Posts

Showing posts from 2022

ক্রিসমাস ইভ

তিনমূর্তি ভবনের আর্কাইভে গবেষণার কাজে যেত শ্বেতা, খবর দিয়েছিল মাইসোর ক্যাফের। সকালে সাইকেডেলিক শর্টস্‌ পরা সাইক্লিস্ট, উইকডেজের দুপুরে ব্যাকপ্যাক কাঁধে ছাত্র, উইকেন্ডের দুপুরে আণ্ডাবাচ্চা সহযোগে পারিবারিক ভিড়। সস্তায় ভালো খাবারের বিশ্বস্ত ঠেকের খবরাখবর যারা রাখেন দিল্লিতে, মাইসোর ক্যাফে চেনেন। ঢিমেতালের শনিবারে ক্যাফেতে পৌঁছতে বেলা হল। মা বাবা দুই মেয়ের পরিবার খাওয়া সেরে উঠতে টেবিল দখল করতে আরও দেরি। হইহই করে আরও তিনটে পরিবার ঢুকে এল দরজা দিয়ে। ভাগ্যিস সবক’টাই তিনের বেশি সদস্যসম্বলিত, টেবিল ভাগাভাগি করার প্রস্তাব এল না। খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে সাউথ অ্যাভিনিউ লেনের ধুলোতে গড়াগড়ি খাওয়া ঝিরিঝিরি রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে সন্দেহটা সত্যি হল। মেদুবড়া, কফির ওপর মিরচি বড়া, দেখতের তুলনায় যা নিশ্চিতভাবেই খেতে খারাপ, বেশি হয়ে গেছে। উবার বন্ধ করে হাঁটতে শুরু করলাম। পিঠে ল্যাপটপ, মনে উচ্চাশা। ফেরার পথে কফিশপে বসে কাজ করব। কেউ কফি শপে গিয়ে গলাকাটা দামের কফি খেতে খেতে কাজ করে, বই পড়ে শুনলে মনে মনে একসময় তার সম্পর্কে একটা ধারণাটা করতাম। নিজেই সেটায় পরিণত হয়েছি। পিঠে ভার, মনে উচ্চাশা, গায়ে রোদ্দু

দিন ও জীবন

এই সব কাটাঘুড়ি দিনরাতগুলোয় যখন জীবন শুধুই অতীত নয়তো ভবিষ্যৎ, নিচের কথাগুলো বারবার মনে করার। How we spend our days is, of course, how we spend our lives. What we do with this hour, and that one, is what we are doing. A schedule defends from chaos and whim. It is a net for catching days. It is a scaffolding on which a worker can stand and labor with both hands at sections of time. A schedule is a mock-up of reason and order—willed, faked, and so brought into being; it is a peace and a haven set into the wreck of time; it is a lifeboat on which you find yourself, decades later, still living. Each day is the same, so you remember the series afterward as a blurred and powerful pattern. Annie Dillard, The Writing Life

বেয়াল্লিশ

Image
বাবা সেদিন কাকে যেন ফোনে বলছিলেন, আরে বাচ্চা ছেলে! ফিফটি নাইন! ভাবতে পারেন? যাই, তিন্নির পাঠানো কেক খাই।

