কখনও কখনও দুপুরবেলাতেই
১।
রাতে খাওয়াদাওয়ার পর বেড়াতে বেরোনোটা আমাদের নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। আমি,
সায়ন্তন, জয়দীপ আর শাহরুখ। আমি বেরোই ট্রানজিট হাউস থেকে, সায়ন্তন দক্ষিণাপুরম
থেকে। রাস্তায় মাঝে মাঝে আমাদের দেখা হয়ে গেলে, দুজনে মিলে হেঁটে সেই জায়গাটায় এসে
দাঁড়াই যেটাকে ক্যাম্পাসশুদ্ধু লোক টি পয়েন্ট বলে জানে। টি পয়েন্টে দাঁড়িয়ে
কথাবার্তা বলতে বলতেই ছায়ামূর্তিটার দিকে চোখ পড়ে যায়। তাপ্তী হোস্টেলের দিক থেকে হেঁটে
আসছে। আমরা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে আছি কাজেই ছায়ামূর্তি নিশ্চয় আমাদের
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। বুঝতেও পারছে যে আমরা ওর জন্যই অপেক্ষা করছি। তবু ছায়ার
হাঁটার গতি একচুলও বাড়ে না। সন্দেহ হয়, উল্টে আরও আস্তে হাঁটছে কি না। যেন আমাদের
সঙ্গে দেখা করার ওর কোনই ইচ্ছে নেই, স্রেফ নিয়মরক্ষা।
ক্লাসিক জয়দীপ। একদিন
ছশো পনেরো বাস থেকে নেমে দেখি জয়দীপও নেমেছে পেছন পেছন। আমি বললাম, ‘আরে তুই! কোথা
থেকে!’ জয়দীপ বলল, ‘সি পি।’
‘আমিও তো সি পি থেকে উঠেছি, কই দেখতে পাইনি তো?’
‘দেখার কথাও নয়। তোর পেছনের সিটে বসেছিলাম।’
একটা লোক, যাকে আমি গত পঁচিশ বছর ধরে চিনি, প্রথমে ক্লাসমেট তারপর সহকর্মী,
যার সঙ্গে আমি পঁচিশ বছর আগে ধাবায় বসে
আড্ডা মারতাম, পঁচিশ বছর পর রোজ রাতে খাওয়ার পর হাঁটতে বেরোই---সে এক ঘণ্টা বাসে
আমার ঠিক পেছনের সিটে বসে এসেছে অথচ আমাকে টোকা দেয়নি। অন্য কেউ হলে আমি অবাক
হতাম, জয়দীপ বলেই হলাম না। আমি অবাক হলে জয়দীপ আরও অবাক হবে। বলবে, 'কিন্তু আমার তো কিছু
বলার ছিল না। হঠাৎ টোকা দেবই বা কেন?’
জয়দীপ ল্যাম্পপোস্টের নিচে পৌছনোর পর আমরা হাঁটতে শুরু করি। শাহরুখও মটকা ভেঙে উঠে
গা ঝাড়া দিয়ে চলে আমাদের পেছন পেছন। রোজই এক রাস্তা। অ্যাডমিন. ব্লককে ডানদিকে
রেখে রিং রোড ধরে নাকবরাবর। রাস্তার একঘেয়েমি কাটানোর জন্যই গল্পে বৈচিত্র্য আনার
একটা চেষ্টা থাকে বোধহয়। শুধু একটাই নিয়ম মানা হয়, পেশা নিয়ে কোনওরকম কথা বলে না
কেউ।
সেদিন রাতে কুয়াশাটা একটু বেশিই ছিল মনে আছে। দিওয়ালির পর ঠাণ্ডাটাও বেশ গায়ে
লাগছিল। শার্টের গলার বোতাম
আটকে নিয়েছিলাম আমরা তিনজনেই। হাত পকেটে। হাঁটতে হাঁটতে পি এস আরের কাছে পৌঁছতেই
হঠাৎ দপদপ করে মাথার ওপরের ল্যাম্পপোস্টটা নিভে গেল। আর তক্ষুনি একটা ময়ূর বীভৎস
ট্যাঁ ট্যাঁ শব্দ করে ডেকে উঠল জঙ্গলের কোথাও।
সায়ন্তনই বলেছিল বোধহয়। অন্ধকার হলে কি ভয় বেশি লাগে? কই দুপুরবেলা তো এই একই
রাস্তা, একই জঙ্গল, একই ময়ূর---এত ক্রিপি লাগে না?
দুপুর . . . ভয় . . . আমার ঘাড়ে কে যেন বরফ বুলিয়ে দিল। কেঁপে উঠে দু’হাত দিয়ে
নিজেকে জড়ালাম। গলা থেকে আবছা একটা আর্তনাদও বেরিয়েছিল বোধহয়। সায়ন্তন বলল, ‘আরে
ভয় পাস না, কথা দিচ্ছি ভূত বেরোলে অবলাকে একা ফেলে পালাব না। শাহরুখকে রেখে যাব, ও
তোর জন্য ভূতের সঙ্গে ফাইট করবে। কী রে করবি না?’
