Posts

Showing posts from May, 2022

মুরথল

রাত আড়াইটেয় ঘুম ভেঙে করণীয় কাজের লিস্ট বিশেষ লম্বা নয়। জলপান। বাথরুম ভিজিট। অন্ধকারে সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে থাকা। তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবা, বা উপলব্ধি করা, ভাবার মতো বিষয়ও আর বাকি নেই, সব ভাবনা ছিবড়ে হয়ে গেছে। মগজ হাই তুলে বলে, মুরথল গেলে হয়। যাঁরা জানেন তাঁরা জানেন, মুরথল যাওয়ার জায়গা নয়। মুরথল কেউ যায় না। যেমন হাওড়া কেউ যায় না। কলকাতা যেতে হলে হাওড়া ছুঁয়ে যায়। যেমন এম ফিল। খামোকা কেউ করে না, যদি না পি এইচ ডি-র উচ্চাশা থাকে। যেমন বিয়ে। এমনি এমনি কোনও পাগলে করে না, আসল উদ্দেশ্যটা হচ্ছে অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য সন্তানসন্ততি উৎপাদন যা পৃথিবীর সমস্ত প্রজাতির এন্ড গোল। আর আপাতত আমাদের সমাজের যা ভাবগতিক তাতে বাচ্চা উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের আদর্শ আবহাওয়া এখনও বিয়েই দিতে পারে, কাজেই। তবু কিছু কিছু লোক এমনিই বিয়ে করে। জিনটিন ছড়ানোর এন্ড গোল নেই, তবু। কারও কারও কলকাতা যাওয়ার কোনও দরকার না থাকলেও হাওড়া যায়। গিয়ে ফিরে আসে। মুরথল যাইনি, কিন্তু মুরথলের পাশ কিংবা ওপর দিয়ে অনেকবার গেছি। পাহাড়ে, যেখানে একসময় ঘনঘন যেতাম, যেতে গেলে মুরথল এড়ানো যায় না। মুরথল বিখ্যাত ধাবার জন্য। ধাবা বলতেই যে দড়ির খাট

বিক্রমাদিত্যের বারান্দা

Image
খবরটা এখানে দেওয়ার কোনও মানে হয় না। দু’হাজার পনেরো থেকে দু’হাজার বাইশ। আট বছরের অবান্তরের কয়েকটা পোস্ট একত্র করে অবান্তরের দ্বিতীয় সংকলন বেরোচ্ছে, সৃষ্টিসুখ থেকেই, দু’হাজার চোদ্দতে যেখান থেকে অবান্তরের প্রথম সংকলন বেরিয়েছিল। এই বইয়ের সব লেখাই আপনারা, যাঁরা যুক্তিবুদ্ধির যাবতীয় সীমা লঙ্ঘন করে অবান্তর আর আমার সঙ্গে সঙ্গে চলেছেন গত আট বছর কিংবা আটের বেশি কিংবা যে কোনও অ্যামাউন্টের সময়, হয় অলরেডি পড়েছেন কিংবা চাইলেই পড়ে ফেলতে পারেন। সেই চর্বিতচর্বণকে একগাদা কার্বন ফুটপ্রিন্ট খরচ করে মলাট বাঁধিয়ে এনে আপনাদের সামনে দাঁড় করানো ব্যাখ্যাতীত। আবার এখানে, আপনাদের খবরটা না দিলে পৃথিবীর কাউকেই দেওয়ার মানে হয় না। এই বিষয়ে গৌরবে বহুবচনে আমার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ লোকের স্ট্রিকট বারণ আছে ( “আহাঃ–শেকসপিয়রও তো অন্যের গল্পের সাহায্য নিয়ে নাটক লিখেছে, তা বলে তাকে কি কেউ কখনও আমাদের হ্যাঁমলেট বলতে শুনেছে?”) তাছাড়া এই প্রলাপের অযাচিত মালিকানা বইতে আপনারা পত্রপাঠ রিফিউজ করবেন সে নিয়েও আমি নিঃসংশয়, তবু। তবু। কারণ আপনারা না থাকলে অবান্তর থাকত কি না, থাকলেও কেমন থাকত আমি জানি না। কিন্তু অবান্তর খারাপ