নতুন টিভি

মাসতিনেক আগে স্ক্রিনের মাঝখান দিয়ে প্রথম সরলরেখাটা আবিষ্কারের সময় থেকেই মন শক্ত করেছিলাম। একমাসের মধ্যে দুটো, পনেরো দিনের মধ্যে আরও তিনটে, পরের ঠিক তেরোদিনের মাথায় সহস্র সরলরেখার বাণে আমার একযুগ পুরোনো টিভি চিরতরে অন্ধ হল। আজকাল কেউ টিভি দেখে না। দেখবে কী করে, কারও বাড়িতে টিভিই নেই। ও রিপু সকলেই জয় করে ফেলেছে, আমি ছাড়া। টিভি ছাড়া জীবন আমার কল্পনার বাইরে। টিভি দেখি মানে ঠিক "টিভি" দেখি না, কারণ কেব্‌ল কানেকশন নেই যা কোনও মহৎ ভার্চুর সিগন্যালিং নয়। প্ল্যান রিনিউ করতে ভুলে যাওয়ার ভাইসের পরিণাম। তাতে একটাই অসুবিধে হয়েছে, নাপতোল দেখা যাচ্ছে না। আর নাপতোল ছাড়া টিভিতে কি সত্যিই কিছু দেখার থাকে? ওয়েল, জ্যোতিষ আর রূপচর্চাও থাকে। মনে থাকলে রিনিউ করিয়ে নেব'খন। তা বলে আমার টিভি অকেজো নয়। ক্রোমকাস্টের পুঁচকে যন্ত্রটা গুঁজে রেখেছি - ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হইচই - হইহই করে বাজতে থাকে। সকাল থেকে রাত। ঝালাপালা হলে ঘরের আলো নিভিয়ে মিউটেড নীল আভায় শুয়ে থাকি। ঘুমোতে যাওয়ার আগে সানডে সাসপেন্স চালাই। ল্যাপটপের থেকে টিভির কণ্ঠস্বর বেটার। টিভি আমার রেডিওর কাজও করে। টিভি

Do not feed the pigeons

Image
 

দোস্তজী

নেহরু প্লেসে শনিরবি বিকেলের শো-তে চলছিল 'দোস্তজী'। খ্যাতি কানে এসেছিল, গেলাম। হল থেকে বেরিয়ে দোসার দোকান পর্যন্ত হেঁটে এসে, খেতে খেতে ভাবলাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেসুরো চিৎকারের মাঝে আচমকা একটা সুরেলা গান শুনতে পাওয়ার স্বর্গানুভূতি কি গানটার গুণ নাকি চিৎকারগুলোর দোষ? 'দোস্তজী' দেখার ভালোলাগাটা কি 'দোস্তজী'-র কৃতিত্ব? নাকি অন্য ভাষার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এই রকমের সিনেমা হরেদরে? যা আমাদের বসে-দেখা-যায়-না, পাতে-দেওয়া-যায়-না র পাঁকে পঙ্কজ প্রতিভাত হচ্ছে?  বাবরি মসজিদ ভাঙার ছ’মাস কেটেছে। মুর্শিদাবাদের গ্রামে টেনশন বুড়বুড়ি কাটছে। একটি মসজিদের খুনের বদলা আরেকটি মসজিদের জন্ম। আরেকটি মসজিদের জন্মের বদলা কলকাতা থেকে দল এনে রামরাবণের যাত্রাপালা। এর মধ্যে ক্লাস থ্রি-তে পড়া দুটি বালক, শফিকুল আর পলাশ, ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে, বচ্চনের কায়দায় দাঁড়ানো নিয়ে, টকটকি বাজানো নিয়ে মশগুল। 'দোস্তজী' ধীর। এবং একটুও বোরিং না। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারদুটো ইনকমপ্যাটিবল, কিন্তু আসলে নয়। একজন বিখ্যাত লেখক টিপস অ্যান্ড ট্রিকস দিতে গিয়ে বলেছিলেন গল্পের যে জায়গাটা বোরিং লাগছে সেই জায়গাটা স্পিড

