Posts

Showing posts from March, 2020

তিনটে বই

Image
Drive Your Plow Over The Bones/ Olga Tokarczuk “I’ve long since become unused to discussing humanity as a whole. Humanity as a whole is too stable a system, nothing upsets it. প্রাইজ ব্যাপারটার অনেক অসুবিধে আছে। কারা প্রাইজ পায়, কেন পায়, কারা প্রাইজ দেয়, কেন দেয়, এ সব কঠিং প্রশ্ন। প্রাইজ পাওয়া দিয়ে ভালোমন্দ বিচার কতখানি নিশ্ছিদ্র সে নিয়ে সকলেই সংশয়ে ভোগে। কত লোক গারবেজ লিখে প্রাইজ পেয়ে গেল, কত লোক স্রেফ অনুবাদ হল না বলে নোবেল পেল না - এ বিষয়ে উচ্চকিত চর্চা সর্বত্রই চলে। কিন্তু প্রাইজের অনেক উপকারিতাও আছে। এই যেমন ওলগা তোকারজুক ২০১৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগে আমি তাঁর নাম জানতাম না। তিনি নোবেল পেলেন বলেই আমি তাঁর লেখা Drive Your Plow Over The Bones পড়লাম আর পড়লাম বলেই আমার এ বছরের গোড়ায় এমন একটা বই পড়া হল বছরের শেষের সেরা বইয়ের তালিকায় যা অবশ্যই থাকবে। যেহেতু এটা গল্পের বই, তাই গল্পটা আগে বলে নিই। উপন্যাসের নাম উইলিয়াম ব্লেকের কবিতার লাইন থেকে নেওয়া। In seed time learn, in harvest teach, in winter enjoy. Drive your cart and your plow over the

ওয়ার্কিং ফ্রম হোম

অফিসের ঝামেলা সামলাতে নাজেহাল হয়ে মায়ের সহকর্মী ইন্দ্রাণীমাসি বলেছিলেন, "আর কী, বসতে একটা চেয়ার দিয়েছে।" মাসে মাসে মাইনে দিচ্ছে বলে নয়, নামের পেছনে পদাধিকার জুড়েছে বলে নয়, যুগযুগান্তের শেকল ভেঙে নারীস্বাধীনতার ঝাণ্ডা ওড়ানোর সুযোগ দিয়েছে বলে নয়। দিনের মধ্যে আট ঘণ্টার জন্য বসার একটা কেঠো চেয়ার দিয়েছে বলে, ইন্দ্রাণীমাসি অফিসের যত লাথিঝাঁটা সহ্য করতেন। যে চেয়ারটা আমার তলা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে গত বুধবার। বলা হয়েছে নিজের এবং বাকি সবার মুখ চেয়ে, দয়া কর, মাথা খাও, যেটুকু যা কাজের ভড়ং করার নিজের ঘরের খাটে বসে কর গে। সেটা করতে গিয়েই বুঝলাম, বাড়ি বসে কাজ করা - "থালা বাজিয়েছি বটে কিন্তু আমি বিজেপি নই" - প্রমাণ করার থেকেও শক্ত। যে কাজটা আধঘণ্টায় হওয়ার কথা সেটা আড়াইঘণ্টা লাগছে। যেটা আড়াইঘণ্টার কাজ এ সপ্তাহে তার ডেডলাইন থাকলে? ওয়েল… অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে ভেবেছিলাম একবার এমনি অটো চেপে অফিসের চেয়ারটা ছুঁয়ে আসি। টেলিপ্যাথির চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে উবার থেকে মেসেজ এল। বাইকশেয়ার থেকে প্রিমিয়াম, আমরা সব সার্ভিস বন্ধ করছি। স্টে সেফ। মা বাবা কাকা মামা, জল

জনসাধারণের সুবিধার্থে ঘোষণা

অধুনা আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নিজেকে এবং প্রতিবেশীদের চাঙ্গা রাখার জন্য বারান্দায় কিংবা ছাদে উঠে থালবাদ্য সহযোগে গানবাজনার আইডিয়া চমৎকার। তবে প্রভাতফেরি বা সংকীর্তন বর্জন করে যে যার নিজস্ব ছাদ কিংবা বারান্দায় গাইলেই ভালো। গানের বাছবিচারেও সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন আছে। জনসাধারণের সুবিধার্থে পরিস্থিতির অনুকূল ও প্রতিকূল গানের তালিকা নিচে দেওয়া হল। ট্রাফিক লাইটের সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রেও এ তালিকা মেনে চলা স্বাস্থ্যকর। বিঃ দ্রঃ - জীবনে সংস্কৃতিমংস্ক্রিতি সুরুচিফুরুচির ধার না-ধারা, গান না-গাওয়া, না-বোঝা, না-শেখা, মায় শোনারও কোনওরকম তাগিদ বোধ না-করা বাঙালিরাও যে সব গানগুচ্ছের নাগাল থেকে নিস্তার পায়নি বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত, সে সব গানই তালিকায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।                 যে সব গান গাওয়া যেতে পারে              যা যা না গাইলেই ভালো আঁধার আমার ভালো লাগে আয় তবে সহচরী , হাতে হাতে ধরি ধরি না বাঁচাবে যদি আমায় মারবে কেন তবে আজ সবার রঙে রং মেলাতে হবে আঃ বেঁচেছি এখন । শর্মা ও দিকে আর নন । খোলো খোলো দ্বার আমায় থাকতে দে না আপন মনে ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়

