ভিউ
আমরা এ বাড়িতে আসার পরপরেই বাড়ির নিচের তলায় একটি পরিবার ভাড়া এসেছেন। মা আর ছেলে। ছেলে সকালবেলা অফিসে চলে যান, মা সারাদিন একা থাকেন। সামনের ঘরের জানালাটার পাশে চেয়ার পেতে বসে থাকেন। জানালার পর্দাটা অল্প ফাঁক করে। আসা যাওয়ার পথে চোখে চোখ পড়লে উনিও হাসেন, আমরাও হাসি। বাজারের ব্যাগ হাতে ফিরতে দেখলে কী কেনা হল জানতে চান, সিনেমা যাচ্ছি শুনলে জিজ্ঞাসা করেন কী বই। একদিন কথায় কথায় বললেন যে ছেলের চাকরির জন্য গুরুগ্রামের দিকে থাকলেই সুবিধে হত, তাও ওঁরা সি আর পার্কে এসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি ভদ্রতাবশত কৌতূহল প্রকাশ করলাম। ভদ্রমহিলা জানালেন যে গুরুগ্রামে যে বাড়িতে ওঁরা ভাড়া থাকতেন সেটা অনেক তলার ওপর।
আমি এই পর্যন্ত শুনেই ভদ্রমহিলাকে মনে মনে হাই ফাইভ দিলাম। আমারও বেশি উঁচু বাড়িতে থাকা পছন্দ নয়। ভার্টিগোটার্টিগোর ব্যাপার নয়। আমার ভয়, লিফট দুম করে খারাপ হওয়ার। মহিলার নাকি সে ভয়ও নেই। তিনি উঁচু বাড়িতে থাকতে চান না, “কিচ্ছু দেখা যায় না” বলে। খালি এক খাবলা ঘোলাটে আকাশ, রোদ আর হাওয়া। পাখিও ওড়ে না। মাঝেমধ্যে গোঁ গোঁ করে খানকতক প্লেন এদিক থেকে ওদিক। ভদ্রমহিলা নাকি ছেলেকে বলেছিলেন, আমাকে একতলা বাড়িতে নিয়ে চল লক্ষ্মীটি। বড়জোর দোতলা। যেখান থেকে রক্তমাংসের পৃথিবী দেখা যায়।
ওঁর আশা পূর্ণ হয়েছে নিশ্চয়। আমাদের বাড়ির, সর্বোপরি ওঁর ঘরের লোকেশন, রাস্তাঘাট লোকজন দেখার পক্ষে অর্ডার দিয়ে বানানো। জানালার পরেই বারান্দা, গেট, গেট খুললেই রাস্তা, রাস্তা পেরোলেই মাঠ। সকালবিকেল খেলোয়াড়, প্রেমিকপ্রেমিকা, স্বাস্থ্যসচেতন জনতা। শনিরবি মাঠের পাঁচ টুকরোর দুটোতে ফুটবল ম্যাচ, দুটোয় ক্রিকেট, একটায় বাবা শিশুর ক্যাচ-ক্যাচ। তাছাড়া মেলা পার্বণ পুজো লেগেই আছে।
আমার বিচারে রোমহর্ষক ভিউ নয় কিন্তু ভিউর বিচার সবার সমান নয়।
আমার ঠাকুমা এই রকম ভিউ পেলে হাতে স্বর্গ পেতেন। আমাদের রিষড়ার বাড়ির উল্টোদিকে মাঠ নেই, কিন্তু রাস্তা আছে। সেখান দিয়ে নানারকম লোক যায়। কম যায়, কিন্তু যদি যায় আর আমরা যদি গ্রিলের গেটে দুই কনুই ডানার মতো ছড়িয়ে হাতের পাতায় চিবুক রেখে দাঁড়িয়ে থাকি তাহলে তাকে অনেকক্ষণ চোখে চোখে রাখা যায়। একটা লম্বা রাস্তার ধারে আমাদের বাড়ি, ডানদিকে বাঁদিকে তাকালে খানদুয়েক গলির চৌমাথা পেরিয়ে দৃষ্টি চলে।
গায়ে জোর ছিল যখন ঠাকুমা গেটে কনুই রেখে দাঁড়িয়ে থাকতেন। তারপর বারান্দায় চেয়ারে বসে থাকতেন। বসে থাকা আরামদায়ক করার জন্য বারান্দায় সিলিং ফ্যান আর প্লাগপয়েন্টের ব্যবস্থা ছিল। যাতে অল আউট চালানো যায়। আরও কাহিল হলে ঘরের খাটটাকে জানালার পাশে সরিয়ে দেওয়া হল, ঠাকুমা সারাদিন সারারাত জানালার শিকে নাক ঠেকিয়ে বসে থাকতেন।
