মার্ট লোক হলে হয়তো গিয়ে ধাঁইধপাধপ এই দিন সেই দিন বলে দিত, আমরা সেই টাইপ নই, কেউ আমাদের দিকে মুখ তুলে, কী চাই, জানতে চাইলে কনফিডেন্স পাই। দাঁড়িয়ে আছি তো আছিই, এমন নয় যে ভিড়। একজন ভাজছেন, একজন ফোন দেখছেন। 'ভাইসাব' 'ভাইসাব' ডাকলাম। প্রথমবার বেশি মৃদু হয়ে গিয়েছিল বোধহয়, নো সাড়া। আবার ডাকতে সাড়া পাওয়া গেল। আলুর কচুরি পাওয়া যাবে জানতে চাইলে ঘাড়টা কোনদিকে নড়ল, আদৌ নড়ল কি না, বুঝতে পারলাম না। আলোর কথা না বলাই ভালো। আমি যদিও ওঁর ব্যবসার ব্যালেন্সশিট দেখিনি, কিন্তু আরেকটা বাল্ব লাগাতে অসুবিধে হত না বলেই মনে হয় না। আমি সত্যি বুঝতে পারছিলাম না কচুরি পাওয়া যাবে কি না, অর্চিষ্মান দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখে দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর ছেঁড়া কাগজের টুকরোতে চড়ে একখানা কচুরি এসে উপস্থিত হল। অর্চিষ্মান খেল, আমি একটু ভেঙে মুখে দিলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কচুরি ভালোই। কিন্তু সত্যি বলছি, যদি আরেকটু আলো জ্বলত, আচ্ছা আলোটালো যদি ছেড়েও নিই, যদি ভদ্রলোক আমাদের মুখের দিকে তাকানো বা আমাদের প্রশ্নের বোধগম্য উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করতেন, তাহলে ওই কচুরিটাই মিনিমাম দেড়গুণ বেটার খেতে লাগত। ততক্ষণে আরও খদ্দেররা আসছেন যাচ্ছেন, কেউ কারও সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে না। চেনা ক্রেতাবিক্রেতার নর্ম্যাল সম্ভাষণটুকু পর্যন্ত না। এটা শুধু জয়পুরের ওই পার্টিকুলার গলিতে ওই মুহূর্তে ঘটছে সেটা নয়। সর্বত্র এ জিনিস ঘটে। কারও মুখে হাসি নেই, এনার্জি নেই, আগ্রহ নেই, কারও কিছু যায় আসে না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান বলে, অচেনা লোক দেখলে দাঁত বার করাটা অ্যামেরিকান ফ্রেন্ডলিনেস। ওই দিয়ে এখানকার বিচার কোর না। কথা বাড়াই না, কিন্তু আমার সন্দেহ ব্যাপারটা এত গুরুতর না। সমস্যাটা অনেক ঠুনকো। বেসিক্যালি, আমরা ডিফেন্সিভ। আন্ডারকনফিডেন্ট। হাসব, যদি ধার চায়? ধার চাইলে যে হেসেই না করে দেওয়া যায়, এটা শিখিনি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যাকগে, হয়তো বেশি ভেবে ফেলেছি। সম্পত খুবই নামী দোকান। প্রচুর ভ্যারাইটি। সেটা আরেকটা অসুবিধে। ওই ধরণের দোকানে তো সব আইটেম আলাদা আলাদা জায়গায় রেখে প্রপার লেবেলিং করা হয় না, অত বহ্বারম্ভের দরকারও নেই, অন্ততঃ যদি অ্যাটিচিউডটা এমন করে রাখেন যাতে কোনটা কী জিজ্ঞাসা করতে তোতলাতে না হয়, সেটাই এনাফ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সবাইকে ভাজাভুজি কিনতে দেখে আমাদেরও ইচ্ছে হল। কী নেব কী নেব ভাবছি। কর্তৃপক্ষের থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না বুঝে কাউন্টারের এদিকে মনোনিবেশ করলাম। সবাই খুব বুঁদি কিনছিলেন দেখলাম। মসালা বুঁদি কেজি কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে শিওর রায়তায় ঢালবেন। সে নিয়ে আমরা কী করব। অপেক্ষার ফল ফলল, একজন একটা স্কুটিতে চড়ে এসে ব্যাজার মুখে বললেন, মিক্স দো কেজি। কান খাড়া, চোখ সরু করলাম। যিনি ভাজছিলেন, ভাজা থামিয়ে অনেকটা গাঠিয়া, অনেকটা সেউ, অনেকটা বুঁদি, আরও আমাদের নাম না জানা কী সব মিলিয়ে মিশিয়ে একটা বস্তা বেঁধে ভদ্রলোককে দিলেন, স্কুটি ভটভটিয়ে রওনা দিল। আমরা লাফিয়ে পড়ে বললাম, ওই যে উনি যেটা নিলেন আমরাও নেব। ভাজিয়ে বললেন, কিতনা? একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি, তখন একটি রেয়ার মানবিক স্পর্শে ভদ্রলোক নিজেই বুদ্ধি খাটিয়ে একটা মাপমতো ঠোঙায় সব মিলিয়েমিশিয়ে আমাদের হাতে দিয়ে বললেন, এত টাকা দিন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">হাঁটতে শুরু করলাম। হাতে গুগল ম্যাপ। দুপাশে চেপে এসেছে বসতবাটি। এ পাড়া মধ্যবিত্ত, কাজেই দুটো বাড়ির মধ্যে কোনও ফাঁক নেই, বাগান যা কিছু ব্যালকনির টবে। তবু বাহারের দরজা, আর দরজার সামনে রক। সেই রকে জটলা করছেন পাড়ার সিনিয়র সিটিজেন মহিলারা, পাশে ওয়াকার রাখা। উল্টোদিক থেকে আসা গরুকে সাইড দিতে রকগুলো আমাদেরও কাজে লাগছিল। গরু নিরাপদ দূরত্বে এগিয়ে গেলে আবার হাঁটা শুরু করছিলাম। হাতে গুগল ম্যাপ, অন্ধকার গলিতে বাজছে, ‘অব তেরে বিন, জি লেঙ্গে হাম’। যেন আর কোনও অপশন আছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">একেবারে অন্ধের মতো হাঁটছিলাম না। উদ্দেশ্য ছিল। লস্যিওয়ালা। জয়পুরের বিখ্যাত লস্যির দোকান। এবং সম্ভবতঃ সবথেকে বেশি টুকলি হওয়া দোকানও বটে। সেটার জন্য দোকানের নাম খানিকটা দায়ী কি? মানে লস্যিওয়ালা নাম রাখলে আর কীই বা আশা করা যেতে পারে? সবাই লিখেছে অরিজিন্যাল দোকান এম আই রোডের ৩১২ নম্বর দোকান, সেটাই টার্গেট করে এগোচ্ছিলাম। সে দোকান বন্ধ বেরোলো। অসুবিধে নেই, পাশে অন্ততঃ চারটে ‘লস্যিওয়ালা’ নামের দোকান গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের একজনের থেকেই লস্যি অর্ডার করা হল। একটাই, কারণ তখন লস্যি খেলে আমার সত্যি ফেটে যাওয়ার চান্স ছিল। লস্যিতে চুমুক দিয়ে, দেড় সেকেন্ড থেমে, সাধাসাধি না করে গ্লাস হাতে ধরিয়ে দিল অর্চিষ্মান। বুঝলাম, সিরিয়াস। চুমুক দিলাম। ভালো বটে। তবু খাব না। কারণ, তবলা মাস্টারমশাই বলতেন, ভালোর একটুই ভালো। অর্চিষ্মান পর পর দু’গ্লাস খেল। তারপর আমরা উবার অটো ধরে হোটেলে ফিরে এলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjk1TpUucGHrPefdBOd53x0k797RagDal490EuHFmx0S0FjyyYN0xSamymg9yQOZUxx7K70BUt5CUAlHiIiYL-qRxQvGyH3aqD4aRGB38TAlpW9AggnHgHT44syxEPgo7WKYe550UPUUYhUP5kqI_QwJkP8Et3mzlEKa93haGiGqRfo7gT49VZkeyKLgS4E/s3893/Jalmahal1.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="2919" data-original-width="3893" height="480" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjk1TpUucGHrPefdBOd53x0k797RagDal490EuHFmx0S0FjyyYN0xSamymg9yQOZUxx7K70BUt5CUAlHiIiYL-qRxQvGyH3aqD4aRGB38TAlpW9AggnHgHT44syxEPgo7WKYe550UPUUYhUP5kqI_QwJkP8Et3mzlEKa93haGiGqRfo7gT49VZkeyKLgS4E/w640-h480/Jalmahal1.jpg" width="640" /></a></div><br /><div class="p2"><br /></div>
<div class="p1"></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com8tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-64222251032593267652023-09-09T15:23:00.009+05:302023-09-20T11:15:37.890+05:30চোদ্দ বছরে<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><div class="p2"><br /></div><div class="p1">একটা বাচ্চা জন্মে অ্যালজেব্রায় পৌঁছে যায়, ইলিয়াডের যুদ্ধ শুরু হয়ে শেষ হয়ে যায়, সীতা কিডন্যাপ হয়ে ফিরে আসেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ব্লগবয়সের চোদ্দ বছর মানুষের হিসেবে কত? একশো চোদ্দটোদ্দ হবে। আমার সঙ্গে যাঁরা ব্লগ লিখতে শুরু করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ক'জন আর ব্লগ লেখেন আমি শিওর নই। যাঁরা লিখছেন, প্রাণভরে লিখছেন। অন্য কোনও সবুজতর প্রান্তরে।</div>
<div class="p2"><br /></div>
