পার্টি




Cyril Northcote Parkinson। ব্রিটিশ নৌ-ঐতিহাসিক এবং লেখক। এর বেশি তাঁকে আমি চিনি না, জানিও না। তবু এক মাস অন্তর অন্তর, মাসের শেষের সপ্তাহে নিয়ম করে তিনি আমার জীবনে প্রকট হয়ে ওঠেন।

পারকিনসন'স ল-এর ব্যাপারে আগেও একবার লিখেছি অবান্তরে। "Work expands so as to fill the time available for its completion".

এক মাস অন্তর চার নম্বরে গল্প জমা দেওয়ার সময় যে তীব্রতায় আমি এই সত্যি টের পাই তেমন আর খুব কম সত্যিই জীবনে পেয়েছি। ঢিল মারলে পাটকেলটি খেতে হবে কিংবা দাম বাড়লে চাহিদা কমবে কিংবা একটা লোক চব্বিশঘণ্টা কার সঙ্গে উঠছে বসছে সেই দিয়ে লোকটাকে চেনা যাবে, ওই ক'দিনে এই সব যাবতীয় ল'-এর থেকে অকাট্য হয়ে ওঠে পারকিনসন'স ল।

ভদ্রতামতে আমার গল্প মাসের মাঝামাঝিই জমা দেওয়া উচিত, কারণ ফরম্যাটিং আছে, সংশোধন আছে, ছবি খোঁজা আছে। এগুলো তো আমার মাথায় যা যা আসছে বললাম - যে আমি দেওয়ালপত্রিকা ছাড়া আর কোনও রকম পত্রিকা চালাইনি জীবনে, একটা আস্ত ওয়েবজিনের এর থেকে অন্তত কোটিগুণ বেশি কাজ থাকে নিশ্চয় যেগুলো আমি জানিই না।

কিন্তু আমি কোনওবার সাতাশের আগে গল্প জমা দিতে পারি না।

সোমেন চোখ কপালে তুলবেন।

সাতাশ? লাস্ট কবে আপনি সাতাশে গল্প জমা দিয়েছিলেন মশাই?

ওয়েল, সাতাশ বললাম কারণ আমি নিজেকে বোঝাই যে সাতাশ একেবারে লিমিটস্য লিমিট, যে গল্প পয়লায় ছাপা হয়ে বেরোবে সাতাশ পার করে তা জমা দেওয়া যায় না। তাহলে আর চোখের চামড়া বলে কিছু থাকে না। কিন্তু প্রত্যেকবারই সাতাশ আমার কানের পাশ দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে যায়, আমি গল্প জমা দিই ঊনত্রিশ, নয়তো তিরিশ, একত্রিশে মাস হলে একত্রিশে, এক তারিখের বিকেলবেলাতেও গল্প পাঠিয়েছি এমনও ঘটেছে।

এমন নয় যে ছাব্বিশ তারিখ রাতে আইডিয়া মাথায় এসেছে। খানিকটা খসড়াও করা থাকে। আমার ছোটগল্প সাধারণতঃ সাড়ে তিন চার হাজারের আশেপাশে হয় (এবারেরটা ছোট, আড়াই হাজারের কাছাকাছি) কাজেই দিনে হাজার শব্দ ধরলে, যা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে লিখতে পারা উচিত প্লট জানা থাকলে, লেখা ও রিভিশন মিলিয়ে সাতদিনের বেশি লাগা উচিত না।

কিন্তু পারকিনসন'স ল অক্ষরে অক্ষরে মেনে, তিন সপ্তাহের কম ওই গল্প নিয়ে না ঘ্যাঁতালে আমার ভাত হজম হয় না।

এমনও নয় যে গোটা তিন সপ্তাহ ধরে ঘ্যাঁতাচ্ছি, তাহলে গল্প পড়লে বোঝা যেত, আমি এসেনশিয়ালি গল্পটা লিখছি আসলে তিন দিনে। শেষের তিন দিন। এবং সেই তিনদিনেও পারকিনসনের ভূত দাপিয়ে বেড়িয়েছে।

ব্যাপারটা হচ্ছে, আমি অতি দ্রুত বোর হয়ে যাওয়া টাইপ, এক ঘণ্টা বাদে বাদে কাজ বদল না করতে পারলে আমার উৎপাদনশীলতা তলানিতে ঠেকে। কিন্তু যেহেতু সাতাশ তারিখের সকালবেলায় আমি নিজেকে হুমকি দিয়েছি যে এবারেও তুমি কথা রাখতে পারোনি এবং গল্প এখন জমা দেওয়ার অবস্থার ধারে কাছে নেই, নেক্সট তিন দিন আর কিছু করা যাবে না, গল্প লিখতে লিখতে অসহ্য হয়ে উঠে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলেছি এমনকী মরিয়া হয়ে ইউটিউবে ব্ল্যাক হোলের ভিডিও পর্যন্ত দেখেছি তবু অন্য কোনও কাজে মনোনিবেশ করতে পারিনি।

ওই তিনদিনের মতো অত সময় নষ্ট আমি সারা মাসে আর করি কি না সন্দেহ।

অ্যাকচুয়ালি নিঃসন্দেহ। করি না।

ঝটপট শেষ করে যে নিজেকে মুক্তি দেব তেমনও নয়। বাহাত্তর ঘণ্টা পূর্ণ হওয়ার আগের লাস্ট দেড়মিনিটে আমি অবশেষে গল্প ইমেলে অ্যাটাচ করে উঠতে পারি। একমিনিট আগে করলে যেন ফাইন করবে কেউ।

সেন্ড করে ভাবি, ভাগ্যিস ডেডলাইন ছিল না হলে এখনও শেষ করে উঠতে পারতাম না।

তারপরেই মনে হয়, ডেডলাইন ছিল বলেই কি আমি ঠেলতে ঠেলতে কাজটা এতদূর নিয়ে এলাম না? এবং গত তিনদিন হাতে অগুনতি সময় এবং অজস্র কাজ থাকা সত্ত্বেও, সেগুলো না করে সময়গুলো নষ্ট করলাম না?

ডেডলাইন কি আমাদের প্রোডাক্টিভিটি বাড়ায় নাকি নষ্ট করে?

যাই হোক, চার নম্বরের এবারের গল্পের লিংক রইল নিচে।


Comments

  1. osadharon bhalo laglo golpota.. khub khub bhalo likhechen..

    bhalo thakben

    Indrani

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, ইন্দ্রাণী।

      Delete
  2. Seshtay eshe ki moja pelam .. ami to ei khelata kheli.... bhalo o lage.. besh bhalo laglo ei golper style ta...

    ReplyDelete

Post a Comment