কুহকিনী


উইলিয়াম গে নামক একজন লেখকের একটি উপন্যাসের রিভিউ দেখছিলাম ইউটিউবে। উপন্যাসের নাম টুইলাইট, জঁরা সাদার্ন গথিক। এর বেশি কিছু জানি না, বলারও নেই, পড়িনি, সম্ভবতঃ পড়বও না। রিভিউয়ার ভদ্রলোকের বইটা অতটাও পছন্দ হয়নি। ওঁর সঙ্গে আমার পছন্দঅপছন্দ মেলে কাজেই ধরে নেওয়া যায় টুইলাইট আমারও অল্প পছন্দ হবে। অসুবিধে নেই। অল্প পছন্দের বই পড়ার এনার্জি, টেম্পারামেন্ট, সময় সবই আমার অল্পের বেশি আছে। নিয়ম করে এমন অনেক বই পড়ে থাকি যেগুলো সম্পর্কে অলরেডি আঁচ থাকে যে অত পছন্দও হবে না, এমনকি বমিও পেতে পারে।

তবু টুইলাইট পড়ছি না। তবু উইলিয়াম গে-কে নিয়ে পোস্ট লিখতে বসেছি। ভুল বললাম। তিনদিন আগে পর্যন্ত উইলিয়াম গে-র নাম পর্যন্ত জানতাম না। এমনও না যে জানার আগ্রহে তিনদিনে গুগল ঢুঁড়ে ফেলেছি। এভিডেন্টলি, উইলিয়াম গে সম্পর্কেও আমি বিশেষ উৎসাহিত নই।

তাঁর একটি বৈশিষ্ট্য বাদে।

গে লিখতে শুরু করেছিলেন পনেরো বছর বয়সে। গে-র প্রথম বই ছেপে বেরোয় সাতান্ন বছর বয়সে। মাঝের সময়টা গে কী করছিলেন? অলেখকরা যা করে। সংসার। সন্তানপালন। চাকরি। চাকরি বলতে কাঠের কাজ। কন্সট্রাকশন। দেওয়াল গাঁথা, রং করা। এই সমস্ত কাজকর্ম সেরে উইলিয়াম গে লেখায় মনোনিবেশ করেছিলেন। না, হেমিংওয়ে হননি। কিন্তু জীবনভরের সমস্ত কাজ ফেলে রেখে বা সমস্ত কাজের সঙ্গে সঙ্গে লিখে গেলেও সে গ্যারান্টি কেউ দিতে পারত কি?

উইলিয়াম গে জাতীয় লেখকের গল্প আমার মনে ছাপ ফেলে কেন বোঝা শক্ত নয়। কারণ আমি বুড়ো হয়েছি এবং আমার মতে (এমন নয় যে অন্যরা ঝাণ্ডা উড়িয়ে  ভিন্নমত) কিছুই হয়ে উঠতে পারিনি। কিছুই করে উঠতে পারিনিও বলা যেত, বললাম না। কারণ আমার ধারণা করে ওঠার থেকে হয়ে ওঠায় আমি বেশি ইন্টারেস্টেড। এমনও নয় যে স্বাবলম্বী বাদে আরও পাঁচশোরকম হতে চেয়েছি। ওই এক লেখক। পারিনি, এখনও।

এদিকে বিষফোঁড়ার মতো চারদিকে সবাই সবকিছু হয়ে যাচ্ছে (বা করে ফেলছে)। চোদ্দ বছর বয়সে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। উনিশ বছর বয়সে বুকার লংলিস্ট। আমার বয়সে ফেডেরার রিটায়ার করে ফেলেছেন।

মুখে প্রকাশ না করলেও (লিখে করছি অবশ্য) ভেতরে ভেতরে আধমরা হচ্ছি। কেবলই মনে হচ্ছে জীবনটা একেবারে নষ্ট হয়ে গেল।

