Posts

Showing posts from 2023

দশম অবতার ও রক্তবীজ

*স্পয়লার আছে। স্পয়লার ছাড়া কিছু নেই।* দশম অবতার শহরে সিরিয়াল কিলিং হচ্ছে। সিরিয়াল কিলার যীশু। যীশুকে ধরতে নেমেছেন বড় পুলিস প্রসেনজিৎ, বাংলাসিনেমার আইকনিক থ্রিলারের আইকনিক অ্যান্টিহিরো প্রবীর রায়চৌধুরী। সঙ্গে নিয়েছেন মেজ পুলিস অনির্বাণকে, যিনি বাংলাসিনেমার অতটাও আইকনিক নয় থ্রিলারের ততটাও আইকনিক নন দারোগা বিজয় পোদ্দার। যিনি ভিঞ্চিদা-র কেসে ভিঞ্চিদাকে ধরতে অক্ষম হলেও সত্যিটা ফিগার আউট করে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন। সকলেই দেখতে পাচ্ছে যীশু খুনগুলো করছেন, কাজেই হু নিয়ে কোনও ডাউট নেই। হাউ-ও ক্লিয়ার। কয়েকটা খুন রিয়েলটাইমে দেখানো হয়েছে। হোয়াই-ও না বোঝার কিছু নেই। সমাজের ময়লা পরিষ্কার হচ্ছে। মাঝে মাঝে সাদাকালোতে এক ভদ্রলোক একটি বাচ্চাকে দশাবতারের গল্প শোনাচ্ছেন, বাচ্চাটির মুখের সঙ্গে যীশুর মুখের মিল আছে, কাজেই খুনের আন্ডারলায়িং দশাবতারের অ্যাংগলটাও দর্শক ধরে ফেলেছেন। দর্শক ধরে ফেলবেন আর প্রসেনজিৎ পারবেন না তা তো আর হয় না। বাইশে শ্রাবণে বাংলা কবিতায় প্রসেনজিতের বুৎপত্তি দেখে বাঙালি টলে গিয়েছিল, দশম অবতারে হিন্দু পুরাণ নিয়ে এক্সপার্টাইজে হিলে যাবে। স্পটে পড়ে থাকা পুঁতির মালা, খুনের অস্ত্

পুজো ২০২৩

সপ্তমী কোঅপারেটিভ প্যান্ডেলে প্রতি বছর বিজলী গ্রিল স্টল দেয়। আজ বিলম্বিত ব্রেকফাস্টে রাধাবল্লভী ওখানে খাব। তারপর কিছু কেনাকাটি আছে। নিজেদের, তার থেকেও জরুরি দুটো বাচ্চার জামা কেনা। এত খারাপ প্ল্যানিং আমাদের যে পুজোর আগে কিনে ওঠা যায়নি। কোঅপারেটিভের প্যান্ডেল খুবই কায়দার আর জমকালো (সি আর পার্কের তুলনায় কায়দার, কলকাতার তুলনায় নয়) কিন্তু আমাদের ঠিক ফ্যামিলিয়ার ফিল হয় না। তা বলে বাদ দেওয়া যায় না। সারাবছর তো নিজেদের ফিলিংসকে প্রাধান্য দিয়েই মরলাম, এই ক’দিন মাদুর্গা অ্যান্ড কোম্পানির ফিলিংসকে প্রাধান্য দিয়ে ঘোরাঘুরি করা দরকার। প্রতিমার সামনে ভিড়। নর্ম্যাল সময় ভিড় দেখলে দৌড়ই, কিন্তু এই কদিন ভিড় দেখতে বা ভিড়ের অংশ হতেই রাস্তায় বেরোনো। ফাঁক গলে গলে যথাসম্ভব সামনে গেলাম। মাথায় নতুন গামছা বেঁধে ঠাকুরমশাই পুজো করছেন। কাকিমাজেঠিমারা (অর্থাৎ আমার বয়সীরা) শাড়ির ওপর নতুন গামছা পেঁচিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। তাঁদের একজনকে ঠাকুরমশাই বলছেন, অমুকটা জোগাড় আসতে বলুন, না হলে নাকি ওঁর মনে শান্তি হচ্ছে না। না হওয়াই স্বাভাবিক। পৃথিবীর কোনও পুজোর আয়োজনেই কোনও পুরোহিতের কোনওদিন শান্তি হয় না। মাইকে টোকা পড়ল

