ক্রিসমাস ইভ



তিনমূর্তি ভবনের আর্কাইভে গবেষণার কাজে যেত শ্বেতা, খবর দিয়েছিল মাইসোর ক্যাফের। সকালে সাইকেডেলিক শর্টস্‌ পরা সাইক্লিস্ট, উইকডেজের দুপুরে ব্যাকপ্যাক কাঁধে ছাত্র, উইকেন্ডের দুপুরে আণ্ডাবাচ্চা সহযোগে পারিবারিক ভিড়। সস্তায় ভালো খাবারের বিশ্বস্ত ঠেকের খবরাখবর যারা রাখেন দিল্লিতে, মাইসোর ক্যাফে চেনেন।

ঢিমেতালের শনিবারে ক্যাফেতে পৌঁছতে বেলা হল। মা বাবা দুই মেয়ের পরিবার খাওয়া সেরে উঠতে টেবিল দখল করতে আরও দেরি। হইহই করে আরও তিনটে পরিবার ঢুকে এল দরজা দিয়ে। ভাগ্যিস সবক’টাই তিনের বেশি সদস্যসম্বলিত, টেবিল ভাগাভাগি করার প্রস্তাব এল না।

খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে সাউথ অ্যাভিনিউ লেনের ধুলোতে গড়াগড়ি খাওয়া ঝিরিঝিরি রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে সন্দেহটা সত্যি হল। মেদুবড়া, কফির ওপর মিরচি বড়া, দেখতের তুলনায় যা নিশ্চিতভাবেই খেতে খারাপ, বেশি হয়ে গেছে।

উবার বন্ধ করে হাঁটতে শুরু করলাম। পিঠে ল্যাপটপ, মনে উচ্চাশা। ফেরার পথে কফিশপে বসে কাজ করব। কেউ কফি শপে গিয়ে গলাকাটা দামের কফি খেতে খেতে কাজ করে, বই পড়ে শুনলে মনে মনে একসময় তার সম্পর্কে একটা ধারণাটা করতাম। নিজেই সেটায় পরিণত হয়েছি।

পিঠে ভার, মনে উচ্চাশা, গায়ে রোদ্দুর। অপূর্ব রোদ্দুর। দিল্লির এই অলরেডি সুন্দর অংশটা থেকে ডিসেম্বরের রোদে চোখ ফেরানো যায় না। পরিষ্কার রাস্তা, ট্র্যাফিক অল্প, শব্দ কম। রাস্তার দু’পাশে বাখারির উঁচু বেড়ার ওপাশে বিরাট মাঠ; মাঠের মাঝখানে নিচু, ছড়ানো, সাদা বাংলো বাড়ি। বাড়ির মালিকেরা কেউ নৌবাহিনীর ভাইস চিফ অফ স্টাফ, কেউ অ্যাডমিরাল জেনারেল। কেমন হয় এদের জীবন? উঁচু বেড়ার ওপাশ থেকে আবছা চোখে পড়া বাড়িগুলোর মতোই রহস্যময়। সে সব বাড়ির বড় বড় মাঠে চারপাঁচজন র‍্যান্ডম লোক, বাগান দেখাশোনা করেন কিংবা অফিশিয়াল কাজে এসেছেন, রোদ পোয়াচ্ছেন।

সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম, আমি এ রকম বাড়িতে থাকতে চাই না। যে রকম বাড়ির মাঠে সর্বক্ষণ কিছু অচেনা লোক বসে থাকে (সে তাঁরা যতই নির্বিরোধী, নিরীহ হোন না কেন)। নেমপ্লেট সরিয়ে নিলে যাদের মাঠের সবুজের শেড, থামের কাট, রেলিং-এর ছাঁটের তফাৎ কোনও তফাৎ নেই। আমার তো বাড়িই নেই, কিন্তু পাড়ার ঝাঁকড়ায়েস্ট আমগাছটা আমার ভাড়াবাড়ির। পাকানো নীল চিকওয়ালা বারান্দাও গোটা পাড়ায় একটা। আমি ওইরকম বাড়িতেই থাকতে চাই, এ রকম বাড়িতে না। আর এ রকম বাড়িতে থাকতে চাই না বলেই আমি এ জীবনে ভাইস চিফ কিংবা অ্যাডমিরাল জেনারেলও হতে চাই না।

মতিলাল নেহরু রোডে পড়লাম, জাস্টিসদের পাড়ায় । ছোটবেলায় অনেককিছু হতে চেয়েছি, লোকে হওয়াতে চাইয়েছে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, একজন জিমন্যাস্ট পর্যন্ত ভেবে ফেলেছিল, কিন্তু আইনের রাস্তাটা কারও মাথাতেই আসেনি। অথচ বাঙালিদের মধ্যে কী বাঘা বাঘা আইনজীবী ছিল এককালে। কেমন হত উকিল হলে?

