Posts

Showing posts from March, 2021

সহযোগিতা প্রতিযোগিতা

বিশেষজ্ঞ জিজ্ঞাসা করলেন, এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যে কোনও সম্পর্ক এবং সম্পর্কজনিত জটিলতার দুটো দিক থাকে। কী কী বলুন দেখি? স্ক্রিনে আর সবাই হাসি হাসি মুখে মিউট হয়ে রইল খালি এক বুরবক আনমিউট হয়ে লাফ দিয়ে উত্তর দিয়ে বসল। পৃথিবীতে দু'ধরনের মানুষ থাকে। যারা শেখে আর যারা শেখে না। দেখা, শোনা জাতীয় অকার্যকরী শিক্ষণপদ্ধতির কথা হচ্ছে না এখানে, কথা হচ্ছে ঠেকে শেখার। প্রচুর মানুষ ঠেকে শেখে। তারা জীবনে একটাই মাত্র ব্যর্থ প্রেম করে, মোটে একটিবার ফেল, দিনে বসের কাছে মোটে একবারই বকা খায়, বাজারের কোনও দোকানি তাদের একবারের বেশি দু'বার ঠকানোর সাহস বা সুযোগ পায় না। তার আগেই তারা হয় দোকানিকে সিধে করে দেয় নয়তো শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় দোকানি বদল করে। প্রসেনজিৎ রোজ এসে চেঁচায়, আবার ওই ডাকাতটার কাছ থেকে এনেছ? দু'পা এগোলেই যে চক্ষুলজ্জাওয়ালা একটা লোক বাজার নিয়ে বসে কতবার বলব? সত্যি, অনেকবারই বলেছে বেচারা। আমিও জানি যে গেলেই ঠকব, তবু গত আট বছর ধরে যার কাছে ঠকছি তাঁর কাছেই যাই। প্রধান কারণ, আট বছর ধরে ঠকতে ঠকতে ভদ্রলোকের সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ত্যাঁদড় খদ্দের (গোড়াতে যাঁদের কথা বললাম - যাঁ

দিবানিদ্রার দলে

কাহিতাস (Cajitas) কাকে বলে জানেন? আপনারা জানলেও আমি জানতাম না বছরখানেক আগেও। স্প্যানিশ ভাষার শব্দ কাহিতাস-এর মানে হচ্ছে ছোট্ট বাক্স। আরও একটু খতিয়ে বললে, তেমন ছোট বাক্স যাতে ছোটরা তাদের ছোট ছোট সম্পত্তি জড়ো করে রাখে। সব ছোটরাই, এবং যে বড়রা একসময় ছোট ছিল, তারাও জানে এ বাক্স আর পাঁচটা বাক্সের মতো দেখতে হলেও, মহিমায় আকাশপাতাল। বাক্স যে বাক্সই হতে হবে তার মানে নেই। 'জীবনস্মৃতি' মনে করে দেখুন। 'কেবল, আমাদের বাড়ির দরজি নেয়ামত খলিফা অবহেলা করিয়া আমাদের জামায় পকেট-যোজনা অনাবশ্যক মনে করিলে দুঃখ বোধ করিতাম– কারণ, এমন বালক কোনো অকিঞ্চনের ঘরেও জন্মগ্রহণ করে নাই, পকেটে রাখিবার মতো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যাহার কিছুমাত্র নাই; বিধাতার কৃপায় শিশুর ঐশ্বর্য সম্বন্ধে ধনী ও নির্ধনের ঘরে বেশি কিছু তারতম্য দেখা যায় না।' এই পকেটও কাহিতাস। এই পকেটই কাহিতাস। শিশুর ঐশ্বর্য সম্বন্ধে ধনী-নির্ধনের ভেতর যেমন তারতম্য থাকে না, প্রতিভাবান অপ্রতিভাবানেও থাকে না। রবীন্দ্রনাথেরও ছিল, আমারও ছিল। আমার অবশ্য পকেটের বদলে বাক্স ছিল, বাক্সে ছিল কয়েকটা দীঘা পুরীর ঝিনুক, ট্রেনবাসের পিচবোর্ডের টিকিট আ

