Posts

Showing posts from January, 2021

মাত্র বেয়াল্লিশ

কাল তিন্নির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। কারা কারা সব শহর বদল করছে। নিজের ইচ্ছেয় নয়, করোনা করাচ্ছে। এটা আগেও খেয়াল করেছি। যে অসুখটা লোককে কাজকর্ম মাথায় তুলে বাড়ির ভেতর সেঁধোতে বাধ্য করেছে সে-ই ভিটেমাটি চাঁটি করে লোককে পথে নামিয়েছে। সে নামা এখনও থামেনি। এখনও চলছে ঠিকানাবদলের প্রক্রিয়া। তিন্নি বলছিল, একজন বাড়ি যাচ্ছে, কলকাতা; যাওয়ার আগে সব আসবাবপত্র বিক্রি করে দিয়ে যাচ্ছে। চেনাশোনার মধ্যে, জলের দরে। ব্যবহৃত আসবাবপত্র, গ্যাজেট, অ্যাপ্লায়েন্স বিক্রি করার নানারকম ফোরাম হয়েছে আজকাল, সে সব ফোরামে কম্পিটিটিভ দামও পাওয়া যায় হয়তো কিন্তু তাড়া থাকলে ও সব হ্যাপায় ঢুকতে চায় না কেউ। নামমাত্র মূল্যে সব বিলিয়ে চলে যায়। টাকা তোলার থেকে ঝাড়া হাত পা হওয়াটাই তখন প্রায়োরিটি। ছ'হাজার টাকায় কাঠের ইয়াব্বড় খাট। দু'হাজার টাকায় কাঠের ইয়াব্বড় বুককেস। ভাবা যায়? দু'হাজার টাকায় কী পাওয়া যায় আজকাল? তিন্নির সঙ্গে আমি একমত, বিশেষ কিছু পাওয়ার আশা নেই। কোয়ালিটি বুককেস তো না-ই। কিন্তু টাকাপয়সার গল্প করতে বসার বিপদ হচ্ছে বিষয়টার কোনও নির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। দু'হাজার টাকায় যেমন অনেক কিছু পাওয়া যায় না, তেমনি আবা

পাটিসাপটার প্রতিশোধ

নাকতলার মা পাটিসাপটা পাঠিয়েছেন। ওপরের প্রসেনজিৎ পাটিসাপটা আর পায়েস দিয়ে গেছে। মনে পড়ল মা নাড়ু পাঠাতেন। পাঠাতেন, সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন, গেলে ফেরার সময় প্যাক করে দিতেন বয়াম ভরে। সবার মতো আমারও মনে হয়, আমার মায়ের মতো নাড়ু কেউ বানাতে পারে না। মায়ের মিষ্টির হাত ভালো ছিল, পায়েস, নাড়ু, মালপো - খুব বেশি বানানোর সময় পেতেন না, কিন্তু যখনই বানাতেন আমি একবারে চারটে নাড়ু, তিনটে মালপো, আড়াইবাটি পায়েস খেয়ে ফেলতে পারতাম। ছোটবেলায় চিনির নাড়ুকে গুড়ের নাড়ুর থেকে বেশি গুরুত্ব দিতাম। যে বাড়িতে বিজয়ায় চিনির নাড়ু খেতে দিত, একটা সফট কর্নার জন্মাত তাঁদের প্রতি। এর আর আর কোনও কারণ ভেবে বার করতে পারছি না শুধু এইটা ছাড়া যে আমাদের বাড়িতে চিনির নাড়ু হত না। ওই একই কারণে বাসি পাউরুটিকে হাতে গরম আটার রুটির তুলনায় বেশি সম্মান দেখাতাম, ভাবতাম দোতলায় থাকার অনুভূতি নিশ্চয় স্বর্গে থাকার অনুভূতির কাছাকাছি, ট্রেনে হাওয়া খেতে খেতে স্কুলে যায় যত হতভাগ্যের দল, খুপচি ভ্যানগাড়িতে গাদাগাদি ঠাসাঠাসি হয়ে স্কুলে যেতে গেলে পূর্বজন্মের পুণ্য লাগে। এখন দল বদল করেছি। নাড়ু মাত্রেই ভালো, চিনি গুড় যারই হোক - অর্চিষ্মানের এই নন-পার্

