পুজো ২০২৩


সপ্তমী

কোঅপারেটিভ প্যান্ডেলে প্রতি বছর বিজলী গ্রিল স্টল দেয়। আজ বিলম্বিত ব্রেকফাস্টে রাধাবল্লভী ওখানে খাব। তারপর কিছু কেনাকাটি আছে। নিজেদের, তার থেকেও জরুরি দুটো বাচ্চার জামা কেনা। এত খারাপ প্ল্যানিং আমাদের যে পুজোর আগে কিনে ওঠা যায়নি।

কোঅপারেটিভের প্যান্ডেল খুবই কায়দার আর জমকালো (সি আর পার্কের তুলনায় কায়দার, কলকাতার তুলনায় নয়) কিন্তু আমাদের ঠিক ফ্যামিলিয়ার ফিল হয় না। তা বলে বাদ দেওয়া যায় না। সারাবছর তো নিজেদের ফিলিংসকে প্রাধান্য দিয়েই মরলাম, এই ক’দিন মাদুর্গা অ্যান্ড কোম্পানির ফিলিংসকে প্রাধান্য দিয়ে ঘোরাঘুরি করা দরকার।

প্রতিমার সামনে ভিড়। নর্ম্যাল সময় ভিড় দেখলে দৌড়ই, কিন্তু এই কদিন ভিড় দেখতে বা ভিড়ের অংশ হতেই রাস্তায় বেরোনো। ফাঁক গলে গলে যথাসম্ভব সামনে গেলাম। মাথায় নতুন গামছা বেঁধে ঠাকুরমশাই পুজো করছেন। কাকিমাজেঠিমারা (অর্থাৎ আমার বয়সীরা) শাড়ির ওপর নতুন গামছা পেঁচিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। তাঁদের একজনকে ঠাকুরমশাই বলছেন, অমুকটা জোগাড় আসতে বলুন, না হলে নাকি ওঁর মনে শান্তি হচ্ছে না। না হওয়াই স্বাভাবিক। পৃথিবীর কোনও পুজোর আয়োজনেই কোনও পুরোহিতের কোনওদিন শান্তি হয় না।

মাইকে টোকা পড়ল। হ্যালো হ্যালো চেক চেক ওয়ান টু থ্রি। একজন পাজামাপাঞ্জাবী পরা লোক গলা ঝেড়ে বললেন, মহাসপ্তমীর শেষ অঞ্জলি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে। আপনারা সবাই মাঠ থেকে প্যান্ডেলে চলে আসুন। আমি আর অর্চিষ্মান তাকাতাকি করলাম। লাস্ট কবে অঞ্জলি দিয়েছি মনে নেই। কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে সেটা একটা কনসার্ন। “কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে” লাইনটা অর্থহীন। ফাংশান সন্ধেবেলা থাকলে সকাল থেকে ওই বাক্যটা পাড়া কাঁপিয়ে মাইকে বলে যাওয়া হত। তবে আমাদের তাড়া নেই। ঢোকার আগে দেখেছি বিজলী গ্রিলে এখনও পেঁয়াজ কাটা চলছে। তাছাড়া এ তো আর মফঃস্বলের মুখমোছা পাড়া নয়, এখানে প্রফেশনালিজম বলে একটা বস্তু আছে। সে জন্যই হয়তো মিনিট সাতেকের মধ্যে অঞ্জলি শুরু হল। তার মধ্যে আমরা জুতো খুলে রেখে এলাম। ঘাড় পাতছিই যখন ভালো করে পাতাই ভালো।

জুতো খুলে আসা আর অ্যাকচুয়াল অঞ্জলি শুরু হওয়ার মধ্যে যা যা ঘটার সে সব ঘটল। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো সবাই শুনছে দু’নম্বরে তারকেশ্বর ঢুকছে, একজন থাকবেই যে অ্যানাউন্সমেন্টের ইকো ফুরোতে না ফুরোতে ঘাড়ের কাছে ফিসফিস করে বলবে, ব্যান্ডেল ঢুকছে বুঝি? এক নম্বরে? এখানেও সেম কেস। ঘোষণা চলছে, তার মধ্যে টেন্স গলায় লোকজন জিজ্ঞাসা করছে, কী বলল দাদা, অঞ্জলি শেষ হল না শুরু হচ্ছে, কততম রাউন্ড। এর পর আর ক'বার হবে। এটা কি সপ্তমীর অঞ্জলি নাকি অষ্টমী পড়ে গেছে। আচ্ছা আপনার কি মনে হয় শুরু হওয়ার আগে আমি চট করে বাড়ি থেকে জামাটা পাল্টে আসতে পারি। অর্চিষ্মানকে দেখলে একটা ভ্রম হয় যে এ লোকটার ব্লাড প্রেশার আজীবনের মতো নিচু তারে বাঁধা, শত টানাটানিতেও চড়বে না, কাজেই সবাই সব প্রশ্ন এসে অর্চিষ্মানকেই করছে। অর্চিষ্মান খুব শান্ত গলায় সে সব প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছে।