ঠাকুমার ঘর ছিল বাড়ির পশ্চিম দিকে। অনেকদিন ধরে হয়তো অনেক কারণে দুঃখ জমছিল, একদিন আর চাপা রইল না। ঠাকুমা তাঁর প্রতি নিরন্তর হয়ে চলা অত্যাচারের খতিয়ান দিতে শুরু করলেন। প্রথমেই উঠল ঘরের কথা। তাঁর ঘরে সর্বদা পশ্চিমের রোদ আসে। গরমকালে তেতে থাকে। কই তাঁকে তো সেই ঘরটাই দেওয়া হয়েছে? বাকিরা তৎক্ষণাৎ বলল, বল তোমার কোন ঘরটা পছন্দ, এক্ষুনি তোমার খাটবিছানা, আলমারি, ট্রাংক, মিটসেফ, দেওয়ালে কাঠের তাক, ঠাকুরের আসন সব সেই ঘরে রেখে আসছি। ঠাকুমা রেগেমেগে বললেন, লাগব না। সবাই জোরাজুরি করল, পুবদিকের দুটো ঘরই ঠাকুমাকে অফার করল। যেখানে ব্রাহ্মমুহূর্তের আলো এসে পড়ে, আর দশটার আগেই নিমগাছের আড়ালে হাওয়া হয়। কোনটা তোমার পছন্দ বল? ঠাকুমা বললেন, কোনওটাই না। বলে পশ্চিমের ঘরের জানালার পাশে গিয়ে গুম হয়ে বসলেন। পরে আমাকে বলেছিলেন, পাগল? ও সব ঘরে গেলে সারাদিন কাঁঠাল গাছের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হবে। পশ্চিমের ঘরে রোদ আসে, কিন্তু রাস্তাও দেখা যায়। রাস্তায় বেরোনো ঘুচেছে, দেখা প্রাণ থাকতে ছাড়ছি না।
আমার অবশ্য মাথায় ঢুকত না ঠাকুমা কী দেখেন জানালা দিয়ে। আমাদের রাস্তাটা পিচঢালা বটে কিন্তু সেখান দিয়ে টোটোও যায় না। বাস গাড়ি তো ছেড়েই দিলাম। দশটা আর চারটেয় স্কুলের ছেলেমেয়েদের আপডাউন, রেগুলার অফিসযাত্রী, ইররেগুলার দুয়েকটা রিকশা, সাইকেলের টুং টাং। বিয়ের সিজনে ঘোড়ায় বসা ব্যান্ডপার্টি বাজিয়ে বর যাওয়ারও রেওয়াজ নেই। আমার জীবনে একবার শুধু সামনের রাস্তাটা দিয়ে হেলেদুলে একখানা হাতি গিয়েছিল, পেছনে ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত বালকবালিকার দলের ল্যাজ সহযোগে। ঠাকুমার জীবনেও নাকি ওই একবারই হাতি গিয়েছিল রিষড়ার বাড়ির সামনে দিয়ে।
আর মাঝে মাঝে নিয়মিত ব্যবধানে, ক্লকওয়ার্কের মতো, সামনের বাড়ির লোকের ছাদে কাপড় মেলতে ওঠা, বারান্দায় ঘুরে যাওয়া, সাড়ে তিনটেয় জল এলে বাগানের কলের মুখে পাইপ এঁটে গাছের গোড়ায় দেওয়া।
এই ভিউর লোভে ঠাকুমা পশ্চিমের তাত রোদ সহ্য করতে রাজি ছিলেন। যতদিন বেঁচে ছিলেন, ও ঘরের মালিকানা ছাড়েননি।
