Posts

Showing posts from February, 2022

প্রেম ও পলিটিক্স

আজ ফোনের বিষয়ে নতুনত্ব থাকবে জানতাম। কারণ বাবা ভোট দিতে যাবেন। গেছিলেন। দিয়ে এসেছেন। চাপা উত্তেজনা ছিল। ইউটিউব খুললেই আনন্দবাজার অনলাইনের রক্তবর্ণ থাম্বনেল জুড়ে হিংস্রতার হেডলাইন। এক প্রার্থীর মুখের পাশে ‘বুথ দখলের অভিযোগ জানালেন অমুকে,’ আরেক প্রার্থীর মুখের পাশে, ‘বুথ দখলের অভিযোগে কেঁদে ভাসালেন তমুকে।’ বোনাস কুইজঃ দুই প্রার্থীতে কী তফাৎ বলুন দেখি? বলতে পারেন, আহা তমুকে হয়তো সত্যি কেঁদেছে। হয়তো কেঁদেছে। “ভাসায়নি” সার্টেনলি। আর প্রথম প্রার্থীর থাম্বনেলে যে রকম মারমুখো ছবি, বুথদখলের অভিযোগে ছাদ ফাটালেন, কাকচিল তাড়ালেন, পাড়া মাথায় তুললেন ইত্যাদি হেসেখেলে লিখে দেওয়া যেত। লেখা হয়নি। যাকগে মরুকগে। ভাবলাম অনেকদিন পাড়ার ভোট দেখিনি, হয়তো ভাবগতিক বদলেছে, হয়তো আমাদের নিভন্ত পাড়া ঝাড়াপাড়া দিয়ে উঠেছে। বোমাবাজি না হোক, মাথা ফাটাফাটি হয়েছে। হয়নি। বাবা জানালেন, আমাদের পাড়া একই রকম বোরিং রয়ে গেছে। দুপুর নাগাদ নাকি খিচিরমিচির শুরু হয়েছিল, মৌখিক, সেটুকুতেও বৃষ্টি নেমে আক্ষরিক জল ঢেলে দিয়েছে। আমার স্মৃতিতে ভোট ছিল আড্ডা মারার ছুতো। সকাল হতে না হতে, 'যাই ফাঁকায় ফাঁকায় দিয়ে আসি'

আজকাল যাকে ছাড়া চলছে না

দৈনিক ফোনাফুনির কয়েকটা চেকপোস্ট থাকে। কেমন আছ, কী চলছে, কী খেলে। কথোপকথনকারীরা কেউই ফুডি নয় যে নিত্যনতুন বাহারি খাবারের উত্তেজিত আলোচনাসভা বসবে। তবু জিজ্ঞাসা করা। এই আশায় যে রোজই যখন তিনবেলা খেতে হয়, সে বাবদে রিপোর্ট করার মতো কিছু থাকবে। রোজ বিয়েবাড়ি থাকলে বিয়েবাড়ি নিয়ে চর্চা করা যেত, রোজ পাড়ায় সন্তানজন্ম, অভিভাবকের মৃত্যু, কোভিড ফাঁস ঘটলে সে সব নিয়েই মত্ত থাকা যেত, কিন্তু স্যাডলি সে সব ঘটে না রোজ। তাই কী খেলে আর কী খাব। কী খেলাম আর কী খাবে। তবে মেনুতে বৈচিত্র্য থাকে। সে বৈচিত্র্য খাদ্যবিলাসের নয়। বয়স, পরিস্থিতি, জীবনাচরণের বৈচিত্র্যের পরিণতি। একজন হাই তুলে বলে এই তো বিরিয়ানি খেলাম, আরেকজন জানায় সকালে ছাতুর শরবত দিয়ে শুরু করলাম, তারপর এগারোটা নাগাদ ডাবের জল। গাছের ডাব ফাইন্যালি ফুরিয়েছে, এখন একটা ছেলের সঙ্গে সিস্টেম করে রেখেছি, সপ্তাহে তিনদিন ডাব দিয়ে যায়। চাকরি থেকে তাড়িয়ে দিলেই যে পশ্চিমবঙ্গে দৌড়ব তার প্রধান কারণ এই সিস্টেম। সাপ্তাহিক ডাব সাপ্লাইয়ের সিস্টেম, জানুয়ারি মাসে বাড়ি বয়ে নিয়ে আসা জয়নগরের মোয়ার সিস্টেম, সকালবিকেল ছাদ, বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে এর ওর খবর নেওয়ার সিস্ট

