Posts

Showing posts from May, 2013

ভূতের সঙ্গে রেস

কাল অফিস থেকে ফিরে বইয়ের বাক্সদুটো নিয়ে বসেছিলাম। একজন বাক্স থেকে বই তুলে ন্যাকড়া দিয়ে ঝেড়ে আরেকজনের হাতে দিচ্ছিল, আরেকজন সেটা বুককেসে গুছিয়ে রাখছিল। সোজা কাজ, কিন্তু অসম্ভব সময় লাগে। ঝাড়তে গেলেই পড়তে হয়, পড়তে গেলেই পড়ে শোনাতে হয়। একটা বই হাতে নিয়ে সবে ন্যাকড়া শূন্যে তুলেছি, সপাটে সেটা বইয়ের ওপর নামিয়ে আনব বলে, এমন সময় বসার ঘরের দরজাটা খুব ধীরে খুলে গেল। ক্যাঁচ না কোঁচ না, জাস্ট খুলে গেল। পুরো ভেজানো অবস্থা থেকে একেবারে হাট। আমরা দুজনে দুটো মোড়ায় কাঠ হয়ে বসে রইলাম। কয়েক সেকেন্ড পরে ঢোঁক গিলে একজন জিজ্ঞাসা করল,   -দরজা বন্ধ করনি? -প্রথম কথা, ঘরে ঢোকার সময় তুমি আমার পেছনে ছিলে, কাজেই দরজা তোমার বন্ধ করার কথা। আমার নয়। আর দ্বিতীয় এবং সবথেকে ইম্পরট্যান্ট কথাটা হল, দরজা বন্ধ করে কি ওঁদের আটকানো যায়? এই না বলে হাতে ধরা বইটার দিকে তাকিয়ে দেখি সেটা লীলা মজুমদারের ভূতের গল্পসমগ্র। মলাট উল্টে দেখি ভূমিকায় লীলা দুঃখ করেছেন, আজকাল লোকে ভগবানকেই মানে না, ভূত বেচারার কথা তো ছেড়েই দাও । মানতে পারলাম না। ভগবানে আমার বিশেষ ভরসা নেই, কিন্তু তাই বলে ভ

ঋতুপর্ণ

Image
উৎস গুগল ইমেজেস জীবনে কোন্‌ সিনেমাটা আমি সবথেকে বেশিবার দেখেছি, আন্দাজ করে বলতে পারেন? পথের পাঁচালী নয়। উঁহু, গুপীবাঘাও নয়। চিলড্রেন অফ হেভেন কিংবা শশাংক রিডেম্পশনও নয়। জীবনে আমি সবথেকে বেশিবার দেখেছি ‘উৎসব’। লক্ষবার দেখেছি, অযুতবার দেখেছি, নিযুতবার দেখেছি। শুরু থেকে দেখেছি, মাঝখান থেকে দেখেছি। ইউটিউবে লাস্ট পার্ট থেকে শুরু করে পিছু হেঁটেহেঁটে শুরুর দিকে গেছি, কে জানে কত বার। অথচ এমনটাও নয় যে উৎসব আমার ঋতুপর্ণর বানানো সবথেকে প্রিয় ছবি। সেটার জায়গা নিঃসন্দেহে নেবে উনিশে এপ্রিল। কিংবা হীরের আংটিও নিতে পারে। ইন ফ্যাক্ট অসুখও পারে। উনিশে এপ্রিল প্রথম দেখেছিলাম টিভিতে। নতুন একটা বাঙালি ছেলের সিনেমা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে, সেই উৎসাহে দুপুরবেলা টিভির সামনে বসেছিলাম সকলে। আমি সত্যি বলছি, অত মুগ্ধ হইনি। তখন সবে টিন-এজে পা পড়েছে আমার, নিজেই নিজেকে নিয়ে মত্ত হয়ে আছি। নতুন সিনেমা মন দিয়ে দেখার মতো ধৈর্য, চেতনা কিছুই আমার ছিল না তখন। কিন্তু আমি আমার মা’কে দেখছিলাম। সিনেমার শেষে যখন রাত কেটে গেছে, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মা-মেয়ে নতুন আলোয় দেখছে একে অপরকে, আমার ম

