Posts

Showing posts from February, 2019

Closeness lines

Image
শিল্পীঃ Olivia de Recat

উত্তরাধিকার

বইমেলায় সৃষ্টিসুখের স্টলে নাকতলার মায়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিতে সৌরাংশু বলল, আপনি একেবারে আপনার ছেলের মুখ পেয়েছেন। মা অবশ্য মনে করেন অর্চিষ্মান বাবার চেহারা পেয়েছে, কিন্তু পাওয়াপাওয়ির ব্যাপারে নাকচোখমুখের থেকে রকমসকম, হাবভাব ম্যাটার করে বেশি। আমি আমার মায়ের তেমন কিছুই পাইনি কিন্তু কথা বলার ধরণখানা পেয়েছি বলে সবাই বলে আমি মায়ের মেয়ে। এদিকে আমি যে বাবার মেজাজখানা নিক্তি মেপে পেয়েছি কিন্তু সে কি না বাইরে প্রকাশ পায় না, বুকের ভেতর ধিকি ধিকি জ্বলে, তাই লোকে ভাবে আমি বাবার কিছুই পাইনি। অথচ আমার মতে জেনেটিক উত্তরাধিকারের মধ্যে নাক চোখ ভুরু চোয়ালের মিলের থেকে ঢের ইনটারেস্টিং হচ্ছে পায়ের ওপর পা তুলে বসার মিল। তাকানোর মিল। আমি আর আমার জেঠু দুজনেই মন দিয়ে শুনলে ঘাড় কাত করে চোখ সরু করে শুনি। আমার বাবা বাড়িতে এঘর ওঘর চলতেফিরতে মাঝে মাঝে ”ব্যোম ভোলে” বলে ওঠেন, ইদানীং আমারও হঠাৎ হঠাৎ মুখ থেকে “ব্যোম ভোলে” বেরিয়ে পড়ছে। ইচ্ছে করে নয়, প্রক্রিয়াটা প্রায় হেঁচকির মতো অনৈচ্ছিক। প্রথম যেদিন ঘটেছিল অর্চিষ্মানের নাকে চা ঢুকে গিয়ে একশা কাণ্ড হয়েছিল, এখন খালি মাথা নাড়ায়। তবে নাকচোখ দিয়ে মিল বিচার আনইন্টার

বইমেলা ২০১৯

অনেক বয়স হয়েছে কবে কখন কোথায় কী বলেছি মনে থাকে না, হয়তো আমিও এ বিষয়ে গলার শিরা ফুলিয়েছি কখনও। বইমেলায় কফি কেন থাকবে, মাছভাজা কেন থাকবে, মুখের ছবি আঁকার স্টল কেন থাকবে, জ্যোতিষী কেন থাকবে, গিটার কেন থাকবে, বিরিয়ানি কেন থাকবে, অম্বল কেন থাকবে, হজমি গুলি কেন থাকবে। বইমেলায় যদি কিছু থাকতেই হয় তাহলে থাকবে বই। শত শত কাগুজে খসখসে বই, যা মনের জানালা খোলে, জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন ঘটায় হয়, বই না-পড়া মানুষের থেকে বই পড়া মানুষকে বেটার প্রতিপন্ন করে। আপনি সে রকম বইমেলা দেখেছেন কি? আমি দেখেছি। এই দিল্লিতেই হয়। প্রগতি ময়দানে। বিশ্ব বইমেলা। রাজধানী বলে কথা, গুরুগম্ভীর প্রকাশনা সংস্থারা আসেন। যেদিকে তাকাও বই আর বই আর বই। আর গুরুগম্ভীর জনতা। ভুরু কুঁচকে বইয়ের পাতা উল্টোচ্ছেন। এগরোল খাননি জীবনেও। মেলা চলছে না শোকসভা চট করে বুঝে ওঠা মুশকিল। কলকাতা বইমেলাটাকে আর যাই হোক, মেলার মতোই দেখতে লাগে। পাঁচ বছর বাদে সেই মেলায় গেলাম। প্রথম দিকে নানা রকম   হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটতে শুরু করল। অর্চিষ্মানের ওই সময় কাজ থাকবে, কাজেই কলকাতা যাওয়া হবে না। মাবাবার সঙ্গে মেলায় ঘুরতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু অভ্যেস

