Posts

Showing posts from 2023

পুরী ৪ঃ চিলিকা

তখন অলরেডি প'নে দশটা বাজে। খুব দৌড়ে হোটেলে ফিরে চুল আঁচড়ে বেরোতেও সাড়ে দশটা বেজেই যাবে। বিশ্বনাথের মতে সাড়ে দশটায় বেরোলে আরামসে চিলিকা প্যাকেজ সেরে সন্ধের আগেই ফিরতে পারব। আড়াইঘণ্টার মোটে রাস্তা। যেতে আসতে আড়াই আড়াই পাঁচবার চা খাওয়ার জন্য থামলেও । এদিকে বাবা বলছে, চিল্কা প্যাকেজ টুরের বাস নাকি সকাল সাতটায় বেরিয়ে যায়। দশ মিনিট পর জানাচ্ছি বলে বিশ্বনাথের ফোন ছাড়লাম। গল্পের খেই ছিঁড়ে গেছে। বসে বসে চিলিকা যাওয়ার প্রোস অ্যান্ড কনস ভাবছি। বললাম, একটা প্রোস হচ্ছে যে সেই ছোটবেলা থেকে এতবার পুরী এসেছি একবারও চিল্কা দেখিনি, দেখা হয়ে যাবে। অর্চিষ্মান বলল, অ্যাঁ! চিল্কা দেখোনি মানে কী? সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেল। ছোটবেলা থেকে চিল্কা বলে এসেছি, এখনও চিলিকার থেকে চিল্কা শব্দটাই আমার বেশি সুন্দর লাগে। যেমন ডেঙ্গির থেকে ডেঙ্গু । যেমন মান্যতার থেকে স্বীকৃতি। কিন্তু সে তো আমার এখনও প্লুটোকে গ্রহ ভাবতে ভালো লাগে। তা বলে তো আর সময়ের দৌড়ে পিছিয়ে পড়া যায় না। সেই বাবদে এবার থেকে চিল্কাকে চিলিকাই বলব। পূর্ণচন্দ্র এলেন গাড়ি নিয়ে। বেড়াতে যাওয়ার সময় আমাদের শরীর থেকে প্রোক্র্যাস্টিনেশনের সমস্ত চিহ

পুরী ৩ঃ কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই

পুরীর বিচে সূর্যোদয় দেখার আনন্দ যারা দেখেছে সবাই জানে। সে আনন্দের জন্য অ্যালার্ম দিয়ে উঠতে আমার আপত্তি নেই। এদিকে অর্চিষ্মানের মতে পুরীর বিচের পাঁচশো মিটারের মধ্যে শুয়ে, অ্যালার্ম বন্ধ করে যতক্ষণ ইচ্ছে ঘুমোনোর আনন্দও কম নয়। একসঙ্গে থাকতে থাকতে দুটো লোক একে অপরকে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করে। বদলায়। যার ব্যক্তিত্বে পাপোষভাব প্রবল, স্বাভাবিকভাবে তার বদলই বেশি ঘটে। কাজেই আমিও আজকাল অ্যালার্ম দিয়ে উঠে সূর্যোদয় দেখতে বেরোনোর বদলে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোনোই প্রেফার করি। যদিও ওই তীব্রতা এবং ফ্রিকোয়েন্সির ট্রাকের হর্নের মধ্যে অর্চিষ্মানের পক্ষেও ঘুমোনো অসম্ভব। চা খেয়ে বেরোলাম। হোটেলের সামনে স্নানের ধুম। ঢেউয়ের থেকে মানুষ বেশি। লোকের মজা যে সংক্রামক, সে নিয়ে ইউটিউব রিল দেখেছি। নিউ ইয়র্ক সাবওয়েতেই হবে, কারণ সব রিল ওখানেই শুট হয়। একটা স্টেশন থেকে একজন পেশাদার অভিনেতা মোটামুটি ফাঁকা একটা ট্রেনে উঠলেন। উঠে উল্টোদিকের দরজার কাছে চলে গেলেন তারপর কানে এয়ারপড গুঁজে ফোন স্ক্রোল করতে শুরু করলেন। এই পর্যন্ত কোনও বিস্ময় নেই। তারপর ভদ্রলোক হাসতে শুরু করলেন। যেমন আমরা হাসির রিল দেখে হাসি। আমাকে জোর করে হাসতে বললে

