Posts

Showing posts from May, 2020

এসে গেছে!

অর্চিষ্মান দিল্লিতে নেমেছে। এরোসিটির কোয়ারেনটাইন হোটেল — আপাতত অর্চিষ্মানের হোম অ্যাওয়ে ফ্রম হোম। চোদ্দ  সাতদিনের বাধ্যতামূলক বনবাস। আমার মুণ্ডুর ওজন কিলো পাঁচেক কমে গেছে, শিরদাঁড়ার গাঁট খুলে গেছে, অফিস যাওয়ার আগে যে গানগুলো শুনতে শুনতে রেডি হতাম, সেগুলোও পর্যন্ত ইউটিউবে ফের শুনছি। কারণ আমাদের টিভি খারাপ হয়ে গেছে। বাই দ্য ওয়ে, লিংকে ক্লিক করার আগে হেডফোন জোগাড় করে নিলে ভালো। রীতা, গীতাদি আসা শুরু করেছেন মাসের শুরু থেকেই। আমি আবার সারা-সকালের হাফ শবাসনে (মাথাটা বালিশ উঁচু করে ঠ্যাকনা দেওয়া) ফিরে গেছি। রান্নার বদলে ফ্রিজ খুলে খাবার পাচ্ছি। গায়ের আরামটাকে অস্বীকার না করেই বলছি, মনের আরামটাও কম নয়। বাবাকাকা থাকার দরুন আমাদের প্রাতঃকালীন চা-সভা বসছিল না এতদিন, এখন বসছে। খবরের কাগজ পড়ে লোকে দেশেরদশের খবর পায়, আমি ওই দশ মিনিটে পাড়ার সবার হাঁড়ির খবর জোগাড় করি (আমার খবরও ওই ফাঁক দিয়েই বাইরে যায়; সে নিয়ে আমার সন্দেহ কিংবা আপত্তি কোনওটাই নেই)। আমার ভালো থাকায় সকালের ওই দশ মিনিটের চায়ের আড্ডার (যা অনেকসময় তর্কাতর্কিতেও পর্যবসিত হয়) অবদান আগে বুঝিনি। অর্চিষ্ম

কে না ভালোবাসে শৈশব

মাসে একদিন মাস্টারমশাই একটা করে গান শেখাতেন। সত্যিকারের গান। বাদবাকি মাসের মতো বিজাতীয় ভাষায় চারলাইন পদ্য সহকারে হাঁ করে আ আ আ আ চিৎকার নয়। লোকে যাকে গান বলে চিনতে পারে এমন গান। ঠাকুমা সন্ধেবেলা মশা মারতে মারতে যে সব গান গেয়ে শোনাতে ফরমাস করতে পারেন। আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশীর কাছে পেখম মেলার সময় যে গানগুলো গাওয়া যায়। অনেকসময় তাঁরাই আগেভাগে বলে দেন, আমরা বুঝব এমন গান গাস বাপু। সে রকম গানের সাপ্লাই কম ছিল বলেই হয়তো শেখার উৎসাহও বেশি ছিল। যেদিন সেরকম গান শেখার সম্ভাবনা থাকত,, ক্লাসে যাওয়ার আগ্রহ উত্তুঙ্গ থাকত। গানের আয়তন বড় হলে আর কারিকুরি থাকলে একদিনে পুরো শেখা হত না। এ মাসে অর্ধেক, ও মাসে অর্ধেক। প্রথমার্ধের গান শেখার দিনে মাস্টারমশাইয়ের মেজাজ ভালো থাকলে বলতেন, যাঃ এবার এইটুকু কাউকে শিখিয়ে আয়, পরেরটুকু আবার নেক্সট মাসে শিখে গিয়ে শেখাবি। ক্লাসের বড় দাদাদিদিরা, যারা মাস্টারমশাইয়ের রসিকতায় শব্দ করে হাসার কনফিডেন্স অর্জন করেছে, হাসত। স্পষ্টতই, কটাক্ষটা কোনও চেনা গায়ক-শিক্ষকের প্রতি, যাঁর নিজে যথেষ্ট না শিখেই গান শেখাতে বেরোনর দুর্নাম আছে। এইসব কটাক্ষ তখনই আসে যখন লোকে