আজকাল কোনও কোনও শনিরবিবার সারাদুপুর কাটিয়ে বিকেলবেলা বাজারে যাই দুজনে হাঁটতে হাঁটতে। এমনি এমনি। ফ্রিজে অলরেডি গাজর টমেটো কপি শুকোচ্ছে, বাজার করার নেই। মুদিদোকানের ফর্দও আনানো হয়েছে গতকাল রাতেই। একটা জিনিসই শুধু বিনা দরকারে করা যায়, চা খাওয়া। দুজনে দু’কাপ নিয়ে বসি। চোখের সামনে একশো মিটার রাস্তার ভিউ। দশ বছর ধরে দেখছি। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওরই মধ্যে নতুনত্ব জেগে ওঠে। ফুলের দোকানের পাশের ফালিতে আইসক্রিমের দোকানটা উঠে যে হট ডগের দোকানটা বসেছিল সেটাও উঠে গেছে। সামনের রেলিং-এ কাগজওয়ালা দোকান পাতেন, কাগজ গোছান। এঁর থেকে আমরা শারদীয়া আর মাঝে মাঝে দেশ আর ক্যারাভান কিনি। হাওয়া দেয় জোরে, দুটো আনন্দবাজার উড়ে গিয়ে পড়ে ডাস্টবিনে। বিক্রেতা দুলকিচালে গিয়ে কাগজদুটো কুড়িয়ে এনে ঝেড়েঝুড়ে রাখেন যথাস্থানে। আরেকদিন কাগজের পাশে প্রচুর লালনীল শিশি, বিসলেরির বোতল। একটার গায়েও লেবেল নেই। ভেতরে হলুদসবুজ তরল। চায়ের দাদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ওগুলো কী? বললেন, দাওয়াই। মেহেন্দিদাড়ি ভদ্রলোকের দেখলাম দাওয়াই বিক্রিতে বেশি মন নেই। ক্যারামবোর্ডের পাশে দাঁড়িয়ে চায়ের খুরিতে ফুঁ দিচ্ছেন। চা শেষ হলে দাওয়াইয়ের বোতল ব্যাগে পুরে রওনা দিলেন।
ঠাকুমার ভিউতেও এই রকম ছোটখাটো ভেরিয়েশন ঘটত নিশ্চয়। খুঁটিনাটি অদলবদল। তাকিয়ে থাকতে থাকতে কোনওদিন সবুরে মেওয়া ফলবে, ভিউ লণ্ডভণ্ড করে হাতি হেঁটে যাবে। তখন যা উত্তেজনা হবে, কহতব্য নয়।
রোজ সন্ধেয় গেট খুলে ঢুকতে ঢুকতে দেখি আমার বাড়িওয়ালা আর নিচের তলার ভদ্রমহিলা দোতলার বারান্দায় বসে আছেন মাঠের দিকে তাকিয়ে। সন্দেহ হয়, হয়তো অনেকক্ষণ একে অপরের সঙ্গে কথা বলেননি। কীই বা বলার থাকে রোজ রোজ। আমাকে দেখলে নড়েচড়ে ওঠেন। বলেন, এসো এসো, এত খেটেখুটে এলে একটু চা খেয়ে রিল্যাক্স করে যাও। আমি হেসে প্রতিদিন ‘না’ করি। বলি, অফিসে অলরেডি সাত কাপ খেয়েছি (এটা সত্যি), কাজেই বাড়ি এসে আর চা খাই না (এটা সত্যি নয়)। নিজের ঘরে ঢুকে যাই। মাঠের বোরিং ভিউর দিকে তাকিয়ে বসে থাকার থেকে একা ঘরে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখা রিল্যাক্স করার পক্ষে হাজার গুণে বেটার লাগে। একদিন লাগবে না জানি। তখন রাস্তার দিকে মুখ ফেরানো বারান্দাওয়ালা বাড়ির জোগাড় দেখতে হবে।
Khuuuub bhalo laglo lekhata :)
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, সায়ন।
Deleteকি ভালো লেখাটা। একদম দেখতে পেলাম যেন নিজের চোখে। কেমন আছো কুন্তলাদি ? প্যারিস দুর্গাপুজোয় তোমার সাথে আলাপ হয়েছিল।
ReplyDeleteহ্যাঁ হ্যাঁ স্পষ্ট মনে আছে তো। তোমার আর তোমার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। (নাকি তুমিই সেই স্ত্রী, আর আলাপ হয়েছিল তোমার আর তোমার বরের সঙ্গে?) ছবিটবিও তোলা হয়েছিল। এখন কি তোমরা ফ্রান্সেই আছ?
