Posts

Showing posts from January, 2019

অমৃতসর ২: হরমন্দির সাহিব, মহারাজা রঞ্জিৎ সিং মিউজিয়াম

Image
অমৃতসর টুরিস্টদের জায়গা। দেখার, খাওয়ার, ঘোরার জিনিসের লিস্টের অভাব নেই। আমরা কী কী দেখব ঠিকই করে রেখেছিলাম। তার মধ্যে প্রথম ছিল রামবাগে রাজা রঞ্জিত সিং-এর গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ।   ঘোর গোলমেলে শহরের একেবারে মধ্যিখানের পাড়া রামবাগ। রাজারাজড়াদের জায়গা বলে কথা। পরিষ্কার রাস্তা, দুপাশে বৃক্ষরাজি, পুরোন ইমারত মিলিয়ে বেশ ইতিহাস ইতিহাস ভাব। যে শহরের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে পঞ্চাশ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ায় সেখানে কেন কেউ সাধ করে গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ বানাতে যাবে ভেবে আমরা মাথা চুলকোচ্ছিলাম। সিমলা কিংবা শিলং থাকতে? কিন্তু অমৃতসরে সত্যি সত্যিই মহারাজা রঞ্জিত সিং-এর সামার প্যালেস ছিল। পুরোনো প্রাসাদ সারানো হচ্ছে। নরম্যাল সময়ে ভেতরে ঢোকা যায় কি না জানি না। প্রাসাদ কম্পাউন্ডের প্রান্তে একটি আধুনিক দোতলা বাড়িতে মহারাজা রঞ্জিত সিং মিউজিয়াম।   মিউজিয়ামে শুনেছি দেখার মতো অনেক কিছু আছে, রঞ্জিত সিং-এর আমলের মুদ্রা, বইপত্র, অস্ত্রশস্ত্র, কিন্তু সারাইটারাই হচ্ছে বলেই হয়তো কয়েকখানা চমৎকার পোর্ট্রেট আর পেন্টিং আর কিছু রাজসিক পোশাকআশাক ছাড়া আর কিছু প্রদর্শন করা ছিল না। দেওয়ালজোড়া পেন

এ বি সি ডিঃ কী ছিলেন, কী হইয়াছেন

Image
বেড়ানোর গল্পের ফাঁকে একটু লেখাপড়া করা যাক।   ঋণস্বীকার   A একসময় হরিণের মাথা ছিলেন, H মাঝপথে পাশ ফিরে শুয়েছেন, K একশো আশি ডিগ্রি পালটি খেয়েছেন, O বহুদিন ধরেই O, X মার্কস দ্য স্পটও।  

অমৃতসর ১ঃ শুরু

দশ বছর ধরে ব্লগ লিখতে লিখতে এমন হয়েছে, অন্যরকম কোনও একটা ঘটনা ঘটলে, খুব বেশি অন্যরকম হওয়ারও দরকার নেই, কোনও অটো ভাইসাব মিটারে যেতে রাজি হয়ে গেলে, বস পিঠ চাপড়ে হেসে উঠলে বা যাতায়াতের পথের সিগন্যালগুলো সব সবুজ থাকলেই, ব্লগে তাই নিয়ে পোস্ট লিখে ফেলতে হাত নিশপিশ করে।   আর ঘটনাটা বেড়াতে যাওয়া হলে তো কথাই নেই। টিকিট কাটা হয়ে গেলেই স্ক্রিভনারে ফাইল খুলে রেডি। যখন যা ঘটবে, কাব্যিক লাইন আসবে মাথায়, ভালো ভালো ভাব জাগবে লিখে ফেলব। অমৃতসর নামের ফাইলটা ডকুমেন্টে বসে ছিল প্রায় মাসতিনেক। এটা আমার পক্ষেও বাড়াবাড়ি। ফাইল খুলেছিলাম যাওয়ার ঘনাঘনই, কোথায় যাব, কোথায় খাব, কোন ছবিটা কোন অ্যাংগল থেকে তুলব সব স্থির এমন সময় দুর্ঘটনার ঘনঘটায় টিকিট ক্যানসেল করতে হল। কনফার্ম টিকিট। ভাবুন। সে মনঃকষ্ট, কী বলব। টিকিট ক্যানসেল করলাম, হোটেল বুকিং গচ্চা গেল, কিন্তু স্ক্রিভনার ফাইলটা ডিলিট করলাম না। রেখে দিলাম। যাতে আগুনটা বুকের মধ্যে জ্বলতে থাকে। যাতে যতবার চোখ পড়ে বুক মুচড়ে ওঠে। যাতে জল মাথার নিচে নামলেই দৌড় দেওয়া যায়।   দিল্লি থেকে অমৃতসর ভ্রমণের সুবিধে হল, লংটং লাগে না, নর্মাল উইকএন্ডেই সেরে দেওয়া যায়।