<div class="p1">সে প্রান্তরে তাঁদের মুভ করার সিদ্ধান্ত বুঝতে খুব বেশি বুদ্ধি খরচ করার দরকার নেই। ট্রেন আবিষ্কার হলে কেউ গরুর গাড়ি চড়ে না। ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা হলে কেউ তালপাতার পুঁথি বগলে নিয়ে ঘোরে না। লেখকরা (যদি সাহস করে ব্লগারদের লেখক বলার সাহস দেখাই-ই) অন্য মাধ্যমে সরে গেছেন যেখানে পাঠক আছেন। পাঠকরা সেই মাধ্যমে সরে গেছেন যেখানে লেখক আছেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমি অবান্তরে ঝাণ্ডা গেড়ে বসে আছি। ফুটফলস কমতে কমতে শ্মশানের সন্নাটা, আইবলস নিভতে নিভতে অমাবস্যার অন্ধকার। আমাকে ভুল প্রমাণ করার বা আশ্বাস দেওয়ার দরকার নেই। ব্লগস্পটে স্ট্যাটস বলে একটা ব্যাপার আছে। সত্যিটা আমি জানি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সরতে পারিনি। সরতে পারি না বলে নয়। কোনও ব্যক্তি, নীতি, আদর্শের সঙ্গে লেগে থাকার বদভ্যেস আমার ছিল না কোনওদিন। হয়তো সেই চমকটাই আমাকে সরতে দেয়নি। যে আমি জানুয়ারির সাত তারিখ পৌঁছতে না পৌঁছতে রেজলিউশন ছেড়ে দিই, একটা রুমাল তিনদিক সেলাই করে নামিয়ে রাখি, সেই আমি চোদ্দ বছর ধরে একটা ব্লগ লিখলাম কী করে?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এবং শুধু লিখিনি, মন দিয়ে লিখেছি। বাইরে থেকে দেখে টের না পাওয়া যেতে পারে, বা আমি আনস্মার্ট কর্মী হতে পারি, কিন্তু এ কথা সত্যিই বলে বোঝানো অসম্ভব, অবান্তর আমার কতখানি এনার্জি এবং পরিশ্রম অধিকার করে রাখে। জীবনে আর কিছুর পেছনে এত পরিশ্রম করিনি গত চোদ্দ বছর ধরে যত অবান্তর লিখতে করছি। অবান্তরকে ফাঁকি দেওয়ার কল্পনাও মাথায় আসেনি। চোদ্দ বছর কেটে যাওয়ার পরও অবান্তরের প্রতিটি পোস্ট লিখতে আমি সমান পরিশ্রম, সমান সময় দিই।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">না দিলেও চলত। দৌড়তই হয়তো। কারণ এমন তো নয় যে এই সময়টায় আমার অন্য কিছু করার নেই। কাজের কাজ যদি নাও করি, অন্য লেখালিখি নিয়েও ঘষটানো যেত। অনেস্ট বন্ধুরা স্পষ্টই বলেছে, ব্লগ বোরিং। পড়তে ভালো লাগে না। গল্পউপন্যাস লিখিস তো চেষ্টা করে দেখতে পারি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">চেষ্টা করছি না একেবারে তা নয়। আরও করা যেত। এই এখন অবান্তর না লিখে গল্প লেখা যেত। হয়ত আরও কয়েকজন বেশি লোক সেই গল্পগুলো পড়ত। কাল একটা গল্প জমা দিতে হবে। ফিফটি পার সেন্ট লেখা বাকি। কী হবে কে জানে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তবু অবান্তরই লিখছি। তবু অবান্তর লিখব। কেন, সেটা নিয়ে অনেক ভেবেছি। আর ভাবি না। প্রশ্ন না করার সংযম দেখালে উত্তর আপনি এসে সামনে দাঁড়ায়। অবান্তর টিঁকে গেছে কারণ এই একটা কাজ আমি সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে, নিজের জন্য করেছি। কেউ আমাকে কাজটা করতে বলেনি, কোনও রিটার্নের মুখ চেয়ে আমি কাজটা করিনি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সেই জন্যই রিটার্ন পেয়েছি। কী রিটার্ন সেটা সর্বসমক্ষে বলার দরকার নেই। আমি জানে আর জানে অবান্তর। সে জানা আমাদের দুজনের মধ্যেই থাক।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অনেকদিন পর্যন্ত অ্যাকটিভলি কল্পনা করতাম, অবান্তরের শেষ পোস্টটা কবে, কখন লিখব। লেখার সময় মনের ভাব কেমন হবে। ছোটবেলায় মা বকলে যেমন কল্পনা করতাম এই যে আমি মায়ের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করব, অনেক অনেক বছর পর আবার যদি কোনওদিন দুজনের দেখা হয় (এই অনেক অনেক বছর মা কোথায় যাবেন, আমিই বা কোথায় যাব, সে সব লজিস্টিকস বোরিং) তখন আমার মনের ভাব, মায়ের মনের ভাব কেমন হবে, অনেকটা সেই রকম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">হ্যাপি বার্থডে, অবান্তর। পরের চোদ্দর জন্য হাঁটা শুরু করা যাক।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"></div></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com12tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-15619358601984190892023-09-04T06:56:00.005+05:302023-09-05T10:13:15.789+05:30জয়পুর ৪ঃ আমের প্যালেসে পরকীয়া<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><div class="p2"><br /></div>
<div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhAvCKvDgvURw4Ql0iFRlWZr126jv2GWjwtTVb5T3WfPXFCP-e0ZK716pTAV455nYcEcBgTLEFsy9eM3tH1Eb0CeM6XedB5d4M0qcFvmItGopXNJ9Zqcthk5QLswHacH9L49_qSsjZUnZb4doT4T6GumnDJOsIYFNHHt4abMMtrfnSgn7pYxZjoZtV7BbJT/s3793/AMER14.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="3793" data-original-width="2845" height="640" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhAvCKvDgvURw4Ql0iFRlWZr126jv2GWjwtTVb5T3WfPXFCP-e0ZK716pTAV455nYcEcBgTLEFsy9eM3tH1Eb0CeM6XedB5d4M0qcFvmItGopXNJ9Zqcthk5QLswHacH9L49_qSsjZUnZb4doT4T6GumnDJOsIYFNHHt4abMMtrfnSgn7pYxZjoZtV7BbJT/w480-h640/AMER14.jpg" width="480" /></a></div><div class="p1"><br />ভালো ঘুম যে ভালো খাওয়ার থেকে একশোগুণ গুরুত্ব এবং আরামের আবারও প্রমাণ হল। পরদিন সকালে জল পর্যন্ত খাইনি, অথচ সমস্ত শরীর চাঙ্গা। অন্যদিনের মতো শরীরের সমস্ত কোষে ঘুম আর আলস্য ঝুলের মতো লেগে নেই। এও বুঝলাম যে পরিশ্রম বা ক্লান্তি, প্রপার ক্লান্তি, ঘুমের জন্য কতখানি জরুরি। অধিকাংশ দিন ঠিক করে ক্লান্তই হই না, ঘুম আর আসবে কী করে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মানের বেডসাইড টেবিলে চায়ের কাপ নেই, কাজেই বেচারা কাল রাতে চা পায়নি। তখন পাঁচটাও বাজেনি, চা পাওয়ার কোনও চান্সই নেই। হাতের ওপর বসে রইলাম আড়াই ঘণ্টা মতো, সাড়ে সাতটা নাগাদ প্রাণ হাতে করে ফোন করলাম। একটি ভদ্র গলা গুড মর্নিং বলল। চা পাওয়া যাবে? চাঙ্গা গলায় বললেন ভদ্রলোক, অফ কোর্স। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ইউনিফর্ম পরা ভদ্র ছেলে চা নিয়ে চলে এল। চা খেতে খেতে ভাবলাম, অর্চিষ্মান উঠতে উঠতে গনগৌরের সার্ভিস এই স্ট্যান্ডার্ড মেন্টেন করতে পারলে হয়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">যদিও হোটেলের ব্রেকফাস্ট ফাউ, কিন্তু দাম দেওয়া সার্ভিসেরই যা ছিরি ফ্রি খাবার খাওয়ার সাহস হল না। তবে সেটা প্রধান কারণ নয়। জয়পুরে গিয়ে হোটেলের ডিমপাউরুটি খাওয়া পাপ। ইউটিউবে কোটি কোটি ব্রেকফাস্টের জায়গার ভিডিও দেখেছি। কিন্তু সকাল সকাল ওই ঘোরাঘুরিটা কল্পনা করতেই ক্লান্ত লাগল। তার থেকে একটা সাজানোগোছানো দোকানে সুস্থমতো বসে খেতেই ভালো লাগবে। কাজেই গন্তব্য লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">খেয়ে কী করব সেটা ভেবে নিতে হবে। সেদিন শুক্রবার, আর দেড়দিন মতো থাকব জয়পুরে। শনিবার বিকেলে আবার শতাব্দী ধরে বাড়ি। আজ ঘোরার দিকেই কনসেন্ট্রেট করব। ফিরে এসে এনার্জি থাকলে কাজের কথা ভাবা যাবে। কিন্তু যাব কোথায়? যাওয়ার জায়গাও তো কোটি কোটি। প্রাসাদ, দুর্গ, মন্দির, জঙ্গল, লেক। ছবিটবি দেখে অর্চিষ্মানের আমের প্যালেস মনে ধরেছে, যেটা শহর থেকে সামান্য বাইরে। অসুবিধে নেই। বেড়াতেই তো আসা। পথে জলমহল পড়বে, দেখে নেওয়া যাবে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমাদের ইচ্ছে ছিল উবার রেন্টাল চার ঘণ্টার জন্য বুক করে আমের প্যালেস আর জলমহলটা ঘুরে নেওয়া। সময় যদি বেশি লাগে রেন্টালের ভাড়াও অ্যাকর্ডিংলি বাড়বে। পরপর তিন চারজন ভাইসাব বুকিং অ্যাকসেপ্ট করে আমাদের দাবি শুনে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রিফিউজ করলেন। উবার রেন্টাল নিয়ে আর যা-ই করা যাক দ্রষ্টব্য জিনিস দেখা যাবে না। কারণ সেটার আলাদা সিন্ডিকেট। হাজার হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে পয়েন্ট হিসেবে দেখতে হবে। অর্চিষ্মান বেঁকিয়েচুরিয়ে ব্যাপারটা ম্যানেজ করার চেষ্টা করল, আচ্ছা ওয়েট করতে হবে না, আপনি শুধু আমাদের ছেড়ে দিয়ে চলে আসবেন, ফেরার সময় আমরা অন্য উবার ধরে ফিরব, তাতেও বাবুরা অরাজি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আমি, বলা বাহুল্য, এর মধ্যে ঢুকিনি। খাটের উল্টো প্রান্তে বসে ডিপ ব্রিদিং প্র্যাকটিস করছিলাম। অর্চিষ্মান অবশেষে ফোন বন্ধ করে বলল, চল খেতে যাই, তারপর দেখা যাবে কী করা যায়। রাজস্থানের উবারভাইসাবদের সামনে মনে মনে হাঁটু গাড়লাম। অর্চিষ্মানকে হাল ছাড়িয়ে ছেড়েছেন। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার প্রায় হাওয়ামহল আর সিটি প্যালেসের মতোই বিখ্যাত। দোকানের ভেতরে আমাদের সি আর পার্কের দুটো বাড়ি ঢুকে যাবে। বাইরের অংশে রিটেল বিক্রিবাটা। লাড্ডু, সামোসা, রাবড়ি, কচুরি পিলপিল করে বিক্রি হচ্ছে। সবাই লোক্যাল ক্রেতা। দোকানের ভেতর রেস্টোর্যান্ট। রাস্তার দিকের বড়বড় জানালা দিয়ে সূর্যালোক রেস্টোর্যান্ট ভাসিয়ে দিচ্ছে। একটা টেবিলে একজোড়া ছেলেমেয়ে। আরেকটা সাফারিসুটমণ্ডিত টেবিলে হান্ড্রেড পার সেন্ট কোনও ডিল ফাইন্যাল হচ্ছে। আমরা থাকতে থাকতেই দু'চারটে পরিবারও এসে উপস্থিত। মারাত্মক সপ্রতিভ বাচ্চাসহযোগে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এই ধরণের দোকান অর্চিষ্মানের খুব পছন্দের। জমজমাট। নো গুজগুজ ফুসফুস। সবাই এত কথা এত জোরে জোরে বলছে যে ওকে বলতে বা কান খাড়া করতেও হচ্ছে না, আড়চোখে তাকালেই আর আড়ি পাতলেই বিনোদন গ্যারান্টিড। একটু আগের উবারফিয়াস্কো ভুলে অর্চিষ্মান বলল, পুরী সবজি লাও। মানে লাও বলেনি, ওটা বডি ল্যাংগোয়েজে ছিল। আমি কচুরি নেব জানতাম, ডালের না পেঁয়াজের মাইন্ড মেক আপ করতে পারছিলাম না। রাজস্থানী কচুরি আমার খুব নরম একটা জায়গা। জীবনের একটা সময় আমি দুপুরে অফিস থেকে বেরিয়ে দিল্লির রোদে হেঁটে হেঁটে প্রায় হাফ কিলোমিটার গিয়ে একটা স্টলে কোটি কোটি অচেনা পুরুষের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রাজস্থানী পেঁয়াজের কচুরি আর লাল চাটনি খেতাম। সেটা ছিল হায়েস্ট পয়েন্ট অফ মাই ডে। আমার জীবন আজ নতুন করে স্যাড হয়নি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভদ্রমহিলাকে ডাকলাম। ইনি পরিবেশক নন, ম্যানেজার মনে হয়। বডি ফেললাম। আপনি সাজেস্ট করুন। উনি বললেন, পেঁয়াজ নিন। আমাদের পেঁয়াজ কচুরি ফেমাস। ওক্কে ডান বলে মেনু সরিয়ে রাখলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg_pxlxUdYhgPa0iC7X2FzDY0X5rYUeLPRH8vkx5NdpQ6ZK3KgxTQSuQ0ZFGMQ6RddWUjzc5M71dt56JZzTpPZI0QOuE9yrbrV5hLL9d59fLIlM8H5qbKTG4g_TFyprt9jDJS1DJrsyztiaG6Gb_EfJNeA00ziPyNKFCmbQNFE4SMKMJGZfAdHJ2QrQQe75/s3751/LMB1.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="2271" data-original-width="3751" height="388" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEg_pxlxUdYhgPa0iC7X2FzDY0X5rYUeLPRH8vkx5NdpQ6ZK3KgxTQSuQ0ZFGMQ6RddWUjzc5M71dt56JZzTpPZI0QOuE9yrbrV5hLL9d59fLIlM8H5qbKTG4g_TFyprt9jDJS1DJrsyztiaG6Gb_EfJNeA00ziPyNKFCmbQNFE4SMKMJGZfAdHJ2QrQQe75/w640-h388/LMB1.jpg" width="640" /></a></div><div class="p2"><br /></div>
<div class="p1">খাবার এল। আমরা যাকে বলে টুট পড়লাম। পেঁয়াজের কচুরি প্রত্যাশিত রকমের ভালো ছিল। কিন্তু আমি তাক করে ছিলাম লাল চাটনির প্রতি। কারণ সেই দুপুরগুলোয় কচুরির সঙ্গে লাল চাটনিই পরিবেশিত হত। মুগ্ধ করল সবুজ চাটনিটিও। এই চাটনিগুলো সবই চেনা, কিন্তু দিল্লিতে যে ভার্শান পাওয়া যায় তার সঙ্গে এদের তুলনা করার মানে রুটি আর লুচিকে এক করে দেখা।</div><div class="p1"><br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgICVXRUhGplPcuhB2fyNowukJuFeeaWhWMvuOu2EAvz4bcbGRkgavdpqBGIxOSS8A_ApRjyqPuRJjzPfGjVFTm3O2Sgco7ROwzSZpU6Mm_NrOETL2KoWqDSoCGRQ7LV8mZPz4xHMOKfVuXBsHn4o5VwSvIiLRHrV-RHaurSLaGadlTpcAIKd0aLZ1SNboP/s1978/LMB2.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1932" data-original-width="1978" height="626" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgICVXRUhGplPcuhB2fyNowukJuFeeaWhWMvuOu2EAvz4bcbGRkgavdpqBGIxOSS8A_ApRjyqPuRJjzPfGjVFTm3O2Sgco7ROwzSZpU6Mm_NrOETL2KoWqDSoCGRQ7LV8mZPz4xHMOKfVuXBsHn4o5VwSvIiLRHrV-RHaurSLaGadlTpcAIKd0aLZ1SNboP/w640-h626/LMB2.jpg" width="640" /></a></div></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কিন্তু আমাদের গোটা ব্রেকফাস্টের হিরো এঁরা কেউ ছিলেন না। সে মুকুট নিয়ে চলে গেলেন অর্চিষ্মানের পুরির সবজি। দিল্লি লখনৌয়ের পুরির তরকারির সঙ্গে এই তরকারিটির তফাৎ রয়েছে। এই তরকারিটিতে দইয়ের ব্যবহার হয়েছে। আলুর সাদা তরকারি খাওয়া পেটে এ জিনিস রোজ আমাকে দিলে আমি কেঁদে ফেলব, কিন্তু মাঝেমাঝে নতজানু হতে সোল্লাসে রাজি। চেগে গিয়ে মিরচি পকোড়া জিলিপি অর্ডার করে ফেললাম। পকোড়াটা ভালোই ছিল, জিলিপিটার গায়ে কেমন চিনি চিনি। চা ছাড়া তো ব্রেকফাস্ট হয় না। এদের দেশে চা সত্যি ভালো। যদিও উটের নয়, মোষের দুধ দিয়ে বানানো। কেটলিটা ওই রকম পুঁচকে দেখতে হলে কী হবে ভারী আছে।</div><div class="p1"><br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjm7FzUMUJLaF8KIpmbSjgHlz7IkbShYRV235KyjAgYz4nTwErR08OGA9pB-dS6jh4zVgyRap9OMYoHDgou1U4leHHHmHUDfKGSV_PKHibooGnMRwVYmQybTaswA-0-qswi_et4ndRK0OUfYJ45RU4T-6hQHnUXq37LcnNk9FPjBR1yueRCV278RwSG7--c/s4000/LMB3.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="3000" data-original-width="4000" height="480" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjm7FzUMUJLaF8KIpmbSjgHlz7IkbShYRV235KyjAgYz4nTwErR08OGA9pB-dS6jh4zVgyRap9OMYoHDgou1U4leHHHmHUDfKGSV_PKHibooGnMRwVYmQybTaswA-0-qswi_et4ndRK0OUfYJ45RU4T-6hQHnUXq37LcnNk9FPjBR1yueRCV278RwSG7--c/w640-h480/LMB3.jpg" width="640" /></a></div></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">খেয়েদেয়ে মিনিমাম আড়াই আড়াই পাঁচ কেজি মিনিমাম ওজন বাড়িয়ে আমরা বসে রইলাম। অর্চিষ্মান দেখি আবার ফোন বার করেছে। একটু পর সম্ভবতঃ কোনও একজন সাড়া দিলেন। ফোন কানে লাগিয়ে হাত নেড়ে কী সব ইশারা করতে করতে অর্চিষ্মান বাইরে চলে গেল। ইশারার মানে বুঝলাম না, কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে কী আর ইশারা করবে, দাম দিয়ে বাইরে এসো-ই বলছে নির্ঘাত। সে সব সেরে বাইরে বেরিয়ে দেখি অর্চিষ্মানের টিকি দেখা যাচ্ছে না। লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সামনেটা সর্বদা মাছের বাজার, ওখানে আমার মতো ট্যালার কাউকে খুঁজে পাওয়ার উচ্চাশা রাখাও উচিত না। অবিকল অর্চিষ্মানের মতো দেখতে একজনকে হাত নাড়লাম, সে বিরক্ত মুখ ঘুরিয়ে নিল। তখন ঠাহর করে দেখলাম, ভদ্রলোক একটা ই-রিকশার চালকের আসনে বসে আছেন। অর্চিষ্মান মরিয়া হয়ে কিছু না পেয়ে নিজেই একটা গাড়ি জোগাড় করে চালিয়ে নিয়ে যাবে মতলব করেছে, এ ভাবনা আমার মোটামাথায় আসাও বাড়াবাড়ি। তবু হাত নাড়লাম কেন? অদ্ভুত। যাই হোক, বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না, বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে হেলমেটের বেল্ট লাগাতে লাগাতে একজন বলে উঠলেন, আন্টিজী, ভাইয়া আপকো বুলা রহে হ্যায়।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভাইপোর তর্জনী অনুসরণ করে দেখি রাস্তার ওপার থেকে ভাইয়া জোরে জোরে হাত নাড়ছেন। গেলাম। ই-রিকশার চালকের আসনে ভদ্রলোক গম্ভীর মুখে বসে আছেন। অর্চিষ্মান উবারের অ্যাপ খুলে ঝুঁকে পড়ে তাঁকে বোঝাচ্ছে যে এই দেখুন এখানে যত টাকা দেখাচ্ছে আমি আপনাকে তার ডবল দিচ্ছি, আপনি আমাদের আমের প্যালেসে নিয়ে যাবেন, দাঁড়িয়ে থাকবেন, তারপর ফিরিয়ে আনবেন। রাস্তায় থেমে জলমহল দেখে নেব। ভদ্রলোক ঘাড়টাড় নাড়লেন না, খালি স্টার্ট দিলেন। লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">ভদ্রলোক ভালো বেশ। আলাপী। অনেক কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলেন। জলমহলের পাশ দিয়ে গেলাম। এখন থামব না, ফেরার সময় নামব। লেকের মধ্যে প্রাসাদ, ব্যাকগ্রাউন্ডে ধূসর পাহাড়, আমি তো আহাউহু করতে লেগেছি। তাতে ভদ্রলোক বললেন, এ সব কী দেখার আছে? মনে পড়ে গেল বুম লা যাওয়ার পথের আর্মি ভাইসাবের হাই তুলে মন্তব্য, কেয়া দেখনে চলে আতে হো আপলোগ। বললাম, আপনি রোজ দেখেন তাই মর্ম বুঝছেন না। তারপর যেই না বলেছি, কী সুন্দর টলটলে নীল জল। ভদ্রলোক বললেন, জয়পুরের যত নোংরা জল সব এখানে এসে পড়ে। জল কম কাচড়া বেশি। আমি কান চাপা দিয়ে বললাম, প্লিজ স্টপ।</div><div class="p1"><br /></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiNNMCyazaztw_3GQDCl2sqPZSXaDWRlyfwuX0TLPYzTFlYlrVx9rHPL8GmmPuKfSHDUIuezUP16CpbwaY6frRNRbHnn17QA_0wgm0kZojqIziLoBK4vn6yMH6PqMcIfi0C6zAqOTpOUXkkfK-6VFP4HS0qQw9YI1yTCMP4IGlSWt2T8DEYbXqsoaaLgZse/s3715/AMER6.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="1754" data-original-width="3715" height="302" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiNNMCyazaztw_3GQDCl2sqPZSXaDWRlyfwuX0TLPYzTFlYlrVx9rHPL8GmmPuKfSHDUIuezUP16CpbwaY6frRNRbHnn17QA_0wgm0kZojqIziLoBK4vn6yMH6PqMcIfi0C6zAqOTpOUXkkfK-6VFP4HS0qQw9YI1yTCMP4IGlSWt2T8DEYbXqsoaaLgZse/w640-h302/AMER6.jpg" width="640" /></a></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><br /></div>
