Posts

Showing posts from April, 2019

গোশৈণী থেকে সোঝা/ ২

Image
সকালবেলা আকাশ পরিষ্কার দেখে সময় নষ্ট করলাম না। চা বিস্কুট খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম।   কোথাও যে বাঁধাধরা যাওয়ার আছে তেমন নয়। এই আশেপাশে বিচরণ। নদী পেরিয়ে বড় রাস্তায় যাব না, জঙ্গলের দিকেই হাঁটব। ডাইনিং হলের ওপাশে একটা কাঁচা পথ ওপরের দিকে গেছে, অন্যটা নিচে নদীর দিকে। ওপরের রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করলাম। রাস্তা মানে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পায়ে চলা পথ। বৃষ্টিতে ভিজে প্যাচপেচে, দু’পাশে ঝাঁপিয়ে আসা ডালপালায় খোঁচা লাগার সম্ভাবনা ব্যতিরেকে নির্বিঘ্ন। কদাচিৎ কয়েকটা আপেলের গাছে ফুল ঝেঁপে এসেছে, মৌমাছিরা বোঁ বোঁ ঘুরছে। ফুলের মধুর কি না জানি না, হাওয়ায় মিষ্টি গন্ধ ছড়ানো। কাল রাতে জানালার একটা ছোট পাল্লা অল্প খুলে শুয়েছিলাম, নেটের ভেতর দিয়ে এই গন্ধটাই ঢুকছিল ঘরে সম্ভবতঃ। রাস্তা উঠে নেমে চলল। মাঝে মাঝে বাঁক নিয়েই চোখের সামনে এই রকম সব দৃশ্য বেরিয়ে পড়ছিল।   প্রকৃতির শোভা অবলোকন করে, ছবি তুলে, ধীরেসুস্থে আধঘণ্টা চলার পর জঙ্গল পাতলা হল। চোখের সামনে ভেসে উঠল গোশৈণী বরিষ্ঠ উচ্চ বিদ্যালয়-এর নীল বোর্ডওয়ালা গেট। সুন্দর স্কুলে পড়েছি বলে আমার গোপন জাঁক আছে। রানীরং মাধবীলতা জড়ানো আমাদের হলুদ স্কুল

তীর্থনের তীরে গোশৈণী/ ১

Image
গোশৈণী-র গোলমেলে বানানটা আমি জানতাম না। ইংরিজিতে কোথাও Gushaini , কোথাও Goshaini দেখে দেখে বাংলায় ‘গুশাইনি’ ‘গোশাইনি’ ইত্যাদি উচ্চারণ করছিলাম। বানজার বাসস্ট্যান্ডে কনডাক্টর যখন বাস দেখিয়ে দিতে গিয়ে নামটা উচ্চারণ করলেন ঐ-কারের ছোঁয়াটা প্রথম কানে এল। মূর্ধন্য ণ আর দীর্ঘ ঈ-টা জানা হল গোশৈণীরই বনপথে হাঁটতে হাঁটতে। যখন রাজু ভাইয়ার কটেজের পেছনের জঙ্গুলে রাস্তাটা বেরিয়ে একটা স্কুলের সামনে পড়ল। গেটের ওপর বড় বড় গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ‘গোশৈণী বরিষ্ঠ উচ্চ বিদ্যালয়’। একেই বলে শিক্ষায়তনের মহিমা। ভেতর পর্যন্তও যেতে হল না, গেট পর্যন্ত পৌঁছতেই কেমন একটা নতুন জিনিস জানা হয়ে গেল।   পাহাড়ের কোলের, নদীর ধারের স্কুলটা ভারি সুন্দর। ছেলেমেয়ে মিলে ভলিবল খেলা হচ্ছিল, সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে লম্বা একখানা গাছ ঝুঁকে পড়ে সেই খেলা দেখছিল। কিন্তু চমৎকার সেই স্কুলের কথা এখন নয়। পারম্পর্য রক্ষার্থে কীভাবে গোশৈণী পৌঁছলাম, পৌঁছনোর সিদ্ধান্ত নিলাম এ সব আগে সারা দরকার। সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব একটা শক্ত ছিল না। ‘অফবিট হিল স্টেশনস নিয়ার দিল্লি’ টাইপ করলে গোশৈণীর নাম সাজেশনে আসছিল বহুদিন ধরেই। তার থেকেও বেশি আসছিল তীর্থ

When did we?

