Posts

Showing posts from July, 2013

ওপেন কিচেন

Image
আলোকচিত্রীঃ Vitaly Samartsev , উৎসঃ ন্যাশনাল জিওগ্র্যাফিক মার্লিন গ্রুপ উত্তরপাড়ায় ফ্ল্যাটবাড়ি বানাচ্ছে। গঙ্গার ভিউ, জি টি রোডের সান্নিধ্য, শনিমঙ্গলবার তিন নম্বর বাসে চেপে পনেরো মিনিটের মধ্যে টুক করে দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে পুজো দিয়ে আসার সুবিধে---সব মিলিয়ে দুর্দান্ত ব্যাপার। পাড়ার যত অল্পবয়সী দম্পতি ছুটেছে ফ্ল্যাট বুক করতে। তাদেরই একজোড়ার সঙ্গে বাজারে দেখা হয়ে গিয়েছিল। এ কথা সে কথা ঘুরে আলোচনা ফ্ল্যাটের দিকে ঘুরল। বিয়ে, বাচ্চা আর বাড়ি, এই তিন ব-এর একটিও যদি কারও জীবনে নতুন আসে বা আসার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তার সঙ্গে অন্য কোনও বিষয়ে পাঁচমিনিটের বেশি আলোচনা চালানো কঠিন। ইন ফ্যাক্ট, অসম্ভব। আমি আর মা খুব উৎসাহ দেখিয়ে ফ্ল্যাটের কথা জিজ্ঞাসা করলাম। রিষড়া প্ল্যাটফর্মে যে প্রকাণ্ড বিজ্ঞাপনগুলো পড়েছে ব্যাপারটা সত্যিই সে রকম সুইৎজারল্যান্ডের মতো দেখতে হল কি না। সুইমিং পুলের কাজ কদ্দুর এগোল। দম্পতি মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে বললেন, আরে কাকিমা রাখো তোমার সুইমিং পুল। ওপেন কিচেনটা যা বানিয়েছে না, দেখার মতো। মিনিট দশেক ধরে ওপেন কিচেনের অষ্টোত্তরশতনাম শুনে তারপর ছুটি মিলল। ম

পপাত চ

পায়ের নিচে ঠক্‌ করে একটা আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলাম শরীরের ভরকেন্দ্র ডিস্‌লোকেটেড হয়ে গেছে। বিপজ্জনক ভাবে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েছি। পড়ছি বলা চলে। সিটি সেন্টারের পাথর বাঁধানো রাস্তার সঙ্গে সাধারণত আমার চোখের দূরত্ব থাকে ফুট পাঁচেক, অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সে দূরত্ব কমে আসছে। চারফুট, তিনফুট, দু’ফুট। আত্মরক্ষার নির্ভুল প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় আমার হাতের মুঠো খুলে গেছে। আগে বাঁচলে তবে তো ব্যাগেটের নাম। দোলের দিন কেউ রং দিতে এলে যে ভঙ্গিতে না বলতে হয়, সেই ভঙ্গিতে আমার দুই হাতই এখন শরীরের সামনে। কিন্তু না বললেই বা শুনছে কে। সেকেন্ডের মধ্যে পারপেন্ডিকুলার অবস্থা থেকে যখন শরীরটা রাস্তার সঙ্গে মিশে গেল, চশমাটা নাক থেকে ছিটকে গেল, পার্সের খোলা জিপের ভেতর থেকে খুচরো পয়সা এদিকসেদিক ঠুংঠাং গড়িয়ে গেল, তখন যুক্তি মানলে আমার ব্যথাবেদনার কথাটাই প্রথমে মাথায় উদয় হওয়ার কথা। কিন্তু মানুষের মন, কবেই বা আর যুক্তি মেনে চলেছে। সব ব্যথা ছাপিয়ে প্রথমেই আমার যেটা মনে এল সেটা হচ্ছে, হে ভগবান, সবাই আমাকে দেখছে। দেখছে আর হেসে খুন হচ্ছে। মনে হওয়ার কারণ আছে। কাউকে পড়ে যেতে দেখলে আমি নিজে একস

