Posts

Showing posts from January, 2018

ইতালিয়ান পিৎজা আর ডিকনস্ট্রাকটেড সামোসা

Image
আমার ছোটবেলায় সাদাকালো অস্কার টিভিতে দেখা যে ক’টা অনুষ্ঠান মনে আছে, তার মধ্যে জিগস কালরা-র রান্নার অনুষ্ঠান একটা। তখন এখনকার মতো চ্যানেলে চ্যানেলে রান্নার অনুষ্ঠান আর গলিতে গলিতে জিম ছিল না, কাজেই জিগস কালরার অনুষ্ঠানটা চোখে পড়ত বেশ। অবশ্য শুধু অন্যান্য রান্নার অনুষ্ঠানের অনুপস্থিতিই চোখে পড়ার কারণ ছিল তাই নয়, কালরার রান্নার ধরণ বা অভিনবত্বও দায়ী ছিল। এখন যেমন সকলেই ধপধপে প্লেটে ঝোল দিয়ে কমা সেমিকোলন এঁকে তার ওপর আলু, আলুর ওপর ডাঁটাশুদ্ধু ধনেপাতা আর গোটা কাঁচালংকা রেখে খায়, তখন সে রকম ছিল না। তখন থালার পাশে ঝাল ঝোলের মধ্যে লুচি দিয়ে থেঁতলানো আলু পড়ে থাকত, হলুদ গা, ফ্যাটফেটে সাদা পেট, সে ছবি ছাপলে ইনস্টাগ্রাম থেকে ব্যান হতে তিন মিনিটের বেশি লাগত না। সেই জমানায় জিগস কালরা ছিলেন উজ্জ্বল উদ্ধার।   শনিরবিবার সকালবেলা আমি আর বাবা খাটের ওপর পাশাপাশি বসে আনফোটোজেনিক লুচি আলুরদম কিংবা রুটি বাঁধাকপি খেতে খেতে কালরার শো দেখতাম। একটা রেসিপি আমার এখনও মনে আছে। বেগুন দুধে ভিজিয়ে রেখে দই মাখিয়ে ভেজে তার ওপর মধু ছড়িয়ে ফাইন চায়নার ধপধপে প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করেছিলেন কালরা। আমরা সেই দেখে এমন উ

লুক

পৃথিবীর বেশিরভাগ পেশা এবং নেশারই একটা করে অফিশিয়াল লুক আছে। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরও নাকি আছে। আমাকে কেউ কেউ বলেছে, তোমাকে দেখে বোঝা যায় না যে তুমি অমুক ইউনিভার্সিটিতে পড়তে। ওই লুক তোমার নেই। কথাটার কোনও মানে নেই, কারণ আমার ইউনিভার্সিটিতে কোটি কোটি লোক পড়ত, এবং তাদের মেজরিটিরই সেই ‘লুক’ ছিল না, যে লুকের কথা বক্তা বোঝাতে চাইছেন। কিন্তু আবার কিছু লোকের ছিলও এবং সামহাউ তারা এবং তাদের লুক ওই ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি চিহ্নিত হয়েছে। এই রকম করেই নির্ঘাত বাকি পেশা এবং নেশাদেরও লুক তৈরি হয়েছে। সেই সব পেশা ও নেশার সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ লোক সেই লুক মেন্টেন না করা সত্ত্বেও। সব সায়েন্টিস্টের চুল এলোমেলো না হওয়া সত্ত্বেও, সব কবি ঝোলাব্যাগ না নেওয়া সত্ত্বেও, সব সংস্কৃতিবান বাঙালি 'চিত্ত যেথা ভয়শূন্য' অথবা 'বাংলার মুখ' ছাপা শাড়িপাঞ্জাবী পরে নন্দনচত্বরে ঘোরাঘুরি না করা সত্ত্বেও। তবু যে কেন ওই লুকগুলোই চিহ্নিত হয় কে জানে। হয়তো চোখে বেশি পড়ে বলে, কিংবা ও রকম লুকওয়ালা কেউ ফ্লুকে সফল হয়ে যায় বলে। তারপর একটা ‘স্নো বল’ এফেক্ট ঘটে। ‘বসের চাকরি চাইলে আগে বসের মতো সাজপোশাক শুরু কর’ এই কেরি