আমি অন্যদিকে দেখছিলাম। সামনের সারিতে পুত্রকন্যা জামাইবউ নাতিপুতি এবং মাতৃয়ার্ক। মাতৃয়ার্ক উতলা মুখে হাত নেড়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। কুড়ির আশেপাশে একটা মেয়ে, বুকে কর্মকর্তার ব্যাজসাঁটা, এগিয়ে এসে ঝুঁকে পড়ে জানতে চাইছে ব্যাপারটা কী। কান খাড়া করলাম। পুজা চঢ়ানা হ্যায়। স্পেশাল পুজো। স্পেশাল আশীর্বাদ। বাকিদের থেকে বেশি নেকনজর। মেয়েটা একটা হলুদ পোস্টইট আর পেন নিয়ে এসেছে, এখানে নাম লিখে দিন। মাতৃয়ার্ক একমুহূর্ত থমকালেন। বাংলা নেহি আতি। মেয়েটা বলছে, আপনি হিন্দিতে লিখুন। আমরা পুজো দিয়ে দেব।

আড়ি পাততে গিয়ে ফুলবেলপাতা মিস হয়ে গেছে। ক্রাউডসার্ফিং করতে করতে ক্রমশঃ দূরে চলে যাওয়া ঝুড়ি থেকে একটা সিংগল গাঁদা নিয়ে আমার হাতে ঠুসে দিলেন পাশের ভদ্রলোক। অর্চিষ্মানের হাতের ফাঁক দিয়ে সাদা হলুদ সবুজের মেডলি। অন্ততঃ একটা বেলপাতা যদি ছিনতাই করা যায় ভেবে হাত খুলে দেখি মোটে একটাই বেলপাতা। একটা পাতা ছিঁড়ে নেওয়ার আইডিয়া মাথায় এসেছিল, তারপর সংশয় জাগল তিনটে অক্ষত পাতা না থাকলে অঞ্জলি এফেক্টিভ হয় কি না হয়। দুজনেরই আধখ্যাঁচড়া হওয়ার থেকে বাড়ির একজনের ফুল পুণ্য হওয়া ভালো।

মাইকে 'ওম্‌' ধ্বনিত হল। তাড়াতাড়ি মন ঘোরালাম। মন্ত্র খুবই সোজাসাপটা। মানুষের সঙ্গে গিভ-এর যে ভড়ংটা করতে হয় সে সব ত্যাগ দিয়ে কেবলই টেক টেক টেক। অবশ্য জগতের জননীকে আমার তরফ থেকে কীই বা দেওয়ার থাকতে পারে। মনপ্রাণ দিয়ে চাইলাম। মুদ্রাং দেহি, ধনং দেহি-র জায়গাটায় অর্চিষ্মানকে কনুইয়ের ঠেলা দিতে গিয়ে দেখি ও-ও আমাকে কনুইয়ের ঠেলা দিচ্ছে। যশং দেহি বলার সময় শরীরের সমস্ত রক্তবিন্দুর মনোযোগ সংহত করলাম। আর কিচ্ছু যদি নাও দাও, ফেমাস করে দাও মা। পুত্র চাওয়ার জায়গাটায় বললাম নট অ্যাপ্লিকেবল। বলিদান, গোব্রাহ্মণ ইত্যাদির বেলা বললাম, আই অ্যাম নট আ পার্টি টু দিস। ঝুড়িতে অঞ্জলির ফুল ফেরত চলে গেল, ফ্রেশ ফুলের ঝুড়ি এল। তক্কে তক্কে থেকে একটা সাদা ফুল একটা বেলপাতা নিলাম। এই করে তিন রাউন্ড সমাপ্ত হল।

একটু পরে অটো চড়ে যেতে যেতে অর্চিষ্মান ছিদ্রান্বেষীর মতো খুঁজতে বসেছিল কী কী চাইতে মন্ত্ররচয়িতারা ভুলে গেছেন। আচ্ছা ওটা চেয়েছিল? বললাম, চেয়েছিল। সেটা? সেকেন্ড রাউন্ডের প্রথমেই তো চাইল মনে নেই। তারপর বললাম, এরা সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি ধরে চাইতে চাইতে চাওয়াটাকে পারফেক্ট করে ফেলেছে, ভুল ধরতে পারবে না। অর্চিষ্মান হেরে যাওয়া মুখ করে অটোর ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল।

অঞ্জলি শেষ হল। যে ভদ্রলোক প্রথম রাউন্ডে আমাকে গাঁদাফুল সাপ্লাই দিয়েছিলেন, হইহই করে অঞ্জলি দিচ্ছিলেন। অর্চিষ্মান যেমন কেউ যেন দেখে না ফেলে মুখ করে দিচ্ছিল, সে রকম না। ঝুড়িটুড়ি পাসটাস করছিলেন, জোরে জোরে মন্ত্র পড়ছিলেন। তিনি শান্তিজল নেওয়ার আগেই চলে যাচ্ছেন দেখে পিছু ডেকে ফেললাম, আরে শান্তিজল নেবেন না? অর্চিষ্মান বলল, ওরে বাবা কুন্তলা, তোমার কী? আমি বললাম, আহা যদি পরে মনে পড়ে আফসোস হয়? অর্চিষ্মান বলল, হবে না। হয়তো ভদ্রলোকের জলে অ্যালার্জি। আমি হাঁ করে থেকে নিজের শান্তিজলে কনসেন্ট্রেট করলাম।

