সহজ এবং সুস্বাদু
রাতে খেতে খেতে মাস্টারশেফ
দেখতে বসে একটা ইংরিজি কথা ইদানিং মাঝে মাঝেই শুনতে পাই। পয়েন্ট অফ ভিউ।
রান্নাবান্নার সঙ্গে যে এই কথাটা কোনওভাবে খাপ খেতে পারে সেটা আগে জানা ছিল না।
অবশ্য সৌরজগতে প্লুটো বলে যে আদৌ কোনও প্ল্যানেট নেই সেটাও তো আগে জানতাম না,
কাজেই না জানা নিয়ে আজকাল আর ঘাবড়াই না।
যাঁরা ভাজতে গিয়ে
মাছ পুড়িয়ে ফেলেন কিংবা পিঠেয় চিনির বদলে নুন দিয়ে ফেলেন, তাঁরা তো প্রতিযোগিতায়
স্ট্রেট গাড্ডু খান, কিন্তু কিছু কিছু রাঁধুনি থাকেন যাঁদের রান্না খেয়ে গর্ডন র্যামসে
খানিকক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে চিবুকে হাত দিয়ে ভাবেন। তারপর বলেন, সবই ঠিক আছে
ভায়া, কিন্তু পয়েন্ট অফ ভিউ-র অভাব। রান্না দিয়ে যে স্টোরিটা তুমি টেল করতে চাইছ,
সেটা পরিষ্কার হচ্ছে না।
অর্চিষ্মান এই ডায়লগটা শুনলেই প্রত্যেকবার আমার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করে, কী গো, তোমার রান্নার পয়েন্ট অফ ভিউ কী?
অর্চিষ্মান এই ডায়লগটা শুনলেই প্রত্যেকবার আমার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করে, কী গো, তোমার রান্নার পয়েন্ট অফ ভিউ কী?
বেশিরভাগ গৃহপালিত
রাঁধুনির মতো আমার রান্নার পয়েন্ট অফ ভিউও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। মায়ের কাছ
থেকে। মা পেয়েছিলেন দিদিমার কাছ থেকে। দিদিমা স্বামী আর নয় ছেলেমেয়ের জন্য সারাদিন
রান্না করতেন আর মেয়েরা রান্নাঘরে গিয়ে উঁকিঝুঁকি মারলে কিংবা রান্নার রেসিপি
জানতে চাইলে আঁতকে উঠে বলতেন, মাথা খারাপ হয়েছে? সেধে এ কাজ কেউ করতে চায়? রান্না
করতে হবে না, বরং লেখাপড় কর গিয়ে যাতে চাকরি করে যথেষ্ট রোজগার করে রান্নার লোক
রাখতে পার।
নতুন বউ হয়ে আসার
পরপর কিছুদিন মা দিদিমার পরামর্শ অগ্রাহ্য করে সারাসপ্তাহ দুবেলা ডালভাত মাছমাংস
ধনেপাতাবাটা ইত্যাদি রাঁধার পরেও ছুটির দিন সকালে কড়াইশুঁটির কচুরি, বিকেলে ডিমের
চপ, রাতে পুডিং ইত্যাদি রান্না করতেন, কিন্তু সে ঝোঁক কেটে যেতে বেশিদিন লাগেনি।
আমাকেও রান্নার বিষয়ে মা যে খুব উদ্বুদ্ধ করেছেন তা বলতে পারি না। বরং বলেছেন,
তোদের সময় দোকানে সব পাওয়া যাবে। সেখানে খাবি আর বাকি সময়ে পড়বি, লিখবি, গান
গাইবি, দেশ দেখবি। খবরদার রান্না করে সময় নষ্ট করবি না।
মা দিদিমাকে দোষ দিই
না আমি। তাঁদের সময় রান্নাটা বাধ্যতামূলক ছিল বলেই হয়তো রান্নাকে তাঁরা ভালোবাসতে
পারেননি। কিন্তু আমার তো সেরকম কিছু নেই। না রাঁধলেও চলে বলে মাঝে মাঝে আমার
রাঁধতে ইচ্ছে করে। তবে সে ইচ্ছেরও নানারকম যদি, তবে, কিন্তু, বরং আছে। রান্না করতে
