Posts

Showing posts from November, 2018

ভুবনেশ্বর

Image
দিল্লির বাইরে বেরোনর পর প্রথম যেটা চমকে দেয় সেটা হচ্ছে বাকি দেশটার লোকজন কী ভদ্র এবং বিনীত। ভদ্র মানুষজন ছাড়াও ভুবনেশ্বরের আরও অনেক গুণ আছে।  ভুবনেশ্বর  শুনেছি আধা-প্ল্যানড শহর। রাস্তাঘাট দেখলে সেটা বোঝা যায়। রীতিমত পরিষ্কার। তাছাড়া পুরুষ হকি বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে তাই মোড়ে মোড়ে ব্যানার সেঁটে শহরটা আরও সেজেগুজে রেডি। আর ভালো শহরের ওলাউবার পরিষেবা। যে সময়টুকু ভুবনেশ্বরে ছিলাম ওলাউবারের অটো ট্যাক্সিই ব্যবহার করেছি। হায়েস্ট অপেক্ষা করতে হয়েছে পাঁচ মিনিট। একজন খালি ওলা মানিতে যেতে অসম্মত হয়েছিলেন, তাঁকে ক্যাশে পেমেন্ট করেছি। ব্যস। অফিস সেরে ভুবনেশ্বর পৌঁছতে হয়ে গিয়েছিল রাত দশটা পাঁচ। হোটেলে ব্যাগ রেখেই দৌড়েছিলাম ডিনার খেতে, সে গল্প পরে বলব। খেয়েদেয়েই ঘুম, কারণ সকাল থেকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ঘোরাঘুরি শুরু করতে হবে। পরদিন দুপুর পর্যন্ত ভুবনেশ্বরে থাকার মেয়াদ। তার মধ্যে যা দেখার দেখে ফেলতে হবে, যা খাওয়ার খেয়ে ফেলতে হবে। হোটেলে ব্রেকফাস্ট কমপ্লিমেন্টারি ছিল , কিন্তু সে সব খেয়ে পেট ভরানো চলবে না।   ইউটিউব দেখে , ব্লগ পড়ে কয়েকটা খাওয়ার জায়গা বাছা আছে , সব হয়ত যাওয়া অসম্ভব কিন্তু কয়েকটায় যে

শুরুর আগেঃ গ্রহতারার অসহযোগ

এ জিনিস আগেও ঘটেছে। সংসারের অর্ধেক ভুবনেশ্বর পৌঁছে গেছে, আনলাকি অর্ধেক পড়ে আছে দিল্লিতে। পড়ে পড়ে শিলবাটা হচ্ছে। প্রথমবার সম্ভাবনাটা ঘাড়ে এসে পড়েছিল আচমকা, প্রস্তুতি ছিল না। একেবারে কি আর ছিল না? মন তৈরি ছিল, যেমন সর্বদাই থাকে। স্টার্টিং লাইনে দমবন্ধ, পেশি টানটান, এক পা এগোনো, দুই হাত মুঠো, চোয়াল শক্ত, দৃষ্টি প্রত্যয়ী। বাঁশি বাজলেই 'ছুটি ছুটি' বলে ছিটকে যাবে। স্যাডলি, মনের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়। অনেক রকম শিকল সেধে পেঁচিয়েছি জীবনে। সকালবিকেল ঘুরিয়েফিরিয়ে দেখছি, আহা কী রূপই না খুলেছে।   আগেরবার সে সব শিকলে ঝাঁকুনি না দিয়ে যতখানি চেষ্টা করা সম্ভব করেছিলাম। যা হওয়ার তাই হল। দিল্লি আরও জোরে গলা টিপে ধরল, ভুবনেশ্বর হাত বাড়াল না। অর্চিষ্মান, 'নেক্সট টাইম, প্রমিস,' বলে টা টা করে চলে গেল।   ওর প্রমিস রাখতেই হয়তো নেক্সট টাইম এল। এল তো এল একেবারে নানকজয়ন্তীর লং উইকএন্ডের গায়ে গায়ে।   বাক্যব্যয় না করে দিল্লি ভুবনেশ্বর রিটার্ন টিকিট কেটে ফেললাম। ইউনিভার্সকে সিগন্যাল দিলাম, আমার কাজ আমি করেছি, বাকি গ্রহতারাদের একলাইনে আনাটুকুর দায়িত্ব অন্ততঃ নাও।   গ্রহতারা অতি ত্যা

