Posts

Showing posts from June, 2017

সারাহান

Image
গল্প ১। ব্রহ্মার ছেলে মরীচি, মরীচির ছেলে কাশ্যপ, কাশ্যপের ছেলে হিরণ্যকশিপু, হিরণ্যকশিপুর ছেলে প্রহ্লাদ, প্রহ্লাদের ছেলে বিরোচন, বিরোচনের ছেলে বলি, বলির ছেলে বাণাসুর। বাণাসুরের একহাজারটা হাত। বাণাসুর শিবের বরে ধরাকে সরা জ্ঞান করে চারদিকে অত্যাচার করে বেড়াচ্ছিলেন, এদিকে শিব বর দিয়ে রেখেছেন কোনও পুরুষ তাঁকে মারতে পারবে না। কাজেই নারী চাই, বলা বাহুল্য, ব্যবহৃত চলবে না, কুমারী হতে হবে। তখন সব দেবতার তেজটেজ  সংগ্রহ করে এই সারাহানের ভূমিতে এক দেবীর জন্ম হল, তিনিই ভীমকালী। সেই দেবী বাণাসুরকে বধ করলেন। মুণ্ডু কেটে মাটিতে পুঁতে দিলেন। সেই মুণ্ডুর ওপর ভীমকালী দেবীর মন্দির তৈরি হল।  (এর একটা ঢের কম রোমহর্ষক সংস্করণ পেলাম, সেটা হচ্ছে যুদ্ধ হয়েছিল বাণাসুর আর কৃষ্ণের বদলে কুলু আর বুশেহর রাজার মধ্যে। কুলু বুশেহর আক্রমণ করল, যুদ্ধে জিতে বুশেহর রাজা কুলু রাজার মুণ্ডু কেটে তার ওপর মন্দির বানালেন। কুলুর লোক রাজার মুণ্ডু ফেরত চাইল, বুশেহর তিনটে শর্ত দিল। এক, কুলু আর কোনওদিন বুশেহর আক্রমণ করতে পারবে না, দুই, শতদ্রুর ধারের অধিকৃত জমি ফেরৎ দিতে হবে, তিন, কুলুর দেবতা রঘুনাথকে বুশেহরে রেখে যেতে হবে।

টয় ট্রেন

Image
কালকা-সিমলা টয় ট্রেনে আমি ছোটবেলায় একবার চড়েছিলাম বাবার সঙ্গে, এবং খালি বাবার সঙ্গেই, মা যেন কাদের সঙ্গে বাসে করে পুরো রাস্তাটা গেছিলেন। এরকম অদ্ভুত ব্যবস্থা কেন হয়েছিল, আমি মা বাবা তিনজনেই এখন ভেবে মনে করতে পারছি না এবং তিনজনেই যারপরনাই অবাক হচ্ছি। আবার ওই একই ট্রেনে অর্চিষ্মান চড়েনি, কিন্তু নাকতলার মা চড়েছেন। এই সব অদ্ভুত অসাম্য দূর করার জন্য ঠিক হল টয় ট্রেনে সিমলা যাওয়া হবে। এখন, শুধু সিমলা গিয়ে আবার ফিরে আসা পড়তায় পোষায় না, তাছাড়া লোককে বলারও অসুবিধে। কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে, 'কী করলে?’ আর আমরা যদি বলি ‘এই তো ট্রেনে করে সিমলা গিয়ে আবার বাসে করে ফিরে এলাম’ তাহলে সবাই এমন মুখ করবে, করবেই, যেন আমাদের জন্ম বৃথা। বলবে, আহা ওই জায়গাটা গেলে না? দারুণ মিস করলে। এমন নয় যে সব কিছু দেখে এলেও লোকের মুখ বন্ধ করা সম্ভব। আমি নিশ্চিত ওয়ার্ল্ড টুর করে এলেও কেউ না কেউ থাকবে যার আমাদের ভ্রমণসূচী নিয়ে মতামত থাকবে। ওই জায়গাটায় গেলে না, বা গেলেও মোটে একদিন থাকলে, ওই মোড়টার ওই সিগন্যালটায় দাঁড়ালে না, সূর্যোদয় দেখলে, কিন্তু ওখানের তো সানসেটটাই ফেমাস ইত্যাদি। দ্বিতীয় বিপদটা প্রথমটার থেকেও ভয়ং

