Posts

Showing posts from April, 2018

টাইম ম্যানেজমেন্ট + টু ডু লিস্ট

আমি টাইম ম্যানেজমেন্ট কী করে করি আর টু ডু লিস্ট কী করে বানাই সে নিয়ে একটা পোস্ট লিখতে বলেছে ঊর্মি। আমি পোস্ট লিখছি বিষয়দুটো নিয়ে আমার লেখার যোগ্যতা আছে বলে নয়, অন্য কারণে।   এক নম্বর কারণ, ঊর্মি আমার স্কুলের জুনিয়র। এই পৃথিবীতে আমাকে লাল ফিতে সাদা মোজা চেহারায় যে গুটিকয়েক লোক দেখেছে তাদের মধ্যে ঊর্মি একজন। ঊর্মির কথা রাখা আমার কর্তব্য।   দু’নম্বর কারণ, একটা লোককে কী কী দিয়ে চেনা যায় সে নিয়ে নানা মত আছে। সঙ্গ দিয়ে, খাওয়া দিয়ে, নিজের থেকে বেশি ও কম প্রিভিলেজড লোকের সঙ্গে ব্যবহার দিয়ে, টাকা খরচের ধরণ দিয়ে। কিন্তু আমার মতে, একটা লোক নিজের সময় কীভাবে ওড়ায় সেটা তাকে কোনও অংশে কম চেনায় না। দু’হাজার পনেরোর হু-র রিপোর্ট বলছে ভারতবর্ষের মহিলাদের গড় লাইফ এক্সপেক্টেন্সি ঊনসত্তর দশমিক নয়। সত্তরই ধরে নেওয়া যায়। তাহলে আমার হাতে আছে আর তেত্রিশ বছর। শেষ দশ বছর ব্যথাবেদনা, ফিজিওথেরাপি, কোমা, কেমো ইত্যাদিতে কাটবে যদি ধরে নিই, পড়ে থাকে তেইশ। এই তেইশ বছর আমি কী করে খরচ করি সেটার থেকে আমাকে আর বেশি করে কিছু চেনায় কি? আমার টাইম ম্যানেজমেন্টের ধরণ দেখে আপনারা আমাকে আরও স্পষ্ট করে চিনবেন এই পোস

মৈনাক ভৌমিকের সিনেমায় থাকলে

অধুনালুপ্ত দ্য টোস্ট ওয়েবসাইটে ‘হাউ টু টেল’ নামের একটি সিরিজ বেরোত, যেখানে চেনা শিল্পীদের শিল্পকর্মের বহুব্যবহৃত ট্রোপ নিয়ে ঠাট্টা করা হত। মানে ধরুন চার্লস ডিকেন্সের উপন্যাসের চরিত্র হলে আপনি সম্ভবত অনাথ, সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় থাকলে আপনাকে একবার না একবার শতরঞ্চি পেতে বসে ইনডোর গেম খেলতেই হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। দ্য টোস্ট উঠে গেছে, তাই এই মারাত্মক মজার সিরিজটা আপনাদের দেখাতে পারছি না, এদিকসেদিক ঘেঁটে সিরিজটির অনুসরণে লেখা একটাদুটো উদাহরণ বেরোলো। দেখলে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হবে। অনেকদিন ধরে করছিকরব করে অবশেষে আমি সেরকম একটা লিস্ট বানানোর চেষ্টা করছি। শুরুটা প্রিয় কাউকে দিয়েই করা ভালো। কাজেই মৈনাক ভৌমিক। সৃজিত, কমলেশ্বর, কৌশিক, রাজ, শিবু-নন্দিনী, অঞ্জন, অরিন্দম, কিউ - এঁদের নিয়ে অনেক হইচই হতে পারে কিন্তু যাঁর সিনেমা দেখার জন্য আমি (এবং অর্চিষ্মান) সবথেকে বেশি মুখিয়ে থাকি তিনি মৈনাক ভৌমিক। মৈনাক ভৌমিক পরিচালিত কয়েকটি সিনেমা হল - আমরা, বেডরুম, মাছ মিষ্টি অ্যান্ড মোর, আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডস ইত্যাদি।   মৈনাক ভৌমিকের বেশিরভাগ সিনেমাই আমি বাড়িতে বসে দেখেছি। একাধিকবার। যে কোনও

খাঁটি কথা

It’s what no one knows about you that allows you to know yourself.                                               --- Don DeLillo, Point Omega, 2010 কৃতজ্ঞতাস্বীকার