"There is no question in Indian prehistory that has caused more heat and dust than this one: ‘when and how did Indo-European language speakers, who called themselves Aryans, reach the Indian subcontinent? This is curious because no similar and extreme controversy surrounds questions like ‘when did the first inhabitants reach India?’ or ‘when did Dravidian-language speakers reach India?’ or ‘when did the Mundari, Khasi or Meitei-language speakers reach India?’ It provokes no one’s ire when it is said that the original inhabitants of India came from Africa; that Proto-Dravidian is related to the Elamitic language of Iran’ or that Mundari, Khasi and Meitei speakers came from east Asia. All of this is taken with a shrug because, after all, there is no nation in the world today that has not been shaped by repeated mass migration. Europe has seen its demography upturned at least two times through mass migrations. The Americas saw at least three major migrations that shaped the

মার্চ মাসের বই/ ৩ (শেষ)

Image
A Necessary Evil/Abir Mukherjee (Sam Wyndham, #2) আবীর মুখার্জির স্যাম উইন্ডহ্যাম সিরিজের প্রথম গল্প 'আ রাইজিং ম্যান' আমি পড়েছিলাম বেশ ক’বছর আগে এবং অবান্তরে রিভিউও লিখেছিলাম। প্রতিক্রিয়া মাঝারি ছিল, পাঁচে সম্ভবত তিন দিয়েছিলাম, কাজেই সিরিজের পরের গল্পটা পড়ার তাগিদ অনুভব করিনি। অনেকদিন পরে সিরিজের দু’নম্বর উপন্যাসটি হাতে এল। আমি অতিরিক্ত উৎসাহ না দেখিয়েই পড়তে শুরু করলাম এবং প্রসন্নরূপে বিস্মিত হলাম। গল্পের শুরু উনিশশো বিশের দশকের কলকাতা শহরে। ব্রিটিশ সরকার তৎকালীন স্বাধীন রাজ্যের রাজাদের একটা কনসর্টিয়াম মতো ডেকেছেন, উপস্থিত আছেন লালবাজারের গোয়েন্দা পুলিস অফিসার স্যাম উইন্ডহ্যাম আর উইন্ডহ্যামের ছায়াসঙ্গী সার্জেন্ট সুরেন্দ্রনাথ “সারেন্ডার-নট” ব্যানার্জি। মিটিং-এ সম্বলপুর রাজ্যের যুবরাজ অধীর সাইও এসেছেন যিনি আবার সারেন্ডার-নটের হ্যারো ইউনিভার্সিটির চেনা। ওই হট্টমেলার মধ্যেই যুবরাজ উইন্ডহ্যাম আর সারেন্ডার-নটকে জানান তাঁকে কে বা কারা হুমকি চিঠি পাঠাচ্ছে।< >ব্যাপারটা আনঅফিশিয়ালি তলিয়ে দেখতে যুবরাজেরই গাড়িতে চড়ে দুই পুলিস অফিসার যখন যুবরাজের হোটেলের পথে তখন

আজি হতে (অর্ধ)শতবর্ষ পরে

পঞ্চাশ বছর পরে কী হবে আন্দাজ করতে বললে আমার মতো আত্মসর্বস্ব লোকের প্রথম যেটা মাথায় আসে সেটা হচ্ছে আমি থাকব না। থাকলেও সেটা না থাকার মতোই হবে। তবে পঞ্চাশ বছর পর শুনছি পাটুলি ঢাকুরিয়াও থাকবে না, কাজেই আমার না থাকা নিয়ে দুঃখ করা শোভা পায় না।   পঞ্চাশ বছর আগে কী হত ভাবতে বসলেও শিহরণ। বাংলাদেশের কারও বাড়িতে টিভি ছিল না, অ্যামেরিকায় মেয়েরা সন্তানসম্ভবা হলে তাদের চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া আইনসিদ্ধ ছিল, আমাদের দেশে ডাইনেবাঁয়ে পশুবলি হত। আমার এক দাদু মোষবলি দিতেন, পঞ্চাশ বছরের একটু বেশি আগে অবশ্য, তবে খুব বেশি আগেও নয়, মেরেকেটে পঁয়ষট্টি। শুদ্ধমনে স্নান করে, গরদের ধুতি পরে তিনি মোষের ওপর আরোহণ করতেন, চারদিক থেকে মোষটিকে দড়ি বেঁধে টেনে রাখা হত, তিনি মোষের ওপর বসে জয় মা বলে মোষের ঘাড়ে কোপ মারতেন, মোষটি পালাতে না পেরে চিৎকার করে ছটফট করতে করতে ঘাই মেরে মেরে উঠত যতক্ষণ না প্রাণটা পুরো বেরিয়ে যাচ্ছে, দাদু গর্বিত মুখে, ঠোঁটে স্মৃতিমেদুর হাসি নিয়ে বলে যান।   এখনও হয়তো আমরা এমন অনেক কিছু করি যা আমাদের নিজের চোখে অদ্ভুত ঠেকে না কিন্তু পঞ্চাশ বছর পর কেউ এসে দেখলে আমাকে নিয়নডারথালের সঙ্গে এক ক

