Posts

ভাইর‍্যাল ফিভার ও প্রসেনজিতের ডায়েট

অর্চিষ্মানের গা যেই না গরম হল, গলা খুশখুশ, গা টনটন - রেডি হলাম। দু'ঘরের ঘেরাটোপে এ ভাইর‍্যালের কবলে একজন পড়লে অন্যজন পালানোর আশা থাকে না। পরদিন থেকে আমারও হল। দিনতিনেক পর চোখ খুলে বিছানার দু’প্রান্ত থেকে একে অপরের দিকে তাকানো গেল। তারপরের বিবরণী ধীর হলেও ক্রমোন্নতির। আপাততঃ দুজনেই বিপদসীমার বাইরে। জ্বরজারির সবই খারাপ না। প্রথম তিনদিন বাদ দিলে শারীরিক কষ্টের সঙ্গে সঙ্গে মজাও হল। শুয়ে শুয়ে ইউটিউবে বাংলা সেলেব্রিটিদের ইন্টারভিউতে স্ট্রাগলের কাঁদুনি আর মূল্যায়ন না হওয়ার হাহাকার শুনলাম। হইচইতে নিখোঁজ দেখলাম, নেটফ্লিক্সে দেখলাম কোহ্‌রা। জানি সবাই দেখে ফেলেছে, অর্চিষ্মান অন্ততঃ পাঁচশোবার বলেছে দেখো দেখো, কেন যে দেখিনি কে জানে। কী ভালো, বাবাগো। সবই ভালো, সবাই ভালো, কিন্তু সুভিন্দর ভিকি মহাশয়কে দেখে আমি বুঝভম্বুল, এত ভালো অভিনয় কী করে করে লোকে? তারপর চন্দ্রিলের লীলা, সত্যজিৎ, বিভূতিভূষণ, ডিসটোপিয়া নিয়ে বক্তৃতা আবাআআর শুনে, উৎসব, শুভ মহরৎ, তিতলি, উনিশে এপ্রিল আর সোনার কেল্লা আবাআআর দেখলাম। এবার কিছু পড়লে হয়। দ্য নিউট্রাল বিয়েতে পেয়েছিলাম। আমাদের বৌদ্ধিক লেভেল সম্পর্কে আরও একটি ভুল

মেমেন্টো মোরিঃ শারদীয়া কৃত্তিবাস ১৪৩০

অন্যেরা উপন্যাস কেমন করে লেখেন তো জানি না, আমি কোনওদিন লিখলে কেমন করে লিখব সে নিয়ে একটা কপোলকল্পনা ছিল। অনেক ফেঁদেটেদে। সাড়ে বেয়াল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতা পেঁয়াজরসুন দিয়ে কষিয়ে। যত মনের কথা উগরে, যত গায়ের ঝাল ঝেড়ে। তারপর মে মাস নাগাদ একদিন শৈলেন, প্রতিভাসের কৃত্তিবাসের শৈলেন সরকার, ফোন করে বললেন, উপন্যাস লেখেন? বললাম, রোজই ভাবি লিখব লিখব। শৈলেন বললেন, আর না ভেবে লিখে ফেলুন। অল্প লোভ আর অনেক ভয় হল। লোভ কারণ আমার কল্পনায় উপন্যাস লেখা একটা রোমহর্ষক ব্যাপার। ভয় কারণ এত কঠিং কাজ শিওর আমার দ্বারা হবে না। তারপর শৈলেন অ্যাকচুয়াল হাসির কথাটা বললেন। কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজারের একটা শারদীয়া উপন্যাস লিখতে হবে। আপনাকে সময় দেওয়া হবে দেড়মাস। অর্থাৎ কি না ছয় সপ্তাহ। জয়পুর ভ্রমণের একটা দু'হাজার শব্দের পর্ব নামাতে আমার লাগে সাতদিন। তাও ডাল কচুরি খেলাম না পেঁয়াজ কচুরি, কফি খেলাম না লস্যি, কোন অটোভাইসাব আমাকে কী দাগা দিলেন-এর ফিরিস্তি। যদি সেই স্পিডেও লিখি, আর যদি শব্দসীমার লোয়ার লিমিটও ধরি, কুড়ি হাজার শব্দ স্রেফ টাইপ করতেই আমার লেগে যাবে দশ সপ্তাহ। তারপর ধরুন গল্পে তো কুন্তলা সকালবেলা দু'নম্বর

