Posts

Showing posts from June, 2018

আমের মেলায়

Image
নিজেকে যদি প্রশ্ন করি, গত সপ্তাহে কী এমন রাজকার্য করলাম, উত্তর হবে, চাকরি বাঁচালাম। কী রকম চালাক উত্তর হয়েছে ভেবে দুই হাতে হাই ফাইভ দিতে গিয়েও সামলে নিলাম। চাকরি করা ছাড়াও গত সাতদিন আমি অনেক কিছু করেছি। স্নান, ঘুম পর্যাপ্ত হয়েছে , আধবেলার খাওয়াও বাদ পড়েনি। হ্যাঁ গেম একটু কম খেলা হয়েছে, কিন্তু জুন মাসের 'গোলস' পাতায় কম গেম খেলার কথা লেখাই ছিল। কাজেই যত বেশি কাজ করেছি মনে হচ্ছে ততটাও করিনি। এ রকম কাজ, সম্ভবত এর থেকে ঢের বেশি পরিমাণে কাজ লোকে রোজ করে থাকে, আমার অভ্যেস নেই বলে বেশি চড়চড় করছে।   স্নানখাওয়া সংগীত বাংলা দেখা তো চালিয়েই গেছি, তার ওপর আবার একখানা মেলাও ঘুরে এসেছি কাজের ফাঁকে।  জনপথের গায়ে হ্যান্ডলুম হাট, হ্যান্ডলুম হাউসও বলে থাকেন কেউ কেউ, সেখানে বাংলা সরকারের উদ্যোগে আম্র মেলা চলছিল গত দু'সপ্তাহ ধরে। ছ'রকমের মান্যগণ্য আম মালদা, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া থেকে এসেছিলেন। হিমসাগর, ফজলি, ল্যাংড়া খেয়েছি। আম্রপালী শুনেছি, খেয়েওছি সম্ভবত। লক্ষ্মণভোগ শুনেছি, সম্ভবত খাইনি। আমের নাম মল্লিকা জীবনে প্রথম শুনলাম।   মেলায় আম ছাড়াও শাড়ি, ছবি, শান্তিনিকেতনের চ

রকস্টার হলে

'আমি তোর জন্য এত চিন্তা করি বাট ইউ ডোন্ট লাভ মি।'   বাড়ি নেব তখনও ঠিক হয়নি, প্রথমবার দেখতে যাচ্ছি। মোড়ের মাথার বাড়ির ভদ্রমহিলা দরজা খুলে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে আসতে বললেন।   বাড়ি নেব কনফার্ম হওয়ার পর এজেন্টদাদা বললেন সকালবিকেল জলের পাম্প চালানোর নিয়মকানুন বোঝানোর ক্লাস নেবেন। দিন ঠিক করে অফিস থেকে বেরিয়ে মিট করে আসছি দুজনে। পাশের বাড়ির গেট খুলে ফোন কানে একজন বেরিয়ে এলেন।   'কফ বেরোচ্ছে? সাদা না ঘোলাটে? বলছি কফ সা-দা না ঘো-লা-টে?' আগের পাড়াদুটোয় পাশের বাড়ির লোককে রাস্তায় দেখলে চেনার উপায় ছিল না। সবার দরজা পাটে পাটে বন্ধ, জানালার ডান বাঁ ওপর নিচ ব্ল্যাকআউট পর্দা টানটান। এই নতুন পাড়ায় সবাই কেমন খোলামেলা, রাখঢাক নেই, রাস্তায় দাঁড়িয়ে মনের কথা বলে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে  ব্লাড রিপোর্ট রিডিং পড়ে শোনানো পাড়ায় বড় হওয়া কুন্তলা ইমপ্রেসড হয়েছিল।   শিফটের পর ঘরভর্তি বাক্সপ্যাঁটরার মধ্যে বসে ভাবছি কোথা থেকে শুরু করব, আজ করব নাকি কাল করাটাই বেটার হবে, আজ বরং সিনেমা দেখে আসি, ভেবে বুকমাইশোর অ্যাপ খুলতে যাচ্ছি, এমন সময় 'মা কলিং'। 'হ্যালো, মা... হ্যালো...হ

"You're not going to out-work me."

