জার্মান ক্লাস আর ইট্যালিয়ান খানা
সব ভালো জিনিসই একসময় শেষ হয়। গতসপ্তাহে আমাদের জার্মান ক্লাস
শেষ হয়ে গেল। কতখানি শিখলাম? নিজের নামধাম বলতে পারি, দোকানবাজার চালাতে
পারি, রাস্তাঘাটে সাইনবোর্ড পড়ে মর্মোদ্ধার করতে পারি। অচেনা শহরে পথ হারিয়ে ঘুরে
মরার সম্ভাবনা নেই আর।
ক্লাস অংক বাংলা ইতিহাস ভূগোল সেলাই শারীরশিক্ষা, যে
বিষয়েরই হোক না কেন, আসল শেখার জিনিস থাকে সিলেবাসের বাইরে। ডয়েশই বা তার
ব্যতিক্রম হবে কেন? একমাসের এই পুঁচকে ক্লাসে বসে আমি আবার নতুন করে শিখলাম নিষ্ঠা
কাকে বলে, ফাঁকিবাজি কেমন দেখতে হয়, ধৈর্য কতখানি সীমাহীন হতে পারে, একটা সময়ের পর
ওপরচালাকি কী পরিমাণে হাস্যকর দেখতে লাগে। নিজের সম্পর্কেও অনেক কিছু জানা হয়ে
গেল। জাজমেন্টাল তো জানতামই, এত কমপিটিটিভ সেটা জানা ছিল না। চমকেই গেছি বেশ।
আপনি কী রকম পরিস্থিতিতে ভালো শেখেন? নিজ দায়িত্বে না অন্য
কারোর তত্ত্বাবধানে? শেষ ক্লাসের পরে ইভ্যালুয়েশন ইত্যাদি হওয়ার সময় আমার অনেক সহকর্মীই
ক্লাস করা ব্যাপারটা নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করছিলেন। আবার সেই পড়া তৈরি করা,
হোমওয়ার্ক জমা দেওয়ার ব্যাপারটা হজম হয়নি। দমবন্ধ লেগেছে। এঁরা অনেকেই নিজেরা
শিক্ষক। ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নিচ্ছেন, খাতা দেখছেন, খাতায় নির্বিচারে গোল্লা বসাচ্ছেন
দীর্ঘদিন। এতদিন বাদে পুরো ব্যাপারটা উল্টোদিক থেকে প্রত্যক্ষ করতে ভালোলাগেনি মোটে।
আমার কিন্তু দিব্যি লেগেছে। আমার বিশ্বাস সেটার একটা প্রধান
কারণ আমার অলস স্বভাব। এই ধরণের পড়াশোনার ব্যবস্থায় যে শিখছে তার দায়িত্বই সবথেকে
কম। সব পরিশ্রম দিদিমণির। তাঁরা নোট তৈরি
করবেন, যথাসম্ভব সরস করে সে নীরস নোটকে ছাত্রের সামনে লাফিয়েঝাঁপিয়ে উপস্থাপনা
করবেন, ছাত্র একবার না বুঝলে পাঁচশোবার বোঝাবেন, বকেঝকে মাথায় গজাল মেরে গোঁজাবেন।
আমাকে শুধু ঠিক সময়ে ক্লাসে পৌঁছে পুরো সময়টা চোখকান খুলে বসে থাকলেই হবে। এর থেকে
আরামের আর কী হতে পারে?