জয়পুর ৬ (শেষ): জ্যামিতিবাক্স ও যন্তরমন্তর

সকালে উঠে যথারীতি অসামান্য ভালো ব্যবহারের সঙ্গে চা পেলাম। হয় দুপুরবেলা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা সেট অফ কর্মীরা আর টি ডি সি গনগৌরের দখল নেন, নয়তো ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড কেস। আজ শেষ দিন। বিকেল পাঁচটা পঁয়তাল্লিশে আজমের শতাব্দী জয়পুর জংশনে ঢুকবে, আমাদের তুলে (যদি না অন্য ট্রেনে উঠে বসে থাকি) পাঁচটা পঞ্চাশে দিল্লির দিকে রওনা দেবে। যা করার তার আগে করে নিতে হবে। শুরুতেই মিসঅ্যাডভেঞ্চার। চাঁদপোল বাজারের মিশ্র রাজাজি কা রাস্তায় মহাবীর রাবড়ি ভাণ্ডার। ইউটিউবে দেখেছি ইয়াবড় বেজারের রুটি আর আলুর তরকারি খাচ্ছে সবাই বসে, সঙ্গে রাজস্থানী কুইজিনের কাঁঠালিকলা, গোটাগোটা লংকার আচার। লাস্টে রাবড়ি। সকাল প'নে নটা নাগাদ পৌঁছে দেখি দোকানের ঝাঁপ ফেলা, বাইরে দাঁড়িয়ে একজন টুথব্রাশ চিবোচ্ছেন। সাড়ে এগারোটায় খুলবে। ধুত্তেরিকা বলে যন্তরমন্তরের দিকে এগোলাম। বেশি দূর না, হেঁটেই যাব। এঁরা যে ব্যবসা করতে জানেন, ভালোবাসেন, বোঝা যায়। শহর জুড়ে বাজার। গমগমে, জমজমে। চৌমাথার এক কোণে ফুলের বাজার পেরিয়ে, একে একে খুলতে থাকা দোকানের সামনের ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে যন্তরমন্তরে পৌঁছলাম।টিকিটের দাম প্রণামীকাটিং। বাহান

জয়পুর ৫ঃ বেগুনি হাতি, বান্টা, কুমার শানু

Image
আমের প্যালেস ঘোরা শেষ, অরিজিন্যাল ই রিকশা দাদা একবার ফোন করে ফেলেছেন, কিন্তু রামসিংজী ছাড়বেন না, আরেকটা জায়গায় যেতে হবে। সমস্ত টুরিস্ট স্পটের একচেটিয়া, শপিং পয়েন্ট। সকলেই বলেন, কিনতে হবে না, শুধু দেখবেন। তিনতলা দোকানের বাইরে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার ঘটল। এক ভদ্রলোক ব্লক প্রিন্টিং করে দেখালেন। সে অসামান্য ব্যাপার। শাকপাতা থেকে নিষ্কাশিত সবুজ রঙে ব্লক চুবিয়ে কাপড়ে চেপে ধরে হাতির বর্ডার আঁকলেন। তারপর আরেকটা ব্লক ফুলটুল থেকে নিষ্কাশিত বেগুনি রঙে চুবিয়ে সাবধানে আগের হাতির শুঁড়ে শুঁড় আর ল্যাজে ল্যাজ মিলিয়ে চেপে ধরতেই সবুজ আউটলাইনের ভেতর বেগুনি বডিওয়ালা হাতি রেডি। তারপর গোটা কাপড়টা আরেকটা কী জলে চুবোলেন, ব্যাকগ্রাউন্ড রং হয়ে গেল। একঘণ্টা শুকিয়ে চুবোলে নাকি রং আরও বেশি ফুটত। দেখেশুনে এমন হাহাকার হল। এই কাজটা কেউ আমাকে করতে দাও গো। কিচ্ছু চাইব না, ঘ্যানঘ্যান করব না, খালি এককোণে বসে রঙে ব্লক চুবোব আর হলুদ সবুজ গোলাপি বেগুনি হাতি আঁকব।  লিফটে করে ক’তলায় যেন গেলাম। ওঁরা এত কিছু দেখাতে চাইলেন, বেডকভার, ওয়াল হ্যাংগিং, পেখমমেলা ময়ূর, আমার কুর্তি, অর্চিষ্মানের শার্ট। আমরা বললাম, টেইম নেই টেইম নেই

