উপস্থিত
গত ক’দিনে আমার গুগল সার্চ হিস্ট্রির কয়েকটা নমুনা হল এই
Bailey’s 2017
Delhi temperature
Utpalendu Satarupa
Ministry of Petroleum and Natural Gas
Shakira bellydancing
Bijoli grill bangabhaban
Ready to use plant soil buy online india
How to find the energy to write after a work day
কেউ বলেছেন চট করে ন্যাপ নিয়ে উঠে লিখুন, কেউ বলেছেন বাড়ি ফিরে জুতো খুলতে পারেন, মোজা খুলবেন না। মোজাতেই সব মোটিভেশন। কেউ বলেছেন বাড়ি যাওয়ার পথে মাঝপথে কফি শপে থেমে লিখুন। কিন্তু লিখুন, দোহাই আপনার। আমি সেই সব পড়েটড়ে লিখতে বসেছি। জানি না, কতখানি হবে, কারণ চোখ টানছে, খাট ডাকছে, আঙুল মাঝে মাঝেই উঠে নতুন ট্যাব খুলে সার্চ করছে। হাউ টু রাইট আফটার অ্যান এইট আওয়ার ওয়ার্ক ডে? হাউ মেনি ওয়ার্ডস টু রাইট?
লোকে বলে লেখা যত ইন্টারেস্টিং, লেখার কথা তত ইন্টারেস্টিং নয়। আমি নিজে লেখার কথা পড়তে ভীষণ ভালোবাসি, কে কতক্ষণ লেখে, কখন লেখে, ঘণ্টা মেপে লেখে না শব্দ মেপে, নাকি মাপামাপি চুলোয় দিয়ে, এ সব জানতে আমার দারুণ কৌতূহল। মাইকেল ক্রিকটন নাকি সারাদিনে দশ হাজার শব্দ লিখতেন, স্টিফেন কিং দু’হাজার, আর্থার কোনান ডয়েল তিন হাজার, হেমিংওয়ে মোটে পাঁচশো শব্দ লিখতেন আর অস্কার ওয়াইল্ড নাকি সকালবেলা একটিমাত্র নিখুঁত শব্দ লিখে বিকেলবেলা সেটি কেটে দিতেন।
বিখ্যাত লেখকদের লেখার রুটিন পড়লে একই সঙ্গে উদ্দীপনা, বিস্ময়, নিজের প্রতি ধিক্কার, এই সব নানারকম অনুভূতি হয়। গুস্তাভ ফ্লোবে-র লেখার, বা সারাদিনের, রুটিন পড়ে যেমন হিংসে হল। সকাল দশটার সময় ঘুম থেকে উঠতেন গুস্তাভ। উঠেই একটা ঘণ্টা বাজাতেন। সেই ঘণ্টা বাজলে তবে সারা বাড়ির লোক স্বাভাবিক গলায় কথা বলার সাহস পেত, তার আগে শুধু ফিসফিস। ঘণ্টা শুনে ব্যক্তিগত ভৃত্য জল নিয়ে আসত, পাইপে তামাক গুঁজে দিত, ফসফস করে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে গুস্তাভ খবরের কাগজ পড়তেন, চিঠির উত্তর দিতেন, মায়ের সঙ্গে গল্প করতেন। তারপর স্নান সেরে, মাথায় যত্ন করে চুল পড়া কমানোর ওষুধ লাগিয়ে ডাইনিং রুম। সেখানে খেতে খেতে আর গল্প, খাওয়া শেষে বাড়ির বাগানে, নদীর ধারে দল বেঁধে ঘোরাঘুরি। তারপর দুটো নাগাদ ফিরে এসে লিখতে বসা। এই যে সারাটা দিন নিজের হাতে, আমি আমার সময়মতো লেখার টাইম বার করে নেব, এইটা একটা মারাত্মক বিলাসিতা।
সবার অবশ্য এই বিলাসিতা লাগে না। অ্যান্থনি ট্রলপের যেমন লাগেনি। ডাকবিভাগে ডাকসাইটে চাকরি করতেন ভদ্রলোক, আর সাতষট্টি বছর বয়সে মরে যাওয়ার আগে সাতচল্লিশটা উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, চিঠিচাপাটি, সবাই যা যা লেখে, সে সবও লিখেছিলেন। অ্যান্থনি ট্রলপ অনুপ্রেরণাট্রেরণায় বিশ্বাস করতেন না। উনি বিশ্বাস করতেন লিখতে বসলে লেখা আসবে। ঠিক করে নিতেন আগামী এত দিনে আমি এতটা লিখব, তারপর সেই টার্গেটকে মাস, সপ্তাহ, দিনে ভাঙা হত। লেখার পাশাপাশি