বাগানের ভূত, ভূতের বাগান

মা বলেন, সোনা তোর সঙ্গে বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করে।   আমারও ইচ্ছে করে মায়ের সঙ্গে বেড়াতে যেতে। মা যাওয়ার জায়গা ঠিক করবেন, ট্রেনবাস থাকার জায়গা বুক করবেন, বিন্দুমাত্র না ঘাবড়ে অসামান্য হিন্দিতে ড্রাইভারজিকে রাস্তা বোঝাবেন, রাস্তাঘাটে আলাপ জমাবেন, কেউ ত্যাঁদড়ামো করলে তাকে সিধে করবেন। আমি হাতপা এলিয়ে বসে থাকব। মায়ের সঙ্গে আমার বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছেতে কোনও রহস্য নেই। কিন্তু মায়ের আমার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছেটা বেদম রহস্যজনক। মা একবার আমাকে পাহাড়ে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন। হোটেল বুক করে, গাড়ির ব্যবস্থা করে আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে তুলে রওনা দিয়েছিলেন। এগারোটা নাগাদ হোটেলে পৌঁছে ব্যাগট্যাগ গুছিয়ে স্নানে ঢোকার আগে একটাই দায়িত্ব মা দিয়েছিলেন আমায়, রান্নাঘরে ফোন করে দুপুরের খাওয়ার অর্ডার দেওয়া। আমি কী করেছিলাম ভগবানই জানেন, মোটকথা রান্নাঘরের লোকদের বোঝাতে পারিনি যে আমরা খেতে আসছি। ঘণ্টাখানেক বাদে আমাকে সঙ্গে নিয়ে মা যখন খাবার ঘরে গেলেন আমাদের দেখে ওঁরা অবাক হলেন তারপর সামলে নিয়ে রুটি ডাল মিক্সড ভেজ এনে দিলেন। বললেন, পরের বার যদি একটু খবর দিয়ে খেতে আসেন ম্যাডামজি, তা হলে আরেকটু ভালো খেতে দিতে পারি।

অযৌক্তিক

রবিবার আমার মনখারাপ হয়েছিল। হাতপা অবশ, ঘাড় টনটন, চোয়াল শক্ত, বুকের ভেতর ফাঁকা, হোঁচট খাওয়া নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস। ঘাড়ের ওপর একটার জায়গায় দশটা মুণ্ডু, দশরকম তীব্রতায় দপদপ করছিল। মাঝখানের মেন মুণ্ডুটার ফাঁকা হলঘরে গ্যাঁট হয়ে বসে ছিল একটা যন্ত্র, দোমড়ানো তোবড়ানো ধাতব শরীর, চোখ নাক কান হাত পা নেই, মুখের জায়গায় একটা প্রকাণ্ড গর্ত। গর্তের ভেতর কুটকুটে অন্ধকার। অন্ধকার থেকে বেরোনো খোনা গলা গুঙিয়ে গুঙিয়ে বলছিল, 'হল না। হবে না। পেলাম না। সবাই পেল। হেরে গেলাম। কী লাভ। এত লোক থাকতে আমিই কেন।'   চোখ বুজে শুয়েছিলাম আর প্রার্থনা করছিলাম হয় আমার চারপাশটা অদৃশ্য হয়ে যাক, নয় আমি অদৃশ্য হয়ে যাই। পৃথিবীটা ধ্বংস হয়ে যাক, নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে ছিরকুটে পড়ে থাক, আমি নেচে নেচে তার রক্তপান করি। কেজি ক্লাস থেকে যত লোকের ওপর যত রাগ হয়েছে সব তিনগুণ হয়ে ফেরৎ আসছিল। কাকে হাতের কাছে পেলে কী উচিত জবাব দিতাম মাথার ভেতর ক্রমাগত প্র্যাকটিস করছিলাম। তাবৎ দুনিয়াটাকে হাড়ে হাড়ে শিক্ষা দেওয়ার মতলব ভাঁজছিলাম দমবন্ধ করে। আর নরকের আগুনে ভাজাভাজা হচ্ছিলাম। নিয়মিত ইন্টারভ্যালে এ রকম দিনরাত যে আসবে সেটা আমি মেনে নিয়েছি।