মঙ্গলবার পর্যন্ত

Image
উৎস গুগল ইমেজেস কখনও কখনও পরিস্থিতি এমন হয় যে সব কিছুর মধ্যেও সময় বার করে নেওয়ার আশা থাকে। আজ হল না, কাল হবে, কাল না হলে পরশু তো হবেই। আবার কখনও কখনও অতি বড় চাষার পক্ষেও আশাবাদী হওয়া পোষায় না।  যেমন এখন। চারদিকে যা চলছে, যা চলবে আগামী সাত দিন, (লিখতে গিয়ে হাত কাঁপল, কারণ সত্যিটা হচ্ছে গোটা বছরটাই) তার মধ্যে যদি নিজের সঙ্গে আর কাউকে বলি দেওয়া যায়, সে অবান্তর। বলি দেওয়াটা কখনও কখনও জিইয়ে রাখার থেকে কম বেদনার। আজও হল না, কালও হল না-র মধ্যে একটা অসহায়তা থাকে। সারাদিনের একমাত্র ভালোলাগার কাজ না করতে পারার কষ্ট থাকে। আর আমার মতো জন্মহিংসুটেদের ক্ষেত্রে, কই-আর-সবাই-তো-সবকিছু-পেরে-যাচ্ছে-তুড়ি-বাজিয়ে-আমি-একটা-ব্লগ-পর্যন্ত-চালাতে-পারছি-না জ্বলুনি ফাউ। তখন 'পারলাম না'-র গ্লানিটাকে 'পারতাম কিন্তু করলাম না'-র নির্মোহ উচ্চারণে পরিণত করা ছাড়া গতি থাকে না। 'প্রাইজ কেন পেলাম না'-র কাঁদুনির থেকে যেমন 'লাথি মারি তোর প্রাইজে' বলাটা বুদ্ধিমানের। 'সামনের সাত দিন আমি লিখতে চেয়েও পারব না'-র থেকে 'আগামী সাতদিন আমার ছুটি কাজেই পায়ে ধরে সাধলেও লিখব না

22 Never Asked Questions

কাল রাত বারোটার সময় কী করছিলেন? ঘুমোচ্ছিলাম আপনি যদি অন্য কেউ হতেন, এখন আপনি যিনি, তাঁর বন্ধু হতেন? পাগল? বক্রোক্তি ব্যবহার করেন? মনে মনে সর্বক্ষণ, মুখে যথাসম্ভব কম। কত বছর বয়সে সাইকেল চালাতে শিখেছিলেন? চার কিংবা পাঁচ।  ক্যারাটে জানেন? না।  শিস দিতে পারেন? না। তবে ক্যারাটে যেমন শিখতে চাই না, শিস দেওয়াটা শিখতে চাই।  নিজের ভাষা ছাড়া আর কোন ভাষায় অনর্গল হতে চান? বাঙাল ভাষায় কখনও ইন্ডিয়ান ফুড চেখে দেখেছেন? ইন্টারনেট থেকে প্রশ্ন টুকলে কী পরিণতি হয় সেটা দেখানোর জন্য এই প্রশ্নটা রাখলাম। একদিনের জন্য সবার সময় থেমে গেল, খালি আপনার ছাড়া। কী করবেন? ঘুমোব। আপনার জীবনের একটাই দিন বার বার পুনরাবৃত্তি হতে লাগল। কোন দিনটা হলে ভালো হয়? আজকের দিনটা। কারণ আজ রোববার। বৃষ্টি হওয়ার পর টেম্পারেচারও কম। আপনার ব্যক্তিগত নরক? যেখানে আমি একলা।  ব্যক্তিগত স্বর্গ? যেখানে আমি একলা।  আপনার সামনে এক নতুন জগতের প্রবেশপথ খুলে গেল। সে জগৎ সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন না, গেলে ফিরতে পারবেন কি না জানেন না, দরজা কতক্ষণ খোলা থাকবে জানেন না। কী করবেন? যেখানে আছি সে