খাটুশ্যামজীর ঠেলা

শনিবার সকালে উঠে মনে হয় ভালো কিছু করি। ভালো কিছু দেখি, শুনি, খাই। ভালো খাওয়ার সংজ্ঞা বাকি সমস্ত ভালো জিনিসের মতোই পরিবর্তনশীল। একদিন যা আমোর বিস্ত্রোর নিভুনিভু আলোয় পাঁচশো টাকার পাস্তা, অন্যদিন তা মাইসোর ক্যাফের ফ্যাটফেটে টিউবলাইটে খটখটে টেবিলচেয়ারে কুড়ি টাকার ফিল্টার কফি, দশ টাকার পানিয়ারম। গত তেসরা সকালে সেটা হয়ে গেল খাটুশ্যামজীর ঠেলার পুরিসবজি। মেলাগ্রাউন্ডের গেটের সামনে ঠেলা, ঠেলা ঘিরে দুইচার, দিনের সময় বুঝে চারপাঁচ কি আরও বেশি লোক, একহাত কোমরে রেখে অন্য হাতে সবজির ঝোলে চুবোনো পুরি তুলে মুখে পোরে। চিবোয়। উদাস মুখে মেলা গ্রাউন্ডের দিকে তাকিয়ে থাকে। খেলা হলে খেলা দেখে, না হলে ঘাসওঠা মাঠ। আকাশবাতাস। মুখচোখ দেখে সন্দেহ করার কারণ নেই যে গোটা ব্যাপারটা অখাদ্য লাগছে। আমারও লাগবে না জানি। লাগবেই বা কেন। খাওয়ার আগে রাঁধতে হবে না, খাওয়ার পরে বাসন মাজতে হবে না। আমোর আর মাইসোর ক্যাফের তুলনায় সবথেকে অ্যাডভান্টেজ - চুল না আঁচড়ে, চটি গলিয়ে চলে যাওয়া যাবে। এইটুকু তো রাস্তা, কে আর দেখবে। তবু খাটুশ্যামজীর ঠেলায় আমার যাওয়া হয় না। আরও কত ভালোলাগা গ্যারান্টি জায়গার মতোই। শনিবার যে হল তার ক্রেডিট

ভালো ভাড়াটে

সেদিন একটা অদ্ভুত জায়গায় একটা অদ্ভুত মেসেজ পেলাম। আমাকে কেউ মেসেজ করে না। সেই সত্যিটাকে আমি স্পিন করেছি এই বলে যে আমিই আসলে সব মেসেজের নাগালের বাইরে। করে, মেসেজ চালাচালির যাবতীয় রুট থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছি। শুধু একটি ছাড়া। যেটা আপাত প্রফেশনাল এবং আদ্যন্ত ইউজলেস। চাকরি আর পদমর্যাদা দিয়ে একে অপরের দাম মাপামাপি ছাড়া ওখানে কেউ কাউকে ঘাঁটায় না। অন্তত সে রকমটাই আশ্বাস ছিল আগের সপ্তাহ পর্যন্ত। অথচ আগের সপ্তাহে সেই নিরাপদ মাধ্যমে যখন একটি মেসেজ এসে আমাকে ঘাঁটালো, মেসেজ এবং প্রেরকের পরিচয়জনিত বিস্ময় ঘাঁটিত হওয়ার বিরক্তিকে কয়েকগুণে ছাপিয়ে গেল। প্রেরক আমার এক পুরোনো বাড়িওয়ালা। সি আর পার্কেরই। অন্য ব্লকের। বাজারে মাঝেসাঝে দেখাও হয়। বা উপক্রম হয়। দুজনের মধ্যে একমাত্র আমার চশমা (তাও হাস্যকর রকমের হাই পাওয়ারের) থাকা সত্ত্বেও দশবারের মধ্যে ন’বারই আমি আগে ওঁকে দেখে ফেলে গলি বদলাতে সক্ষম হই। একবার দাদুর বিজনেস কনগ্লোমারেটের চাউমিন শাখার সামনে ধরা পড়ে গিয়েছিলাম। চাউমিনের দোকানের সামনে অ্যালার্টনেস আগেও টাল খেয়েছে। ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং কারণ দাদুর বিবিধ সম্ভারের সবকিছুরই আমি ভোক্তা, চপ থ