শুভ নববর্ষ

নববর্ষের পোস্ট লিখতে বসে টের পেলাম বর্ষটাই জানি না। গুগল করলাম, কিন্তু সেই যে বাধা পড়ল আর ঠিক হল না। একের পর এক খারাপ খবর আসতে লাগল।   ভেবে দেখলাম, যা যা নিয়ে নববর্ষের পোস্ট লেখা যেতে পারত সেগুলোর কোনওটাই আর নেই। হালখাতা নেই। ন্যাতানো নিমকি নেই। দু’টাকা পিস দানাদার নেই। ক্যালেন্ডারে মা কালীর পায়ের কাছে জবাফুলের পাপড়িতে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মা সারদার মুখ নেই। নতুন জামা নেই। যে রকম জামা পরার আগে স্রেফ চোখে দেখেই গরম লাগা কমে যায়, সে রকম জামা নেই। কারণ মা হাতের কাছে নেই। থাকলেও সুবিধে করতে পারতেন না কারণ এ বাড়িতে ঊষা কোম্পানির সেলাই মেশিন নেই। সর্বাঙ্গে নাইসিল ছড়িয়ে সেই জামা পরে যে পাড়া বেড়াতে বেরোব সে নাইসিল নেই। একটা ভদ্রস্থ কালবৈশাখী নেই। নারকেল গাছ নেই যে সে গাছের মাথায় ঝড় দেখব। একটা ছাদ নেই যে বৃষ্টি থামার পর ছাদে উঠে ভেজা ছাদে খালি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে ঠাণ্ডা হাওয়া খাব। পাড়ায় পাড়ায় বর্ষবরণ নেই। ন্যাড়া মাথায় ফুলের মালা জড়িয়ে ‘দারুণ অগ্নিবাণে রে’ নেই। ঝঞ্ঝাবিধ্বস্ত মাঠের কাদায় পা ডুবিয়ে ছাতামাথায় উৎসাহ দিতে আসা বাবা মা ঠাকুমা দাদু মামা মাসি কাকা পিসি নেই।   তু

আ কোয়ায়েট প্লেস

সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া 'আ কোয়ায়েট প্লেস' একটি মনস্টার মুভি। মুভিতে মনস্টারের পরিচয় গোপন রাখা হয়নি কাজেই আমি বলে দিলে স্পয়লার হবে না। একটি জনমানবহীন জায়গায় বাস করে বাবা মা এবং চার সন্তানের একটি পরিবার। শুরুতেই দর্শক বুঝে যাবেন এঁদের জীবনযাপন স্বাভাবিক নয়, এঁরা খালিপায়ে হাঁটেন, পরিত্যক্ত ওষুধের দোকান ঘেঁটে ওষুধ এবং খাবারদাবার জোগাড় করেন। একটা ডিসটোপিয়ান বা ধ্বংসপরবর্তী পৃথিবীর চিহ্ন স্পষ্ট চারদিকে। ধ্বংসের কারণ এলাকায় আগত তিনটি জীব। আকৃতিতে যেমন বদখত, আচরণে তেমনি বীভৎস। এরা চোখে দেখে না কিন্তু শব্দ শুনতে পায় এবং শোনা মাত্র শব্দের উৎস আক্রমণ করে। আক্রান্ত হওয়া মানে একেবারে রক্তাক্ত মৃত্যু। এই পরিস্থিতিতে পরিবারটির বেঁচে থাকার সংগ্রামই সিনেমাটির প্লট। আর থিম হচ্ছে বেঁচে থাকার রোজকার প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের যা যা অধিকার অচেতনে ব্যবহার করি, যেমন শব্দ উৎপাদনের স্বাধীনতা, সেগুলো সরে গেলে বা বলপূর্বক সরিয়ে নিলে জীবনের চেহারাটা কী অদ্ভুত অচেনা হয়ে যায়, সেইটা। শব্দের অনুপস্থিতি, বিশেষ করে আজকের যুগে, নজর করার ব্যাপার। সাইলেন্স গোল্ডেন এ প্রবাদ এখন ব্যাকডেটেড। সারাদিন কত কোলাহল করি,

Nothing Good Gets Away

মন বলছে অবান্তরে বহুদিন আগে এই চিঠিটা ছেপেছিলাম, কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছি না। যাই হোক, যদি ছেপেও থাকি, ভালো জিনিস একাধিকবার পোস্ট করলে ক্ষতি নেই। ছেলেকে লেখা জন স্টেইনবেকের চিঠি।   ***** New York November 10, 1958 Dear Thom: We had your letter this morning. I will answer it from my point of view and of course Elaine will from hers. First -- if you are in love -- that's a good thing -- that's about the best thing that can happen to anyone. Don't let anyone make it small or light to you. Second -- There are several kinds of love. One is a selfish, mean, grasping, egotistical thing which uses love for self-importance. This is the ugly and crippling kind. The other is an outpouring of everything good in you -- of kindness and consideration and respect -- not only the social respect of manners but the greater respect which is recognition of another person as unique and valuable. The first kind can make you sick and small and weak but the second c