Image
রাজ্যসভা টেলিভিশনের গুফ্‌তগু ইন্টারভিউ সিরিজটা আমার এখন যাকে বলে স্টেপল ডায়েট।   অনেকগুলোই শুনে আপনাদের শোনাতে ইচ্ছে করেছে, অবশেষে মনোজ বাজপায়ীর সাক্ষাৎকারটা আর না শুনিয়ে থাকতে পারলাম না। এটা শুনতে শুনতে অভিনেতা উইল স্মিথের বলা একটা কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল, সেটাই পোস্টের নামের জায়গায় সেঁটে দিলাম। যেখান থেকে লাইনটা নেওয়া, উইল স্মিথের সেই পুরো বক্তব্যটা পড়তে চাইলে এখানে পাবেন।   মনোজ বাজপায়ী এই সাক্ষাৎকারে বলছেন, উনি বিশ্বাস করেন, তিরিশ বছর হওয়ার আগে মানুষের দিনরাত এক করে পরিশ্রম করা উচিত, কারণ ওই ভাঙিয়ে সারাজীবন খেতে হবে। ডেডলাইনটা বাড়িয়ে কি চল্লিশ করা যায় স্যার, না কি যা যাওয়ার তা গেছেই?

চেয়ার প্রসঙ্গে

রিষড়ার বাড়িতে সবসময়েই মানুষের থেকে চেয়ার বেশি ছিল। কোনওটা কাঠের, কোনওটা বেতের, কোনওটা প্লাস্টিকের, কোনওটা সস্তা স্টিলের কাঠামোর ওপর নাইলনের দড়ির বুনুনির। কোনওটা বেঢপ, কোনওটা ফোল্ডিং, কোনওটার একটা পায়ার নিচে ভাঁজ করা কাগজ গুঁজে বাকি তিনটে পায়ার সঙ্গে সমান করা।   একটাও সুদৃশ্য কিংবা মহার্ঘ নয়, ইকো ফ্রেন্ডলি তো নয়ই।   কিন্তু সবক'টাই মারাত্মক কাজের। খেয়াল করুন, মানুষের থেকে বেশি চেয়ার বলেছি, দরকারের থেকে বেশি বলিনি। রিষড়ার বাড়ির আরও একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, অন্তত আমার বড় হওয়ার সময় ছিল, সেটা হচ্ছে নিমেষের মধ্যে বাড়িতে ঠাসাঠাসি ভিড় হয়ে যেতে পারত। মানে ধরুন আমি বাবা মা ঠাকুমা পিসি আপনমনে যে যার তালে ঘুরছি, হঠাৎ গেটের সামনে তিনখানা রিকশা এসে থামল, হাসি হাসি মুখে সাতজন নামলেন। রামরাজাতলা কিংবা হালিশহর কিংবা বেলঘরিয়া কিংবা মছলন্দপুর কিংবা টিটাগড় থেকে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। অকস্মাৎ। নোটিস দিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যাওয়াটা সে সময় ব্যাড ম্যানার্স বলে গণ্য হত। বাড়িতে বাড়িতে ফোন আসার আগে তো খবর দেওয়া সম্ভবও ছিল না, আসার পরেও বেশ ক'বছর কাউকে কারও বাড়ি ফোন করে যেতে দেখিনি। বাড়ি

কাহাঁ সে আয়া কাহাঁ যাওগে?