Whether a little less might not have been better

কালকের পোস্টে প্রতিভাট্রতিভা নিয়ে আলোচনা করার পর আজই ব্রেইন পিকিংস -এ এই পোস্টটা পড়লাম। ওঁদের সাইট থেকে, আর ইন্টারনেটের খাঁজখোঁজ থেকে কুড়োনোবাড়ানো ট্যালেন্ট বনাম জিনিয়াস সংক্রান্ত কয়েকটা কোটেশন এই রইল। Talent is insignificant. I know a lot of talented ruins. Beyond talent lie all the usual words: discipline, love, luck, but most of all, endurance. — James Baldwin Genius gives birth, talent delivers. — Jack Kerouac The Man of Genius may at the same time be, indeed is commonly, an Artist, but the two are not to be confounded. The Man of Genius, referred to mankind, is an originator, an inspired or demonic man, who produces a perfect work in obedience to laws yet unexplored. The Artist is he who detects and applies the law from observation of the works of Genius, whether of man or nature. The Artisan is he who merely applies the rules which others have detected. There has been no man of pure Genius; as there has been none wholly destitute of Genius. — Henry David Thoreau Tale

উপস্থিত

গত ক’দিনে আমার গুগল সার্চ হিস্ট্রির কয়েকটা নমুনা হল এই Bailey’s 2017 Delhi temperature Utpalendu Satarupa Ministry of Petroleum and Natural Gas Shakira bellydancing Bijoli grill bangabhaban Ready to use plant soil buy online india How to find the energy to write after a work day কেউ বলেছেন চট করে ন্যাপ নিয়ে উঠে লিখুন, কেউ বলেছেন বাড়ি ফিরে জুতো খুলতে পারেন, মোজা খুলবেন না। মোজাতেই সব মোটিভেশন। কেউ বলেছেন বাড়ি যাওয়ার পথে মাঝপথে কফি শপে থেমে লিখুন। কিন্তু লিখুন, দোহাই আপনার। আমি সেই সব পড়েটড়ে লিখতে বসেছি। জানি না, কতখানি হবে, কারণ চোখ টানছে, খাট ডাকছে, আঙুল মাঝে মাঝেই উঠে নতুন ট্যাব খুলে সার্চ করছে। হাউ টু রাইট আফটার অ্যান এইট আওয়ার ওয়ার্ক ডে? হাউ মেনি ওয়ার্ডস টু রাইট? লোকে বলে লেখা যত ইন্টারেস্টিং, লেখার কথা তত ইন্টারেস্টিং নয়। আমি নিজে লেখার কথা পড়তে ভীষণ ভালোবাসি, কে কতক্ষণ লেখে, কখন লেখে, ঘণ্টা মেপে লেখে না শব্দ মেপে, নাকি মাপামাপি চুলোয় দিয়ে, এ সব জানতে আমার দারুণ কৌতূহল। মাইকেল ক্রিকটন নাকি সারাদিনে দশ হাজার শব্দ লিখতেন, স্টিফেন কিং দু’হাজার, আর্থার কোন

সাতচল্লিশ

শাটার সিনেমাটা দেখেছেন? অরিজিন্যাল থাই কিংবা অ্যামেরিক্যান রিমেক? যারা দেখেননি এবং দেখতে চান এবং স্পয়লারে আপত্তি আছে, তাঁরা এইবেলা চোখ বন্ধ করুন। নেক্সট অনুচ্ছেদ থেকে পড়তে চাইলে পড়তে পারেন। যারা এখনও চোখ খুলে আছেন, তাঁদের জন্য আরেকবার গল্পটা বলি বা মনে করিয়ে দিই। একটি ফোটোগ্রাফার ছেলের জীবনে নানারকম গোলযোগ ঘটতে শুরু করে। তার তোলা ছবিতে নানারকম ভূতুড়ে আলো দেখতে পাওয়া যায়, অন্ধকার রাস্তায় গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় সামনে রাস্তায় রহস্যময় নারী লিফট চায়। এ সবই হরেদরে হরর ছবিতে থাকে, এ নিয়ে উত্তেজনার কিছু নেই। ইন্টারেস্টিং হচ্ছে অন্যান্য ভৌতিক উপসর্গগুলো। ছেলেটির কাঁধে ক্রমাগত ব্যথা হয়, ছেলেটির কাঁধ ক্রমশ ঝুঁকে যায়। ওজন মেশিনে উঠলে যা নম্বর দেখায় ওইরকম রোগাপ্যাংলা ছেলের অত ওজন হতেই পারে না। ছবির শেষে জানা যায় অতীতে ছেলেটি একটি পাপকাজ করেছিল, সে পাপের ভূত আক্ষরিক অর্থেই ছেলেটির কাঁধে চেপে বসে আছে, আর সেই ভারে ছেলেটি ক্রমশ বেঁকে যাচ্ছে।  গত ক’দিন আমার অবস্থাটা হয়েছে অনেকটা সেইরকম। আমার বয়স বাড়ছে সেকেন্ড মিনিট ঘণ্টা মেপে যেমন বাড়ে, কিন্তু আমার কাঁধের বয়স যেন বাড়ছে একেক লাফে দশ বছর। অন্য কেউ দ