গরম আসাতে

গাছপালা জীবজন্তুরা কথা বলতে পারে কি না এ নিয়ে আলোচনা এই ক’দিন আগে অবান্তরেই হচ্ছিল। আমাদের মতো করে না হলেও নিজেদের মতো করে পারে বলেই আমি বিশ্বাস করি। এমনকি আমাদের মতো করে আমাদের সঙ্গেও কথা বলতে পারে। শীতে আমাদের বারান্দার কারিগাছ একেবারে ঝিমিয়ে, শুকনো হয়ে আধমরা হয়ে পড়েছিল। অর্চিষ্মান আর আমি জল দিতে দিতে আলোচনা করতাম এই শীতটা বোধহয় আর কাটল না। নিচু গলাতেই করতাম কারণ কারিগাছের কানে গেলে খারাপ লাগতে পারে। যেই মার্চ মাস পড়েছে আর সূর্য একেবারে তেড়েফুঁড়ে বারোঘণ্টা বারান্দায় আলো দিচ্ছে, কারিগাছ একেবারে নতুন পাতায় ঝলমলিয়ে উঠেছে। জল দিতে গিয়ে আমরা বলছি, উফ কারিদা, হেবি মাঞ্জা দিয়েছ তো, শুনে পাতাগুলো এমন হেলেদুলে উঠছে ওটা আমাদের ভাষায় ‘হেঃ হেঃ’ ছাড়া আর কিছু হতেই পারে না। পেছনের গলি দিয়ে যাতায়াত করা কুকুরবেড়ালরা তো আমাদের সঙ্গে নিয়মিত ইন্টারঅ্যাকট করে। মোড়ের মাথার বাড়ির দোতলার পাগ, আমি ঝালমুড়ির দিকে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে ওর দিকে না তাকালে সংক্ষিপ্ত একটা ‘ঘোঁক’ করে। মুখ তুললেই বিরক্ত মুখে বলে, ‘কী রে, ঝালমুড়ি খেয়ে খুব দেমাক দেখছি, তাকাচ্ছিসই না,’ তারপর জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে বলে, ‘কেমন বানিয়েছে রে

দিদিমার ভাবনা

Image
উনিশশো তিরিশে প্রকাশিত অ্যামেরিকান লেখক ক্যাথরিন অ্যান পোর্টারের লেখা ছোটগল্প The Jilting of Granny Weatherall -এর ছায়া অবলম্বনে লেখা আমার ছোটগল্প ‘দিদিমার ভাবনা’ বেরিয়েছে এ সংখ্যার চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে। ক্যাথরিন অ্যান পোর্টার পুলিৎজার এবং ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ডস সহ আরও বিবিধ পুরস্কার পেয়েছিলেন। উপন্যাস, প্রবন্ধ, সংবাদধর্মী রচনা সবরকম লেখা ভীষণ ভালো লিখলেও পোর্টারের আসল কেরামতি ছিল তাঁর ছোটগল্পে। The Jilting of Granny Weatherall ক্যাথরিন অ্যান পোর্টারের বিখ্যাততম ছোটগল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ গল্প নিয়ে সিনেমাও হয়েছে পরে। উইকিপিডিয়ায় লিখেছে ক্যাথরিন পোর্টারের লেখায় প্রতীকের ব্যবহার, পয়েন্ট অফ ভিউ-র অভিনবত্বের কথা, এ গল্পে তা ভরপুর রয়েছে। গল্পের সম্পূর্ণটা ঘটছে একজন চরিত্রের মাথার ভেতর। স্ট্রিম অফ কনশাসনেস, কিন্তু পোর্টার সে চেতনাকে একেবারে খোলা না বইয়ে গল্পের ছাঁদে বেঁধেছেন, আমিও সেটাই অনুসরণ করেছি। যেখানে অনুসরণ করিনি তা হচ্ছে ঘটনাপ্রবাহে। আমার গল্পের দিদিমার সঙ্গে অ্যামেরিকান দিদিমা ওয়েদারঅলের জীবন মেলেনি, তাই সেই জীবনের স্মৃতিও তাঁদের ভিন্ন হয়েছে।

আপনি কোন স্টেজে আছেন?

Image
আমি আপাতত সপ্তমে আছি। উৎস