Posts

Showing posts from July, 2022

ঝামেলা

যাঁরা ফুল কিনে বাড়ি সাজান তাঁদের প্রতি জেনুইন মুগ্ধতা লালন করি। বা সুন্দর সুন্দর মূর্তি, ঝালর পর্দা, ঝিনুকের ট্রে, আয়না, ঘোড়া, মুখোশ দিয়ে। আমি পারি না। নান্দনিকতায় না কুলোনো ছাড়াও অন্য কারণ আছে। সাজানোর পর থাকে পরিশ্রমের পালা। নিয়মিত ঝাড়তেমুছতে হয়, তাকিয়ে মুগ্ধ হতে হয়। বাড়িসজ্জায়, জীবনে, যতটুকু না হলে নয় ততটুকু দিয়ে উতরে দেব। ঠিক করে ফেলেছি। দরকারের অতিরিক্ত সবকিছুই আজ নয়তো কাল আবর্জনায় পরিণত হয়। অন্তত আমার ক্ষেত্রে হয়ে এসেছে। ফুলটাও কাজের জন্যই কিনতে গিয়েছিলাম। মাসিমার - যাঁর বাড়িতে আমরা মহা আরামে ভাড়া থাকি - মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। অলরেডি গাঁথা মালাগুলোর মুখোমুখি পড়ে আমাকে মৌন দেখে দাদা প্রস্তাব দিলেন চন্দ্রমল্লিকার নতুন মালা বানিয়ে দেওয়ার। দাদা বিরাট সূচে চন্দ্রমল্লিকাগুলোকে বিঁধতে লাগলেন। বললাম, আপনার মনে নেই, কিন্তু বছর ছ’সাত আগে ট্যাক্সিতে ফোন ফেলে নেমে পড়ে আপনার ফোন থেকে ফোন করে সেই ফোন উদ্ধার করেছিলাম। মনে থাকবে না কেন, দিব্যি মনে আছে। অফিস থেকে ফিরছিলেন তো? ট্যাক্সিটা সাবিত্রী অবধি চলে গিয়েছিল তারপর আবার ফিরে এল। মাসিমার বাড়ির কাজের জন্য? দাদা কথোপোকথনের হাল ধরলেন।

মিরিক ঘুরে বাড়ি

Image
(ছবির সমস্ত কেরামতি অর্চিষ্মানের) তাড়াহুড়োয় একটা জায়গার কথা লিখতেই ভুলে গেছি। কালিম্পং টু দার্জিলিং রুটে লামাহাট্টা। রাস্তা থেকে দেখলে ভয় লাগে। লালনীলহলুদ রেলিং, গাছ ঘিরে অরণ্যদেবের গাছবাড়ির মতো কাঠামো যেখানে সাতজনের বেশি একসঙ্গে না ওঠার সাবধানবাণী গাছের গায়েই গজাল মেরে গোঁজা, ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটের ভেতর ও বাইরে দোমড়ানো কুরকুরের প্যাকেট। কিন্তু ভয় জয় করতে হবে। খাড়া পাহাড় ধরে যেই না উঠে যাবেন, সভ্যতার চিহ্ন সব খসে যাবে। পড়ে থাকবেন আপনি, জঙ্গল আর কুয়াশা। মানুষও। বাবা, দিদি, ভাইয়ের ছোট্ট দলের হাঁসফাঁস, ভাইয়ের প্রতি দিদির “ঝামেলা করবি তো ঠেলে ফেলে দেব” হুমকি। কোমরে হাত দিয়ে আধুনিক প্রতাপাদিত্য পাথরের ওপর দাঁড়িয়েছেন, পাঁচ সঙ্গী পাঁচটা ফোনে তাঁর ছবি তুলছেন। এ পৃথিবীতে বন্ধুভাগ্য নিয়ে কেউ কেউ আসে বটে। গন্তব্যে একটি পুণ্য জলাশয়। বৃষ্টি নামল দার্জিলিং পৌঁছতে না পৌঁছতে। কেভেন্টারসের দিকে হাঁটছি, আর ম্যাক্স তিরিশ পা, ফোঁটা বড় হতে শুরু করল। হোটেল পেছনে পঞ্চাশ পা। বয়স আরেকটু কম হলে সামনের দিকে দৌড়তাম। এখন দৌড়ে পিছু ফিরলাম। ব্যাগ থেকে ছাতা বার করে আনতে। বৃষ্টিতে ছাদে বসা সম