Deleteনা না। আমি আমিই , আমার স্ত্রী না :) আমরা এখন হল্যান্ডে থাকি। ২০১৪ তে ফ্রান্স ছেড়েছি। এদিকে এলে অবশ্যই জানিয়ো।
Deleteনিশ্চয় নিশ্চয়।
Deletesesh paragraph ta <3
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, অন্বেষা।
DeleteAmader flat kintu 14th floor e. Samner rasta dekha jayna kintu duto ghorer janla diye NH 48 dekha jay..majhrate utlheo dekhi somane trucks cholche..
ReplyDeleteওরে বাবা, তোমরা তোঁ প্রায় আকাশে থাকো, রণদীপ।
Deletena na..kothay ar..ajkal to onek society te 25 30 tolao uthe jachhe. Ota bodhoy NH248 hobe.
Deleteওরে বাবা।
DeleteOnek age Ami flat a eka thaktam, paser flat a ek briddha eka thakten. Ami fire tala kholar shobdo pele tuk Kore nijer darja khule uki diten. Ektu golpo hoto, mostly darjar sanne dariye. Pray e bolten Cha khabe? Ami besir bhag time e khetam na, bairei dariye golpogachhha hoto. kokhono bhitore khetam, ba onake daktam Amar flat a. Saradin ektu eka feel korten, Tai oituku dekha r jonye mone hoy most din opekshai korten.
ReplyDeleteTarpor ek Xmasr er raat Ami osustho chhilam, sakeal uthe Bari chole gelam, 2/3 din por fire sune Christmas rate chole gechhen. Tarpor onekdin fire Ghar a dhokar samay khub faka lagto.
আপনি যে ওঁর সঙ্গে কয়েকদিন হলেও চা খেয়েছিলেন এ জন্য আপনাকে কুর্ণিশ। এটা আমি হলেই করতাম না। বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতা যে কী, আজকাল মাঝে মাঝে কল্পনা করার চেষ্টা করি।
DeleteAr ekta Sundar Katha sunechhilam. Kono ekdin kathay kathay samanyosbirokti prokash kore chhilam je manush boyes bere gele beshi baje Katha bole. To Amar ek dadu bolechhilan - asole boyes bere gele Mone hoy to be esab hoyto ar besidin bolte parbo na, dekhte parbo na, Tai aro beshi bolte, aro beshi dekhe nite ichchhe Kore.
Deleteআপনার দাদুর কথা যুক্তিযুক্তই ঠেকছে, শিবেন্দু। বেশি কথা বলার বৈশিষ্ট্যটা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কমবেশি সকলেরই জাগে, কাজেই এর পেছনে ওই কমন সূত্রটা থাকা অসম্ভব নয়।
DeleteProtibeshider khub value kori ajkal, jobey theke banijyo nogorir bashinda hoyechhi ... du ek bochhor holo shoubhagyokrome erom du ekjon bhalo manusher dekhao peyechhi ... oboshyo tara shobai aekhi Puneri hoye giyechhen ... Darun tiffin (ta shey shokal 8 ta tei tiffin box e pack hoye chole ashchhe) hok othoba firey eshey ek cup gorom gorom darun cha, sathe nankhatai ta, ei du eri source chole gaechhe 3 ghonta durer shohortay ... shudhu ki r pet pujo, prankhuley duto golpo koratao ajkal boro miss kori ajkal, shei golpo guloy j konorokom hiseb thaktona ....
