Posts

Showing posts from December, 2021

২০২১-কে

এলিভেটর পিচ বলে একটা ব্যাপার আছে নিশ্চয় জানেন। যে কোনও আইডিয়া, প্রোডাক্ট, ব্যবসায়িক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক উদ্যোগের কী, কেন, কোথায়, কবে, কাকে, কীভাবে যাবতীয় তথ্যসম্বলিত একটি সংক্ষিপ্ত স্পিচ। ‘সংক্ষিপ্ত’র দৈর্ঘ্য একেক লোকের কাছে একেক, তাই স্ট্যান্ডার্ডাইজশনের দুরাশায় এলিভেটর বা লিফটের লক্ষণরেখা টানা। এত ইঞ্চি,মিটার, গজ, ইয়ার্ড, আলোকবর্ষ থাকতে লিফট কেন? আপনার জীবনের লিফটের কথোপকথনগুলো মনে করে দেখুন, জলের মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে। এক, লিফটের কথোপকথন নৈর্ব্যক্তিক। আবেগরহিত। নতুন প্রেম ছাড়া লিফটে (তাও যদি ফাঁকা মেলে) কেউ সেধে থাকতে চায় না। লিফট যথার্থে অস্থায়ী, অনিত্য। নেমে যাবেন জেনেই উঠেছেন। মায়া জন্মানোর চান্স নেই। নো স্ট্রিংস অ্যাটাচড সম্পর্কেও লোকে ওর থেকে বেশি কমিটমেন্ট নিয়ে ঢোকে যতটা নিয়ে লিফটে ওঠে। দুই, লিফটের কথোপকথন সরল। লিফট কোনও বিষয়ের ডিপে ঢুকতে অ্যালাউ করবে না। জীবনের গুরুতর সমস্যার সমাধান লিফট করে ফেলতে দেবে না। যত গুরুত্বপূর্ণ কলই চলুক না কেন, দরজা বন্ধ হওয়া মাত্র কট করে কেটে দেবে। সময় দেবে না। মনোযোগও দিতে দেবে না। সম্পূর্ণ অ্যাটেনশন বোতামের সারির দিকে, নয়তো লাল আলোর বদ

আভরণহীনতার শিবিরে

অর্চিষ্মান তিতিবিরক্ত। ছ’খানা মোমোর সঙ্গে ছ’রকমের সস। ছ’বছর আগে তো কান দিয়ে ধোঁয়া বার করানো লাল লংকার সস ছাড়া কল্পনাতেও কুলোতো না কারও। ছ’মাস আগে পর্যন্তও দুটো পুঁটলি। লাল লংকা আর সাদা মেয়োনিজ। এখন ছশো মোমোওয়ালা গুঁতোগুঁতি করছে বাজারে। একে অপরের থেকে এগিয়ে থাকার তাড়নায় এ মোমোয় চিজ পুরছে তো ও দিচ্ছে ছ’রকম সস। কর্নফ্লেক্স চিবোতে চিবোতে বললাম, কী কী সস দিয়েছে গো? অর্চিষ্মান বলল, হুস। দেখিওনি। টান মেরে ফেলে দিয়েছি। ছ’টা মোমো ছ’রকম সস দিয়ে খাব? তাছাড়া ছ’ ছ’টা বাটি নামাব নাকি? মাজবে কে? পয়েন্ট। বাসন মাজার ফ্যান্টাসি থাকলে অর্চিষ্মান মাংসভাত খেত কবজি ডুবিয়ে। নেই বলেই তো মোমো। দু’নম্বরের দাদুর চপের দোকানে, যা কি না দিল্লির বেংগলি ফুড হেরিটেজ ওয়াকের অংশ, পরিস্থিতি এতটা না হলেও, খারাপ। প্রতিবার সিঙাড়া প্যাক করানোর সময় হৃদপিণ্ড জিভে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, ছান্তায় চড়ে সিঙাড়া ঝুড়িতে পড়া এবং ঝুড়ি থেকে ঠোঙায় ভরা আর ঠোঙার মুখ মোড়ার মধ্যের কয়েক মাইক্রোসেকেন্ডে সবুজ চাটনির দু'দুখানা পুঁচকে থলে ঠোঙাতে চালান হবে, আর আমাকে ওই মাইক্রোসেকেন্ডের মধে চেঁচিয়ে উঠতে হবে, লাগবে না লাগবে না, শুধু স

