Posts

Showing posts from July, 2019

দুটো বাংলা সিনেমা

Image
একটা দেখলাম ইন্টারনেটে, আরেকটা হলে। একটা ভালো লাগল। আরেকটা খারাপ। দুটোর কথাই বলি আপনাদের, আপনারা যদি কোনওটা দেখে থাকেন তাহলে বলবেন কেমন লেগেছে। মত মিললেও বলবেন, না মিললেও। দুটো সিনেমাই শিক্ষামূলক। প্রথম সিনেমার শিক্ষাটা হল, বাংলা সিনেমা যা আসবে ভালো হোক মন্দ হোক দৌড়ে গিয়ে দেখার প্রবাসী আদেখলাপনাটা এবার শেষ হওয়া দরকার। বর্ণপরিচয় নামের সার্থকতা আমি বুঝতে পারিনি। সম্ভবত সিনেমার নাম মহাপঞ্চভূত রাখা যায় না বলেই বর্ণপরিচয়। প্রথম সিনেই দেখিয়ে দেওয়া হয় খুনিকে, অর্ক (আবীর)। ইনি মহাপঞ্চভূত (জল, বায়ু, আগুন, মাটি, আকাশ) থিম ফলো করে করে খুন করেন। পাঁচ বছরে পাঁচটা খুন করার পর দু’বছর চুপচাপ থাকার পর আবার খুন করতে নেমেছেন। এর উল্টোদিকে রয়েছেন একজন পুলিস অফিসার, যিশু, চরিত্রের নাম ভুলে গেছি। তিনি পাঁচবছর ধরে এই খুনিকে ধরতে না পেরে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং চাকরি ছেড়ে নেশায় ডুবে যান। বর্ণপরিচয় হচ্ছে এই দুই মহারথীর মহাযুদ্ধ। সিনেমাটা ট্রোপে ভর্তি। পুলিস অফিসার সিরিয়াল কিলারের হাতে নাকাল হয়ে ডিপ্রেশনে চলে গিয়ে চাকরি ছেড়েছেন। তাঁকে ছেড়েছেন তাঁর বউ। পুলিস অফিসার ধরেছেন মদ। এদিকে তাঁকে ছাড়া

চেনা চেনা

আমার খুব খারাপ লাগছে অবান্তরে রোজ এই রকম কাঁদো কাঁদো পোস্ট করতে, কারণ এত কথা যাকে নিয়ে তিনি কান্না পেলে কাঁদলেও (মা মরে যাওয়া দাদাদিদির কথা মনে করে কাঁদতেন, মরে যাওয়া বাবামায়ের কথা মনে করে কাঁদতেন, কাবুলিওয়ালা দেখে কাঁদতেন, পথের পাঁচালী পড়ে কাঁদতেন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় 'এমন দিনে তারে বলা যায়' কিংবা সংসার যবে মন কেড়ে নেয়'-এর স্থায়ীটুকু পেরোতে না পেরোতে মা কেঁদে ফেলতেন), কাঁদো কাঁদো একেবারেই ছিলেন না। মায়ের ডিফল্ট মেজাজ ছিল হাসিখুশি। যে ফিরিস্তি দিলাম তার থেকে অনেক বেশিসংখ্যক পরিস্থিতিতে মা গড়াগড়ি খেয়ে হাসতেন। হাসি পেলে চাপার চেষ্টা মায়ের রেগুলার ব্যর্থতা ছিল। মিটিং-এ বসে মাকে কত হাসিকে কাশিতে পরিণত করতে হয়েছে শুনে দুজনে মিলে কত হেসেছি। আর মা হেসে ফেললেন বলে নয়, মা ছাড়া অন্য কেউ হাসল না কেন ভেবে অবাক হয়েছি। কাজেই মাকে নিয়ে এবার থেকে যত গল্প লিখব আনন্দেরই লিখব। তবু শেষবারের মতো এই দুঃখের ঘটনার কান টেনে কয়েকটা কথা বলি। যার প্রসঙ্গ মায়ের হলেও কথাগুলো আসলে আপনাদেরই বলার। বেশিরভাগ লোকেই করে, আর আমি যদি বেশিরভাগ না হই তো কিছুই নই, কাজেই আমিও করেছি নির্ঘাত, রিয়েল লাইফ আর ভার্

