Posts

Showing posts from August, 2019

গত কদিনের বইপড়াঃ রুথ ওয়্যার

অনেকদিন বাদে বই পড়লাম। বই পড়া তেমন করে বন্ধ থাকেনি কখনওই, গোটা দুই উপন্যাস পড়েছি, পরিস্থিতির সঙ্গে তাল রাখতে দুয়েকটা গ্রিফ মেমোয়্যারও, কিন্তু সবই ছেঁড়া ছেঁড়া। বারবার নামিয়ে রাখা কিংবা পাতা উল্টোনোর সময় খেয়াল হওয়া 'এই পাতাটায় কী হল এক্ষুনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারব না' গোছের পড়া। সবথেকে বাজে হল অ্যান ক্লিভসের ভেরা স্ট্যানহোপ সিরিজটা শেষ করার পর পি ডি জেমস-এর কর্ডেলিয়া সিরিজের দুটো বই পড়ে ফেলে দুই গোয়েন্দা, দুই লেখকের স্টাইল তুল্যমূল্য একটা পোস্ট ফাঁদব রেডি হয়েছিলাম, সে সবও মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে সে সব কোন জনমের কথা। গত দেড় সপ্তাহ ধরে সামান্য একটু বদল লক্ষ করছি। আগের মতো পড়তে পারছি। জামাকাপড় পরে ভাঁজ করব বলে পড়া, ফ্রিজের খাবার গরম করার বদলে মুড়ি চানাচুর দিয়ে ডিনার সেরে পড়ার মতো পড়া, অবান্তরে পোস্ট পরে করলেও চলবে বলে পড়া। কী পড়ছি সে নিয়ে কোনও “রহস্য” নেই। আছে কি? আর এই রহস্যের জোগান দিয়ে যিনি আমাকে ফের পড়ামুখো করেছেন তাঁর নাম রুথ ওয়্যার। ব্রিটিশ রহস্যরোমাঞ্চ লেখকদের দীর্ঘ এবং জ্বলজ্বলে ঐতিহ্যের উত্তরসূরি। রুথ ওয়্যার আপাতত পাঁচটি উপন্যাস লিখেছেন।

খেতেও ভালো, দেখতেও

Image
কী খেতে ভালোবাস সোনা? কী তোমার ওখানে খাওয়া হয় না? কী খাবে?   সত্যিবচন করতে হলে বলতে হয় যে কিছু একটা হলেই হবে (মুলো ছাড়া)। কিন্তু এই উত্তরটা দেওয়া মানে সবাইকে বিপদে ফেলা। বৌদি থাকলে কত কিছু করে দিত, আমরা তো সে রকম পারব না, তবু তুমি যদি মনের ইচ্ছেটা বল। বাবা অলরেডি বলে রেখেছেন বড়ার তরকারির কথা, ডাল অলরেডি ভিজছে। আলুপোস্তও রেডি। বললাম, শনিবার বেগুনপোড়া হোক। বেগুনপোড়া আমি মাঝেমাঝেই খাই, কিন্তু আরও অনেক খেতে পারি। দিলেই খেতে পারি। আমি বাড়ির মেয়ে, আবার অতিথিও। এই রেওয়াজটা মা করে দিয়ে গেছেন। আমি আসার হলে ব্রাশ পেস্ট তোয়ালে চটি নিয়ে মা একেবারে   এমন রাজকীয় অভ্যর্থনা করতেন। বেস্ট থালাটায় খেতে দিতেন। ছোটবেলায় (বড়বেলাতেও) ছুটির দিনে ভালো জলখাবার বাইরের লোকের জন্য তুলে রাখা প্লেটে সাজিয়ে বেড়ে দিতেন। আমিও বাইরের লোকদের মতো ভদ্রতা করে বলতাম, এত খাটনি কেন করলে মা, আমি তো বাড়ির লোক। মা বলতেন, ধুর বোকা, বাড়ির লোককেই তো বেশি যত্ন করতে হয়। সে যত্ন আমার অটুট আছে।   মীরামাসি বিপন্ন মুখ করলেন। আর কী তরিতরকারি হয়? আমি হেল্পফুল হয়ে বললাম, আলু পটল বেগুন কুমড়ো ফুলকপি বাঁধাকপি… সেখা