তিরিশ লাগবে না, দশেই হয়ে যাবে

ঘর গুছনো স্পেশালিস্ট মারি কোন্ডোর নাম আপনারা শুনে থাকতে পারেন। দু’হাজার চোদ্দ সালে ওঁর জাপানি বইয়ের আমেরিকান সংস্করণ ‘দ্য লাইফ চেঞ্জিং ম্যাজিক অফ টাইডিয়িং আপ’ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘কোনমারি’ অর্গানাইজেশন মেথড আন্তর্জাতিক ঝড়ে পরিণত হয়। বইটি বিশ্বের শক্তিশালী ভাষাগুলিতে অনুবাদ হয়, মারি সেলিব্রিটি হন, খ্যাতি হয়, টাকা হয়, লস অ্যাঞ্জেলিসে বাড়ি হয়, সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে শো-ও হয়েছে।   নেটফ্লিক্সে শো শুরু হওয়ার পর কোন্ডো বিতর্কের মুখে পড়েছেন। সেলিব্রিটি হলে বিতর্কও হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু ঘর গুছনো নিয়ে টুইটারে কতই বা গা গরম করা সম্ভব তাই মারি কোন্ডো এতদিন বিতর্ক এড়িয়ে থাকতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু আর পারলেন না। নেটফ্লিক্সের শো-তে বলে বসলেন, যদি জমাতেই হয়, তিরিশটির বেশি বই বাড়িতে জমানো উচিত না।   আর যায় কোথায়। লোকে বল্লম নিয়ে লাফিয়ে পড়েছে। এটা আগেও খেয়াল করে দেখেছি। অতি বড় মিনিম্যালিস্ট, জামাকাপড়, গয়নাগাঁটি, বাড়িগাড়ি কেনা না নিয়ে গর্ব করেন তিনিও ডাইনেবাঁয়ে বই কিনতে থাকেন এবং তাতেও গর্বের অন্ত বোধ করেন না। কেনারও দরকার নেই। যেনতেনপ্রকারেণ জমাতে পারলেই হল। বাকি সব শিল্পকর্মের থেক

নয়

Image
  বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে লেখা সাতটা গল্প আর দু’টো মৌলিক গল্প নিয়ে আমার গল্প সংকলন ‘নয়’ বেরোচ্ছে ২০১৯-এর কলকাতা বইমেলায়। বার করছে সৃষ্টিসুখ প্রকাশনী। রোহণের সৃষ্টিসুখ। বইয়ের প্রচ্ছদ করেছে রোহণ। অনেক সাদা, অল্প রং মিলিয়ে আমার মনের মতো প্রচ্ছদ। তবে আরও মনের মতো দিয়েছে বইয়ের নাম। বইয়ের নাম নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছিল এপ্রিল মাস থেকে। আমার পছন্দের নামগুলো শুনে অর্চিষ্মান মাথা নাড়ছিল, অর্চিষ্মানের সাজেসশন শুনে আমি মাথা চুলকোচ্ছিলাম। আমাদের দুজনের শর্টলিস্টেড নামগুলো শুনে রোহণ বলেছিল, ভেবে দেখি। তারপর ভেবেচিন্তে ও নাম রেখেছে ‘নয়’। সোজাসাপটা, ঝাড়াঝাপটা ‘নয়’। আমাদের আগের নামগুলোয় গল্পের এসেন্স-টেসেন্স, থিম-টিম গোঁজার অনেক চেষ্টা করেছিলাম, তারপর রোহণ বলল, গল্পের এসেন্স গল্পকেই প্রকাশ করতে দাও, কুন্তলাদি। 'নয়'-এর নাম 'নয়', কারণ বইতে ন'টা গল্প আছে। রোহণ যেটা না জেনেই নামটা দিয়েছে, সেটা হচ্ছে ‘নয়’ আমার অন্যতম ভালোবাসার সংখ্যা। প্রিয়তম নয়। ভিড় ভালোবাসি না বলে আমার প্রিয় সংখ্যা এক, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি একের থেকেও ইন্টারেস্টিং হল ‘নয়’। তাছাড়া নয় আমার জী