এ মনে হওয়ার মধ্যেও কোনও অসাধারণত্ব নেই। সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্যক্রমে মানবসভ্যতার ইতিহাসে যত লোক আমার বয়সে পৌঁছেছে, প্রতিষ্ঠাপ্রতিপত্তি রূপগুণ অর্থযশ নির্বিশেষে, বিভিন্ন ফর্মে ও শেপে একই আতংক সকলের বুকে জেগেছে। জাগবে। চোদ্দ বছরের চ্যাম্পিয়ন আর উনিশ বছরের ঔপন্যাসিকও পালাতে পারবে না। সমস্ত শুভেচ্ছা বুকে নিয়েই বলছি। কারণ এই আতংক দাঁত পড়া, চুল পাকার মতো একটি শারীরবৃত্তীয় ঘটনা। যার বৈজ্ঞানিক নাম মিডলাইফ ক্রাইসিস। মাঝবয়সের সংকট।

সংকট কমন হলেই ধ্বক কমে না। গল্পটা আগেও করেছি। বইমেলায় হাঁটাহুটির মাঝে হাঁফ ছাড়ছিলাম কিওস্ক-লাগোয়া চাতালে বসে। চতুষ্পার্শ্বে চা কফি ভেজ ননভেজ প্যাটিস সাবাড়রত ভিড় গমগম করছিল। পাশে বসে ছিল একটি বালক। কত হবে, ছয়। হলুদ গেঞ্জি, খাকি হাফপ্যান্ট, গালের দু’পাশ দিয়ে ঝুলন্ত কালো দড়িসুরক্ষিত গোলাপি ফ্রেমের চশমা, কদমছাঁট। বাবামা চায়ের কাপ হাতে অন্যান্য বড়দের সঙ্গে হেসে হেসে ভদ্রতা করছিলেন। বাচ্চাটিকে মনোযোগ দিচ্ছিলেন না।

এত কিছু ওই মুহূর্তে খেয়াল করিনি। ওই মুহূর্তে আমাকেও অ্যাজ ইউজুয়াল কেউ মনোযোগ দিচ্ছিল না, এক কাপ চা শেষ করে শূন্যের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম আরেক কাপ খেলে আরেকটু কম বোর লাগবে কি না। এমন সময় দৃষ্টিকোণে হলুদের আভাস ঘনাল। চোখ ফিরিয়ে বাচ্চাটিকে এবং উপরোক্ত ডিটেলস আবিষ্কার করলাম। বাচ্চাটি পাশ ঘেঁষেই বসেনি, টেরিয়ে দেখছেও। অর্থাৎ আলাপে আপত্তি নেই, আইস ব্রেকিং-এ অস্বস্তি। আমিই এগোলাম। তার আর বাবামায়ের মাঝখানে রাখা থাকথাক প্লাস্টিকের দিকে ভুরু নাচিয়ে যেই না জিজ্ঞাসা করেছি কী কী বই সে কিনল, অমনি হাঁ করে দাঁতের সারির একটি ফোঁকরের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে বালক বলল, আমার তো দাঁতই পড়ে গেছে।

এত বড় একটা মহাজাগতিক ইভেন্টের সামনে কীসের বই, কীসের বইমেলা, কীসের বাবামায়ের অজান্তে অবহেলা। কিন্তু এও তো জানি যে ইভেন্টটির গুরুত্ব বালকটির কাছে যতখানি প্রতিভাত হচ্ছে ইভেন্টটি আসলে তত গুরুত্বপূর্ণও নয়, এ ঘটনা পৃথিবীর সম্ভবত সব হোমোসেপিয়েন্সের সঙ্গে ঘটেছে, ঘটে, ঘটবে। তাছাড়া এ তো সবে দাঁত, আরও কত পড়ে যাওয়া সামনে অপেক্ষা করছে তার বিন্দুমাত্র আইডিয়াও যদি বালকের থাকত।

ডিল উইথ ইট। বলতে পারতাম। বলিনি। কারণ পরদিন সকালেও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে হোমোসেপিয়েন্স বলে দাবি করতে হত আমার।

