The Convenience Store Woman/Sayaka Muruta, Ginny Tapley Takemori
পার্কে বাচ্চারা খেলছে। খেলতে খেলতে তারা একটি মৃত পাখি আবিষ্কার করল। তখনও উষ্ণ। তখনও কল্পনা করে নেওয়া যায় ছুঁলে ছোট্ট নরম গা থরথরিয়ে উঠবে। মৃতদেহটি ঘিরে বাচ্চারা দাঁড়িয়ে রইল। কারও চোখে জল আসবে আসবে, কারও এসে গেছে। মায়েরা সান্ত্বনা দিলেন পাখিটির জন্য নন্দন কবর খুঁড়ে দেবেন পার্কের কোণে। "কিপ অ্যাওয়ে", বিনীত অনুরোধসহ বোর্ড পুঁতে দেবেন। সবার মন ভালো হবে হবে করছে এমন সময় ছোট দুটো পাঞ্জা ছোঁ মেরে তুলে নিল পাখিটাকে। দৌড়ে চলে গেল পার্কের অন্য কোণে বসে থাকা মায়ের কাছে। মা! মা! আজ ডিনারে সেঁকা মাংস!
মায়ের মেয়ের নাম কিকো। কিকোদের স্কুলে মারামারি বেধেছে। দুটো ছেলে, কিকোর থেকে অল্প বড়ই হবে, প্রাণপণ যুযুধান। মুখ, কান চেপে উদ্বিগ্ন ভিড় ঘিরে আছে। খবর পাঠানো হয়েছে উচ্চতর অথরিটির কাছে, ব্যবস্থা যদি কেউ নিতে পারে তাঁরাই পারবেন এই আশায়। ইতিউতি চিৎকার উঠছে, ওদের কেউ থামাও, না হলে একটা কিছু. . .
কিকো একটা বেলচা নিয়ে এল। গদাম মারল এক প্রতিপক্ষের মাথায়। পক্ষপাতিত্ব করেনি কিকো, বেলচার কাছাকাছি যে ছিল তাকেই বেছেছে। মাথা চেপে ধরে ছেলেটি শুয়ে পড়ল মাটিতে। যুদ্ধ ফিনিশ। পেছন ফিরে ভিড় এবং ততক্ষণে পৌঁছনো অথরিটির হাঁ-মুখের মুখোমুখি হল স-বেলচা কিকো। কিছুক্ষণ লাগল বুঝতে একসেকেন্ড আগের যুদ্ধের হরর ভিড়ের মাথা থেকে অন্তর্হিত হয়েছে। সমস্ত আতংক এখন ধাবিত হয়েছে কিকোর প্রতি।
কিকো বুদ্ধিমান ছিল। বড় হওয়ার আগেই সে বুঝতে পেরে গেল যে তার মাথার ভেতরের যুক্তির সঙ্গে বাইরের পৃথিবীটার যুক্তি মিলবে না। এই অবস্থায় দুটো রাস্তা থাকে। এক, নিজেকে বেখাপ্পা ঘোষণা করে কলার তুলে ঘোরা। যেমন টুইটারের কোটিকোটি মিসফিট, যাঁরা এই বুরবক সমাজের সঙ্গে ফিট করতে পারেননি কিন্তু টুইটারে মসৃণ ফিট করে গেছেন। কিকো দ্বিতীয় রাস্তাটা নিল। ভান করার।
কিন্তু ভান সোজা নয়। আর শক্ত কাজ করতে গেলে চাই একটা নিগড়। যা তোমাকে মাথা তুলতে দেবে না। ঘাড় ধরে, ঠুলি পরিয়ে নিজের কাজে বসিয়ে রাখবে যাতে বিদ্রোহের ব পর্যন্ত মাথার ভেতর বুড়বুড়ি না কাটতে পারে।
