Posts

Showing posts from July, 2021

মন ভালো মন খারাপ

মিনিবাসের জানালা একটা অত্যাশ্চর্য ব্যাপার। খোলা থাকলে বৃষ্টির ছাঁট ঢোকে, ধুলো ঢোকে, ধোঁয়া ঢোকে, কনুই বেরিয়ে থাকলে পাশ থেকে কম্পিটিশন দেওয়া মিনিবাস এসে গুঁড়িয়ে দেয়, খালি হাওয়া ঢোকে না। মামাবাড়ির খাওয়া খেয়ে, সেই মিনিতে বসে হাওড়া পর্যন্ত আসা, সোজা কথা নয়। ওই শক্ত কাজটাই আমরা করতাম, আমি আর মা, তিনমাসে ন্যূনতম একবার। রিষড়া থেকে দুপুর দুপুর বেরিয়ে কসবা পৌঁছে সন্ধে ছ’টার সময় গলা পর্যন্ত গিলে রথতলা মিনিতে সেদ্ধ হতে হতে হাওড়া পর্যন্ত আসা। একটাই রক্ষা, ডিপো থেকে উঠতাম বলে সিট পাওয়া যেত। জানালার পাশে, কিন্তু তাতে সুবিধে কিছু হত না। হাওড়ায় নেমে, আমি আর মা, মা আর আমি, নিজেদের একটা প্রাইজ দিতাম। যত রাতই হোক না কেন, ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিক দিয়ে ঢুকলে ডানদিকে সারি সারি উজ্জ্বল দোকানগুলো থেকে দুজনে দুটো লিমকা খেতাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। এক নম্বর থেকে ব্যান্ডেল লোকাল ছেড়ে যাচ্ছে নাকি তারকেশ্বর ঢুকছে পাঁচ নম্বরে, কেয়ার করতাম না। যদিও সবাই বলত থামস আপ হজমের পক্ষে বেটার, আমি আর মা দুজনেই লিমকা প্রেফার করতাম। লিমকা এখনও আমার প্রিয়তম কোল্ডড্রিঙ্ক। তারপর থামস আপ। তারপর কোকা কোলা। পেপসিটা মাথায় বন্দুক ধরলে খেত

বিক্রমাদিত্যের বারান্দা

Image
আমাদের বাড়ির বারান্দার আমার প্রথম যে স্মৃতিটা আছে, তার সঙ্গে এখনকার বারান্দার কোনও মিল নেই। প্রথম স্মৃতির বারান্দা ঢালাইবিহীন, নিচু। সদরঘরের চৌকাঠে বসে সে বারান্দায় পা রাখলে আমার তিন বছরের হাঁটু চিবুকে এসে ঠেকত। দুটি হলুদ রং করা পিলার ঠেকনা দিয়ে রাখত টালির ঢালু চাল। একটা কংক্রিটের স্ল্যাবের বেঞ্চি ছিল দেওয়ালের সঙ্গে সাঁটা। মান্যগণ্যরা সেখানে বসতেন। আর তুচ্ছরা মাটিতে বসত, কিংবা দাঁড়াত হলুদ পিলারে হেলান দিয়ে, কিংবা চিবুকে হাঁটু ঠেকিয়ে। একটাই মোটে সিঁড়ির ধাপ ছিল, সেটা ধরে নেমে সরু ইটের পথ চলে যেত সবুজ গাছের বেড়ার বাঁশে দড়ির ফাঁস পরানো বাখারির সিংদরজা পর্যন্ত। ওই বারান্দায় বসা আমার প্রথম স্মৃতিটা আনন্দের। আমার বয়স তখন চারেরও কম, কারণ চারের একটা স্মৃতি আমার মনে আছে যেটা ডেফিনিটলি আনন্দের নয়। যাই হোক, প্রথমে আনন্দের স্মৃতিটার কথা বলি। আনন্দের বুঝতে পারছি, কারণ স্মৃতিব্যাপী হলুদ রং। সম্ভবত বেলাটা ছিল অপরাহ্ন এবং আমাদের বারান্দায় পোস্ট-লাঞ্চ আড্ডার সেশন চলছিল। হয় ঠাকুমার বন্ধু, নয় পিসির বন্ধু, নয় কাকুর বন্ধু কেউ না কেউ গজল্লা করত ও বারান্দায়। সেদিনও করছিল। খুব হাসাহাসি হচ্ছিল। সে সব হাসাহ

ফাদার'স ডে সংক্রান্ত

Image
অতনুকা লিখেছিল, এ বছরের ফাদার’স ডে উপলক্ষ্যে আমার পুরোন একটা পোস্ট পড়তে চায়। সম্মতি ছাড়া এ প্রস্তাবের আর কোনও প্রতিক্রিয়া হয় না। অতনুকা পড়েছে। এই দেখুন। আমার লেখাটার থেকে ওর পড়া একশো গুণ বেটার হয়েছে, বলা বাহুল্য। (তবে আমার নামের পাশে যে পোয়েট শব্দটা বসিয়েছে, এ শিউরানি রাতের অন্ধকারে ভিটেমাটি চাঁটি করে হিমালয়ে পালালেও আমার ঘুচবে না। কেন, অতনুকা, কেন?)

কালপ্রিট

অনেকদিন বাঁচলে কিছু জিনিসের জন্ম ও মৃত্যু দুইই দেখতে পাওয়ার সুযোগ হয়। আমাদের পাড়ার ছোট্ট পার্কটি জন্মেছিল আমার চোখের সামনে, ধ্বংসও হল আমার চোখের সামনে। এবার গিয়ে দেখছি স্লিপ, ঢেঁকি, নাগরদোলা সব নিশ্চিহ্ন, পার্ক বেড় দিয়ে বাঁধানো রাস্তা, বসার বেঞ্চি হাওয়া। বদলে উঠছে জলের ট্যাংক। বাবা ইম্প্রেসড গলায় মিটারে দৈর্ঘ্যও জানিয়েছিলেন, ভুলে গেছি। মিটার ম্যাটার করে না। মোদ্দা কথা, পেল্লায়। ও পার্কে আমার অনেক স্মৃতি। খোলা মাঠে দৌড়তাম, পার্ক হওয়ার পর ঢেঁকি চড়তাম, নাগরদোলায় বসে ঘুরতাম, স্লিপ বেয়ে নামতাম সাঁইসাঁই। নেমেই দৌড়ে আবার লোহার সিঁড়ির দিকে। একটা পয়েন্টের পর অবশ্য সিঁড়ি দিয়ে উঠতে আঁতে লাগত, ওঠানামা সবই হত ওই ঢালু পথ বেয়ে। এই সব করতে গিয়েই সম্ভবতঃ শক্ত মাটিতে আছাড় খেয়ে একখানা দাঁত ছিটকে গেছিল। বোটনদাদা, তার বয়স তখন কত হতে পারে আন্দাজ করে অবিশ্বাস জাগছে, তুলে এনে মাঠের কোণে টিউবকলে ক্রমাগত আঁজলা করে মুখে জল দিয়ে কুলকুচি করিয়ে রক্ত বন্ধ করিয়ে হাত ধরে বাড়ি নিয়ে এসেছিল। রবিবার ছিল সম্ভবতঃ, কারণ মা বাড়ি ছিলেন। বোটনদাদা, খুব শান্ত গলায়, মাকে খবর দিয়েছিল, কাকিমা, সোনার দাঁত পড়ে গেছে। আমার প্রগত