শীতের স্নান

মেয়েকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর জেদ করেছিলেন মা, তার মাশুল গুনতে হয়েছিল আমাকে। রোজ রাতে সাড়ে ন'টার ইংরিজি নিউজ শুনতে হত। কে কী বলছে কিচ্ছু মাথায় ঢুকত না, গোটা সময়টা ঢুলতাম খালি ওয়েদারের খবরের আগামাথা উদ্ধার হত। ভারতবর্ষের ম্যাপের নানা জায়গায় মেঘ বৃষ্টি সূর্যের ছবি দেখে দিব্যি বোঝা যেত ব্যাকগ্রাউন্ডে ঘোষক কী বলছেন। ওয়ান টু জানতাম কাজেই  চারটি মেট্রোপলিসের তাপমাত্রাও বোঝা যেত। কলকাতারটা থেকে চার ডিগ্রি মাইনাস করে আমরা রিষড়ার তাপমাত্রা ধরে নিতাম। কিন্তু আমাদের রিয়েল উত্তেজনা ছিল দিল্লির টেম্পারেচার নিয়ে। দিল্লিতে তখন আমার বড়মামা মামী মামাতো দিদিরা থাকতেন। নভেম্বর মাস থেকে শুরু করে দিল্লির তাপমাত্রা ক্রমে পনেরো, বারো, দশ, আট হত এবং আমাদের বিস্ময় বাড়ত। এবং একদিন সেই অমোঘ দিনটি আসত যখন দিল্লির টেম্পারেচার সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁত।   সাত!   অথচ ওর থেকেও ঠাণ্ডা জায়গা যে পৃথিবীতে আছে জানতাম। ট্রেন থেকে বিশ্বের একশোটি আশ্চর্য তথ্য না ওই রকম নামওয়ালা চটি বই নিয়ে এসেছিলেন মা, তাতে লেখা ছিল সাইবেরিয়ার কোন গ্রামে গরমকালে তাপমাত্রা মাইনাস চল্লিশ না ওইরকম থাকে। থাকে তো থাকে। আম্বানিরা মা

ফুচকা ও ফিকশন

Image
ক’দিন আগে একটা সিনেমা দেখে এসেছি, তুম্বাড়। আপনারা না দেখে থাকলেও পোস্টটা পড়তে পারেন, কারণ কোনও স্পয়লার দেওয়া হচ্ছে না। সবাই বলছিল দারুণ নাকি সিনেমা। ইউটিউবের রিভিউয়ারেরা পাঁচে চার সাড়ে চার দিচ্ছিলেন, কেউ বলছিলেন এ রকম কালার কারেকশন আগে ভারতীয় সিনেমায় হয়নি। আমি কালার কারেকশন কাকে বলে জানি না, খালি জানি সিনেমাটা দেখতে চমৎকার হয়েছে। পরিচালক দর্শককে উদ্বেলিত সবুজ পাহাড়, অবিশ্রাম বৃষ্টি, লণ্ঠনের টিমটিম আলোয় আলোকিত রাতের নদী, শহরের বাজারের কোলাহলের একেবারে মাঝখানে নিয়ে গিয়ে ফেলতে পেরেছেন। তুমবাড় হচ্ছে খুব যত্ন করে, দারুণ কায়দা করে বানানো একটা হিতোপদেশের গল্প। সমস্যাটা হচ্ছে যতই কায়দা করা হোক না কেন, হিতোপদেশের গল্প ফাইন্যালি হিতোপদেশের গল্পই থাকে। দেবতার অভিশাপ। মানুষের লোভ। লোভে পাপ। পাপে মৃত্যু। তাছাড়া দু’হাজার আঠেরোতে বসে ঝুরঝুরে ধ্যানধারণার বিন্দুমাত্র আপডেট ছাড়া একখানা নতুন গল্প ফাঁদার সিদ্ধান্তটাও কৌতূহলোদ্দীপক। কেউ বলতে পারে সিনেমা তো গল্প নয়, কাজেই গল্পটা সময়গ্রাহ্য হল নাকি চরিত্ররা একমাত্রিক হু কেয়ারস, কালার কারেকশনটাই আসল কথা। এর উত্তরে আমি স্পিচলেস। অন্ধের হাতি দর্শনের গ