শাহরুখ এতক্ষণ আমাদের পায়ের সঙ্গে ঘেঁষটে ঘেঁষটে হাঁটছিল, সায়ন্তনের প্রশ্ন
শুনে নেহাত চক্ষুলজ্জার খাতিরে একটা নিমরাজি ‘ঘেউ’ দিয়ে সম্মতি প্রকাশ করল। আমি
বললাম, ‘যাক নিশ্চিন্তি।’
কিন্তু সে রাতের মতো আমার শান্তি বিদায় নিল। ঘরের লাইট জ্বালিয়ে সারারাত খাটে
কাঠ হয়ে শুয়ে রইলাম। সিলিং ফ্যানের থেকে ঠায় তাকিয়ে। যেন এক সেকেন্ডের জন্যও চোখ
সরিয়ে নিলে ওখানে একটা কিছু বীভৎস ব্যাপার ঘটবে। যে ব্যাপারটা গত তিরিশ বছর ধরে
আমাকে দিনেরাতে, রাস্তায়ঘাটে, ক্লাসরুমে, শয়নেস্বপনেজাগরণে যখনতখন আক্রমণ করেছে,
বিধ্বস্ত করেছে, সেই ভয়ংকর ব্যাপারটা সেই রাতে আবার ঘটা থেকে ঠেকাতে ওই শেষ অক্টোবরের
রাতেও আমার ঘাম ছুটে যাচ্ছিল।
২।
দিল্লিতে মেয়েকে গ্র্যাজুয়েশন করানোর আইডিয়াটা আমার বাবামায়ের ছিল না। ছিল
বড়মামার। মামার দুই মেয়ে দিল্লিতে জন্মেছে, বড় হয়েছে, স্কুলকলেজ গেছে। মামা বাবাকে
বললেন, ‘মেয়েকে আর কদ্দিন আগলে রাখবে কল্যাণ, এবার দিল্লিতে পাঠিয়ে দাও।’ বাবাও
রাজি হয়ে গেলেন। বাক্সপ্যাঁটরা নিয়ে আমরা মামার লাজপতনগরের ফ্ল্যাটে এসে উঠলাম।
কলেজের রেজিস্ট্রেশন শেষ হলে বাবামা ম্লান মুখে আবার পূর্বায় উঠে পড়লেন আর আমিও
আমার সুটকেস নিয়ে এসে উঠলাম কিদোয়াইনগরে পেয়িং গেস্ট থাকব বলে।
মামামামি ভীষণ আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু মামাবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করা নিয়ে
নানারকম দুঃখের গল্প প্রচলিত আছে বলেই বোধহয় মা রাজি হলেন না। মামির হাত ধরে
বললেন, ‘তোমাদের ভরসাতেই তো রেখে যাচ্ছি বৌদি, কিন্তু আমার এই কথাটা শোনো, রুকুকে
বাইরে থাকতে দাও। শনিরবি না হয় এসে তোমাদের সঙ্গে দেখা করে যাবে।’
পি জি থাকতে এসে আমার একসঙ্গে অনেকগুলো উপকার হল। তাদের মধ্যে প্রধান দুটো
হচ্ছে, এক, সপ্তাহে পাঁচদিন গার্জেনহীন থাকার স্বাধীনতা, দুই, রাশিনার বন্ধুত্ব।
রাশিনা আমার বয়সী, রাশিনা আমারই কলেজের আমারই ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছে।
বন্ধুত্ব হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল, কিন্তু যখন বেরিয়ে গেল রাশিনারও প্রিয়
চরিত্র Esther Greenwood, তখন বন্ধুত্বটা আর শুধু বন্ধুত্ব না থেকে এক নিমেষে গাঢ় বন্ধুত্বে বদলে গেল।
ঘুমের সময়টুকু বাদ দিয়ে আমরা প্রায় সর্বক্ষণই একসঙ্গে থাকতাম। আমাদের দুজনের
জন্য ফার্স্টবেঞ্চের দুটো জায়গা বাকিরা খালি ছেড়ে রাখত। ক্লাসের পর দু’জনে
লাইব্রেরি যেতাম। লাইব্রেরির ফাঁকে ক্যান্টিনে আমি ইডলি, রাশিনা কাটলেট, আর আমরা
দুজনেই চা খেতাম। সন্ধ্যেবেলা একসঙ্গে বাড়ি ফিরে আসতাম, শুক্রবার রাতে কেউই অন্য
বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করতে বেরোতাম না। একঘেয়েমির প্রতি দুজনেরই টান ছিল।
তা বলে অমিল যে ছিল না তা নয়। আমি ফাঁক পেলেই গলগল করে বাড়ির কথা বলতাম।
হোমসিকনেসের সঙ্গে লড়াই করার ওটাই উপায় ছিল হয়তো। বাড়ির কথা, বাড়ির লোকজন,
গাছপালার কথা। মায়ের চিঠিতে মজার কোনও খবর থাকলে সে খবর ট্রানস্লেশন করে রাশিনাকে
শোনাতাম। আমার সব গল্প মন দিয়ে শুনত রাশিনা। মায়ের চিঠি শুনে হাসত। হাসি থামলে আমরা
দুজনেই চুপ করে থাকতাম। একটা অস্বস্তিকর নীরবতা মাঝখানে ঝুলে থাকত। আমি অপেক্ষা
করতাম, এই বুঝি সে নীরবতা ভেঙে এসে দাঁড়াবেন রাশিনার মা, রাশিনার বাড়িতে আরও যাঁরা
যাঁরা আছেন বা নেই, পোষা কুকুর বা বেড়ালের পেছনে ছুটোছুটি করা রাশিনার
শৈশব---কিন্তু কেউ আসত না। প্রশ্ন করার স্বভাব আমার এখনও নেই, তখনও ছিল না। শেষটায়
আমি আর রাশিনার কে প্রথম কথা বলে উঠত মনে নেই আর। শুধু মনে আছে, জাগরণের প্রায়
প্রতিটি মুহূর্ত একসঙ্গে কাটিয়েও আমি রাশিনার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে একটি তথ্যও
জানতাম না।
রাশিনার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত না।
অবশ্য এই না জানাটা আমাদের বন্ধুত্বে কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি। আমরা রোজ ইডলি আর
কাটলেট খাচ্ছিলাম, লাইব্রেরি যাচ্ছিলাম, পরীক্ষার আগে রাশিনার ঘরে রাত জেগে
পরীক্ষার পড়া পড়ছিলাম।
রাশিনার ঘরে বসে পড়ার কারণ হচ্ছে রাশিনার ঘর আমার ঘরের থেকে অনেক শান্ত ছিল।
আমার ঘরেও অশান্তির কোনও কারণ ছিল না, কিন্তু রাশিনার ঘর ছিল গুহার মতো। ভেতরে
ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেই বাইরের জগতের সঙ্গে সমস্ত সংযোগ ছিন্ন। আমাদের সবার ঘরেই
ছিল একটা খাট, একটা বুককেস, একটা পাল্লাওয়ালা দেওয়াল আলমারি আর একজোড়া টেবিলচেয়ার।
রাশিনার বিছানার চাদর সর্বদা টানটান থাকত, দেওয়াল আলমারির পাল্লা সবসময় টাইট করে
বন্ধ করা। বুককেসে ছবির মতো গোছানো বই। টেবিলের ওপর ঘাড় নিচু করা টেবিলল্যাম্প।
হয়তো একটি বা দুটি খাতাবই। থাক করে গুছিয়ে রাখা। বই থাকুক আর না থাকুক, টেবিলের
ওপর একটা কাঁচের গ্লাস থাকতই, আর গ্লাসের জলের মধ্যে ডাঁটি ডুবোনো একটিমাত্র
সূর্যমুখী ফুল। টাটকা, পূর্ণ প্রস্ফুটিত। ফুলটি তাকিয়ে থাকত দেওয়ালে টাঙানো একটি
সাদাকালো ছবির দিকে। ছবি থেকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন Esther Greenwood.
