রামগড় ২




রামগড়ের জল ভালো বলতে হবে। রাত ন’টার সময় ওইরকম গরগরে চিকেনের ঝোল আর রুটি খেয়ে ঘুমোতে গেলাম, সকালে উঠে দেখি চোঁ চোঁ খিদে পেয়ে গেছে। আটটার সময় বেড টি খেয়ে, স্নানটান করে ন’টার সময় ডাইনিং রুমে গিয়ে মাখনপাঁউরুটি আর ডবল ডিমের অমলেট খেয়ে তবে পেট খানিকটা ঠাণ্ডা হল।

রামগড়ে পৌঁছনোর আগে আমাদের কিছুই প্ল্যান করা ছিল না। কী করব, কী দেখব, কোথায় যাব। গাড়িতে যেতে যেতে পবন সিং জানতে চেয়েছিল শনিবার আমাদের প্ল্যান কী। কিছুই না শুনে পরামর্শ দিল মুক্তেশ্বর ঘুরে আসার।

ভেবে দেখলে পরামর্শটা খুব একটা খারাপ নয়। মুক্তেশ্বর রামগড়ের থেকে মোটে পঁচিশ কিলোমিটার আর মুক্তেশ্বর যাওয়ার ইচ্ছে আমাদের অনেকদিনের। অবশ্য শুধু যাওয়ার নয়, ইচ্ছেটা গিয়ে থাকার। কে এম ভি এন গেস্টহাউসের বারান্দায় বসে নন্দাদেবী অবলোকন করতে করতে পকোড়া খাওয়ার। এখন সে হওয়ার জো নেই। কিন্তু নেই বলেই মনের দুঃখে এতদূর এসে ফিরে যাওয়াটা খুব একটা বুদ্ধির কাজ হবে না।

শুক্রবার সন্ধ্যেতেই রিসেপশনে বলে রেখেছিলাম গাড়ির কথা। শনিবার সকালে এসে আমাদের মুক্তেশ্বর ঘুরতে নিয়ে যাবে। মুক্তেশ্বরে কী কী দেখার আছে সেটা অবশ্য আর চেক করার উপায় নেই। নো ইন্টারনেট। পুরোনো পদ্ধতির সাহায্য নিতে হল। তাক করে থেকে যেই মুহূর্তে ফোনের টাওয়ার একটা ভদ্রস্থ অবস্থায় পৌঁছল ফোন লাগালাম।

বাবা, কেমন আছ?

দারুণ, দারুণ। তোরা কেমন ঘুরছিস?

খুব ভালো বাবা। আমরা ভাবছি কাল মুক্তেশ্বর যাব। গাড়ি বলে দিয়েছি। কী কী দেখার আছে গো?

বাঃ বাঃ, মুক্তেশ্বর দারুণ জায়গা। মেঘ না থাকলে পুরো রেঞ্জ দেখতে পাবি।

আর?

আর ওই তো মন্দির দেখবি, চউলি কি জালি বলে একটা জায়গা আছে মন্দিরের গায়েই, সেটা দেখবি। ওখান থেকেই নন্দাদেবী দেখা যাবে। অবশ্য যদি মেঘ না থাকে।

গুড গুড।

আর একটা অ্যানিম্যাল রিসার্চ সেন্টার আছে অনেকদিনের পুরোনো। সেটা দেখতে পারিস।

থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ বাবা।

অর্চিষ্মান আছে নাকি হাতের কাছে?

বাবা জামাইয়ের সঙ্গে আলাপ করতে লাগলেন। আমি পকোড়ার খোঁজে বেরোলাম।

গাড়ি আসার কথা ছিল শনিবার সকাল দশটায়, এল এগারোটা বাজতে দশে। আমরা ততক্ষণ গেস্টহাউসের সামনের রাস্তা দিয়ে এদিকে এক কিলোমিটার ওদিকে এক কিলোমিটার মতো হেঁটে ফেললাম, ছাদে দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ ফোটো সেশন করলাম। এই করে প’নে এগারোটা বাজল। তখন ‘ধুত্তেরি’ বলে ঘরে ঢুকে বই নিয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়েছি এমন সময় শুনি বাইরে প্যাঁ প্যাঁ প্যাঁ।