পুজো ২০২৩

পঞ্চমী যদিও রেজলিউশন নিয়েছিলাম যে ফেলুদাব্যোমকেশের পাশ থেকে সরে দাঁড়াব কিন্তু দাঁড়াব কোথায়? আবার শোনা যাচ্ছে এটা অনির্বাণের লাস্ট ব্যোমকেশ। পাছে ইতিহাস মিস করে হাত কামড়াই, হইচই-তে দুর্গ রহস্য খুলে বসতে হল। গোড়াতে গুলিয়ে যাচ্ছিল, মনোযোগ দিচ্ছিলাম না বলেই নিশ্চয়, কে উত্তমকুমার, কে ব্যোমকেশ। অর্চিষ্মান বুঝিয়ে দিল। অনির্বাণ ব্যোমকেশ। কাল্পনিক ব্যোমকেশ। অনির্বাণ কাল্পনিক না। অনির্বাণ রিয়েল। উত্তমকুমারও রিয়েল। সত্যজিৎ রিয়েল। চিড়িয়াখানা সিনেমাটাও রিয়েল। নিজের জীবনের কেস নিয়ে বানানো সেই রিয়েল সিনেমা দেখতে গেছে কাল্পনিক ব্যোমকেশ। গিয়ে মবড হচ্ছে। গোটা সিরিজটা যদি ব্যাখ্যা করতে করতে দেখতে হয় সেই ভয়েই বোধহয় অর্চিষ্মান বলল, চল বেরোই। সন্ধে থেকে প্যান্ডেলের গানের চোটে জানালা কাঁপছে। রাস্তায় ভিড়। ঘোলে চুমুক দেওয়ার মতো করেই বলাবলি করি, পঞ্চমীতেই এই্, শনিরবি কী হবে বুঝতে পারছ? আজ তো আসল পুজো না তাই টি শার্ট জিনস পরেই বেরোলাম। অর্চিষ্মানও সেই ধুদ্ধুড়ে জামাই পরেছে অথচ আমাকে বলছে, ভালো জামা পরলে না? বললাম, কাল পরব। ষষ্ঠীতে নতুন জামা পরতে হয়। ঠাকুমা বলেছে। না-পরা জামা একটাই আছে, আজ পরে ফেললে কা

লাভ ল্যাংগোয়েজ ও চেস্ট অফ ড্রয়ারস

ফেসবুকে যেমন লাইক, মধ্যবিত্ত বাঙালি আত্মীয়সম্মিলনে তেমন নতুন জামাকাপড়। অনেক বছর পর পর দেখা হওয়ার ক্যান্ডিডেটদের জমায়েতে প্রত্যাশিতভাবেই জামার পিসের প্রাধান্য। মাসছয়েক বা বছরখানেক বাদে বাদে দেখা হলে ঝুঁকি নিয়ে রেডিমেড। ফোনাফুনি যত কমছে, সামনাসামনি আড্ডা দেওয়া যত প্রাগৈতিহাসিক হচ্ছে, তত বাড়ছে ফেসবুকে একে অপরের ছবিতে লাইক আর দেখা হলে গিফট। আজকাল নেমন্তন্ন পর্যন্ত শান্তিতে খেতে যাওয়ার উপায় নেই, লোকে রিটার্ন গিফট না গছিয়ে ছাড়ছে না। কেন, ভেবে বার করেছি। বা চেষ্টা করেছি। বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষের লাভ ল্যাঙ্গোয়েজ অর্থাৎ ভালোবাসার পাঁচটা ভাষা। ১। প্রশংসাবাক্য। ২। কোয়ালিটি টাইম। ৩। সেবা ৪। গিফট। ৫। আদর। সমাদরটর নয়। বিশুদ্ধ গায়ে পড়া কাইন্ড। স্কিন টু স্কিন। অফ কোর্স, পাঁচ নম্বরটা সবথেকে ট্রিকি এবং সতর্কতার দাবিদার। গ্রহীতার রিঅ্যাকশন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সংশয় থাকলে কল্পনাতেও স্থান দেওয়া উচিত নয়। প্রশংসাবাক্যের ঝামেলা হচ্ছে, ট্যাক্স লাগে না। কানাকে পদ্মলোচন বললাম, খোঁড়াকে উসেইন বোল্ট, অর্চিষ্মানকে লাইফ অফ পার্টি, কুন্তলাকে পরিশ্রমী। লাভের এ ল্যাংগোয়েজে ভরসা করে পাগলে। দু

মিরর, মিরর

গরমের ছুটি বা পুজোর ছুটিতে বেড়িয়ে ফেরা হচ্ছিল। একটা ফ্যামিলি মাঝরাস্তা থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন। বাবা মা, ছেলে মেয়ে। যতদূর মনে পড়ে একাধিকই ছিল। আমাদের কুপে পৌঁছে শার্টের পকেট থেকে টিকিট বার করে বাবা এদিকওদিক তাকাতে লাগলেন। সব বার্থ অকুপায়েড। লোকটি ভদ্র, চেঁচামেচি না করে টিটিইকে ডাকলেন। টিটিই এবং সহৃদয় সহকর্মীরা টিকিট পরীক্ষা করে বললেন, এ কী, এ তো কাল গভীর রাতের ট্রেনের টিকিট। আপনি এ এম পি এম গুলিয়ে পরের দিনের ট্রেনে উঠে পড়েছেন। স্টেশনটা বড় গোছেরই ছিল। এত কাণ্ড হতে হতেও ট্রেন ছেড়ে দেয়নি। নাকি দিয়েছিল? মনে নেই। দিলেও পরের স্টেশন আসতে বেশিক্ষণ লাগেনি। মোদ্দা কথা, ভদ্রলোক অচিরেই লটবহর লোকলস্কর নিয়ে নেমে গিয়েছিলেন। সামনে তো পেটভরে উপদেশ দিয়েইছিল, ভদ্রলোক সপরিবার নেমে যাওয়ার পরেও উত্তেজনার যেটুকু ঢেউ বাকি ছিল তাতে দুলতে দুলতে কামরাশুদ্ধু লোক বলাবলি করছিল, কী অবস্থা, অ্যাঁ? একটু খেয়াল করবে তো। কতগুলো টাকা নষ্ট। কেউ কেউ, কী আর করা, কিছু পাবলিক এ রকম বেখেয়াল, ইত্যাদি মতামত দিচ্ছিল। আমি দিইনি। মতামতের অভাবের জন্য নয়। আমাকে যে কারিকুলামে বড় করা হচ্ছিল তাতে আমার থেকে ভিন্ন (বেসিক্যালি, বড়) এজ গ্