ReplyDeleteBoro mormosporshi bishoy niye lekhen apni
Mon bhalo hoye gaelo r mon kharap o, duto onubhuti e priyohoye thakbe moner modhye ...
Apni bhalo thakben
আপনিও ভালো থাকবেন, অনুরাধা। মন্তব্য পেয়ে খুব ভালো লাগল। মন খুলে আড্ডা আমি শেষ কবে দিয়েছি মনে নেই। না দিতে দিতে এখন এমন হয়েছে যে আড্ডা দেওয়ার সম্ভাবনাতেও আতংক জাগে, মনে হয় যেচে ভূতের কিল খাওয়ার মতো ব্যাপার হবে। অথচ একসময় প্রচুর আড্ডা দিয়েছি, ভালোবেসেই দিয়েছি। জীবনের ওই ফেজটা পেরিয়ে গেছে আরকি।
DeleteChorom sotti likhecho ... Amar baba bole Sobar e ekdin ei din ta asbe... Amar thakuma keo dekhechi.. amader makhlar barir samne chilo rasta ar onek lok jeto.. thakumar parar oneker sathe kotha bolar obhyes chilo.. pore uttarparar barir samne boro rasta nei, thakum janla diye dekhto ar jake dekhte peto deke kotha bolto ..
ReplyDeleteআমার ঠাকুমাও তাই করত, ঊর্মি। আর কেউ যদি বরিশালের বেরোত, তাহলে তো কথাই নেই।
Deleteবেশি বয়েসের একাকিত্ব বাদে আরেকটা কারণও থাকে। আশপাশের লোকজনের প্রতি অপার কৌতূহল।
ReplyDeleteএরকম লোকজনও কিন্তু ভিউপয়েন্টের দখল নিয়ে সারাদিনরাত কাটিয়ে দেন।
আমার পরিচিত একজন সারাদিন বারান্দা পাহারা দিতেন। কার বাড়ি কে এলো, কে গেল, কি পরে, কি নিয়ে, কখন গেল এলো, সেসব তাঁর নখদর্পনে।
এখন মাঝে মাঝে দেখেছি সন্ধ্যের পর থেকে মশার ভয়ে বারান্দা ত্যাগ করে জানালায় উঠে বসে থাকেন। রাত একটার সময় বাড়ি ফিরেও পরদিন প্রশ্ন শুনেছি, কেন,কোথা থেকে.. ইত্যাদি ইত্যাদি
হাহা, এটার একটা থিওরি আছে আমার বৈজয়ন্তী। অবশ্য আমি জানি না যিনি কৌতূহল দেখাতেন তিনি বয়স্ক কি না, তবু এই সুযোগে থিওরিটা বলে নিই। আমার ধারণা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ইনহিবিশন/+ মুখোশগুলো ঢিলে হয়ে যায়। অনেক ঝামেলাঝঞ্ঝাট পেরিয়ে লোকের সাহস বেড়ে যায় কাজেই আর অত মেপেজুপে আচরণ করার প্রয়োজন বোধ করেন না। যিনি আপনাকে প্রশ্ন করে অস্থির করছিলেন তিনি হয়তো যৌবনেও বাকিদের থেকে বেশি কৌতূহলী ছিলেন কিন্তু সামাজিক ভদ্রতার মুখ চেয়ে তা প্রকাশ করতেন না। বয়স হওয়ার পর আর সংযমের কষ্ট করেন না। আমার ঠাকুমাকেও এমন অনেক প্রশ্ন লোকের মুখের ওপর করতে দেখেছি যা আমাকে কেটে ফেললেও করব না (বিশেষ করে আঠেরো উনিশ বছর বয়সে, যখন আমার ইনহিবিশন/ লোকলজ্জা এখনকার থেকে অন্তত সাড়ে সাঁইত্রিশ গুণ বেশি ছিল।) বহু প্রেজুডিস-থিকথিক বয়স্ক লোককে দেখেছি, যৌবনে প্রৌঢ়ত্বে যাঁদের দেখলে কেউ কল্পনা করতে পারত না যে এত সব চাপা ছিল মগজের ভেতর। এতদিন চাপা দিয়ে রাখতেন, এখন কেয়ার করেন না।
Deleteআরে এতো সেই গেছো দাদার থিওরীর ভাই। চল্লিশের পর থেকে বয়েস কমে যায়।
Deleteকি অসম্ভব সত্যি যে কথাটা...!!