<div class="p1">রাজর্ষি যেমন বললেন, এ দৃশ্য পুরোনো হওয়ার নয়। অবশেষে রাস্তা চড়াই উঠতে শুরু করল আর অন্তে দৃশ্যমান হতে শুরু করল বিরাট প্রাসাদ। ভাইসাব বললেন, শুনুন এরা গাড়ি নেওয়ার জন্য চাপাচাপি করবে, রাজি হবেন না। দুশোরও কম সিঁড়ি, বাচ্চা বাচ্চা পয়দল চঢ় যাতা হ্যায়। গেটের কাছে এগোতে দুচারজনের দল এসে এসে আমাদের রিকশা আটকাতে লাগল। গাড়ি লাগবে? গাইড লাগবে? প্রত্যেকবার ভাইসাব গাড়ি স্লো করছিলেন, আমরা সবিনয়ে না করছিলাম, ভাইসাব আবার স্পিড তুলছিলেন। ওঁর মাথার পেছন দিক থেকেও অ্যাপ্রুভাল বিচ্ছুরিত হচ্ছিল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সিঁড়ি সত্যিই কম। বেশি হলেও হাঁপানো যেত না, যে রকম "বাচ্চা বাচ্চা" ইত্যাদি বলা হয়েছে। ওপরে পৌঁছতে না পৌঁছতে এক গাইড ভদ্রলোক এসে ধরলেন। এসে মারাত্মক সিজনড সেলসপার্সনের মতো বললেন, যদিও সরকারি গাইডের রেট চারশো, আমি আপনাদের তিনশোতে ঘুরিয়ে দেব। ঘাড় পাতলাম। </div><div class="p1"><br /></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgOdmnC-HwRKvzdk0Ty3pQTrxrLa3hi6b4tO0Z5q2ZNjlTS_xSf6GOE7P-txsVhwjanEsCh6rXWrSxGfZQSP8g6A1OCBITAT14M7HFqdmTJbbF1sHP5xY3WpjEy0uwyF_l3XAB8Cr5lMo19mnqH8CI0IcO3vYF2bWZLGVUpJOAkNY-e1ZUpGO9Kdx8Ei5Gm/s3808/AMER2.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="2416" data-original-width="3808" height="406" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgOdmnC-HwRKvzdk0Ty3pQTrxrLa3hi6b4tO0Z5q2ZNjlTS_xSf6GOE7P-txsVhwjanEsCh6rXWrSxGfZQSP8g6A1OCBITAT14M7HFqdmTJbbF1sHP5xY3WpjEy0uwyF_l3XAB8Cr5lMo19mnqH8CI0IcO3vYF2bWZLGVUpJOAkNY-e1ZUpGO9Kdx8Ei5Gm/w640-h406/AMER2.jpg" width="640" /></a></div><div class="p1"><br /></div>
<div class="p1">আমের প্যালেস সত্যি সুন্দর। চাঁদ গেট, সূর্য গেট, গণেশ গেট। একটা কালীবাড়ি মতোও আছে ছোটমতো। রাজস্থানের প্যালেসে প্যালেসে দুর্গে দুর্গে এই আরেকটা ট্র্যাডিশন, বাঙালি কালীমন্দির।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEguGvJXkvdTD8wfV9u72DANay49bmjYm4FubtgdWErAH7f0FLCI41wmUo3u5_k5xyGjdtcnhmw3Ke_nP4-hxHlLAn3fpnDMPBWUSgW4i44oG_xmTkwyxBZ6_8BJsy0bLzFHOKqbfTuu8ighUeMnHQc24o8C7BzZZPHChRJdkI3vq0y65QQl5w9ilEn1t_5Y/s3899/AMER8.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="2924" data-original-width="3899" height="480" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEguGvJXkvdTD8wfV9u72DANay49bmjYm4FubtgdWErAH7f0FLCI41wmUo3u5_k5xyGjdtcnhmw3Ke_nP4-hxHlLAn3fpnDMPBWUSgW4i44oG_xmTkwyxBZ6_8BJsy0bLzFHOKqbfTuu8ighUeMnHQc24o8C7BzZZPHChRJdkI3vq0y65QQl5w9ilEn1t_5Y/w640-h480/AMER8.jpg" width="640" /></a></div><div class="p2"><br /></div>
<div class="p1">এই সূর্য না চাঁদ গেট দিয়েই নাকি হাতি চড়ে সিনেমার বাজিরাও মাস্তানি ঢুকেছিলেন। গাইড ভদ্রলোকের নাম রাম সিং। রাম সিংজী বললেন, আপনারা দুজন এই সূর্য গেটের সামনে দাঁড়ান, ছবি তুলে দিই। আমরা বললাম, না না দরকার নেই, পরে হবে'খন। জলেব চাতালের দিকে দেখিয়ে রামসিংজী বললেন এখানে কী হত বলুন দেখি? মনে মনে বলছি, জিলিপি ভাজা, রামসিংজী আমার নীরবতায় খুশি হয়ে বললেন, প্যারেড। দুটো বড় ঝরোখামতো। রাজারানি বসে বসে দেখতেন। অর্চিষ্মান বলল, বড় ঝরোখা নিশ্চয় পাটরানির জন্য। বাকি রানিরা কোথায় বসে দেখতেন? রাম সিং আঙুল তুলে দেখালেন, খুদি খুদি জানালার সারি। রাজা যুদ্ধ জয় করে ফিরলে এই সব ঝরোখা থেকে পুষ্পবৃষ্টি হত। অর্চিষ্মান ঝুঁকে পড়ে আমার কানে কানে বলল, হেরে এলে কী ছুঁড়ত? তখন ক্লিয়ার হল, জানালার সাইজ অত ছোট কেন। যাতে জুতো ছুঁড়তে না পারে সে জন্যই ওই ব্যবস্থা।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhvyh7e0JafhPk7yrDcfAhfu2O-M6KgNOWMzW1H7p7bavmM2b1SbedVN9HCpOgqYjyv3QRImpFlZwxMnLw1HTtxr122LcY7t3XH1iP66ZcjlZjX4iuHOBm1hoN1YTpT2INEtQN3smic2KlzZyNz0l_oMQkpFNaGvr8ruYEJjSD7s_mgMqc7XHX50IhTeFRp/s3264/AMER11.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="2151" data-original-width="3264" height="422" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhvyh7e0JafhPk7yrDcfAhfu2O-M6KgNOWMzW1H7p7bavmM2b1SbedVN9HCpOgqYjyv3QRImpFlZwxMnLw1HTtxr122LcY7t3XH1iP66ZcjlZjX4iuHOBm1hoN1YTpT2INEtQN3smic2KlzZyNz0l_oMQkpFNaGvr8ruYEJjSD7s_mgMqc7XHX50IhTeFRp/w640-h422/AMER11.jpg" width="640" /></a></div><div class="p1"><br /></div>রাজস্থানের রাজবাড়ির আরেকটা কমন ব্যাপার, বাংলাদেশের কালীমন্দির। যশোর থেকে আসা শীলাদেবীর মন্দিরের সোনারুপোখচিত বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রামসিংজী বললেন, আপনারা কোথাকার বলুন তো? বললাম। আদতে পশ্চিমবঙ্গের কিন্তু আপাতত দিল্লির। রামসিংজী বললেন, নিশ্চয় অনেকদিন বাড়িছাড়া? ঘাড় নাড়লাম। হাওয়ায় হাঁটু চাপড়ে রামসিংজী বললেন, তাই বলুন। ম্যাডামজীকে দেখে কলকাতার লোক বলে বিশ্বাসই হয় না। আমি মুচকি হাসলাম। এ কমপ্লিমেন্ট বহু জায়গায় পেয়েছি। অর্চিষ্মানও মুচকি হাসল। কমপ্লিমেন্ট নাও হতে পারে। অর্চিষ্মান হিংসুটেপনা করেছে নিশ্চিত, ওকে যেহেতু কলকাতার বলে বিশ্বাস করতে অসুবিধে হয়নি রামসিংজীর, কিন্তু ওর কথাটাও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। কমপ্লিমেন্ট জিনিসটা কমপ্লিকেটেড। সেদিন যেমন প্রসেনজিৎ রেগেমেগে এসে বলল, সব ব্যাটা বাঙাল, এখানে ফ্রিতে জমি পেয়ে বাড়ি বানিয়ে এখন খুব টাকার গরম দেখাচ্ছে। মিনমিন করে বললাম, না না, ফ্রিতে মনে হয় না, সস্তায় পেয়েছে। তাছাড়া জমি যখন পেয়েছিল তখন সি আর পার্ক সি আর পার্কের মতো দেখতে ছিল না। তাতে প্রসেনজিৎ অল্প, বেশি না, নরম হল। সেটাও ঠিক। পরিশ্রম করেছে। তারপরেই চিড়বিড়িয়ে বলল, আরে ওরা বাঙাল। ওরা পরিশ্রম করতে পারবে না তো কি আমিতুমি পারব? আমার কুঁড়েমোকে এমন সপাটে আইডেন্টিফাই করে ফেলেছে দেখে দুঃখ হল, তার থেকেও বেশি হল অপরাধবোধ। আমার চোদ্দপুরুষ কোমরে হাত দিয়ে, ভুরু কুঁচকে ঢাকার রাজপথ, বরিশালের মাঠ, শেয়ালদা স্টেশন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে পায়ে তাল দিচ্ছেন। একে তো কুলাঙ্গার কুঁড়ে, এর পর তাঁদের আত্মীয়তা অস্বীকার করলে আর রক্ষা নেই। কুঁকড়ে গিয়ে বললাম, ইয়ে, আমিও বাঙাল। ফুলটু বাঙাল। প্রসেনজিতের হাতের ঝাঁটা থেমে গেল, মুখচোখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল, ঠোঁট ঝুলে, চোখ ফেটে বেরোল। তোমাকে দেখে বোঝা যায় না কিন্তু। আমি আর কথা বাড়ালাম না। অর্চিষ্মান শুনে পেট চেপে গড়াগড়ি খেয়ে হাসল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjE9dt5X7AL5f-XPBErWRVPg2kiwkNNgjCynofC5cGj_roeOZS_SNJGymbH683Tw2kRfJPnl1HDbGgxwrIWzTn_j4OomDhmbhpxsD0glH9W4jMBIijBMbAqlAR2YJf1goxX9ergbzRhnvd6W0y9VXFW3_LVg9xBIrQlzK6NwpcFRYuDXtr4X9r5gmAEuII8/s4000/AMER9.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="2374" data-original-width="4000" height="380" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjE9dt5X7AL5f-XPBErWRVPg2kiwkNNgjCynofC5cGj_roeOZS_SNJGymbH683Tw2kRfJPnl1HDbGgxwrIWzTn_j4OomDhmbhpxsD0glH9W4jMBIijBMbAqlAR2YJf1goxX9ergbzRhnvd6W0y9VXFW3_LVg9xBIrQlzK6NwpcFRYuDXtr4X9r5gmAEuII8/w640-h380/AMER9.jpg" width="640" /></a></div><div class="p2"><br /></div>