বিজলী গ্রিলের বাবুদের পেঁয়াজ কাটা শেষ হয়নি। বাঙালির এই জন্য কিছু হবে না। তিনটে দোকান পেরিয়ে রূপসা আহার আর্লি বার্ডের ফায়দা তুলছে। উঁকিঝুঁকি মেরে রাধাবল্লভীর যা সাইজ দেখলাম, এক প্লেটেই হয়ে যাবে আমাদের। মেনুতে লেখা আছে রাধাবল্লভী আলুরদম, কিন্তু তখনও আলুরদম নামেনি, লুচি তরকারির তরকারি দিয়েই খেতে হবে। তাই খেলাম। দুটোই ভালো ছিল। অর্চিষ্মান একটা ফিশ ফ্রাই নিল। সেটাও নাকি ভালো।

তবে খারাপ কি আর হয় না। পাশের দোকান থেকে অর্চিষ্মান বান্টা নিয়ে এল। কতদিনের বাসি লেবু চিপেছে কে জানে, বান্টা হয়ে গেছে করলার জুস। অর্চিষ্মান দুটো গ্লাসই নীল ড্রামে ফেলে এল।

রাধাবল্লভীটা খারাপ তেলে ভেজেছিল মনে হয়, শপিং মলে ঢুকতে ঢুকতে কেমন শরীর খারাপ করতে লাগল, কফি শপে ঢুকে বসলাম। বসে 'একে দেখো, তাকে দেখো' করতে করতে এক ঘণ্টা কেটে গেল। 'সর্বনাশ' বলে দৌড়ে যা যা কেনার কিনে নিলাম অটো ডেকে বাড়ি চললাম। যেটা মাথায় ছিল না সেটা হচ্ছে এই পাঁচদিন সি আর পার্কে ঢোকা বেরোনোর পঁচানব্বই শতাংশ রাস্তা বন্ধ, অটোটা বিশ্ব ঘুরে, নর্ম্যাল ভাড়ার ডবল ভাড়া তুলে, অলকনন্দার মোড়ের ব্যারিকেডের সামনে নামিয়ে চম্পট দিল।

ব্যারিকেডের সামনে বাইকওয়ালারা বিনতি করছেন, এমারজেন্সি হ্যায়, যানে দিজিয়ে, ততোধিক বিনীত স্বরে পুলিস বলছেন, অসম্ভব। এক্সকিউজ মি, সরি বলতে বলতে ব্যারিকেড গলে বাড়ির দিকে দৌড়তে লাগলাম। কুড়ি মিনিটের মধ্যে নেহরু প্লেসের পি ভি আর-এ দশম অবতার-এর শো। বাড়ি গিয়ে ব্যাগ রেখে কালকাজী পর্যন্ত হেঁটে যেতে হবে অটো নিতে। সে রাস্তাতেও উত্তাল জ্যাম।

সিনেমা শুরু হওয়ার তিরিশ সেকেন্ড আগে যে হাঁপাতে হাঁপাতে সিটে বডি ফেলতে পারলাম, নির্ঘাত সকালের অঞ্জলির কেরামতি। সিনেমা কেমন, কী বৃত্তান্ত সে এখন থাক। গত কয়েকদিনে আরও একটি সাড়া ফেলা বাংলা  সিনেমা দেখেছি, পরের কোনও পোস্টে দুটো নিয়েই লিখব।

ফেরার পথে ডি ব্লকে ঢুকেছিলাম। রাত গভীর। ভাঙা হাট। ম্যাজিক শো শুরু হচ্ছিল। টুপি থেকে রুমাল বেরোল, আয়না ফুঁড়ে পায়রা। খানিকক্ষণ বসে বাড়ি চলে এলাম।

অষ্টমী

কমলার সামনে উল্টোদিক থেকে আসা একটা অটোর ভেতর অশোকাঙ্কুর, অপরাজিতা, জ্যোতিষ্মান। আমরা জোরে জোরে হাত নাড়লাম। ওরা সি আর পার্কে ঠাকুর দেখতে এসেছে। কাল সন্ধেবেলা আমরা যখন দশম অবতার দেখছিলাম, পৃথিবীর যত চেনা লোক সি আর পার্কে এসে উপস্থিত। কাকিমাকে নিয়ে রাহুল এসেছিল। অর্চিষ্মানের অফিসের গ্রুপ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ভালো লেগেছে ওদের? যেন সি আর পার্কের পুজো খারাপ লাগলে আমার পার্সোন্যাল দায় থেকে যাবে কিছু। অর্চিষ্মানের সহকর্মী সুদর্শন বলেছে, ভালো লেগেছে, কিন্তু এত বাঙালি! দিল্লিতে বাঙালি আছে জানা ছিল ওর, কিন্তু এত বাঙালি, যেদিকে তাকাও স্বর্গমর্ত্যপাতাল ফুঁড়ে পিলপিল করে বেরিয়ে আসা বাঙালি, তাদের বাংলায় কলকলানি দেখেশুনে সুদর্শনের মাথা ভোঁ ভোঁ।

সুদর্শন আবার খাদ্যরসিক। ভীমেশ্বরার রেকো ও-ই দিয়েছিল। বলেছে, ফুড ইজ গুড। অনেক কিছুই খেয়েছে তবে ওর সব থেকে ভালো লেগেছে, ওই যে যেটা ফ্রায়েড। অর্চিষ্মান বলেছে, ফ্রায়েড তো সবই। তখন বলেছে, না না ওই যে ভেতরে আণ্ডা দেওয়া চৌকোমতো ফ্রায়েড পরোটা, সেটা বেস্ট।