কিকো, কী ভাগ্যিস, এ রকম একটা নিগড়ের সন্ধান পেয়ে গেল আঠেরোয় পা দিয়েই। কাছেই খুলছিল একটি কনভেনিয়েন্স স্টোর। সংবাদপত্রে কর্মচারীর পদে আবেদনের আমন্ত্রণ দেখে সে অ্যাপ্লিকেশন পাঠাল। ইন্টারভিউ হল, তারপর দু'সপ্তাহের সংক্ষিপ্ত ট্রেনিং। ফুর্তিসহকারে খদ্দেরদের সম্ভাষণ জানানো থেকে শুরু করে, নতমস্তক হওয়া থেকে শুরু করে, ক্যাশবাক্স সামলানো, হিসেব রাখা, স্যান্ডউইচ জাতীয় যা খাবারদাবার পাওয়া যায় সেগুলো বানানো এবং ঝামেলার খদ্দের সামলানো, এবং অধিকাংশ সময়েই এই সব কাজ একসঙ্গে করার ট্রেনিং। ট্রেনিংঅন্তে কনভেনিয়েন্স স্টোরের উর্দির শেষ বোতামটা লাগানোমাত্র কিকো বুঝে গেল এ পৃথিবীর সঙ্গে যুদ্ধের কবচকুণ্ডল সে পেয়ে গেছে।
কিকো ডুবে গেল। নির্দেশাবলীসহ যান্ত্রিক কাজ। একের পর এক। সকাল থেকে বিকেল। কিকোর সন্ধে থেকে সকালটুকুও কনভেনিয়েন্স স্টোরই গ্রাস করে রাখল। কিকো রাত জাগে না কারণ পরদিন সতেজ শরীরে ও মনে দোকানে যেতে হবে। কিকো নিয়মিত স্নান করে, পুষ্টিকর খাবার খায়, নখ কাটে, চুল আঁচড়ায় কারণ কনভেনিয়েন্স স্টোরের ম্যানুয়ালে টিপটপ হয়ে খদ্দেরদের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দেওয়া আছে।
কিকো ফিট করে যায়। কনভেনিয়েন্স স্টোরে, এবং কিকো ভাবে সমাজেও। ম্যানেজার বদলায়, সহকর্মী বদলায়, খালি বদলায় না কিকো আর কিকোর কনভেনিয়েন্স স্টোর। নাকি কনভেনিয়েন্স স্টোরের কিকো?
কিকোর বয়স যখন সাঁইত্রিশ, দোকানে একটি লোকের উদয় হয়। সেই উদয় কিকোর দিনরাত এবং জীবনে কী ধুন্ধুমার ঘটায় সেটাই গল্পের ক্রাইসিস।
অকপট, নির্ভার ভাষায় লেখা বই দ্য কনভেনিয়েন্স স্টোর উওম্যান। মূল জাপানি লেখক সায়াকা মুরাতা, ইংরিজি অনুবাদ করেছেন গিনি তাকেমোরি। সরল ভাষায় গভীর ভাবনা, গাঢ় সত্যের গল্প বলা সহজ না। সায়াকা মুরুতার ছোট্ট উপন্যাস সে শক্ত কাজ পেরেছে। সে সব সত্য উদ্ঘাটন করেছি দাবি করছি না। তবু পাঠপরবর্তী খান দুই মনের ভাব নিচে প্রকাশ করলাম। কিকো নির্ঘাত বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করত। আর গল্পটা যখন কিকোরই . . .