এখনও রাশিনার ঘর বলতে আমার Esther Greenwood-এর ছবিটার কথা মনে পড়ে। ছবির চোখদুটোর কথা। যতবার রাশিনার ঘরের দরজায়
দাঁড়াতাম, সকালে কলেজ যাওয়ার আগে কড়া নেড়ে ওকে ডাকার সময়, রাতে গুডনাইট বলার সময়,
পড়তে বসার সময়, পড়া শেষ করে উঠে আসার সময়---ওই চোখদুটোকে আমি এড়াতে পারতাম না। আর
যতবার Esther Greenwood-এর চোখে চোখ পড়ত, একটা অস্বস্তি শরীর ছেয়ে ফেলত। মাথা মন দেহ সম্পূর্ণ নগ্ন
হয়ে যাওয়ার বিশ্রী একটা অনুভূতি। অনেকবার ভেবেছি রাশিনাকে বলি ছবিটা সরিয়ে দিতে।
বলিনি। কারণ এক, আমি বলার কে? দুই, জানতাম বললেও রাশিনা ছবিটা সরাবে না, আর তিন,
ছবিটা ছাড়া ঘরটার কথা আমি নিজেও কল্পনা করতে পারতাম না। রাশিনার রংহীন, রিক্ত ঘরের
সমস্ত প্রাণ যেন এসে জড়ো হয়েছিল ওই দুটি চোখে।
ফার্স্ট ইয়ারের পরীক্ষার পর ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে রাশিনার ঘরের ভেজানো
দরজা ঠেলে ঢুকে যখন সিলিং ফ্যান থেকে রাশিনার ঝুলন্ত দেহটা আবিষ্কার করেছিলাম,
তখনও আমার চোখ প্রথমেই টেনেছিল দেওয়ালের ওই দুটো চোখ। দপদপ করে জ্বলছে। অন্যদিনের
থেকে বেশি। ঘরের অন্য একমাত্র প্রাণটিকে আত্মসাৎ করার জয়ের হিংস্র উল্লাস ফেটে
পড়ছে দৃষ্টি থেকে ।
পি জি মালিকের ফোন পেয়ে মামামামি তক্ষুনি এসে নিয়ে গিয়েছিলেন আমাকে। পরের
বাহাত্তর ঘণ্টা আমি একটিও কথা বলতে পারিনি। সবাই বলেছিল, শক। ডেডবডি আবিষ্কারের,
তার ওপর সেটা আবার বেস্ট ফ্রেন্ডের। কলেজে কথা বলে ছুটি করিয়ে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন
বাবামা। মাসখানেক পর দিল্লি ফিরে এসেছিলাম আমি। মামামামি আর কোনও কথা শোনেননি।
বাকি দু’বছর মামাবাড়িতে থেকেই কলেজ করেছিলাম। রেজাল্টে লাভক্ষতি কিছু হয়েছিল কি না
জানি না, শুধু গ্র্যাজুয়েশনের শেষে ওজন কেজি দশেক বেড়ে গিয়েছিল।
বন্ধুত্ব আর কারও সঙ্গে হয়নি। রাশিনার সঙ্গে যেমন হয়েছিল তেমন তো নয়ই, তার
থেকে অনেক কমও না। হাই হ্যালো, চোখে চোখ পড়লে ভদ্রতাসূচক হাসি, দরকারে নোটস্ বিনিময়।
ব্যস। সে জন্যই বোধহয় কেউ আমাকে কখনও জিজ্ঞাসা করেনি রাশিনা কেমন অমন করেছিল।
ভাগ্যিস করেনি। কারণ করলে আমি উত্তরটা দিতে পারতাম না। আর না পারলে সবাই হয়তো ভাবত
রাশিনা আমার অত ভালো বন্ধুও ছিল না।
সবাই বলে কলেজের তিনটে বছরই নাকি জীবনের সেরা বছর। আমি মেলাতে পারি না। আমার
কলেজের তিনটে বছর মানে শুধু ভেজানো দরজার ওপারে একটিমাত্র সূর্যমুখী ফুল, জ্বলন্ত
দুটি চোখ আর চোখের সামনে হাওয়ায় দুলন্ত দুটো পায়ের পাতা।
থার্ড ইয়ার শুরুর সময় যখন কলেজে ফিরলাম তখন আমি সম্পূর্ণ ফোকাসড। বছরের শেষ
থেকেই বিভিন্ন জায়গায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সে ভর্তির পরীক্ষা শুরু হবে। পাখির
চোখের মতো একটি ইউনিভার্সিটির নাম আমার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পাসপোর্ট
অ্যাপ্লিকেশন জমা দেওয়া হয়ে গেছে। সামনের অন্তত দশ বছরের জীবন আমি চোখের সামনে পরিষ্কার
দেখতে পাচ্ছি। মসৃণ রাজপথের মত পায়ের কাছে পড়ে আছে আমার ছুটে যাওয়ার অপেক্ষায়।
এমন সময় রাস্তায় একটি ছোট্ট স্পিডব্রেকারের আবির্ভাব হল। থার্ড ইয়ারের প্রথম
দিন ক্লাসে ঢুকে দেখলাম ফার্স্ট বেঞ্চের কোণায় রাশিনা বসে আছে।
আমি পরে অনেক ভাবার চেষ্টা করেছি সেই মুহূর্তে আমার মনের ভাব ঠিক কী রকম
হয়েছিল। আতঙ্ক? বিস্ময়? শোক? দমবন্ধ উত্তেজনা? নাকি আনন্দ? প্রিয় বন্ধুকে
অপ্রত্যাশিত ফিরে পাওয়ায়? মনে পড়েনি। শুধু মনে আছে যাই মনে হোক না কেন সেটা এক
সেকেন্ডের বেশি স্থায়ী হয়নি।
মেয়েটা রাশিনা নয়। মেয়েটা রাশিনার লুক-অ্যালাইকও নয়। মেয়েটাকে দেখলে রাশিনার
যমজ বোন বলে ভুল করবে না কেউ। তবু আমার রাশিনার কথা মনে পড়ল কেন?