যত্ন ও যতীন

হাঁটতে হাঁটতে একটা বইয়ের কথা মনে হল। বাড়ি ফিরে দুটো বুককেসের আনাচকানাচ খুঁজলাম। পেলাম না। চিন্তা হল। তারপর সন্দেহ হল। কিন্ডলে নেই তো? চিন্তা কমার বদলে বাড়ল। কিন্ডলটা কোথায়? প্যান্ডেমিকে সোশ্যাল লাইফের থেকেও বেশি চোট খেয়েছে আমার গল্পের বই পড়ার লাইফ। এত রকম দুর্ভাবনা জেঁকে বসেছে যে পড়া উঠেছে মাথায়। আগে খুব ডাইনে বাঁয়ে জাজ করতাম তাদের যারা বলত পড়ার সময় নেই। কে যেন দাবি করেছিল যে বই পড়া আসলে মানসিক যোগব্যায়াম। আমি যে ধরণের বই যেভাবে পড়ি, যোগব্যায়ামের সঙ্গে তুলনা করতে চাইলে তাকে স্রেফ শবাসনের সঙ্গেই করা যায়। কাজেই সে ব্যায়ামে কারও আপত্তি কেন থাকবে মাথায় ঢোকেনি। করোনা এসে ঢোকালো। প্যান্ডেমিকে শবাসনে শুয়ে থাকতেও বুকের পাটা লাগে। ক্ষণে ক্ষণে লাফ মেরে উঠে ঘর জুড়ে পায়চারি করতে হয়। মোদ্দা কথা গল্পের বই পড়ার জন্য একটা মিনিমাম প্রসন্নতা লাগে চিত্তে, যেটা এ বাজারে আক্রা। যেটুকু পড়তে বাধ্য করেছি নিজেকে বেশিরভাগই কাগজের বই, যা দু'হাতে ধরলে বেশ একটা খড়কুটোর মতো ঠেকে। কিন্ডলের মতো গোটাটাই আমার সুবিধের জন্য বানানো নয়, নিজস্ব কিছু দাবিদাওয়া আছে। পাতা দুমড়োনো অ্যালাউড নয়, দাগানোর প্রশ্ন ওঠ

নারীদিবসের অবান্তর উপহার

Image
নারীদিবসের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্করহিত, অপ্রাসঙ্গিক, অবান্তর একটা গান শোনাই আপনাদের নারীদিবস উপলক্ষে। গত কয়েকদিন লুপে চলছে গানটা আমার কানের ভেতর। যত চলছে আমার খারাপ মন তত ভালো হয়ে যাচ্ছে, ট্যাঁড়াব্যাঁকা মেজাজ তত সোজা হয়ে যাচ্ছে।

লাল ঘোড়া সাদা ঘোড়া

Image
অবশেষে সমস্ত সন্দেহের নিরসন। রূপকথা পড়তে তেমন উৎসাহ না থাকলেও (চোখের সামনে, হাতের সামনে আছে তাই পড়ছি ছাড়া) লিখতে (বা নতুন করে লিখতে) আমার মারাত্মক ভালো লাগে। আমি বলে বুঝতে এত সময় লাগল, আমাকে যাঁরা হাড়ে হাড়ে চেনেন তাঁদের এই উপলব্ধি অনেক আগেই হয়েছে নিশ্চয়। ব্যাপারটা পরিশ্রমজনিত। রূপকথার চরিত্ররা ঘোড়ায় জিন দিয়ে রেডি, প্লট তৈরি। যুদ্ধ, প্রেম, প্রতিহিংসা, অভিযান, দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন এবং অন্তে চিরদিনের মতো সুখেশান্তির আশ্বাস। যুগ যুগ ধরে শান্ত বাচ্চাদের চুপটি করে বসিয়ে রাখার টেস্টে, কিছুতেই ঘুমোতে না চাওয়া ল্যাজছাড়া হনুমানদের চোখের পাতা এক করার টেস্টে, ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সীমানা পার করে, পোশাকআশাক আর ভাষা বদলে দিলে যে সাইবেরিয়ার গল্প গাঙ্গেয় অববাহিকায় আর গাঙ্গেয় অববাহিকার গল্প মরুভূমির ঊষরতায় লকলকিয়ে বাড়তে পারে সে টেস্টেও রূপকথারা দলে দলে হেসে খেলে পাশ। গদ্যের মধ্যে পদ্য। পদ্যের মধ্যে গদ্য। অসামান্য সেটিং। রাজপ্রাসাদ, পুকুরঘাট, সবুজ জঙ্গল, নীল আকাশ, শূলে চড়ানোর মাঠ। ওই শেষের সেটিংটা আমার ফেভারিট। তাই আসল রূপকথারা সেখানে শেষ হলেও আমার রিটেলিং কেবল ওখান থেকেই শুরু ক