আ কোয়ায়েট প্লেস




সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া 'আ কোয়ায়েট প্লেস' একটি মনস্টার মুভি। মুভিতে মনস্টারের পরিচয় গোপন রাখা হয়নি কাজেই আমি বলে দিলে স্পয়লার হবে না। একটি জনমানবহীন জায়গায় বাস করে বাবা মা এবং চার সন্তানের একটি পরিবার। শুরুতেই দর্শক বুঝে যাবেন এঁদের জীবনযাপন স্বাভাবিক নয়, এঁরা খালিপায়ে হাঁটেন, পরিত্যক্ত ওষুধের দোকান ঘেঁটে ওষুধ এবং খাবারদাবার জোগাড় করেন। একটা ডিসটোপিয়ান বা ধ্বংসপরবর্তী পৃথিবীর চিহ্ন স্পষ্ট চারদিকে। ধ্বংসের কারণ এলাকায় আগত তিনটি জীব। আকৃতিতে যেমন বদখত, আচরণে তেমনি বীভৎস। এরা চোখে দেখে না কিন্তু শব্দ শুনতে পায় এবং শোনা মাত্র শব্দের উৎস আক্রমণ করে। আক্রান্ত হওয়া মানে একেবারে রক্তাক্ত মৃত্যু। এই পরিস্থিতিতে পরিবারটির বেঁচে থাকার সংগ্রামই সিনেমাটির প্লট।

আর থিম হচ্ছে বেঁচে থাকার রোজকার প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের যা যা অধিকার অচেতনে ব্যবহার করি, যেমন শব্দ উৎপাদনের স্বাধীনতা, সেগুলো সরে গেলে বা বলপূর্বক সরিয়ে নিলে জীবনের চেহারাটা কী অদ্ভুত অচেনা হয়ে যায়, সেইটা। শব্দের অনুপস্থিতি, বিশেষ করে আজকের যুগে, নজর করার ব্যাপার। সাইলেন্স গোল্ডেন এ প্রবাদ এখন ব্যাকডেটেড। সারাদিন কত কোলাহল করি, চেঁচাই, হাসি, গান গাই, রাগ দেখাই, কী বোর্ডে খটাখট টাইপ করি। এক মুহূর্ত নৈঃশব্দ্যের মধ্যে থাকতে পারি না, দায়ে পড়লে অস্থির হয়ে কানে গান গুঁজি। যদি বাধ্য করা হয় শব্দ উৎপাদন না করতে, নৈঃশব্দ্যের মধ্যে বাঁচতে, তাহলে কেমন হয় ‘আ কোয়ায়েট প্লেস’ তার একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ। 

সিনেমাটা দেখতে গিয়ে আমার জশ ম্যালেরম্যানের বার্ড বক্স উপন্যাসের কথা মনে পড়ছিল। থিম দুটোরই এক। প্রতিমুহূর্তে ব্যবহার করা একটি প্রিভিলেজ, বাকি সব প্রিভিলেজের মতোই যাকে ক্রমাগত অচেতনে ব্যবহার করতে করতে আমরা প্রিভিলেজ বলে চিনতে ভুলেছি, সেটা হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়া। কোয়ায়েট প্লেসে সে প্রিভিলেজ শব্দ করার স্বাধীনতা, বার্ড বক্সে চোখ খোলা রাখার। বার্ড বক্সের মনস্টারটিকে অবশ্য আমরা দেখতে পাই না কখনওই, সে আমাদের অভিজ্ঞতার আড়ালে থেকে যায় সর্বক্ষণ এবং সেই জন্যই হয়ত কোয়ায়েট প্লেসের মনস্টারের থেকে বেশি সমীহ এবং আতংক আদায় করে নেয়। তাছাড়া এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মানুষের সম্পর্ক কীভাবে বদলায় বা এই অস্বাভাবিকতার চাপে মানুষের সম্পর্ক কীভাবে দুমড়েমুচড়ে যায়, বই এবং সিনেমা দুটিতেই সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। বার্ড বক্সে সম্পর্কগুলো অচেনা কিছু প্রাপ্তবয়স্ক লোকের মধ্যে যারা স্রেফ দুর্ভাগ্যবশতঃ একে অপরের সঙ্গে সহাবস্থানে বাধ্য হয়েছে। আর কোয়ায়েট প্লেসে এই টানাপোড়েন ঘটছে একই পরিবারের চার সদস্যের মধ্যে।

