Posts

Showing posts from October, 2020

একটি ছোট্ট বিপ্লবের গল্প

ঘটে যাওয়ার এক সেকেন্ড আগে পর্যন্ত ঘটনাটা যে ঘটতে পারে কেউ কল্পনা করেনি। ঘটে যাওয়ার পরের মিনিমাম মিনিটতিনেক জনতার মুখেচোখে অবিশ্বাস লেপে ছিল। কত হবে তখন, রাত সাড়ে ন'টা? ঘাম, ক্লান্তি, সিঁদুর মাখামাখি মুখ, চুল, মাথা। ধোঁয়ায় চোখ জ্বলছে, ধুনোর গন্ধে লাংস বলছে, ছেড়ে দে। ঢাকিকে সরিয়ে দিয়ে, পাড়ার সুন্দর যুবকের আঙুল দায়িত্ব নিয়েছে ঢাকের কাঠির। সারা বছর দাঁড়িপাল্লায় চানাচুর আর বেসন মাপা আঙুল যে অত সুন্দর, খেয়ালই হয় না। উল্টে যাওয়া ধুনুচির আগুন উড়ে উড়ে পড়ছে, চেঁচিয়ে উঠছে জনতা, দৌড়ে গিয়ে গনগনে নারকেলের ছোবড়া সরিয়ে দিচ্ছে সাবধানীর দল, টলমল খালি পা ওর ওপরেই এসে পড়বে যে কোনও সময়। পড়লে তেমন কিছু যাবে আসবে না, কারণ বিকেলের সিদ্ধি এতক্ষণে ব্রেনের ভেতর সাম্রাজ্য ফেঁদে বসেছে। বিচক্ষণ আড়চোখ হাতঘড়ির দিকে, এবার শেষ কর সব। রাত হয়ে যাচ্ছে। বারণে তেমন জোর নেই। থামলেই সব শেষ। কাল সূর্য উঠবে কি না কেউ বলতে পারে না, এক বছর বাদে কে কোথায় থাকে না থাকে, মা দুর্গাও জানেন না। নাচ ফের পিক আপ নিয়েছে এমন সময় ভিড়ের ভেতর থেকে কে যেন ছিটকে বেরিয়ে এল। কেউ চিনতে পারল, অধিকাংশই পারল না। যারা পারল তারা রুদ্ধশ্বা

ফাদার ব্রাউনঃ টগবগ শারদ সংখ্যা ১৪২৭

Image
G K Chesterton -এর The Blast of the Book টগবগ কিশোর পত্রিকার জন্য অনুবাদ করেছিলাম সম্ভবতঃ প্রায় বছর দুয়েক আগে। কিছুদিন বাদে ধৈর্য হারিয়ে গল্প অবান্তরে ছাপিয়ে দিয়েছিলাম, কাজেই আপনাদের অনেকেরই পড়া থাকবে। এ বারের টগবগ শারদীয়া সংখ্যা ১৪২৭ সে অনুবাদ প্রকাশ পেয়েছে, 'ফাদার ব্রাউন ও অভিশপ্ত বই' নামে। গল্পটি ফাদার ব্রাউনের বাকি ৫৩টি ছোটগল্পের মতোই কমবেশি, সাসপেনশন অফ বিলিফ-কে একটা বাড়াবাড়ি উচ্চতায় নিয়ে যেতে হয়, তেমন রক্তারক্তি মারমার কাটকাট থাকে না, দর্শন ও মানবচরিত বিশ্লেষণ সহকারে রহস্যের যবনিকা পতন ঘটে। চরিত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ফাদার ব্রাউন সম্পর্কে বলতে গেলে, তিনি পেশায় রোম্যান ক্যাথলিক পাদরি, সময়ে সময়ে রহস্যের সমাধান করে থাকেন, গোয়েন্দা অগোয়েন্দা মিলিয়ে বিশ্বসাহিত্যে ওঁর মতো লাইকেবল চরিত্র খুব বেশি পাওয়া যাবে না। গল্পটা অনুবাদ করতে ভালো লেগেছিল। এক, গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে একখানা বই। বই নিয়ে লেখা বই/গল্পদের প্রতি আমার পক্ষপাতিত্ব আছে। দুই, গল্পটা একাধারে রহস্যজনক এবং মজাদার; যে কম্বিনেশনটা চট করে দেখা যায় না। তিন, ফাদার ব্রাউনকে বাদ দিলে তিন চরিত্রওয়ালা গল্পের বাকি দুই চ