একটা ডায়রিও চলত, সেখানে টার্গেট আর ডেডলাইন দাগানো থাকত। লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না ফাঁকি পড়ছে সে সব চোখের সামনে জ্বলজ্বল করত। দিনে তিনহাজার শব্দ লিখতেন ট্রলপ। চাকরিতেও মগ্নপ্রাণ ছিলেন কাজেই অফিসে বসে চুরিচামারি করে লেখার জন্য ছোঁকছোঁক করতেন না। তিন হাজারের গোটাটাই লেখা হত অফিস যাওয়ার আগে, ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে। অর্থাৎ ঘণ্টাপ্রতি হাজার শব্দ। কিন্তু এখানে থেমে গেলে আর পাঁচজনের সঙ্গে ট্রলপের তফাৎ থাকে না। ঘড়ি সামনে রেখে পনেরো মিনিটে আড়াইশো শব্দ লিখতেন ট্রলপ। তিন ঘণ্টায় তিন হাজার শব্দ নেমে যেত, ট্রলপ উঠে পড়ে অফিস চলে যেতেন। সারাদিন চুটিয়ে কাজ করে সন্ধ্যেবেলা চুটিয়ে আড্ডা দিতেন, আর সপ্তাহে অন্তত দু’বার বন্ধুবান্ধব জুটিয়ে শেয়াল শিকারে বেরোতেন।
আমি চেষ্টা করেছিলাম, এই গত পরশুই, সময় মেপে শব্দ লেখার। ট্রলপের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার আমার সাহস হয়নি, আমি ভেবেছিলাম আমার পক্ষে আধঘণ্টায় আড়াইশোই যথেষ্ট হবে। ওই আধঘণ্টাতেই এফ এম এ এমন ভালো ভালো গান বাজালো যে আমাকে টাইপ করা থামিয়ে সে গান শুনতে হল। আড়াইশো শব্দ যখন শেষ করলাম তখন ঘড়ি এক ঘণ্টা দশ মিনিট পার করে ফেলেছে।
অবশ্য সবাই ট্রলপের মেথডে বিশ্বাস করেন না। ট্রলপের বহুপ্রসবের অভ্যেসকে অনেক ক্রিটিকই সন্দেহের চোখে দেখতেন (যেমন আমরা বছর বছর শারদীয়ার লেখকদের করি), মৃত্যুর পর ট্রলপের আত্মজীবনী ছাপা হল। তখন এই পনেরো মিনিটে আড়াইশো শব্দটব্দের ব্যাপার সবার গোচরে এল। অবশেষে সন্দেহের নিরসন। এতদিনে স্পষ্ট হল লোকটা এত খারাপ লিখত কী করে। এ কি লেখক না মেশিন?
তবে এই ক্রিটিকরা সংখ্যায় কম। শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, পরিশ্রম করার ক্ষমতা এসবকে লোকে অনায়াস দক্ষতা/ স্বতঃস্ফূর্ততার থেকে মূল্য দেয় বেশি। আমিও এই দলেই পড়ি। এই সব লেখালিখির রুটিন, শব্দসংখ্যা পড়তে পড়তে সেটাই লক্ষ করছিলাম। মাইকেল ক্রিকটনের থেকে হেমিংওয়ের লেখা আমি পছন্দ করি বেশি, কিন্তু হেমিংওয়ে যে দিনে মোটে পাঁচশো শব্দ লিখতেন দিনে আর ক্রিকটন যে দশ হাজার এইটা আমাকে থমকে দিল। জন্মগত প্রতিভায় লোকে অত ইম্প্রেসড হয় না, গাঁতিয়ে খেটে প্রতিভার খামতিকে অতিক্রম করাতে যত হয়। আর প্রতিভা যদি কেউ অপচয় করে, তাহলে তো রক্ষা নেই। প্রতিভাবানদের, বিশেষ করে সে যদি নিজের ভাষার, নিজের ধর্মের, নিজের মামারবাড়ির পাড়ার (যে যেটাকে বেশি গুরুত্ব দেয়) প্রতিভার প্রতি মানুষের একটা স্বাভাবিক অধিকারবোধ থাকে। কীভাবে খরচ করলে সে প্রতিভার সদ্ব্যবহার হবে, সে সম্পর্কেও একটা নির্দিষ্ট মতামত থাকে। প্রতিভাবানের প্রতিভা খরচ করার ধরণ যদি সে মতের সঙ্গে না মেলে তাহলেই জাজমেন্টের বন্যা। ঋত্বিক ঘটক কেন মদ খেলেন, পিকাসো কেন নারীসঙ্গ করলেন, অরুন্ধতী রায় কেন রাজনীতি করতে গিয়ে কুড়ি বছরে মোটে দু’খানা উপন্যাস নামালেন, সমরেশ বসু কেন দু’খানা সংসার করলেন, সবাই কেন রবীন্দ্রনাথের (বায়োপিক দেখে আসার পর শচিন তেন্ডুলকরের নামও জোড়া হচ্ছে) মতো ঠুলিবাঁধা ঘোড়া হলেন না, এই নিয়ে গাধাদের চিন্তার শেষ নেই। আমারও না। আজ সকালেই ভাবছিলাম, হেমিংওয়ে যদি অত মাছ না ধরে আর দৈনিক আরও পাঁচশো শব্দ বেশি লিখতেন, কত ভালোই না হত।