আ কোয়ায়েট প্লেস আমার ভালো লেগেছে। বেশ একটা দমবন্ধ ব্যাপার দেড়ঘণ্টা জুড়ে। এই সিনেমা দেখতে বসে রিং-এর মতো ভয় লাগবে আশা করলে হতাশ হবেন, কারণ আফটার অল রিং-এ ভিলেন সাক্ষাৎ ভূত আর কোয়ায়েট প্লেস-এ রক্তমাংসের নশ্বর দানব।

*****

বাই দ্য ওয়ে, পি ভি আর অনুপমে আপনারা যদি কখনও সিনেমা দেখতে যান, নুক্কড়ওয়ালায় খেয়ে দেখতে পারেন। মূলত স্ট্রিট ফুড বিক্রি হয়। চা, সামোসা, কিমা সামোসা, পাও ভাজি, চিঁড়ের পোলাও, উপমা, বান মাসকা, আলু টিক্কি বান, জলজিরা ইত্যাদি পাওয়া যায়। সব খাবারই অস্বাস্থ্যকর, কাজেই সুস্বাদু। দাম সস্তা, এসি আছে, অনেকক্ষণ বসে গল্প করা যায়। সাহস করে বিকেল পাঁচটা নাগাদ বড় এক গ্লাস মশলা কিংবা আদ্রক চায়ের সঙ্গে দু’খানা সিঙাড়া খেয়ে নিতে পারলে গ্যারান্টি অম্বল এবং রাতে খাবার গরম করা, খাওয়া, খাওয়াপরবর্তী বাসনমাজা থেকে মুক্তি। সাময়িক যে অস্বস্তিটুকু হবে, সেটা নিরাময়ের উপায় আছে নুক্কড়ওয়ালাতেই। একখানা ফটাফট কিনে নিন, মোটে চার টাকা দাম, কমলা রঙের প্যাকেটের ওপর কালো পোলকা ডট। নামের নিচে ‘আয়ুর্বেদিক’ আশ্বাস। এই বাজারে কাজে দেবেই দেবে। 

*****

কোয়ায়েট প্লেস দেখে এসে থেকে ভাবছি যে নিজের জীবনে সত্যি সত্যি কোয়ায়েট ক’টা প্লেস প্রত্যক্ষ করেছি। এই সিনেমার মতো বিপজ্জনক কোয়ায়েট নয়, ভালোজাতের কোয়ায়েট। নিরালা। সে নিরালায় দীর্ঘসময় থাকলে কেমন লাগত জানা নেই, কিন্তু অল্পসময়ের জন্য যারা আমাকে আরাম দিয়েছিল, এমনকি চমকে পর্যন্ত। সে রকম কয়েকটি জায়গার কথা নিচে লিখছি। 

১। সত্যিকারের সাইলেন্সের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা মুকুটমণিপুরে। হয়তো আগেও দেখা হয়েছে, কিন্তু ওইভাবে অনুভব করা সেই প্রথম। অথচ সেবারও অনুভব না করার বিস্তর কারণ ছিল। মাধ্যমিকের পর দিদিভাইরা বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন, ষোলোসতেরো বছরের একদল মেয়ে, বেশিরভাগ দশ বছর বা তারও পুরোনো বন্ধু, মুখ বুজে বিপাসনাধ্যান যে করতে যায়নি না সে তো বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু ইয়ুথ হোস্টেলে ব্যাগ রেখে বিকেলে বেড়াতে বেরিয়ে বাঁধের সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে হাসি আর কথোপকথনের ফাঁক গলে একমুহূর্তের জন্য যেটা কানে এসেছিল, বা আসেনি, সেটা আমাদের কিছুক্ষণের জন্য চুপ করিয়ে দিয়েছিল। এ দুনিয়ার যেখানের যত আওয়াজ, এমনকি আমাদের নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস, হৃৎস্পন্দনও যেন ওই ড্যামের শান্ত জলে ডুব দিয়েছে। কোনও জায়গা যে অত নিস্তব্ধ হতে পারে, সেটা আমি সেই বিকেলে মুকুটমণিপুরের বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে স্বকর্ণে না শুনলে কল্পনা করতে পারতাম না। 