কুহকিনী

উইলিয়াম গে নামক একজন লেখকের একটি উপন্যাসের রিভিউ দেখছিলাম ইউটিউবে। উপন্যাসের নাম টুইলাইট, জঁরা সাদার্ন গথিক। এর বেশি কিছু জানি না, বলারও নেই, পড়িনি, সম্ভবতঃ পড়বও না। রিভিউয়ার ভদ্রলোকের বইটা অতটাও পছন্দ হয়নি। ওঁর সঙ্গে আমার পছন্দঅপছন্দ মেলে কাজেই ধরে নেওয়া যায় টুইলাইট আমারও অল্প পছন্দ হবে। অসুবিধে নেই। অল্প পছন্দের বই পড়ার এনার্জি, টেম্পারামেন্ট, সময় সবই আমার অল্পের বেশি আছে। নিয়ম করে এমন অনেক বই পড়ে থাকি যেগুলো সম্পর্কে অলরেডি আঁচ থাকে যে অত পছন্দও হবে না, এমনকি বমিও পেতে পারে। তবু টুইলাইট পড়ছি না। তবু উইলিয়াম গে-কে নিয়ে পোস্ট লিখতে বসেছি। ভুল বললাম। তিনদিন আগে পর্যন্ত উইলিয়াম গে-র নাম পর্যন্ত জানতাম না। এমনও না যে জানার আগ্রহে তিনদিনে গুগল ঢুঁড়ে ফেলেছি। এভিডেন্টলি, উইলিয়াম গে সম্পর্কেও আমি বিশেষ উৎসাহিত নই। তাঁর একটি বৈশিষ্ট্য বাদে। গে লিখতে শুরু করেছিলেন পনেরো বছর বয়সে। গে-র প্রথম বই ছেপে বেরোয় সাতান্ন বছর বয়সে। মাঝের সময়টা গে কী করছিলেন? অলেখকরা যা করে। সংসার। সন্তানপালন। চাকরি। চাকরি বলতে কাঠের কাজ। কন্সট্রাকশন। দেওয়াল গাঁথা, রং করা। এই সমস্ত কাজকর্ম সেরে উইলিয়াম গে লেখায়

প্রথম। শেষ?

কোনও একটা কাজ করার সময় আমরা কি টের পাই যে এই কাজটা জীবনে শেষবারের মতো করছি? আর কখনও করব না, বা করার সুযোগ পাব না? টের পেলে কি ভালো হত? নাকি ভয়াবহ? নব্বই শতাংশ শিওর, মাকে করা কোন ফোনটা লাস্ট ছিল। বলাই বাহুল্য, করার সময় বুঝিনি যে এটাই লাস্ট। আমার অধিকাংশ পছন্দের লোকের (বা যাদের একসময় পছন্দ করতাম, বা ভেবেছিলাম যে এদের আমি পছন্দ করি) সঙ্গে, যাদের সঙ্গে আবার দেখা হওয়ার চান্স প্রায় নেই, শেষবারের দেখা মনে করতে পারছি না। অথচ প্রথম দেখা, প্রথম শোনা, প্রথম ঠেকা, প্রথম শেখা -- জ্বলজ্বলে। প্রথম নিয়ে আমরা অবসেসড। সব আঁতিপাঁতি করে ডায়রিতে, স্ক্র্যাপবুকে, ক্যামেরায়, কিছু হাতের কাছে না থাকলে মনের মণিকোঠায়, জমিয়ে রেখেছি। ক্লিনিক্যাল স্মৃতিভ্রংশ না হলে ভুলব না। পুরোটাই অবসেশন নয়, প্রথমের একটা অ্যাডভান্টেজ আছে শেষের তুলনায়। ঘটনাটা ঘটার সময় বোঝা যায় যে এটা প্রথমবার ঘটছে, আগে কখনও ঘটেনি। যেমন গত কয়েকদিন ধরে ভুলতে পারছি না যে একটা ঘটনা প্রথমবার ঘটছে, তেরো বছরে। অবান্তরে লাস্ট পোস্ট লেখার এক মাস কেটে গেছে। নিরানব্বই শতাংশ শিওর, এ ঘটনা আগে ঘটেনি। কেন ঘটেছে সে নিয়ে আশি শতাংশ শিওর। বলার কথা ফুরিয়েছে। তবু