প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার মতো হেঁটে থামলাম। (ম্যাপের মাপ, আমার দূরত্বের আন্দাজ দিকের আন্দাজের মতোই অকথ্য)। বাঁ দিকে গেলে খান মার্কেট, সোজা হাঁটলে অরিজিন্যাল প্ল্যানের কফি শপ। সোজা সাত কিলোমিটার। ভেতর ও বাইরের ফুরফুরে আবহাওয়াতেও অ্যাটেম্পটটা নিতে সাহস হল না। উবার খুললাম। তিন মিনিট পর সচকিত হয়ে দেখি রাস্তার উল্টোদিকের অটোর ভেতর থেকে উদ্বেলিত হাত এবং "ম্যাডাম ম্যাডাম" চিলচিৎকার। ওঁর অটো নিয়ে ঘুরে আমার সামনে পর্যন্ত আসার কথা। কারণ আমি দাঁড়িয়ে একটা রাউন্ডঅ্যাবাউটের এক কোণে। এখানে রাস্তা পেরোনোর জায়গা নেই। যানবাহন কম হলেও বিরল নয়, এবং রাস্তা বড় এবং ফাঁকা পেয়ে তারা যখন আসে গোগ্রাসে আসে। কিন্তু বৃষ্টি পড়ছে না, ঠাণ্ডা লাগছে না, ঘাম হচ্ছে না - আমার প্রতি অটোভাইসাবের অবিচারের কথা মাথাতেই জাগল না, অটোর উদ্দেশ্যে দৌড়তে শুরু করলাম, তিনটে রাস্তা পেরিয়ে। লাস্ট রাস্তাটা পার হতে গিয়ে একটা এস ইউ ভি, কান ঘেঁষে, বিকট হর্ন বাজিয়ে বেরিয়ে গেল। অটোর নিরাপদ ঘেরাটোপ থেকে ভাইসাব দাঁত বার করলেন। আমিও।

সেদিনই কাকে বলছিলাম, বেঁচে থাকা মানেই দুঃখ। কোনও সাময়িক ফ্রাস্ট্রেশন থেকে বলিনি। যত দিন যাচ্ছে তত স্যাংগুইন হচ্ছি। দুঃখই সার, দুঃখই শুরু, দুঃখই শেষ, মাঝখানটাও দুঃখই। সুখ ব্যাপারটা, প্রেমভালোবাসার মতোই, একটি আগাপাশতলা ধাপ্পা। প্রেমের থেকেও বড় ধাপ্পা, কারণ প্রেম যদি বা কষ্টেসৃষ্টে আসে, আরও একগাদা অসুখ নিয়ে আসে।

সাউথ এক্সের জ্যাম। অন্যদিনের থেকেও যেন বেশি। ভাইসাব বললেন, ক্রিসমাস ইভ হ্যায় না। আমি বললাম, এই ভরদুপুরে কীসের ইভ? ভাইসাবের মাথা পরিষ্কার। ইভনিং-এ বেরোলে কেউ কোথাও পৌঁছতে পারবে না বলে দুপুর দুপুরেই বেরিয়ে পড়ে রাস্তায় জ্যাম করছে। কফি শপে কাজ করলাম বা কাজের ভঙ্গি, চতুর্দিকে প্লাস্টিক ক্রিসমাস গাছে লালনীল টুনি, স্পিকারে জিংগল বেল্‌স্‌ আর হোয়াট অ্যা ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড। সে সব ছাপিয়ে ক্ষণে ক্ষণে মাথায় স্যান্টা হ্যাট পরা কর্মচারীদের ক্ষণে ক্ষণে "ওয়েলকাম স্যার, গুডবাই ম্যাডাম, হ্যাভ আ গ্রেট ক্রিসমাস!" চিৎকার। এই কূলডোবানো উৎফুল্লতার আবহে নির্দিষ্ট সীমারেখার বেশি সময় অতিবাহিত করার পরিণাম ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন। তবু ঝুঁকি নিলাম।

বাড়ি ফেরার অটোতে বসে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করলাম। কে বলে বেঁচে থাকা মানেই দুঃখ? আজকের দিনটা তো সুখেই কাটল।