পাকা সই

Image
উৎস গুগল ইমেজেস আমরা মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে রসিকতা করি, লুব্জুগুব্জু হয়ে যখন মরতে বসব তখন যদি সব ভুলে যাই, নিজের নাম, একে অপরের নাম, তখনও কিছু কিছু শব্দ বা বাক্য মনে থাকবে। মৃত্যুর সময় হয়তো বিড়বিড় করে উঠলাম, ‘ড্যাং না ক্যাং না গ্যাং?’ কিংবা ‘আরেকটু তেনজিংগি না করলে চলছে না,’ কিংবা ‘তোমার মতো পাকা লোক কিনা শেষে পাশবালিশ খুন করল ডাক্তার?’ রসিকতাটা নিতান্ত বাড়াবাড়ি নয়, রেডিও মিরচি-র   মীর, দীপ এবং বাকিরা আমাদের বাড়িতে যে প্রতাপে রাজত্ব করেন, তাতে এ ঘটনা সত্যি সত্যি ঘটা কিছুই আশ্চর্য নয়। সানডে সাসপেন্সের সব গল্পই প্রায় শোনা, কিন্তু হাতে গোনা ফেভারিট কয়েকটা আছে। গ্যাংটকে গণ্ডগোল, হত্যাপুরী, হাউন্ড অফ দ্য বাস্কারভিল, সত্যান্বেষী। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সেগুলো না চললে আমাদের ঘুম আসে না।   আর রাতের পর রাত শুনতে শুনতে এই গল্পগুলো আমাদের কণ্ঠস্থ হয়ে গেছে। একজন যে কোনও জায়গা থেকে কোনও একটা সংলাপ বলে উঠলে অন্যজন ঝটিতি পরের সংলাপটা বলে দিতে পারি। মুখস্থ হয়েছে যখন তখন নতুন গল্প শুনলেই পার বলতে পারে কেউ, আমরা সে চেষ্টা করেওছি, কিন্তু মজা পাইনি। এই বস্তাপচা গল্পগুলোর শোনার মধ্

আর যাই করুন, মিক্স করবেন না

মান্ডি হাউসের কাছে একটা উঁচু অফিসে সেদিন যেতে হয়েছিল মিটিং-এর জন্য। যে কোনও গোত্রের মিটিংই আমার জঘন্য লাগে, তার মধ্যে সেদিনের মিটিং ছিল জঘন্যতম গোত্রের। ইটিংহীন মিটিং। প্রেমহীন বিয়ের মতোই প্যাথেটিক।   মিটিং শেষ হল সাড়ে বারোটায়। রাস্তার উল্টোদিকে ত্রিবেণী টেরাস ক্যাফে আর রাস্তার শেষে বেংগলি মার্কেট। মার্কেটে গিয়ে চাট খেলে কেমন হয় আলোচনা চলছিল, রবিভাইসাব বললেন, বেংগলি মার্কেটের চাট ভালো কিন্তু আরও ভালো চাট হল প্রভুজির।   প্রভুজির চাটের নাম আমি শুনেছি। দিল্লির সব চাট-উৎসাহীরাই শুনেছে। ইউ পি এস সি-র বাজখাঁই অফিসের পাশের গলিতে আরও ছোটখাটো চাটওয়ালা আছেন, কিন্তু প্রভুজির দোকানের সামনের ভিড়ই বলে দেয় ওই বনে রাজা কে। চাটু ভর্তি ঢেউ তোলা তেলের চারপাশে আধভাজা আলু আর টিক্কির ঢিপি। একদিকে গোলগাপ্পার আয়োজন, অন্যদিকে দই আর লাল সবুজ চাটনির ডেকচি। দেওয়ালে গণেশ আর শেরাওয়ালির পাশে একজন নশ্বর মানুষের ছবিতেও মালা পরানো, যাঁর মুখের সঙ্গে অনতিদূরে টোকেন নিয়ে বসে থাকা ভদ্রলোকের মুখের মিল আছে।   একটা টিনের বোর্ডে রং দিয়ে মেনু লেখা। সবই খেতে ইচ্ছে করে কিন্তু সব তো খাওয়া যায় না, তাই অনেক ভেবে একপ্

এ মাসের বই/ডিসেম্বর ২০১৭। ২০১৭য় পড়া আমার সেরা বই।

Image
When Breath Becomes Air/ Paul Kalanithi   ‘Intelligence (is) not enough, moral clarity is needed.’ দু’হাজার পনেরোয় প্রকাশিত হওয়ার সময়েই পল কলানিথির মেমোয়ার ‘হোয়েন ব্রেথ বিকামস এয়ার’ সাড়া ফেলেছিল। অন্যান্য মেমোয়ারের সঙ্গে এই বইয়ের একটা তফাৎ হল, বইটি লেখার সময় ছত্রিশ বছর বয়সী পল কলানিথি জেনে গেছেন তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে স্টেজ ফোর লাং ক্যান্সার। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মেমোয়ার লেখার সাহস খুব কম লোকেই দেখাতে পারে, পল কলানিথি পেরেছেন। পল কলানিথি আরও অনেক কিছু পেরেছেন, ইন ফ্যাক্ট, ক্যানসার ধরা পড়ার আগে পর্যন্ত পল কলানিথির জীবন একের পর এক ‘পারা’র মিছিল। প্রথম প্রজন্ম অভিবাসী ভারতীয় বাবামায়ের সন্তান পল সব সাবজেক্টে হায়েস্ট পাওয়া ছাত্র ছিলেন, সাহিত্য এবং সায়েন্স দুদিকেই সমান উৎসাহ এবং দখল ছিল, অবশেষে সায়েন্স বেছে স্ট্যানফোর্ডে নিউরোসার্জেন হয়ে ওঠার দশ বছরের অমানুষিক ট্রেনিং প্রায় শেষ করে ফেলেছিলেন, এমন সময় ফিনিশিং লাইন সামনে এসে দাঁড়াল।   সবারই মনে হয়, পলেরও হয়েছিল। হোয়াই মি?   সবাই পারে না, পল পেরেছেন। সে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উল্টে নিজেকে প্রশ্ন করতে। হোয়