গাড়ি চলল। আকাশ কালকের থেকে পরিষ্কার কিন্তু ঝকঝকে রোদ এখনও বেরোয়নি। মুক্তেশ্বরে ভিউর সম্ভাবনা এখনও আশান্বিত হওয়ার মতো কিছু নয়। পথের রক্ষণাবেক্ষণ যথারীতি ভালো। চকচকে পথ, ঝকঝকে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হু হু করে গাড়ি ছুটল। খাদের ধারে ধারে মোটা স্ল্যাবের পাঁচিলের গায়ে শ্যাওলা জমে রয়েছে। বেশ কয়েকটা রোগা কিন্তু তেজী ঝর্ণাও পেরোলাম। চলতে চলতে কুয়াশা ক্রমে বাড়তে লাগল। বোঝা গেল নন্দাদেবী কপালে নেই। আমি দুঃখিত হওয়ার চেষ্টা করেও পারলাম না। ভিউর মহিমা আমি ঠিক বুঝি না। দূরে বরফঢাকা পাহাড় ঝলমল করতে দেখলে ভালো লাগে ঠিকই, কিন্তু না দেখতে পেলেও আফসোস হয় না। হাতের কাছের সবুজ পাহাড়, উইন্ডস্ক্রিনের ওপাশে গাছের চাঁদোয়াঢাকা মোলায়েম রাস্তা, রাস্তার ধারে ধারে আপেলবাগান – এও তো ভিউ। সি. আর. পার্কের নোংরা বাজারে এ ভিউই বা কে দু’বেলা দেখতে সাধছে?

রামগড়ের খ্যাতি আছে ফ্রুট বোল অফ কুমাউন বলে। আপেল, পিচ, ন্যাসপাতি গাছে পাহাড় একেবারে ছয়লাপ। আমাদের গেস্টহাউসের পেছনেই আছে একখানা অরচার্ড, সেটায় কাল সকালে ইচ্ছে হলে যেতে পারি। বাগানে আপেল আর বেশি নেই, সব চলে গেছে দিল্লিবম্বের বাজারে, এখন যে ক’টা আছে মালিকরা তাদের ওপর নীল মশারি বিছিয়ে রেখেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম পাখির ভয়ে কি না। জানা গেল পাখির ভয় তো আছেই, তার থেকেও বেশি আছে বৃষ্টির ভয়। বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে আপেলের গায়ে কালো কালো দাগ হয়ে যাবে আর অমনি শহুরে বাবুরা সে আপেল দেখে নাক কুঁচকোবেন।

মুক্তেশ্বরের অল্প আগে ভাটেলিয়া বলে একটা ছোট বাজার মতো জায়গা এল। বেশ কয়েকটা দোকান, জুতোর, মিষ্টির, ফলের। দোকানের মাথায় করিনা কাপুর খুব কায়দা করে মাথা হেলিয়ে লিমকা খাচ্ছেন। আমি জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে দেখতে দেখতে চললাম। বব্বু বর্মা কা জেনারাল স্টোর্স, বব্বু বর্মা কা মোবাইল কি দুকান, বব্বু বর্মা কা সোনে কি গহনে কি দুকান। বব্বু বর্মার বংশধর হয়ে জন্মালে বেশ পায়ের ওপর পা তুলে জীবন কাটানো যেত। মিসটেক মিসটেক।

একটু বাদে রাস্তার পাশে দাঁড় করানো অনেকগুলো গাড়ির পাশে ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষে ড্রাইভারজী বললেন, ‘মুক্তেশ্বর আ গয়া।’



পাহাড়ের ভিউ বাদ দিলে মুক্তেশ্বরের মুখ্য আকর্ষণ হচ্ছে সাড়ে তিনশো বছরের পুরোনো একটা শিবের মন্দির। মন্দির যেমন হয় তেমনই। উঁচু উঁচু সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাও, জুতো খোল, ঘণ্টা বাজাতে ইচ্ছে হলে বাজাও, পুজো দিতে ইচ্ছে হলে দাও, না হলে ভেজা মেঝেতে পা টিপে টিপে মন্দিরের আশেপাশে ঘোরো। মোটা মোটা গাছের গুঁড়ি গায়ে মানসিকের সুতো পেঁচিয়ে আরও মোটা হয়ে গেছে, দেখ। তারপর আবার পা টিপে টিপে এসে জুতো পরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এস।   