সারাদিন কোনও কাজ না থাকলেও অফিস থেকে ফিরে অত ক্লান্ত লাগে
কেন সেটা নিয়ে আমার সত্যি সত্যি অনেকদিন ধন্দ ছিল। স্কুল, কলেজ, মায়
ইউনিভার্সিটিতেও পর্যন্ত---সারাদিন রোদ্দুরে কুমীরডাঙা খেলে, পি টি করে, ক্লাস
করে, ম্যারাথন আড্ডা মেরেও কোনওদিন বাড়ি/হোস্টেলে ফিরে আমার মনে হয়নি ইউটিউব দেখা
ছাড়া এখন আর কোনও কাজের কথা উঠলে আমি বেঘোরে মারা যাব। অফিস থেকে ফিরে প্রতিদিন
যেটা মনে হয়। সে সারাদিন ফাইলেই ডুবে থাকি বা সলিটেয়ার খেলেই টাইমপাস করি না কেন।
এখন বুঝছি ওটা আসলে দায়িত্বের ক্লান্তি। নিজের কাছেই নিজের ফাঁকিবাজির জন্য
অপরাধবোধে ভোগার ক্লান্তি।
এর থেকে হোমওয়ার্ক না করে নিয়ে গিয়ে দিদিমণির কাছে বকুনি
খাওয়া কোটিগুণ সুখের। ডয়েশক্লাস সেই বিস্মৃত সুখটাকে অনেকদিন বাদে মনে পড়িয়ে দিল।
সুখের দিন শেষ। আবার বিচ্ছিরি বড়বেলার বিচ্ছিরি অফিস শুরু।
তারই শোকপালন করতে আমি রবিবার এই রান্নাটা করেছিলাম। যেমন সোজা, তেমন ভালো খেতে।
ছোট করে রান্নার কায়দাটা লিখে দিচ্ছি, আপনাদের ইচ্ছে হলে বানিয়ে খেয়ে দেখতে পারেন।
Spaghetti aglio olio e peperoncino (একজনের মতো)
কী কী লাগবে
স্প্যাগেটি। মাপ চাইলে বলব আশি
গ্রাম। না চাইলে বলব খিদে বুঝে।
অলিভ অয়েল। বা অন্য কোনও তেল। কেই
বা দেখতে যাচ্ছে। একজনের জন্য দু’চামচই যথেষ্ট।
রসুন। আমি রসুন দু’চক্ষে দেখতে
পারি না তাই এক কোয়া ব্যবহার করি। আপনার রসুনপ্রীতির মাত্রা বুঝে আপনি দুই বা তিন কোয়া
ব্যবহার করতে পারেন। তবে তার বেশি রিস্কি হয়ে যাবে।
লংকা। লাল হলে দেখতে ভালো লাগবে।
না লাগলেও কেউ হাতে মাথা কাটবে না। ইউটিউবে অনেককে শুকনো লংকাও ব্যবহার করতে
দেখেছি। রেড চিলি ফ্লেকসও চলতে পারে। বেসিক্যালি যা প্রাণে চায়। ঝাল সহ্য করার
ক্ষমতা আর লংকার আয়তন বুঝে একটা, দুটো, তিনটে ব্যবহার করবেন।
পার্সলে পাতা। ধনেপাতা দিলেই বা
কার কী বলার আছে। ইট্যালিয়ান বন্ধুকে নেমন্তন্ন করে তো আর খাওয়াচ্ছেন না।
নুন, গোলমরিচ।
কী করে করবেন
একটা পাত্রে স্প্যাগেটি সেদ্ধ করুন। অবিশ্বাস্য হলেও,
রান্নার এই স্টেপটারও লক্ষলক্ষ রকম রেসিপি আছে। আমি এই ভদ্রলোকের রেসিপি অনুসরণ
করি। কিন্তু আমি বলি যে’রকম করে আপনার প্রাণ চায় সেরকম করেই করুন। তবে যেভাবেই
করুন না কেন জলে একখাবলা নুন দিয়ে দেবেন, না হলে স্প্যাগেটি আলুনি থেকে যাবে।
সেদ্ধ হলে স্প্যাগেটি জল ঝেড়ে রাখুন। সেদ্ধ করা জল পুরোটা ফেলে দেবেন না। এক কাপ
তুলে রাখুন, পরে কাজে লাগতেও পারে। বলা যায় না।
এবার একটা পাত্রে তেল ঢালুন। ঠাণ্ডা তেলেই থ্যাঁতলানো বা
কুচি রসুন দিয়ে দিন। এবার নিচু আঁচে পুরো ব্যাপারটা গরম হতে দিন। আইডিয়াটা হচ্ছে,
একসঙ্গে গরম হতে হতে রসুনের ফ্লেভার তেলে মিশবে। শুনেছি রসুন পুড়ে গেলে বিচ্ছিরি
তেতো হয়ে যায়, কাজেই আঁচ নিচু রাখাই ভালো। রসুনে হালকা লাল রং ধরলেই আমি সেটা তেল
থেকে তুলে ছুঁড়ে ফেলে দিই, আপনি রেখে দিতে পারেন। এবার লংকা কুচি দিয়ে নাড়ুনচাড়ুন।
আঁচ বাড়িয়ে নিতে পারেন। মিনিটখানেক পর কুচি পার্সলে দিয়ে দিন। নাড়ুন। তিরিশ সেকেন্ড
পর সেদ্ধ করা স্প্যাগেটি দিয়ে দিন। নুন গোলমরিচ দিন। পুরো ব্যাপারটা মেশান। চাখুন। যদি দেখেন শুকনো শুকনো
লাগছে তাহলে যে স্প্যাগেটি সেদ্ধ করা যে জলটা সরিয়ে রেখেছিলেন সেটা অল্প করে দিতে
পারেন।