অর্চিষ্মান সায় দিয়েছে। হ্যাঁ ওটা ভালো বটে।

আজ নয়ডা যাচ্ছি। রাহুলের বাড়ি। কাকিমা দুপুরে খিচুড়ি খাওয়াবেন। মিষ্টি কেনার উদ্দেশ্যে প্রথম গেলাম অন্নপূর্ণায়। পাড়ার দোকান। শত শত টাকার মিষ্টির খদ্দেরদের টপকে আমাদের চব্বিশটাকার সিঙাড়ার বায়না মেটান। আমাদের আজন্মের আনুগত্য ওঁদের প্রতি। কিন্তু আমাদের পছন্দের মিষ্টি সব শেষ। খালি রংচঙে রসের মিষ্টি পড়ে আছে। নেক্সট স্টপ কমলা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। দোকানের ভেতর দাঁড়ানোর জায়গা নেই। মিষ্টি সব শেষ। থার্ড অ্যাটেম্পট অ্যারিস্টোক্র্যাট। বাড়িওয়ালার যত অনুষ্ঠান হয়, শ্রাদ্ধ, বাৎসরিক, জন্মদিন, সবেতে অ্যারিস্টোক্র্যাটের প্যাকেট আসে। এই অ্যারিস্টোক্র্যাটের প্রতিষ্ঠাতা নাকি গল্প হলেও সত্যি-র রবি ঘোষের মতো কয়েকটা হাতাখুন্তি নিয়ে এসে এ পাড়ায় উঠেছিলেন। ক্রমে অ্যারিস্টোক্র্যাট নামের সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।

দই, ছানার জিলিপি,কাঁচাগোল্লা। আমাদের তিনটে ফেভারিটই পাওয়া গেল। উবার এসে গেল।

দুপুরে কাকিমা খাওয়ালেন খিচুড়ি, লাবড়া, খেজুর আমসত্ত্ব টমেটোর চাটনি, কাজু দেওয়া পায়েস। আর বেগুনি। সি আর পার্কে বেগুনি পাওয়া যায় না, ভদ্রস্থ বেগুনি তো ছেড়েই দিলাম। কাকিমা গরম গরম ভাজলেন, আমার হাতের তেলো ঢেকে ফেলা সাইজের একেকটা। আটটা মতো খেলাম।

নবমী

নবমী ধোঁয়া ধোঁয়া। কোথায় গেলাম। কী খেলাম। বাড়িতে খাইনি ফর শিওর। খালি মনে আছে, রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ফিসফিস করে অর্চিষ্মান বলছে, কুন্তলা, প্যান্ডেলে কাবাব খেতে যাচ্ছি, তুমি যাবে? আমি কোনওমতে হাত তুলে না বলছি। তোমার জন্য কিছু আনব? এবার জোরে জোরে হাত নাড়ছি। প্রশ্নোত্তর পর্বটা এবার শেষ হোক।

কে জানে কতক্ষণ পর আবার ঘুম ছিঁড়ে অর্চিষ্মানের গলা। ট্যারো কার্ডের দোকানে প্যান্ডেলের থেকেও বেশি ভিড় হয়েছে, বুঝলে। কাল থাকবে না মনে হয়। অসামান্য নাচ হল। একজন নাকি খুব জমিয়েছিলেন গান দিয়ে। গোটা প্যান্ডেল পুরীর সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ভাসছিল। এক চোখ খুলে জানতে চাইলাম, তুমি ভাসলে? বলল, নাঃ। ধুস বলে পাশ ফিরলাম।

দশমী

বাবা পাড়ার প্রতিমার ছবি পাঠিয়েছিল ষষ্ঠীতেই। আজ আরও দুটো ছবি। প্রথমটায় বাবা একা, মাইক হাতে হেসে হেসে কী সব বলছে। দ্বিতীয়টায় মণ্ডপের বারান্দায় আশেপাশের আরও কিছু চেনা লোকের সঙ্গে বাবা আর বুচিদিদি। বুচিদিদি একটা ফাটাফাটি শাড়ি পরে খুব হেসে হেসে বাবার হাত থেকে কী একটা নিচ্ছে। জানা গেল, কুইজ কম্পিটিশনে বাবা এবার কুইজ মাস্টার ছিল। কুইজে বুচিদিদি ফার্স্ট হয়ে দুশোটাকা প্রাইজ পেয়েছে। ছবিটা সেই প্রাইজ দেওয়ানেওয়ারই।

নবপল্লীর ঠাকুর সেই যে পঞ্চমীতে মুখে কাগজ চাপা দেওয়া দেখেছি, ব্যস। দেখে, লাঞ্চ করে বাড়ি ফিরব।

এখানে দশমীর একটা খারাপ ব্যাপার, আমাদের যেমন যতক্ষণ পারি রাখি, এখানে তেমন কতক্ষণে ফেলি ভাব। দুপুর হয়নি ঠিক করে, সব প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে বরণ শুরু হয়ে গেছে। দুয়েকটা শুভ বিজয়াও এসে হাজির হোয়াটসঅ্যাপে। এখনও উত্তর দিইনি। আমার বিজয়া হবে আমার পাড়ার, আমার আসল পাড়ার, ঠাকুর পুকুরে পড়ার পর। সেটা হতে রাত ন’টা।