বইমেলার বালকের দাঁত পড়া যা, আমার মিডলাইফ ক্রাইসিসও তা-ই। হরেদরে, ঘিসিপিটি, ক্লিশে। কিন্তু আনঅরিজিন্যাল বলেই ধরে নেওয়ার কারণ নেই যে এ ক্রাইসিস আমার নাম ভুলিয়ে দিচ্ছে না।

উইলিয়াম গে-র মতো লেখকের গল্প আমার সেই নামভোলানোয় মলম বোলায় । লি চাইল্ডের গল্পও। লি চাইল্ড ওঁর আসল নাম নয় কিন্তু সেটা আনইম্পরট্যান্ট। চল্লিশ বছরে চাইল্ড-এর চাকরি গিয়েছিল। টিভির স্ক্রিপ্ট লেখার চাকরি। বেকার হয়ে লি চাইল্ড স্থির করলেন যথেষ্ট হয়েছে ফাজলামি, এবার উপন্যাস লেখা শুরু করা যাক।

লি চাইল্ডের একটি পুঁচকে ইন্টারভিউ আছে ইউটিউবে এবং আমার ‘ওয়াচ লেটার’ প্লেলিস্টে। সিপ্রালেক্সের অভাব জোর অনুভুত হলে চালিয়ে দেখি।

লি চাইল্ড উপন্যাস লিখলেন এবং লি চাইল্ড হলেন। অনেক বছর পেরিয়ে নবীন ইন্টারভিউয়ার যখন জানতে চাইলেন, এত দেরিতে লেখা শুরু করার জন্য চাইল্ডের কোনও আফসোস আছে কি না, প্রপার ইংলিশ জেন্টলম্যানের জেন্টল কিন্তু অসংশয়ী কণ্ঠে লি চাইল্ড জানালেন, না। নেই।

কারণ দেখেশুনে তিনি সিদ্ধান্তে এসেছেন লেখা স্ট্রিক্টলি একটা বয়সের পরেই শুরু করা দরকার। কারণ জীবন না দেখলে লিখবে কী নিয়ে?

সেই। রবীন্দ্রনাথ কত বছর বয়সে ভানুসিংহের পদাবলী লিখেছিলেন যেন?

এ সব দাবি বিতর্কসভার আদর্শ টপিক। তার্কিকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লড়ে যাবে, কোনও পক্ষের যুক্তি ফুরোবে না, দর্শক হাই তুলে বাড়ি চলে যাবে। লেখার জন্য জীবন দেখা দরকার কি না। (‘দেখা’ মানেই বা কী? বেশি সময় ধরে দেখা মানেই কি বেশি দেখা?) যা জানি যা দেখেছি তার বাইরের জিনিস নিয়ে লেখা সম্ভব কি না। সম্ভব হলেও উচিত কি না। ভাষা, বিষয়, আঙ্গিকের ফ্রন্টিয়ার না ভাঙলে সাহিত্যচর্চার মানে আছে কি না। গল্প উপন্যাসের শব্দসীমা বেঁধে দেওয়া লেখাকে চোট পৌঁছয় কি না। বাংলা লেখায় ইংরিজি শব্দের ব্যবহার অ্যালাউ করা উচিত কি না। ফেসবুকের লেখা আদৌ লেখা কি না। ওয়েবজিনের লেখা আদৌ লেখা কি না। লিটল ম্যাগাজিন ছাড়া আর কোনও প্ল্যাটফর্মের লেখা আদৌ লেখা কি না।

প্রশ্নগুলো কঠিং কারণ কোনও উত্তর নেই। বা বড় বেশিরকমের উত্তর আছে। আমার মতে নিজের মতো একটি উত্তর বেছে নিয়ে চুপচাপ থাকাই ভালো। ঠিকভুল বিচারের ঝামেলায় না গিয়ে।

কাজেই লি চাইল্ড ঠিক নাকি উইলিয়াম গে-র জীবনাচরণ ঠিক না ভুল সে বিষয়ে কোনও মতপোষণ করছি না। (করলেও প্রকাশ্যে স্বীকার করছি না।)