ব্যস্। রান্না শেষ। গ্যাস নিভিয়ে প্লেটে ঢেলে খাওয়াটাই যা
বাকি। এত সামান্য রান্না, গরমগরম খেলেই ভালো।
Bah. Ki healthy khabar. Ar ki sundor dekhte! Kintu ami praaney dhore ektu cheese na mishiye khetei parbo na. :/
ReplyDeleteহাহাহা হেলদিই বটে বিম্ববতী।
DeleteRecipe pore ar chhobi dekhe khub pachhondo hoechhe, try kortei hobe :-)
ReplyDeleteহ্যাঁ করে দেখুন ইচ্ছাডানা।
Deleteদেখতে খুব সুন্দর লাগছে কিন্তু ঘোরতর অমিল অমিল । আমি ভয়ানক রসুনপ্রিয় । হ্যাঁ, ওটাতে আমিও একটু চীজ মেশাবো ।একটু গোলমরিচ ছড়াবো আর সরু সরু করে সালামি কেটে দেবো ।
ReplyDeleteমিঠু
বাঃ পড়েই জিভে জল ছলে আসছে মিঠু।
Deleteeta tui sajiechish Kuntala !!!! ki sundar dekhte hoyeche ,good good :-)
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ।
Deleteইয়ে, জাস্ট একজন পেটুক হিসেবে মতামত দিচ্ছি: এই খাবারটায় একমাত্র বাড়তি যেটা হতে পারে, সেটা হল বাড়তি কয়েক কোয়া রসুন৷ কুন্তলা, সাহস করে একবার টেরাই করে দেখতে পারো৷ কিন্তু চিজ বা সালামি যোগ করলে তো অলিভ অয়েলের চমৎকার গন্ধটাই হারিয়ে যাবে!রসুনের বেলায় সেই কথা প্রযোজ্য নয়, কারণ টাইম টেস্টেড রেসিপি বলে,রসুন অলিভ অয়েলের গন্ধটা এনহান্স করে৷
ReplyDeleteতবে কী চমৎকার প্লেট সাজিয়েছ হে! দেখেই খিদে বেড়ে যায়! শেফ হবে নাকি? ভেবে দেখো!
ওইটাই বাকি আছে শীর্ষ। তবে প্রস্তাবটা যে ভেবে দেখতে বলেছেন এই জন্য থ্যাংক ইউ।
Deleteছোট থেকে ইস্কুলে নিয়মের মধ্যে লেখাপড়া করে এসেছি। আর সেই পুচকে বয়স থেকেই ফাঁকিবাজিটাও রপ্ত করে নিয়েছি। নতুন কিছু শিখতে গেলেই মনে হয় ইস কেউ যদি সহজ করে বলে দিত। খুব খারাপ অভ্যেস জানি – কিন্তু এখনো পুরোপুরি কাটাতে পারিনি। আজ সকাল সকাল এইটে http://zenpencils.com/ দেখলাম। মনে হলো আমার উদ্দেশ্যই কেউ বলছে কথাগুলো।
ReplyDeleteঠিক আছে আপাতত সব যাগগে করা যাক :). স্প্যাগেটি আমার খুব প্রিয় খাদ্য। এক বন্ধুর পাল্লায় পড়ে আলুনি স্প্যাগেটিও গপ গপ করে গিলেছি। এভাবেও খেয়ে দেখতে হবে তাহলে।
খেয়ে দেখো সংহিতা। পস্তাবে না।
DeleteKuntala Di, Bravo! nije rNedhe, nije khabe, ta o je eto mon diye korecho, seta bhebe khub bhalo laglo.
ReplyDeleteEbar asol kotha boli. Ami nije hele dule poRe beshi sikhi, na keu kaan dhore poRale beshi sikhi, seta puro puri i depend kore ki poRchi tar upor. History Civics jodi amay nije poRte hoto, ami aaj o Class 9 e atke thaktam. Kintu jodi bolo English, tahole amar mone hoy class er je kono didimoNi-r theke ami nijer chestay beshi sikhechi. Ba bangla, amake keu konodino sekhayni. Just golper boi poRe sekha. je jonno amar bangla banan noRboRe, kintu ei bhasha ta i amar sobcheye prio!
Kintu hyan, jodi kono poRa bujhe seta porikkha deoar byapar thake,ami oi didimoNir kaanmola i pochondo korbo. na hole boi mukhe kore YouTube dyakha chara amar kissu hobe na.
তোমার কথায় যুক্তি আচে সুমনা। আমারও কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো আমি নিজে পড়ে শিখেছি, আর যেগুলো লোক না থাকলে শিখতে পারতাম না।
Deletejemon shundor lekha...sherakam shundor chobi. dish ta try korbo.