হরিয়ালি

Image
আমাদের নতুন অফিসবাড়ি গ্রিন বিল্ডিং। বিল্ডিং কীসে গ্রিন হয়, তার ভাইট্যাল স্ট্যাটস, আকারপ্রকার, বৈশিষ্ট্য, গুণাবলী, কার্বন ফুটপ্রিন্ট খুঁটিনাটি জানতে চাইবেন না, আমি জানি না। খালি জানি যা যা হলে গ্রিন বিল্ডিং হয়, এ বাড়ির তা তা আছে। আমাদের নতুন বাড়ি রীতিমত স্ট্যাম্প মারা গ্রিন বিল্ডিং। আমার মতো মূর্খ মানুষের চোখ দিয়ে ওপর ওপর দেখলেও বোঝা যায় বাড়িটি গ্রিন। প্রচুর গাছ। প্রচুর ফুল। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে ছাদ। ব্যালকনি থেকে সিঁড়ি। প্রতি ফ্লোরের জানালায়। গ্রিন আর গ্রিন। এত গ্রিন যে পাখিরা ক্রমাগত পথ ভুলে ঘরে ঢুকে পড়ে। নতুন দরজার স্প্রিং এত টাইট যে কেউ ঠেলে ঢুকলে স্বস্থানে ফেরত যেতে অন্তত পঁয়তাল্লিশ সেকেন্ড সময় নেয়। সেই ফাঁকে একটা ছোট পাখি ঢুকে পড়েছিল। আমরা যতই তাকে দরজার দিকনির্দেশ করি, সে ততই এদিক থেকে ওদিক ফরফরায়। এক্সিট লেখা বোর্ডের ওপর গিয়ে বসছে, অথচ এক্সিট নিচ্ছে না। নিরক্ষরতার অভিশাপ। ঝাড়া দশ মিনিট হুস হুস করার পর সে অবশেষে বেরোল। চারপাশে এত গাছ দেখেই বোধহয় সবার মনে একটা গাছ গাছ ভাব জন্মেছে। আমার টেবিলে গাছ আছে অনেক বছর ধরেই। তাদের দেখে আশেপাশের টেবিলের লোক খুব যে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল

আমার বাঁচা তোমার বাঁচা

বাড়ি গিয়ে অনেক লোকের সঙ্গে দেখা হল। মানে লোকের সঙ্গে তো সবসময়েই দেখা হয়, কিন্তু এবার যেহেতু একটু বেশিদিন থাকা হল আর উপলক্ষটাও লৌকিকতার উপযুক্ত ছিল তাই যাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা নয় তাদের সঙ্গেও হল। এদের মধ্যে আমার সমবয়সীরাও আছে। যাদের সঙ্গে আমার জীবনটা এক সঙ্গে শুরু হয়েছিল। প্রাসঙ্গিক কথাবার্তা হল। তারপর সেই প্রশ্নটা আবার উঠল।   যোগাযোগ রাখিস না কেন?  যুগটাই পড়েছে যোগাযোগের। অবশ্য সে দিক থেকে সব যুগই যোগাযোগের। প্রথম যখন পায়রার বদলে টরে টক্কায় খবরাখবর চালাচালি হতে শুরু করল তখন নিশ্চয় সবার মনে হয়েছিল, উফ, যোগাযোগে বিপ্লব এসে গেছে। তখনও নিশ্চয় নিয়মিত ব্যবধানে খবর না পেলে লোকে নালিশ করত। এখন তো কত সুবিধে। পায়রা পোষার দরকার নেই, মাঝপথে পায়রা অ্যালজাইমার হয়ে অন্য রুটে চলে যাওয়ার আতংক নেই, বজ্রপাতে পায়রার অকালমৃত্যুর ভয় নেই, জাস্ট টকা টক টক টকা টক। এতেও যোগাযোগ রেখে ওঠা যাচ্ছে না? কিন্তু আমি পায়রার যুগের লোক নই, টরে টক্কায় ইমপ্রেসড হই না। আবার একশো বছর পরেরও লোক নই যখন ফোনের ভেতর দিয়ে হাত বাড়িয়ে একে অপরকে ছুঁয়ে দিতে পারবে আর দু’হাজার উনিশের যোগাযোগের বারফট্টাই মনে করে