যুগলবন্দী

Image
গল্পের সঙ্গে সম্পর্করহিত কিছু কথা। এক, সেম সপ্তাহে দু'দুটো গল্পের লিংক পোস্টের নামে চালিয়ে দেওয়ার ফাঁকিবাজি মার্জনা করবেন। গায়ে গায়ে গল্পদুটো বেরোল তাই গায়ে গায়েই অবান্তরে দিয়ে দিলাম। দুই, এতদিন বাদে চারনম্বরের ছবিটা পোস্ট করতে দারুণ ভালো লাগল। চার নম্বরে আমার গল্প লেখা বন্ধ হয়েছিল ব্যক্তিগত কারণে। আগের মতো নিয়মিতও হবে না হয়তো আর, কিন্তু মাঝখানে চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম মেরামতিসংক্রান্ত কারণে কয়েকমাস ছুটিতে ছিল। প্রত্যাবর্তনের পর প্রথম ট্রেনের প্রথম গল্পের কামরায় যে আমার গল্পের জায়গা হয়েছে তাতে আমি রোমাঞ্চিত ও শিহরিত। এবার গল্প নিয়ে কিছু কথা। আমি যেমন যা দেখিনি তা নিয়ে গল্প লিখতে পারি না, তেমন আবার যা দেখলাম হুবহু তাই নিয়েই গল্প লিখে ফেললাম এও করি না। এই গল্পটা ব্যতিক্রম। অফ কোর্স, গল্পটা পড়লে বুঝতে পারবেন আগাপাশতলা বানানো, কিন্তু গল্পটার যেটা হুক, একখানা সাদাকালো ছবি, সেই ছবিটা আমি চর্মচক্ষে দেখেছিলাম। অমৃতসরের পার্টিশন মিউজিয়ামে। দেখে এসে অবান্তরে ব্যাখ্যান করে বলেওছিলাম। মিউজিয়ামের কথা, এবং পার্টিকুলার এই ছবিটার কথাও। গল্পের লিংক নিচে রইল। আপনারা পড়ে মতামত দিলে ভালো লা

অ্যাবনর্ম্যাল

Image
ছবির কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক, গুরুচন্ডা৯ আমার জীবনভরের আফসোস যে আমি অসহনীয় রকমের নর্ম্যাল। জীবনে যে কিছু করতে পারলাম না তার সর্বপ্রধান কালপ্রিট আমার এই ছেড়ে-দে-মা-কেঁদে-বাঁচি সাধারণত্ব। এই সর্বগ্রাসী স্বাভাবিকতা। কাজেই অস্বাভাবিকতা বা অ্যাবনর্ম্যালিটির প্রতি আমার মারাত্মক চোরা টান। খুনখারাপি আমার আরেক দুর্বলতা। নামকরণে যদিও একটি দুর্বলতাই এঁটেছেন, গল্পের শরীরে জায়গা পেয়েছেন দুই দুর্বলতাই। দুজন অ্যাবনর্ম্যাল মানুষ আর দুইয়ের বেশি খুনখারাপি সম্বলিত আমার ছোটগল্প ‘অ্যাবনর্ম্যাল’ বেরিয়েছে গুরুচন্ডা৯-র ইদের কড়চা-য়। এই রইল লিংক। অ্যাবনর্ম্যাল