ReplyDeleteকোরো কোরো দেবশ্রী, আর করে খেয়ে আমাকে বোলো কেমন লেগেছে।
Deleteস্প্যাগেটি sunle e amar abar...... khyak khyak...:) se jak..
ReplyDeletebolchi je oije plate er ekdom dhare mohonbagani sajiachen..ota nischoy apnar sai kodin ager limburg er salad er dish dekhe onupranito hoye?
ঠিক ধরেছেন সৌমেশ।
Deleteaamar erokom e ekta spaghetti recipe achey...tafat ei je aami kadai thekei kheye ni :(
ReplyDeleteতোমার দোষ নেই শম্পা, এটা কড়াই থেকে খেয়ে নেওয়ার মতোই জিনিস।
Deletetomake dekhe aami enthu peye gelam. aajkei baniye thalay sajiye tariye tariye khabo :)
ReplyDeleteএকদম শম্পা। একটা বই নিয়ে বসবে, বা টিভি খুলে। খেতে খেতে কারও সঙ্গে কথা বলবে না। এমন ভাব করবে যেন শুনতেই পাচ্ছ না।
Deleteলঙ্কা আর ধনেপাতা বাদ দিয়ে কেমন হবে জিনিসটা?
ReplyDeleteহাহাহা, সোমনাথ, তোমার যে ও'দুটো জিনিস চলে না সেটা মনে পড়ে গেল। আহা ধনেপাতা লাগবে না, কিন্তু পার্সলে তো চলতে পারে নাকি? আমি শিওর গার্ডেন সিটির অলিতেগলিতে পার্সলে পেয়ে যাবে। আর লংকা কি একেবারেই দু'চক্ষের বিষ? অন্তত রেড চিলি ফ্লেকস?
DeleteJah ... class shesh! Porashona kore jibon ta katate parle ki bhaloi na hoto ... amar khub icche kore abar student hoye jayi ... shey ja hok ekta kichu shekhar choley. Oi je dayitto r kotha ta bolle ... ekdom thik. :-)
ReplyDeleteAr ki shundor ranna korecho ... ekdom poripati, chimchaam.
একেবারে একমত শর্মিলা। মা যখন সোনা পড় পড় বলে হাতে পায়ে ধরতেন তখন ভাবতাম পড়া শেষ হলে বাঁচব, এখন মনে হয় আহা যদি কেউ কান ধরে পড়তে বলত।
Deleteতোমার কাছে রান্নার (চেহারার) প্রশংসা পেয়ে সপ্তম স্বর্গে পৌঁছে গেছি। থ্যাংক ইউ।
জার্মান ভাষায় সাহিত্যিক হবার সংকল্প যদি না থাকে, তবে বলব দারুণ শিখেছ। দোকান বাজার করতে পার,সাইনবোর্ড পড়তে পার, লোকের সঙ্গে কথা বলতে পার - দৈনন্দিন জীবনে আর কি চাই? তুমি এই অল্পদিনে যা করলে, আমি হলে ঢ্যাঁড়া ছাড়া আর কিছু হত না। achievement (এটা বাংলায় লেখা গেল না, দুঃখিত) সত্যিই প্রশংসনীয়।
ReplyDeleteহাহাহাহা মালবিকা, আপনার মতো সাপোর্টার থাকলে যে কেউ ভালো শিখত। আমি একেবারেই ওঁচা জার্মান বলিয়ে। এই যে সেদিন লিমবুর্গে গিয়েছিলাম, বাসের মালিক হের এহওয়াল্ড খাওয়ার সময় বসবি তো বস আমার পাশেই বসলেন। আমি ভদ্রতা করে কথাবার্তা চালাতে গিয়ে বুঝলাম হের ইংরিজি প্রায় জানেন না বললেই চলে। অগত্যা আমাকে ডয়েশে শিফ্ট্ করতে হল। তারপর বেচারা হেরের মুখখানা দেখার মত হয়েছিল। আমি নিশ্চিত উনি বাড়ি ফিরে গিয়ে বুক চাপড়ে কাঁদতে বসেছিলেন, যে এই পোলাপানগুলো এসে আমাদের এমন সুন্দর পিতৃভাষাটার কী পিণ্ডিটাই না চটকেছে।
Deleteamar kachey ekta "language tarnslator" (invention of japanese, who else) chilo...seta te engrezi type korle, german bhasha eshe jeto screen e (choto cell phone size aarki)...je ja bolto aami type kore check kore nitam. shei niye anek mojar mojar ghotona hoyechilo germany te.
ReplyDeleteসে গল্প দু একটা শুনি?
Deletesob i bhalo, kintu tumi boddo kom khao kuntala di :(
ReplyDeleteএই রে। আমার কিন্তু তা মনে হয় না স্বাগতা।
Delete