পৌষমেলা ২০১৯

Image
অপেক্ষাকৃত বড় বাড়িতে শিফট করার পর আর আরও খানিকটা অলস হয়ে যাওয়ার পর আমরা আমাদের বাড়ি পরিষ্কার করার দায়িত্ব আউটসোর্স করেছি এবং সে দায়িত্ব নিয়েছে রীতা। রীতা দরকারের বেশি কথা বলে না, না বলে কামাই করে না, চটপট কাজ করে, আমার দ্বারা হচ্ছে না দেখলে নিজেই মোড়ায় চড়ে ঝাঁটার হ্যান্ডেল দিয়ে খুঁচিয়ে একজস্ট ফ্যান চালু করে দেয়।   সেই রীতা চা খেতে খেতে বলল, মেলায় যাচ্ছ তো? বড় বড় বাঁশ ফেলে চিত্তরঞ্জন পার্ক বঙ্গীয় সমাজ আয়োজিত পৌষমেলার প্যান্ডেল হচ্ছে বাড়ির উল্টোদিকের মেলা গ্রাউন্ডে, লগ্নজিতা আর অনুপম রায় গান গাইতে আসছেন, যাচ্ছি বইকি। রীতা বলল, ফাংশান তো সন্ধেবেলায়, দুপুরে ফুড ফেস্টিভ্যালে যাবে না? আমি শনিরবি দু’দিনই দোকান দিচ্ছি। শনিবার পাটিসাপটা, পুলিপিঠে আর রবিবার মাংসভাত। স্বীকার করতে লজ্জাই হচ্ছে কিন্তু খবর শুনে লাফিয়ে পড়ে, ‘আহা চমৎকার কেয়া বাত’ বলার বদলে চোখ কপালে তুলেছিলাম। বলেছিলাম, সর্বনাশ, তোমার তো এমনিই পরিশ্রমের অন্ত নেই, আবার এত খাটবে? রীতা বলল, কেন মজা হবে তো। সংযত হলাম। বোঝাই যাচ্ছে ও আমার মতো যতটুকু না করলে নয় কোনওমতে সেরে তারপর চিতপাত হয়ে শুয়ে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলার নীতি নি

বৃশ্চিক ২ এবং কেন আমার রহস্য গল্প লিখতে গায়ে জ্বর আসে

Image
'বৃশ্চিক ১: একটি রহস্যরোমাঞ্চ কাহিনি সংকলন'-এর খবর আমি পেয়েছিলাম বইটি প্রকাশ হওয়ার কিছুকাল পরে এবং কিনেওছিলাম। কাজের কথা না বলা, মানুষজন্ম সার্থক করার টিপস না দেওয়া, মানবমনের গভীর অগভীর উপলব্ধি নিয়ে বকে বকে মাথা না ধরানো ঘরানার সাহিত্যের প্রতি আমার দুর্বলতা সর্বজনবিদিত। সেই সব ঘরানার গল্প নিয়ে বুক ফুলিয়ে একটা বই বেরোচ্ছে জেনে ভালো লেগেছিল। বইটা হাতে নিয়ে আরও ভালো লেগেছিল। ভালো বাঁধাই, ভালো ছাপা, ভালো ছবি, ভালো পাতা। হাতে নিলেই বোঝা যায় ভালোবেসে বানানো। কয়েকটা গল্প মৌলিক, কয়েকটা অনুবাদ। দুয়েকটা চেনা নাম, বাকি অচেনা। কয়েকটা গল্প চমকে দিয়েছিল। টুইস্টে, প্লটে, ভাষায়, অনুবাদের সাবলীলতায়।   কিন্তু সবথেকে বেশি চমকেছিলাম ক'মাস পর বৃশ্চিকের সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে ঋজু গাঙ্গুলির মেল পেয়ে। বৃশ্চিক ২ রহস্যরোমাঞ্চ কাহিনীর সংকলন বেরোচ্ছে এবং সেখানে ওঁরা আমার একখানা গল্প রাখতে চান। মেলে একটা জিনিস খেয়াল করেছিলাম; ওঁরা 'আপনার লেখা' শব্দ দুখানা ব্যবহার করেছেন অর্থাৎ চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে যে ছায়া অবলম্বনের খেলাটা খেলি সেটা চলবে না। দুয়েকবার মেল চালাচালির পর ঋজু এটাও বলেছিল