আমার সাঁতার তোমার সাঁতার

উচিত নয় জেনেও সোম বুধ শুক্র বেল বাজলে দরজা খুলে বলি, আজ কোন হাতটা নাড়তে শিখলে? ওই তিন দিন অর্চিষ্মান অফিসের পর সাঁতার শিখে ফেরে। যে পরিমাণ ক্লান্ত থাকে আমার রসিকতায় চোখ ঘোরানো ছাড়া আর কোনও প্রতিক্রিয়া দেখানো ওর পক্ষে অসম্ভব, কাজেই আমি সুযোগের এবং বদস্বভাবের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করি এবং হাক্লান্ত বরকে জল চা কিচ্ছু না সেধে ভুরু নাচিয়ে মুচকি হেসে একই প্রশ্ন ঘুরিয়েফিরিয়ে করে যাই। ডান হাত কমপ্লিট? সামনের সপ্তাহে কি বাঁ হাত? ডান পা কি নেক্সট মাসে? আমি সাঁতার শিখেছি আমার পাড়ার পুকুরে, চেনাজানা সবাই ওই পুকুরেই শিখেছে। বা অন্য কোনও পুকুরে। তা বলে কাউকে স্কুলে গিয়ে সাঁতার শিখতে দেখিনি যে তেমন নয়। সাঁতার যে ইস্কুলে গিয়ে শেখার জিনিস, তার যে রীতিমত ব্যাকরণ আছে তাও জানি। বুলা চৌধুরী, আমাদের পাড়ার মেয়েই বলা যায়। অর্থাৎ চুঁচুড়ার। চুঁচুড়া পাড়া হল কী করে যদি জিজ্ঞাসা করেন তাহলে বলব, কলকাতার লোকেরা আমাদের তাঁদের শহরের ভাগ দিতে রাজি নয় বলে গোটা মেন লাইনটা আমরা নিজেদের পাড়া বলে ধরে নিয়েছি। এদিকে লিলুয়া থেকে ওদিকে ব্যান্ডেল। মাঝখানে ডিটুর করে সিঙ্গুর, হরিপাল - ও-ও আমাদের দিকই হল। শিশির ঘোষ আমাদের পা

যদি কেবল একটি বরই মেলে

মাঝে মাঝে আমার সহকর্মীদের জন্য মনখারাপ হয়। সেই সব অটোভাইসাবদের জন্য, পুল সহযাত্রীদের জন্য, সেই সব কুকুরগুলোর জন্য যারা আজকের মতো দিনে আমার মুখোমুখি হবে।  চোখ খোলার মুহূর্তেই বুঝে গেছি আজ সেই সব দিনগুলোর একটা হতে চলেছে। আজ ‘আমার-সঙ্গেই-কেন-এ’রম-হয়-ঠাকুর ধাতের দিন। বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করবে না। চা হবে নিড়বিড়ে, শিরদাঁড়াহীন। উবারের ম্যাপে দেখব ভাইসাব আমার থেকে ক্রমাগত দূরে, আরও দূরে চলে যাচ্ছেন। এদিকে ঘড়িতে আটটা চার। ক্যান্সেল করব। উবার বিনীত গলায় জানাবে, ইউ উইল বি চার্জড আ স্মল ফি সিন্স হি হ্যাজ অলরেডি স্টার্টেড দ্য জার্নি।  আমি দাঁতে দাঁত চেপে বলতে চাইব, নো হি হ্যাজ নট, কিন্তু কাকে? কেউ শোনার নেই। আজ ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়বে যে আমার কিস্যু হস্যে না। বাকি সবারই সব হয়ে যাচ্ছে, যা চাচ্ছে, টপাটপ।   আজ এক হাতে বরফঠাণ্ডা জলের গ্লাস, অন্য হাতে ফুটন্ত চায়ের কাপ নিয়ে প্যান্ট্রির দরজা পা দিয়ে খুলে বেরোতে যাব, দরজার ফ্রেমে কাঁধে ধাক্কা লেগে দুই তরলের একটা ছলকাবে। কোনটা, গেস করার জন্য কোনও প্রাইজ নেই।  অর্ধেক কাপ সদ্য ফুটন্ত জল আমার আঙুলে। দেখতে দেখতে চারটে আঙুল লাল। কোনওমত