প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে এগিয়ে গেলাম। মা ছোটবেলা থেকে শিখিয়েছিলেন ফার্স্ট
বেঞ্চে বসতে। গত একটা বছর মায়ের কথার অবাধ্য হয়েছি আমি, ফার্স্ট বেঞ্চের দিকেও
যাইনি, কিন্তু সেদিন গেলাম। আমি গেলাম না কেউ টেনে নিয়ে গেল? ব্যাগ রেখে সন্তর্পণে
চেয়ার টেনে বসতে মেয়েটা হাসল আমার দিকে তাকিয়ে। রাশিনার হাসি মনে পড়ে যাচ্ছে আমার
হু হু করে। রাশিনার ঘাড় বাঁকিয়ে তাকানো . . .
আমি টিপে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। মাথার ভেতর থেকে ধাক্কা দিয়ে রাশিনাকে বার করে
দিয়ে চোখ খুললাম আবার। মেয়েটা তখনও হাসিমুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মেয়েটা রাশিনা
নয়। মেয়েটার হাসির সঙ্গে রাশিনার হাসির কোনও মিল নেই, থাকতেই পারে না। বুক থেকে
একটা পাথর নেমে গেল।
হাই, আই অ্যাম রচনা।
রচনা, রাশিনা। জিভের ওপর আলতো করে দুটো নাম গড়িয়ে নিলাম একবার। উঁহু, আদ্যক্ষর
ছাড়া আর কোনও মিল নেই। বাঁচা গেছে।
মেয়েটার সঙ্গে আলাপ হল। বাবার বদলির চাকরি, তাই বেটাইমে কলেজে ভর্তি হতে হয়েছে।
রাশিনার সঙ্গে আরও একটা অমিল। মাথার ভেতর নোট করে নিলাম। বাবার চাকরি নিয়ে যেচে
তথ্য সরবরাহ করত না রাশিনা। এই মেয়েটা রাশিনা নয়। রাশিনা হতেই পারে না। রাশিনা
ঝুলছে কিদোয়াইনগরের পি জি বাড়ির দোতলার ঘরে। রাশিনার পায়ের পাতাদুটো এখনও হাওয়ায়
দুলছে। দুলবে সারাজীবন। আর দুলন্ত পায়ের পাতার ওপারে জ্বলজ্বল করবে দুটো চোখ।
মেয়েটা কী সব বলে চলেছে। আমি নিজেকে টেনে বাস্তবে ফেরালাম। ইন্ডিপেন্ডেনস।
প্রাইভেসি। মেয়েটা এ দুটোর একটাও খোয়াতে চায় না বলে বাড়িতে থাকছে না। একা পি জি-তে
থাকছে। ক্লাসের পর মেয়েটাকে লাইব্রেরি চেনাতে নিয়ে গেলাম। ওই বলল নিয়ে যেতে।
লাইব্রেরি দেখে মেয়ে ইমপ্রেসড।
‘ভেরি নাইস। উই ক্যান স্টাডি হিয়ার, নো?’
আমি হাসলাম। পারি তো বটেই, কিন্তু চাই কি?
মেয়েটা ছাড়বার পাত্রী নয়। পিছু লেগে রইল। ‘ক্যান ইউ শো মি দ্য ক্যান্টিন
প্লিজ?’ আমি একটু বিরক্ত হচ্ছিলাম, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে একটা স্বস্তিও হচ্ছিল।
রাশিনার সঙ্গে রচনার পার্থক্য ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। রাশিনা এ রকম লেপটে থাকত না
কারও সঙ্গে। রাশিনা অন্যকে নিজের দিকে টেনে আনতে পারত। রাশিনার মতোই, কিংবা
রাশিনার থেকেও বেশি টেনে আনার ক্ষমতা ছিল Esther Greenwood-এর দুটো চোখের।
ছোটু আমার সামনে ঠক করে ইডলির প্লেট নামিয়ে রাখল। এখন আর ওকে বলতে হয় না। আমি
রচনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ও কিছু খেতে চায় নাকি।
রচনা ঘাড় নাড়ল। খেলেই হয় কিছু ছোটামোটা।
ছোটু গড়গড়িয়ে মেনু বলতে শুরু করল। সামোসা, অমলেট, ব্রেড অমলেট, বান অমলেট,
আণ্ডা ভুজিয়া . . .
‘কাটলেট মিলেগা? ফির মেরে লিয়ে দো কাটলেট লে আ ছোটু প্লিজ। অর এক কাপ চায়।’
আমি নিজেকে বিচলিত হতে অ্যালাউ করলাম না। পৃথিবীর কোটি কোটি লোকের কাটলেট খেতে
ভালো লাগতে পারে। তাছাড়া মেয়েটা হয়তো আজকে কাটলেট অর্ডার করছে, কাল হয়তো অন্য কিছু
করবে। হয়তো আমার দেখাদিখি ইডলিই করবে। আমি বলব ওকে ইডলি অর্ডার করতে, বাবুভাইয়ার
ক্যান্টিন ইডলির জন্য বিখ্যাত।
রচনার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। আমার সচেতন প্রতিরোধ সত্ত্বেও। মেয়েটা
ভালো বেশ। পড়াশোনায় মন আছে, পার্টিতে মন নেই। তা বলে বোরিং নয় একটুও। অনেকদিন পর
আমার আবার কলেজ যেতে ভালো লাগতে শুরু করল। কোনওদিন আগে পৌঁছে গেলে বেঞ্চের কোণার
সিটটা ছেড়ে রেখে অপেক্ষা করতাম। দরজা দিয়ে রচনাকে ঢুকতে দেখে মন খুশি হয়ে যেত।
যাক, সারাদিন আর মুখ বুজে থাকতে হবে না। একসঙ্গে লাইব্রেরি যেতাম আমরা। ক্যান্টিনে
যেতাম। আমি ইডলি খেতাম, রচনা কাটলেট খেত। খাওয়া শেষ করে দু’কাপ চায়ে আরাম করে
চুমুক দিতাম দুজনে।
পরীক্ষার পর একদিন রচনা খুব লজ্জা লজ্জা মুখ করে প্রস্তাবটা দিল। ওর পি জি-র
লোকজন সব বাড়ি চলে গেছে। ও থেকে যাচ্ছে এন্ট্র্যান্সের প্রিপারেশন নেওয়ার জন্য।
আমি যদি শনিরবিবার ওর সঙ্গে থেকে একসঙ্গে পড়াশোনা করতে চাই তাহলে চলে আসতে পারি। ও
পি জি আন্টিকে জিজ্ঞাসা করে রেখেছে, তিনি সানন্দে রাজি হয়েছেন। এখকন আমি যদি আমার
মামামামিকে রাজি করাতে পারি . . .
