Posts

Showing posts from 2023

তাওয়াং ৫ঃ বুম লা

Image
যে কোনও লা-এর পর পাস বলা ‘চায় টি’ বলার মতো। কারণ লা মানেই পাস। বুম মানে পাহাড়। যদিও শুধু বুম লা বলতে কেমন লাগে বলে জেনেশুনেও কখনও কখনও বুম লা পাস বলে ফেলব হয়তো। তাওয়াং থেকে বুম লা সাঁইত্রিশ কিলোমিটার। অস্থানীয় গাড়ি নিয়ে বুম লা যাওয়া বারণ। কাজেই পঙ্কজ, অগ্নিক, হিমাংশুর আজ ছুটি। অন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেছে অগ্নিক, সকালে হোটেল থেকে পিক আপ করবে। যাওয়ার খরচও তাওয়াং টুরস-এর প্যাকেজের খরচের বাইরে। আগের দিন গোলটেবিল বৈঠকে স্থির হয়েছে, আমরা আর আরেকটি পরিবার একটিই গাড়িতে যাব তাতে খরচ অর্ধেক হয়ে যাবে। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ অগ্নিকের পিং এল। গুড মর্নিং জী, কার ইজ হিয়ার। আমরা বাইরেই ছিলাম। চা টোস্ট খেয়ে তাওয়াং বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। প্রথমটা বাজারে যাইনি। দুটো মোরগের পিছু নিয়ে একটা গলির মধ্যে ঘোরাঘুরি করছিলাম। তারপর মোরগদুটো আমাদের গাইডের কাজে ক্ষান্ত দিয়ে উড়ে গেল, তখন টের পেলাম যে শুকনো হাওয়ায় দুজনের মুখ চড়চড় করছে, এদিকে ক্রিমটিম কিছু আনা হয়নি। ক্রিমের খোঁজে বাজারের দিকে যাওয়া হল। সবই বন্ধ, অবশেষে একটা দোকান খোলা দেখলাম যেটাতে ক্রিম পাওয়া গেলেও যেতে পারে। পন্ডসও আছে, নিভিয়াও। প্রথমটা দেড়শো, পরেরটা

তাওয়াং ৪ঃ পাহাড়ি পরিষেবা ও যশওয়ন্তগড়

Image
এ ট্রিপের সবথেকে বেশিসংখ্যক রাত্রিবাস তাওয়াং-এ, একেবারে দু'দুটো। দ্বিতীয় দিন সকালে দরজায় টোকা। প্রত্যাশিত, কারণ চা বলা আছে, কিন্তু দরজা খুলে একটি অপ্রত্যাশিত দৃশ্য উদ্ভাসিত হল। দুটি মেয়ে। একজন মেরেকেটে আঠেরো, একজন টেনেটুনে পনেরো। আঠেরোর হাতে লিস্ট, পনেরোর হাতে ট্রে-ভর্তি কাপের গুচ্ছ। গত পরশু রাতে হোটেলে চেক ইন করা ইস্তক যতবার দরজা খুলে চা ইত্যাদি নিয়েছি এঁদের দেখিনি। ঘরে ডাকলাম। আঠেরো রিডিং পড়লেন। ব্ল্যাক কফি, মিল্ক টি? ঠিক ঠিক। পনেরো ট্রে থেকে দুটো কাপ টেবিলে নামালেন, যার দুটোতেই দুধের পরিমাণ প্রয়োজনের থেকে বেশি। মৃদু গলায় পয়েন্ট আউট করলাম। দুজনের মুখের মিল খেয়াল করলাম। যে ভদ্রলোক রিসেপশনে বসেন এবং মাঝে মাঝে অর্ডার বেশি চলে এলে রান্নাঘরে ঘোরাঘুরি করেন তাঁর মুখের সঙ্গে মিলও। ট্রে পর্যবেক্ষণ করে কালচে তরলওয়ালা একমাত্র কাপটির দিকে ছোটজনের দৃষ্টি থামল। উৎসাহব্যঞ্জক ঘাড় নাড়লাম। মেয়েটি আমার প্রতি সন্দেহজনক চোখ তুলে উক্ত কাপটি টেবিলের ওপর নামাল। নামিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম করল। তাড়াতাড়ি দুধ কফির কাপটা ট্রে-তে তুলে দিলাম না হলে পাশের ঘরে কনফিউশনের সৃষ্টি হবে। যে ঘরে একজনের নাম ডেফিনিটলি বাবু