অ্যানি আর্নো

অ্যানি আর্নো নোবেল পাওয়ায় সেই জরাজীর্ণ বিতর্কের ল্যাজে আবার ক্ষীণ সাড়া। আত্মজৈবনিকতা কি সহি সাহিত্য? একজন মহিলা স্রেফ নিজের কামনাবাসনা, নিজের বাবামা, নিজের শৈশব নিয়ে হেজিয়ে নোবেল বাগিয়ে ফেলাতে অনেকেই বিচলিত। চমকাইনি। বউঠানের স্মৃতিকথা গ্রামভারি পত্রিকায় ছাপা হয়ে গেলে প্রাবন্ধিক দেওররা চিরকালই টাল খেয়ে যায়। বরাভয় দিতে এক লেখক নেমেছেন দেখলাম। চেখভ থেকে তলস্তয় থেকে সার্ত্রে থেকে শুরু করে রুশদি পর্যন্ত লেখকদের (মহাশ্বেতা, আশাপুর্ণার হয়ে তদবিরের ব্লাসফেমি বাদই দিলাম কিন্তু ভার্জিনিয়া উলফ, সিলভিয়া প্লাথ, আরসুলা কে এল গুইন-এর নামও - এমনকি নোবেলবঞ্চিত দের লিস্টেও - কখনও জায়গা পায় না) উদাহরণ দিয়ে দুধ কা দুধ, পানি কা পানি করেছেন। কই, এঁদের তো প্রাতঃস্মরণীয় হতে নোবেল লাগেনি? সার্ত্রে তো পেয়েও নোবেলের মুখে লাথি মেরে চলে এসেছিলেন। আর বছরবছর পাইকারি দরে যারা নোবেল পাচ্ছে (যেমন, এ বছরের প্রাপিকা) তাদের নামও আমরা জানি না। কেউ জানবে না কোনওদিন। নোবেল প্রুভস নাথিং। আর্নো নোবেল পেলেও চেখভ তো আর হচ্ছেন না, কাজেই চাপ নেবেন না। কেউ বললেন, যাই পড়ে দেখি যোগ্য কি না। কেউ নোবেল সত্ত্বেও আর্নোকে না পড়ে দে

ভুলে যাওয়া গানেরা যখন আলো জ্বালে

Image
গানটা লুপে শুনছি আর ভাবছি এত ভালো লাগছে কেন। কথা ক্লিশে, ভাবও। অবশ্য ফুল্‌লি কমিট করতে পারলে ক্লিশে চমৎকার উৎরে দেওয়া যায়, বারংবার দেখেছি। আরেকটা হতে পারে, ভালোলাগার পেছনে গানটার থেকে বেশি কৃতিত্ব গানটার সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার সময়টার। "আমার" বলা ভুল হল কারণ ওই আমি থেকে এই আমি-তে এসে পৌঁছতে সাতটা জন্ম পার হয়ে গেছে মনে হয়। সেই প্রায় বিস্মৃত জন্মগুলোর কিছুই আর খারাপ লাগে না। লাগা সম্ভব নয়। যে কারণে অঞ্জন দত্তও লুপে শুনি আজকাল। বা চন্দ্রিলের যুক্তিটা কাজ করছে। হিট, ভালোলাগা গান মানেই বাজে কথা, ভালো সুর। গানটা কেমন লাগল জানাবেন। কেন লাগল জানালে তো আরও ভালো।

দিবসোপযোগী

আগের বছর পুজো খারাপ কেটেছিল। শপথ নিয়েছিলাম এবারের পুজো ভালো কাটানোর। বিধাতাপুরুষের অ্যাংগলটা মাথায় ছিল না। শীত গ্রীষ্ম পুজো শপথ নির্বিচারে অলক্ষে হাসাহাসিটা যে তিনি চালিয়ে যাবেন, কনসিডার করতে ভুলেছিলাম। পোস্টটা শুরু করার সময় যতখানি লাগছিল, এখন টের পাচ্ছি ততখানিও খারাপ কাটেনি পুজো। গান্ধীরূপী অসুর, বই বিক্রি বাবদে সেলিব্রিটি গ্রেপ্তার সম্পর্কে আপডেটেড থেকেছি। শাড়ি, পাঞ্জাবী, ঝুমকো, কোলাপুরি দেখেছি। খানচারেক মাতৃমূর্তি, চল্লিশটা ঝাড়লন্ঠন। চতুর্থীর ভোর চারটেয় 'তন কি জোয়ালা ঠান্ডি হো যা'র তাণ্ডবে কার কানে তালা, ম্যাডক্স স্কোয়্যারের অনতিদূরে দাঁড়িয়ে কার গলায় দলা - জেনেছি। ভার্চুয়ালি হলেও। বিধাতাপুরুষ বাগড়া দিতে পারেননি। একলা ঘরে ধুদ্ধুড়ে টিশার্ট পাজামা পরে বসিয়ে রেখে, লাঞ্চে পাউরুটি আর ডিনারে মাইক্রোওয়েভে ইন্সট্যান্ট নুডল খাইয়েই তাঁর কেরদানি ফুরিয়েছে। বিধাতাপুরুষ থাকবেন। পুজোও থাকবে। আমিও এক্ষুনি মাঠ ছাড়ছি না (হোপফুলি, এই বাক্যের শেষে গম্ভীর হয়ে থেকেছেন তিনি)। সামনের বছর কে হাসে দেখা যাক। আপনারা সবাই হেসেছেন খেলেছেন আশা করি। প্যান্ডেলে ঢোকার লাইনে দাঁড়িয়ে ঘেমেছেন। অথ

