পাঁচিল
মূল গল্পঃ The Railings
লেখকঃ Ronald Frame
*****
ছেলেটার ঘরের জানালা দিয়ে পাঁচিলটা দেখা যেত। প্রায় দু’মানুষ উঁচু, তার ওপর একহাত লম্বা কাঁটাতারের বেড়া। ঐকিক নিয়মের অংক কষতে কষতে, ইতিহাসের সনতারিখ মুখস্থ করতে করতে, কম্পাসের কাঁটা পাতার মাঝখানে বিঁধিয়ে বৃত্ত আঁকতে আঁকতে মনঃসংযোগ হারিয়ে মুখ তুলে তাকালেই ছেলেটা পাঁচিলটা দেখতে পেত। রান্নাঘরের জানালা, চিলেকোঠার জাফরি, ঠাকুরঘরের ঘুলঘুলি থেকেও দেখা যেত পাঁচিলটা। অটল প্রহরীর মতো বাড়ি ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। রক্ষা করছে।
রক্ষা করার মতো কিছু নাকি ছিল একসময়। কোথায় ছিল সে নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলে তিনতলার বড়ঘরের সিন্দুকটায়, এখন যার দরজা খুললেই ন্যাপথলিনের দমবন্ধ গন্ধের ঝাপট, আর যার গায়ে সাঁটা আয়নাটার সামনে হিসেব করে দাঁড়াতে পারলে কপালের ঠিক মাঝখানটায় তৃতীয়নয়নের মতো কমলা রঙের ছোপ, তার ভেতর নাকি ছিল সাত রাজার হিংসে করার মতো ষড়ৈশ্বর্য। কেউ বলে, ছিল চিলেকোঠায়, যার প্রতিটি ঘুলঘুলিতে এখন পায়রার বাসা, বুকবুক আওয়াজে কান পাতা যায় না। আবার কেউ বলে এসবের কোথাও না, ছিল আসলে পাঁচিলের ধারের ওই মরা জামরুল গাছের গোড়ায়। কালিচোষা তুলোট কাগজে সংকেত লেখা ছিল, কারা যেন খুঁজে পেয়ে খুঁড়ে নিয়ে চলে গেছে।
মোট কথা, এখন আর পাহারা দেওয়ার মতো কিছু নেই। তবু পাঁচিল আছে, তারকাঁটাসহ। কী পাহারা দিচ্ছে কে জানে। সম্ভবত আব্রু। ষড়ৈশ্বর্য গেছে, রেখে গেছে আব্রু। আব্রু সবার থাকে না। যাদের থাকে তাদের তা যত্নে রক্ষা করতে হয়। পাঁচিলের বাইরে মাঝে মাঝে বেরোতেই হয়, না বেরোলে চলে না, তখন দেখেছে ছেলেটা, সত্যি, সবার বাড়িতে পাঁচিল নেই। বেশিরভাগেরই রাস্তার সঙ্গে ঘর মিশে গেছে, কোনও পাঁচিল নেই, কাঁটাতারও না। থাকার দরকারও নেই। ওদের কোনওদিন ষড়ৈশ্বর্য ছিল না, আব্রুও না।
এই বেআব্রু লোকগুলোকে পাঁচিলের ভেতরের লোকজন পছন্দ করত না। ছেলেটা জন্মে থেকে দেখছে এই বেআব্রু লোকগুলো। জামরুল গাছের নিচে পোঁতা সোনার মোহরের মতো সে স্বর্গেরও শুধু গল্পই শুনেছে ছেলেটা, যখন এরা ছিল না। পদে পদে আব্রু খোয়াবার ভয়ও ছিল না। তারপর একদিন রেলস্টেশন আর স্টিমারঘাট আর তারকাঁটাহীন মাঠঘাট পেরিয়ে পিলপিল করে এসে ঢুকল এরা, যেখানে পারল খুঁটি পুঁতে বসে পড়ল। এ বাড়ির আব্রুও যেত, যদি না পাঁচিলটা থাকত।
পাঁচিলটা কিন্তু রইল না আর বেশিদিন। সরলের সিঁড়ি ভেঙে ততদিনে ত্রিকোণমিতিতে কিশোর, খবর এল, পাকা রাস্তা যাবে। ওই বেআবরু বাড়িগুলোর বারান্দার ওপর দিয়ে, আর এই পাঁচিলের ওপর দিয়েও। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে সবাইকে। পাঁচিলের এপারের লোকগুলো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। সরকারি আদেশ বুঝিয়ে কাগজের তাড়া গুছিয়ে উঠে পড়ার আগে সে দৃষ্টির অর্থ উদ্ধার করতে না পেরে ঘেমো শার্ট, কেঠো চোয়াল জিজ্ঞাসা করল, “কিছু বলবেন?”