(অ)প্রেমের গান

Image
এ বছরের মতো প্রেমের সিজন অতিক্রান্ত। এবার শান্তি করে একটা টাটকাতাজা অপ্রেমের গান শোনা যেতে পারে। মুশকিল হচ্ছে গানটির কারিগর অপ্রেমের গান ভালো বানাতে জানেন না। চেষ্টাচরিত্র করে যেটা বানান সেটাও সন্দেহজনকরকম প্রেমের গানের মতো শুনতে লাগে। গানটা প্রেমের না অপ্রেমের নিশ্চিত হওয়ার জন্য গত কয়েকদিন লুপে শুনছি। গানটা শুনতে বেশি ভালো না দেখতে বুঝে ওঠার জন্যও।

আমাদের তারা

Image
রবিবার রবিবার আসতেন তবলার মাস্টারমশাই; কলকাতা শহরের বাঘা বাঘা কালোয়াতি ওস্তাদের বাড়িতে যাঁর যাতায়াত ছিল। সে যাতায়াত মাস্টারমশাইকে অসীম গর্ব এবং অল্প যন্ত্রণা দিত। গর্বটা তো বোঝা সরল, যন্ত্রণাটা টের পাওয়া যেত যখন তিনি বলতেন, কেমন জল, ফল, সন্দেশ সহযোগে ছেলেকে একটা ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা মেরে দিতেন গুরুজি। একরকমের সলিটারি কনফাইনমেন্ট, যেখানে ছেলে কেবল রেওয়াজ করবে। যতক্ষণ না বোল সাফ হচ্ছে বেরোবে না। মাস্টারমশাই সপ্তাহে একদিন ক্লাসে যেতেন, সাড়ে পাঁচদিন জুটমিলে। যে জুটমিলের দৌলতে রিষড়ার নাম একটিমাত্র বার স্কুলের বইতে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। যন্ত্রণা থাক। গর্বেই মন দেওয়া যাক। মাস্টারমশাইও তাই দিতেন। কত গল্প বলতেন, কত মহারথীদের পায়ের ধুলো নিয়েছেন, কত মজার গল্প, কত পি এন পি সি, কত পিঠে ছোরা মারামারি। দূর থেকে দেখেই যা বুঝি, কাছে যাওয়ার সৌভাগ্যওয়ালারা নিশ্চয় আরও বেশি বুঝবেন, সৃষ্টিশীলদের মধ্যে সহসৃষ্টিশীলদের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি ততটাই দুর্লভ যতটা সুলভ একে অপরের প্রতি ছুঁড়ে দেওয়া 'আরে ধুর ওটা আবার একটা গাইয়ে/বাজিয়ে/লিখিয়ে হল?' হেলাছেদ্দা। একটা গল্প মাস্টারমশাই প্রায়ই বলতেন।

দিবসোপযোগী

পাবো প্রেম কান পেতে রেখে শক্তি চট্টোপাধ্যায় বড়ো দীর্ঘতম বৃক্ষে ব'সে আছো দেবতা আমার।  শিকড়ে, বিহ্বল-প্রান্তে, কান পেতে আছি নিশিদিন সম্ভ্রমের মূল কোথা এ-মাটির নিথর বিস্তারে; সেইখানে শুয়ে আছি মনে পড়ে, তার মনে পড়ে? যেখানে শুইয়ে গেলে ধীরে-ধীরে কত দূরে আজ! স্মারক বাগানখানি গাছ হ'য়ে আমার ভিতরে শুধু স্বপ্ন দীর্ঘকায়, তার ফুল-পাতা-ফল-শাখা তোমাদের খোঁড়া-বাসা শূন্য ক'রে পলাতক হ'লো।  আপনারে খুঁজি আর খুঁজি তারে সঞ্চারে আমার পুরানো স্পর্শের মগ্ন কোথা আছো? বুঝি ভুলে গেলে।  নীলিমা-ঔদাস্যে মনে পড়েনাকো গোষ্ঠের সংকেত; দেবতা, সুদূর বৃক্ষে, পাব প্রেম কান পেতে রেখে।