আমার মন ভালো হয়ে গেল। কতদিন কোনও বন্ধুর সঙ্গে বসে পড়াশোনা করিনি আমি।
পাশাপাশি বসে নিজের নিজের বইয়ের খোলা পাতায় মগ্ন হয়ে যাইনি। মগ্নতা ভেঙে একে অপরের
সঙ্গে হাসিঠাট্টা করিনি, কলেজের প্রফেসরদের নিয়ে, সহপাঠীদের নিয়ে হাসিনি, নিন্দে
করিনি।
আমি রাজি হয়ে গেলাম। মামামামির জন্য চিন্তা নেই। সপ্তাহান্তে একসঙ্গে পড়া তৈরি
করার মতো বন্ধু আমার হয়েছে জানলে তাঁরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন। গত দু’বছর ধরে এই
দিনটার জন্যই অপেক্ষা করে আছেন তাঁরা।
রচনার চোখমুখ হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। একটা নোটপ্যাডের পাতায় খসখস করে কী একটা
লিখে পাতাটা ছিঁড়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ইয়ে লে মেরা অ্যাড্রেস। বহোত আসান
হ্যায়। আই এন এ মার্কেটকে তরফ সে আয়েগি তো রাইট মে ফার্স্ট যো কাট আয়েগা . . .’
সেই কাট নিয়ে পাঁচ মিনিট সোজা হেঁটে গিয়ে বাঁদিকের গলি বেয়ে দশ পা, তারপর
ডানদিকে বেঁকে ডানহাতের তৃতীয় বাড়ি। আমাকে ও বাড়ি চেনানোর কোনও দরকার নেই।
দিল্লিতে ওটাই আমার প্রথম ঠিকানা ছিল। এখনও চোখ বেঁধে দিলে আমি ও বাড়ি পৌঁছে যেতে
পারব।
ছেঁড়া কাগজের টুকরোটা থেকে মুখ তুলে তাকালাম। রচনা তখনও পথনির্দেশ দিয়ে
যাচ্ছিল। আমি আর হাসছিলাম না। রচনা বলল, ‘সমঝা?’
আমি ঘাড় নাড়লাম। যদিও আমি কিচ্ছু বুঝিনি। আমার মাথার ভেতর সব গুলিয়ে গেছে।
একটা ক্ষীণ যুক্তি মাথার ভেতরে ক্রমাগত বলে যাচ্ছে, কাকতালীয় ঘটনা এখনও পৃথিবীতে
ঘটে রুকু। এটা সে রকমই একটা ঘটনা। গত এক বছরে নিশ্চয় ওই বাড়িতে অনেক লোক থেকেছে,
এসেছে গেছে। রচনাও তাদেরই মধ্যে একজন।
আর একজন বলেই শনিবার ওই বাড়িটায় রচনার সঙ্গে আমি দেখা করতে যাব। যেতেই হবে আমাকে। না
গেলে আমি শান্তি পাব না।
কেমন একটা ঘোরের মধ্যে কেটে গেল বাকি ক’টা দিন। শনিবার সকালে উঠে যন্ত্রের মতো
মামির হাতের লুচিতরকারি খেলাম, তৈরি হলাম, চুল আঁচড়ালাম। মামি বন্ধুর বাড়িতে পরার
জন্য জামাকাপড় বেছে রেখেছিলেন, গামছা টুথব্রাশ---যন্ত্রের মতো সেগুলো ব্যাগে
ঢুকিয়ে নিলাম।
ঠিক আধঘণ্টা বাদে দেখলাম আমি কিদোয়াইনগরের বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। মোটে
একবছরে বদলানোর কথাও নয়, বদলায়ওনি বাড়িটা। সবুজ রঙের গ্রিল গেট ঠেলে ঢুকে ছোট
বাগান। তখনও আগাছাভর্তি ছিল, এখনও আছে। বাগানের ভেতর দিয়ে হেঁটে বাড়ির পাশের দিকে
চলে গেলাম আমি। আন্টিজীর ফ্যামিলি বাড়ির সামনের দরজা দিয়ে যাতায়াত করে, পি জি-র
মেয়েরা পাশের দরজা দিয়ে। সে দরজা খোলাই ছিল। আমি সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে শুরু
করলাম।
আমার কোনও সন্দেহই ছিল না রচনা ওই ঘরটাতেই থাকে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে প্রথম ঘরটা।
আমি থাকতাম দ্বিতীয়টায়। সন্দেহ ছিল না বললে ভুল হবে। আমার তখন সন্দেহ, বিশ্বাস, অবিশ্বাসের
ক্ষমতা লোপ পেয়েছে। হেঁটে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালাম আমি। দরজায় টোকা মারার আগে দু’সেকেন্ড
চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। বুকের ভেতরটা ভীষণ খালি লাগছিল। কেন এলাম আমি এখানে? কীসের
আশায়? কাকে দেখব বলে? কার সঙ্গে দেখা করতে চাইছিলাম আমি? রচনা? নাকি আগাগোড়াই
রচনার মধ্যে অন্য কাউকে দেখতে চেয়ে এসেছি আমি?