আজ আবার ভীমেশ্বরা। কারণ ভীমেশ্বরায় সুদর্শনের রেকোমেন্ডেশন ছিল বিরিয়ানির। বিরিয়ানি শুরু হয়ে বেলা সাড়ে এগারোটার পর থেকে। ষষ্ঠীর সকালে মিস হয়ে গেছে। অর্চিষ্মান এবার নিল দোন্নে বিরিয়ানি, অর্থাৎ শালপাতার বাটিতে পরিবেশন করা বিরিয়ানি, যদিও এঁরা প্লেটেই দিয়েছিলেন। আমি ভীমেশ্বরা স্পেশাল ভেজ থালি। ফেরার পথে সি আর পার্কে ঢুকে দুটো ঠাকুরের প্রসেশন দেখলাম। টেম্পো চলেছে। সামনে নৃত্যরত মানুষের ভিড় নিয়ে।

শরীর ছেড়ে দিয়েছিল। তবু সন্ধে নাগাদ নিজেদের ঠেলে তুললাম। আর একটা বেলা। টেনে দিতে হবে। মেলা গ্রাউন্ডের মাঠে সকাল থেকে পুকুর খোঁড়া হচ্ছে। প্লাস্টিক পেতে জল ঢালা হবে, সেখানে মাদুর্গা অ্যান্ড কোম্পানি বিসর্জন যাবেন। ব্যাপারটা হতভম্ব করার মতোই, কিন্তু বয়সের অ্যাডভান্টেজ, হতভম্ব হতে হতে একসময় বোঝা যায় আর কিছুতেই হতভম্ব হওয়ার নেই। আজ রাস্তায় যারা বেরিয়েছে সবারই হাবভাব আমাদের মতো। আর শক্তি নেই, কিন্তু নিংড়ে নিতে হবে। মেলা গ্রাউন্ডের প্যান্ডেলের সামনে সাদা ঘোড়াটাও নির্ঘাত তাই ভাবছে। পঞ্চমীর সন্ধে থেকে যে খুশি এসে পিঠে চড়ছে। ঘোড়াটা কি বুঝতে পারছে আজই শেষ? দুটো ছোট বাচ্চা এখন ঘোড়ার পিঠে। ঘোড়াটার আনন্দ হচ্ছে না, বাচ্চাদুটোরও মুখচোখে আবছা আতংক। আনন্দ হচ্ছে কেবল বাবামায়ের। যাঁরা ছবি তুলছেন, হাততালি দিয়ে বাচ্চাদের দৃষ্টি ক্যামেরার দিকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন, নিজেরা হেসে বাচ্চাদের হাসতে উদ্বুদ্ধ করছেন। অবশ্য বাবামাও পুঁচকে। ওঁদেরও আনন্দ হোক।

দু’নম্বর মার্কেটের ওপর দিয়ে পঞ্চান্নটা বন্দেভারত ছুটে গেছে মনে হচ্ছে। অন্নপূর্ণার সামনে স্ট্যাম্পিড হল বলে। কর্তৃপক্ষ দাদা দু’হাত তুলে বলছেন, মিষ্টির গাড়ি সাবিত্রীতে পৌঁছে গেছে, আর পাঁচ মিনিট। অর্চিষ্মান ভিড়ের ওপর দিয়ে দেখে এসে বলল, রসগোল্লা ছাড়া আর সব ফাঁকা। আমি বললাম, মিষ্টি আসবে বলছে তো। অর্চিষ্মান বলল, এলে আর রক্ষা থাকবে না, এখন যা আছে তাই  নিয়েই কাটি। আমিতুমিই তো খাব। তাও বটে। রসগোল্লা নিয়ে সরে আসছি, টেম্পো এসে থামল। পেছন ফিরে তাকানোর সাহস হল না।

লোকে এমন খাচ্ছে যেন খাবার দোকানগুলো এক বছরের মতো বিসর্জনে যাচ্ছে। মার্কেটের মাঝখানে উঁচু মতো জায়গাটা, যেখানে কালীপুজো হয়, চেয়ার টেবিল পেতে দিয়েছে। কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে খুব রংচঙে পাঞ্জাবী পরে বসে খাচ্ছে। অর্চিষ্মান বলল, ওরা কি জানে ওদের পায়ের তলায় কত কোটি ইঁদুরের গর্ত? মুচকি হেসে চেনা ফুচকার দোকানের দিকে এগোলাম। যেখানে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে খেতে আমরা ইঁদুরগুলোর ছোটাছুটি দেখি। ফুচকার দোকান ফুল দিয়ে সাজানো। আমরা এগোতেই সবাই হাসিমুখে বলল, কুপন নিয়ে আসুন। কী কাণ্ড। দাদা উল্টোদিকে টেবিল পেতে কুপন নিয়ে বসেছেন। গলা ভেঙে চৌচির। বাকিদের জন্য পঞ্চাশ, আপনাদের জন্য চল্লিশ।

