Posts

Showing posts from June, 2020

হেস্তনেস্ত গার্হস্থ্য

অর্চিষ্মান বাড়ি চলে এসেছে। বাবা নিজের বাড়িতে ফিরে গেছেন। আমার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বৃত্তের সবাই যে যার স্থানেমানে গুছিয়ে বসেছে, কেউ মাঝপথে ঝুলে নেই। এতদিনে আমি লকডাউনের আনন্দ যথার্থ উপলব্ধি করতে পারছি। নিজের সমস্যা সব আন্ডার কন্ট্রোল থাকায় অন্যের বিপদে সহমর্মিতা দেখানো অনেক স্বচ্ছন্দ বোধ করছি। দিনতিনেক আগে সকালে অর্চিষ্মান খবর দিল পাশের পাড়ার এক কমপ্লেক্সে একই বাড়ির দুজন কোভিড পজিটিভ। বাবা বললেন, রিষড়ারও পাশের পাড়ার কে যেন মারা গেছে। অর্চিষ্মান টুইটার থেকে খবর এনেছে বলে আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলাম আর বাবাকে পাঁচশোটা প্রশ্ন করে সোর্সের সত্যতা যাচাই করতে বসলাম। বাবা স্বীকার করলেন ভিকটিমের নামধাম কিছুই উনি জানেন না, পাশের বাড়ির জেঠি গাছে জল দিতে দিতে বাবাকে চেঁচিয়ে বলেছেন, জেঠি খবর পেয়েছেন কুট্টিপিসির কাছ থেকে। শুনেটুনে আমার সন্দেহ হল কে জানে লোকটা আসলে করোনায় মরেছে কি না, যে কোনও রোগে মরলেই আজকাল করোনা বলে চালিয়ে দিচ্ছে সবাই। অত ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বোকা সাহস ব্যাপারটা আমার চিরকালই ছিল। পরীক্ষার আগে পড়ছি না, প্রেমে পড়ার আগে ভাবছি না। করোনাতেও ব্যত্যয় নেই। লোকে শুনছি আলুপটল সার্ফ এক্সেল দি

বুলবুল

Image
উৎস গুগল ইমেজেস গল্পচুরির একটা রসালো স্ক্যান্ডালের খবর পেয়ে আমরা নেটফ্লিক্সে বুলবুল দেখতে উৎসাহিত হয়েছিলাম। যিনি গল্প চুরির রব তুলেছিলেন তাঁর গল্পটা আমি পড়িনি কাজেই দাবি ন্যায্য কি না বলতে পারব না, কিন্তু বুলবুলের বিরুদ্ধে প্লট চুরির অভিযোগ তোলার হক যদি কারও থেকে থাকে তবে সেটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। গাছে চড়া, দস্যি, প্রায় মাটির সঙ্গে কথা বলা একটি বালিকার বিয়ে হয় বয়সে অন্তত পাঁচগুণ বড় রাহুল বোসের সঙ্গে। রাহুল বোস চাকরবাকর নিয়ে থামওয়ালা অট্টালিকায় থাকেন, সঙ্গে থাকেন অবিকল তাঁরই মতো দেখতে মানসিক অসুস্থ ভাই মহেন্দ্র আর মহেন্দ্ররূপী রাহুল বোসের স্ত্রী পাওলি দাম, তাঁর নাম আবার বিনোদিনী। আর থাকে এই দুই ভাইয়ের থেকে বয়সে অনেক ছোট ভাই সত্য। নষ্টনীড় পড়া থাকলে বা চারুলতা (২০১১-র গায়ে কাঁটা দেওয়া ভার্শান নয়, ১৯৬৪-র) দেখে থাকলে স্পয়লার দেওয়ার কিছু নেই, আপনি অলরেডি জানেন যে বুলবুল স্বামীকে যত না ভালোবাসে তার থেকে ঢের বেশি চায় দেওর সত্যকে, যে কি না বুলবুলের বয়সোচিত এবং বেড়ে ওঠার সঙ্গী। হিংসুটে জা পাওলি বুলবুল আর সত্যর সম্পর্ক নিয়ে ফুট কেটে গান করেন এবং ভাশুরের কান ভাঙান। বড়ঠাকুর রাহুল বোস রেগেম