গিয়েই যদি সব এনার্জি ফুরিয়ে যায়, আরাম করে খাওয়ার জন্য আর যদি গায়ে জোরই অবশিষ্ট
না থাকে, তবে সে রান্না আমার ভালো লাগে না। আমার প্রিয় খাবারের তালিকায় ম্যাগি তাই
চিরদিন বিরিয়ানিকে বলে বলে হারাবে।
আমার রান্নার পয়েন্ট
অফ ভিউ হল, যা সহজ, তা-ই সুস্বাদু।
আজকের রান্নাটা এতই সোজা যে সেটাকে রান্না বলে চালানোই একটা ধৃষ্টতা। তা বলে জিনিসটা খেতে খারাপ এ কথা শত্রুও বলতে পারবে না।
আজকের রান্নাটা এতই সোজা যে সেটাকে রান্না বলে চালানোই একটা ধৃষ্টতা। তা বলে জিনিসটা খেতে খারাপ এ কথা শত্রুও বলতে পারবে না।
Bruschetta
Schedule,
শেডিউল না স্কেজিউল সে নিয়ে তর্ক থাকতে পারে, কিন্তু Bruschetta যে ব্রুশ্কেটা সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ব্যাপারটা আর কিছুই না, ইংরিজিতে
যাকে আমরা ওপেন ফেস্ড্ স্যান্ডউইচ বলি ইট্যালিয়ানরা তাকেই ব্রুশ্কেটা বলে।
এবার সেই স্যান্ডউইচের ওপেন ফেস আপনি কী দিয়ে সাজাবেন সেটা সম্পূর্ণ আপনার ওপর
নির্ভর করবে। টপিং হিসেবে সবথেকে কমন হল টমেটো, ব্যাসিল, অলিভ অয়েল, কিন্তু চাইলে
আপনি বাঁধাকপি কিংবা বোনলেস চিকেনও ব্যবহার করতে পারেন। রাঁধুনির স্বাধীনতার নিরিখে ব্রুশ্কেটাকে হারায় এমন রান্না কমই জন্মেছে পৃথিবীতে।
ব্যাপারটা এত সোজা
বলেই আমি দু’রকম ব্রুশ্কেটা বানিয়ে ফেলেছি। ডিম ছাড়া দিন শুরু করার কথা ভাবতে
আমার কান্না পায়, তাই দ্বিতীয় রকমের ব্রুশ্কেটায় ডিমের একটা বড় ভূমিকা রইল।
কী কী লাগবেঃ
পাঁউরুটি।
অলিভ অয়েল।
নুন, গোলমরিচ।
ওপরের জিনিসগুলো
জোগাড় করে ফেলতে পারলে এবার বাকিটা আপনার হাতের মুঠোয়। নিরামিষের জন্য আমি টমেটো
ব্যবহার করেছি, আর আমিষের জন্য এক স্লাইস সালামি আর একটা ডিম।
প্রথমেই টমেটোগুলো
কেটে ফেলে নুন, গোলমরিচ, অলিভঅয়েল দিয়ে মেখে সরিয়ে রাখুন। টমেটোর টুকরোর সাইজ এমন
রাখলেই ভালো যাতে একটা আরেকটার থেকে আলাদা করা যায়। যতক্ষণ আপনি অন্য জিনিসপত্র
রেডি করবেন, এরা বাটির ভেতর একে অপরকে জানবে চিনবে, মেশামিশি করবে।
এবার পাঁউরুটির কথায়
আসি। যে কোনও রকমের পাঁউরুটিই চলতে পারে, কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে সেটা টমেটো ইত্যাদি
দেওয়ার পর নেতিয়ে যেন না পড়ে। অর্থাৎ একটু শক্তপোক্ত পাঁউরুটি ব্যবহার করাই ভালো।
পাঁউরুটি স্লাইস করে কেটে টোস্ট করে নিন।
ডিম আর
সালামির দিকে হাত বাড়ান। মাঝারি আঁচে একটা সসপ্যান গরম করে তাতে তেল দিন। তেলে
সালামিটা দিয়ে দিন। মিনিট খানেক পর সালামিটা একবার উল্টে দিয়ে একটা ডিম আলতো করে