কালিম্পং থেকে দার্জিলিং

কালিম্পং বাসস্ট্যান্ডের পাশেই পুরোনো হোটেল গোম্পু-তে মোমো খাওয়া যেত, বাজারে রেণু প্রধানের বিখ্যাত আচারের দোকানে জিলিপিপ্যাঁচ সেল রুটি আচার দিয়ে, মোটে দশটাকা প্লেট, রাস্তায় কাচারপাচার নামের মিক্সচার, যাতে রয়েছে নুডলস, আলুরদম, ফাম্বি নামের একধরনের মুগডালের তৈরি ব্যাপার। আলুরদম থেকে শুরু করে ছোলে, শশা পেঁয়াজ কেচাপ - যা যা পৃথিবীতে খাবার হওয়া সম্ভব সব নুডলসে ঢেলে খাওয়ার চল আছে ওখানে। বাজারের লার্ক’স প্রভিশন থেকে কালিম্পং চিজ কেনা যেত। স্থানীয় ললিপপেরও খ্যাতি আছে। খা জাং বলে একটা ভুটানী খাবারের দোকানে অথেনটিক এমা দাশি (নাকি দাৎশি?) পাওয়া যায় যা দিল্লিতে খেয়ে মনে হয়েছিল আবার খাব। কিছুই খাইনি। খিদে ছিল না। সময় ছিল না। বা সিম্পলি বয়স হয়ে গেছে। চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারটা শুরুই হল রং ফুটে। আগের দিন বাসস্ট্যান্ডে নেমে গোম্পুতে গিয়ে শোনা গেল মোমো সোল্ড আউট। ভেজ ফ্রায়েড রাইস আর পর্ক নুডল সুপ দিয়ে কাজ সারতে হল। তা বলে খারাপ খাইনি অবশ্য। ডুরপিন ভিউ পয়েন্ট থেকে ফিরে এসে মর্গ্যান হাউসের লাউঞ্জে বসলাম। নিভু নিভু আলো, পুরোনো ধাঁচের সোফা, সোজাসাপটা নিচু টেবিল, অকেজো ফায়ারপ্লেস। খ

কালিম্পং

ভূত থাকলে খুশি হব? নাকি না থাকলে? থাকলে অন্তত একটা সান্ত্বনা থাকবে যে এই যা ঘটছে চারদিকে, যা দেখতে পাচ্ছি, শুনতে পাচ্ছি, ছুঁতে পারছি, তার আড়ালেও, তার থেকে বেশি কিছুও আছে। নিজের জীবন সম্পর্কে এ আশ্বাস যত ক্ষীণ হয়ে আসছে, তত এই অন্য কিছুর খোঁজ জাগছে ভেতরে ভেতরে। ভুত যদি এসে ধরা দেয়, টপ করে বিশ্বাস করে নেব। জল যে দিকে গড়াচ্ছে কোনদিন না অন্যকিছুতে বিশ্বাস করে ফেলি। প্রায় তিন বছর পর বেড়াতে যাওয়ার কথা উঠতে পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল পেরিয়ে ফাইন্যালি ভূতই টেনেছিল। কালিম্পং-এর মর্গ্যান হাউস জাগ্রত ভূতের বাড়ি। উনিশশো তিরিশ নাগাদ কলোনিয়াল ধাঁচের অট্টালিকা বানানো হয়েছিল মিস্টার এবং মিসেস মর্গ্যানের শুভবিবাহ উপলক্ষ্যে। উত্তরাধিকারীর অনুপস্থিতিতে বাড়িটি প্রথমে ট্রাস্টের, তারপর হাত ঘুরতে ঘুরতে আপাতত পশ্চিমবঙ্গ ট্যুরিজম বিভাগের সম্পত্তি। প্রস্তুতি বলতে বাগডোগরার টিকিট আর মর্গ্যান হাউসে একরাতের বুকিং। মূল হাউস ফাঁকা পাওয়া যায়নি, কাজেই কটেজ। ইউটিউবে অঞ্জন দত্তর ট্র্যাভেল শো 'চলো অঞ্জন'-এর বেশ কয়েকটা এপিসোড। বিশেষ করে যে এপিসোডগুলোতে অপর্ণা সেন, কবীর সুমন, বিক্রম ঘোষ, ঊষা উত্থুপকে নিয়ে দার্জি

মাঝবছরের বই

এ যাবত ক'টা বই পড়েছেনঃ গুডরিডস দাবি করছে মোটে ১৪টা। আমার ধারণা আমি তার বেশি পড়েছি। পড়ে, গুডরিডসকে জানাতে ভুলেছি। কাজেই ১৪ই সই। এ বছরের ৫০ টা বই পড়ার অভীষ্ট পূরণে আমি ১১টা বই বিহাইন্ড শেডিউল। বুঝুন অবস্থা। তবে পিক আপ নিয়েছি। গোঁজামিলও দেব কিছু। রি-রিড গুনব। এই যেমন সিম্পল প্যাশন আবার পড়ব এবং গুনব। হুলিয়ে বাংলা বই পড়ব। ছোট ছোট উপন্যাস। মাপে, মানে নয়। এই যেমন বিমল করের খড়কুটো আবার পড়লাম এবং গুনলাম। কাল রাতে সন্দীপনের 'রুবি কখন আসবে' পড়লাম। নবারুণের লুব্ধক পড়েছি, গুনেছি। শক্তির কুয়োতলা পড়ছি। মোটে আটাত্তর পাতার বই। আজকালের মধ্যে নামাব। মোদ্দা কথা, আগের বছরের চ্যালেঞ্জ হেরেছি, এ বছর যেন তেন প্রকারেণ জিতব। এ যাবত পড়া ২০২২-এর সেরা বইঃ চট করে উত্তরটা দিচ্ছি না, কারণ এখনও এমন কিছু (নতুন) পড়িনি যা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। যা পড়েছি তার মধ্যে সেরা বেছে বলতে পারি, কিন্তু সে নাতিশীতোষ্ণ সেরা হবে। কাজেই উত্তরটা তুলে রাখছি, বছরের শেষে দেব। সবথেকে চমকপ্রদ পাঠঃ বিমল করের খড়কুটো। কাফ লাভ-এর আখ্যান সাড়ে একচল্লিশের বুক এমন মুচড়ে দিতে পারে, বিশ্বাস করতাম না। গল্পটা নিখুঁত বলব না, কিন্তু শেষ কর