দলাদলি

Image
পৃথিবীতে দু’দলের লোক আছে।   যারা জানুয়ারির প্রথম ক’টা দিনের ম্যাজিকে বিশ্বাস করে। আর যারা করে না।   যারা করে, এই ক’দিন তাদের অফিস যাওয়ার পথটাও বেড়াতে যাওয়ার মতো হয়ে যায়।   তারা এই ক’দিন সকালে লাফ দিয়ে বিছানা ছাড়ে, লেবু-চেপা গরম জল খেয়েই যোগা ম্যাট পেতে ডাউনওয়ার্ড ডগ হয়। (আর তাদের বাড়িতে যদি অবিশ্বাসী দলের লোক কেউ থেকে থাকে যে মনে করে যে এই ক’দিনের সঙ্গে সামনের বাকি তিনশো ষাট দিনের কোনও পার্থক্য নেই আর সেই লোকটা যদি লেপের ভেতর থেকে খিকখিক করে হাসে,   সে হাসি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়।) এই ক’দিন হাত নেড়ে চেনা আধচেনা হ্যাপি নিউ ইয়ার বলতে, বা অন্য কারওর হাত নেড়ে হ্যাপি নিউ ইয়ার-এর উত্তর দেওয়ার সময় প্রত্যেকবার তাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের বান ডাকে। তারা এই ক’দিন বস হাঁ করার আগে অফিসের কাজ শেষ করে জমা দেয়।   তারা এই ক’দিন টিফিনের পর ডেস্কে বসে মন দিয়ে কমলালেবু খায়, কারণ ভিটামিন সি। আর সিজন্যাল ইটিং। তারা এ ক’দিন নতুন ডায়রি খুলে নতুন পাতায় লেখে। টু ডু লিস্ট বানায়। রাতে সে লিস্টের প্রতিটি আইটেম কেটে শান্তিতে লেপের তলায় হাসি হাসি মুখে সেঁধোয়। তারা বিশ্বা

রত্নাকর পত্রনবীশের একটি দিন

Image
ক্যাথরিন ম্যানসফিল্ড (১৮৮৮-১৯২৩) নিউজিল্যান্ডে জন্মেছিলেন, যদিও তাঁর লেখকজীবনের অধিকাংশটাই কেটেছিল ইংল্যান্ডে। ১৯২০- তে প্রকাশিত ক্যাথরিন ম্যানসফিল্ডের ছোটগল্প 'মিস্টার রেজিন্যাল্ড পিকক’স ডে'-র ছায়া অবলম্বনে এবার ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম-এর গল্পের কামরায় আমার গল্প বেরিয়েছে, ‘রত্নাকর পত্রনবীশের একটি দিন’ । মিস্টার রেজিন্যাল্ড পিকক’স ডে-তে ঘটনা যে খুব একটা ঘটে তা নয়, গল্পের নামের সঙ্গে সংগতি রেখে এটি মূলত একটি ‘স্লাইস অফ লাইফ’ রচনা। এই একটি দিনের ঘটনাবলী থেকে পাঠক গল্পের মুখ্যচরিত্র মিস্টার পিকক-এর চরিত্র সম্পর্কে অবগত হবেন। মিস্টার পিকক-এর পদবীর মাধ্যমে তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যটি বেশ প্রকাশ পায়। তিনি নিজেকে নিয়ে আত্মহারা। একশো বছর আগে মিস্টার পিককের মতো লোক হয়তো খুব বেশি ছিল না, না হলে ম্যান্সফিল্ড আর তাঁকে হিরো করে গল্প ফাঁদবেন কেন। কিন্তু এখন আমাদের চারপাশে ‘পিকক’ খুব কমও নেই। বা হতে পারে, সোশ্যাল মিডিয়া এসে সবার প্রচ্ছন্ন পিকক-পনাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আমার গল্পের হিরো রত্নাকর পত্রনবীশ। মিস্টার পিককের সঙ্গে শ্রী পত্রনবীশের মূল পার্থক্য হচ্ছে মিস্টার পি