প্যান্ডেলে ঢুকলাম। নাচ চলছে। ঢাক বাজছে। এ পাড়ায়, এখানকার অন্য পাড়াগুলোতেও এখন শুধু মেয়েরা নাচে। আমাদের পাড়ায় তখন শুধু ছেলেরা নাচত। প্রথমবার যখন টিয়া নাচতে নেমে পড়েছিল, ওই কানফাটানো ঢাক আর কাঁসির আওয়াজ ছাপিয়ে আমাদের ছোট টিউবলাইটজ্বলা প্যান্ডেলে নীরবতা গমগম করেছিল। এখন নিশ্চয় অনেক মেয়ে নাচে। বেশ কয়েকবছর ধরে পুজোর দায়িত্ব কাকিমাজেঠিমাদের হাতে। কাকুজেঠুদাদারা থাকেন, কিন্তু কমিটির মূল দায়িত্ব মহিলাদের।

মেয়েদের ভিড়ের তফাতে একজন পুরুষ, শার্ট প্যান্ট পরা, লেট পঞ্চাশ, নিজের মনে নাচছেন। ঘুরে ঘুরে নাচছেন। বাকিদের নাচে যেমন শুধু শরীরের এনার্জি এবং উত্তাপ ক্ষয় করাটাই উদ্দেশ্য, ভদ্রলোকের নাচে সেটা নেই। ওঁর দুই হাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে টের পেলাম ভদ্রলোক আসলে একটা অদৃশ্য ধুনুচি হাতে ধরে আছেন। হাত উঠছে, নামছে, ভদ্রলোক ঘুরছেন। সোমকাকুর কথা মনে পড়ল। পাড়ার কোনও রসুনজয়ন্তী, স্পোর্টসে, পনেরোই আগস্ট আর তেইশে জানুয়ারিতে, গরমের ছুটির ফাংশানে, লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাদিবসে, সোমকাকুকে আমি কখনও দেখিনি। বাড়ি কোথাও তাও শিওর ছিলাম না। সোমকাকুকে কেবল দেখা যেত ভাসানের আগে। সবার নাচগান শেষ হওয়ার মুহূর্তে, সোমকাকু আসতেন। হনহনিয়ে হেঁটে ভিড়ের রিং ভেদ করে মণ্ডপ থেকে নামিয়ে রাখা প্রতিমার সামনের ফাঁকা জায়গায় ঢুকে দাঁড়াতেন। দাদাদের মধ্যে কেউ একটা দৌড়ে ধুনুচি এনে দিত। আগের নাচিয়েরা সরে গিয়ে, উৎসাহী ভিড়কে সরিয়েটরিয়ে জায়গা একেবারে ফটফটে খালি করে দিত। ঢাকিকে সরিয়ে ঢাকে গিয়ে দাঁড়াত জহরদা, নাকি অন্য কেউ, মনে পড়ছে না, মোটামুটি পাড়ার কেউ, এবং ভালো বাজান এমন কেউ। নাচ শুরু হত। অনেকক্ষণ ধরে ঘুরে ঘুরে নাচ চলত। আলাপ থেকে শুরু হয়ে গত হয়ে ঝালা। ঝালায় পৌঁছলে জ্বলন্ত ধুনুচি থেকে আগুনের ফুলকি জোনাকির মতো উড়ে উড়ে প্যান্ডেল ছেয়ে যেত, আমাদের চুলেটুলেও এসে পড়েছে কত। কাকুর পা যেখানে যেখানে পড়তে পারে, সেখান সেখান থেকে জ্বলন্ত নারকেলের ছোবড়া তৎপরতায় সরিয়ে দেওয়া হত। তবু পা পড়েই যেত, কাকুকে মুখব্যাদান করতে দেখিনি কোনওদিন। নাচ শেষ করে ধুনুচি নামিয়ে বুকের কাছে হাত জড়ো করে কয়েক সেকেন্ডের প্রণাম সেরে জুতো পরে ভিড়ের রিং ভেদ করে সোমকাকু বেরিয়ে যেতেন, সমান স্পিডে।

এই ভদ্রলোকও কোনও পাড়ার সোমকাকু ছিলেন সম্ভবতঃ।

চালচিত্রের অধিকাংশটাই খুলে নেওয়া হয়েছে। হলুদ ক্রেন দাঁড়িয়ে আছে প্যান্ডেলের ভেতর। লম্বা গলা আশীর্বাদের ভঙ্গিতে দুর্গার মাথা ছুঁয়ে। এখানেও বদল। আমাদের পাড়ার ঠাকুর, এমন কিছু ছোট নয় এটার থেকে, পাড়ার দাদা কাকু জেঠুরা মিলেই নামাত। খুব যে ভালো আইডিয়া ছিল বলছি না। বেদী থেকে প্যান্ডেলে নামানো তাও একরকম। শুকনো বেদী, শুকনো সিঁড়ি, শুকনো মাটি। সবথেকে বড় কথা, বাহকরা তখনও সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে। বৃষ্টির বছরে প্যান্ডেলের অংশটুকু পাটাতন পাতা  থাকত। কিন্তু প্যান্ডেল থেকে পুকুর পর্যন্ত পৌঁছনোর মাঠটুকু কাদায় কাদা। নাচানাচি সেরে সেখানে ঠাকুর তুলে নিয়ে যাওয়াটা, তাদের পক্ষে যাদের সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারাটা ততক্ষণে একটা মির‍্যাকল, যতটা রিস্কি মনে হচ্ছে তার থেকেও বেশি।