রিভিউয়ার আমার থেকে কমবয়সী (অফ কোর্স, আমার থেকে বুড়ো পৃথিবীতে কেউ নেই আর) হলে কী হবে, আমার থেকে সাহসী (এখানেও সারপ্রাইজ নেই, পৃথিবীর সকলেই আমার থেকে সাহসী)। স্পষ্ট সাইড নিলেন। বললেন যে  উইলিয়াম গে-র জীবনমডেল আমাদের মতো পাবলিকদের - বিশেষ করে যারা লেখক হওয়ার জন্য হাঁকপাঁক করছে - তলিয়ে দেখা দরকার।

“...he chose that life and did the writing thing later. …..he already lived a life, maybe a few, honestly, before his life became that of a full-time writer...It’s far better to have something to say rather than try and come up with it because it sounds cool. Or the writing life sounds cool."

সঙ্গে সঙ্গে এটাও পয়েন্ট আউট করলেন যে, "...But he never stopped. He had been writing since he was fifteen.”

এবং একটি প্রতিপাদ্যে পৌঁছলেন এবং সবাইকে সে প্রতিপাদ্য তলিয়ে ভেবে দেখার জন্য উদ্বুদ্ধও করলেন। বললেন যে, “... if you have started don’t stop. Just get better. And go live your damn life."

কৃতজ্ঞ হলাম। দ্বিধাহীন দিকনির্দেশ দিতে কনফিডেন্স লাগে। যেটা আমার নেই। অধিকাংশ লোকেরই নেই। কোনও বিষয়ে মতামত চান, দুপুরে আলুভাজা খাওয়া হবে নাকি আলুসেদ্ধ থেকে টাকা মিউচুয়াল ফান্ডে ঢালা হবে না স্টেট ব্যাংকের এফ ডি-তে, অধিকাংশই এটাও ভালো ওটাও ভালো, এটাও খারাপ ওটাও খারাপ, আপনার যা ইচ্ছে সেটাই করবেন বলে শেষমেশ সিদ্ধান্তের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করবে। আমিও করব। কারণ ভয়। সজোরে আলুভাজা বলে দিই, তারপর ভাজতে গিয়ে পুড়ে যাক আর পোড়া আলুভাজা খেতে খেতে মনে মনে খাইয়ে আমার পিণ্ডি চটকাক। 

ধরি মাছ না ছুঁই পানি-র বাজার এই স্পষ্টোচ্চারণ, লেখা পরে হবে, গো লিভ ইয়োর ড্যাম লাইফ, আরাম দেয়। পারমিশন দেয় এটা ভেবে নেওয়ার, ধুলোকণার মতো একের ওপর এক জমে ওঠা এই দিনগুলো একেবারে মূল্যহীন নয়, ধোঁয়াশার মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হয়তো কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলছে, এখন টের না পেলেও একদিন এসে ধাপ্পা! দেবে। যদি তখন লিখতে বসি? যদি তখন এই উত্তরগুলো কাজে লাগে?

লাগবে না, অলমোস্ট শিওর। উইলিয়াম গে-ও হব না আমি, লি চাইল্ডও থোড়াই। হলে এতদিনে টের পাওয়া যেত। তবু নয়ে না হলে নব্বইয়েও না হওয়ার রক্তজমানো ভবিষ্যৎবাণীর উল্টোদিকে এই রকম উদাহরণদের দেখে মরা মনে পুলটিশ দিই।

প্রশ্ন উঠতে পারে এত পুলটিশের দরকারই বা পড়ছে কেন। মেনে নিলেই ল্যাঠা চুকে যায় যে কিছু হবে না, কিচ্ছু বদলাবে না, কেউ বদলাবে না। আমি তো না-ই। আর তো ক’টা দিন। অসম্ভবকে সম্ভব করার পেছনে হত্যে না দিয়ে ফুরফুরিয়ে কাটিয়ে দিলেই হয়।