কী বলবে? বললেই বা কী বুঝবে এসব লোকেরা, আব্রু যাদের ছিলই না কোনওদিন? ক্ষতিপূরণ তো জমির, পাঁচিল গেলে আব্রু যে চিরকালের মতো উদোম হয়ে যাবে, সে ক্ষতি পূরণ করবে কে? কী দিয়ে?
কিশোর দাঁড়িয়ে ছিল পড়ার ঘরের জানালায় যখন গাঁইতি, হাতুড়ি নিয়ে ওরা এল। পাঁচিলের গোড়ায় বাড়ি পড়ল, ঠাঁই ঠাঁই ঠাঁই। পাঁচিল প্রথমে অটল রইল। মনে হতে লাগল, লড়াই নিতান্ত একপেশে। ওদের লোহার হাতুড়ি শাবল যেন শোলার খেলনা। তারপর ক্রমে পাঁচিল টলতে শুরু করল, প্রতিটি আঘাত যেন একেকটা আর্তনাদ, বাড়ি কেঁপে কেঁপে উঠল, সারাবেলার যুদ্ধের পর শেষ আব্রুটুকু উজাড় করে দিয়ে পাঁচিল ঝুরঝুর করে ধসে গেল।
পাঁচিলের ওপাশে দাঁড়িয়ে ছিল ছেলেটা। কিশোরেরই বয়সী কিন্তু ওর থেকে অনেক বেশি সুঠাম আর শক্তিশালী। হাতের গাঁইতিটা নিশ্চয় ভীষণ ভারি, অথচ ছেলেটার হাতে ঘাসের মতো পোষ মানা। ছেলেটার ঊর্ধ্বাঙ্গে কোনও আবরণ নেই। কালো চামড়ার নিচে পেশির ঢেউ। গাঁইতি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দু’হাত কোমরের দু’পাশে রেখে সম্রাটের মতো দাঁড়াল ছেলেটা। সারা গা চকচক করছিল ঘামে, কপালের ওপর পড়া চুল ধুলোয় ধূসর। পাঁচিলের ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকিয়ে ছেলেটা হাসছিল। ধপধপে দাঁত। ঝকঝকে হাসি।
জানালার পাশে সেদিন থেকে ঘনঘন এসে দাঁড়াত কিশোর। ছেলেটা কোদাল দিয়ে ভাঙা ইটের টুকরোগুলো তুলত ঝুড়িতে, মাথায় চাপিয়ে ফেলে দিয়ে আসত অদূরে দাঁড়ানো টেম্পোয়। মাথা ঝাঁকিয়ে, সারা শরীর কাঁপিয়ে হাহা করে হাসত ছেলেটা, বাগান পেরিয়ে, পাইপ বেয়ে, কার্নিশে পা রেখে সে দুরন্ত হাসি জানালা টপকে ঢুকে যেত কিশোরের কানে। শেষ ঝুড়ি পাঁচিলের ইট যেদিন উঠে গেল টেম্পোয়, সেদিন কিশোর সারাদিন দাঁড়িয়ে রইল জানালার দিকে, বার বার গুঁড়ো গুঁড়ো কী সব ঢুকে যাচ্ছিল ওর চোখে, চোখ জ্বালা করছিল। ছেলেটা পাঁচিলের শেষ টুকু ঝুড়িতে নিয়ে টেম্পোতে তুলে দিয়ে এল। চেঁচিয়ে বলল, “আসছি।” তারপর রাস্তা তৈরি করার জন্য এনে রাখা নতুন ইটের পাঁজার ওপর থেকে হাত বাড়িয়ে শার্ট নিয়ে পরতে পরতে, এই প্রথমবার, পূর্ণদৃষ্টিতে তাকাল জানালার দিকে। কিশোরের ইচ্ছে হল দৌড়ে পালায়, কিন্তু ছেলেটার বড় বড় চোখদুটো যেন বঁড়শি, বিঁধে গেছে ওর বুকের ভেতর। টেম্পো স্টার্ট দিয়ে দিয়েছে ওদিকে, দৌড়ে চলে যেতে যেতে আরেকবার পেছন ফিরে তাকাল ছেলেটা।
*****
বাড়ির লোক ছবি এনে দিলেন। ভাবলেশহীন চোখ বোলাল যুবক। ছবি থেকে একটি মেয়ে, সমান ভাবলেশহীন চোখে ওর চোখে চোখ ফেলে রইল। চোখ দেখে যুবকের সন্দেহ হয়েছিল, অন্যেরা সে সন্দেহ নিরসন করল। মেয়েটাও একটা উঁচু পাঁচিলের ওপারে বড় হয়েছে। রাজযোটক, বলল সবাই।