পশম

সাত বছরের বিয়েতে যে ক'টা ট্র্যাডিশন তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে একটা হচ্ছে এগারোই মে আলাদা আলাদা থাকার ট্র্যাডিশন। দু'হাজার কুড়ি আর সবদিকে চমক দেখালেও এ বাবদে চরম ব্যর্থ; এ বছরও বিবাহবার্ষিকীতে আমরা আলাদা আলাদা। গুগল চ্যাটের এদিক ওদিক বসে আছি। বসে বসে স্বপ্নের পোলাওয়ে ঘি ঢালছি। আবার কবে দেখা হবে, দেখা হলে কী কী মজা করব, কোন কোন দোকানে খাব, কোথায় কোথায় বেড়াতে যাব। গোড়াতে লিস্টে নানাবিধ রোমহর্ষক ডেসটিনেশন রাখা হয়েছিল। বন্দীপুরের জঙ্গল, চিকমাগালুরের কফিবাগান, ভুটানের টাইগার মনাস্টেরি। এমনকি লজ্জার মাথা খেয়ে “সেশেলস দ্বীপ নাকি শুনেছি দারুণ ভালো দেখতে” বলে গুগল ইমেজ সার্চের লিংক পর্যন্ত চালাচালি করেছিলাম। শেষমেশ দেখা যাচ্ছে সর্বাধিক ভোট পেয়ে লিস্টের প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় স্থান আলো করে রয়েছেন যথাক্রমে দার্জিলিং, পুরী, এবং গ্যাংটক। খাবার দোকানের লিস্টেরও হাল একই। প্রথমটা ভাবা হয়েছিল এই বোম্বেটে বিরহের পর ফ্রেঞ্চ আর আলবানিয়ান যে দুটো দোকান বহুদিন ধরে তাক করে আছি (একটা পকেটের মুখ চেয়ে এবং অন্যটা কে-জানে-কেমন-হবে সংশয়ে ভুগে) সেগুলোকে আগে সেরে নেব। এখন স্থির হয়েছে দেখা হলে আর দোক

ভাইরাস

Image
এই বাজারে নিজের সম্পর্কে একটা সত্যি আবিষ্কার করে আমি হতোদ্যম। আমি আগাপাশতলা একজন ‘নেগেটিভ’ মানুষ। বাকিরা যেখানে সোনালি-রুপোলি কতশত রেখা বার করে ফেলল - অফিস কেটে বাড়িতে বসে থাকার সুযোগ, পরিবারের সঙ্গে সরেস টাইম কাটানোর সুযোগ, নিত্যনতুন রেসিপি, সমাজসেবা, মানুষে মানুষে বন্ধন, কোকিলের ডাক, এভারেস্টের চুড়ো - আমি সেখানে কেবল দেখে উঠতে পারলাম ক্রোধ, হিংসে, কুচুটেপনা, সর্দারি আর ছ্যাবলামো। চূড়ান্ত ছ্যাবলামো। দোষ, বলা বাহুল্য, আমার। কারণ সবাই জানে, কালো, আলো - সব দেখনেওয়ালার নয়নেই থাকে। বিউটি, অ্যান্ড এভরিথিং এলস, লাই ইন দ্য আইজ অফ দ্য বিহোল্ডার। এতদিন ভাবতাম আমার চোখটাই বুঝি খারাপ। এখন টের পাচ্ছি দৃষ্টিটাও খুঁতো। যাকগে, হাফের বেশি জীবন পার করে ফেলেছি, এখন আর খুঁত খুঁজে খুঁজে (তাও আবার নিজের) সারানোর ধৈর্যও নেই, ইচ্ছেও না। বরং বেঁকা দৃষ্টিকে আরও বেঁকিয়েচুরিয়ে নিয়ে, কিছু দেখা, কিছু শোনা, কিছু স্রেফ পেটে বানানো জিনিসপত্তরের ভেজাল দিয়ে একটাদুটো গল্প লেখা গেলে তাও খানিকটা প্রোডাক্টিভ কিছু হল। সে রকমই একটা গল্প আমি লিখেছি এ মাসের চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে। নাম দিয়েছি আবার ভা