আমার মতো যারা অফিসে ফাঁকি মারে, বাড়িতে ফাঁকি মারে, স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে ফাঁকি মারতে মারতে এসেছে, তারা পরিশ্রম আর নিষ্ঠার নামে এত উদ্বাহু কেন, এটা আমার কাছে একটা রহস্য। পরিশ্রমের বিকল্প নেই, এ কথা সবার জীবনের/শিল্পের ব্রত নাও হতে পারে, এটা মেনে নিতে এত কষ্ট কীসের? কোথা থেকে আমাদের এই দৃঢ় প্রত্যয় যে প্রতিভা না থাকাটা দৈবের হাতে, কিন্তু পরিশ্রম না করাটা সম্পূর্ণ নিজদায়িত্ব? তাহলে নিজেরা করলাম না কেন? অস্কার ওয়াইল্ডের মতো ‘পারফেক্ট ওয়ার্ড’ লেখার ক্ষমতা আমার নেই এটা মেনে নিতে আমার কোনও অসুবিধেই হয়নি, কিন্তু ট্রলপের মতো পনেরো মিনিটে আড়াইশো শব্দ লেখারও যে নেই, এটা হাতে কলমে পরীক্ষা করে না দেখলে অবিশ্বাস যাচ্ছিল না। রেজাল্ট দেখেও শান্তি নেই। মনে মনে ভাবছি আজ পারিনি, কাল পারব নিশ্চয়। পরিশ্রমও যে চাইলেই করা যায় না, সেটার প্রতিভাও যে নিয়ে জন্মাতে হয় এটা আমার এখনও মাথায় ঢোকেনি। আর কবে ঢুকবে জানি না।
Lekha niye lekha ami nije theke porbona kintu tomar ei informative lekha gulo on the same topic besh Bhalo lage. Jemon Oscar Wilde er information ta darun interesting..tabe Gustave er routine follow korte parle ki bhalo tai na hoto...tabe ami bikele likhte bostamna, hoyto boi portam ba onyo kichu but oi nischinto jibon japon ta 1 week pelei borte jabo ekhon! - Bratati.
ReplyDeleteঅস্কার ওয়াইল্ডের ব্যাপারটা নিশ্চয় খানিকটা বাড়িয়ে বলা, ব্রততী, তবু ভালো লাগে। ও রকম এক সপ্তাহের আমারও বড় শখ, কিন্তু হবে বলে মনে হয় না। সেটা ছুটির অভাবে নয়, আমি যেখানেই যাই আমার দুশ্চিন্তাগুলোও সঙ্গে সঙ্গে যাবে, সে জন্য।
Deleteপরিশ্রমও যে চাইলেই করা যায় না, সেটার প্রতিভাও যে নিয়ে জন্মাতে হয়...
ReplyDeleteবড় খাঁটি কথা। অন্য সব প্রতিভার মত এই প্রতিভা থেকেও আমি বঞ্চিত।
আমিও।
Deleteamio Prdaipta
Deleteহাই ফাইভ।
DeleteLekha niye pressure thakle ki bhalo lekha hoye? Na ki likhe shanti hoye? Jani na. Kintu etuku jani je oto pressure niye likhbe keno? Nijer icche korle likhbe, nijer icche moton likhbe.
ReplyDeleteআমিও জানি না, শর্মিলা। তবে প্রেশার না থাকলে আমি খুব কম কাজই শেষ করে উঠতে পারতাম। আমার শুধু শুয়ে শুয়ে ইউটিউব দেখতে ইচ্ছে করে, আর কিছু করতে ইচ্ছে করে না।
Deleteআমার শুধু শুয়ে শুয়ে ইউটিউব দেখতে ইচ্ছে করে, আর কিছু করতে ইচ্ছে করে না। :D :D High five!!