ছবির মিছিল চলছিল বছরকয়েক ধরেই, যুবক এড়িয়ে যাচ্ছিল। প্রথম প্রথম এই এড়িয়ে যাওয়াটাকে প্রশংসার চোখে দেখত সবাই। বলত, জানা ছিল আগেই, ও অন্যদের থেকে আলাদা। কিন্তু বারবার এড়াতে এড়াতে কারও কারও মনে প্রশংসার ভেতর একটা সন্দেহ কাঁটার মতো জেগে উঠছে, টের পাচ্ছিল যুবক। তবে কি যেটা আড়ালেআবডালে সন্দেহ করা হয়েছে তা-ই? ও কি সত্যি আলাদা অন্যদের থেকে? ওর তাকানো, ওর দাঁতে নখ কাটার অভ্যেস, ‘স’ উচ্চারণ করার সময় ওর ঠোঁটের একটা বিশেষ ভঙ্গিতে বেঁকে যাওয়া, অবিকল ওর পিসতুতো বোনের মতো, যার সঙ্গে ছোটবেলায় পুতুল খেলে ওর বেশিরভাগ সময় কেটেছে? যুবক সতর্ক হল। আর দেরি করা উচিত হবে না।
সেন্টের গন্ধ আর চেলির খসখস আর ডেকোরেটরের ফ্যানের ঝড়ের মতো গরম হাওয়ার ঘূর্ণির মধ্যে বসিয়ে এক বৈশাখের গোধূলিতে যুবকের হাতের ওপর সেই ভাবলেশহীন মেয়েটির হাত, যার নাম, যুবক জেনেছে, জবা, স্থাপন করে দেওয়া হল। জবার আংটির কানা বিঁধছিল যুবকটির হাতে। গরমে, ভয়ে, ঘেমে যাচ্ছিল যুবকের হাতের তালু, ইচ্ছে করছিল এক্ষুনি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে এই সব দড়িদড়া খুলে দৌড়তে, কিন্তু বাস্তবে যুবক কাঠের মতো বসে রইল কল্কা আঁকা পিঁড়িতে, আর পুরোহিত মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে দুজনের দুটি হাত, বেশ করে বেঁধে দিলেন।
পরদিন সকালে, কিংবা সন্ধ্যেয়, যুবকটি ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল ততক্ষণে, একদল শ্যালিকা হাসিতে গড়িয়ে পড়তে পড়তে, বয়স্কা আত্মীয়াদের ঠোঁটচাপা চোখটেপা প্রশ্রয়ে এগিয়ে এসে যুবকটির হাতে গুঁজে দিল পাঁচটি ফলের বীজ। বলল, এই নাও, ভালো করে বুনে দিও জমিতে। আবার হাসি। যুবকের গরম হয়ে যাওয়া কানের পর্দায় খনখন করে সে হাসি বাজল।
যথাসময়ে বীজ থেকে ফল হল। এ বাজারে কেউ পাঁচটা ফল আশা করে না, একটির পরই সবাই শান্ত হল। তাছাড়া ভাগ্যদেবী মুখ তুলে চাইলেন, প্রথম দানেই ছেলে উঠল, দ্বিতীয় সন্তানের প্রত্যাশা বা জোরাজুরি কেউ করল না। দায়িত্ব সেরে, সকলের চোখের আড়ালে দাম্পত্যবিছানা থেকে নিজের বালিশখানা নিয়ে সরে পড়ল লোকটা।
*****
উড়ো ফোনের খবরে, শহরের এক ঘিঞ্জি গলির এক ঝুরঝুরে বাড়ির সারি সারি ঘরের একটার দরজা লাথি মেরে ভেঙে বুড়োটার চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলল পুলিস। বুড়োটার নিচে চাপা পড়ে ছিল একটা অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক। যে অফিসার রেডের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, ঠিক ওই বয়সী তাঁর একটা ছেলে আছে বাড়িতে। ছেলের সামনে উচ্চারণ করার কথা কল্পনাও করতে পারেন না, এরকম একটা অশ্রাব্য গালি দিয়ে অফিসার তাঁর পালিশ করা বুট বিঁধিয়ে দিলেন বুড়োটার পাঁজরে। তাঁর লোকেরা কাতরাতে থাকা বুড়োটাকে কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে জালঘেরা ভ্যানে তুলে দিল।