সবথেকে যেটা গর্বের

অনেক লোক এসেছিল। কেউ ঘর পর্যন্ত, কেউ বারান্দা, বেশিরভাগই রাস্তাতে ঘোঁট পাকাচ্ছিল। ঘরে ঢুকছিল যারা, পরিচিতির মাত্রা বুঝে আমার মাথায় হাত রাখছিল, জড়িয়ে ধরছিল। কেউ চেঁচিয়ে কাঁদছিল, কেউ ফুঁপিয়ে। বৌদি, কাকিমা, অর্চনা, দিদি সম্বোধনে মাকে ডাকছিল। মা এঁদের অর্ধেককে চিনতে পারতেন না আমি নিশ্চিত। এঁরা মায়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন না বলে নয়, মানুষের নাম, মুখ ভুলে যাওয়ায় মায়ের প্রতিভা সীমাহীন ছিল বলে।   পাড়ার লোক হলে এই সব পরিস্থিতিতে আমি কাজে আসতাম। আমার আবার অবান্তর তথ্য মনে রাখার ক্ষমতা দেখার মতো। এবারই রিয়েলাইজ করলাম পাড়ার অন্তত পাঁচটা বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বার (যে ল্যান্ডলাইনগুলোর আর অস্তিত্ব নেই), দশটা বাড়ির বাচ্চার (যাদের নিজেদের বাচ্চা হয়ে গেছে) জন্মদিন আমার মুখস্থ। মুশকিল হত মায়ের অন্য ক্ষেত্রের পরিচিত (মায়ের কাছে অপরিচিত) লোকেদের ক্ষেত্রে। যাঁরা উল্টো প্ল্যাটফর্ম থেকে 'মিসেস ব্যানার্জি! কিংবা অর্চনাদি! বলে চেঁচাতেন। আমি চিনি না। মায়ের মুখভঙ্গিতে স্পষ্ট যে মায়ের বিশ্বাস মা কস্মিনকালেও লোকটাকে দেখেননি, কিন্তু উল্টোপক্ষের প্রত্যাশাপূর্ণ মুখ ভিন্ন সাক্ষ্য দিচ্ছে। এই সব পরিস

১৪ জুলাই, ২০১৯

আমার মা মারা গেছেন গত ১৪ই জুলাই। অবান্তরে কী লিখব, কেন লিখব কিছুই আমার কাছে আর স্পষ্ট নয়। সময় এ ধোঁয়াশা কাটিয়ে দেবে আশায় আছি। তখন আবার ফিরে আসব। ততদিনের জন্য আমার অনুপস্থিতি মার্জনা করবেন।

ফাদার ব্রাউন ও অভিশপ্ত বই রহস্য

Image
প্রায় দু’বছর হতে চলল, গল্পটি অনুবাদের বরাত এসেছিল। সংকলনে প্রকাশ করা হবে বলে। সে প্ল্যান নির্ঘাত বাতিল হয়েছে। আমি ভাবলাম আর বসিয়ে বসিয়ে ডিম পাড়িয়ে লাভ নেই, অবান্তরেই প্রকাশ করে দেওয়া যাক। অনুবাদটি জি কে চেস্টারটনের ফাদার ব্রাউন সিরিজের একটি গল্প ‘দ্য ব্লাস্ট অফ দ্য বুক’ এর। বিশুদ্ধ অনুবাদ, ভাবানুবাদটাদ নয়। পড়ে জানাবেন কেমন লাগল। উৎস গুগল ইমেজেস ***** ফাদার ব্রাউন ও অভিশপ্ত বই রহস্য মূল গল্পঃ The Blast of the Book লেখকঃ G K Chesterton প্রফেসর ওপেনশ সারাজীবন ভূতপ্রেতআত্মা নিয়ে গবেষণা করেছেন, কিন্তু  তিনি নিজে ভূতপ্রেতে বিশ্বাস করেন কি না সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। এই ধোঁয়াশা সৃষ্টিতে প্রফেসরের অবদানই ছিল সর্বাধিক। তাঁকে কেউ ‘বিশ্বাসী’ বলে দাগাতে চাইলে তিনি রেগে আগুন হতেন। শয়ে শয়ে উদাহরণের ঝুলি খুলে দেখাতেন কীভাবে তিনি প্রেতচর্চা নিয়ে একের পর এক ভাঁওতাবাজি ধরে দিয়েছেন।  আবার তাঁর সামনে যারা ‘ভূতটুত কিছু নেই, যত বাজে কল্পনা’ বলে উড়িয়ে দিত সেইসব বস্তুবাদীদেরও তিনি ছেড়ে কথা বলতেন না। আজীবনের গবেষণা আর সংগৃহীত প্রমাণের ঝুলি থেকে এমন সব অলৌকিক ঘটনা

একটি বইপ্রকাশ অনুষ্ঠান ও একটি বই

Image
অমিতাভ ঘোষ জ্ঞানপীঠ পেলেন। গোপালকৃষ্ণ গান্ধী যেদিন ওঁকে পুরস্কার দিলেন তার পরদিনই অমিতাভ ঘোষের সাম্প্রতিকতম উপন্যাস ‘গান আইল্যান্ড’ আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হল।  জ্ঞানপীঠ দেওয়ার দিন পাস জোগাড়ের ঝামেলা ছিল তাছাড়া পুরস্কার নেওয়া কী দেখতে যাব, তার থেকে বই কিনে পড়লে লেখকের বেশি মর্যাদা করা হবে। বুক লঞ্চ উন্মুক্তদ্বার, আগে আসুন আগে বসুন ব্যবস্থা, চলে গেলাম দুজনে। এত উৎসাহ অমিতাভ ঘোষ বলেই। যে ক’’জন লেখকের প্রায় সব বই আমাদের বাড়িতে আছে তাঁদের মধ্যে অমিতাভ ঘোষ একজন। এবং যে সব লেখকের প্রায় সব বই বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও সেসবের প্রায় কোনওটিই আমি পড়িনি, তার মধ্যেও অমিতাভ ঘোষ একজন। বা একাই। ওঁর 'ক্যালকাটা ক্রোমোজোম' পড়ে সেই যে মাথা চুলকোনো ভাব হয়েছিল, বাকিগুলো আর পড়া হয়নি। তারপর বছর তিনেক আগে বেরোনো ওঁর নন-ফিকশন রচনা 'দ্য গ্রেট ডিরেঞ্জমেন্ট' পড়েছিলাম, ব্যস।  আমরা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই চারপাশের সব খালি চেয়ার ভরে গেল। অর্চিষ্মানের পাশের খালি চেয়ারে শেষ মুহূর্তে একজন এসে বসলেন যাঁকে আমাদের দুজনেরই ভয়ানক চেনা লাগছিল। সে এক অসামান্য সাসপেন্স। ভদ্রলোক একেবারে পাশে বসে আছেন কাজেই