<div class="p1">রামসিংজীকেও আমরা জিজ্ঞাসা করিনি (আমি ভদ্রতা এবং অর্চিষ্মান ভয়বশতঃ) যে কলকাতার লোক কেমন হয়। উনি নিজেই নমুনা দিতে নামলেন। বাঙালি আর কলকাতার এ দুটো লোকে ইন্টারচেঞ্জেবলি ব্যবহার করে। তিনিও তাই করলেন। দুজন বাঙালি ভ্রমণার্থীর বর্ণনা দিলেন। প্রথমজন নাকি ল্যাপটপ এক হাতে নিয়ে ঘুরছিলেন। রামসিংজী যে তথ্যই দিচ্ছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট খুলে তথ্যের সত্যতা যাচাই করে নিচ্ছিলেন। মনে মনে শীলাদেবীর থানে মাথা ঠুকলাম, এঁর সঙ্গে যেন জীবনে পালা না পড়ে। দ্বিতীয়জন আবার আরেক। তিনি নাকি জলেব চকের গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে রামসিংজীর পাওনা চুকিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, নিন এই আমি বসলাম, আপনি যা যা দেখার সব মুখে বর্ণনা করে দিন, এই রোদে হাঁটাহুটির কোনও দরকার নেই। পৃথিবীতে সোলমেট যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে আমার সেটা ইনিই। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjLwj-GY_HLrvjKUr7bgks4Aj29vYN2bfDsuaQEVFljCct1HvxKDAzGNXL4YzvdaYjZ6D6aKsOW-P769cJTuW7zU_BI_AfEIAwdCD0mseANggEg7DIqEAehwA8Zd2W7itDVtKS0-HbHjsF6FTtk-OPuX0QLUw9r5-N1f1IothqO8E-rZ17qelnvODxJwSjZ/s3946/AMER5.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="2959" data-original-width="3946" height="480" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjLwj-GY_HLrvjKUr7bgks4Aj29vYN2bfDsuaQEVFljCct1HvxKDAzGNXL4YzvdaYjZ6D6aKsOW-P769cJTuW7zU_BI_AfEIAwdCD0mseANggEg7DIqEAehwA8Zd2W7itDVtKS0-HbHjsF6FTtk-OPuX0QLUw9r5-N1f1IothqO8E-rZ17qelnvODxJwSjZ/w640-h480/AMER5.jpg" width="640" /></a></div><div class="p2"><br /></div>
<div class="p1">পনেরোশো বিরানব্বইয়ে মান সিং আমের প্যালেস করেছিলেন, এক নম্বর জয় সিং সেটা বাড়ালেনচাড়ালেন, পরের দেড়শো বছর ধরে রাজারা কনট্রিবিউশন রাখলেন যতদিন না সওয়াই জয় সিং টু সতেরশো সাতাশে বেস অফ অপারেশনস জয়পুর শিফট করলেন। চুনাপাথর আর মার্বেল দিয়ে বানানো রাজপুত আর মোগলাই স্টাইল মিক্স করা ঝলমলে প্রাসাদ। গণেশ গেটের সামনে রামসিংজী আরেকবার বললেন, দিন দুজনের ছবি তুলে দিই। আমরা বললাম, ধুর ছাড়ুন তো। অর্চিষ্মানের কোমর আর আমার গলা পর্যন্ত পাঁচিলের ওপর দিয়ে ডিঙি মেরে নিচে যোধাবাঈয়ের গ্রাম দেখলাম। ও গ্রামে ভীল আর মীনাদের বাস ছিল একসময়। সঙ্গে সঙ্গে সিনেমার কমেন্ট্রি তো চলছেই। কোন দরজা দিয়ে হাতি চড়ে বাজিরাও মস্তানি ঢুকেছিলেন সে তো শোনা হলই, প্যালেসে ওঠার ঢালু পথে হাতি চড়ে মেরে 'হিউড়া মে নাচে মোর'-এর শুটিং হয়েছিল শুনে আমার সবথেকে বেশি ওয়ার্ম ফাজি ফিলিং হল। ক্লাস কেটে মিত্রায় ফার্স্ট না সেকেন্ড রো-তে বসে হাম সাথ সাথ হ্যায় দেখেছিলাম। মনে পড়লেই গায়ে কাঁটা। অর্চিষ্মানের বেশি বেশি। বলে এত সিনেমার শুটিং নিয়ে বলার কী আছে? আমি বললাম, তোমারই বা এত নাকউঁচু ভাব করার কী আছে? ভারতবর্ষে জন্মে, ভারতবর্ষের সরকারি পয়সায় খেয়েদেয়ে ডিগ্রি বাগিয়ে বলিউডকে এমন হেলাছেদ্দা করার স্পর্ধা হয় কী করে? একটা জিনিস দেখে আমি কিন্তু ইমপ্রেসড। আমার ধারণা ছিল একটা ঐতিহাসিক জায়গার ওপর লোকে আরও ঐতিহাসিকত্ব আরোপ করতে ব্যস্ত থাকে। যেমন জিনিয়াসের ওপর আরও জিনিয়াসত্ব। শুধু বিধবাবিবাহ রদ করলে যথেষ্ট হবে না আবার ঝড়ের রাতে মায়ের ডাকে দামোদরও সাঁতরে পার করতে হবে। শুধু বক্তৃতা দিয়ে বিশ্বজয় করলে হবে না আবার একসেকেন্ডে গোটা পাতাও পড়ে ফেলতে হবে। দুটো বিরাট কড়াই দেখিয়ে রামসিংজী বললেন, ওই দেখুন। সত্যি কড়াই বটে। সবে বলতে যাচ্ছি, এটা কোন সওয়াইয়ের হালওয়াইয়ের, রামসিংজী বললেন, আরে ধুর ধুর, এগুলো অরিজিন্যাল না, যোধা আকবরের শুটিংপার্টি এনেছিল, ফেলে রেখে চলে গেছে। রামসিংজীর সততায় আমি মুগ্ধ।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjYckJ777G26KYQcMSFv2ITeVVODglxlm1fUuWmXcuMW2-V_Td8wzM2IXi9QMjav3o20FZYm3BQlyLZrwEWwODedlFao0bGwhTY9LwiENTKrMkjHIBU22ZJHOJb81CGs7HcUtvLKqpLUvMipVg5uL-lIVz947WgvoiZ5kmp8NpJhEb0aoWwJdcwjUT8wLnC/s3172/AMER12.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="3172" data-original-width="2274" height="320" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjYckJ777G26KYQcMSFv2ITeVVODglxlm1fUuWmXcuMW2-V_Td8wzM2IXi9QMjav3o20FZYm3BQlyLZrwEWwODedlFao0bGwhTY9LwiENTKrMkjHIBU22ZJHOJb81CGs7HcUtvLKqpLUvMipVg5uL-lIVz947WgvoiZ5kmp8NpJhEb0aoWwJdcwjUT8wLnC/s320/AMER12.jpg" width="229" /></a></div><div class="p2"><br /></div>
<div class="p1">চমৎকার সব স্থাপত্য দেখতে দেখতে চললাম, ধপধপে মার্বেলের দেওয়ানি আম, দেওয়ানি আম। শিশমহলের আয়নাগাঁথা দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে রামসিংজী বললেন, এইবার অন্ততঃ পাশাপাশি দাঁড়ান, এমন কায়দা করে ছবি তুলে দেব দুটো আয়না থেকে আপনারা দুজন হাসিমুখে তাকিয়ে থাকবেন। আমরা বললাম, খেপেছেন? </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">রানিদের মহল দেখা হল। বাথরুম, স্নানের জায়গা, স্নানের জল কোথায় গরম হত সব। তারপর একটা জানালা দিয়ে নিচের লেক আর লেকের ভেতর নয়নাভিরাম বাগান দেখলাম। অর্চিষ্মান উঁচু জানালা বা খাদের ধারে দাঁড়িয়ে দৃশ্য দেখার ঘোর বিরোধী। ওর ভার্টিগো অ্যাকটিভেটেড হয়ে যায়। আমার বাঙালে ব্যাপার, আমি জানালার একেবারে ধারে চলে গিয়ে, দৃশ্য একইঞ্চি বদলাবে না জেনেও জানালার বাইরে কার্নিশ থাকলে এক পা বার করে সেটায় রাখি। অর্চিষ্মান আমার কামিজ টেনে ধরে বলতে থাকে, কুন্তলা বাড়াবাড়ি কোর না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhAreVmWl3XA1DsAcKqRe8-3Kk4X2XQzqIXekJc4lgwczbxdqKaMUSzrbeahyfZvrH-0qruXODLjPinP7FRRW0dCDxWTbQxbPCPdH4OK4nkZpp7xMbLoGdxw4XOAbt5O-a2QL0kjzvfmUXi3C3CC6VPMUS3fEGkJOkTFJjUmhEMDsGdpP0FH3MZ2rCTTKIh/s3577/AMER10.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="2637" data-original-width="3577" height="472" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhAreVmWl3XA1DsAcKqRe8-3Kk4X2XQzqIXekJc4lgwczbxdqKaMUSzrbeahyfZvrH-0qruXODLjPinP7FRRW0dCDxWTbQxbPCPdH4OK4nkZpp7xMbLoGdxw4XOAbt5O-a2QL0kjzvfmUXi3C3CC6VPMUS3fEGkJOkTFJjUmhEMDsGdpP0FH3MZ2rCTTKIh/w640-h472/AMER10.jpg" width="640" /></a></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><br /></div></div>