প্রতিমার সামনে থেকে সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হল। হলুদ গেঞ্জিপরিহিত চালক ক্রেন চালু করলেন। প্রতিমা দুলে উঠল। ঢাক জোরে বেজে উঠল, নাচের দলের হুংকার আর ভিড়ের হাহাকার মিশে গেল বাতাসে। এইটা অবিকল। প্রথম যখন সবাই নিচু, বাঁশে হাত দিয়ে, কেউ একজন চেঁচিয়ে বলছে রেডি? রেডি, সেই আর সবাই হেঁইও বলে টেনে তুলছে, আর আমরা দেখছি ঠাকুর দুলে উঠল, পাড়ার সবাই সুস্মিতা সেন, সবার দুই হাত ছিটকে মুখে চাপা। বাচ্চাগুলো গলা ফাটিয়ে চেল্লাচ্ছে 'আসছে বছর আবার হবে', কিন্তু সবাই জানে আবার হবে না, রাইট? রাইট? আমাদের জীবন ছিঁড়েখুঁড়ে যারা চলে গেল, যা যা চলে গেল, আসছে বছর কেন, কোনও বছর ফিরে আসবে না। তেতাল্লিশ ছুঁয়ে ফেলা বুকের ভেতরের আলোছায়ায় এখন চব্বিশ ঘণ্টা নাচেন শাহিদ কাপুর, ওয়ান ওয়ে হ্যায় ইয়ে জিন্দেগি কি গলি, এক হি চান্স হ্যায়… যো ভি যাতা হ্যায় যাতা হ্যায়, ও ফিরসে আতা নেহি। আবার নড়ে উঠেছে হলদে গাড়ির গলা, আবার দুলে উঠেছে মূর্তি, এবার বোধহয় মাটির সঙ্গে সমস্ত সংযোগ ছিন্ন, মুখ একেবারে নত হয়ে পড়েছে, তবু হাসি মোছেনি।

এ হাসি থেকে চোখ ফেরানো যায় না, এ হাসি চোখে দেখা যায় না। চোখ বন্ধ করে ফেলি। ভেতর থেকে ঠেলা মেরে চাওয়া বেরিয়ে আসে। শত শত বছরের মুখস্থ করা চাওয়া নয়, যেটা আমার সত্যি সত্যি চাই। যাচ্ছই যখন, অর্থহীন, এলোমেলো দিনের পর দিন যোগ করা এই জীবনটা উপড়ে নিয়ে যাও। যদি দিতেই পারো, সাহস দাও। অসীম, অনন্ত, অশেষ সাহস। সামনের বছর যেন বুক ফুলিয়ে ষোল অ্যান্ড অ্যাবাভ ক্যাটেগরিতে নামতে পারি। অর্চিষ্মান যেন পরের বছর প্যান্ডেলশুদ্ধু লোকের সঙ্গে ঢেউয়ের মতো ভাসতে পারে। মাস্ক টুপি ছাড়াই দুজনে গটগট করে ট্যারো রিডিং-এ ঢুকতে পারি। নিজের পয়সায় নিজে কুসংস্কার পালন করছি কার চোদ্দপুরুষের কী বলে জানতে চাইতে পারি ভবিষ্যৎ ঠিক কতটা অন্ধকার। যদি দিতেই চাও, বিশ্বাস দাও। অন্ধ, অটল, অক্ষয় বিশ্বাস। তোমার ওপর না। নিজের ওপর।

বেরিয়ে আসি। প্রতিমা এখন ট্রাকে উঠে বেড়াতে বেরোবে। ঘুরে ফিরে এসে মাঠের মাঝখানে প্রস্তুত অস্থায়ী পুকুরে ভাসান যাবে। কিন্তু আমরা আর থাকব না। বাড়ির দিকে হাঁটি। চেনা পথটুকু পেরিয়ে গ্রিলগেট। গ্রিলগেট পেরিয়ে চেনা গলিটুকু হেঁটে সিঁড়ি। সিঁড়িতে উঠতে উঠতে ঢাক কানে আসে। আর বেশিক্ষণ না। চাবি ঘুরিয়ে ঘরে ঢুকি। অর্চিষ্মান ধপাস করে খাটের ওপর চিৎপাত হয়। হয়ে গেল। আমি ছিটকিনি তুলে চাবি হুকে ঝুলিয়ে রাখি। হয়ে গেল।

Comments

  1. ডায়েরি স্টাইলে লেখা আপনার লাস্ট রাজস্থানের পোস্ট গুলো থেকে খেয়াল করেছি, মাঝে মাঝে এরকম স্বাদ বদল মন্দ লাগছেনা।

    এ হাসি থেকে চোখ ফেরানো যায় না, এ হাসি চোখে দেখা যায় না। চোখ বন্ধ করে ফেলি। ভেতর থেকে ঠেলা মেরে চাওয়া বেরিয়ে আসে। ----
    জেনে বেশ ভালো লাগলো, যে আমি একা নই।
    আর ওই শেষের বিষাদটুকুও ঠেলা মেরে ভেতর থেকে বেরোয় প্রতিবার। আপনার শেষ প্যারাতে যেটা পেলাম।
    বিশ্বাস, ভক্তি.. কিছু তো নেই, তবু যে কেন এগুলো আসে.. আমার মনে হয়, হয়তো ভেতরে ছোটবেলাটা এখনো কিছুটা রয়ে গেছে বলে।

    বিজয়ার অনেক শুভেচ্ছা রইলো আপনাদের জন্য। একটু দেরি হলো, তবু আমার মতো লেট লতিফের জন্য কালীপুজো অবধি চালিয়ে দেওয়াই যায় ..