প্যাকিং আনপ্যাকিং আর চিত্তরঞ্জন পার্কের ইতিকথা

বাঙালির টাইমজ্ঞান নেই এই কথাটা যদি অপ্রমাণ করতে হয়, ভট্‌চাজ্‌বাবুকে ডাকতে হবে। সাড়ে ন’টা বলেছিলেন, সাড়ে ন’টায় এসে গেলেন। পরনে আদ্দির ফতুয়া, ট্রাউজার। কাঁধের ছোট্ট ঝোলা ব্যাগে হিন্দু আর জলের বোতল। আমরাও স্নান করে চুল আঁচড়ে জামাকাপড় পরে গ্যাস্ট্রোজাইম খেয়ে রেডি হয়ে ছিলাম। গ্যাস্ট্রোজাইম কেন খেতে হয়েছিল? পরশু রাতে খেয়াল হল যে ফ্রিজ প্যাক হবে, এবং ফ্রিজের ভেতর পাউরুটি, হ্যাম, টমেটো কেচাপ, লাখখানেক মাদার ডেয়ারির দইয়ের চামচ ছাড়াও খানচারেক কাঁচা ডিম, একখাবলা ভাত আর পাঁচশো গ্রাম মুরগির স্টু পড়ে আছে। প্রাণে ধরে ফেলতে পারলাম না। ঠুসে ঠুসে সেই রাত্রেই ভাত মুরগি শেষ করা হল। কাকভোরে উঠে দু’খানা করে ডিম সেদ্ধও সাঁটালাম। এর পরেও গ্যাস্ট্রোজাইম না খেয়ে, "দেখিই না কী হয়" বলে বসে থাকব, অত অ্যাড্‌ভেঞ্চারাস্‌ আমরা নই। আপনাদের কারও যদি সি. আর. পার্কে বাড়ি বদল করতে হয় তবে চোখ বুজে ভট্‌চাজ্‌বাবুর শরণ নেবেন। ভদ্রলোক দিল্লিতে আছেন কে জানে কত বছর, মুভিং-প্যাকিং-এর কাজ করছেন বিশ বছর ধরে। ফলে যেটা হয়েছে, ভদ্রলোক একটা বন্ধ কাবার্ডের দিকে তাকিয়ে বলে দিতে পারেন সেটা প্

ঠাঁইবদল

আমার এই বাড়িটার বাস ওঠানোর দিন এসে গেল। বান্টি বলল, “দেখো যেন আবার ফ্যাঁচফেঁচিয়ে কাঁদতে বোসো না।” বয়েই গেছে আমার কাঁদতে। কান্নাকাটির কী আছে? তাছাড়া এগুলো তো সব বাসা, বাসা তো মাঝেমাঝে বদল করতেই হয়। বাড়ি তো যেখানে থাকার কথা সেইখানেই আছে। রিষড়ায়। কাঁদব আমি যেদিন ওই বাড়িটা প্রোমোটারের হাতে যাবে। গাছবাগান মুড়িয়ে, নীলসাদা একতলা বাড়িটা গুঁড়িয়ে, কুয়োতলা আর তুলসীমঞ্চ উড়িয়ে হইহই করে যেদিন একটা কুৎসিত বহুতল উঠবে আর ঘটা করে তার নাম রাখা হবে ‘ঠিকানা’ কিংবা ‘শান্তির নীড়”---সেদিন কান্না কাকে বলে দেখিয়ে দেব। তবে এই বাসাটার কথা ভোলা সহজ হবে না, সেটাও সত্যি। হাজার হোক এটা আমার দিল্লির দ্বিতীয় খেপের প্রথম বাসা। আর সবথেকে বড় কথা হচ্ছে, এই বাড়িটা অবান্তরের সিংহভাগ পাঠকের সঙ্গে, আপনাদের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপের ঠিকানা। একে কি ভুলব মনে করলেই ভুলে যেতে পারি আমি? অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বাড়ি বদলের সময়টা আর পাঁচটা সময়ের থেকে আলাদা। এই সময়টায় পণ্যবাদী জীবনের অসারতা আমার কাছে একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায়। কত দুঃখে যে লোকে মিনিম্যালিস্ট হয়, সেটা হাড়েহাড়ে টের পাই। কেন মরতে

চেনা ডাক্তার অচেনা ডাক্তার

ছেলেপুলেকে যদি কিছু বানাতেই হয়, তবে ডাক্তার বানানোই উচিত। বৃহত্তর সমাজের স্বার্থে, পাড়াপড়শির স্বার্থে, তাছাড়া লোককে ঢাক পিটিয়ে বলার স্বার্থটিও বেশ। কিন্তু এই কথাটা বললেই আমার ডাক্তার বন্ধুরা চটে চতুর্ভুজ হয়ে যান। দাবি করেন ডাক্তার তাঁরা কেবল সেবার মুখ চেয়ে হয়েছেন, গাড়িবাড়িগ্ল্যামারপসার, একমানুষ উঁচুউঁচু অক্ষরে ‘সিপলা’ নয়তো ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’ লেখা বিনেপয়সার বালিশের ওয়াড়---এসব নাকি তাঁদের বিন্দুমাত্র মোটিভেট করতে পারেনি। মেনে নেওয়া ছাড়া যেহেতু গতি নেই তাই মেনেই নিই। তাছাড়া পাগল না হলে কেউ চেনা ডাক্তারকে চটায় না। রাতেবিরেতে বিপদে পড়লে দেখবে কে? সব বাড়িতেই এইরকম একজন করে ডাক্তারবাবু থাকেন। যেমন আমার ছোটমামা। নামের পাশে গালভরা স্কিন স্পেশালিস্ট লেখা থাকলে কী হবে, আমাদের বাড়ির মাথাধরা থেকে পেটের রোগ সবের দাওয়াই মামা দেন। আমাদের পাড়ায় এমনিতে ডাক্তারের অভাব নেই। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেদিকেই হাঁটো না কেন, পাঁচমিনিটের মধ্যে একটা না একটা ডিসপেনসারিতে পৌঁছে যাওয়া যায়, কিন্তু তাও আমরা মামাকে ফোন করি। মামা আমাদের কর্ডলেসের স্পিডডায়ালে বাঁধা হয়ে আছেন। সেই ছো