Image

৬ জুন, ২০১৮, সন্ধে

এই জন্য আমি যত্রতত্র কান থেকে গান খোলার বিরোধী। ট্যাক্সির রেডিওতে আর আমার ফোনের রেডিওতে এক চ্যানেলে একই গান বাজলেও আমি হেডফোনে সে গান শোনা পছন্দ করি। ছয়ই জুন অফিস থেকে ফেরার পথেও সে রকমই শুনছিলাম। কিন্তু যিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি মাঝেমাঝেই বিড়বিড় করছিলেন আর আমার আশঙ্কা হচ্ছিল আমাকে কিছু বলছেন বুঝি। ওঁর ওইদিকের কানে যে ব্লু টুথ গোঁজা আছে সে তো আমি দেখিনি। শেষটা কান থেকে হেডফোন খুলে 'হাঁ জি?' বললাম, ড্রাইভারজি মাথা নেড়ে বোঝালেন যে আমাকে কিছু বলেননি আর সেই ফাঁকে রেডিও থেকে এক মহিলার মিষ্টি গলা বেজে উঠে বলল, 'এই যে ছয়ই জুনের সন্ধে, এটা আর আপনার জীবনে কোনওদিনও আসবে না, ভেবে দেখেছেন?' দেখিনি। আজকের সন্ধেটা যে আর কোনওদিন আসবে না, এই যে গ্রেটার কৈলাসের মেট্রো স্টেশনের সামনে রিকশা, অটো, পদাতিক, টেম্পো এবং বি এম ডবলুর জ্যাম ঠেলে পোঁ পোঁ হর্ন বাজিয়ে চলে যাচ্ছি, এক্স্যাক্ট এই জ্যাম ঠেলে আর কোনওদিন যাব না, আমার হাতে পায়ে শরীরের এই মুহূর্তের যে জোরটুকু, বুকের ভেতর টিমটিম করা আশাটুকু থাকবে না, গত সাড়ে সাঁইত্রিশ বছরের কত বিকেল এইভাবে আমার অচেতন মগজের পাহারা এড়িয়ে পালিয়ে গেছে,

তা বলে ১৪৪ চরিত্রেও নয়

মাঝে মাঝে জীবনে ক্ষুদ্র তুচ্ছ ঘটনারা ঘটে। হাসির, রাগের, দুঃখের বা হতভম্বের। তাদের নিয়ে একা একা হাসা যায় কিংবা চোখ গোলগোল করে বসে থাকা যায় ফাঁকা ঘরে, কিন্তু ঢাক পিটিয়ে লোক জানাতে পারলে আরও ভালো। শেয়ারিং ইজ কেয়ারিং। অবান্তরে সে সব নিয়ে পাঁচশো শব্দের পোস্ট লিখতে আলস্য লাগে, অকারণ ফেনাতে হয়। তখন বুঝি টুইটার কোন ফাঁকটা ভরাট করেছে। আজ সকালে সে রকম একটা ঘটনা ঘটল। একবিন্দু বাড়িয়ে বলছি না। যা লিখছি নির্জলা সত্যি। অবান্তরের পরের পোস্ট টাইপ করা থামিয়ে উঠে দ্বিতীয় কাপ চা আনতে রান্নাঘরে গেছি, অর্চিষ্মান অকাতরে ঘুমোচ্ছে। গরম চায়ে চুমুক দিয়ে খুশি হয়ে জোরে জোরে গেয়ে উঠলাম, 'আমি কি তোমায় খুব বিরক্ত করছি?' অর্চিষ্মান নড়ে উঠে ঘুমজড়ানো গলায়, 'না না, সেকি, হঠাৎ বিরক্ত করবে কেন, একটুও করছ না, সত্যি।'  বলে ওপাশ ফিরে বালিশ জড়িয়ে আবার তলিয়ে গেল ঘুমের ঘোরে।

বানকাহি, অসম ভবন

Image
স্টেট ভবন ক্যান্টিনে খেতে যাওয়া এবং সেই নিয়ে অবান্তরে পোস্ট লেখার সমস্যাটা হচ্ছে, একসময় রাজ্যের স্টক ফুরিয়ে যেতে বাধ্য। ঊনত্রিশটি রাজ্য এবং সাতটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ক্যান্টিনেই আমরা খেয়েছি এমন দাবি করি না। কারণ এক, সব রাজ্যের ক্যান্টিনে আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকের প্রবেশাধিকার নেই, যেমন জম্মু কাশ্মীর। একসময় ছিল, বছর সাতেক আগে খেয়েছিলাম, ইয়াব্বড় বড় গুশতাবা আর সিল্কের মতো ইয়াখনি, কিন্তু তখন ব্লগে লেখার আইডিয়া মাথায় আসেনি, এখন আর যাওয়া যায় না, কাজেই বাদ। উত্তরপূর্ব ভারতের কয়েকটি রাজ্যের ক্যান্টিনে কখনও কখনও যাওয়া যায়, কখনও যাওয়া যায় না। দুই, কিছু রাজ্যের ক্যান্টিনে যাওয়ার উৎসাহ বোধ করিনি, কারণ সে সব রাজ্যের ক্যান্টিন হয় নেই নয় যা পাওয়া যায়, ইডলি দোসা, বাটার চিকেন, বাইরের দোকানেও পাওয়া যায়। হয়তো বেটার পাওয়া যায়।   কিছু ক্যান্টিন রিপিট করেছি। বিহার অগুনতিবার, মহারাষ্ট্র অর্চিষ্মান এবং অন্যান্য লোকের সঙ্গে ঘুরিয়েফিরিয়ে বারতিনেক, অন্ধ্রপ্রদেশ আমি রাজি থাকলে প্রতি দু'সপ্তাহেই রিপিট হত, কিন্তু আমি রাজি নই।   অসম রিপিট করার একটা ছুতো মিলে গেল সম্প্রতি। অসম ভবনের ক্যান্টিন জাকোই