চোদ্দ

ক্বচিৎকদাচিৎ, ন'মাসে ছ'মাসে, একজন দু'জন পাঠক বলেন অবান্তরের কুইজ ইত্যাদি ইন্টারঅ্যাক্টিভ বিভাগগুলো আবার চালু করতে। একদিক থেকে ব্লগ ব্যাপারটাই ইন্টারঅ্যাক্টিভ কারণ মন্তব্যের খোপ ইন্টারঅ্যাকশন করার জন্যই রাখা। তবে এটাও ঠিক আমি যে রকম ব্লগপোস্ট লিখি তাতে ইন্টারঅ্যাকশন শক্ত। আজ আমি তিনকাপ কফি খেলাম, এর উত্তরে কীই বা ইন্টারঅ্যাকশন সম্ভব? খেলে তো খেলে। আজ আমার সকালে উঠে মায়ের কথা মনে পড়ল। পড়ল তো পড়ল। সবারই পড়ে। যদি এমন একটা আলোচনায় নামতাম যে পার্টনার পেটালে কতদিনের মধ্যে সে পেটানির ব্যাপারটা রাষ্ট্র না করলে যাবজ্জীবন সে কথা মুখে আনার অধিকার ত্যাগ করতে হবে - পেটানি খেতে খেতে? খাওয়ার চব্বিশঘণ্টার মধ্যে? সাতদিন? একমাস? দেড়মাসের মধ্যে? - সম্ভবতঃ ইন্টারঅ্যাকশন হত। কারণ প্রথমতঃ প্রশ্নটার মাথামুণ্ডু আছে, দুই, সুনির্দিষ্ট উত্তর হয়, তিন এবং সবথেকে বড় কথা, লোকে বিষয়টা নিয়ে কেয়ার এবং মতামত দুই-ই পোষণ করে (করাই উচিত, কারণ বিষয়টা জরুরি।) আর মতামত পোষণ করলে তা প্রকাশ করতেও ইচ্ছে করে। মত মিললে ভালোই, না মিললে আরও ভালো। ইন্টারঅ্যাকশন আরও জমিয়ে হবে। আমি একবার এক পোস্টে মারাত্মক মৃদু করে শেষের

ক্যাফিন ট্যানিন

আমার আজকাল কফির ঝোঁক উঠেছে। নয় নয় করে দিনে তিনবার তো খেয়েই ফেলি। এর কারণ নতুন কফি মেশিন। জন্মদিনের উপহার হিসেবে অনেক মাথা চুলকে অবশেষে কফি মেশিন ভেবে পাওয়া গেছে। বাজেটের মধ্যে এবং কাজে লাগবে আশায়। লোকের বাড়িতে অনেক জটিল এবং গুরুগম্ভীর কফি মেশিন দেখেছি। আমাদের এক বন্ধুর বাড়িতে, ক্যাফে কফি ডে ইত্যাদি দোকানে যেমন মেশিন থাকে, একটা হ্যান্ডেলওয়ালা ছাঁকনির মতো পাত্র মাধ্যাকর্ষণ উপেক্ষা করে ঝুলতে থাকে, সেরকম ছিল। আমাদের কফির যন্ত্র সরল এবং সিধে। ফিল্টারের খোপে গ্রাউন্ড কফি ঢেলে দাও। জলের খোপে জল। তারপর ঢাকনা বন্ধ করে চানে ঢোক বা দশটা অসভ্য লোক আজ নতুন কী অসভ্যতা করল ইন্টারনেটে দেখে এলেই ফোঁটা ফোঁটা কফি টপ টপ করে পাত্রে জমা হয়ে রেডি। দাবিমতো সে কফি গরমও রয়েছে। তবে চা কফির ক্ষেত্রে গরমের সংজ্ঞা আমার সঙ্গে অধিকাংশ লোকেরই মেলে না। প্রথম চুমুকে জিভ পুড়ে না গেলে গরম কীসের? তাছাড়া ফ্রিজ থেকে দুধ বার করে মেশাতে কফি আরেকটু ঠাণ্ডা হয়ে যায়, কাজেই আমি কাপশুদ্ধু আবার এক মিনিটের জন্য মাইক্রোওয়েভে ঘুরিয়ে নিই। এমন নয় যে ইনস্ট্যান্ট কফি আর মুখে রুচছিল না। কফি যে ইনস্ট্যান্ট ছাড়া অন্য কিছু হয়, সেটা আমি জ