<div class="p1">প্রেম প্রেম ভাব চারদিকে। তিনজন বিদেশী ঘোরাঘুরি করছিলেন আমাদের সঙ্গেই। একটু পরে দেখি শিশমহলের সামনে দুজনে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তৃতীয় সঙ্গী ছবি তুলে দিচ্ছেন। ওই রকম পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন ওঁরা ওই রোদে, অন্তত আড়াই মিনিট, যতক্ষণ ক্যামেরাপার্সন দাঁড়িয়ে, বসে, হেলে, শুয়ে পড়ে ছবি তুললেন। প্রতিভা।</div><div class="p1"> <div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjwcOZKuS7y0jl1MbHX9hgB91DWuLJ0Tincz1mCVAxX5qNkzmU9nbzIyV7Or4YdneV1i7GxZgDLzwFQs-R1GIyzguRidCzfPMgGv7tZyQ1vCbbEs0J0Qf793wyO2S3H2-oQP5WADZ5D5prOqznCSelFHj32LQHV-02lu9PwhCl97LkvPcansn-hJq1lUgUF/s3836/AMER13.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="3000" data-original-width="3836" height="500" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjwcOZKuS7y0jl1MbHX9hgB91DWuLJ0Tincz1mCVAxX5qNkzmU9nbzIyV7Or4YdneV1i7GxZgDLzwFQs-R1GIyzguRidCzfPMgGv7tZyQ1vCbbEs0J0Qf793wyO2S3H2-oQP5WADZ5D5prOqznCSelFHj32LQHV-02lu9PwhCl97LkvPcansn-hJq1lUgUF/w640-h500/AMER13.jpg" width="640" /></a></div></div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সুখমহলের ঢালু দেওয়াল জল পড়ে নিচে জমা হত। দু’পাশ থেকে হাওয়া দিয়ে সেই জলে ছোট ছোট ঢেউ তোলা হত। বারান্দা থেকে ঝুলত ঝুলা, সেখানে বসে রানিরা দুলতেন, ঢেউয়ের হাওয়া তাঁদের গায়ে লাগত। রানিদের খুব হিংসে করলাম। অর্চিষ্মানকে বললাম, এই কনট্র্যাপশনটা সি আর পার্কের বাড়িতে করা যায় না? পরের খোপে একটা হুইল চেয়ার, খুব ঝালরটালর দেওয়া। রানির হুইলচেয়ার। আমি বললাম, ঠিকই, এই কেল্লা পায়ে হেঁটে কভার করা বয়স্ক রানির পক্ষে সম্ভব না। রামসিংজী বললেন, বয়স্ক কে বলল? অল্পবয়সী রানিরাও হুইলচেয়ারেই ঘুরতেন। ওঁদের শাড়ি হত সব পনেরো বিশ কেজির, সে পরে হেঁটে হেঁটে গোটা দুর্গ কভার করা অসম্ভব। তারপর একটা বারান্দামতো জায়গায় বেরিয়ে যখন রামসিংজী বললেন, ওখানে বারো জন রানির মিটিং হত, তখন রানিদের প্রতি আমার সব হিংসে ঘুচে গেল। ভাবুন। এগারোজন সতীন, কুড়ি কেজির শাড়ি পরে হুইল চেয়ারে চড়ে ঘোরাঘুরি, খুদি খুদি জানালা দিয়ে সুপুরুষ জওয়ানদের কুচকাওয়াজ দেখে দীর্ঘশ্বাস চেপে বেঢপ রাজামশাইকে ফুল ছুঁড়ে আপ্যায়ন কাটাকুটি করতে জলের ঢেউ খেতে খেতে দোলনায় দোলা যথেষ্ট নয়। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সে কালের প্যালেসে যেমন হত, অ্যাটাক হলে প্যালেসের সুড়ঙ্গ দিয়ে ঢুকে নিকটবর্তী আমের দুর্গে ঢুকে পড়া যেত। সে রকম দু’চারটে সুড়ঙ্গ দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে অবশেষে একটা বারান্দামতো জায়গায় এসে পৌঁছলাম। অর্চিষ্মানের মধ্যে একটা অভিযাত্রী ব্যাপার আছে। মিউজিয়ামের যে ঘরে কেউ ঢুকছে না সেই সব ঘরে ও ঢুকবেই। আমার প্রায় বুক পর্যন্ত লম্বা একটা সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অর্চিষ্মান বলল, এই সিঁড়িগুলো দিয়ে ওপরে যাওয়া যায়? রামসিংজী বললেন, যাওয়া তো যায়ই, কিন্তু গিয়ে লাভ নেই, কিছু নেই দেখার। অর্চিষ্মান বীরবিক্রমে উঠে গেল। আমি সবথেকে নিচের সিঁড়িটায় হাঁচোড়পাচোড় করে উঠে বসে ড্যাং ড্যাং পা দোলাচ্ছি, অনতিদূরে আরেকটি সিঁড়িতে রাম সিংজী তশরিফ রেখেছেন। কিছুক্ষণ পর কেমন একটা অস্বস্তি হতে মুখ তুলে দেখি রামসিংজী কোনও রাখঢাক না করেই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখাচোখি হতেই বললেন, ম্যাডাম, স্যার আপকে কেয়া লাগতে হ্যায়?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সবাই বলবে আমি গুল দিচ্ছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন দিচ্ছি না। অন গড ফাদার মাদার। চুল যত সাদা হচ্ছে, সিঁথি যত ফাঁকা হচ্ছে, চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে মানুষের প্রতি অবিশ্বাস, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা যত ফুটে ফুটে বেরোচ্ছে, তত লোকে আমার আর অর্চিষ্মানের দিকে কেমন কেমন তাকাচ্ছে। দিল্লিতে কেউ তাকায় না কারণ এক, লোকের টাইম নেই, দুই, দিল্লিতে আমরা আড়াইখানা জায়গায় ঘোরাঘুরি করছি গত দেড় দশক ধরে, দু’নম্বর মার্কেট, জি কে টু আর মাঝেসাঝে সি পি, সবাই আমাদের দেখে ফেলেছে। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এ প্রশ্ন হ্যান্ডল করে অভ্যস্ত আমি। বললাম, হাজব্যান্ড। রামসিংজীর মুখের একটি পেশী নড়ল না। ওখানে চেপে যেতে পারতাম। গেলাম না। হাতে সময় ছিল, তাছাড়া রামসিংজী কৌতূহলী, কুচুটে না। বললাম, আমার বাড়িতে চুল অল্প বয়সে পাকে। রামসিংজী হাঁটু চাপড়ালেন। তাই বলুন। ম্যায় কবসে আপকা হাথপ্যায়র নোটিস কর রহা হুঁ অর কনফিউজড হো রহা হুঁ। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">হাঁটু দেখে পোয়্যারো রাজকন্যের ফেকত্ব ধরে ফেলেছিলেন, ইনি হাতপা দেখে আমার বয়স ধরার চেষ্টা করেছেন। গাইডের কাজে বোর হয়ে গেলে গোয়েন্দাগিরিতে নামতে পারেন। রামসিংজী ঝুঁকে পড়লেন আমার দিকে। শুনিয়ে ম্যাডামজী, ম্যায় সমঝ লিয়া থা কে আপ দোনো ফ্রেন্ড হো। শুধু চোখমুখের ভাবভঙ্গি দিয়ে কেউ ফ্রেন্ড-এর দুপাশে এমন অব্যর্থ কোটেশন মার্ক বসিয়ে দিতে পারে ভাবা যায় না। রামসিংজী বললেন, কেন বলছি শুনুন। আমি এর মধ্যে অন্ততঃ তিনবার আপনাদের ছবি তুলে দিতে চাইলাম, আপনারা রাজি হলেন না। তখন আমি ধরে নিলাম যে আপনারা ফ্রেন্ড (আবার অমোঘ কোট আনকোট), একসাথ ঘুমনে আয়ে হো লেকিন ফোটো নেহি লেনা চাহতে হো।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1"><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEifBisDg_ygjMiePsoaV7_wSC5GWWM9pYO7Uxme02pkzzOqmeHbS8DiVmlfH2BK0RXM2iz5dqd7ah0LiWQDXgWtgDRnaE9e9YS5ybtF0YvZmnGG474g74MxUjq_s8ZnZRtcTfe7Yh9_ekr1R5WehrSf6UDx2ACvAXRaRO0wpyKG2cumcgdr4l0CZJg8WBU3/s3766/AMER3.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="2020" data-original-width="3766" height="344" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEifBisDg_ygjMiePsoaV7_wSC5GWWM9pYO7Uxme02pkzzOqmeHbS8DiVmlfH2BK0RXM2iz5dqd7ah0LiWQDXgWtgDRnaE9e9YS5ybtF0YvZmnGG474g74MxUjq_s8ZnZRtcTfe7Yh9_ekr1R5WehrSf6UDx2ACvAXRaRO0wpyKG2cumcgdr4l0CZJg8WBU3/w640-h344/AMER3.jpg" width="640" /></a></div><div class="p1"><br /></div>অনেক কষ্টে বললাম, আমাদের দশবছরের ওপর বিয়ে হয়েছে, বিশ্বশুদ্ধু লোক জানে আমরা বরবউ। রামসিংজী উদার হাত তুলে কান ছুঁলেন।, বস বস্ ম্যাডামজী, অর সাফাই দেনে কি জরুরত নহি হ্যায়। মুঝে য়কীন আ গয়া। অর্চিষ্মান সিঁড়ি বেয়ে ব্যাজার মুখে নেমে এল। সত্যিই কিছু দেখার নেই। আমার মুখ দেখে কিছু বুঝল কি না জানি না, কিছুই বলল না যখন ধরে নেওয়া যায় বোঝেনি বা বুঝলেও খোঁচানো দরকারি মনে করেনি। আমিও চুপচাপ রইলাম। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আর বেশি বাকি ছিল না প্যালেসের। রামসিংজীর তিনশোটাকার প্যাকেজের মধ্যে গাড়ি চড়ে নিচ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়াও ছিল, সিঁড়ি বাইতে হল না। একটা রিকশা চড়ে নেমে এলাম। লাল কাপড় পেঁচানো ঘড়ায় করে মশলা ছাস বিক্রি হচ্ছিল। তিনটে নেওয়া হল। মচৎকার খেতে। অর্ধেক ক্লান্তি হাওয়া। খাওয়া শেষ হলে অর্চিষ্মানের কী মাথায় এল, ফোনটা রামসিংজীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমাদের একটা ছবি তুলে দেবেন?</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">কানছোঁয়া হাসি হেসে রামসিংজী বললেন, কিউ নেহি? আপ ম্যাডামকে থোড়া নজদিক আকে খাড়া হো যাইয়ে। বলে সোৎসাহে চারপাঁচটা ছবি তুলে দিলেন।</div><div class="p1"><br /></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjI8fXuCw_OD3DoVGG9-GlYTDx0o1DAlbxBZm_fpGQ2MsG8s37maSz6o_4h6IlRzBUcPXEQ5ZtEou6N-EaI5iwdHhrcz6t3rXhupDkqmU71rfNH0SIz0AB76bXSQjkhBqQIPd96iqeXC5rjQiIStNd5IMbDHhPjeGTJo6VgKHYRwroJebENDyifHKUCenmh/s4000/AMER1.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="2402" data-original-width="4000" height="384" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjI8fXuCw_OD3DoVGG9-GlYTDx0o1DAlbxBZm_fpGQ2MsG8s37maSz6o_4h6IlRzBUcPXEQ5ZtEou6N-EaI5iwdHhrcz6t3rXhupDkqmU71rfNH0SIz0AB76bXSQjkhBqQIPd96iqeXC5rjQiIStNd5IMbDHhPjeGTJo6VgKHYRwroJebENDyifHKUCenmh/w640-h384/AMER1.jpg" width="640" /></a></div><br /><div class="p1"><br /></div>