আমার হাতের আঙুলগুলো দরজায় টোকা মারল। কোনও উত্তর নেই। রুকু, ফিরে চল। এক্ষুনি
নেমে যাও ওই সিঁড়ি দিয়ে, যে সিঁড়ি বেয়ে তুমি উঠে এসেছ। আমার হাত আবার টোকা মারল।
এবার আগেরবারের থেকে জোরে। ভেতরে কেউ একটা নড়াচড়া করছে।
‘জাস্ট আ সেকেন্ড।’
রচনার গলা। রচনা। রচনা থাকে এখানে এই ঘরটায়। রচনা। যে আমার পাশে বসে ক্লাস করে
রোজ, যে আমার সঙ্গে লাইব্রেরি যায়, ক্যান্টিনে গিয়ে নিয়ম করে কাটলেট অর্ডার করে।
যে পার্টি করতে ভালোবাসে না। যার সেন্স অফ হিউমারকে আমি হিংসে করি, যার সঙ্গে
একদিন দেখা না হলে আমার মন খারাপ হয়ে যায়, সেই রাশিনা থাকে এখানে।
দরজা খুলে গেল। আমার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আমি তার দিকে দেখছি
না। আমার চোখ তার মাথার পাশ দিয়ে সোজা চলে গেছে ওপাশের দেওয়ালের দিকে। দেওয়ালে
টাঙানো একটা ছবি। ছবিটাও একটা মেয়ের। মেয়েটা সোজা তাকিয়ে আছে আমার দিকে। সটাং। নিষ্পলক।
Esther
Greenwood-এর সে জ্বলন্ত দৃষ্টির সামনে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে আমার সমস্ত প্রতিরোধ। আমার হাঁটু
কাঁপছে। আমি আর তাকিয়ে থাকতে পারছি না। ছবি ছেড়ে আমার চোখের দৃষ্টি নেমে আসছে নিচের
দিকে। নিচে ফাঁকা টেবিলের ওপর একটা কাঁচের গ্লাসের ভেতর ফুটে আছে একটিমাত্র
সূর্যমুখী ফুল। উজ্জ্বল। পূর্ণ প্রস্ফুটিত।
‘ম-মুঝে যানা হোগা।’ আমি টলন্ত পায়ে পিছিয়ে আসছি।
‘অন্দর নেহি আওগি?’ দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা জানতে চাইছে। হাসছে মেয়েটা।
আমার কাঁধ থেকে মামির গুছিয়ে দেওয়া ব্যাগ খসে পড়ে গেছে। পড়ুক। চাই না আমার
ব্যাগ। আমি পেছন ঘুরি। দশ পা ডানদিকে হেঁটে যেতে পারলেই সিঁড়ি। আমি পা বাড়াই।
একটা হাত আমার পিঠে এসে থামে। ভীষণ নরম, আলতো একটা হাত।
‘রুক্মিণী . . .’
প্রথমবার এই গলাটা শুনে বোরোলিনের বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়েছিল আমার। শ্রাবন্তী
মজুমদার ফ্যাঁসফেঁসে গলায় গাইছেন, ‘সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বোরোলিন’। গলাটা
গত একবছর শুনিনি আমি। জাগরণে শুনিনি, কিন্তু প্রতি রাতে দুঃস্বপ্নে এই গলাটা এসে
আমাকে ডেকেছে। রুক্মিণী, রুক্মিণী, রুক্মিণী।
কিন্তু এটা তো স্বপ্ন নয়, এটা তো ঘোর বাস্তব। এখন তো রাত নয়। চোখের ওপর দিল্লির
দুপুরের আলো ঝকঝক করছে। রাস্তার হর্নের আওয়াজ কানে আসছে আবছা আবছা।
‘রুক্মিণী . . .’
আমি পেছন ফিরব না। আমি বাড়ি যাব। আর মোটে দশটা পা।
‘রুক্মিণী . . .’
আমি ঝটকা মেরে পেছন ফিরলাম। পেছনের মেয়েটার চোখে চোখ রাখব বলে। কিন্তু
পেছনে তো কেউ নেই। দূরে দেওয়ালে Esther Greenwood-এর ক্ষুধার্ত চোখ, চোখের নিচে হলুদ সূর্যমুখী যেমনকার তেমনি আছে। সূর্যমুখী আর আমার
মাঝখানে শূন্য হাওয়ায় শুধু দুলছে একজোড়া পা।
৩।
আমার চিৎকার শুনে নিচের তলা থেকে লোকজন ছুটে এসে মূর্ছিত আমাকে এবং সিলিং থেকে
ঝুলতে থাকা রচনা শ্রীবাস্তব দুজনকেই আবিষ্কার করে। মামামামিকে আবার ফোন করা হয়।
বাবামা আবার কলকাতা থেকে ছুটে এসে আমাকে বাড়ি নিয়ে যান। সবাই ভেবেছিল এ ধাক্কা
আমার পক্ষে আর সামলানো সম্ভব হবে না। কিন্তু সে রকম কিছুই হয়নি। আমি ঠিকই ছিলাম।
পরীক্ষা দিয়ে নিজের পছন্দের ইউনিভার্সিটিতে ভর্তিও হয়েছিলাম। পাসপোর্টে ভিসার ছাপও
পড়েছিল। পরের জীবনটুকু যেমন ভেবেছিলাম, ছোটখাটো ওঠাপড়া বাদ দিলে সেভাবেই চলেছিল
আমার জীবনটা। শুধু সূর্যমুখী ফুলের দিকে আর কখনও আমি তাকাতে পারিনি।
Beyond Awesome..
ReplyDeleteধন্যবাদ ইনিয়া।
DeleteOre baba ki sanghatik.
ReplyDeleteসিরিয়াসলি রুচিরা।
DeletePorhte porhte bar bar gaye kanta dilo. Golpota porhar onekkhon por bujhte parlam eta golpo. Ki, tai to?
ReplyDeleteহাহা গল্প তো বটেই শীর্ষ। এটা সত্যি হলে আমি আর অবান্তর লেখার জন্য বেঁচে থাকতাম না।
Deleteএই তো মশায় অ্যাদ্দিনে জম্পেশ একখানা ছেড়েছেন। আমার মতে আপনার বেস্ট টিল ডেট। চালিয়ে যান, আমাদের আনন্দ দিতে থাকুন।
ReplyDeleteসত্যি? থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।
Deleteএই লেখাটা সব বলা-কওয়ার উর্দ্ধে হয়েছে।
ReplyDeleteগুড গুড।
DeleteBesh ..
ReplyDeleteহুম্ম্ম্...
DeleteEmontai to cheyechilam...etodine style ta dhorlen...
ReplyDeleteSabash!
থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।
Deletefiction! finally! onek onek oneeeeeeeek obhinondon! just fatiye diyechho.
ReplyDeleteইয়েস, ফাইন্যালি। অনেক কেঁদেককিয়ে। অভিনন্দনের জন্য অনেক ধন্যবাদ সোমনাথ।
DeleteBesh kichhudin dhorei biroktite recent kaaler Bangla shahityo pora chhere diyechhilam, Desh newa bondho kore diyechhilam. Ei lekhata abaar prerona jogachhe, Bangla shahityo abaaro promaan korilo se more nai.
ReplyDeleteBoli ki, lekhata Desh ba Anandamelay pathiye dao, abar subscribe kora shuru korbo
ওরে বাবা, কী ভালো কমপ্লিমেন্ট শ্রমণ। থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ। তবে অনেক কষ্টে এটা বেরিয়েছে, আর বেরোবে কি না সেটাই দেখার। তবে তোমার লেখাটা এত ভালো লেগেছে জেনে ভীষণ খুশি হলাম।
Deletetumi eta likhle kikore kuntala di? nije nije erokom likhte parle??