দুটো বই

Oh, William! Elizabeth Strout 'অলিভ কিটরিজ' পড়ে স্থির করেছিলাম এলিজাবেথ স্ট্রাউট যা লিখেছেন, লিখবেন, সব আমি পড়ব। পারিনি। 'অলিভ কিটরিজ'-এর সিকোয়েল 'অলিভ, এগেইন' পড়েছি। আর পড়েছি 'মাই নেম ইজ লুসি'। পড়ে স্ট্রাউটের একটা ধরণ বুঝেছি সেটা হচ্ছে একটা চরিত্র বাছা এবং সেই চরিত্রটির পিছু পিছু হাঁটা। এই হাঁটাই তাঁর উপন্যাস। 'মাই নেম ইজ লুসি'-র লুসি বার্টনের পিছু হাঁটতে হাঁটতে দ্বিতীয় উপন্যাস এসেছে, 'এনিথিং ইজ পসিবল'। পড়া হয়নি। কিন্তু তৃতীয় উপন্যাস যখন বেরোল আগের বছর, 'ওহ, উইলিয়াম!', ঠিক করলাম হাতে গরম পড়ে ফেলা যাক। উইলিয়াম লুসির প্রাক্তন স্বামী। কাজেই গল্পটা বুঝতে গেলে লুসি সম্পর্ক একটু জেনে রাখলে সুবিধে। এই জানাটা আপনি 'মাই নেম ইজ লুসি'তে সবথেকে ভালো করে জানতে পারেন, তবে 'ওহ, উইলিয়াম!'দিয়ে শুরু করলেও অথৈ জলে পড়বেন না। লুসি বার্টন, অ্যামেরিকার হতদরিদ্র এবং অনালোকপ্রাপ্ত শ্রেণীর প্রতিনিধি। দারিদ্র্য অন্যতম হলেও প্রধানতম প্রতিকূলতা নয়। ভালোবাসা, স্নেহ, আদরের আগল, বাচ্চাদের শরীর ও মনের বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ - দরিদ্র

অপ্রস্তুতিতে

Image
কিছু কিছু প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও অপ্রস্তুত লাগে। বুঝে ওঠা যায় না, কেমন বোধ হচ্ছে। বিস্মিত হওয়ার যুক্তি নেই। অসময়ের অবিচার বলে রেগে ওঠার অবকাশ নেই। তবু খবরটা পেয়ে একটা ‘ওহ!’ বেরিয়ে আসে। এমন নয় যে গানগুলো নিয়মিত চালিয়ে চালিয়ে শুনতাম। গানগুলো আমার অপছন্দ বলে নয়, এই একজনের গান আলাদা করে চালিয়ে শোনার দরকার পড়েনি বলে। সকাল বিকেল দুপুর সন্ধেয়, সোমবার, মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার, রোববারে, পনেরোই অগস্টের পতাকা উত্তোলনে, ছাব্বিশে জানুয়ারির স্পোর্টসের মাঠে, টিভিতে, রেডিওতে, ল্যাপটপে, মোবাইলে, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, বিশ্বকর্মা, জগদ্ধাত্রী, শনি, শীতলা, সন্তোষী, সত্যনারায়ণ পুজো প্যান্ডেলে - তিনি গেয়েছেন। আমরা শুনেছি। চলতে ফিরতে। নিঃশ্বাস নিতে নিতে। আর তাঁর গাইতে গাইতে, আমাদের শুনতে শুনতে গানগুলো - না, গানটান নয়, ওই গলাটা - ভারতবর্ষের সাউন্ডস্কেপের অংশ হয়ে গেছে। হয়ে উঠেছে আমাদের অস্তিত্বের নেপথ্যসংগীত। অর্চিষ্মানকে বলছিলাম। কী জীবন, ভাবা যায়? হ্যাঁ? কী প্রাপ্তি? কী উচ্চতায় আরোহণ? বলতে গিয়ে একটা কথা মনে হল। এই প্রথম কোনও নক্ষত্র সম্পর্কে। হয়তো নক্ষত্রের সঙ্গে মনে হওয়াটার সম্পর্ক নেই। হয়তো