ভেঙে সালামির ওপর দিয়ে দিন। কুসুম আস্ত থাকলে ভালো ছবি উঠবে, না থাকলেও খেতে
একইরকম লাগবে। কাজেই টেনশন করবেন না। নুন গোলমরিচ ছড়ান। আমি এইবার পুরো ব্যাপারটার
ওপর একটা ঢাকা দিই। যাতে কুসুমের ওপরটাও বাষ্পের গরমে একটু রান্না হওয়ার সুযোগ
পায়।
ব্যস্ আর কী।
সাবধানে একটা পাঁউরুটির ওপর ডিমশুদ্ধু সালামিটা ট্রান্সফার করুন। আরেকটার ওপর
চামচে করে টমেটোর মিশ্রণ দিন। এতক্ষণ তেলের জাকুজিতে গা ডুবিয়ে তাদের চেহারা আর
স্বাদ, দুটোই আরও খোলতাই হয়েছে। ইচ্ছে হলে পুরো ব্যাপারটার ওপরে আবার সামান্য তেল
ছড়াতেও পারেন, নাও পারেন। আপনার মর্জি।
এবার সাবধানে একটা পাঁউরুটি মুখের কাছে তুলে এনে কামড়
বসান। জিভের ওপর মিষ্টি টমেটো, মসৃণ অলিভ অয়েল আর কুড়কুড়ে রুটির উদ্দাম
ডান্সপার্টি টের পাচ্ছেন? গুড। ডিমওয়ালা পাঁউরুটিটায় সাবধানে কামড় বসান। মুখের
ভেতর লাভার মতো উষ্ণ কুসুমের স্বর্গীয় বিস্ফোরণ চেটেপুটে নিন। আর ভাবুন, কে বলে রান্নাঘরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা না ঘামলে ভালো রান্না হয় না?
পুনশ্চঃ আমি
ভেবেছিলাম পাঁউরুটি সেঁকা হলে পর একটা রসুন হাফ করে কেটে কাটা অংশটা গরম
রুটির গায়ে ঘষে নেব। বেশ গারলিক ব্রেড হয়ে যাবে। ভুলেই গেছি। আপনাদের মনে থাকলে
ট্রাই করে দেখতে পারেন।
Ekdom khnaati kotha ... ja simple tai e tasty. Bhalo ranna korte holey ek gada moshlar kono proyojon neyi.
ReplyDeleteRanna'r viewpoint o hotey parey kokhono bhabini. Ekhon bhabchi amar rannar view point ki? :-)
আমি নিশ্চিত তোমার ভিউপয়েন্টটাও সহজসরল কিছুই হবে শর্মিলা।
Deleteপোস্টটা তো সবে সবে পড়লাম। তাই এক্ষুনি ট্রাই করা হয় নি, রাতে চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু ছবি দেখেই বলতে পারি ফ্যান্টাস্টিক। ব্যাপারটা দারুণ হবেই। Thank you Kuntala.
ReplyDeleteআরে থ্যাংক ইউর কি আছে মালবিকা। খেয়ে দেখবেন তো কেমন লাগে।
Deleteiye...mane bolchilam ki...rannar post besh ghono ghono hochhe..ta thik ache..onek din dubar porar moto mon chuye jawa post hoyni..jodi ektu matha chulke pen kamre ektu hoto tale mondo hoto na...:)
ReplyDeleteআচ্ছা দেখছি সৌমেশ।
Deleteসৌমেশ-এর সঙ্গে একমত হলাম না, দুঃখিত। আমি তো এই ছবিওয়ালা রান্নার পোস্ট-গুলোও বারবার করে পড়ি, দেখি, আর মাঝেমাঝে মনিটরটাকে একটু সুড়ুৎ করে চেটেও নিই। রান্নার পোস্টগুলো আমার মন, প্রাণ, এবং দৃষ্টিমাধ্যমে পেট সব ছুঁয়ে যায়।
Deleteআরে থ্যাংক ইউ কৌশিক। খুব খুশি হলাম জেনে।
Deleteeto maarkatari type er khawa hobe re!!