মুক্তেশ্বরের মন্দির থেকে নেমে এসে একটা প্যাঁচালো রাস্তা দিয়ে পেছন দিকে খানিকটা হেঁটে গেলে যে জায়গাটা আসে সেটা দেখেই আমার প্রথমে জে এন ইউ ক্যাম্পাসের পার্থসারথি রকসের কথা মনে পড়েছিল। এই জায়গাটার নাম অবশ্য পার্থসারথি রকস নয়, এই জায়গাটার নাম হচ্ছে চউলি কি জালি। অনেকদিন আগে, আমিও যখন জন্মাইনি, তখন নাকি এখানে এক দেবীর সঙ্গে এক দৈত্যের মারকাটারি যুদ্ধ হয়েছিল। এখানে দাঁড়ালেই চোখের সামনে নন্দাদেবী ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গকে দেখতে পাওয়ার কথা, কিন্তু মেঘের চোটে আমরা কিছু দেখতে পাইনি।
   

আনা কারেনিনা বলে গেছেন, সব সুখী সংসারই অবিকল এক, বৈচিত্র্য দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে অসুখী সংসারে। এক একটার এক এক রকম অসুখ। আনা কারেনিনা সুখঅসুখের বিষয় আমার থেকে অনেক বেশি বোঝেন, তাঁর কথার ওপর কথা আমি বলতে চাই না। খালি সামান্য একটি পর্যবেক্ষণ জুড়তে চাই। আমার পর্যবেক্ষণ অবশ্য অসুখের মতো ভারি ব্যাপার সংক্রান্তও নয়, বরং সমস্যাজনিত বলা উচিত। সব সংসারের সমস্যা আলাদা আলাদা হয় কিন্তু প্রতিটি সংসারের একটি নিজস্ব সমস্যা থাকে। যেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খুব বেশি বদলায় না। অর্থাৎ কি না থিম সমস্যা। ছোটবেলায় দেখেছি আমার বাবামায়ের সংসারের থিম ছিল লেট হয়ে যাওয়া। সব জায়গাতেই আমরা শেষমুহূর্তে হাঁপাতে হাঁপাতে পৌঁছতাম। এটার জন্য যে বাড়ির কোনও একজন নির্দিষ্ট সদস্যকে দায়ী করা যায় তেমন নয় কিন্তু। দোষী চিহ্নিত করতে পারলে তো সে দোষ শুধরে নেওয়াই যায়, যায় না বলেই দোষ ক্রমে দীর্ঘস্থায়ী থিমে পরিণত হয়। কিছুতেই আমরা ভদ্রস্থ সময়ে বাড়ি থেকে বেরোতে পারতাম না। বাবা বলতেন, আমি তো রেডি। মা বলতেন, আমিও তো রেডি। আর আমি তো সেই কখন থেকে রেডি। বারান্দার উঁচু চেয়ারে বসে বাটা কোম্পানির গুড বয় শু পরা পা দুলিয়ে দুলিয়ে আকাশবাতাস দেখছি। সকলেই রেডি অথচ বাড়ি থেকে বেরোনো যাচ্ছে না। আশ্চর্য ব্যাপার।

এক বছর দু’মাস অতিবাহিত হওয়ার পর দেখছি আমার আর অর্চিষ্মানের সংসারেও একটা সমস্যার থিম ফুটে বেরোচ্ছে। আমাদের কেবলই ক্যাশ ফুরিয়ে যায়। আর ঠিক সেই সব জায়গাতেই ফুরোয় যেখানে কার্ড চলে না। গোয়া নিবাস, কুমায়ুন মণ্ডল গেস্টহাউস। ঠিক সেই সব জায়গাতেই ফুরোয় যেখানে হাতের কাছে এ টি এম-এর টিকিটিও নেই। দোষ আমাদের কারও নয়, দোষ পরিস্থিতির। এই যেমন রামগড়ের পরিস্থিতিটার কথাই ধরা যাক। মানিব্যাগে ক্যাশ ছিল যথেষ্টই। কিন্তু দুম করে গাড়িভাড়া করে মুক্তেশ্বর চলে যাওয়ায় সে টাকা খরচ হয়ে গেল, এবং যা হাতে রইল, হিসেব করে দেখা গেল সে টাকা দিয়ে লাঞ্চ ডিনার চা পকোড়ার দাম মিটিয়ে চেক আউট করে বেরোনো যাবে না।