আরেক রকম একাকীত্ব হল চারপাশে অনেক ভীড় তবু আপনি একা। এও মনে হয় সবার জীবনেই একবার অন্তত আসে।
ReplyDeleteসে তো আসেই, নালক। আমার তো ধারণা ভিড়ের মধ্যে অনেকসময় এমন একা লাগা সম্ভব যতখানি ফাঁকা ঘরে একা বসে থাকলেও লাগে না।
Deleteআমার কোন ভিউ ভাল্লাগে ভেবে চললাম খানিক...রাতের বেলা পাড়া ঠান্ডা হলে দাঁড়াতে ভালোলাগে, সকাল্বেলা কোনোদিন উঠে পড়লেও রাস্তাইয় জল দেওয়া, ঝাঁটপাট দেওয়া , উব উব উব শব্দ তুলে সব্জির ট্রাক আসা দেখতে ভালো লাগে ...কিন্তু কিছুই এক টানা বেশীক্ষন না ...সারাদিন তাকিয়ে কাটাতে এখনো অব্দি আমার ভালো লাগে না , ভবিষ্যতের কথা জানিনা।
ReplyDeleteতোমার পছন্দের ভিউগুলো আমারও পছন্দের, প্রদীপ্ত। আমার মনে হয় না বুড়োবুড়িরা ভালোলাগে বলে ভিউর দিকে তাকিয়ে বসে থাকে সারাদিন। কেউ কথা না বললে, সঙ্গ না দিলে, নিজেই নিজের এন্টারটেনমেন্টের ব্যবস্থা করা আরকি। রাস্তায় বেরিয়ে পড়ার শারীরিক সক্ষমতাও তো থাকে না।
Deleteঠিকই
Deleteekta kobita porechilam..sunil ganguly hoto..exact mone nei..but erkm chilo..ek bridhaa tar ghore suye gate kholar awaz sunte peten sokal sondhe..ebong barir thik ke seta khulche bujte parten....hotat mone porlo eta pore..dhonnonad..:)
ReplyDeleteআরে ধন্যবাদ কীসের, আমারও তো এমন সুন্দর কবিতাটার কথা জানা হল আপনার মন্তব্য পড়ে...
Deleteএতো লেখা নয়!এক অনুভব।এক দূরদৃষ্টি। যেখানে আজ নয় কাল আমরা সব্বাই গিয়ে থামবো।
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ।
DeleteKuntala-debi, ei dhoroner lekha gulo apni sobchaye bhalo lekhen. Hoito oti-kothon hoye jabe, kintu tobu o bolchi, apnar ei lekha gulo te ami bhivutibhushan er swad pai.
ReplyDeleteEkta mota dager kotha: bhadromohilar barite cha khaye ar take khaiye alaap kore felun. Apnar lekhar onek upadan paben.
হ্যাঁ, এটা ভালো পরামর্শ, ঘনাদা। দেখি, কুঁড়েমো যদি ছাড়তে পারি।
Deleteআহা, শেষটা বড় ভাল লাগল। :)
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, অরিজিত।
Delete