প্রেমহীন পুজো

আমি এ বছর নীল আকাশ দেখিনি, সাদা মেঘ দেখিনি, শিউলিফুল দেখিনি, কাশফুলও দেখিনি। কাশফুল জীবনে কমই দেখেছি, ক্বচিৎকদাচিৎ ট্রেনের কামরার জানালা দিয়ে। ময়লামতো ঝাড়ুর মতো দেখতে, সিনেমার দুধসাদা কাশফুলের মতো নয়। বেরসিকেরা বলবেন, সত্যি হলে তবে তো দেখবে। দুধের মতো কাশফুল, দিঘির মতো আকাশ, তুলোর মতো মেঘ - সব পাখি পড়ে পড়ে আমাদের কল্পনায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্যালেন্ডারে সেপ্টেম্বরের সতেরো তারিখ পেরোলে যে নাক যে পুজো পুজো গন্ধ পায়, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলা শুনলে গলার ভেতর যে দলা পাকায় সে সবও আসলে তৈরি করা আবেগ, সোশ্যাল কন্সট্রাক্টস। আমি বলছি না। কারণ আমি বেরসিক নই। কারণ আমার গলার ভেতর সত্যি সত্যি দলা পাকায়। বিশেষ করে মামাতো বোন যখন দিদি দূরে আছে শুনতে পাবে কি না পাবে না ভেবে হোইয়াটসঅ্যাপে মহালয়ার ফাইল আপলোড করে পাঠায় তখন তো পাকায়ই। কিন্তু এটা মানতে হবে, পুজোর টেল-টেল সাইন হিসেবে আকাশ, মেঘ, কাশফুলের থেকে ঢের বেশি কার্যকরী বাঁশ, ত্রিপল, মূর্তি, মাইকের ত্রাহি গান। জুতোর অ্যাড, শাড়ির অ্যাড, ডিসটেম্পারের অ্যাড, নারকেল তেলের অ্যাড। সেগুলোও আমাদের কল্পনার পুজো গড়ায় মোক্ষম অবদান রাখে। সে সব অ্যাডে

মজাহীন পুজো

এবারের পুজোয় মজা হবে না, বলছেন কেউ কেউ। মাস্ক পুড়িয়ে কাছা উড়িয়ে আনন্দ করা যাবে না। হইহুল্লোড় নেই, দৌড়োদৌড়ি নেই, ভিড়ভাট্টা নেই। চাঁদা ওঠেনি বেশি। আলো জ্বলবে না। এ পুজো আবার পুজো নাকি? পুজোয় আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসার সময় তুতো ভাইবোনেরা (কেউ কেউ) হুবহু এই কথাই বলত। কোনও মানে হয়? পুজোয় সবাই কলকাতায় আসে, আর আমরা কি না মফঃস্বলে যাচ্ছি? তার থেকে বরং তোমরা এস, দেখে যাও কেমন হয় শহরের আনন্দের পুজো। তোমাদের দুঃখের পুজো উজিয়ে দেখতে যাওয়ার থেকে ঢের বেশি যুক্তিপূর্ণ হবে না কি সেটা? তবু যাতায়াত হত দু'পক্ষেই। এখন যেমন ইচ্ছের জয় সর্বত্র, তখন তেমন কর্তব্যবোধের জমানা ছিল। অপছন্দের বা অসুবিধেজনক দূরত্বে থাকা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও নিয়ম করে যেত লোকে। দুঃখের পুজো সইতে হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও। শহরতলির লোকদের পক্ষেও এই যাতায়াত খুব বেশি আনন্দের ছিল না। এমনিতে তো লোক-আসাসংক্রান্ত খাটনি - ডাল ভাতের বদলে ঘি ভাত, ট্যালটেলে মুসুরের বদলে ভাজা মুগ, চারাপোনার ঝোলের বদলে কচি পাঁঠার কষা, শুঁটকো চালতার চাটনির বদলে কাজুকিশমিশ পায়েস, বেডকভার বদলানো, জানালার পর্দা পাল্টানো। সবের ওপর উক্ত অতিথিদের আনন্দের পুজো ছেড়ে দ

স্যার পোয়্যারো!