২। অধুনা উত্তরাখণ্ডের চম্পাবত জেলার মায়াবতী আশ্রমে গিয়েছিলাম বাবামায়ের সঙ্গে। সেভিয়ের নামে এক সাহেবমেম দম্পতি বিবেকানন্দের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর উদ্বুদ্ধ হয়ে আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন। আশ্রম সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই, তবে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দম্পতির বসতবাটিটি এখনও আছে। পাথরের, ঢালু ছাদওয়ালা সে বাড়িতেই ছিলাম আমরা। পেছনের বারান্দার গা দিয়ে খাদ নেমে গিয়েছিল আর সে খাদ থেকে শ্যাওলা ধরা প্রকাণ্ড গাছেরা উঠে গেছিল আকাশের দিকে। বারান্দার রেলিং আঁকড়ে ভীষণ সাবধানে নিচের দিকে ঝুঁকলে তাদের গোড়া দেখা যেত না, ঘাড় উঁচু করে আগা দেখার চেষ্টা করলে মাথা ঘুরত। ওই বারান্দা মতো শান্ত জায়গা আমি কমই দেখেছি।

৩। কিছু কিছু জায়গা ঠিক সে অর্থে শান্ত নয়। খুঁজে দেখলে সে সব জায়গায় আওয়াজ অনেক পাওয়া যাবে। পাখির আচমকা ডাক, নারকেল পাতার খসখস, প্রতিবেশীবাড়ি থেকে কথোপকথনের খণ্ড, ট্রেনের ভোঁ, এমনকি পাশের পাড়ার বিচিত্রানুষ্ঠানে সস্তা মাইকের তীক্ষ্ণ ক্যাঁ পর্যন্ত সবই আছে। শান্ত নয় কোনওমতেই, কিন্তু অকল্পনীয় শান্তির। রিষড়ার বাড়ির ছাদের কথা, রাতের আকাশের নিচে মাদুরের ওপর মায়ের পাশে শুয়ে থাকার কথা এই লিস্টে না লিখলে পাপ হত। তাই লিখলাম।

আপনার দেখা শান্ত (বা শান্তির) জায়গা বা জায়গাদের নাম যদি বলেন আমাকে, আমার খুব ভালো লাগবে। 



Comments

  1. Nukkadwala ta Gurgaon-te amaar barir nichei. Amaader 3 joneri besh pochhondo.

    Shanto jaiga... Ek hishebe shobai ghumiye porle amaar nijer bari.
    Aar Jodi onyo kono jaigar kotha bolte hoy, tahole ladakh ba spiti valley-r gumpha gulo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার বাড়ির এত কাছে নুক্কড়ওয়ালা হলে চিন্তার ব্যাপার হত। সবাই ঘুম থেকে ওঠার আগে আমার বাড়িটাও বেশ শান্তই, কিন্তু লেখার সময় মনে পড়েনি।

      Delete
  2. Shaanto jaayega onek peyechi ... jongol er shaanto beshi bhalo lage. Ar ekbaar amraa Dapoli bole ekta beach ache ekhane, shekhane giyechilam .... shey onek bochor aagey.
    Somudro dure chilo tai taar gorjon chilo na ... aar raatre baali r opore boshe ondhokaar akaasher lokkho taara ar sheyi nijhum chup ekkebaare onnorokomer chilo.
    Tomar dekhe amar o ekta post likhte icche korche etaar opor. :-)

    ReplyDelete
    Replies
    1. লেখো, লেখো, শর্মিলা, সে পোস্ট পড়ে আমরা আরও বেড়াতে যাওয়ার জায়গার আইডিয়া পাব, খুব উপকার হবে। শিগগিরি লিখে ফেলো, প্লিজ।

      Delete
  3. Cinemata dekhar iccha roilo.Ami nirjonota o noishabdo dutoi valobasi.Kintu e duto sahare khuje paoa muskil.Amader bari ta main road er upore hoay rat ba sakal kono samay e sampurno nishabdo byaparta hoi na.-Sunanda.