    ReplyDelete
    Replies
    1. বিজয়ার শুভেচ্ছা আপনাকেও।

      ছোটবেলাটা গোটাটাই রয়ে গেছে হয়তো। বড় হওয়া খুব শক্ত কাজ। আমি পারিনি।

      স্বাদবদলটা জিভে ধরা পড়েছে দেখে এবং সেটা উতরেছে দেখে স্বস্তি পেলাম। টকমিষ্টিঝালই জীবন। ব্লগই বা ব্যতিক্রম হবে কেন। উৎসাহ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। চেষ্টা করব নিয়মিত স্বাদ বদলে বদলে পোস্ট লেখার।

      Delete
  2. আটটা বেগুনী খেলেন ?

    ReplyDelete
  3. 'আসছে বছর আবার হবে', কিন্তু সবাই জানে আবার হবে না, রাইট? রাইট? আমাদের জীবন ছিঁড়েখুঁড়ে যারা চলে গেল, যা যা চলে গেল, আসছে বছর কেন, কোনও বছর ফিরে আসবে না।

    Monkharap kore dilen Kuntala.

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার তো সর্বক্ষণ মনখারাপই হয়ে থাকে। একটা বয়সের পর মন আর ভালো হয় না বোধহয়।

      Delete
  4. "আবার নড়ে উঠেছে হলদে গাড়ির গলা, আবার দুলে উঠেছে মূর্তি, এবার বোধহয় মাটির সঙ্গে সমস্ত সংযোগ ছিন্ন, মুখ একেবারে নত হয়ে পড়েছে, তবু হাসি মোছেনি। এ হাসি থেকে চোখ ফেরানো যায় না, এ হাসি চোখে দেখা যায় না।"

    কুন্তলার লেখায় এরকম একটা মুহূর্ত আসে; আসে না, আবির্ভূত হয় ( সেই সন্ধ্যের কালো জলে দস্তুরিখানা স্ট্রীটের টুপ করে ডুবে যাওয়ার সময় থেকে জানি); অক্ষরের পর অক্ষর পেরিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করি- কখন সে আসবে। ম্যাজিক মোমেন্ট? তাই। এই লেখায় যাকে অমল মহিমা মোমেন্ট বলব ( এই অমল হসন্ত দিয়ে বলতে নেই)

    ReplyDelete
  5. লেখাটা পড়ে বাঙালি হওয়ার জন্যে একইসঙ্গে আনন্দ ও দুঃখ হল‌। চেনা অনুভূতি গুলো মনে পরার আনন্দ, আর অন্য কাউকে এ জিনিস না বলে বোঝানোর দুঃখ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এইটা ভালো বলেছেন।

      Delete
  6. বড় সুন্দর করে আঁকলে পুজোর সময়টা। বিসর্জনের মুহূর্তড়া সবসময়েই বড় ফাঁকা।
    ভারী সুন্দর লেখাটা।
    -প্রদীপ্ত

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত।

      Delete
  7. তুমি এক সিটিং এ আটটা বেগুনি খেতে পারো শুনে তোমার প্রতি আমার শ্রদ্ধা শত গুণ বেড়ে গেল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ইচ্ছে থাকলে মানুষ সব পারে, বিম্ববতী।

      Delete
  8. এই লেখাটা আগে কয়েকবার পড়তে শুরু করেও রেখে দিয়েছিলাম এই দেখে, যে ঠিক মনোযোগ দিয়ে পড়া যাচ্ছে না, তাই এখন থাক, পড়লে ভালো ভাবেই পড়ব। (পারিপার্শিক ব্যাপারে মনোযোগ চলে যাচ্ছে এরম সব সিচুয়েশনে ছিলাম।)

    আজ অবসর পেলাম ভালো করে পড়ার, এবং পড়ে অত্যন্ত আনন্দের সাথে বলতে পারছি যে আগের সিদ্ধান্তটা একদম সঠিক ছিল। ধন্যবাদ।

    আপনার লেখার মধ্যে "কিন্তু বয়সের অ্যাডভান্টেজ, হতভম্ব হতে হতে একসময় বোঝা যায় আর কিছুতেই হতভম্ব হওয়ার নেই" লাইনটা পড়ে, 'Joe Versus the Volcano' সিনেমাতে পাওয়া একটা লাইন মনে পরে গেল, সেখানে নায়িকা বলছে: "My father says almost the whole world's asleep. Everybody you know, everybody you see, everybody you talk to. He says only a few people are awake. And they live in a state of constant, total amazement."

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি বোধ হয় ওই জাগ্রতদের গ্রুপে পড়ব না, রাজর্ষি। তবু আপনি যে কোটেশনটা পড়ালেন সে জন্য অনেক ধন্যবাদ। ঘুমিয়ে যে আছি আর জেগে যে থাকা যায়, এই দুটো জিনিস জানা তো হল। অন্ততঃ সারানোর চেষ্টা করা যাবে।

      পোস্টটা ভালো লেগেছে জেনে খুশি। থ্যাংক ইউ।

      Delete
    2. এই রে, সরানো টারানো আবার কি বলছেন! কোটেশনটা শুধুমাত্র ভালো লেগেছিলো আর মনে এসে গেলো বলে শেয়ার করা। ওই ঘুমন্তদের দলে তো আমরা সবাই।

      Delete

Post a Comment