১। গল্পটা পড়ে ইস্তক কিকোর প্রতি হিংসে বোধ করছি। সেই যে আঠেরো বছর বয়সে কনভেনিয়েন্স স্টোরের উর্দি গায়ে চড়ানোমাত্র কিকো বুঝে গেল যে এই করতেই সে জন্মেছে, পৃথিবীর লক্ষকোটি কাজের মধ্যে এই কাজটাই তার, এ রকম কোনও অনুভূতি জীবনে কোনও কাজ করতে গিয়ে হয়নি। এটাকেই নিশ্চয় "কলিং" বলে। এই ডাক না শুনে সারাজীবনটা কাটিয়ে দেওয়া, কিকোর মতো ভাগ্যবানেরা সে যন্ত্রণা বুঝবে না।
২। একই সঙ্গে কিকো ভাগ্যহতও বটে। কিকো ভেবেছিল এই কনভেনিয়েন্স স্টোরের চাকরিটা সমাজের একজন উৎপাদনশীল সভ্য হিসেবে কিকোকে স্বীকৃতি দিল। তার সমস্ত উদ্ভটপনাকে চাপাচুপি দিয়ে চেনা-আধচেনা-অচেনা লোকের কাছে তাকে গ্রহণযোগ্য করে তুলল। সেই সান্ত্বনা বুকে নিয়ে, হেড ডাউন রেখে, দোকানের কাচের দেওয়ালের ভেতরে, ক্যাশ কাউন্টারের পেছনে, স্যান্ডউইচ আর রাইসকেকে ভারাক্রান্ত আইলের আড়ালে সমস্ত অস্বাভাবিকতাকে লুকিয়ে রেখে একদিন যখন কিকো মাথা তুলল, দেখল সে একই রকম উদ্ভট রয়ে গেছে। কিকো অবাক হল জেনে যে সামনে নিখুঁত বিনয়ী ব্যবহার করা সত্ত্বেও স্টোররুমে তাকে নিয়ে নিয়মিত চর্চা হয়। কে এ? মিনিমাম ওয়েজের পার্টটাইমের একটা চাকরি আঠেরো বছর ধরে করে যাচ্ছে? ফোনে বোন কেঁদে ফেলে। আমরা তো ভেবেছিলাম তোকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কিকো বলে, কেন আমি তো তোদের মতোই, সম্মানজনক চাকরি থেকে নিজের ভরণপোষণ চালাই। বোন নাক টেনে বলে, আর বিয়ে? বাচ্চা? সে সব স্বাভাবিকতার কী?
তখন কিকোর কী মনে হয় সায়াকা মুরাতা বানান করে বলেননি। মনের ভেতরের দ্বন্দ্ব, টানাপোড়েন নিয়ে জাবরকাটা এই বইয়ের উদ্দেশ্য নয়। কিকো অ্যাকশন নেয়। কী অ্যাকশন সেটা বললে স্পয়লার হয়ে যাবে।
Coincidentally ei boita aamio ei just 3-4 days aage poRechi.. khub bhalo legeche aamaro.. darun legeche jokhon author bolechen je "normal" er theke alada holei buswasuddho loker odhikar jonme jaay comment korar aar privacy-r toakka na korar.. eta aami nijer jiboneo bhaloi dekhechi..
ReplyDeletesob miliye khub bhalo legeche
onekdin dhore nanan khanan cholche.. tai aapnar post poRechi kintu comment korte parini.. sorry..