আমি শুনছি, আপনারাও শুনুন

Image
 

একচল্লিশ

Image
জীবনের মাইলস্টোন বলে কিছু হয় কি? মোচড়? বাঁক? নাকি ও সব আমাদের নির্মাণ? নাগালের মাপমতো ছেঁটেকেটে নেওয়া? নিজেকে টুপি পরানো যে আমার জীবন আসলে আমারই নিয়ন্ত্রণে, আমারই চেষ্টাচরিত্রের পরিণতি? কে জানে আসলে হয়তো জীবন একটা অনাদি অনন্ত প্রবাহ, শুরু নেই, শেষ নেই, ক্ষয় নেই, লয় নেই। একটা গভীর ষড়যন্ত্র যার আমি কেবল কোল্যাটারাল ড্যামেজ। হলেই বা কি। তবু আমাকে আমার সেই জীবনই বাঁচতে হবে। সে বাঁচার জন্য দুটো ধরে নেওয়া জরুরি। এক, আমি অমর। কাজেই আজকের কাজগুলো কাল করলেও হবে। না হলে পরশু। না হলে পরের বছর। আর যার ফুরোক, আমার সময় তো ফুরোচ্ছে না। আর যে মরুক, আমি তো মরছি না।  দুই, আমি ম্যাটার করি। আমার প্রতিদিনকার লক্ষকোটি দুঃখসুখ ম্যাটার করে। তাদের নিয়ে মাথার ভেতর মহাকাব্য রচনা করা যায়। কাজের কাজ চুলোয় দিয়ে সে সব মহার্ঘ ফিলিংদের মুখ চেয়ে রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেওয়া যায় সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে। অবশ্য কাজের কাজ হিসেবে যেগুলোকে চিহ্নিত করছি সেগুলোও ইকুয়ালি হাস্যকর। সে সব কাজের কাজেরা সম্পন্ন হল বলে যে সব ঝাণ্ডা উড়িয়েছিলাম পতপতিয়ে, পিছু ফিরে দেখছি তারা সব ঝড়েজলে নেতিয়ে, রং চটে মৃতপ্রায়। কাজেই একচল্

The Philosophy of Reading

ঋণস্বীকারঃ Brandon’s Bookshelf (এখানে রিডিং মানে অবসরের রিডিং। পাঠ্যপুস্তক বা পেপার নয়। ) 1. What's most important...a good character, plot, or message? চরিত্র ও প্লটকে ক্রমানুসারে বসানো যায় কি না সে বাবদে ক্রমশ সন্দিহান হয়ে উঠছি। আমার কাছে দুটোই জরুরি। বাহান্ন কিংবা তিপ্পান্ন। উনিশ বা কুড়ি। কোনটা উনিশ কোনটা কুড়ি, গল্পের ওপর নির্ভর করবে। মেসেজ আমার কাছে একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। থাকলে উপরি। না থাকলে কোনওই অসুবিধে নেই। সত্যি বলতে কি, মেসেজ দিতে গিয়ে এত গল্পকে মাটি হতে দেখেছি, গল্পে মেসেজ নেই জানলে পড়তে বসতে স্বস্তি বোধ করি। 2. Should one read books about ideas or opinions they disagree with? নিশ্চয়। না হলে আমার আইডিয়া বা মতামতে উপনীত হব কী করে? হয়ে যাওয়ার পর নিয়মিত সে অবস্থানকে পরখই বা করব কী করে। 3. As tech advances, what do you think will be the role of books? “Books are no more threatened by Kindle than stairs by elevators.” Stephen King 4. How important are summaries, review, and art in your book choosing? আর্ট গুরুত্বপূর্ণ নয় আমার বই বাছার ক্ষেত্রে।

বিরহী ও অথেনটিসিটি

(পোস্টটা লিখতে শুরু করার সময় বিরহী টাটকা ছিল। এখন মন্দারের বাজার তেজী। কিন্তু মন্দার দেখে হয়ে ওঠা হয়নি এখনও। আপনারা যখন অন্য কিছুতে মুভ অন করে যাবেন, তখন আমি মন্দার দেখে প্রতিক্রিয়া লিখব।) বিরহী দেখলেন? নিশ্চয় দেখলেন। আমার চেনা অধিকাংশ লোকেই দেখেছে। যদি কেউ বাকি পড়ে গিয়ে থাকেন তাঁর জন্য বলি, বিরহী হচ্ছে প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য পরিচালিত ইউটিউব সিরিজ। প্রথম সিজন শেষ হয়েছে সবে। দ্বিতীয় সিজনের জন্য মুখিয়ে আছি। নিজেরাই নিজেদের চমকে দিয়েছি। কারণ আমাদের কিছুই ভালো লাগে না। সবেতেই নাক কোঁচকাই। বিরহীরও যে সব ভালো তেমন নয়, খুঁত ধরতে বললে এক্ষুনি পঞ্চান্নটা ধরে দেব। কিন্তু পাঁচশো পঞ্চান্নটা কারণও একইসঙ্গে বেরিয়ে পড়বে যেগুলোর জন্য বিরহী আমাদের এক কথায়, দিব্যি লেগেছে। এ অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়ার মূল কৃতিত্ব, ভেবে ভেবে বার করেছি, বিরহীর অথেনটিসিটির। সিরিজটা দেখলে বিশ্বাস করে নিতে ইচ্ছে করে। অথচ অবিশ্বাসের জায়গা প্রচুর। যেমন ধরুন, যে দুটো জায়গা ঘিরে ঘটনাপ্রবাহ, তাদের মধ্যে মফঃস্বলটার নাম ফুলকুমারী আর গ্রামটার নাম বিরহী। নায়কের নাম কৃষ্ণ, নায়িকার নাম রাধা। স্কুল ঝাঁটপাটের দায়িত্ব যার, (ছোটবেলায় আমর