শুরুর আগেঃ গ্রহতারার অসহযোগ
এ জিনিস আগেও ঘটেছে। সংসারের অর্ধেক ভুবনেশ্বর পৌঁছে গেছে, আনলাকি অর্ধেক পড়ে আছে দিল্লিতে। পড়ে পড়ে শিলবাটা হচ্ছে। প্রথমবার সম্ভাবনাটা ঘাড়ে এসে পড়েছিল আচমকা, প্রস্তুতি ছিল না। একেবারে কি আর ছিল না? মন তৈরি ছিল, যেমন সর্বদাই থাকে। স্টার্টিং লাইনে দমবন্ধ, পেশি টানটান, এক পা এগোনো, দুই হাত মুঠো, চোয়াল শক্ত, দৃষ্টি প্রত্যয়ী। বাঁশি বাজলেই 'ছুটি ছুটি' বলে ছিটকে যাবে। স্যাডলি, মনের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়। অনেক রকম শিকল সেধে পেঁচিয়েছি জীবনে। সকালবিকেল ঘুরিয়েফিরিয়ে দেখছি, আহা কী রূপই না খুলেছে।
আগেরবার সে সব শিকলে ঝাঁকুনি না দিয়ে যতখানি চেষ্টা করা সম্ভব করেছিলাম। যা হওয়ার তাই হল। দিল্লি আরও জোরে গলা টিপে ধরল, ভুবনেশ্বর হাত বাড়াল না। অর্চিষ্মান, 'নেক্সট টাইম, প্রমিস,' বলে টা টা করে চলে গেল।
ওর প্রমিস রাখতেই হয়তো নেক্সট টাইম এল। এল তো এল একেবারে নানকজয়ন্তীর লং উইকএন্ডের গায়ে গায়ে।
বাক্যব্যয় না করে দিল্লি ভুবনেশ্বর রিটার্ন টিকিট কেটে ফেললাম। ইউনিভার্সকে সিগন্যাল দিলাম, আমার কাজ আমি করেছি, বাকি গ্রহতারাদের একলাইনে আনাটুকুর দায়িত্ব অন্ততঃ নাও।
গ্রহতারা অতি ত্যাঁদড় জিনিস। বলে, এখন কেন? প্রগতিশীল নাম কেনার তাড়নায় আমাদের হেলাছেদ্দা করার সময় মনে ছিল না? কী সব পুরুষকারটার আছে তোমাদের, তাদের ধর গে যাও। আমরা বিজি।
থাকার জায়গা খালি নেই। একা আমার তো নয়, সকলেরই লং উইকএন্ড। অথচ জায়গা একটা ঠিক করা চাই। ধাবা থেকে আসছি বলে দু'দিনের রোড ট্রিপ সেরে আসার দিন গেছে। গিজারওয়ালা পরিষ্কার বাথরুমের গ্যারান্টি ছাড়া আজকাল বেড়াতে যেতে পারি না। ও টি ডি সি-র পান্থনিবাসের অনলাইন বুকিং-পাতা খুলে ক্রমাগত রিফ্রেশ করতে লাগলাম। যেখানে যেখানে যাওয়ার ইচ্ছে সে সব জায়গায় সব ঘর ভর্তি। শেষে ঠিক করলাম গন্তব্য যেহেতু ম্যাটার করে না, জার্নিটাই যেহেতু আসল তাই যেখানের পান্থনিবাস খালি থাকবে সেখানেই যাব। তাতেও হল না। সরকারির আশা ত্যাগ দিয়ে প্রাইভেটের দ্বারস্থ হতে হল। ট্রিপঅ্যাডভাইসরে রিভিউ পড়া বন্ধ করলাম। কোন হোটেল রুম সার্ভিসে এক কাপ চা পাঠাতে চল্লিশ মিনিট লাগিয়েছে হু কেয়ারস, কত চল্লিশ মিনিট ক্যান্ডি ক্রাশের গর্ভে যাচ্ছে রোজ। লিস্ট ধরে ধরে ফোন করতে করতে ওডিশার সব ট্যুরিস্ট স্পটের এস টি ডি কোড মুখস্থ হয়ে গেল। কোথাও জায়গা নেই। সব ফুল। দয়ালু হোটেল কর্তৃপক্ষরা আমার গলা শুনে বললেন, 'কবে আসছেন? আসার আগের রাতে ফোন করবেন, কেউ ক্যানসেল করলে…'
কেউ ক্যানসেল করবে না। উনিও জানেন। আমিও জানি। সোনালি বালুতট, মন্দির, জঙ্গল, ছেনা ঝিল্লির স্বর্গে, যে যার নিজস্ব নরক থেকে পালিয়ে তিনদিন, কোন পাগলে ক্যান্সেল করবে?