কাজের গাছ অকাজের গাছ

Image
গাছের শখ ব্যাপারটা আমার কাছে বহুদিন পর্যন্ত অবোধ্য ছিল। একুশ বছর বয়স পর্যন্ত আমি এমন একটা বাড়িতে থাকতাম যেখানে অগুনতি গাছ ছিল এবং কোনওটাই শখের ছিল না। প্রত্যেকটাই অপরিসীম কাজের। শুধু আমাদের বাড়ির নয়, আশেপাশের সব বাড়ির গাছেরাই দরকারি ছিল। বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবার ঠাকুরের ঘটে দেওয়ার কলা, বেলপাতা, আম্রপল্লবের জন্য আম কলা বেলগাছের জোগাড় সব বাড়িতেই থাকত, তাছাড়া কাঁঠাল পেয়ারা নারকেল সুপুরি জাতীয় গাছও সবাই নিজের বাড়িতেই পুঁতে রাখত। নিমটিমও রাখা হত, যাতে বাজার থেকে বেগুন কিনে নিমপাতা কিনতে ভুলে গেলেও মেনু থেকে নিমবেগুন বাদ না পড়ে, ছাদের পাঁচিলে চড়ে পেড়ে নিলেই মিটে যায়।   ফুলের ব্যাপারেও তাই। এখনকার মতো তখন ঘরে ঘরে নাস্তিক আর অজ্ঞেয়বাদীর চাষ হত না; সকলেই ভগবানকে ভয় পেত। পাড়ার যে সব দাদারা দাড়ি রাখতেন, চশমা পরতেন, ভোটের আগে বাড়ি বাড়ি নাম মেলাতে আসতেন এবং কেটে ফেললেও অঞ্জলি দিতেন না, তাঁরাও অষ্টমীর রাতে কুইজ পরিচালনা করতেন। সকলের বাড়িতেই পুজোআর্চার আর পুজোআর্চার জন্য ফুলের ব্যবস্থা ছিল। টগর, কলকে, কামিনী, কাঞ্চন এ সব কায়েমি গাছের সঙ্গে সঙ্গে সিজনাল শিউলি আর গাঁদাও বাড়িতে বাড়িতে থাক

Not more than 4 Hours a day keeps dyspepsia away

In a world where no one is compelled to work more than four hours a day, every person possessed of scientific curiosity will be able to indulge it, and every painter will be able to paint without starving, however excellent his pictures may be. Young writers will not be obliged to draw attention to themselves by sensational potboilers, with a view to acquiring the economic independence needed for monumental works, for which, when the time at last comes, they will have lost the taste and the capacity. […] Above all, there will be happiness and joy of life, instead of frayed nerves, weariness, and dyspepsia. The work exacted will be enough to make leisure delightful, but not enough to produce exhaustion. Since men will not be tired in their spare time, they will not demand only such amusements as are passive and vapid. At least 1 per cent will probably devote the time not spent in professional work to pursuits of some public importance, and, since they will not depend upon these

নভেম্বর

Image
চন্দ্রবিন্দুর কোনও একটা গানের লাইনে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘কে না ভালোবাসে শৈশব’। উনি যে ভালোবাসেন সে তো বোঝাই যাচ্ছে, ওঁর বানানো প্রথম সিনেমাটা দেখলেও সেটা স্পষ্ট। ( দ্বিতীয়টা   তৃতীয়টা এখনও দেখা হয়নি, কবে টিভিতে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে হত্যে দিয়ে বসে আছি। আপনারা দেখেছেন নাকি কেউ ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’?) অনিন্দ্য একা নন, জিজ্ঞাসা করলে অধিকাংশ লোকেই শৈশব ভালোবাসেন বলে দাবি করবেন। খারাপ লাগার তো কিছু নেই, খাওয়াদাওয়ার চিন্তা নেই, বসের গালি খাওয়া নেই, গুরুজনেদের ঘাড়ে বডি-ফেলা জীবনযাপন। তলিয়ে দেখলে কী বেরোবে অবশ্য বলা যায় না। আমার এমনিতে তলিয়ে-টলিয়ে দেখার বদভ্যেস নেই কিন্তু সেদিন আচমকা একটা সত্য, শৈশব-সংক্রান্ত, উদ্ঘাটিত হল। নিতান্ত অনাড়ম্বর সেটিং-এ। কোনও এক শনিরবি, সাড়ে দশটা নাগাদ বিছানায় শুয়ে শুয়ে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলতে খেলতে কিংবা মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার এপিসোড অটো প্লে-তে দেখত দেখতে (দুটো একইসঙ্গে করতে করতেও হতে পারে) আকস্মিক আমি ওই মুহূর্তের অসামান্য সুখ উপলব্ধি করতে পারলাম। এবং গ্রেটফুল হলাম। গ্রেটফুল হলাম বড় হওয়ার জন্যও। শৈশবের শনিরবিগুলো মনে পড়ে গেল। শনিবার হলে স