পার্টি

Image
Cyril Northcote Parkinson । ব্রিটিশ নৌ-ঐতিহাসিক এবং লেখক। এর বেশি তাঁকে আমি চিনি না, জানিও না। তবু এক মাস অন্তর অন্তর, মাসের শেষের সপ্তাহে নিয়ম করে তিনি আমার জীবনে প্রকট হয়ে ওঠেন। পারকিনসন'স ল-এর ব্যাপারে আগেও একবার লিখেছি অবান্তরে। " Work expands so as to fill the time available for its completion" . এক মাস অন্তর চার নম্বরে গল্প জমা দেওয়ার সময় যে তীব্রতায় আমি এই সত্যি টের পাই তেমন আর খুব কম সত্যিই জীবনে পেয়েছি। ঢিল মারলে পাটকেলটি খেতে হবে কিংবা দাম বাড়লে চাহিদা কমবে কিংবা একটা লোক চব্বিশঘণ্টা কার সঙ্গে উঠছে বসছে সেই দিয়ে লোকটাকে চেনা যাবে, ওই ক'দিনে এই সব যাবতীয় ল'-এর থেকে অকাট্য হয়ে ওঠে পারকিনসন'স ল। ভদ্রতামতে আমার গল্প মাসের মাঝামাঝিই জমা দেওয়া উচিত, কারণ ফরম্যাটিং আছে, সংশোধন আছে, ছবি খোঁজা আছে। এগুলো তো আমার মাথায় যা যা আসছে বললাম - যে আমি দেওয়ালপত্রিকা ছাড়া আর কোনও রকম পত্রিকা চালাইনি জীবনে, একটা আস্ত ওয়েবজিনের এর থেকে অন্তত কোটিগুণ বেশি কাজ থাকে নিশ্চয় যেগুলো আমি জানিই না। কিন্তু আমি কোনওবার সাতাশের আগে গল্প জমা দিতে পারি না। সোমেন চো

লীলা প্রসঙ্গে চন্দ্রিল

Image
 

আমাদের রেজলিউশন

ধরুন আপনি সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ফোনটা হাতের কাছে দেখছেন অথচ হাত বাড়াচ্ছেন না। বা বাড়াচ্ছেন, জাস্ট সময় দেখার জন্য। বা অ্যালার্ম বেজেছে আপনি অ্যালার্ম বন্ধ করে ফোনটা নামিয়ে রাখছেন। এই আট ঘণ্টার অদর্শনে কত বন্ধুত্ব বিচ্ছেদ হয়ে গেছে, কত বিখ্যাত লোক কত বেফাঁস কথা বলে ফেলেছেন, কত প্রগতিশীল ঝাঁপিয়ে পড়ে কত লোকের কল্লা নামিয়ে ফেলেছে, গত বছর মুখে রক্ত তুলে ব্যাখ্যা করে দেওয়ার পরও কত লোক এ বছর আবার, আবাআআআআর, বিজয়ার আগে শুভ বসিয়ে ফেলেছে আর নিউ ইয়ারের আগে হ্যাপি। কিন্তু আপনার ব্লাডপ্রেশার রয়ে গেছে যে কে সেই। আপনি যে শুধু ভুল ঠিক করে দেওয়ার তাগিদ পাচ্ছেন না তাই নয় কে কী ভুল বা বোকামো করল সেটা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ারও কৌতূহলও বোধ করছেন না। আর কৌতূহলই যদি না বোধ করেন তাহলে সকালবেলা ঘুম ভেঙে বিছানায় পড়ে থেকে চল্লিশ মিনিট ইন্টারনেটে আড়ি পাতার আর্জই বা টের পাবেন কেন? টপ করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়বেন। কাঁচা হলুদ কিনেছেন একত্রিশে ডিসেম্বর, এক টুকরো মুখে দিয়ে, লেবুচেপা গরম জল ঢক ঢক করে খেয়ে নেবেন বড় এক গ্লাস। কাজে বসে নিজেকেই নিজে বলবেন, দাও দেখি কোন আগুনটা আগে নেভাতে হবে। কিন্তু একী, কোথাও আগুন লেগে নেই।