দুটো বই

Image
The Adivasi Will Not Dance/ Hansda Sowvendra Shekhar উৎস গুগল ইমেজেস হাঁসদা সৌভেন্দ্র শেখরের প্রথম উপন্যাস The Mysterious Ailment of Rupi Baskey  দু'হাজার চোদ্দ সালে হিন্দু লিট্যারেরি প্রাইজের জন্য মনোনীত হওয়ার সময় বই বা বইয়ের লেখকের নাম আমার নজরে আসেনি। বইটি দু'হাজার পনেরোতে সাহিত্য আকাদেমির যুবা পুরস্কার জেতার সময়েও না। দু'হাজার দুই থেকে দু'হাজার পনেরো পর্যন্ত লেখা দশটা ছোটগল্পের সংকলন   The Adivasi Will Not Dance' যখন বেরোলো এবং দু'হাজার ষোল সালের হিন্দু লিটারেরি প্রাইজের জন্য মনোনীত হল, তখনও আমার কানে লেখক বা বই বা লেখক, কারও নাম আসেনি।   আমার কানে খবর এল যখন সাঁওতাল সম্প্রদায়, বিশেষ করে সাঁওতাল নারীদের অবমাননাকর আলোয় প্রতিভাত করার জন্য বইটি ঝাড়খণ্ড সরকার (বিরোধী দলের সমর্থন সহ) ব্যান করল এবং হাঁসদা সৌভেন্দ্র শেখরকে তাঁর মেডিক্যাল অফিসারের চাকরি থেকে সাসপেন্ড করে শো কজ ধরাল। ধর্ষণদৃশ্যের এমন নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছেন লেখক যে পড়ে মনে হচ্ছে তিনি নিজেই ধর্ষণ করছেন গোছের মন্তব্যও শোনা গেল। এই বাজারে নিজের রাজনৈতিক বক্তব্য ব্যক্ত করার সা

মন্দাকিনী অন্তর্ধান রহস্য

Image
Edward John Moreton Drax Plunkett, 18th Baron of Dunsany জন্মেছিলেন আঠেরোশো আটাত্তর সালে। ছ'ফুট চার ইঞ্চি লম্বা ছিলেন, দাবা খেলতে পারতেন, শিকার করতে পারতেন, ক্রিকেটে উৎসাহ রাখতেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে জখম হয়ে ফেরার পর তিনি মন দিয়ে লিখতে শুরু করেন। রূপকথা, রহস্য, নাটক, উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, প্রবন্ধ। বেঁচে থাকতে নব্বইটা বই ছেপে বেরিয়েছিল তাঁর। মৃত্যুর পরও তাঁর লেখা ছাপা হয়েছে। দু’হাজার সতেরো পর্যন্ত লর্ড ডানসেনির প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা একশো কুড়ি। নিল গেমন বলেছেন, " It’s a crime that there’s not a Complete Short Stories of Lord Dunsany somewhere.” লর্ড ডানসেনির কথা আমি প্রথম জানতে পারি সুকুমার সেনের ‘ক্রাইম কাহিনীর কালক্রান্তি’ বইতে। ডানসেনির ‘টু বটলস অফ রেলিশ’ ছোটগল্পটির কথাও ওই বইতে আছে। সুকুমার সেন অবশ্য গল্পটির শাঁসটুকু লিখে গিয়েছিলেন। তারপর আমি ডানসেনির কলমে লেখা আসল গল্পটি পড়ি এবং পত্রপাঠ অন্য লেখা খুঁজে পড়তে শুরু করি। এবং আবিষ্কার করি সুকুমার সেন ভুল করেননি, টু বটলস্‌ অফ রেলিশ সত্যি সত্যিই লর্ড ডানসেনির লেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