ReplyDeleteহাই ফাইভ, অপরাজিতা। (এটা কিন্তু সত্যি সত্যিই আমার জীবনের একমাত্র ইচ্ছে, একটুও বাড়িয়ে বলিনি।)
DeleteBujhte parchhi, eta asole borai kore bolar moton noy kintu bhalo na lagle ar ki korbo :( Youtube dekha chhara amar etao bhalo lage, https://quickdraw.withgoogle.com/. Try kore dekhte paro.
Deleteআরে এটা ভালো জিনিস মনে হচ্ছে, দেখতে হবে তো। থ্যাংক ইউ, অপরাজিতা।
Deleteপরিশ্রম করার প্রতিভা থেকে আমিও বঞ্চিত। তাই ডেডলাইনের চাদরে নিজেকে মুড়ে রাখি। পালে যখন নেকড়ে পরে মানে ডেডলাইন এসে ঘাড়ের ওপর উঁকিঝুঁকি মারে, তখন গড়গড় করে সব কাজ ঠিক হয়ে যায়.
ReplyDeleteএ আমারও জীবনকথা, চুপকথা। ডেডলাইন না থাকলে আমি ডেড।
Deleteশিবরাম চক্রবর্তীর গল্প মনে পড়ল। ওনাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনি লেখেন কখন?
ReplyDelete-সকালে ঘুম থেকে উঠি। তা, ঘুম তো একটা বড় পরিশ্রমসাধ্য কাজ। তাই প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগে, তাই আবার খানিকটা
ঘুমাই।
-তারপর শেষমেশ ওঠেন কখন?
-ওই বেলা এগারোটা বেজে যায়।
-উঠে?
-উঠে বাথরুম টাথরুম সারি। চা খাই,কাগজটা উল্টেপাল্টে দেখি। স্নান করি। এই করতে করতে দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে যায়। খেয়ে নিই। আর দুপুরের খাওয়ার পর তো খানিকটা ঘুমোতেই হয়। ঘুমাই।
-তারপর?
-উঠতে উঠতে বিকেল গড়িয়ে যায়। আবার একটু চা খাই। তারপর একটু বেরোই। আর বেরোলে তো রাবড়ির দোকানে যেতেই হয়। কারণ রাবড়িই তো পৃথিবীর পরমাশ্চর্য, দিনে একবার রাবড়ি না খেলে কি চলে? রাবড়ি টাবড়ি খেয়ে আবার চলে আসি। একটু বই টই দেখি, ততক্ষণে রাতের খাবারের সময় হয়ে যায়। খাই। আর খাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়ি।
-তাহলে লেখেন কখন?
-কেন, পরের দিন!
হাহা, এই গল্পটা আগে শুনেছিলাম, নিরুপম। তবু আবার শুনে ভালো লাগল। পোস্টের সঙ্গে খুবই মানানসই। থ্যাংক ইউ।
Deleteeita durdanto.. aabaar shune khub bhalo laglo
Deletesanghatik moter mil holo ei lekhatay aapnar sathe.. eto beshi mil hoyeche je jai likhchi, "cliche" mone hocche.. tai just high five
ReplyDeleteIndrani
হাই ফাইভ, ইন্দ্রাণী।
Deleteতোমার এই লেখাটা ভীষণ ভালো লাগলো কুন্তলা। বিশেষত শেষের লাইন টা একদম মনের মতো হয়েছে। আমার ধারণা ছিল এটা আমার নিজস্ব আইডিয়া কিন্তু তোমারো একই আইডিয়া জেনে খুশি হলাম। যখন লোকজন বলে যে চেহারা দিয়ে কিছু এসে যায়না কারণ চেহারার ওপর কারো হাত নেই, কার কত প্রতিভা, পরিশ্রম করার ইচ্ছে আর ক্ষমতা ইত্যাদি সেটাই আসল- তখন আমার মনে হয় কেন - চেহারার মতো ওই সব গুণ-ও তো লোকে নিয়েই জন্মেছে। জিন -ই. শেষ কথা ভাই যা ধারণা হয়েছে শেষ অব্দি আমার।
ReplyDeleteঅরুন্ধতী রায় এর বইটা কি পড়লে?
এখনও পড়া হয়নি, অমিতা। দেখি। এর মধ্যে বিবিসি রেডিও উপন্যাসটা সংক্ষিপ্তাকারে সিরিয়ালাইজড করে বার করে দিয়েছে। সেটাও টাঙিয়ে রেখেছি, শুনে ফেললেই পড়ার খাটুনি আর করতে ইচ্ছে করবে না।
Delete