মশার বদলে

একটা সিনেমা দেখছিলাম। খারাপ লাগবে জেনেই দেখছিলাম। আমরা বেছে বেছে খারাপ সিনেমা খুঁজে রাখি; রাতে খাওয়ার সময় চালিয়ে হাসতে হাসতে সারাদিনের হতাশা রাগ ব্যর্থতার প্রতিশোধ তুলি। কী খারাপ অভিনয়, কী বোকা বোকা সংলাপ, কী রিগ্রেসিভ আইডিয়া। সিনেমাগুলো জনপ্রিয় হলে তাচ্ছিল্য করতে আরও ভালো লাগে। বিনা পরিশ্রমে জন-র থেকে নিজেকে আলাদা প্রমাণ করা হয়ে যায়। কেউ যদি বলে, নিজেরা একটা বানিয়ে দেখাও তো দেখি, বলব, এত খারাপ চেষ্টা করলেও বানাতে পারব না বলেই বানাচ্ছি না। সিনেমায় গান চলছিল। আধুনিক বাংলা গানের প্রবক্তারা গানের লিরিক্সে চাঁদ ফুল তারা নিয়ে কাঁদুনিকে এত ঠাট্টা করলেন, আমরাও লাফিয়েঝাঁপিয়ে তালে তাল মেলালাম, বুড়োহাবড়াদের কাণ্ড বলে স্বর্ণযুগের গানের ক্যাসেট আছড়ে ভাঙলাম, এখন দেখছি পাল্টা হাওয়ারাও শেষমেশ সেই কাঁদুনিই কাঁদছেন। চাঁদের বদলে চুরমুর আর ফুলের বদলে ফুটকড়াই নিয়ে। অন্য কিছু আশা করাই অন্যায় হয়েছিল অবশ্য। কাঁদুনি আমাদের জাতীয় চরিত্র। ওটা বদলানো এত সস্তা না। যুগের সঙ্গে খালি টপিক বদলাবে, কাঁদুনি থেকে যাবে এক ও অবিকল। একসময় নায়কনায়িকা, এমনকি পার্শ্বচরিত্ররাও গান গাইতেন। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে। নাচ

বাৎসরিক

শিল্পসাহিত্য ক্ষেত্রে পুরস্কার আদানপ্রদান প্রসঙ্গে মার্ক টোয়েন বলে গেছেন -- পুরস্কার গ্রহণ করলে যত না নাম করা যায়, তার থেকে ঢের বেশি হুলাবিলা সৃষ্টি করা যায় সেই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করলে। সেই থেকে আমার মনে মনে ভয়ানক ইচ্ছে, যদি কোনওদিন সাহিত্যপ্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে কেউ কোনও একটা পুরস্কার ফস করে দিয়েই বসে, পত্রপাঠ তা প্রত্যাখ্যান করার। নিজেকে পুরস্কারের অযোগ্য মনে করে নয়, রাগ দেখিয়ে নয়, স্রেফ বেশি লোকের চোখে পড়ার জন্য। প্রথমত, কেউ পুরস্কার দিচ্ছে না; দ্বিতীয়ত, দিলেও আমি সুড়সুড়িয়ে নিয়েই নেব। কারণ লোকের চোখে পড়ার থেকে পুরস্কার জেতা বেটার। বদখত শাড়ি দেখিয়ে মতামত চাইলে মা বলতেন, বাঃ, দারুণ আই ক্যাচিং তো শাড়িখানা। আই, ইয়ার, নোজ -- যে কোনওরকম ইন্দ্রিয় ক্যাচ করার বিভীষিকা মায়ের থেকে আমার মধ্যেও সংক্রামিত হয়েছে। জীবনে একবারই জুতো কিনে বাড়ি এনে বদলাতে গিয়েছিলাম। সম্ভবত দোকানির মনোযোগ ক্যাচ করা অ্যাভয়েড করতেই, দোকানে জুতো কেনার সময় যথেষ্ট হেঁটে দৌড়ে পরখ করিনি, এক দু'পা ফেলেই “থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ” বলে জুতো বগলে বাড়ি এসেছিলাম। পরদিন নতুন জুতো পরে অটোতে চড়ে অফিস গেছি; তারপর অফিসে হাঁটতে