Dumpling Time

Image

দিল্লির দিল্লাগি

মানুষ বদলায় নাকি একই থেকে যায় এ নিয়ে অনেক সেমিনার হয়ে গেছে। যে কোনও সেমিনারের মতোই এ বিষয়েও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায়নি। যাওয়ার কথাও না। আপনি যদি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চান যে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে তাহলে আপনাকে সেই সব লোকদের নিয়েই সেমিনার বসাতে হবে যারা অলরেডি বিশ্বাস করে যে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। কে সি পালকে প্যানেলে এসে বসালে হবে না। সবথেকে ভালো হয় দর্শকশ্রোতারাও সেই মতের অনুসারী হলে। অন্য মতের লোকেরা হলের ভেতর ঢুকে পড়লে সেমিনার চৌপট। তাদের হলের বাইরে প্রতিবাদমূলক প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড় করিয়ে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। একই যুক্তি খাটে মানুষের বদলানো না বদলানোসংক্রান্ত সেমিনারের ক্ষেত্রেও। আমি অবশ্য সে সব সেমিনার অ্যাটেন্ড করিনি। আমার যা কথাবার্তা হয়েছে সবই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আদানপ্রদান। কত লোকে কত কেস দেখেছেন বলে দাবি করেছেন, যেখানে মানুষ জীবন সম্পূর্ণ একশোআশি ডিগ্রি ঘুরিয়ে ফেলেছে। ভালো লোক বাজে হয়ে গেছে, বাজে লোক ভালো, বদমাশ লোক সিধে, সিধে লোক ট্যাঁরা ইত্যাদি। আমি সে সব উদাহরণ শুনে "তাই বুঝি!” বলে জায়গামতো বিস্ময়মূলক অভিব্যক্তি যেখানে যা দেওয়ার দিয়েছি বটে, কিন্

উৎসবের বাজারে

“আজকাল তো পরীক্ষা বাচ্চাদের নয়, মায়েদের” বলে যখন সবাই ঠাট্টা করে, আমি বেশি জোরে হাসতে পারি না। কারণ আমার পরীক্ষা সর্বার্থেই আমার মায়ের পরীক্ষা ছিল। অফিসের পর প্রোমোশনের পরীক্ষার প্রিপারেশনের জন্য দল বেঁধে ক্লাস হচ্ছিল। পাশ করা সিনিয়ররা ক্লাস নিচ্ছিলেন। একদিন ক্লাসে বসে অ্যাকাউন্টিং-এর থিওরি প্র্যাকটিকাল পড়তে পড়তে মায়ের মনে পড়ে গেছিল কাল মেয়ের পরীক্ষা। মেয়ের ভবিষ্যতের মুখে ছাই দিয়ে মা কি না নিজের ভবিষ্যৎ গুছোচ্ছেন?! ঘামতে ঘামতে "আমার শরীর খারাপ লাগছে" বলে এক দৌড়ে মা ক্লাস ছেড়ে বাড়ি চলে এসেছিলেন। (সুখের কথা দুজনেই যে যার পরীক্ষায়, আমি আমার ক্লাস থ্রি-র কুড়ি নম্বরের মান্থলি টেস্ট এবং মা তাঁর কেরানি থেকে অফিসার হওয়ার পরীক্ষায়, সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম।) মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে কী সাংঘাতিক ব্যাপার হয়েছিল বুঝতে পারতেন। না হয়ে উপায়ও ছিল না। সারা বছর ফাঁকি মেরে টেস্টে অ্যাডিশনাল পরীক্ষার আগের রাতে "কী হবে মাআআআ" বলে যখন ভ্যাঁ জুড়েছিলাম, "কই দেখি কী বাকি আছে... ইস এইটুকুর জন্য আবার কান্না" বলে মাকেই এসে সব জলের মতো বুঝিয়ে দিতে হয়েছিল। তবে সবটা বাধ্যতা

রানির (আর কেরানিরও) গল্প

Image
একটা সত্যি এইবেলা স্বীকার করি, ছোটবেলায় আমার রূপকথা পড়তে ভালো লাগত না। রাজকন্যা, রাজপুত্র, সুয়োরানি, দুয়োরানি, ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমী, সোনার ঘোড়া রুপোর ডিম - এই সব পড়ে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার বদলে আমার কেবলই মনে হত, ধুস যত্ত গাঁজাখুরি। অথচ এই আমিই যখন বইয়ের পাতায় অন্ধকার গলিতে গলাকাটা লাশের সন্ধান পেলাম, জীবনে একটাও গলা কাটা তো দূর, নিটোল লাশ না দেখা সত্ত্বেও, লাফিয়ে পড়ে বলে উঠলাম, হাউ রিয়্যালিস্টিক! পরে বুঝেছিলাম আমার অপছন্দ ছিল রূপকথার বাইরের মিষ্টি খোলসখানা। রূপকথা চোখ ঝলসে দিল বুড়ো বয়সে, যখন সে তার অসামান্য হিংস্রতা উন্মুক্ত করে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল। আর ক’টা গোত্রের সাহিত্য 'হেঁটোয় কাঁটা মুড়োয় কাঁটা'র ভায়োলেন্সকে হ্যাপি এন্ডিং বলে চালানোর সাহস দেখিয়ে উঠতে পেরেছে? রূপকথার আদলে লেখা আমার এই গল্পটাতে অবশ্য তেমন ভায়োলেন্স নেই। হ্যাপি এন্ডিং আছে কি না সে নিয়েও দ্বিমত থাকতে পারে। তবে গল্পটা যে গাঁজাখুরি তা নিয়ে আমার অন্তত কোনও সন্দেহ নেই। চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের মার্চ মাসের মেল ট্রেনের গল্পের কেবিনে ছাপা হওয়া ‘রানির (আর কেরানিরও) গল্প’-এর