চোদ্দ বছরে

একটা বাচ্চা জন্মে অ্যালজেব্রায় পৌঁছে যায়, ইলিয়াডের যুদ্ধ শুরু হয়ে শেষ হয়ে যায়, সীতা কিডন্যাপ হয়ে ফিরে আসেন। ব্লগবয়সের চোদ্দ বছর মানুষের হিসেবে কত? একশো চোদ্দটোদ্দ হবে। আমার সঙ্গে যাঁরা ব্লগ লিখতে শুরু করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ক'জন আর ব্লগ লেখেন আমি শিওর নই। যাঁরা লিখছেন, প্রাণভরে লিখছেন। অন্য কোনও সবুজতর প্রান্তরে। সে প্রান্তরে তাঁদের মুভ করার সিদ্ধান্ত বুঝতে খুব বেশি বুদ্ধি খরচ করার দরকার নেই। ট্রেন আবিষ্কার হলে কেউ গরুর গাড়ি চড়ে না। ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা হলে কেউ তালপাতার পুঁথি বগলে নিয়ে ঘোরে না। লেখকরা (যদি সাহস করে ব্লগারদের লেখক বলার সাহস দেখাই-ই) অন্য মাধ্যমে সরে গেছেন যেখানে পাঠক আছেন। পাঠকরা সেই মাধ্যমে সরে গেছেন যেখানে লেখক আছেন। আমি অবান্তরে ঝাণ্ডা গেড়ে বসে আছি। ফুটফলস কমতে কমতে শ্মশানের সন্নাটা, আইবলস নিভতে নিভতে অমাবস্যার অন্ধকার। আমাকে ভুল প্রমাণ করার বা আশ্বাস দেওয়ার দরকার নেই। ব্লগস্পটে স্ট্যাটস বলে একটা ব্যাপার আছে। সত্যিটা আমি জানি। সরতে পারিনি। সরতে পারি না বলে নয়। কোনও ব্যক্তি, নীতি, আদর্শের সঙ্গে লেগে থাকার বদভ্যেস আমার ছিল না কোনওদিন। হয়তো সেই চমকটাই আমাকে

জয়পুর ৪ঃ আমের প্যালেসে পরকীয়া

Image
ভালো ঘুম যে ভালো খাওয়ার থেকে একশোগুণ গুরুত্ব এবং আরামের আবারও প্রমাণ হল। পরদিন সকালে জল পর্যন্ত খাইনি, অথচ সমস্ত শরীর চাঙ্গা। অন্যদিনের মতো শরীরের সমস্ত কোষে ঘুম আর আলস্য ঝুলের মতো লেগে নেই। এও বুঝলাম যে পরিশ্রম বা ক্লান্তি, প্রপার ক্লান্তি, ঘুমের জন্য কতখানি জরুরি। অধিকাংশ দিন ঠিক করে ক্লান্তই হই না, ঘুম আর আসবে কী করে। অর্চিষ্মানের বেডসাইড টেবিলে চায়ের কাপ নেই, কাজেই বেচারা কাল রাতে চা পায়নি। তখন পাঁচটাও বাজেনি, চা পাওয়ার কোনও চান্সই নেই। হাতের ওপর বসে রইলাম আড়াই ঘণ্টা মতো, সাড়ে সাতটা নাগাদ প্রাণ হাতে করে ফোন করলাম। একটি ভদ্র গলা গুড মর্নিং বলল। চা পাওয়া যাবে? চাঙ্গা গলায় বললেন ভদ্রলোক, অফ কোর্স। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ইউনিফর্ম পরা ভদ্র ছেলে চা নিয়ে চলে এল। চা খেতে খেতে ভাবলাম, অর্চিষ্মান উঠতে উঠতে গনগৌরের সার্ভিস এই স্ট্যান্ডার্ড মেন্টেন করতে পারলে হয়। যদিও হোটেলের ব্রেকফাস্ট ফাউ, কিন্তু দাম দেওয়া সার্ভিসেরই যা ছিরি ফ্রি খাবার খাওয়ার সাহস হল না। তবে সেটা প্রধান কারণ নয়। জয়পুরে গিয়ে হোটেলের ডিমপাউরুটি খাওয়া পাপ। ইউটিউবে কোটি কোটি ব্রেকফাস্টের জায়গার ভিডিও দেখেছি। কিন্তু সকাল সকাল