পুরী ২ঃ অর্চিষ্মানের সঙ্গে দেখা

পান্থনিবাসকে গাল পাড়লাম, পুরী হোটেলেও কেউ ফোন তুলছিলেন না। অর্চিষ্মানের কাছে কাঁদুনি গাইতে গেলাম, সে 'ওরে বাবা কুন্তলা এখন টাইম নেই, পরে দেখছি' বলে কাটিয়ে দিল। তক্ষুনি বাবা ফোন করলেন। ভালনারেবল্‌ মোমেন্টে বেরিয়ে পড়ল। এই তো পুরী যাব ভাবছি, এদিকে কোথাও ঘর নেই। চেনা অনেক বাবা এই তথ্যটাকে জাস্ট একটা তথ্য হিসেবে নেবেন। নৈরাশ্যবাদী বাবা হলে বলবেন, এত ঘনাঘন বুকিং করে যাওয়া যায় নাকি? আশাবাদী বাবা হলে বলবেন, চেষ্টা করতে থাক, পেয়ে যাবি নিশ্চয়। গীতা পড়া বাবা হলে বলবেন, চেষ্টা করার কর, পেলে যাবি, না পেলে যাবি না। আমার বাবা এই টাইপের নন। আমার মাও এই টাইপের ছিলেন না। আমার মা হ্যান্ডস্‌ অন মা এবং হ্যান্ডস্‌ অন শাশুড়ি ছিলেন। একবার অর্চিষ্মানের জন্ডিসের খবর পেয়ে মা গোটা আষ্টেক বাতাবিলেবু পৌঁছতে আজকের ট্রেনে দিল্লি এসে কালকের ট্রেনে আবার ফিরে গিয়েছিলেন। বাবা মায়ের মতো বাড়াবাড়ি করেন না। বাবা আমার জীবনের বাছাবাছা ক্ষেত্রে হ্যান্ডস্‌ অন। পড়াশোনা, কেরিয়ারের ক্ষেত্রে একেবারেই হ্যান্ডস্‌ অফ। সেই অ আ ক খ স্টেজ থেকেই। কেন, সে নিয়ে অবচেতনে কোনও ব্যাখ্যা তৈরি হয়েছিল নিশ্চয়। এক বিরল দিনে বাবা বাড়ি

তেতাল্লিশ

Image
অনেকটা মেরে আনা গেছে। আলোকচিত্রীঃ অর্চিষ্মান মিত্র

পুরী ১ঃ সদাশিবের সঙ্গে দেখা

অর্চিষ্মানের কনফারেন্স শেষ হতে বেলা চারটে বাজবে (পরে ছ’টা দাঁড়াল)। সকালের ফ্লাইটে ভুবনেশ্বর পৌছে এয়ারপোর্টে বসে বোর হওয়া যায়। অর্চিষ্মানের হোটেলে পৌছে বোর হওয়া যায়। 'আমার বউ এসে আমার ঘরে কয়েকঘণ্টা থাকবে' বলতে অর্চিষ্মানের প্যালপিটেশন হলে অন্য হোটেলে বসে বোর হওয়া যায়। নয়তো সোজা পুরী চলে গিয়ে বোর হওয়া যায়। বোরডমের সঙ্গী হিসেবে হোটেলের টিভিতে সি আই ডি-র থেকে সমুদ্র বেটার। সোজা পুরীই যাওয়া স্থির করলাম। পান্থনিবাসেই খোঁজ নেওয়া হয়েছিল প্রথমে। ওয়েবসাইট খুলল না। ফোনও তুললেন না কেউ। গিয়ে দেখলাম ওঁদের একটা গোটা উইং সারানো হচ্ছে। বাকি উইং ফুল। অর্চিষ্মান সমুদ্রতটস্থিত অন্যান্য হোটেলের সাজেশন দিয়েছিল, আমি বললাম, পুরী হোটেল। এমন ভাবে বললাম যাতে অর্চিষ্মান বুঝতে পারে যে এটাই শেষ কথা। এত হোটেল থাকতে পুরী হোটেল কেন সেটা রহস্য আবার রহস্য নয়ও। সে রহস্যের চাবিকাঠি রয়েছে, সব রহস্যের চাবিকাঠিই আজকাল যেখানে পাওয়া যাচ্ছে, শৈশবে। লোকে মাধ্যমিকে ছড়াচ্ছে, অফিসে ধ্যাড়াচ্ছে, সম্পর্কটমপর্কের দিকে তো তাকানো যাচ্ছে না, সব পোস্ট-শৈশব ট্রমা সিন্ড্রোম। যত গ্যাঁড়াকল বাবামা পাকিয়ে রেখেছেন। বিশেষ করে মা।