কাজের জিনিস

চেয়ারে বসে ল্যাপটপের ডালা খোলামাত্র ঠন্‌ন্‌ন্‌। চার সেকেন্ড আগে ল্যাপটপের পেছন ঘেঁষে ভর্তি চায়ের কাপটা রেখেছিলাম বটে। মাঝের ঘরের খাটে কিছু রাখলে - প্লাস্টিক, মাধ্যমিকের মার্কশিট, মুদির দোকানের ফর্দ - ফ্যান চলুক না চলুক, হাওয়া দিক না দিক, উড়ে গিয়ে খাট ও দেওয়ালের মধ্যবর্তী আধ মিলিমিটার ফোঁকর গলে পড়ে যেত। হাত ঢুকিয়ে উদ্ধার করা অসম্ভব, গুঁড়ি মেরে খাটের তলায় ঢুকতে হত। ট্রাংক। সুটকেস। অকেজো প্রেশার কুকার। জাস্ট সিটি বদলালেই চালু হয়ে যাবে বলে গত দশ বছর ধরে পুরোনো শাড়ি পেঁচিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। একদা সবুজ ঢাকনা পরানো তারছেঁড়া তানপুরা। প্রেশার কুকারের সেম যুক্তিতে শুয়ে আছে। একটাই পজিটিভ, প্রত্যেকবার অপ্রত্যাশিত একটা কিছু প্রাপ্তি। মাধ্যমিকের মার্কশিটের সঙ্গে ফাউ চুলের ক্লিপ। হারিয়েছে যে সেটাই টের পাইনি। প্রেসক্রিপশনের সঙ্গে একপিস সোনার দুল। নিজের পয়সায় কিনে মা নিজেই হারিয়েছিলেন, আরও একটা দোষ বেরিয়ে পড়ার ভয়ে হায়হায়টুকু পর্যন্ত প্রাণ খুলে করতে পারেননি। হৃতবস্তু, ফাউ এবং মাথায় ঝুলসহ বেরিয়ে এসে মা বলতেন, একটা জিনিস খেয়াল করেছিস সোনা? গোটা ঘটনাটার দ্বিতীয় এবং শেষ পজিটিভ ব্যাপারটা ছিল ভারতে

কথা ছিল?

অর্চিষ্মান আমাকে কবিতাটা পড়াল। আমি আপনাদের সেটা পড়াতে চাইলাম। পাসিং দ্য কার্মা। অন্যরকম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পাহাড় শিখর ছেড়ে মেঘ ঝুঁকে আছে খুব কাছে চরাচর বৃষ্টিতে শান্ত আমি গভীর উদাসীন ব্ৰহ্মপুত্রের পাশে চুপ করে দাঁড়াই জলের ওপারে সব জল-রং ছবি নারীর আচমকা আদরের মতন স্নিগ্ধ বাতাস– এই চোখজুড়োনো সকাল, অদ্ভুত নিথর দিগন্ত মনে হয় অজানা সৌভাগ্যের মতন তবু সুন্দরের এত সামনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ আমার মন খারাপ হয়ে যায় মনে হয় এ জীবন অন্যরকম হবার কথা ছিল।