জয়পুর ৩ঃ সিটি প্যালেস

Image
সিটি প্যালেসের এন্ট্রি ফি মাথাপিছু পাঁচশো টাকা। মিউজিয়াম আর লাইট অ্যান্ড শো মিলিয়ে। টিকিট কেনার পর থেকেই থানে থানে সাদা জামা, লম্বা ল্যাজওয়ালা লাল পাগড়ি পরা অপেক্ষারত কর্মচারীরা ন্যাভিগেশনে সাহায্য করবেন। মিউজিয়ামটিয়াম, আমার মতো লোকের কাছে অপচয়। কত দেখার জিনিস, কত মূল্যবান জিনিস, নব্বই শতাংশই স্মৃতি থেকে বেরিয়ে যায়। বা তেমন করে দেখাই হয় না। এক সপ্তাহও হয়নি (না হয়েছে, আট দিন) সেভাবে কিছু মনে পড়ছে না। খালি মনে পড়ছে প্রাসাদের বিরাট চাতাল পেরিয়ে প্রথম যে ঘরটায় গেলাম তার সিলিং থেকে ঝুলছিল বিরাট ঝাড়লণ্ঠন। চারদিকের দেওয়াল ঘিরে প্রমুখ সোয়াই সিংদের ছবি। আমিআপনি যদি একখান একখান মানুষ হই তাহলে এঁরা সোয়াখান। সেই থেকে সোয়াই। সিংটাও পয়দায়েশি না। আকবরের দেওয়া। অধিকাংশই বাঁ দিকে মুখ ফিরিয়ে, কেউ সোজা দাঁড়িয়ে, কেউ চেয়ারে বসে। নিচে তাঁদের কর্মকাণ্ডের বিবরণ। সোয়াখানই বটে। শহর গড়েছেন, লাইব্রেরি খুলেছেন, কত বই কত ভাষা থেকে কত ভাষায় অনুবাদ করেছেন, গলফ কোর্স বানিয়েছেন, আর পোলো তো খেলেইছেন। পোলো হল গিয়ে জয়পুরের রাজাদের একটা লক্ষক। পাগড়িধারী ভাইসাবের তর্জনী অনুসরণ করে চাতাল পেরিয়ে ঢুকলাম আরেকটা প্রাসাদে। প্

জয়পুর ২ঃ গুলাব জামুন, গাট্টা কারি ও হাওয়ামহল

Image
ট্রেনে উঠতে ভুল। নামতেও ভুল। জয়পুর জংশনে নামার কথা আমাদের। কামরার সবাই নামছে দেখে আমরাও নেমে পড়লাম। ওটা গান্ধীনগর। জয়পুর জংশনের আগের স্টেশন। আমাদের হোটেল আবার  জয়পুর জংশনের নাকের ডগায়। কোই বাত নেহি, উবার ডেকে চলে যাওয়া যাবে। ডাকলাম। ভাইসাব বললেন, আপ কাহাঁ হো? আমরা বলছি, যাহাঁ বহোৎ সারে অটো কা ভিড় উধার। ভাইসাব বললেন, ম্যাডাম, পুরা জয়পুরমে বহোৎ সারে অটো কা ভিড় হ্যায়। তখন ফোন নামিয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করতে হল, আমরা কোথায়। গেট নাম্বার টু-তে। তথ্য সরবরাহ করে দিলাম, ভাইসাব একনম্বর গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন, ব্যাজার গলায় বললেন, আ রহা হুঁ। এলেন। শহরের পথে ভেসে পড়লাম। অর্চিষ্মান অটোর ওই ফোঁকর দিয়ে, আমি অটোর এই ফোঁকর দিয়ে বডি অর্ধেক বার করে  জয়পুর গিলতে গিলতে চললাম। দিল্লিতে পাঁচ কিলোমিটার পরপর ভাঙা বাড়ির খণ্ডাংশ দেখা যায়, এখানে মোড়ে মোড়ে একটা লাল পাথরের হয় সিংদরজা নয় উঁচু মিনার টাইপের জিনিস। সেগুলো অরিজিন্যাল নাকি পরবর্তীতে শহরের চরিত্রের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে বানানো জানি না। সিংদরজাগুলো অবশ্যই আগেকার। অর্চিষ্মান ভুলধরা জেঠুদের মতো বলল, পাথরগুলো তো লাল, গোলাপি তো না? আমি বললাম, একই হল। আমাদের হোটেল আর