বা কাটল কি? একসেকেন্ডের জন্যও অসুখগুলো সরে দাঁড়ায়নি, অতীত ছায়া সরায়নি, ভবিষ্যৎ খাঁড়া নামায়নি। কাজেই না, সব মেলালে আজও আমার আনন্দে কাটেনি। এত রোদ্দুর, এত গান, এত লালনীল টুপি সত্ত্বেও। যেদিন বিছানা ছাড়তে পাহাড় কাটার পরিশ্রম লাগবে, যেদিন ভাইস চিফ অফ স্টাফ দূর অস্ত, পাশের বাড়ির লোকটাকে নিয়ে পর্যন্ত ভাবার ব্যান্ডউইডথ থাকবে না, অটো ডেকে ইচ্ছেমতো এদিকওদিক যাওয়া, এক কাপ কফির বিনিময়ে ঘণ্টাকয়েক সময় কেনা বিলাসিতা হয়ে যাবে এবং এ সব যদি কপালগুণে এড়ানোও যায়, যেদিন পিঠে ল্যাপটপ নিয়ে চার কিলোমিটার হাঁটা অলীক হয়ে যাবে, যা হবেই প্রকৃতির নিয়মে, যত সুন্দর রোদ্দুরই উঠুক না কেন - সেই সব দিনগুলোতে এই দিনটার কথা মনে পড়লে সম্ভবত মনে হবে, দুঃখই শেষ কথা নয়, সুখ সত্যি, প্রেমভালোবাসাও, কে জানে, হয়তো মিথ্যে নয়।

সেই সব দিনগুলোর মুখ চেয়ে আজকের দিনটাকে জমিয়ে রাখলাম।

Comments

  1. সুন্দর বিষণ্ণতাটা ভালো লাগলো। Annie Lennox এর এই 'primitive' গানটার কথা মনে করিয়ে দিলো: https://www.youtube.com/watch?v=0W3cxF409Pg (এই 'অফিসিয়াল' ভার্শনটাতে প্রথম 2 min 50 sec instrumental, লিরিকস তার পর থেকে শুরু।)
    এই গানটা "Holy Smoke" সিনেমাতে আবিষ্কার করেছিলাম। মনে হয়েছিল যে সিনেমার শেষে খুব সুন্দর আর সঙ্গত ভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল গানটা, এবং তাই দারুন লেগেছিলো।

    আর ক্রিসমাস ইভের ভয়ে গতকাল বাড়ি থেকে এক পাও বেরোইনি। এমনকি মুদি দোকানেও নয়!

    আজ সাহস করে বেরিয়েছিলাম, আর দেখলাম বিকেল/সন্ধের দিকে রবীন্দ্র-সদন এলাকায় পুজো প্যান্ডেল এর মতো উপচে পড়া ভিড়। অতিরিক্ত পুলিশ/ভলান্টিয়ার নামিয়ে, দড়ি দিয়ে, যেমন ভাবে পুজোর সময় করে সেইভাবে, মানুষের স্রোতকে ম্যানেজ করতে হচ্ছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. শুনলাম গানটা, রাজর্ষি। ভালো লাগল। ঠিক করে প্রকাশ করতে পারলে বিষণ্ণতার থেকে আকর্ষণীয় কিছু হয় না। আমি দেখিনি। আমার অ্যাসপিরেশন, কোনওদিন বিষণ্ণতাকে শব্দে একটু হলেও ছুঁতে পারার।

      ইভে আমি বেরিয়েছিলাম অবশ্য, পাড়ায় ক্ল্যাসিক্যাল কনসার্ট হচ্ছিল। তবে পাড়া বলেই। পার্ক স্ট্রিট জাতীয় জায়গামুখো আমিও হতাম না।

      Delete
    2. বিষণ্ণতাকে তো শব্দে আপনি বহুবার সুন্দর রূপ দিয়েই ফেলেছেন, অন্তত এই ব্লগে তো বটেই।

      আপনার লেখার মধ্যে আরেকটা জিনিস যেটা আমার দারুন ভালো লাগে সেটা হচ্ছে আপনার কিছু কিছু লেখার মধ্যে যে দারুন সেন্স অফ হিউমারটা থাকে (অনেক পুরানো লেখা থেকেই দেখে এসেছি)। আমার তো মনে হয় সাধারণভাবে লেখার মধ্যে এটা অনেক বিরল, এবং কঠিনও। আপনি পারেন এটা।