ReplyDeleteমারকাটারির একেবারে উল্টো হবে বিশ্বাস কর। আপাদমস্তক নিড়বিড়ে খাওয়াদাওয়া। একেবারে আমার মতো।
Deleteসহজ এবং সুস্বাদু = Maggi. byas. hoye gelo. eto complication-e jawar ki dorkar?
ReplyDeleteএমনি টাইমপাস আরকি সোমনাথ।
Deletechhobi dekhe darun lagchhe, ar egg + salami ... jibhe jol .
ReplyDeleteডিম ভালোবাসেন জেনে খুশি হলাম ইচ্ছাডানা।
Deleteআমাকেও রান্নার বিষয়ে মা যে খুব উদ্বুদ্ধ করেছেন তা বলতে পারি না। বরং বলেছেন, তোদের সময় দোকানে সব পাওয়া যাবে। সেখানে খাবি আর বাকি সময়ে পড়বি, লিখবি, গান গাইবি, দেশ দেখবি। খবরদার রান্না করে সময় নষ্ট করবি না।-- Hats off to kakima. ki jano, oi somoye erom adhunik manoshikata thakar jonye hoyto na dekhei manushtar proti osomvob shrodhha hoy. sohoj tasty khawar er dol e amio. rannaghor e eto somoy katano ekdom pochondo noy amar. tobe aaj bikel er menu etai nischit..thank you kuntaladi.
ReplyDeleteগুড গুড। কেমন খেতে হল জানিয়ো তো রাখী।
Deleteএটা পুরোটাই আমার পয়েন্ট অফ ভিউ। এমনকি মায়ের পয়েন্ট অফ ভিউ টাও মিলে যাচ্ছে।
ReplyDeleteযাঃ এরকম হয় নাকি? কি বোরিং !
লেখা ছবি দুটোই বেশ ।
মিঠু
হাই ফাইভ মিঠু।
Deleteআমার প্রিয় খাবারের তালিকায় ম্যাগি তাই চিরদিন বিরিয়ানিকে বলে বলে হারাবে। eta-te high 10 Kuntala. r thik bolecho jehetu amader badhyotamulak randhte hay na tai ranna kakhana shakhana korte bhalo lage. jodi kakhana niyamita dal bhat chacchari randhte hay to shakh pai pai kore palabe...amar o rannar viewpoint holo soja r susvadu khabar...sandwichta bhabchi taratari ekdin kore phelbo....dim r salami ahhh amar weakest point
ReplyDeleteকরে ফেল দেবশ্রী। শুভ কাজে দেরি করতে নেই।
Deleteairakam dim amaro ja ta favourite... ar ki ashchorjo, paurutir opor adh-cooked dim ta rekhe kamor dite dite amio bhabi - ei ei ei shuru hote jachchhe 'মুখের ভেতর লাভার মতো উষ্ণ কুসুমের স্বর্গীয় বিস্ফোরণ' - jodio amar bhabnatake ato sundor shobdo dile tumi ei pratham ! :D
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ মনস্বিতা। ডিম ব্যাপারটাই স্বর্গীয়।
Deletepoint of view baparta besh mone dhoreche.. amar beshir bhaag rannar point of view i hoche swopne pawa (swopnadyo ranna ar ki :P).. mane majhe majhe akekta jinis khete ato ichhe kore jege ghumiye setar i swopno dekhi sutorang ochire seta na baniye upaay thake na..
ReplyDeleteস্বপ্নাদ্য রান্নার ব্যাপারটা দারুণ তো। আহা আমি কেন এমন স্বপ্ন দেখি না।
DeleteI am just watching another Leela Majumder in the making! :)
ReplyDeleteভাগ্যিস লীলা কথাটা শুনতে পাননি, তাহলে বড় কষ্ট পেতেন। কিন্তু আমি জেনে খুব খুশি হলাম শীর্ষ। থ্যাংক ইউ।
Delete