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, আমার কিছু আত্মীয়ের বাড়িতেও এটা হতে দেখেছি, সুনন্দা। সকলেই বলেন (মানে বাড়ির মালিকেরা নন, যাঁরা ওই বাড়িতে বেড়াতে যান) উফ কী ভালো লোকেশন, হয়তো সুযোগসুবিধের দিক থেকে কথাটা সত্যিও, কিন্তু সেই লোকেশনের মুখ চেয়ে সাউন্ড অফ সাইলেন্স বলিদান দিতে হয় আরকি।

      Delete
  4. অনেকদিন আগে কুমারডুবি আর ধানবাদের মাঝে ছোটা আম্বানা নামের একটা জায়গায় গেছিলাম| আমার বন্ধু প্রসুন ওই রুটে যাতায়াত করত বলে রেললাইনের পাশের একটা টিলা দেখে চড়তে ইচ্ছে করেছিল| সেখানে উঠে টের পেয়েছিলাম নিস্তব্ধতা কেমন হয়| একটা লেখাও লিখেছিলাম সেই ঘটনা নিয়ে-
    http://www.magiclamp.net.in/2017/04/blog-post_8.html

    ReplyDelete
    Replies
    1. দারুণ লেখাটা, সৌগত। ওই ট্রেন চলে যাওয়ার ছবিটা, আহা। পড়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।এরকম বেড়ানোর সুযোগ হয় না, সত্যি বলতে কি সাহসও নেই, তাই গল্প পড়েই শখ মেটাতে হয়। আর সে শখ যদি এত ভালো গল্প পড়ে মেটে তাহলে চমৎকার।

      Delete
    2. আপনারাও অভিযান কিছু কম করেন না, ম্যাকলয়েডগঞ্জ, তারপর কাজিরাঙ্গা, গোয়া, মালসেজ ঘাট| প্রত্যেকটা লেখা যে কতবার করে পড়েছি তার ঠিক নেই| আর যাকে যাকে পেরেছি ঘাড় ধরে পড়িয়েছি|

      Delete
    3. আরে সে সব নিতান্ত ছাপোষা গৃহস্থ ঘোরাঘুরি, সৌগত, অ্যাডভেঞ্চার বললে অ্যাডভেঞ্চারের অপমান। তবু আপনার যে ভালো লেগেছে, শুনে খুব খুশি হলাম। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  5. ekbar January te Benaras giyechhilam, bhai IIT BHU te pore tokhon, shohorer oligoli chene ... Assi ghaat theke amra hanta shuru korlam, periye gelam onekgulo ghaat ... jei ghaat tay boshechhilam shetar naam janina ... kintu poronto shondhay shei ghater moto o nishchinti r kothao paini ... Benaras e pore giyeo r shei jaygata khuje paini

    ReplyDelete
    Replies
    1. বেনারসে নিস্তব্ধ জায়গা খুঁজে পাওয়া কিন্তু বেশ বলার মতো ব্যাপার, অনুরাধা। তবে শহরের কোলাহলের মধ্যে সে রকম জায়গা যদি বেরিয়েই পড়ে তাহলে চমকটা আরও বেশি লাগে, সত্যি।

      Delete
  6. তিন তিনটে বুনিপ? মুশকিলের ব্যাপার।
    শান্ত জায়গা? ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের লামার ভ্যালি, মাউন্ট কিলিমাঞ্জারোর উপরের দিকের অংশ, ঝাড়খণ্ডের বাঁকাইকোচা, সুইডেনের লেক রোক্সেন এসবের কথা মাথায় আসছে। সিকিমের কিছু জায়গাও আছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাহা, বুনিপই বটে, সন্ময়। সিকিমে আমার এখনও যাওয়া হয়নি, এত খারাপ লাগে ভাবলে। আর ওই ছোটনাগপুর পালামৌ সাইডেও ভীষণ যেতে ইচ্ছে করে। দেখি হয় কি না।