      Delete
    3. সেন্স অফ হিউমার বললে ভয় লাগে, রাজর্ষি। আপনি বিরল বললেন বটে, কিন্তু আজকাল হিউমার ছাড়া আর কোনও রস তো চোখে পড়ে না। আমি নিজেও সে হিউমারের সাগরে ঘটি ঢেলেছি, বা ঢালার প্রচেষ্টা করেছি ভেবে কাঁটা হয়ে থাকি।

      Delete
    4. অরে, না না, আপনার লেখাতে হিউমার একদম সরল আর পরিষ্কার। নির্ভয়ে থাকুন, সেটা অন্যরকম হবে না।

      উদাহরণ স্বরূপ - 'নিজ ঢাক অগত্যা নিজেই' - এই লেখাটা পড়ে একবারও মুখে হাসি না এসে থাকবে (বা মনে হাসি - অনেকে হাসি পেলেও মুখে নির্লিপ্ত ভঙ্গি রেখে মনেই কৌতুকটা অনুভব করতে ভালোবাসেন), এমন মানুষ আমার মতে নেই। থাকলে তাকে আমি টিকিট কেটে দেখতে যাব।

      হিউমার ছাড়া কিছু চোখে পড়ে না বলাতে আপনি বোধহয় লেখায় হিউমারের কথা বলছেন না। লেখা হলে সন্ধান দিতে পারেন, দেখবো কেমন। এমনিতে চারপাশে এরম অনেক হিউমারের চেষ্টা দেখি (ফটো, ভিডিও, স্ট্যান্ডআপ কমেডি, মিমিক্রি, ইত্যাদি) যেখানে কোনো কিছুকে ছোট করে, বা কখনো কদর্য করেও, হাসানোর চেষ্টা। এগুলো ভালো লাগে না।

      Delete
  2. Shukh aar dukhhor tulonamulok bisleshon korata chhere diyechhi bolte parle bhaloi hoto, karon eituku bujhte pari je shei bisleshon ta shompurno mulyohin...
    Tobe aajker dinta kharap katlo na bhebe ekta bhalo feeling ashey...din ta bhalo katano ta amaar upore, ei illusion er feelingtao mondo na...tai hoyto egulor dorkar achhe

    ReplyDelete
    Replies
    1. একমত, অর্পণ। ইলিউশন ছাড়া শেষমেশ হয়তো আর কিছুই থাকে না হাতে। সেটুকুই থাকুক অন্তত।

      Delete
  3. খুব ভালো লাগলো | সুখ দুঃখ নিয়ে আর চিন্তা করে লাভ নেই, 100% কখনো হওয়া যাবেনা কোনোটাই |

    যাই হোক তোমাকে বলতেই হবে যে আমরা এবারে কাজিরাঙা আর মানস দুটোই ঘুরে এসেছি ছেলে মেয়ে নিয়ে| এতদিনে মনে পড়লো তোমার লেখা কাজিরাঙা বেড়ানোর আখ্যান আর এখনই আবার পড়লাম| যাবার আগে পড়া উচিত ছিল | খুব ভালো বেড়ানো হয়েছে | কাজিরাঙায় তিনটে দিকে তিনটে সাফারি করেছি তিনবেলা | সবই জিপসিতে, মেয়ে অনেক আগে বলে দিয়েছিলো তোমরা হাতি চড়লে চড়ো কিন্তু আমি চড়বোনা| আমরাও একই কারণে বেচারা হাতির পিঠে চড়তে চাইনি | প্রচুর গন্ডার হরিণ ওয়াটার বাফেলো হাতি পাখি গোসাপ এসব দেখেছি কিন্তু আমাদের লাক এত ভালো ছিল যে বাঘও দেখতে পেলাম| এর পর মানসেও গন্ডার হাতি অনেক ময়ূর পাখি দেখলাম, বেকী নদীতে rafting করলাম| গুয়াহাটিতে অসমীয়া ফ্যামিলি ফ্রেন্ডের বাড়িতে প্রচুর আপ্যায়ন সহযোগে রাত কাটিযে কলকাতা ফিরলাম| পরের বার মাজুলি যাবো|

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাঃ বাঃ, ভালো ঘুরেছেন মনে হচ্ছে অমিতা। খুব ভালো লাগল শুনে।