তাওয়াং ৩ঃ সেলা পাস

Image
দিরাং গ্রাম দিরাং আসার পথের একটা হাইলাইট লিখতে ভুলে গেছি। সেভেন সিস্টারস না ব্রাদারস নামের একটা দোকানে অগ্নিক সবাইকে থামিয়েছিল। সেখানে ভেজ, চিকেন, পর্ক থালি আর চাউমিন পাওয়া যায়। ভেজ থালি নেব নেব করেও ভেজ চাউমিন নিয়েছিলাম। অর্চিষ্মান পর্ক না চিকেন কীসের থালি নিয়েছিল। চাউমিনটা খুবই ভালো এবং এত বহুল পরিমাণে যে খুব স্পিডে খেয়েও, যাতে ব্রেনে পেট ভরে যাওয়ার সিগন্যাল পৌঁছনোর আগেই যতখানি সম্ভব খেয়ে নেওয়া যায়, অর্ধেক প্লেটের পর আর এগোনো যায়নি। এদিকে অর্চিষ্মান নিজের খাবার মুখে দিয়ে থেকে হাহুতাশ শুরু করেছে। কী মিস করলে কুন্তলা। কেন ভেজ থালি নিলে না। ওর থালিতে যে নিরামিষ পদগুলো ছিল সেগুলো নাকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ভালো। প্রমাণ হিসেবে আমার প্লেটের খালি অর্ধেকে ডাল, শাকের মতো কী একটা আর সয়াবিনের তরকারি তুলে দিল। ভালো বটে। বিশেষ করে সয়াবিনের তরকারিটা। চায়ের মতো খাবারের পলিসিতেও বদল আনলাম। এর পর থেকে সর্বত্র থালিি নিয়েছি। পাহাড়ের ডাল ভাত তরকারির জবাব নেই। অর্চিষ্মান বলল, 'চলো লেট’স গো' মনে পড়ছে না? গল্প সিনেমার নাম ভুলে যাওয়া আমার একটা কমন ঝামেলা। তার ওপর সিনেমার নাম আজকাল এত একরকম। ব্যোমকেশ

তাওয়াং ২ঃ দিরাং

Image
একটা জায়গায় গিয়ে নামলাম, থাকলাম, ঘুমোলাম, সকালে বাজারের বেঞ্চিতে বসে চা খেলাম, বিকেলে কফির সঙ্গে ভুট্টাভাজা, খেতে খেতে লোক্যাল নেড়ির সঙ্গে বাক্যালাপের চেষ্টা চালালাম - এই বেড়ানোটা সে রকম নয়। নাকে দড়ি দিয়ে গন্তব্য থেকে গন্তব্যে ছুটে বেড়ানো। যা দেখার সব গাড়ির জানালা থেকে দেখে নাও। হোমস্টে-তে বডি ফেলো। পরদিন আবার দৌড়। প্রথমদিনের গন্তব্য দিরাং। বহু বছর আগে বাবামায়ের সঙ্গে এই দিরাং পর্যন্তই গেছিলাম, তাওয়াংটুকু আর যাওয়া হয়নি। গুয়াহাটি টু দিরাং তিনশো কিলোমিটার। গুগলে লিখেছে সোয়া আট ঘণ্টায় সারা যাবে, কিন্তু আমরা কি না হেলেদুলে যাব, আমাদের লেগে যাবে প্রায় এগারো ঘণ্টা। শুরুতে তো পাহাড় জঙ্গল থাকে না, থাকে জানালার বাইরে টপ সেম সিমেন্টের বিজ্ঞাপন, এস ইউ ভি-র ডিলারশিপ আর মেগামার্টের মিছিল। স-এর জায়গায় চ আর ছ-এ চোখকে অভ্যস্ত করে নেওয়া। ‘মা তসলিমা চাইকেল চপ’-এর কোন অংশটায় মাথা চুলকোব সেটা নিয়ে মাথা চুলকোনো। সরাইঘাট ব্রিজ। ট্রেনে চড়ে এই ব্রিজ ঝমঝম পেরিয়ে মায়ের কাছে যেতাম। গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর দুম করে ফাঁকা ক্ষেত, কলাগাছের বিস্ফোরণ। আমার গত কুড়ি বছরের শান্ত, নরম প্রেমিক আসামের আত্মপ্রকা