হওয়া না-হওয়ার থেকেও গোটা ব্যাপারটার মধ্যে গোলমেলে এবং বিতিকিচ্ছিরি হচ্ছে হওয়ার জন্য এই হাঁকপাঁক। হাস্যকর ছেড়ে দিলাম, ক্ষতিকারকও। যতক্ষণ হাঁকপাঁক, ততক্ষণ আশা, ততক্ষণ আশাভঙ্গের যন্ত্রণা। হাঁকপাঁক থেকে বেরোতে পারলে এক নিমেষে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলত।

কিন্তু মিলবে না। এমিলি ডিকিনসনের সেই বহুকোটিত লাইন, 

“Hope” is the thing with feathers -

That perches in the soul -

And sings the tune without the words -

And never stops - at all -"


নোটিস করার যে সে গান শুনতে পাওয়া না পাওয়াটা এখানে ইস্যু না। শুনতে পাই না পাই, শুনতে চাই না চাই, ওই কোকিলের গলা টিপে ধরার ক্ষমতা আমাদের নেই। রিয়েলিটির রোদ চোখ ক্ষণেক্ষণে ঝলসাবে যেমন, নিয়ম করে মৃদুও হবে। এবং আবারও বাজবে কানের ভেতর কুহকিনী আশার গান। 

পুনশ্চঃ এই রিভিউটির কথা বলছিলাম।

Better Than Food review of Twilight by William Gay



Comments

  1. ভালো লাগল। এই হাঁকপাঁকটাকেই মনে হয় জীবনানন্দ কারুবাসনা বলেছিলেন, যা কারুকর্মীকে কিছুতেই শান্তিতে থাকতে দেয় না। 

    ReplyDelete
    Replies
    1. হতে পারে। পঞ্চাশ বছর বয়সে জীবনানন্দ ভাবছিলেন যে সত্তর হতে আর কুড়ি বছর। সত্তরে নিজের বাবামাকে অথর্ব হতে দেখেছেন তিনি। নিজেকে বলছেন আর মোটে কুড়ি বছর। এর মধ্যে যা লেখার লিখে ফেলতে হবে।

      Delete
  2. উইলিয়াম গে এর বেপারটা সত্যি ইনস্পায়ারিং। লী চাইল্ড এর টাও। যদিও লী চাইল্ড এর বয়েসে পৌঁছে যাচ্ছি বলে ওটার থেকে খুব বেশিদিন আর ইনস্পিরেশন পাওয়া যাবে না। তবে উইলিয়াম গে'র বয়েসে পৌঁছতে এখনো সময় আছে কিছুটা। সেখানে পৌঁছে গেলে তখন আবার অন্য ইনস্পিরেশন খুঁজবো নাহয়।

    কনফিডেন্স নিয়ে আমার এখন মনে হয় যে একটা বয়েসের পর কোনো বিষয়ে কনফিডেন্স থাকা উচিত নয়। কারণ আমাদের সমস্ত ধ্যান-ধারণাই তো তাসের ঘর। যে কোনো বিষয়ের বিপুল অজানার ভয়ঙ্কর সম্ভাবনা-সমৃদ্ধিকে যদি উপলিব্ধি না করা যায়, তাহলেই কনফিডেন্স সম্ভব। তবে তাই বলে কি তাসের ঘর বানাবো না? বানানোটা তো কত তৃপ্তিদায়ক। তাছাড়া, বানালে বেশ হাততালিও পাওয়া যায়।

    "লেখা কি না"র প্রশ্নে যেগুলো তুললেন - আমার উত্তরে সেই সবগুলোই আলবৎ লেখা, একশোবার লেখা। লেখা যদি কিছু প্রকাশ করতে পারে, অনুভূতি এবং কল্পনার অনুশীলন করাতে পারে, তাহলে আর কি চাই। মাধ্যম তো সময়ের সাথে পাল্টাবে।

    আর নিজেই "কনফিডেন্স"কে নস্যাৎ করে দিয়ে, আবার নিজেই কনফিডেন্সের সাথে কত মতামত দিয়ে ফেললাম। বুঝুন তবে, "লাইফে অনেক প্রব্লেম" কি সাধে বলি!