      Delete
    2. তোমার আসাম বেড়ানোর সব লেখাগুলো আবার পড়ছি মন্ত্রমুগ্ধের মতো| বহুদিন হয়ে গেল তোমার যাওয়া, আমি এতদিন বাদে নিজের রাজ্যে গিয়ে তোমার লেখা পড়ে কত কি রিলেট করতে পারছি | যেমন অসমীয়া থালি, আমি যেখানেই পেরেছি সেখানেই থালি খেয়েছি | বেস্ট থালি ছিল কাজিরাঙায় একটা নতুন orchid and biodiversity পার্ক হয়েছে সেখানে| চব্বিশটা পদ ছিল, ডেকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছি প্রত্যেকটা কি দিয়ে বানানো | আমরা যখন বড় হয়েছি আসামে তখন এই সব থলুয়া (স্থানীয়) থালির প্রচলন ছিলোনা|

      Delete
    3. আপনি আসামে বড় হয়েছেন বুঝি? কী সুন্দর জায়গায় বড় হয়েছেন, অমিতা। আজকাল ইউটিউবে বাংলা থালিও দেখি।

      Delete
  4. অনেকদিন পরে নিজের কম্পিউটার খুললাম বলে অবান্তরে কমেন্ট করার চান্স পেলাম। সাধারণতঃ অফিসের কম্পিউটার থেকে টুক করে তোমার লেখা পড়ে ফেলি আজকাল। অফিসের ল্যাপটপে বাংলা কীবোর্ড ইনস্টল করতে দেয়না, আর রোমান হরফে বাংলা লিখতে মন চায়না। ভাবি, পরে নিজের ল্যাপটপ থেকে কমেন্ট করবো, ল্যাদের চোটে সেটা আর কখনোই হয়ে ওঠেনা। এই সপ্তাহে নিজেকে নিজে মনে মনে ছুটি দিয়েছি, তাই অনেকদিন পরে শান্তিতে বসে নিজের ল্যাপটপ খুলে লিখতে বসলাম।
    বেঁচে থাকা মানেই দুঃখ ফিলিংটার সাথে খুব আইডেন্টিফাই করলাম। বাবা ছোটবেলায় অতুলপ্রসাদী একটা গান গাইত মাঝে সাঝে "সুখের কথা বোল না আর, বুঝেছি সুখ কেবল ফাঁকি/ দুঃখে আছি, আছি ভালো, দুঃখেই আমি ভালো থাকি।" ছোটবেলায় ভাবতাম, জাহ এরকম আবার হয় নাকি, দুঃখে কেউ কি করে ভালো থাকতে পারে? কিন্তু আজকাল এই রকম একটা দিন যেদিন নতুন কোনো দুঃখ হানা দেয়নি বা ভবিষ্যৎ খাঁড়া নিয়ে তাড়া করেনি সেরকম সব দিন মনে হয়, দুঃখেই এখন ভালো থাকাটা অভ্যেস হয়ে গেছে।
    আর বাঙালি উকিলের কথা তুললে বলে বলি, উকিল তো হয়েছি, কিন্তু আইনের থেকে এখনো বিজ্ঞানই বেশি ঘাঁটতে হয় রাত্রিদিন। তাই উকিলের মতন উকিল হলে কেমন হতো এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। দেখি ভবিষ্যতে আরেকটু জ্ঞানবৃদ্ধি হয় কিনা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কমেন্টটা পোস্ট করবার ঠিক পরমুহূর্তে মনে পড়লো গানটা অতুলপ্রসাদী নয়, দ্বিজেন্দ্রগীতি। রবীন ব্যানার্জির গাওয়া গানটার লিংক দিলাম। শুনে দেখতে পারো চাইলে। https://www.youtube.com/watch?v=29K5XoZqCWo&ab_channel=RobinBanerjee-Topic

      Delete
    2. গানটা চমৎকার, চুপকথা। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  5. অমন ভাবে না এমনিই একদিন টের পাবে এইদিনটা খারাপ ছিল না তো এমনটাই চাই। দুঃখই শেষ কথা নয় যে, সে কথা আনন্দে থেকেই টের পাবে ঠিক। তোমার কত লেখায় বিষন্নতার পাশে পাশে আলো হেঁটেছে। নতুন বছর আনন্দে কাটুক। এই লেখাটা আমি এর আগে তিনবার পড়ে গেছি, কিন্তু কমেন্ট করা হয়নি। প্রতিবারেই একটা না একটা বাধা পড়েছে। তবুও আমি জানতাম লিখতে আমায় হতোই, তোমার লেখার শেষের অংশটার জন্যই। বিষন্নতার একটা গন্ধ আছে, সেটা টের পাওয়া যায়। ভালো থেকো।

    - প্রদীপ্ত

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত। দেরি হল উত্তর দিতে।

      Delete

Post a Comment