তাওয়াং ১: গুয়াহাটি

খোঁজ শুরু করেছিলাম, যেখান থেকে সমস্ত বেড়াতে যাওয়ার খোঁজই শুরু করি, সরকারি টুরিজমের সাইট। কৌটিল্য মার্গের অরুণাচল ভবনে ফোন করলাম। আপনাদের দেশে বেড়াতে গেলে শুনছি কী সব ইনার লাইন পারমিট লাগে? জোগাড় করতে ভোর ক’টা থেকে লাইন লাগাতে হবে যদি জানান। সরকারি প্রতিনিধি উদাত্ত হাসলেন। লাইনটাইন কী বলছেন ম্যাডামজী? জমানা বদলে গেছে জানেন না? সব অনলাইন মিলতা হ্যায়। সরকারি অসহযোগিতা এবং বদব্যবহারের কত গল্প শুনি, কেউ নাকি খেঁচিয়ে ছাড়া কথা বলে না, আমার উল্টো অভিজ্ঞতা। আগে ম্যাডাম, পিছে ম্যাডাম। ম্যামে আমার যত গা-জ্বালা, ম্যাডামে তিলমাত্র না। যত ক্রেডিটকার্ড গছানেওয়ালারা ম্যাম ম্যাম করেন, সরকারি লোকজন গছানোর বিজনেসে নেই, উল্টে তাঁদের কাছ থেকে কিছু আদায় করতেই ঘর্মাক্ত। সব পক্ষই। আমি ঘামতে ঘামতে বলি, থোড়া জলদি কর দিজিয়ে ভাইসাব, তাঁরাও, আরে ম্যাডামজি, সমঝনে কি কৌশিশ কিজিয়ে, বলতে বলতে টাক মোছেন (খোঁপাও প্রচুর হয়, টাকের উদাহরণটা দেওয়ার জন্য দেওয়া)।  ইনি অবশ্য তেমন কিছু বলেননি। বেড়াতে যেতে চাই শুনে বরং খুশি হলেন। বহোৎ বঢ়িয়া ম্যাডামজি, আপ ইস নম্বর পে ফোন কর লো। বলে একটা মোবাইল নম্বর দিয়ে ফোন কেটে দিলেন।

P মোড

অনেকদিন ধরেই ভাবা হচ্ছে ঝুল ঝেড়ে দেখা দরকার ক্যামেরাটা এখনও চলে কি না কিন্তু সংসারের বেশিরভাগ কাজের মতো তা পেছোচ্ছে তো পেছোচ্ছেই। অথচ ক্যামেরা কেনার আগে কত গবেষণা, কত সাজেশন, ক্যানন এবং নিকনের ইতিহাস ভূগোল জীবনবিজ্ঞান নিয়ে কত তুলনামূলক হুলাবিলা। সে হুলাবিলার ডিগ্রি দিয়ে মাপলে ক্যামেরাটাকে সন্তানতুল্য যত্ন করা উচিত ছিল; গত তিন বছর ব্যাগের জিপ পর্যন্ত খোলা হয়নি। ব্যাকপকেট থেকে মোবাইল বার করে যদি কাজ সারা যায় তাহলে ক্যামেরা ঘাড়ে ঘোরে কে? অন্তত আমাদের মতো লোকেরা যাদের মেমোরি মেকিং নিয়ে কথা, সে সব মেমোরির এক্সপোজার কিংবা হোয়াইট ব্যালেন্স নিয়ে কাঁচকলা, তারা না। তার ওপর সব হিব্রু ঠেকছে। " f " কাকে বলে, " ISO "-র চলন কোনদিকে সব ভুলে গেছি। দুলে দুলে কত মুখস্থ করেছিলাম। খালি মনে পড়ছে একটা সংখ্যা যত বাড়ে ক্যামেরায় আলো তত কম ঢোকে। কোন বোতামটা টিপলে ডিসপ্লে চালু হবে সেটা পর্যন্ত মনে পড়ছে না। এলোপাথাড়ি টেপাটিপির পর অবশেষে কোথায় যেন আঙুল লেগে আয়তক্ষেত্র অন্ধকার থেকে আলো হল। যতক্ষণ না " এই চাকাটার পাশে AV, MV এসব কী লেখা" বলে অর্চিষ্মান চাকাটা ঘোরাতে শুরু করল।