    ReplyDelete
    Replies
    1. লি চাইল্ডের থেকে প্রেরণা আহরণের বয়সজনিত কোয়ালিফিকেশন আমারও আর নেই। আরও বিলম্বিত ব্লুমারের খোঁজেই নির্ঘাত অবচেতন খুঁজে খুঁজে গে-কে আবিষ্কার করেছে। কনফিডেন্ট লোক দেখলে এতদিন সন্দেহ হত, এখন প্লেন বিরক্ত লাগে। লেখার ব্যাপারটাতে একমত কি না শিওর নই। কে জানে লেখা কীসে হয়। লেখকই বা কে।

      মতামত জানানো নিয়ে মনখুঁতখুঁত রাখবেন না। ও জিনিসটা আমার তরফ থেকে পুরোটাই ধন্যবাদার্হ।

      Delete
  3. khub bhalo laglo.. ekhono bhabchi..

    Hote para ba korte parata aamaake khub ekta bicholito kore na aar.. aapnar theke aami aar ektu boRo, hoy toh boyeser e pawa eta. Aami oboshyo amar jibontake emon pnechiye phelechi je thik complacency-r kono jaiga nei. ekhono basic requirements er jonno o khaata baki aache.. onyo kichu toh dur oshto.. on the other hand, se jonno e hoy toh beshi chinta kori na.. tobe kichuta effort o diyechi ki-howa-uchit-chilo chinta na korte.. nanarokom chesta korbo jokhon jemon sujog o icche hobe.. aar sob somoyei journey ta enjoy korar chesta korbo..

    khub ki baaje gyan holo? aami nijeo eta sob somoy korte pari na.. aar kichu ekta na parar no howar resetlessness thekei kono bhalo kaaj hoy.. tai aami jeta kori setao kichu thik na..

    anyway khub bhalo thakben.. Onek bhalobasa pathalam.

    Indrani

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাজে তো নয়ই, জ্ঞান বলতেই আমাদের যে মুখ তেতো করা জিনিসটা মনে পড়ে সেটাও হয়নি, ইন্দ্রাণী। এগুলো জরুরি কথা। নিয়মিত কানের কাছে বলা দরকার। কেউ না বলার থাকলে নিজেকে নিজে বলা দরকার। না হলে পাগল হতে বাকি থাকবে না।

      আপনিও ভালো থাকবেন। আপনার জীবনের যাত্রা সুখ, শান্তি, আরাম, উত্তেজনায় ভরপুর হোক, এই কামনা করি।

      Delete
  4. ওই মিডলাইফ ক্রাইসিসের ধাক্কাতেই কাবু হয়ে পড়েছি - সারাক্ষণ যে কি কি করা হলনা সেটাই মনে হতে থাকে। তার মধ্যে উইলিয়াম গে'র মতন মানুষের গল্প সত্যিই মলম লাগায়।
    আপনার অন্য পয়েন্টটার সঙ্গেও ১০০% মিলেছে - কোনওদিন কিছু নিয়ে স্ট্রং মতামতই দিতে পারিনা - সে আগাথা ক্রিস্টির সিনেমাই হোক, বা ক্যামেরার মডেলই হোক, বা রেস্তোরাঁর খাবারই হোক। এইগুলো প্লাস পয়েন্ট, এগুলো মাইনাস পয়েন্ট, বাকিটা তুমি বুঝে নাও বলে কাজ সারি।
    যাই হোক, আমার স্থির বিশ্বাস আপনার উপন্যাস লেখা শিগগিরই হবে। লিখতে থাকুন, ইউ আর ওনলি গেটিং বেটার।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি অনেক কিছু করেছেন এবং করবেন, কাজেই চিন্তা করার কোনও দরকার নেই, সুগত। স্ট্রং মতামত দিতে না পারা নিয়ে হাই ফাইভ। তবে এটাও ভেবে দেখুন যে যারা স্ট্রং মতামত দিয়ে থাকে তারা কী অসহ্য টাইপের প্রতিভাত হয় ক্ষেত্রবিশেষে। কাজেই পুরোটাই দুঃখের নয়।