অমৃতসর ৫ঃ ডাল, পরোটা, আমসত্ত্ব

Image
আমসত্ত্ব, চুরন, হজমি গুলি ও যাবতীয় মুখশুদ্ধি   সহকর্মী বলছিলেন, অমৃতসর যাচ্ছ যখন আমসত্ত্ব নিয়ে এস, দাআআরুণ। পথের দু’পাশে আমগাছের বাড়াবাড়িটা চোখে পড়েছিল আগেই। রণজিৎ সিং-এর প্রাসাদের বাগানকে আম্রকুঞ্জ বললেও বেমানান হয় না। কাজেই আমসত্ত্ব ব্যাপারটায় ওঁরা অনেকদিন হাত পাকিয়েছেন ধরে নেওয়া যায়। খাতার ওপর পেন বাগিয়ে জানতে চেয়েছিলাম, কোন দোকান কোন দোকান? সহকর্মী বিপন্ন মুখ করেছিলেন। নাম তো জানি না, রাস্তার পাশের র‍্যান্ডম দোকান। সেখানেও  দারুণ আমসত্ত্ব পাবে। কিন্তু আমরা কি না টুরিস্ট, তারপর রিসার্চ করে করে অভ্যেসটাই গেছে খারাপ হয়ে, আমরা অমৃতসরের ‘বেস্ট’ আমসত্ত্বওয়ালার নাম জানতে চাইলাম গুগলে।   সবাই একবাক্যে বলল, রামলুভায়া আমপাঁপড়ওয়ালা।   লরেন্স রোডে একটি পিপল কি পেড়ের নিচে রামলুভায়ার  ঠেলাগাড়ি। বেলা এগারোটা নাগাদ জনা পাঁচেক খদ্দের দাঁড়িয়ে আছেন। বিবিধ বয়ামে গোল, চৌকো, গুঁড়ো, চ্যাপ্টা হজমিগুলি। কাঁচের বড় চৌকো বাক্সে কার্পেটের মতো গোটানো সাত রকমের, হলুদ থেকে গাঢ় বাদামীর মাঝে সাত শেডের, সাত ভ্যারাইটির আমসত্ত্ব। আপনি খেতে চাইলে ছুরি দিয়ে কেটে আপনাকে পরিবেশন করা হবে। আমাদের যে কোনও

অমৃতসর ৪ঃ কচৌরি, কুলচে, লস্যি

Image
অমৃতসরের খাওয়ার জায়গা নিয়ে রিসার্চ করার থেকে ঝামেলার কাজ কমই আছে। টিক্কা থেকে ডাল ফ্রাই থেকে কুলচা থেকে লস্যি থেকে চাট থেকে আমসত্ত্ব - সবেরই লিজেন্ডারি দোকান থিক থিক করছে শহরে। তার ওপর কোন দোকান আগে ভালো ছিল, এখন পড়ে গেছে, কারা কারা হিডেন জেমস, পাশাপাশি দুটো দোকানের কোনটা আসল কোনটা জালি সে সব বাড়তি কনসার্ন তো আছেই। আবার নামের অল্প অদলবদল ঘটলে মিসগাইডেড হওয়ার চান্স খোলা। মানে কানহা সুইটস আর কানহালাল সুইটস, অশোক কুলচা আর অশোককুমার কুলচেওয়ালে কোনটায় খেলে ঠকবেন (কিংবা ঠকবেন না) সে নিয়ে চোখকান খোলা রাখতে হবে।   তার ওপর আমরা থাকি দিল্লিতে। সহকর্মী থেকে সহযাত্রী থেকে ওলা উবারের ড্রাইভার ভাইসাব পর্যন্ত অমৃতসরের খাবারদাবার নিয়ে ইনফর্মড ডিসকোর্স চালাতে পারেন। না পারলেও, রিসোর্স পার্সন জানা আছে   বেশিরভাগেরই, হেল্পফুল হয়ে আলাপ করিয়ে দেবেন। তবু আমরা রিসার্চ করেই গিয়েছিলাম। কারণ আমাদের হাতে দেড় দিন আর এই দেড় দিনে রাডারলেস শিপের মতো দৌড়োদৌড়ি করে লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে না। কী খাব, কোন দোকানে খাব, কখন খাব - সব আমাদের ছকা ছিল।   চা-ব্রেকফাস্ট অমৃতসরে ভারতবর্ষের বাকি সব শহরের মত

অমৃতসর ৩ঃ জালিয়ানওয়ালাবাগ, পার্টিশন মিউজিয়াম

Image
দেখেশুনে আমি সিদ্ধান্তে এসেছি নেচার, নারচার দিয়ে সবটা ব্যাখ্যা করা যায় না। কিছু লোক স্রেফ খুঁতো প্রোগ্রামিং নিয়ে জন্মায়। উদাহরণ, জেনারেল ডায়ার। বিচারের সময় নাকি বলেছিলেন নেহাত গাড়ি ঢোকার জায়গা ছিল না, না হলে উনি মেশিনগানওয়ালা গাড়ি নিয়ে ঢুকে ভিড়ের ওপর গুলি চালাতেন।   গুরুদ্বারার নাকের ডগায় জালিয়ানওয়ালাবাগ। মাঠের মাঝখানে স্টেজ বেঁধে আলোচনাসভা চলছিল। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড নিয়ে গবেষণামূলক একটি বই লিখেছেন এক মহিলা। বইয়ের নাম, লেখকের নাম খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল। ভদ্রমহিলা বলছিলেন, বইয়ের জন্য রিসার্চ করতে গিয়ে, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংসতার নমুনার নতুন করে মুখোমুখি হয়ে ওঁর ঘুম উড়ে গিয়েছিল। হাজার হাজার লোক, অসহায়ের মতো মরে গেল, কেউ বাঁচাতে এল না। ভদ্রমহিলা বলছিলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে জালিয়ানওয়ালাবাগ পিকনিক স্পট নয়। জায়গাটার চেহারাটা এখন পিকনিক স্পটেরই মতো হয়েছে সন্দেহ নেই। স্কুলের বাচ্চা, কলেজের ছেলেমেয়ে, প্রেমিকপ্রেমিকা, সিংগল, কাপল, ইট’স কমপ্লিকেটেড - গিজগিজ। গুলির গর্ত খুঁজে পাশে দাঁড়িয়ে ভিক্টরি সাইন দেখিয়ে ছবি তুলছেন দর্শনার্থীরা। কেউ কেউ ঘাসে শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। হাই