ভাইর‍্যাল ফিভার ও প্রসেনজিতের ডায়েট

অর্চিষ্মানের গা যেই না গরম হল, গলা খুশখুশ, গা টনটন - রেডি হলাম। দু'ঘরের ঘেরাটোপে এ ভাইর‍্যালের কবলে একজন পড়লে অন্যজন পালানোর আশা থাকে না। পরদিন থেকে আমারও হল। দিনতিনেক পর চোখ খুলে বিছানার দু’প্রান্ত থেকে একে অপরের দিকে তাকানো গেল। তারপরের বিবরণী ধীর হলেও ক্রমোন্নতির। আপাততঃ দুজনেই বিপদসীমার বাইরে। জ্বরজারির সবই খারাপ না। প্রথম তিনদিন বাদ দিলে শারীরিক কষ্টের সঙ্গে সঙ্গে মজাও হল। শুয়ে শুয়ে ইউটিউবে বাংলা সেলেব্রিটিদের ইন্টারভিউতে স্ট্রাগলের কাঁদুনি আর মূল্যায়ন না হওয়ার হাহাকার শুনলাম। হইচইতে নিখোঁজ দেখলাম, নেটফ্লিক্সে দেখলাম কোহ্‌রা। জানি সবাই দেখে ফেলেছে, অর্চিষ্মান অন্ততঃ পাঁচশোবার বলেছে দেখো দেখো, কেন যে দেখিনি কে জানে। কী ভালো, বাবাগো। সবই ভালো, সবাই ভালো, কিন্তু সুভিন্দর ভিকি মহাশয়কে দেখে আমি বুঝভম্বুল, এত ভালো অভিনয় কী করে করে লোকে? তারপর চন্দ্রিলের লীলা, সত্যজিৎ, বিভূতিভূষণ, ডিসটোপিয়া নিয়ে বক্তৃতা আবাআআর শুনে, উৎসব, শুভ মহরৎ, তিতলি, উনিশে এপ্রিল আর সোনার কেল্লা আবাআআর দেখলাম। এবার কিছু পড়লে হয়। দ্য নিউট্রাল বিয়েতে পেয়েছিলাম। আমাদের বৌদ্ধিক লেভেল সম্পর্কে আরও একটি ভুল

মেমেন্টো মোরিঃ শারদীয়া কৃত্তিবাস ১৪৩০

অন্যেরা উপন্যাস কেমন করে লেখেন তো জানি না, আমি কোনওদিন লিখলে কেমন করে লিখব সে নিয়ে একটা কপোলকল্পনা ছিল। অনেক ফেঁদেটেদে। সাড়ে বেয়াল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতা পেঁয়াজরসুন দিয়ে কষিয়ে। যত মনের কথা উগরে, যত গায়ের ঝাল ঝেড়ে। তারপর মে মাস নাগাদ একদিন শৈলেন, প্রতিভাসের কৃত্তিবাসের শৈলেন সরকার, ফোন করে বললেন, উপন্যাস লেখেন? বললাম, রোজই ভাবি লিখব লিখব। শৈলেন বললেন, আর না ভেবে লিখে ফেলুন। অল্প লোভ আর অনেক ভয় হল। লোভ কারণ আমার কল্পনায় উপন্যাস লেখা একটা রোমহর্ষক ব্যাপার। ভয় কারণ এত কঠিং কাজ শিওর আমার দ্বারা হবে না। তারপর শৈলেন অ্যাকচুয়াল হাসির কথাটা বললেন। কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজারের একটা শারদীয়া উপন্যাস লিখতে হবে। আপনাকে সময় দেওয়া হবে দেড়মাস। অর্থাৎ কি না ছয় সপ্তাহ। জয়পুর ভ্রমণের একটা দু'হাজার শব্দের পর্ব নামাতে আমার লাগে সাতদিন। তাও ডাল কচুরি খেলাম না পেঁয়াজ কচুরি, কফি খেলাম না লস্যি, কোন অটোভাইসাব আমাকে কী দাগা দিলেন-এর ফিরিস্তি। যদি সেই স্পিডেও লিখি, আর যদি শব্দসীমার লোয়ার লিমিটও ধরি, কুড়ি হাজার শব্দ স্রেফ টাইপ করতেই আমার লেগে যাবে দশ সপ্তাহ। তারপর ধরুন গল্পে তো কুন্তলা সকালবেলা দু'নম্বর