রাইন

Image
জার্মানির অন্যান্য শহরের কথা জানি না, বন্-এ ছ’মাস থাকতে হলে শুরুতেই নামধাম নথিভুক্ত করানোর একটা ব্যাপার থাকে। অ্যালফন্‌সের পিছু পিছু প্যারেড করে আমরাও স্টাডহাউসে গিয়েছিলাম রেজিস্ট্রেশন করাতে। কুপন হাতে অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে মাথার ওপরের বোর্ডে আমার নম্বর ফুটে উঠল। নির্ধারিত টেবিলের দিদিমণি আমার নাম আমার বরের নাম, আমার বয়স আমার বরের বয়স, আমার পাসপোর্টের ডিটেলস আমার বরের পাসপোর্টের ডিটেল্‌স্‌ ইত্যাদি টুকে নিয়ে একগাল হেসে আমার দিকে রেজিস্ট্রেশনের রসিদ আর একগোছা কাডবোর্ডের টিকিট এগিয়ে দিলেন। টিকিটগুলো আর কিছুই না, ভাউচার। শহরের বিভিন্ন থিয়েটার, মিউজিয়াম, বোট্যানিকাল গার্ডেন, বিখ্যাত লোকেদের বাড়ি, গানের অনুষ্ঠান, নাচের ফাংশান ইত্যাদি ফ্রি-তে দেখে বেড়ানোর নেমন্তন্নপত্র। আদ্যোপান্ত ডয়েশে লেখা। পরের শনিবার সকালে গুগল ট্রান্সলেটর খুলে ঝাড়া দু’ঘণ্টা খরচ করে প্রতিটি ভাউচারের মর্মার্থ উদ্ধার করলাম। যেগুলো কাজে লাগবে---এই যেমন অপেরাহাউস, বিঠোভেনের বাড়ি, বোটানিক্যাল গার্ডেন, লাখখানেক মিউজিয়াম ইত্যাদির ভাউচার আলাদা করে রাখলাম। যেগুলো লাগবে না---যেমন জিমন্যাশিয়াম কিংবা সাপ

সাপ্তাহিকী

Image
বিগ বেনের ভেতরে।  উৎস When two people are under the influence of the most violent, most insane, most delusive, and most transient of passions, they are required to swear that they will remain in that excited, abnormal, and exhausting condition until death do them part.                                                                                       ---George Bernard Shaw অবিকল। Don’t kid yourself. আপনার জন্মদিন আপনার সম্বন্ধে কী বলে? ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি, নোয়ার বানডাকা ইত্যাদির সালতামামি জানতে হলে এই লিংকটায় ক্লিক করতেই হবে। মাত্র ষাট সেকেন্ডে। Why Stephen King Spends 'Months and Even Years' Writing Opening Sentences. নরওয়ের নকল সূর্য। গুগল অটোকমপ্লিট। কমপ্লিট ননসেন্স। অতই যদি প্যাকনা, নিজে বানালেই পারে। হরর স্টোরি। মাত্র দু’লাইনেই ঘাড়ের লোম খাড়া করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। এ সপ্তাহের গান। পাহাড়ি সান্যালের গলাটা কিন্তু পাহাড়ি সান্যালের নিজেরই। ভদ্রলোক রীতিমত ভালো ক্লাসিক্যাল গাইয়ে ছিলেন। জনশ্রুতি আছে সদ্যকিশোর