Image
  উৎস গুগল ইমেজেস আত্মপ্রকাশের শতবর্ষে এর থেকে ভালো কিছু এরক্যুল পোয়্যারোর জীবনে ঘটতে পারত কি? আগাথা ক্রিস্টির প্রথম উপন্যাস প্রকাশ এবং পোয়্যারোর একশোতে পা রাখার পোস্ট প্রায় রেডি, কিন্তু এই খবরটা উদযাপনের তর সইল না। ডেভিড সুশে পঞ্চাশ বছর ধরে নাটক, টিভি, সিনেমায় অভিনয় করছেন, বহু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এমনকি ইন্সপেক্টর জ্যাপ পর্যন্ত সেজেছেন। ওঁকে যখন লোকে জিজ্ঞাসা করেছে, এতদিনের সব অভিনয়ের অভিজ্ঞতা সব যখন পোয়্যারোর সমুদ্রে ডুবে মরল, সবাই যে শুধু আপনাকে বাতিকগ্রস্ত বেলজিয়ান ডিটেকটিভ বলেই চিনে রাখল, তাতে রাগ হয় না? অবিচার মনে হয় না? ডেভিড সুশের যত ইন্টারভিউ দেখেছি, পড়েছি, শুনেছি, প্রশ্নটা অবধারিত এসেছে এবং সুশে অবধারিত হাসিমুখে বলেছেন, সেটা হওয়াই তো স্বাভাবিক। দুঃখ পাব কেন বালাই ষাট, এ তো পরম পাওয়া।  বইয়ের পোয়্যারোর থেকে টিভির পোয়্যারো এককোটি গুণ ভদ্র, নম্র, বিনয়ী ভালোমানুষ। তাই টিভির পোয়্যারোকে আমার এককোটি গুণ ভালো লাগে। সে-ই পোয়্যারো যখন নাইটহুড পেলেন, দৌড়ে সবাইকে খবরটা দিতে ইচ্ছে হল। অভিনন্দন, স্যার পোয়্যারো!

অফসিজন রেজলিউশন

নিজেকে পছন্দ করার আমার যে দেড়খানা কারণ, তার মধ্যে গোটা কারণটা হল যে আমি এমন একজন লোক যার সময়ের টানাটানি হয় না। কখনও হয়নি। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের আগে সাড়ে ন'টায় ঘুমোতে গেছি, পরীক্ষা শুরুর আগের দিন মায়ের সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়েছি, তেমন ঠাণ্ডা পড়লে নাওয়া ভুললেও খাওয়ার সময় ঠিক বার করে নিয়েছি। আমার গর্বের সেই জায়গা টলতে বসেছে। আমারও সময়ের অভাব ঘটেছে। দিনটা চব্বিশ ঘণ্টার না হয়ে আটচল্লিশ ঘণ্টার কেন হচ্ছে না সেই নালিশটা করছি না জাস্ট এই জন্য কারণ আমি অলমোস্ট নিশ্চিত বাড়তি চব্বিশ ঘণ্টাও কাজের পেছনে বা কাজ-করছি-না নখকামড়ানির পেছনেই খরচ হয়ে যাবে। আরাম কিছুই হবে না। ওই নরকভোগের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা এনাফ। সময় নেই মানে কী? রাতে কি ঝাড়া সাত ঘণ্টা ঘুমোচ্ছি না? দিনে তিনবার ভরপেট, সাতবার কিছুমিছু খাচ্ছি না? ইউটিউবে হাতে বানানো উনুনে, কাঠের জ্বালে অথেনটিক বিরিয়ানি রাঁধা দেখছি না? আমার দৈনিক টু ডু লিস্ট কি লিওনার্দো দা ভিঞ্চির টু ডু লিস্টের মতো দেখতে হয়ে গেছে? অফ কোর্স, না। কিছুই বাদ পড়েনি, সবই চলছে, চলার ধরণ খালি পালটে গেছে। আগে যেমন বুক বাজিয়ে আড়াইঘণ্টা একটানা ক্যান্ডি ক্রাশ খেলা যেত,