কালচার কা মামলা

Image
 

আনন্দের দাম

ফ্রি জিনিসপত্র পছন্দ করি। ফ্রি পেন, ফ্রি ফোল্ডার, ফ্রি উপদেশ। অনেকের শেষের আইটেমটায় অসুবিধে হয়। আমার হয় না। প্রথমত, ফ্রি-তে উপদেশ যিনি দিচ্ছেন গোটা পরিশ্রমটা তাঁরই। আমার কাজ খালি মুখ বুজে মাথা নাড়া। তাছাড়া দেওয়ার সময় দাতার সর্বাঙ্গে ফোটা ঐশ্বরিক দীপ্তির আঁচ পোয়ানোও আরামদায়ক। ফ্রি খাবার বরং ততটাও ভালোবাসি না। বিশেষ করে প্রসাদজাতীয় খাবার। আমাদের প্রতিবেশীরা অনেকেই ভক্তিমান এবং আমাদের গুডবুকে রাখেন। তাঁদের বাড়িতে মাসে অন্তত দু’বার ঘটা করে পুজো হয় এবং আমার বাড়িতে প্রসাদের থালা আসে। সে থালা প্রথমদিন এক হাতে ধরতে গিয়ে ফেলে দিচ্ছিলাম আরেকটু হলে। আপেল, বেদানা, কলা, মুসাম্বি, কালাকাঁদ, গুজিয়া, নাড়ু, লুচিসুজি, পায়েস। অনেকদিন ভেবেছি দু’পক্ষেরই সুবিধের জন্য একটা নিয়মাবলী বানাই। কাটা ফল বাদ দিলেই বেস্ট, যদি দিতেই হয় আলাদা প্যাক করবেন। সন্দেশ আলাদা, লুচি আলাদা, সুজি আলাদা। লুচির খাঁজ চেঁছে বার করা গলা কলা তো খাবই না, লুচিটাও নির্দ্বিধায় ফেলে দেব। ভোগের লাইনেও এই কারণেই দাঁড়াই না। ঠেকাঠেকি হওয়ার ভয়ে পাতে ডালের সঙ্গে পটলভাজা পর্যন্ত একসঙ্গে নিই না। ডাল খাওয়া শেষ করে পটলভাজা দিয়ে শুধু শুধু

The Convenience Store Woman/Sayaka Muruta, Ginny Tapley Takemori

Image
পার্কে বাচ্চারা খেলছে। খেলতে খেলতে তারা একটি মৃত পাখি আবিষ্কার করল। তখনও উষ্ণ। তখনও কল্পনা করে নেওয়া যায় ছুঁলে ছোট্ট নরম গা থরথরিয়ে উঠবে। মৃতদেহটি ঘিরে বাচ্চারা দাঁড়িয়ে রইল। কারও চোখে জল আসবে আসবে, কারও এসে গেছে। মায়েরা সান্ত্বনা দিলেন পাখিটির জন্য নন্দন কবর খুঁড়ে দেবেন পার্কের কোণে। "কিপ অ্যাওয়ে", বিনীত অনুরোধসহ বোর্ড পুঁতে দেবেন। সবার মন ভালো হবে হবে করছে এমন সময় ছোট দুটো পাঞ্জা ছোঁ মেরে তুলে নিল পাখিটাকে। দৌড়ে চলে গেল পার্কের অন্য কোণে বসে থাকা মায়ের কাছে। মা! মা! আজ ডিনারে সেঁকা মাংস! মায়ের মেয়ের নাম কিকো। কিকোদের স্কুলে মারামারি বেধেছে। দুটো ছেলে, কিকোর থেকে অল্প বড়ই হবে, প্রাণপণ যুযুধান। মুখ, কান চেপে উদ্বিগ্ন ভিড় ঘিরে আছে। খবর পাঠানো হয়েছে উচ্চতর অথরিটির কাছে, ব্যবস্থা যদি কেউ নিতে পারে তাঁরাই পারবেন এই আশায়। ইতিউতি চিৎকার উঠছে, ওদের কেউ থামাও, না হলে একটা কিছু. . .  কিকো একটা বেলচা নিয়ে এল। গদাম মারল এক প্রতিপক্ষের মাথায়। পক্ষপাতিত্ব করেনি কিকো, বেলচার কাছাকাছি যে ছিল তাকেই বেছেছে। মাথা চেপে ধরে ছেলেটি শুয়ে পড়ল মাটিতে। যুদ্ধ ফিনিশ। পেছন ফিরে ভিড় এবং ততক্ষণে পৌ