তামা

অ্যামেরিকান বিউটি-র শেষ দৃশ্য আমার দেখা যাবতীয় সিনেমার যাবতীয় দৃশ্যের মধ্যে প্রিয়। লেস্টার - অতৃপ্ত, অনৈতিক, অসুখী লেস্টার - মারা যাচ্ছে এবং জনশ্রুতি সত্য করে মৃত্যুমুহূর্তে লেস্টারের চোখের সামনে ভেসে উঠছে গোটা জীবন। ছিটকে ছিটকে উঠছে শৈশব কৈশোর, মুহূর্ত, মানুষ। সেই ক্রমান্বয়ে লেস্টারের চোখে শেষ ভেসে ওঠে ক্যারোলাইন। লেস্টারের স্ত্রী। অতৃপ্ত, অনৈতিক, অসুখী ক্যারোলাইন। লেস্টারের জীবনভরের অসুখের কারণ। অতৃপ্তির উৎস। তা সত্ত্বেও, জীবনের শেষ মুহূর্তটিতে যে ক্যারোলাইনের ছবি - সম্পত্তি না, প্রাপ্তি না, প্রাণাধিক সন্তান না - ক্যারোলাইনেরই ছবি চোখে নিয়ে লেস্টার মরে যায় সেটা তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু তার থেকেও সম্ভবত বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ক্যারোলাইনের কোন ছবিটি চোখে নিয়ে। দীর্ঘ দাম্পত্যের ক্লিষ্ট মুহূর্তদের ছবি? যা লেস্টারের সঙ্গে দর্শকরাও দেখেছেন, বেঁচেছেন গোটা সিনেমাটা জুড়ে। কেউ কেউ হয়তো ভেবেছেন এ ভাবে থেকে যায় কী করে লোকে? কেনই বা থাকে? এর থেকে কি ঢের সোজা না ছেড়ে চলে যাওয়া? ঢের বেশি আরামের, সম্মানের, প্রার্থনার? জীবনের শেষেরও শেষ মুহূর্তে ক্যারোলাইনকে দেখে লেস্টার। আমরা দেখি। এবং চমকে যাই। এ কে

ফুচকা ও সাফল্য

অ্যাসোসিয়েশন ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। স্মৃতির সঙ্গে সুখের অ্যাসোসিয়েশন, মহালয়ার সঙ্গে রেডিওর অ্যাসোসিয়েশন, গোয়েন্দাগল্পের সঙ্গে নিচু কোয়ালিটির সাহিত্যের অ্যাসোসিয়েশন। জীবনে দাঁড়ানোর সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু পেশার অ্যাসোসিয়েশন। গল্পটা আগেও বলেছি। ক্লাস সেভেন নাগাদ আনন্দবাজার বা সাপ্তাহিক বর্তমানে, বাড়ির ছাদে এক যুবকের মাশরুম ফলানোর ব্যবসার প্রতিবেদন পড়া ও তৎপরবর্তী প্রতিক্রিয়ার গল্প। মন্ত্রগুপ্তির মাহাত্ম্য তখনও মর্মস্থ হয়নি। মাকে গিয়ে বললাম, জীবনের মোটো ঠিক করে ফেললাম। 'ঠিক করে ফেললাম’ উচ্চারণের সঙ্গে সাহসী সপাট অঙ্গভঙ্গি অ্যাসোসিয়েট করবেন না আবার। বরং এই দেখো মা কাগজে লিখেছে মাশরুম চাষের কথা, যদি তোমার অনুমতি পাই তো বড় হয়ে অ্যাটেম্পট নিয়ে দেখতে পারি, না দেখলেও অসুবিধে নেই তুমি যা বলবে শিরোধার্য সে তো জানাই কথা, আমার ভঙ্গিটা ছিল এটাই। মায়ের চোখ উঠে এসে আমার চোখে স্থিত হয়েছিল, মাসল মেমোরিতে হাত যেমন চলার চলেছিল বঁটিতে, আমি সাডেন মুভমেন্ট বন্ধ রেখেছিলাম এবং বুঝেছিলাম এ স্বপ্ন ক্যান্সেল। অনেক পরে গল্পটা মনে করাতে মা আফসোস করেছিলেন। মাতৃত্বের পরীক্ষায় ফেল মারার আফসোস। মেয়