শনিবার বিকেল

Image
মেঘলা হলেও ছিল মন ভালো করা। তাপমাত্রা সহ্যের সীমার এপারে। পার্কে কচিবুড়ো গলার খলখল। মৃদুমন্দ হাওয়া। সে হাওয়ায় আবার হলুদ অমলতাসের পাপড়ি ঘুরে ঘুরে নাচছে। সে নাচেরই ছবি তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু ফোনের ক্যামেরার অপ্রতুলতা বা আমাদের আনাড়িপনা যে কারণেই হোক, উঠল না। উঠল খালি রাস্তা আর গাড়ি আর ল্যাম্পপোস্ট।   যাচ্ছিলাম দোসা খেতে। অধুনা দিল্লিতে বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং দক্ষিণী খানার দোকান খুলেছে। খাবার সেই দোসা ইডলি, চমক কেবল সাজেগোজে আর দোসার নামে। কার্ণাটিক ক্যাফে এদের মধ্যে পথপ্রদর্শক। আমরা প্রায়ই গিয়ে থাকি। সম্প্রতি জাগারনট নামে একটি দোকান এসেছে বাজারে। জোম্যাটোতে তার রেটিং আকাশছোঁয়া, রিভিউ স্পটলেস। বাড়ি থেকে কাছেও। অনেকদিন ধরে তাল খুঁজছিলাম যাওয়ার। ঠিক হয়েও হচ্ছিল না। শেষমুহূর্তে প্ল্যান বদলে যায়, খিদে পায় না, পেলেও দোসার বদলে চাউমিন খেতে ইচ্ছে করে। এমনকী অফিসের একজন জন্মদিনের খাওয়া খাওয়াবে বলল, হয় কার্ণাটিক ক্যাফেতে নয় জাগারনটে। মুখে তো বলা যায় না, মনে মনে চাইছিলাম জাগারনটেই যেন জন্মদিন পালন হয়। হল না। ঘুরেফিরে সেই কার্ণাটিক ক্যাফে। নিজের আলসেমোতে যতদিন যাওয়া হচ্

মিতা, মাসিমা আর পঞ্চাশ বছর আগের একটা চিঠি

Image
এবারের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের ছোটগল্পের ছায়া জোগান দিয়েছেন ইংরেজ ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, ছোটগল্পকার জুলিয়া ডার্লিং, তাঁর ছোটগল্প ‘লস্ট লেটারস’-এর মাধ্যমে। গল্পটি আমি পড়িনি, বিবিসি রেডিওতে পাঠ শুনেছিলাম।  পোস্টঅফিসে কাজ করা এক অল্পবয়সী মেয়ে, এক হারিয়ে যাওয়া চিঠি ফেরত দিতে আসে এক বৃদ্ধা মহিলাকে। আমার গল্পেও একটা চিঠি আছে, আর দু’জন মহিলা আছেন। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের জলহাওয়ায় তাঁদের পরিস্থিতি, আকারপ্রকার, সমস্যা এবং সমাধান (যদি কিছু থেকে থাকে) সবই বদলেছে। আর এসেছে কিছু ছায়ার মতো চরিত্র যারা স্টেজে নামেনি কিন্তু উইংসের পাশে দাঁড়িয়ে মূল চরিত্রদের ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছে।  গল্পটি এদের মধ্যে কার? কীসের? জুলিয়া ডার্লিং নামকরণেই সংশয় মিটিয়ে দিয়েছেন, তাঁর গল্পটা হারিয়ে যাওয়া চিঠিটার বা চিঠিদের। আমি অতখানি নিঃসংশয় হতে পারিনি। তাই নামে তিন প্রধান চরিত্রকেই জায়গা দিয়েছি।  জুলিয়া ডার্লিং-এর ছোটগল্প 'লস্ট লেটারস'-এর ছায়া অবলম্বনে লেখা আমার ছোটগল্প 'মিতা, মাসিমা আর পঞ্চাশ বছর আগের একটা চিঠি' বেরিয়েছে চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম-এর জুলাই মাসের মেল ট্রেনের