আমরা মানিব্যাগ হাতড়ে একে অপরের দিকে তাকাতাকি করছি দেখে রিসেপশনিস্ট আশ্বাস দিলেন। মুক্তেশ্বরে নাকি একটা এ টি এম খুলেছে স্টেট ব্যাংকের। বেড়াতে গিয়ে টাকা তুলে নিলেই হবে। ফাঁড়া জোর কাটানো গেছে ভেবে আমরা নাচতে নাচতে মুক্তেশ্বরের দিকে রওনা দিলাম। এ সব জায়গার একটা বড় সুবিধে হচ্ছে যে পাহাড়ের টঙে বেশি জায়গা পাওয়া যায় না বলে সব জিনিস কাছাকাছি বানাতে হয়। মন্দির, এ টি এম, গেস্টহাউস, সবই একটা আরেকটার ঘাড়ের ওপর। মন্দির যাওয়ার পথে আমরা এ টি এম দেখতে পেলাম আর ঠিক করলাম ফেরার পথে টাকা তুলে নিয়ে যাব।

ফেরার পথে কী হল নিশ্চয় আঁচ করতে পারছেনঝকঝকে নতুন এ টি এম-এ ঢুকে বোতাম টেপাটিপি করতেই স্ক্রিনে সেই সাংঘাতিক ক’টি কথা ভেসে উঠল। আউট অফ অর্ডার। বাইরে বেরিয়ে দেখি ব্যাংকের দরজার বাইরে একজন দ্বাররক্ষী উদাস মুখে বসে বসে খইনি টিপছেন। আমাকে দেখে বললেন, 'সার্ভার ডাউন হ্যায়।' আমি বললাম, ‘আসপাস অর কোই. . .?’ তাতে উনি খইনিতে ফাইন্যাল চাঁটি মেরে, ফুঁ দিয়ে ভুষিটুষি উড়িয়ে যে জায়গাটার নাম বললেন, সেটা বেসিক্যালি আরেকটা হিলস্টেশন। পরের বছর গরমে আসার প্ল্যান করছি।

হোটেলে ফেরার পথে আবার বব্বু বর্মার সাম্রাজ্য, মশারিমোড়া গোলাপি আপেলের বাগান ইত্যাদি এল আর গেল, কিন্তু এবার আর অত মন দিতে পারছিলাম না। ক্যাশ জোগাড়ের চিন্তায় তখন মাথা ভার। একটা সম্ভাবনার কথা দুজনের মাথাতেই এসেছিল, হোটেলে ফিরে দৌড়ে রিসেপশনিস্টকে জিজ্ঞাসা করতে যেতে তিনিও সেই কথাটাই বললেন।

ভওয়ালি।

সেই যে নোংরা টাউনশিপ পেরিয়ে এসেছিলাম রামগড় মনে আছে? খুব নাক কুঁচকেছিলাম? আমাদের এখন বাঁচালে বাঁচাতে পারে ভওয়ালি। আর কেউ নয়। হ্যাঁ, রামগড় থেকে বাস যায় বৈকি। এই তো এখন বাজে দুটো দশ, টল্লা রামগড় থেকে আড়াইটের সময় মল্লা বাজারে বাস আসবে, সেটায় করে ভওয়ালি গিয়ে এ টি এম থেকে টাকা তুলে সাড়ে তিনটের বাসে চেপে আবার ফিরে আসলেই হবে।

আড়াইটে? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার পেছন ফিরে ছুটতে যাব, দয়ালু রিসেপশনিস্ট ডেকে বললেন, আরে খেয়ে যান, রান্না হয়ে গেছে। ডাইনিং রুমে হইচই পড়ে গেল। আমাদের বাঁধা চেয়ারদুটোতে বসে আবার ভাত, চাপাটি, ডাল আর মিক্সড ভেজ কোনওমতে নাকে মুখে গুঁজে আমরা ছুটে রাস্তায় বেরোলাম। রিসেপশনিস্ট গেস্টহাউসের উঁচু বারান্দায় দাঁড়িয়ে চোখের ওপর হাতের ছাউনি দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন, আমাদের আশ্বাস দিয়ে বললেন, ‘আরে ধীরে যাইয়ে, আভিভি দো কিলোমিটার দূর হ্যায়।’