<div class="p1"></div></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com12tag:blogger.com,1999:blog-7002350056619997895.post-19438124143535003212023-08-26T19:17:00.008+05:302023-08-26T21:02:59.214+05:30জয়পুর ৩ঃ সিটি প্যালেস<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"><div class="p2"><br /></div><br /><div class="p1"><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjgYDc8IJcylfDQAPgGnrWZXi2RAMppUTBISerJSOR4L3Y5QuYGLKvFXeHdN4Mf-dQxJ7nU9NHk_v4QxZt7Gg8iT-15phG8slAr3tiBg3xb-Pu9MNWFPKaSuxsfNY4BUzmvaQMnZIbouemFTzVVpwrGRrygI3r7-q3fjdNt13d2PauQ1iS-st2blYP7_3H9/s3900/citypalace.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="2471" data-original-width="3900" height="406" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjgYDc8IJcylfDQAPgGnrWZXi2RAMppUTBISerJSOR4L3Y5QuYGLKvFXeHdN4Mf-dQxJ7nU9NHk_v4QxZt7Gg8iT-15phG8slAr3tiBg3xb-Pu9MNWFPKaSuxsfNY4BUzmvaQMnZIbouemFTzVVpwrGRrygI3r7-q3fjdNt13d2PauQ1iS-st2blYP7_3H9/w640-h406/citypalace.jpg" width="640" /></a></div><br />সিটি প্যালেসের এন্ট্রি ফি মাথাপিছু পাঁচশো টাকা। মিউজিয়াম আর লাইট অ্যান্ড শো মিলিয়ে। টিকিট কেনার পর থেকেই থানে থানে সাদা জামা, লম্বা ল্যাজওয়ালা লাল পাগড়ি পরা অপেক্ষারত কর্মচারীরা ন্যাভিগেশনে সাহায্য করবেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">মিউজিয়ামটিয়াম, আমার মতো লোকের কাছে অপচয়। কত দেখার জিনিস, কত মূল্যবান জিনিস, নব্বই শতাংশই স্মৃতি থেকে বেরিয়ে যায়। বা তেমন করে দেখাই হয় না। এক সপ্তাহও হয়নি (না হয়েছে, আট দিন) সেভাবে কিছু মনে পড়ছে না। খালি মনে পড়ছে প্রাসাদের বিরাট চাতাল পেরিয়ে প্রথম যে ঘরটায় গেলাম তার সিলিং থেকে ঝুলছিল বিরাট ঝাড়লণ্ঠন। চারদিকের দেওয়াল ঘিরে প্রমুখ সোয়াই সিংদের ছবি। আমিআপনি যদি একখান একখান মানুষ হই তাহলে এঁরা সোয়াখান। সেই থেকে সোয়াই। সিংটাও পয়দায়েশি না। আকবরের দেওয়া। অধিকাংশই বাঁ দিকে মুখ ফিরিয়ে, কেউ সোজা দাঁড়িয়ে, কেউ চেয়ারে বসে। নিচে তাঁদের কর্মকাণ্ডের বিবরণ। সোয়াখানই বটে। শহর গড়েছেন, লাইব্রেরি খুলেছেন, কত বই কত ভাষা থেকে কত ভাষায় অনুবাদ করেছেন, গলফ কোর্স বানিয়েছেন, আর পোলো তো খেলেইছেন। পোলো হল গিয়ে জয়পুরের রাজাদের একটা লক্ষক। পাগড়িধারী ভাইসাবের তর্জনী অনুসরণ করে চাতাল পেরিয়ে ঢুকলাম আরেকটা প্রাসাদে। প্রথম প্রদর্শনী অস্ত্রশস্ত্রের। 'গুণ্ডা' দেখতে বসে কুড়ি মিনিটের মধ্যে কেঁদে বেরিয়ে এসেছি, ফেসবুকে আজকাল আর বেনামেও ঢুকতে পারি না বমি পায় বলে, অস্ত্রশস্ত্রে আমার উৎসাহ নেগেটিভ। এসব বললে অর্চিষ্মান, বাড়াবাড়ি কোর না তো কুন্তলা, বলে কনুই ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে দেবে কাচের শোকেসের সামনে যার ভেতরে সূর্যের রশ্মির প্যাটার্নে ছোরা সাজানো। পরের শোকেসে ভ্যারাইটি বন্দুক, গুলি বেরোনোর নলের সঙ্গে খোঁচানোর ব্যবস্থা ফাউ। মাথা খাটিয়ে বানানো যন্ত্রপাতি সব, কোনটা চোখে ঢুকলে কেমন লাগবে, কোনটা কত এফিশিয়েন্সিতে মাংস থেঁতলে দিতে পারবে। ছোরাছুরির রমরমা খুবই বেশি। তলোয়ারও আছে, কিন্তু সেও তো বড় সাইজের ছোরাই হল। শিরস্ত্রাণ, ঢাল এই সবও আছে। একটা খুব জমকালো ঢালের ওপর গোলাপ ফুলের আলপনা দেখে অর্চিষ্মান বলল, ঢালফালে এই সব আঁকাজোকার মানে কী? বললাম, এগুলো নিশ্চয় ওপরমহলের লোকজনদের ঢাল। সবার ঢালে এত ছবি আঁকার রিসোর্স নিশ্চয় থাকত না। অর্চিষ্মান বলল, হুম্ম্, বেসিক্যালি যাদের সবথেকে কম যুদ্ধ করতে হত তাদের ঢাল, বুঝেছি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">পরের প্রদর্শনী কাপড়চোপড়ের। সব মিউজিয়ামেই থাকে। এতেও আমার বিশেষ আগ্রহ নেই, তবে ছোরাছুরির থেকে বেশি আছে। তবু যে কোনও কারণেই হোক সিটি প্যালেসের এই সংগ্রহশালাটি আমাকে মুগ্ধ করেছে। এত সুন্দর ডিজাইন ওঁদের। ব্লক প্রিন্ট, বাঁধনি। অবশ্য রাজাগজাদের সব জামাকাপড় রাজস্থানী স্টাইলের নয়। বেনারসী কাপড়ের বোলবোলাও বেশ বেশি। জোব্বা, পাগড়ি, পাজামা। পাজামার ঘের দেখে অর্চিষ্মান বলল, এটা একটা রিয়েল লোকের কোমরের মাপ, ইয়ার্কি হচ্ছে? কয়েকজন সোয়াইয়ের ছবি ওকে মনে করালাম। কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত ফুলে ঢোল, হাঁটু থেকে টাইট। ওই ঢোলের এফেক্ট আনতে ঘের বেশি হওয়া জরুরি। অবশেষে মিউজিয়াম ফুরোল, 'জয় মা' বলে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি মধ্যেই দিনের আলো ফুরিয়েছে। সন্ধের অন্ধকারে আলোকিত প্রাসাদ ঝকমক করছে। সিটি প্যালেস কাল সকালের জন্য ফেলে না রেখে ভালোই হয়েছে, দু'রকম আলোতেই দেখা হয়ে গেল।</div><div class="p2"><br /></div>
<div class="p1"><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgxkq0Q0KtOYnCeYyP2uVRhjStN0u6OJ2OYJVJcmbi0waEzsFmA2uxN98LJfwpOx_aGBbewIhOF9_S_H5RjahBHj21zhN8dmOIycGIFzUpd5T2ghHvK6-DCthJuHZJpQDoC6uNkMiI7qzT3i3kC4PATyaiuisIQ-2F0FRfLtnHtCUa38moBz8obedifOoaC/s3946/citypalacenight.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="2959" data-original-width="3946" height="480" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgxkq0Q0KtOYnCeYyP2uVRhjStN0u6OJ2OYJVJcmbi0waEzsFmA2uxN98LJfwpOx_aGBbewIhOF9_S_H5RjahBHj21zhN8dmOIycGIFzUpd5T2ghHvK6-DCthJuHZJpQDoC6uNkMiI7qzT3i3kC4PATyaiuisIQ-2F0FRfLtnHtCUa38moBz8obedifOoaC/w640-h480/citypalacenight.jpg" width="640" /></a></div><div class="p1"><br /></div>প্রাসাদের প্রাচীরের মুখোমুখি উঁচু বারান্দায় একজন চেয়ার পাতছিলেন। ওই চেয়ারে বসেই তার মানে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড দেখা যাবে। চেয়ারে পরে বসা যাবে আপাতত বারান্দার এক কোণে ব্যাগ রেখে পা ঝুলিয়ে বসলাম। গরমের থেকে গুমোট বেশি। শরীরের কোণে কোণে ক্লান্তি হাই বলতে শুরু করেছে। অনতিদূরের প্রাসাদের আলোকিত করিডরে সাদাকালো ফোটোগ্রাফের সারি। অর্চিষ্মান আমার থেকে সোয়াগুণ বেশি পরিশ্রমী, দেখতে গেল। করিডরের এই প্রান্ত থেকে শুরু করে ওই প্রান্তে পৌঁছে, কয়েকজন সিকিউরিটি ভাইসাবের সঙ্গে কী সব কথা বলতে লাগল। ফিরে এসে ফিসফিসিয়ে বলল, কেচ্ছা শুনে এলাম। এদের বংশে নাকি ছেলে সন্তান বাড়ন্ত। খালি রাজকন্যা জন্ম নেয়, রাজপুত্র জোগাড়ের জন্য দত্তকপ্রথাই ভরসা। কারেন্ট রাজপুত্রও সেম কেস। ওই ছবিওয়ালা করিডরের ওপরের তলাতেই নাকি বর্তমান রানি রাজপুত্র রাজকন্যা থাকেন। অর্চিষ্মান উৎসাহ দিল, যাও যাও, ফোটো দেখতে দেখতে এদিক থেকে ওদিকে পৌঁছে বাঁদিকে তাকিয়ো। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">গেলাম। ফোটো দেখলাম। পোলো খেলা হচ্ছে, কাপ জেতা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীটন্ত্রীদের সঙ্গে হাতমেলানো হচ্ছে, সেনাবাহিনীতে প্রশংসাসূচক পারফরম্যান্সের জন্য পদক আঁটা হচ্ছে। গায়ত্রীদেবীর বেশ কয়েকটা ছবি। অধুনা রেসিডেন্ট রানি, রাজপুত্র, রাজকন্যাদের ছবি। বারান্দার অন্তে পৌঁছে, ক্যাজুয়ালি, যেন এই মুহূর্তের অপেক্ষাতেই গোটা বারান্দাটা হেঁটে আসিনি, বাঁ দিকে তাকালাম। একটা গলি। রহস্যময় নীল আলো জ্বলছে। গলির ওপাশেই শুরু হচ্ছে আসল প্রাসাদ। আমাদের মতো নেটিভদের জন্য সাজিয়েগুছিয়ে রাখা মিথ্যে প্রাসাদ না। যে প্রাসাদে সত্যি রাজারানিরা থাকেন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">নবনীতা দেবসেন বলেছিলেন মানুষ দুই প্রজাতির, এক প্রজা, দুই রাজা। আমি একশো শতাংশ একমত। দুটো প্রজাতির মধ্যে প্রধান যে তফাৎটা দেখেছি, রাজারা কখনওই নিজেদের প্রজা ভেবে গোলান না, প্রজারা হরদম উল্টো এররটা ঘটান। নবনীতা বুদ্ধিমান ছিলেন, নিজেকে প্রজা বলে চিনেছিলেন। আমিও মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত প্রজা। আমার দেখা অধিকাংশ লোকেই তাই। রাজা আমি জীবনে টেনেটুনে গোটা আড়াই দেখেছি, তার বেশি না।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আটটা বাজতে চলেছিল। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শুরু হবে, চেয়ারে গিয়ে বসলাম। বললাম, ভাবো, আমরা হন্যে হয়ে রাজারানির শাড়ি পাজামা চশমা চামচ দেখছি আর একশো হাতের মধ্যে দোতলা বা তিনতলার কোনও একটা ঘরে রাজকন্যা হাফপ্যান্ট আর টি শার্ট পরে পালংকে গড়াগড়ি যাচ্ছেন। অর্চিষ্মান বলল, হাফপ্যান্ট আর টি শার্ট নাও পরতে পারে কিন্তু। বাইরেটাইরে গেলে হয়তো ওই সব পরে কিন্তু এ দেশে এদের রাজা সাজার দায় আছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">তখন বিশ্বাস করিনি, শো দেখে উঠে মনে হল সত্যি হতেও পারে। সে কথায় পরে আসছি। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রশস্ত দেওয়ালে রাধাকৃষ্ণ মূর্তির পাশে পতপত করে উড়ল কিংডম অফ আমের-এর পতাকা। পেছনে ভয়েসওভার চলছে। সাউন্ড কোয়ালিটি এত খারাপ যে সেটা বেসিক্যালি একটা কন্টিনিউয়াস গোঁ গোঁ। অর্চিষ্মানের কানে কানে বললাম, গলাটা নির্ঘাত অমিতাভ বচ্চন। অর্চিষ্মানে এমন মুখ করল যেন অন্ধকারে যা তা ঢিল ছুঁড়ছি। তারপর ক্রেডিটে দেখা গেল উনি সত্যিই অমিতাভ বচ্চন।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">সিটি প্যালেসের লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের দুটো বিষয় ইন্টারেস্টিং। এক, যুদ্ধবিগ্রহের বর্ণনা নেই। এটা আমার দেখা লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের বিরলতম অভিজ্ঞতা। স্মৃতিতে প্রথম লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো অনেক ছোটবেলায়, দিল্লিতেই, লালকেল্লায়। মনে আছে মাঠের এপার ওপার থেকে ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দসহযোগে সেনাদলের হইহই ছুটে আসায় বুক কেঁপেছিল। শেষ লাইট অ্যান্ড সাউন্ড দেখলাম তাওয়াং-এ। সেখানেও বাষট্টির যুদ্ধেরই দামামা। সিটি প্যালেসের লাইট অ্যান্ড সাউন্ডে সে সব নেই। বেসিক্যালি, প্রথম যে ঘরটায় লাইন দিয়ে রাজাগজাদের ছবি দেখলাম, সেটারই চলচ্চিত্র ভার্শান। সওয়াই জয় সিং, যিনি আমের থেকে রাজত্ব সরিয়ে আনলেন জয়পুরে, থেকে শুরু করে বর্তমান পদ্মনাভ সিং পর্যন্ত। শহর গড়া, বই লেখা, পোলো খেলার বিষয় তো দেখেই এসেছিলাম, কোন একজন সওয়াই সাহেব রাজার অভিষেকের জন্য রুপোর গামলা বানিয়ে তাতে গঙ্গাজল ভরে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন সেও জানা গেল। মহারানি গায়ত্রী দেবীকে নিয়েও কয়েকটা স্লাইড হল। তারপর শুরু হল বর্তমান রাজারানিদের কর্মকাণ্ডের বিবরণ। শুরু হতেই অর্চিষ্মানের রাজাসাজার মন্তব্যের সত্যতাটা প্রকট হতে শুরু করল।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">প্রজা হিসেবে আমার একটা ধারণা ছিল যে আমরা রাজার জন্য যত হাঘরে, রাজারা আমাদের জন্য তত নন। মাঝেমাঝে ইউটিউবের রিলে হ্যারি মেগান উইল কেট চার্লস ডায়ানা ক্যামিলার কিস্যা আসে, লোকে এখনও এগুলো কী সিরিয়াসলি নেয় দেখে মাথা তাজ্ঝিমমাজ্ঝিম হয়ে যায়। সিটি প্যালেসের লাইট অ্যান্ড সাউন্ড দেখে বুঝলাম রাজারাও রাজাত্ব ব্যাপারটা সমান সিরিয়াসলি নেন। এখন রাজা ব্যাপারটাই উঠে গেছে অথচ বর্তমান প্রাসাদমালিকেরা নিজেদের নামের আগে উঠতে বসতে শুতে ঘুমোতে রাজারানি সাঁটতে প্রাণপণ পরিশ্রম করে চলেছেন। পরিশ্রম ভালো, কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে। পরিশ্রম বাইরে প্রকাশ পেলে কুলনেস চোট খায়। এঁদের নিজেদের রাজারানি রেফার করার উৎসাহ ভাবা যায় না। রানি অমুক এই করছেন, রাজা অমুক এই করছেন। শহরের চারদিকে পাঁচিল দেওয়া বা রুপোর গামলায় গঙ্গাজল নিয়ে লন্ডন যাওয়ার সুযোগ এখন নেই তাই নবপ্রজন্মের রাজপুত্ররা পোলো খেলছেন আর রাজকন্যারা ফেমিনিজম। </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">এই সব শেষ হতে হতে সাড়ে আটটা বেজে গেল। সেই শেষরাতে ঘুম থেকে উঠেছি। ঘুম থেকে উঠি আমি শেষরাতেই, কিন্তু উঠে সাড়ে চারঘণ্টা ট্রেনে চড়ে অন্য রাজ্যের অন্য শহরে গিয়ে সারাদিন সারাসন্ধে পিঠে ল্যাপটপ নিয়ে টহল দিয়ে বেড়াই না। উবার বুক করার প্রচেষ্টায় নামলাম। কেউই আসেন না। বা বুক করলেও ক্রমাগত দূর থেকে দূরে চলে যেতে থাকেন। ইতোমধ্যে চারপাশ থেকে ই-রিকশা আর অটোরা ঘনিয়ে এসেছেন। টুরিস্ট ডেস্টিনেশন বলেই হয়তো, ক্রমাগত বেচা ওঁদের মজ্জাগত হয়ে গেছে। আপনাকে দেখে যদি বোঝা যায় যে আপনি জয়পুরের লোক নন, রাস্তার ধারে শান্তিতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না। কোথায় যাবেন বা কোথাও যেতে চান কি না-র উত্তরে 'না' ওঁরা অ্যাকসেপ্ট করবেন না। দাঁড়িয়ে থাকবেন এবং ক্রমাগত বলেই যাবেন যে চলুন চলুন চলুন। উবার ডেকেছি বললেও নিস্তার নেই, বলবেন ক্যান্সেল করে দিন। হাঁটতে শুরু করলে সঙ্গে সঙ্গে চলবেন এবং তেমন তেমন পাবলিক হলে হাসিহাসি মুখে, কারণ ততক্ষণে তিনি ফিগার আউট করে ফেলেছেন যে তিনি সার্থকভাবে আপনাদের অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পেরেছেন এবং এই পারাটা তাঁকে অসীম আমোদ দিচ্ছে।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">আটঘণ্টা ঘুমিয়ে উঠে উজ্জ্বল রৌদ্রালোকে এঁদের সঙ্গে ডিল করতে কেমন লাগবে জানি না, এ রকম ইভেন্টফুল দিনের শেষে ক্লান্ত শরীরে এইসব হলে মনে, অন্ততঃ আমার দুর্বল মনে, নানাবিধ গোলমেলে প্রশ্নের জন্ম হতে থাকে। এঁরা কি সবাই এ রকম? হয়তো এঁরা সবাই এ রকম। নানাবিধ সিন্যারিও ঢেউ খেলে যায়। আমার গায়ে খুব জোর থাকলে এই মুহূর্তে আমি এই ভদ্রলোকের সঙ্গে কীভাবে ডিল করতাম? </div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div>
<div class="p1">দৌড়ে যাই সেই ভদ্রলোকের দিকে যিনি একই সঙ্গে কচুরি আর আইসক্রিমের ঠেলা সামলাচ্ছেন। আইসক্রিম খাওয়ার তখন আমার কোনও দরকার নেই, ইচ্ছেও না। তার ওপর অ্যাভেলেবল কেবল ম্যাংগো আইসক্রিম। ম্যাংগোর প্রতিই আমি নাতিশীতোষ্ণ, ম্যাংগো আইসক্রিম আমাকে কোনও রকম ভাবেই উষ্ণতার আঁচ দেবে না। কিন্তু ওই মুহূর্তে মাইন্ড ওভার ম্যাটার করতে ম্যাংগো কেন আতা আইসক্রিমও ওয়েলকাম। অবশেষে স্ক্রিনে একজন মধুসূদনদাদা জেগে ওঠেন। পাঁচ মিনিট দূর। কমপ্লিটিং আ ট্রিপ। পাঁচ দশ হয়, দশ পনেরো। আরও চারজন ই-রিকশা আর অটোভাইসাবকে বিনয়ী গলায় বোঝায় অর্চিষ্মান, ওঁদের বাহন আমাদের দরকার নেই। আমি আমার তলানি এনার্জি ব্যয় করি রিঅ্যাক্ট না করতে। অবশেষে উবার ভাইসাব আসেন। উঠি। ভয়ানক জ্যাম। ন’টা ষোলোর ড্রপ, ন’টা কুড়ি, বাইশ এবং আলটিমেটলি আটত্রিশ হয়। চাবি ঘুরিয়ে ঘরে ঢুকে ধপধপে সাদা বিছানার মুখোমুখি হই। এসির হাওয়া ফুরফুরিয়ে বেরোতে শুরু করে। শরীরের প্রতি রক্তবিন্দু চাইছে ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে বিছানাটায় মুখ থুবড়ে পড়তে, কিন্তু পড়ি না। আর মিনিট দশেক টেনে দিতে পারলে আরাম দশকোটি গুণ হবে। উইলপাওয়ারের শেষ বিন্দু খরচ করে দুল, টিপ খুলি। বাথরুমে ঢুকি। শরীরের ভেতরটাও ঠাণ্ডা জলে ধুতে পারলে আরাম হত। অর্চিষ্মান দরজায় টোকা মারে, চা বলছি, খাবে? নোপ। বেরিয়ে এসে জামাকাপড় যথাস্থানে মেলি। </div><div class="p1"><br /></div>
<div class="p1">অর্চিষ্মান ল্যাপটপ খুলে সাইন ইন করে। ঘরটা ততক্ষণে কনকনে হয়ে গেছে, চাদর মাথা পর্যন্ত টেনে আমি সেদিনের মতো সাইন-অফ করি।</div>
<div class="p2">
<span class="s1"></span><br /></div><div class="separator" style="clear: both; text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhX3biGMX6Eevee6x17rIM0ib-klmdIaIWhs5r5L37ZSJ8Ft2bxiuV8vnTNbFwW45q1OnyVsyk6sA_3nQdRtkN8QvyYiavNl_nslMWV8TKQga5WpBxyTupRNxdRDDzJZ1nI1RjoEKInjSdmiWiri_Tyr_AiH66JjxIy9yb9_czhwB7F9uF7hMj_P_lHoubc/s3928/clock.jpg" style="margin-left: 1em; margin-right: 1em;"><img border="0" data-original-height="3928" data-original-width="2812" height="640" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhX3biGMX6Eevee6x17rIM0ib-klmdIaIWhs5r5L37ZSJ8Ft2bxiuV8vnTNbFwW45q1OnyVsyk6sA_3nQdRtkN8QvyYiavNl_nslMWV8TKQga5WpBxyTupRNxdRDDzJZ1nI1RjoEKInjSdmiWiri_Tyr_AiH66JjxIy9yb9_czhwB7F9uF7hMj_P_lHoubc/w458-h640/clock.jpg" width="458" /></a></div><br /><div class="p2"><br /></div>
<div class="p1"></div></div>Kuntalahttp://www.blogger.com/profile/00675088325804867045noreply@blogger.com4