ReplyDeletekhib i bhalo hoyece, akdom haar-him-kora..
সত্যি সত্যি ভয় লেগেছে স্বাগতা?
Deleteগল্পটা পড়ে সত্যজিতের 'রতনবাবু আর সেই লোকটা'র কথা মনে পড়ে গেল। দারুণ ! অসাধারণ !
ReplyDeleteউফ, কীসে আর কীসে তুলনা করলে পিয়াস। হ্যাপ্পি হয়ে গেলাম। থ্যাংক ইউ।
Deleteবালি থেকে কাটোয়া লোকাল এ উঠে দম বন্ধ করা ভিড় আর ঘাম গন্ধ ভরা গরম উপেক্ষা করে আপনার হাড় হিম করা গল্প হাতে গোনা কিছু নিশ্বাস: এ শেষ করে যখন বাইরে চোখ ফেললাম, আপনার ওপর বেজায় রাগ হয়ে গেল - দেখি ট্রেন টা শ্রীরামপুর পেরিয়ে গেছে | কেন যে এরকম ফেবিকুইক মাখানো লেখা লেখেন ?
ReplyDeleteএই রে, সত্যি সত্যি যদি এটা হয়ে থাকে, তাহলে থ্যাংক ইউ-র থেকে সরি সরি বলাটাই উপযুক্ত হবে। শেওড়াফুলি থেকে ডাউনের ট্রেন পেতে বেশি দেরি হয়নি তো?
Delete(বাই দ্য ওয়ে, আপনার 'ফেভিকুইক' টা আমার এযাবৎ পাওয়া অন্যতম সেরা প্রশংসা। থ্যাংক ইউ আত্মদীপ।
Sottye maane ... Tin sottiye! Kintu aar train e othar risk nie ni, soja 2 numbor dhore ghorer chhele ghore. Feviquick sune bhalo legechhey sune ami Hevi khusi holam :)
Deleteএইটা ভালো ডিসিশন নিয়েছেন। শেওড়াফুলি থেকে ট্রেন ধরা মহা ঝামেলা। প্ল্যাটফর্ম আগে থেকে আন্দাজ করা যায় না তো, ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আমার খুব টেনশন হত, যদি যথেষ্ট তাড়াতাড়ি দৌড়ে না নামতে পারি।
DeleteKhuuuuub bhalo.....darun legeche amar. Tumi chotto golper sonkoloner dike egiye jaao
ReplyDeleteবলছ নীলাঞ্জনা? সাহস দিচ্ছ?
Deleteভাগ্যিস গতকাল রাতে পড়িনি, ঘুমোতে পারতাম না। এই দিন দুপুরে পড়তে পড়তে এমন কেঁপে উঠলাম যে পাশের ডেস্ক এর সহকর্মী বললেন, "ঠান্ডা লাগছে? এ সি টা কমিয়ে দেবো?" এরকম ভয়ের লেখা লিখলে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দেবেন দয়া করে। লোকজন জোগাড় করে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে পড়বো।
ReplyDeleteএটা অবান্তর ২ নয়, ছোট গল্প সংকলন এর জন্যে থাকুক, আমি নীলাঞ্জনা-র সঙ্গে একমত।
বাঃ বাঃ, ভয় লেগেছে শুনে প্রীত হলাম। থ্যাংক ইউ সৌগত। ছোটগল্প সংকলনের কথাটাও মাথায় রাখলাম।
Deletetumi na bole dile ami etake bastob e vebechilam. ki osadharon bornona. chup kore bose roilam kichukhon.
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ রাখী।
DeleteAsadharan. Daarun Legechhe.
ReplyDeleteভেরি গুড, চন্দ্রচূড়। থ্যাংক ইউ।
Deleteসবাই অসাধারণ বলছে, আমিও বলব, কিন্তু সেটা আমার মূল বক্তব্য নয়। মূল বক্তব্যটা হলো একটা প্রশ্ন: এ ঘটনার মধ্যে কোথাও কি কিছু সত্যি আছে? এ প্রশ্নটা করার কারণ হলো আমার এক বন্ধু সত্যিই আছে, যার জীবনে দুজন আলাদা আলাদা রুমমেট আলাদা আলাদা সময়ে সুইসাইড করেছিল। আমরা তাকে হাল্কা ভাবে বলতাম ঠিকই, যে এতে এটাই প্রমান হয় যে সে নিজে রুমমেট হিসেবে কতটা অসহনীয়, কিন্তু মনে মনে ঠিকই প্রার্থনা করতাম যেন এরকম দুর্ভাগ্য আর কারুর না হয়। আজ আপনার গল্পটা পড়ে সেই ব্যাপারটা আবার মনে পড়ে গেল।
ReplyDeleteআপনার লেখা দিন দিন ভালো হচ্ছে, কাজেই রোজ রোজ "এটা আপনার বেস্ট" বলারও মানে দেখিনা। কিন্তু সত্যি খুব খুব ভালো হয়েছে। এরকম গল্প আরও পড়তে চাই।
আপনার বন্ধুর কপাল তো সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে রাখার মতো্, সুগত। হোস্টেলে থাকলে অবশ্য রুমমেট সুইসাইডের ঘটনা/ গল্প শোনাই যায়, কিন্তু এটা সে রকম কিছু ঘটেছিল বলে শুনিনি।
Deleteগপ্প ভালো হয়েছে বললেন বলে থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।
darun darun ..amio khub bhoy peyechi..kal rate parbar samye anekbar pichane fire dekhechi..janlar dhare bosheechilam kina ! bhoyer jaygata kal rate khub taratari pore aj sakale diner aloy aro samy dhare anekbar polam ....aro erkam gaye kanta deoa galpo chai
ReplyDeleteকিন্তু এক্ষেত্রে ভয়টা তো দিনের আলোতেই...
Deletehaha ..hyna she to nischai, khub je subidhe hoyeche sakale pore ta noy ,calling bell bajlei kirakam akta hocche ,darjar opashe kara thakbe ke jane ba adou thakbe kina!!! bhuter galpo porar je kato side effects :(
Deleteএইবার একটু গুছিয়ে ফিকশন-টিকশন লিখলে হত না?