ক্ষীণ হতে হতে মগজের সেরোটোনিনের স্রোত অবশেষে শুকিয়ে গেল। হল না এবারও। হবে না। হওয়ার নয়। দিল্লিতেই থাকব। এমন তো নয়, কাজের পাহাড় জমে নেই। লং উইকএন্ডে বসে বসে সে সব কাজ শেষ করব না হয়। বা অন্যান্য লং উইকএন্ডের মতো ভাবব করব, ভাবতে ভাবতে উইকএন্ড ফুরিয়ে যাবে, কাজ পড়ে থাকবে যে কে সেই, সোমবার অফিস যাওয়ার সময় শুক্রবারের থেকেও বেশি ক্লান্ত লাগবে। এ সত্যির থেকে পালানোর জন্য যত ছটফট করব, দড়ি তত গলায় ফাঁস হয়ে বসবে। ভবিতব্য মেনে নেওয়াই ভালো।
'টিকিট ক্যান্সেল করে দাও, বুঝলে?' বলব সুইচ টিপে ফোন আলো করেছি অমনি ফোন বেজে উঠল। টেলিপ্যাথির ঠাকুরদাদা।
হ্যালো হ্যালো...
অর্চিষ্মানের নতুন অফিসে নেটওয়ার্ক কানেকশন ভয়ানক খারাপ। 'শুনতে পাচ্ছ?' 'শুনতে পাচ্ছি' বাদ দিলে গোটা কনভারসেশন ঘিজঘিজ। দুয়েকটা শব্দ তারই মধ্যে বোধগম্য হল।
কুন্তলা... বাবা বলল… আরেকটা অপশন......ফোন করেছি..... বলেছেন হয়ে…
ক্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁচ। ওলাক্যাব বিপজ্জনক বাঁক নিয়েছে ডানদিকে, বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে আসা একটা এস ইউ ভি-কে জায়গা দিতে গিয়ে। হৃদপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক হতে লাগল সাত সেকেন্ড। তালেগোলে ফোন গেছে কেটে।একটা ভয়ানক সন্দেহ ফেনিয়ে উঠছে বুকের ভেতর। কিন্তু এখনই উৎসাহ দেখানো চলবে না। গ্রহতারাগুলো পাজির পাঝাড়া, টেরিয়ে টেরিয়ে নজর রেখেছে এদিকে। আমাকে চাঙ্গা হতে দেখলেই ভেজা কম্বল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এখন ঘণ্টাখানেক 'আমার কিছু যায় আসে না' ভঙ্গি করে থাকি, অর্চিষ্মান বাড়ি ফিরলে সন্দেহ ঘোচাব না হয়।
(চলবে)
(চলবে)
Groho tara ra sodoy hok tomar opor ei asha roilo.
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ কুহেলি।
Deletebap re, vromon kahini te i ei suspense!
ReplyDeleteআহা, কাহিনী যখন সবকিছুই থাকতে পারে।
DeleteBhubaneswar er Ginger hotel khub bhalo ... oder restaurant o khub bhalo khabar deye. Travel desk theke car book korte paro ... driver ra bhalo. Chaile bolo ami phone number mail kore debo.
ReplyDeleteTomader berano khub bhalo houk ... golper opekkhaye roilam.
বেড়িয়ে বাড়ি চলে এসেছি, শর্মিলা। খুব ভালো ঘুরেছি।
Deletesuspense e patta dilam na. golpo likhchho jokhon nishchai berate jete perechho
ReplyDeleteহ্যাঁ চুপকথা। বেড়ানো শেষ।
Delete:):) satti rahashya kahini mone hocche
ReplyDeleteহাহা, রহস্যকাহিনী লেখার সাধ এইভাবেই মেটাচ্ছি আরকি।
DeleteBhubaneswar niye rohosyo.. plane er ticket.. haha... mone hocche jokkhir matha o asche er pore.. ����
ReplyDeleteঠিক ধরেছিস, ঊর্মি।
Deleteভুবনেশ্বর আর রহস্যকাহিনী শুনে মনে পড়ল,
ReplyDelete"কতশত মাইকেল এঞ্জেলো
একদা এ ভারতবর্ষে ছেলো" ।
ঠিক।
Deleteএযে বাংলায় যাকে বলে থ্রিলিং, তারপর?
ReplyDeleteহাহা, ক্রমশঃ প্রকাশ্য।
Delete