পাঁচিল

মূল গল্পঃ The Railings লেখকঃ Ronald Frame ***** ছেলেটার ঘরের জানালা দিয়ে পাঁচিলটা দেখা যেত। প্রায় দু’মানুষ উঁচু, তার ওপর একহাত লম্বা কাঁটাতারের বেড়া। ঐকিক নিয়মের অংক কষতে কষতে, ইতিহাসের সনতারিখ মুখস্থ করতে করতে, কম্পাসের কাঁটা পাতার মাঝখানে বিঁধিয়ে বৃত্ত আঁকতে আঁকতে মনঃসংযোগ হারিয়ে মুখ তুলে তাকালেই ছেলেটা পাঁচিলটা দেখতে পেত। রান্নাঘরের জানালা, চিলেকোঠার জাফরি,  ঠাকুরঘরের ঘুলঘুলি থেকেও দেখা যেত পাঁচিলটা। অটল প্রহরীর মতো বাড়ি ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। রক্ষা করছে।  রক্ষা করার মতো কিছু নাকি ছিল একসময়। কোথায় ছিল সে নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলে তিনতলার বড়ঘরের সিন্দুকটায়, এখন যার দরজা খুললেই ন্যাপথলিনের দমবন্ধ গন্ধের ঝাপট, আর যার গায়ে সাঁটা আয়নাটার সামনে হিসেব করে দাঁড়াতে পারলে কপালের ঠিক মাঝখানটায় তৃতীয়নয়নের মতো কমলা রঙের ছোপ, তার ভেতর নাকি ছিল সাত রাজার হিংসে করার মতো ষড়ৈশ্বর্য। কেউ বলে, ছিল চিলেকোঠায়, যার প্রতিটি ঘুলঘুলিতে এখন পায়রার বাসা, বুকবুক আওয়াজে কান পাতা যায় না। আবার কেউ বলে এসবের কোথাও না, ছিল আসলে পাঁচিলের ধারের ওই মরা জামরুল গাছের গোড়ায়। কালিচোষা তুলোট কাগজে সংকেত লেখা

গত সাত বছরে

কাল চিরাগ দিল্লির সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আমি সেই কাজটা করলাম, যেটা দু’হাজার নয়ের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই দুহাজার ষোলোর মে মাস পর্যন্ত, গত সাত বছরে কখনও করিনি।  বললাম, “একটা পোস্টের আইডিয়া দাও না গো।” ও-কারের শেষটুকু ঠোঁট ছাড়ার আগেই সম্বিত ফিরল। এটা আমি কী করলাম! অবান্তরের সবথেকে অপরিহার্য নিয়মটাই ভেঙে ফেললাম? গত সাত বছরের শীত গ্রীষ্ম বর্ষা বসন্ত পেরোতে পেরোতে একটিই সত্যকে আমি ধ্রুব রাখতে চেয়েছি। অবান্তরকে ‘টিমওয়ার্ক ফ্রি’ জোন রাখতে চেয়েছি। অফিসে, সংসারে, উবারপুলে, টিমওয়ার্ক যত বুকের ওপর চড়ে গলা টিপে ধরেছে তত আমি প্রাণ পণ করেছি অবান্তরকে রাহুমুক্ত রাখার। অবান্তর আমার ছাগল, তাকে আড়ে কাটব না বহরে কাটব শুধু আমার এক্তিয়ার। আমার একার ক্ষমতায় যতটুকু কুলোবে, যেমন কুলোবে, অবান্তর ততটুকুই, তেমনই চলবে।  কিন্তু সত্যি সত্যি কি টিমওয়ার্ক ছাড়া কিছু দাঁড়ায়? পোস্ট আর কমেন্টের যুগলবন্দী ছাড়া ব্লগ কী? তাহলে আর ইন্টারনেটে কেন, ডায়রি কিনে মনের কথা লিখলেও হয়। অ্যাকচুয়ালি তাও হয় না, আমার কোটি কোটি ডায়রির সবগুলোই কোনও না কোনও সময় কারও না কারও হাতে পড়েছে। বেস্ট হয় মনের কথা মনেই রেখে দিতে পারলে।