গত ক'দিনে যে ক'টা বিষয়ে আনন্দ পেয়েছি

১। অফিসের পুরোনো ডেস্কটপ বদলে আমাকে একটা নতুন ডেস্কটপ দেওয়া হয়েছে। এটা যে কত আনন্দের বিষয় আর কত জন্মের পুণ্যের ফল সেই নিয়ে গোটা একটা পোস্ট লেখা যায়। কিন্তু আমি লিখছি না। এমনকি ঘটনাটাকে আমি আমার নিকট অতীতের আনন্দের ঘটনাবলীর মধ্যে গুনছিও না। মানুষের চরিত্র ওইরকমই, চাওয়ার জিনিস পাওয়া হয়ে গেলেই সব মজা মাটি।   আনন্দের ব্যাপারটা ঘটল যখন আমি আমার নতুন কম্পিউটারে প্রথমবার অবান্তরের ঠিকানা টাইপ করলাম। লালসাদা পাতা খুলল। কম্পিউটার বিনীত ভঙ্গিতে জানতে চাইল, সাইটটাকে ট্রান্সলেট করে দেব কি? বললাম, নোপ, নেভার ট্রান্সলেট অবান্তর। অ্যাকচুয়ালি, নেভার ট্রান্সলেট বেংগলি, কিন্তু তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, নেভার ট্রান্সলেট অবান্তর।   এই যে দাপটের সঙ্গে আমি নতুন কম্পিউটারের সঙ্গে অবান্তরকে পরিচয় করিয়ে দিলাম, আর বুঝিয়ে দিলাম যে আর যার সঙ্গেই চলুক, তোমার কোনও কেরামতি এর সঙ্গে চলবে না, এতে আমার ভয়ানক আনন্দ হল।   ২। আমি ধরেই নিয়েছিলাম দশটা পাঁচটা কেরানি জীবনের সবথেকে বড় আনন্দ হচ্ছে পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, ব্যাংকে কাজ, গাছে জল দেওয়া - কিছু একটা কারণ দেখিয়ে ঝুপ করে ডুব দেওয়ার সুবিধে। আর যেহেতু

ভাবছি বাঁধিয়ে চোখের সামনে ঝুলিয়ে রাখব

Image
প্রাপ্তিস্থান

তোত্তো-চান

Image
বই আমি পড়ি বেশি বটে, কিন্তু বই বাছে ভালো অর্চিষ্মান। দোকানে, মেলায় অচেনা বইয়ের ঢিপি ঘাঁটতে ঘাঁটতে টপ করে একখানা ইন্টারেস্টিং বই তুলে আনে। আমি অন দ্য স্পট বাছাবাছিতে নেই। ধৈর্য নেই। ভরসাও না। যদি খারাপ বেরোয়? আমি একশোখানা রিভিউ পড়ে, দেখে, শুনে বই কেনা টাইপ। অর্চিষ্মান ঘুরেফিরে নেড়েচেড়ে কিনে ফেলা টাইপ। ওই রকম আলগোছেও কী করে অত ভালো বই খুঁজে পায়, যে বইগুলোর সামনে দিয়ে আমি দু’মিনিট আগে হেঁটে এসেছি, সেটা একটা রহস্য।   আমার থেকে চশমার পাওয়ার অতখানি কম বলে বোধহয়। অবশ্য খানিকটা চরিত্রেরও ব্যাপার আছে। যে কোনও দোকানে, বইয়ের তো বটেই, ঢুকলেই আমার প্যালপিটেশন হয়। কিছু না কিনে বেরোব কীভাবে ভেবে ঘাম ছোটে। যত দ্রুত চোখ বুলিয়ে বেরোনো যায়। কোনও কোনও কর্তৃপক্ষ তাকান না। তাতেও ভয় লাগে এই ভেবে যে তাঁরা নির্ঘাত ভাবছেন, জানতাম, কিনবে না। কোনও কোনও প্রো-অ্যাকটিভ বিক্রেতা হাতে বই তুলে দেন। দেখুন না, এটা দারুণ হয়েছে। সেটা আরও অস্বস্তিকর। অর্চিষ্মান বলে, অত ঘাবড়ানোর কী আছে, বলবে নেব না। জোর করলে আবার বলবে। না দাদা, আজ নেব না। হয়ে গেল। ও নিজে তাই করে। বিনয়ে বিন্দুমাত্র টান পড়ে না, হেসে হেসে বলে, ন