সবাই অবশ্য এই অফিসারের মতো হয় না, কারও কারও মনে দয়ামায়া থাকে। যেমন বিচারের পর বুড়ো যে জেলে এল সেখানকার ভারপ্রাপ্ত অফিসার। কলেজে তাঁর পাসে সাইকোলজি ছিল। শান্ত, নিরীহ, ভীতু বুড়োটাকে দেখে তাঁর দয়া হল। ক্রিমিন্যাল টাইপ নয়। বুড়োটা যখন বাগানে কাজ করত, তখন তিনি মাঝে মাঝে বুড়োটার কাছে যেতেন। বুড়োটা ভয় পেয়ে দ্বিগুণ জোরে মাটি কোপাতে লাগত, তিনি অভয় দিতেন। বুড়োটার সঙ্গে গল্প করতেন। বলতেন, এই যে এইসব অপরাধ, যে অপরাধে বুড়োটা ধরা পড়েছে, সেগুলোর দায় আসলে দোষীদের নয়। এর বীজ পোঁতা হয় অনেক শুরুতে, অনেক গভীরে। বুকের মধ্যে রুদ্ধ কামনার ফেনা জমতে জমতে একদিন ফেটে বেরোয়। আমাদের দেশে তো সচেতনতা নেই, বলতে বলতে তাঁর মুখে আফসোসের ছায়া ঘনাত, না হলে কাউনসেলিং-এ সব সারে। বুড়োটাকে উৎসাহ দিতেন অফিসার। বলতেন, এখনও সময় আছে, শুধু মন খুলে দিতে হবে। চেতন অবচেতনের মাঝের পাঁচিল ভেঙে দিতে হবে।
মনস্তত্ত্বের ক্লাস শেষ করে অফিসার ফিরে গেলে বুড়োটা হাতের খুরপি রেখে জিরোত। জেলের বাগানের কোণে একটা জামরুল গাছ, তার ছায়ায় বসে গামছা নেড়ে ঘাম শুকোত। চোখ লেগে আসত কখনও কখনও। আধোঘুমে বুড়োটা স্বপ্ন দেখত কাঁটাতারের বেড়াওয়ালা একটা উঁচু পাঁচিলের। জীবন্ত। স্বপ্নে পাঁচিলটা ক্রমশ উঁচু হতে থাকত, উঁচু আরও উঁচু, আরও উঁচু। ঘাড় ব্যথা হয়ে যেত বুড়োর, তবু মাথা দেখতে পেত না। পাঁচিলের ওধারে একটা ঘামচপচপে কালো ছেলে, একলা একটা শাবল নিয়ে পাঁচিলটার গায়ে শুধু অক্লান্ত বাড়ি মেরে চলত, ঠাঁই, ঠাঁই, ঠাঁই…
Golar kachh ta byatha byatha kore uthlo. Boddo bhalo hoyeche eta.
ReplyDeleteওহ, থ্যাংক ইউ, বিম্ববতী। আমার খুব টেনশন হচ্ছিল কেন যেন। তোমার কমেন্টটা বাঁচিয়ে দিল। থ্যাংক ইউ।
Deletekono bhabei comment korte parchilamna sakal theke...kudos to you emon ekta domain e lekha r jonyo...khub Bhalo laglo...- Bratati.
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, ব্রততী।
Deleteকুন্তলা কি লিখবো বুঝতে পারছি না. বড়ো ভালো হয়েছে লেখাটা, অনেকক্ষন ভাবালো।
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, চুপকথা।
DeleteKhub bhalo laglo Kuntala.
ReplyDeleteNiyom kore podi tomar lekha. Shomoy pele ma-ke porey shonai. Shudhu comment kora hoye othena :(
আরে সোমনাথ, থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।
Deleteদারুণ দারুণ দারুণ কুন্তলাদি।এবারে এই অনুবাদগুলো নিয়ে একটা বই হোক।আর আমার এক পরিচিত ভদ্রলোক, নাম সোমেন বসু, আপনাকে এই গল্পটার ব্যাপারে একটু যোগাযোগ করবেন। এখানে কমেন্ট করতে বলেছি
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, ঋতম। সোমেনবাবুর অপেক্ষায় রইলাম।
Deleteদিদি। আমিই সোমেন। আপনার মেল আইডি কি অন্য কোনও যোগাযোগের মাধ্যম পাওয়া যাবে? একটু দরকার ছিল....
ReplyDeleteনমস্কার, সোমেন। আমাকে আপনি নিচের মেল আইডি তে মেল করতে পারেন।
Deleteabantorprolaap@gmail.com
অনেক ধন্যবাদ। করছি একটু পরেই...
DeleteVishon valo laglo.
ReplyDeleteধন্যবাদ, সুহানী।
Delete