ReplyDeleteলিখতে তো হতই, লেখাটাই যা সমস্যা।
Delete*লিখলে
Deleteki abostha..bhordupur bela lab er pashe amar sitting room e eka boshe ..AC er shobdo chara pindrop silence...(eta trivandrum er speiality, boddo chupchap shohor)..tar modhye emon ekta golpo...ami swabhabsiddho bahbei prothom tuku pore sottyi e Rashina chilo, ityadi behbe o keno barir kotha bolto na ei sob bhabchilam, Rochonar abhirbhabe sure hoye gelamn, schzophrenia sure...ar bhablam Kuntaladi e to............sesh line e eshe oi rasta chokher samne bari, pashapashi duto room swochokkhe dekhlam, amar ek ati guchono bandhobi ..jar ghorta elebarei Rashina r ghor..sutorang o ghorer bornona to amar chena...........rate aj ghum ashbe (mane jeta 3 te nagad eashe, proti bhuter golpe je somoytake abhishopto bole tokhoni) kina janina, kintu Rashina besh kichudin tara korbe nischit..............
ReplyDeleteSylvia Path The Bell Jar beronor ek masher modhye suicide korechilo, Esther Greenhood mone hoy self portrait ...ei jonyoi ki tumi oke imagery use korecho? Awesome concept..!!
ReplyDeleteসিলভিয়া প্লাথের আত্মহত্যার কথাটা মাথায় ছিল না, কিন্তু ওঁর নিজের ছবিটাও আমার খুব হন্টিং লাগে আর উনি যে নিজেই এস্থার গ্রিনউড সে নিয়েও কোনওই সন্দেহ নেই। সেই জন্য আরকি।
Deleteএ রকম অত্যধিক গুছোনো হোস্টেলের ঘর আমার সত্যি সত্যি ক্রিপি লাগে, দুয়েকটা আমিও দেখেছি। মনে হয় কিছু একটা গোলমাল চলে নিশ্চয় ঘরে। গল্প ভালো লেগেছে বললি বলে থ্যাংক ইউ পারমিতা।
চমৎকার কথাটা লিখতে ভাল না। মুখে না বললে এর ফ্লেভারটাই আসে না। যদি তোমায় সামনে গিয়ে বলা যেত?তবে আরো আনন্দের যে তুমি এক ধাপ এগোলে। জয়যাত্রায় যাও গো আর এভাবেই এগিয়ে আরেকটা ছাপা বই দাও গো। সেটার নাম কিন্তু অবান্তর - ২ হবেনা। অন্য কিছু, অন্য কিছু, অন্য কোন নামে।
ReplyDeleteধন্যবাদ ধন্যবাদ মালবিকা। খুব ভালো লাগল আপনার উৎসাহ পেয়ে।
DeleteKhub bhalo laglo. Mon bhore gelo.
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ শর্মিলা।
Deleteohe guru, knapiye diley tow...jio K jio...ba GO K GO!
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ S, থ্যাংক ইউ।
Deleteদারুণ দারুণ দারুণ দারুন্...
ReplyDeleteমিঠু
আরে থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ মিঠু।
DeleteBapre.darun.kintu kano je ekhon porlam😞
ReplyDeleteএ মা ভূত বলে কিছু নেই তো। কাজেই ভয় পাওয়ারও কিছু নেই।
DeleteBhute na erokom ghotonay amar khub bhoy
DeleteKuntala, tomar golper paridhi bere jachhey! Sottei rudhhasashe pore fellam! Tomar sonar kolom hok!
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ রুণা।
Deleteore baba ki kore likhle, prothome galpo bole bujhtei parini... khanik porbar por bujhlam... eta onyorakomer Abantor er post. roj roj abantor onek oneek egie jachhe. :-)
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ ইচ্ছাডানা। সবই আপনাদের কৃপায় (এটা বিনয় নয়, খাঁটিস্য খাঁটি সত্যি)।
Delete২-৩ দিন ধরে কোনো লেখা পাচ্ছিলাম না বলে একটু একটু রাগ হচ্ছিল | এটা দেখার পর মনে হলো এরকম একটা লেখার জন্য সাত খুন মাফ.. :) ভীষণ ভীষণ ভালো লাগলো পড়ে..
ReplyDeleteআরে সরি সরি অপরাজিতা। বয়স হচ্ছে তো, এখন আর অত তেড়েফুঁড়ে লিখতে পারছি না। তবে তোমার গপ্পটা ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম।
DeleteNotun kichhu balaar nei, sabaai sab bole felechhe. Tobu boli, bhayankar sundor. Aar jaa notun katha bolte paari seta holo-'Banano Galpo' linkta aamaar thiki chokhe poRechhe.:)
ReplyDeleteAmita
আরে অমিতা, আপনার তো দারুণ চোখ। আমি বলে লুকিয়ে লিস্টের লাস্টে একটা ক্যাটেগরি যোগ করেছি, যাতে কেউ দেখতে না পায়, আর আপনি কি না ধরে ফেললেন? সাবাস।
Deleteashadharon laglo Kuntala. Tomar abantor e majhemodhye dhuke pore besh koyebar ritimoto nastanabud hoye hal cherechhi .....ki je akta adrisyo jadujale dendrite er moto sete jai ..... suvechya aro jordar hok ei jadujal ......
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ ইন্দ্রাণী। আপনাকে যে খানিকক্ষণ টেনে রাখতে পেরেছে অবান্তর সেই জেনে দারুণ ভালো লাগছে।
Deletedukkho koshter golpo poRtey bhaalo laagey na.
ReplyDeleteআমারও বিতিকিচ্ছিরি লাগে সম্বরণ। হাই ফাইভ।
Deletedidi vai, ei golpo tar ami copyright cheye rakhlam. aj theke 20 bochor pore jedin cinema banabo, sedin eita diyei suru korbo kintu.
ReplyDeleteবাঃ দারুণ প্রস্তাব অর্ণব। এই আমি আপনাকে কপিরাইট দিয়ে রাখলাম।
Deleteuff..raat 3tey eta pora je ki marattok experience,bhaba jay na..
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ প্রত্যুষা।
Deleteone of the best,script joma korte paren ..
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ।
Deleteএই গল্পটা এতদিন না পড়ে ছিলাম কি করে কে জানে! ভীষণ ভয় পেয়েছি। কিন্তু পুরোটা শেষ না করে উঠতেও পারিনি। আমার যদিও মাঝখানে মনে হচ্ছিল রচনার ঘরে পড়তে গিয়ে পুনরাবৃত্তি হবে না, অন্য কিছু ঘটবে। কী ভাল একটা লেখা!
ReplyDeleteময়ূরী
তোমার দৌলতে আমার এতদিন আগের লেখাগুলোতে চোখ পড়ে ময়ূরী। ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। থ্যাংক ইউ।
Delete