Make your soul grow

২০০৬, এই সেদিন, নিউ ইয়র্ক সিটির সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের ইংরিজি শিক্ষক মিসেস লকউড তাঁর ক্লাসের ছাত্রদের অ্যাসাইনমেন্ট দেন। প্রিয় লেখককে চিঠি লিখে, স্কুলে আসতে অনুরোধ করার অ্যাসাইনমেন্ট। পাঁচজন ছাত্র প্রিয় লেখক হিসেবে কার্ট ভনেগাটকে চিহ্নিত করে এবং চিঠি লেখে। ভনেগাট-এর যে বইগুলো সকলেই পড়েছে শুধুমাত্র সেগুলোই পড়েছি এবং খুব ভালো যে বুঝেছি তেমন দাবি করছি না। ভনেগাট-এর অন্যান্য আপ্তবাক্য অনেক টপ করে ধরে ফেলেছি এবং ঐকমত্যে মাথা ঝাঁকিয়ে খুলে ফেলার উপক্রম করেছি। তেমন একটা হচ্ছে, (আমি প্যারাফ্রেজ করছি) - লেখাতে সেমিকোলন ব্যবহার সম্পূর্ণ অমূলক, যদি না নিজেকে উচ্চশিক্ষিত প্রমাণের দায় থাকে। হায়েস্ট ফাইভ। ছাত্রদের চিঠির উত্তরে ভনেগাটের চিঠি নিচে রইল। November 5, 2006 Dear Xavier High School, and Ms. Lockwood, and Messrs Perin, McFeely, Batten, Maurer and Congiusta: I thank you for your friendly letters. You sure know how to cheer up a really old geezer (84) in his sunset years. I don’t make public appearances any more because I now resemble nothing so much as an iguana. What I

অনভ্যাস অতিক্রম করে

ঘটনাটা যে ঘটছে শুরুর দিকে টের পাইনি। অবান্তরে কী নিয়ে লিখব ভাবতে বসলে যে জিনিসগুলোর কথা মনে পড়ছে, অর্থাৎ জীবনে যা ঘটছে সে নিয়ে লিখি ভাবলে মনে হচ্ছে, ধুস্‌ এ নিয়ে আবার কী লিখব। মনে হচ্ছে, ধুস, এ নিয়ে আবার কী ফেনাব? মনে হওয়াটা এই জন্য সমস্যাজনক নয় যে মনে হওয়াটা ভুল। ফেনানো সব নিয়েই যায়। যদি না ফেনানোর অরুচি বা অক্ষমতা থাকে। কোনওটাই আমার নেই। মনে হওয়াটা অন্য কারণে সমস্যাজনক। রীতিমত সমস্যাজনক। যে সমস্যার শুরুতেই কোপ না মারলে বিপদ। সে নিয়ে পরের (পরের) পোস্টে ফেনাব, আজ সারাৎসারটুকু বলি। কোনও বিষয়কে অবান্তরে লেখার পক্ষে তুচ্ছতর দাগানো, বা অবান্তরকে কোনও বিষয়ের পক্ষে সিরিয়াস বলে চেনানো, এটা খতরনাক। দুর্দমনীয় খতরনাক। প্রায় এ বই আমার পড়ার যোগ্য না বা আমি এই বইয়ের থেকে বেশি বুদ্ধিমান; এই মানুষ আমার শ্রদ্ধার যোগ্য না বা আমি এই মানুষের থেকে দরে ভারি লেভেলের খতরনাক। আসল কথাটা তো অন্য। আসলে তো গুঁড়ি মেরে ঢুকেছে ফাঁকিবাজি। এবং ফাঁকিবাজি সাম্যবাদী। গুরুত্বপূর্ণ অগুরুত্বপূর্ণ নির্বিচারে নিজের কাজ করে যায়। কাজেই তার খপ্পর থেকে বেরিয়ে যা যা তুচ্ছ ঘটছে জীবনে সেই নিয়েই ফেনাতে বসি। খবরাখবর