একটি আদ্যোপান্ত বাস্তব কথোপকথন

চায়ের কাপ হাতে ই-কে হাসিমুখে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি বিন্দুমাত্র আঁচ করতে পারিনি ঘটনা কোনদিকে ঘুরতে চলেছে। পারলে উল্টোদিকে টেনে দৌড় লাগাতে আমাকে দু’বার ভাবতে হত না। ই হাত পাঁচেকের মধ্যে এসে পড়ায় খাতা মুড়ে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বোঝালাম যে আমি পোলাইট কথোপকথনের জন্য তৈরি। করমর্দন, হাই হ্যালো ইত্যাদি সম্ভাষণের পালা ফুরোল। এরপর যা যা ঘটেছিল সেটা ইংরিজিতেই লিখছি। অনুবাদ করতে গেলে রসভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা। ইঃ হাই কুন্তলা! আই অ্যাম গোয়িং টু ইন্ডিয়া উইথ মাই হাসব্যান্ড। ফর দ্য ফার্স্ট টাইম। কঃ রিয়েলি? হাউ নাইস! আমি যথাসাধ্য উৎসাহ দেখিয়ে ভালো গৃহস্থ হওয়ার চেষ্টা করলাম। পুরোটা যে অভিনয় তাও নয়। যখনই শুনি কেউ প্রথমবার ইন্ডিয়া যাচ্ছে আমার ভীষণ আনন্দ হয়। আমি রোজ যে রাস্তা দিয়ে হাঁটি এরা সেই রাস্তা দিয়ে পায়ে ফোস্‌কা ফেলে হাঁটবে, প্রথমবার তাজমহলের সামনে দাঁড়াবে, রাতের এরোপ্লেনের জানালা থেকে প্রথমবার আলোজ্বলা ভারতবর্ষকে দেখবে---ভাবলেই আমার মন খুশি হয়ে ওঠে। ই-র মুখে আমার উত্তেজনার প্রতিফলন না দেখে খানিকটা দমেই গিয়েছিলাম আমি। হয়তো বেড়াতে ভালোবাসে না।

বেডসাইড ল্যাম্প

আমার স্বপ্নের বাড়ির সামনে একটা ছোট বাগান থাকবে, একটা বারান্দা থাকবে, আর থাকবে একটা ছাদ। আমার একান্ত নিজস্ব ছাদ। প্রতিবেশীদের নিয়ে আমি সেই ছাদে পনেরোই অগস্ট বা পয়লা জানুয়ারি মাংসভাতের ফিস্ট জমাতে পারি, কিন্তু তাছাড়া সে ছাদে আমার অধিকার অবিসংবাদিত। সে ছাদের দড়িতে কেবল আমারই ভেজা জিন্‌স্‌ শুকোবে। রাতে তারাভরা আকাশের তলায় কেবল আমিই মাদুর পেতে শোব। বাড়ির ভেতরটা কেমন হবে সেই নিয়ে আমার বেশি মাথাব্যথা নেই। বসারঘর, শোবারঘর, রান্নাঘর, বাথরুম। সব বাড়িরই যেমন হয়। আমি আর অর্চিষ্মান মাঝে মাঝে ঘরের দেওয়ালে কী ঝোলানো হবে সেই নিয়ে তর্কবিতর্ক করি। আদিবাসী মুখোশ না গণেশ পাইনের কপি। তর্কের সময় আমি এমন ভাব দেখাই যেন আমার জীবনমরণ দেওয়ালের আর্টের ওপর নির্ভর করছে, কিন্তু আপনাদের চুপিচুপি বলে রাখছি, ওতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না। অর্চিষ্মানের যা প্রাণে চায় তাই ঝোলাতে পারে। আমার শুধু একটি তুচ্ছ জিনিসের লোভ আছে। বেডসাইড ল্যাম্প। এ যাবৎ আমি যে ক’টা বাড়িতে থেকেছি, কোনওটাতেই বেডসাইড ল্যাম্প ছিল না। কেন কে জানে। এমন কিছু মহার্ঘ জিনিস নয়। খাটের পাশে একটা মাপমতো টুল আর একটা টেবিলল্যাম্প হলে