ভিউ

আমরা এ বাড়িতে আসার পরপরেই বাড়ির নিচের তলায় একটি পরিবার ভাড়া এসেছেন। মা আর ছেলে। ছেলে সকালবেলা অফিসে চলে যান, মা সারাদিন একা থাকেন। সামনের ঘরের জানালাটার পাশে চেয়ার পেতে বসে থাকেন। জানালার পর্দাটা অল্প ফাঁক করে। আসা যাওয়ার পথে চোখে চোখ পড়লে উনিও হাসেন, আমরাও হাসি। বাজারের ব্যাগ হাতে ফিরতে দেখলে কী কেনা হল জানতে চান, সিনেমা যাচ্ছি শুনলে জিজ্ঞাসা করেন কী বই। একদিন কথায় কথায় বললেন যে ছেলের চাকরির জন্য গুরুগ্রামের দিকে থাকলেই সুবিধে হত, তাও ওঁরা সি আর পার্কে এসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি ভদ্রতাবশত কৌতূহল প্রকাশ করলাম। ভদ্রমহিলা জানালেন যে গুরুগ্রামে যে বাড়িতে ওঁরা ভাড়া থাকতেন সেটা অনেক তলার ওপর।   আমি এই পর্যন্ত শুনেই ভদ্রমহিলাকে মনে মনে হাই ফাইভ দিলাম। আমারও বেশি উঁচু বাড়িতে থাকা পছন্দ নয়। ভার্টিগোটার্টিগোর ব্যাপার নয়। আমার ভয়, লিফট দুম করে খারাপ হওয়ার। মহিলার নাকি সে ভয়ও নেই। তিনি উঁচু বাড়িতে থাকতে চান না, “কিচ্ছু দেখা যায় না” বলে। খালি এক খাবলা ঘোলাটে আকাশ, রোদ আর হাওয়া। পাখিও ওড়ে না। মাঝেমধ্যে গোঁ গোঁ করে খানকতক প্লেন এদিক থেকে ওদিক। ভদ্রমহিলা নাকি ছেলেকে বলেছিলেন, আমাকে একত

মার্চ মাসের বই/২

Image
The Left Hand of Darkness/ Ursula Le Guin Light is the left hand of darkness and darkness the right hand of light. Two are one, life and death, lying together like lovers in kemmer, like hands joined together, like the end and the way. উপন্যাসের মুখবন্ধে লেখক বলছেন, Science fiction is not predictive; it is descriptive. ….Prediction is the business of prophets, clairvoyants, and futurologists. It is not the business of novelists. A novelist’s business is lying.   কিন্তু লেফট হ্যান্ড অফ ডার্কনেস পড়লে আপনার গুইনকে প্রফেট ছাড়া আর কিছু মনে হবে না। মিথ্যুক তো নয়ই। মনে হবে এত সত্যি কথা এত দূরে বসে, স্থান কাল পাত্রের এত দূরে বসে তিনি জানলেন কী করে? লেফট হ্যান্ড অফ ডার্কনেস ‘হাইনিশ’ সিরিজের চার নম্বর উপন্যাস। সিরিজের বাকি গল্পগুলো না পড়লেও (আমি পড়িনি) আপনি দিব্যি লেফট হ্যান্ড অফ ডার্কনেস বুঝতে পারবেন। স্ট্যান্ড অ্যালোন হিসেবে এ বই সমান জোরদার। ঘটনা ঘটছে Ekumenical year 1490-97 এ। গুইন যদিও ভূত ভবিষ্যৎ কিছু নির্দিষ্ট করেননি, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, বিবর্তন ইত্

ইদানীং

Image
ব্লগিং-এর স্বর্ণযুগে ব্লগ জনপ্রিয় করার বিবিধ টিপস এবং ট্রিক্সের লিস্টের একেবারে ওপরদিকেই যেটা থাকত সেটা হচ্ছে বেশি করে লিস্ট পোস্ট করার ট্রিক। লিস্ট নাকি সকলেরই পড়তে ভালো লাগে কারণ দ্রুত পড়ে ফেলা যায়। লিখতেও খাটনি কম। (এটা অবশ্য কী নিয়ে লিস্ট তার ওপর নির্ভর করবে, আপনি যদি এখন উমবার্তো একোর উপন্যাসে মেটাটেক্সচুয়াল রেফারেন্সের লিস্ট বানাতে যান তাহলে খাটনি কম হবে না, বলাই বাহুল্য, কিন্তু আমি যে ধরণের লিস্ট লিখব যেমন পাঁচটি প্রিয় রং, পাঁচটি প্রিয় ফুল, পাঁচটি প্রিয় আইসক্রিম ফ্লেভার, তাতে পরিশ্রম বেশি হওয়ার কোনও কারণ নেই।) এই সব উপদেশসম্বলিত পোস্টে বিবিধ লিস্টের আইডিয়া দেওয়া থাকত। দশটি গোপন কথা যা আপনি কাউকে বলেননি। বারোটা গর্হিত ইচ্ছে যা আপনি পূরণ করতে চান ইত্যাদি প্রভৃতি। আমার আজকের পোস্টের লিস্ট সে রকম রোমহর্ষক নয়। নেহাতই সাদামাটা। ক্ষতি নেই, আমার লিস্ট লেখার উদ্দেশ্য ব্লগের জনপ্রিয়তা বাড়ানো কিংবা পরিশ্রম কমানোর নয়। পাতা ভরানোর একটা উদ্দেশ্য আছে বটে কারণ করে লেখার বিষয় কিছু মাথায় না এলে ব্লগের আলো নিভিয়ে বসে থাকার থেকে লিস্ট লেখা ভালো বলেই আমি মনে করি। কিন্তু সব থেকে বড় কারণ হচ্ছ