bhalo thakben
Indrani
এক্ষুনি "সরি" ফিরিয়ে নিন, ইন্দ্রাণী। আপনার মতো বন্ধুরা অলরেডি প্রাপ্যের তুলনায় ঢের বেশি মনোযোগ অবান্তর-কে দেন, এ নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই।
Deleteআমার কনভেনিয়েন্স স্টোরের যেটা সবথেকে ভালো লেগেছে সেটা হচ্ছে মহিলার চরিত্রচিত্রণ। "অস্বাভাবিক" চরিত্র অনেকসময়েই স্বাভাবিক লেখকদের পক্ষে লিখে ওঠা শক্ত হয়। এই মহিলার মনের চলনগমন এত বিশ্বাসযোগ্য, আমাকে মুগ্ধ করেছে।
ইন্টারেস্টিং তো বেশ। বইটা পড়ার ইচ্ছে রইল।
ReplyDelete-প্রদীপ্ত
ইন্টারেস্টিং খুবই লাগসই শব্দ বইটার জন্য, প্রদীপ্ত।
Deleteগত এক বছরে জাপানী সাহিত্যের সাথে পরিচয় হয়েছে। চমকপ্রদ। এই বইটা list এ add করলাম। তোমার দ্বিতীয় bullet point এর সাথে ইশিগুরোর Remains of the day-র কেন্দ্রীয় butler চরিত্রের মিল পেলাম।
ReplyDeleteএকমত, কাকলি। আমি খুবই কম পড়েছি, গোটা দুই ছোটগল্প সংকলন, তিন-চারটে গোয়েন্দা আর খান চারপাঁচ নন-গোয়েন্দা উপন্যাস (সংক্ষিপ্ত, জাপানিরা সাধারণত কম কথায় সারেন দেখেছি)। প্রত্যেকটিই অনন্য। সবক'টা যে আমার খুব ভালো লেগেছে তেমন নয়। ইন ফ্যাক্ট, কোনওটাই আমার উল্টে পড়ার মতো ভালো লাগেনি, হয়তো ওই স্টাইলটার জন্যই। কিন্তু স্টাইলটা যে অন্যদের থেকে আলাদা সেটা মানতে হবে। ওঁরা নিতান্ত স্বাভাবিক শব্দ ব্যবহার করে অস্বাভাবিক মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন, যেটা আমার মতে শেখার। তুমি যখন জাপানি সাহিত্যে উৎসাহ বোধ করছ, Yōko Ogawa-র Revenge পড়েছ কি? এগারোটা না ওর কাছাকাছি ছোটগল্পের সংকলন, আমার বেশ চমকপ্রদ লেগেছিল। হয়তো পড়েছ। তাহলে কেমন লেগেছে জানিয়ো। না পড়লে পড়ে দেখতে পার।
Deleteওই Yōko Ogawa-রই The Memory Police বলে আরেকটা উপন্যাস, আমার Revenge-এর সমান ভালো না লাগলেও গল্পের প্রেক্ষাপটটা অন্যরকম বেশ।
ইশিগুরো-র স্টিভেনস-এর সঙ্গে কিকো-র এত অমিল যে প্রথমে তোমার কমেন্টটা পড়ে সামান্য মাথা চুলকোচ্ছিলাম তারপর বুঝলাম তুমি কিকোর সঙ্গে নয়, ওই স্বাভাবিক অস্বাভাবিক, ফিট করা না-করার প্রসঙ্গে মিলের কথা বলছ। এবং একদম ঠিক বলছ।
অনেক কথা বলে ফেললাম। তোমার কমেন্ট পেলে সবসময়ই ভালো লাগে, তাই বেশি কথা বলে ফেলি।
ঠিক। Stevens এর জীবন কাজের মূল্য এবং কাজের প্রতি আনুগত্য সব কিছুর উপরে ছিল।কিন্তু পরবর্তী কালে Stevens এর futility এবং নিজের জীবনে অন্য কোন emotion কে গুরুত্ত্ব না দেওয়ার ভুল টা উপলব্ধি করে। ।
Delete“Really- one has to ask oneself- what dignity is there in that? “
Revenge পড়িনি, অবশ্যই পড়ব।
তুমি যে বেশি কথা বললে, পুরোটাই আমার পাওনা!
❤️
Deleteএটা এইবার ধরব তাহলে
ReplyDeleteআমার ভালো লেগেছিল।
Deleteপড়ে ফেললাম একদিনেই। চমৎকার লেখা। জাপানি বইগুলো বেশ ঝটপট শেষ হয়ে যায়, কিন্তু পড়তে বেশ ভালো লাগে। হোনকাকু থেকে হরার, স্নো কান্ট্রি থেকে রিভেঞ্জ, কাসল ইন দ্য মিরার থেকে ব্রেস্ট অ্যান্ড এগস, সবগুলোই মোটামুটি ভালো লাগে। দু একটা লেটার মার্ক পায়।
ReplyDeleteআরে, দারুণ তো। ওই দ্রুত পাঠের ব্যাপারটা আমাকেও টানে।
Delete