      Delete
  7. আমি শান্ত জায়গা পছন্দ করি বটে, তবে কিছুক্ষণের জন্য। সেই সময়কালটা দীর্ঘায়িত হলে অস্বস্তি হতে থাকে, মনে হয় মাথায় ঝিঁঝিঁ ধরে যাচ্ছে! চাকরি ও বেড়ানোর সূত্রে এমন কিছু জায়গা দেখেছি বটে, তবে বিশেষ পোষায়নি বলে নাম-ধাম বলতে পারব না।
    শান্ত বা চুপচাপ নয়, আমার প্রিয় জায়গা হল একটা নিজস্ব বুদ্বুদ। সেটা চরম ক্যাঁচোরম্যাচোরের মধ্যেও হতে পারে, যদি হাতে বই বা কানে হেডফোন থাকে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. শান্ত জায়গায় মাথায় ঝিঁঝিঁ ধরার বর্ণনাটা একেকবারে মোক্ষম, ঋজু।

      Delete
  8. শান্ত জায়গা- রিফাইনারির ভিতরে বড় তেল রাখার ট‍্যাঙক যখন খালি থাকে তার ভেতর,এতৈ শান্ত যে মনে হয় যে হৃৎপিণ্ডর আওয়াজ শোনা যাবে।
    শান্তির জায়গা- পছন্দের বই এর পাতা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওরে বাবা, ট্যাংকের মধ্যে ঢুকতেই আমার ভয় করবে তো। এটা কি কাজের সূত্রে ঢুকতে হয়েছিল না শখে?

      Delete
  9. প্রথম ঢুকেছিলাম কাজের সূত্রে। তারপর এমনিই মাঝেমধ্যে ঐ চরম নিস্তব্ধতা উপভোগ করতে ঢুকতাম। ভালো লাগতো।

    ReplyDelete
  10. শান্তির জায়গা বলতে আমেরিকার অনেক ন্যাশনাল পার্কের কথা মনে পড়ে - আর্চেস, ব্রাইস ক্যানিয়ন, কখনও গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, ব্যাডল্যান্ডস। সবার ওপরে রাতের ব্ল্যাক ক্যানিয়ন অফ দ্য গানিসন - বেশ ভয় করা নিঃঝুম আর অন্ধকার। ইয়েলোস্টোন ভীষণ ভাল, কিন্তু শান্ত নয় মোটেই, ভিড়ভাট্টার জায়গা।

    তবে শান্তি বলতে যে ঘটনাটা আমার সবার আগে মনে পড়ে সেটা ঘটেছিল ২০০৬ সালে। আমি এক বছর হল চাকরিতে ঢুকেছি। হায়দ্রাবাদের হাইটেক সিটিতে একটা ফ্ল্যাটে থাকি, তার জানালাগুলো কাঁচের। কাছেই একটা এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স তৈরী হচ্ছে, সেখানে সারারাত আলো জ্বেলে, আওয়াজ করে কাজ হয়। জীবন থেকে "অন্ধকার" আর "নিঃশব্দ" কথা দুটো যে কিভাবে মুছে গেছিল জানতেও পারিনি। জানতে পারলাম প্রায় এক বছর পর হুগলিতে বাড়ি এসে। রাতে স্টেশন থেকে রিকশায় করে (তখনও এত অটো চলতনা) বাড়ি ফেরার পথে বুঝলাম এতটা অন্ধকারও আমি অনেক মাস দেখিনি, আর এত নিঃস্তব্ধ পরিবেশও না। ঝিঁঝি আর ব্যাঙ ডাকছিল অবশ্য, কিন্তু সেই আওয়াজগুলোর অস্তিত্বও ভুলে গেছিলাম হায়দ্রাবাদে গিয়ে। চোখে-কানে কি পরিমাণ আরাম পেলাম সেটা বলে বোঝানো শক্ত।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার অনুভূতিটা কল্পনা করতে পারছি, সুগত। মফস্বলের রাতের নির্জনতা সত্যিই অনুপম।

      Delete
  11. করবেট জঙ্গলে ধিকালা লজ, উল্টো দিকে রামগঙ্গা নদী | দিনে রাতে যেকোনো সময়ে শব্দ বলতে শুধু পাখির ডাক | খুব বেশি হলে দূর থেকে আসা হাতি বা বাঘের ডাক | এই জন্মে এর থেকে নিস্তব্ধতা দেখব বা শুনব কিনা জানি না |

    ReplyDelete
    Replies
    1. করবেট যাওয়া হয়নি আমাদের, আপনার কমেন্ট পড়ে যাওয়ার ইচ্ছে দ্বিগুণ হল। থ্যাংক ইউ, অনিরুদ্ধ।

      Delete

Post a Comment