দশম অবতার ও রক্তবীজ

*স্পয়লার আছে। স্পয়লার ছাড়া কিছু নেই।* দশম অবতার শহরে সিরিয়াল কিলিং হচ্ছে। সিরিয়াল কিলার যীশু। যীশুকে ধরতে নেমেছেন বড় পুলিস প্রসেনজিৎ, বাংলাসিনেমার আইকনিক থ্রিলারের আইকনিক অ্যান্টিহিরো প্রবীর রায়চৌধুরী। সঙ্গে নিয়েছেন মেজ পুলিস অনির্বাণকে, যিনি বাংলাসিনেমার অতটাও আইকনিক নয় থ্রিলারের ততটাও আইকনিক নন দারোগা বিজয় পোদ্দার। যিনি ভিঞ্চিদা-র কেসে ভিঞ্চিদাকে ধরতে অক্ষম হলেও সত্যিটা ফিগার আউট করে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। সকলেই দেখতে পাচ্ছে যীশু খুনগুলো করছেন, কাজেই হু নিয়ে কোনও ডাউট নেই। হাউ-ও ক্লিয়ার। কয়েকটা খুন রিয়েলটাইমে দেখানো হয়েছে। হোয়াই-ও না বোঝার কিছু নেই। সমাজের ময়লা পরিষ্কার হচ্ছে। মাঝে মাঝে সাদাকালোতে এক ভদ্রলোক একটি বাচ্চাকে দশাবতারের গল্প শোনাচ্ছেন, বাচ্চাটির মুখের সঙ্গে যীশুর মুখের মিল আছে, কাজেই খুনের আন্ডারলায়িং দশাবতারের অ্যাংগলটাও দর্শক ধরে ফেলেছেন। দর্শক ধরে ফেলবেন আর প্রসেনজিৎ পারবেন না তা তো আর হয় না। বাইশে শ্রাবণে বাংলা কবিতায় প্রসেনজিতের বুৎপত্তি দেখে বাঙালি টলে গিয়েছিল, দশম অবতারে হিন্দু পুরাণ নিয়ে এক্সপার্টাইজে হিলে যাবে। স্পটে পড়ে থাকা পুঁতির মালা, খুনের অস্ত্

পুজো ২০২৩

সপ্তমী কোঅপারেটিভ প্যান্ডেলে প্রতি বছর বিজলী গ্রিল স্টল দেয়। আজ বিলম্বিত ব্রেকফাস্টে রাধাবল্লভী ওখানে খাব। তারপর কিছু কেনাকাটি আছে। নিজেদের, তার থেকেও জরুরি দুটো বাচ্চার জামা কেনা। এত খারাপ প্ল্যানিং আমাদের যে পুজোর আগে কিনে ওঠা যায়নি। কোঅপারেটিভের প্যান্ডেল খুবই কায়দার আর জমকালো (সি আর পার্কের তুলনায় কায়দার, কলকাতার তুলনায় নয়) কিন্তু আমাদের ঠিক ফ্যামিলিয়ার ফিল হয় না। তা বলে বাদ দেওয়া যায় না। সারাবছর তো নিজেদের ফিলিংসকে প্রাধান্য দিয়েই মরলাম, এই ক’দিন মাদুর্গা অ্যান্ড কোম্পানির ফিলিংসকে প্রাধান্য দিয়ে ঘোরাঘুরি করা দরকার। প্রতিমার সামনে ভিড়। নর্ম্যাল সময় ভিড় দেখলে দৌড়ই, কিন্তু এই কদিন ভিড় দেখতে বা ভিড়ের অংশ হতেই রাস্তায় বেরোনো। ফাঁক গলে গলে যথাসম্ভব সামনে গেলাম। মাথায় নতুন গামছা বেঁধে ঠাকুরমশাই পুজো করছেন। কাকিমাজেঠিমারা (অর্থাৎ আমার বয়সীরা) শাড়ির ওপর নতুন গামছা পেঁচিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। তাঁদের একজনকে ঠাকুরমশাই বলছেন, অমুকটা জোগাড় আসতে বলুন, না হলে নাকি ওঁর মনে শান্তি হচ্ছে না। না হওয়াই স্বাভাবিক। পৃথিবীর কোনও পুজোর আয়োজনেই কোনও পুরোহিতের কোনওদিন শান্তি হয় না। মাইকে টোকা পড়ল