      কমেন্টের শেষ প্যারার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। সত্যি হলে নেমন্তন্ন ডিউ রইল।

      Delete
  5. ওহ মতামত দিতে না পারা নিয়ে আমার খুব হীনমন্যতা আছে! আমার কনফিডেন্স নেই বলেই এই দুর্দশা তাও জানি। দিতে পারলে ভালোই হত কিন্তু হবে বলে আর আশা রাখিনা! এমনকি সামান্য গিজার কিনতে গেলেও মত জানাতে দ্বিধাগ্রস্ত হই!

    মিডলাইফ কবে থেকে হয় জানিনা তবে আমার বছর কুড়ি থেকেই মনে হয় কিছুই তো হল না এ জীবনে করা! এবং করে ওঠার তাগিদও দেখাইনি সেও বলাই বাহুল্য। উইলিয়াম গে কিংবা লি চাইল্ড কারোর নামই জানিনা, শুনিনি আগেই তবে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় এই যে হওয়ার ব্যপারটা এসব না হয়ে স্রেফ একটা শান্ত আনন্দময় জীবন কাটানোতে আমাদের ইন্সপায়ার করা হয়না কেন? মানব সভ্যতা থমকে যাবে বলে না বানিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে বলে? যদিও বোঝাই যায় এ ভাবনার মূলে আছে আমার কিছুই না হতে পারাটাই।

    তোমার উপন্যাস শেষ হবে শিগগিরই এই আশা রাখি। লিখতে শুরু যখন হয়েছে ও শেষ না হলে স্বস্তি দেবে না। হবেই শেষ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. নাম লিখিনি দেখছি(কি একটা গ্যাঁড়াকল করেছি মোবাইল থেকে এসব চক্কর হয়েছে) - প্রদীপ্ত

      Delete
    2. প্রদীপ্ত, "স্রেফ একটা শান্ত আনন্দময় জীবন কাটানোতে আমাদের ইন্সপায়ার করা হয়না কেন?" এটা একটা কোটি টাকার প্রশ্ন। কারণ জানি না। শুধু এটা জানি, যত সময় যাচ্ছে তত "অর্ডিনারি" হওয়াটা অপশনের বাইরে চলে যাচ্ছে। আরও যাবে। সেলিব্রিটি কালচার কী রেটে বাড়ছে দেখেছ? চোখ কান বুজে ঘরে বসে থাকলেও রোমকূপের রন্ধ্র দিয়ে কোনও না কোনও সেলিব্রিটি সেঁধিয়ে যাচ্ছেন, আটকানো যাচ্ছে না।

      আরে উপন্যাস পয়েন্ট না, সত্যি। (লিখতে পারছি না বলেই হয়তো) যত দিন যাচ্ছে এও মনে হচ্ছে "উপন্যাস"-এর মোহটাও অকাজের। লেখা নিয়ে কথা। যা লিখতে ভালো লাগে, যা নিজেকে না চাবকে লিখতে পারি, সেটা লিখে গেলেই বা অসুবিধে কী?

      তবে তোমার শুভেচ্ছার জন্য সবসময়ের কৃতজ্ঞতা। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  6. ❤️❤️❤️

    ডেলিয়া ওয়েন্স সত্তর বছর বয়সে প্রথম উপন্যাস লিখে ফেলার পর এই নিয়ে কী কাণ্ডই না হল! আমিও ভাবলাম, ভদ্রমহিলা আগে লেখেননি কেন বেশি? এখন বয়স বেড়েছে, তাই মনে হয়, বেশ করেছেন। কিছু লিখতেই হবে, কিছু হতেই হবে, কে দিব্যি দিয়েছে? শান্ত (শুধু শান্তিতে নয়) ভাবে দিন কেটে গেলেই কেল্লাফতে!

    ReplyDelete

Post a Comment