হরোউইটজ, হরোউইটজ

Image
Foyle's war Creator and Director: Anthony Horowitz দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইংল্যান্ডের সমুদ্রতটবর্তী হেস্টিংস শহরের খুনখারাপি সমাধান করার একেকটা গল্প নিয়ে ফয়েল'স ওয়র-এর একেকটা পর্ব। ফয়েল হচ্ছেন হেস্টিংসের পুলিসবাহিনীর ডিটেকটিভ চিফ সুপারিন্টেডেন্ট। সিরিজের ঘটনাপ্রবাহ শুরু হয় উনিশশো চল্লিশে, শেষ উনিশশো ছেচল্লিশে। আটটি সিজনের প্রথম ছ'টিতে যুদ্ধ চলছে, শেষ দুটি সিজনে যুদ্ধ থেমেছে কিন্তু অন্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যার নাম কোল্ড ওয়র। ফয়েল সে দুটি সিজনে এম আই ফাইভ-এর হয়ে কাজ করছেন। প্রথমেই যেটা নজরে পড়তে বাধ্য তা হচ্ছে ফয়েল'স ওয়র-এর চেহারা। সময় বোঝাতে শুধু রং বদলে কাজ সারা হয়নি, লোকজনের পোশাকআশাক, ভাষা, চলাফেরা, রাস্তাঘাট, লন্ডনের এবং শহরতলির চেহারার খুঁটিনাটি খেয়াল রাখা হয়েছে, এমনকি যুদ্ধে ব্যবহৃত প্লেনটলেন হাজির করা হয়েছে। ওদের বাজেট বেশি তাই ওরা পারে বললে বলবে কেউ, কী আর করা যাবে। বলা বাহুল্য, বাজেট ছাড়াও ফয়েল'স ওয়র জনপ্রিয় হওয়ার আরও কিছু কারণ আছে। এক, প্রেক্ষাপটের যুদ্ধকে অসামান্য ভাবে গল্পে গেঁথে দেওয়া। একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্লান্তি, মানুষের ভয়, অনিশ্

ঝামেলা

যাঁরা ফুল কিনে বাড়ি সাজান তাঁদের প্রতি জেনুইন মুগ্ধতা লালন করি। বা সুন্দর সুন্দর মূর্তি, ঝালর পর্দা, ঝিনুকের ট্রে, আয়না, ঘোড়া, মুখোশ দিয়ে। আমি পারি না। নান্দনিকতায় না কুলোনো ছাড়াও অন্য কারণ আছে। সাজানোর পর থাকে পরিশ্রমের পালা। নিয়মিত ঝাড়তেমুছতে হয়, তাকিয়ে মুগ্ধ হতে হয়। বাড়িসজ্জায়, জীবনে, যতটুকু না হলে নয় ততটুকু দিয়ে উতরে দেব। ঠিক করে ফেলেছি। দরকারের অতিরিক্ত সবকিছুই আজ নয়তো কাল আবর্জনায় পরিণত হয়। অন্তত আমার ক্ষেত্রে হয়ে এসেছে। ফুলটাও কাজের জন্যই কিনতে গিয়েছিলাম। মাসিমার - যাঁর বাড়িতে আমরা মহা আরামে ভাড়া থাকি - মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। অলরেডি গাঁথা মালাগুলোর মুখোমুখি পড়ে আমাকে মৌন দেখে দাদা প্রস্তাব দিলেন চন্দ্রমল্লিকার নতুন মালা বানিয়ে দেওয়ার। দাদা বিরাট সূচে চন্দ্রমল্লিকাগুলোকে বিঁধতে লাগলেন। বললাম, আপনার মনে নেই, কিন্তু বছর ছ’সাত আগে ট্যাক্সিতে ফোন ফেলে নেমে পড়ে আপনার ফোন থেকে ফোন করে সেই ফোন উদ্ধার করেছিলাম। মনে থাকবে না কেন, দিব্যি মনে আছে। অফিস থেকে ফিরছিলেন তো? ট্যাক্সিটা সাবিত্রী অবধি চলে গিয়েছিল তারপর আবার ফিরে এল। মাসিমার বাড়ির কাজের জন্য? দাদা কথোপোকথনের হাল ধরলেন।