আমরা একশো মিটার খাড়াই রাস্তা ভরা পেটে জিভ বার করে হাঁপাতে হাঁপাতে উঠতেই বাস প্রবল বিক্রমে এসে আমাদের পেছন থেকে ধরে ফেলল। কী ভিড়, বাপরে। সিট পাওয়ার প্রশ্নই নেই। আমি সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর মাথার ওপর আর ইঞ্চিদুয়েক জায়গা বাকি ছিল, অর্চিষ্মান বেচারাকে প্রায় কোমর থেকে হাফ ভাঁজ করে দাঁড়াতে হল। বাস গোঁ গোঁ আওয়াজ তুলে হেলেদুলে চলল। ভিড়, অষ্টাবক্র ভঙ্গি আর মাথার ভেতর ভয় (ভওয়ালির এ টি এমেরও যদি সার্ভার ডাউন থাকে?), সে এক চমৎকার ত্র্যহস্পর্শ। অবশেষে অনন্তকাল পরে দূর থেকে ভওয়ালির বাজার দেখা গেল, আমরা লাফ মেরে নেমে দৌড়লাম।

এ টি এম কাঁহা ভাইসাব?

আগে, আগে।

আগে আগে করতে করতে যখন শহর প্রায় ফুরোয় ফুরোয়, তখন চেনা নীলসাদা বোর্ড দেখে মন নেচে উঠল। গোটা গোটা করে লেখা ভারতীয় স্টেট ব্যাংক, তার নিচে জাম্বো সাইজের একখানা তীরচিহ্ন আঁকা। ব্লিচিং পাউডার ছেটানো একটা ছোট গলি আর খান দশেক সিঁড়ি পেরিয়ে অবশেষে এ টি এম। মহিমায় আমাদের কাছে তখন মুক্তেশ্বরবাবার মন্দিরের থেকে কোনও অংশে কম নয়। কার্ড ঢুকিয়ে বোতাম টিপে যখন দাঁড়িয়ে আছি তখন নাড়ির স্পিড নির্ঘাত মিনিটে মিনিমাম দেড়শো।

কা লে ক্ট  ই য়ো র  ক্যা শ।

আমি আগেও বলেছি, এখনও বলি, পরেও বলব। দীপিকা পাডুকোনকে কোন ব্যাংক বিশ্বমানের পরিষেবা দেয় তা জেনে আমার লাভ নেই। আমাকে ঘাটে মাঠে জলে জঙ্গলে পাহাড়ের টঙে যে উদ্ধার করে আমার আনুগত্য শুধু তার প্রতি। সে-ই আমার দিক থেকে মুক্তেশ্বরে মুখ ফেরাবে, আবার সে-ই ভওয়ালিতে আমাকে বিপদ থেকে হাত ধরে টেনে তুলবে। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নেক্সট ফিক্সড ডিপোজিটটাও এস বি আই-তেই খুলব ঠিক করে ফেলেছি।

এতক্ষণ পঞ্চেন্দ্রিয় নিজেদের নিয়ে বিভোর হয়ে ছিল, নিজেদের ভয়, নিজেদের নিরাপত্তা, নিজেদের সমস্যা। সে সমস্যা মিটে যেতে আবার নাককানচোখ খুলে গেল। ভওয়ালির চৌরাহার মোড়ে ফিরতি বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে চারদিক দেখতে লাগলাম। ছোট জুতোর দোকানের বাইরের রাখা বেঞ্চিতে ধৈর্য ধরে খদ্দেরের আশায় বসে রয়েছেন ব্যবসায়ী। পাশের সবজির দোকানের সামনের ঝুড়িতে দাদুর ছাতার কাঠের হ্যান্ডেলের মতো বেঁকানো একরকম জিনিস গাঁট করে বেঁধে রাখা আছে, এই বিঘৎখানেক লম্বা হবে, ট্র্যাফিক পুলিশ থেকে শুরু করে অফিসফেরৎ বাবু সকলেই সেটা কিনে বাড়ি যাচ্ছেন। খুব ভালো খেতে বোধহয়। একের পর এক জিপ, টাটা সুমো, সরকারি বেসরকারি বাস আসছে, লোক নামাচ্ছে, তুলছে, আবার ভোঁ বাজিয়ে চলে যাচ্ছে। দূরে কয়েকটা পুলিশ দাঁড়িয়ে গজল্লা করছে, কোনও টাটা সুমো অন্যায় রকম বেশি সময় দাঁড়িয়ে রাস্তা জ্যাম করলে মোটা তেলমাখানো বাঁশের লাঠি উঁচিয়ে ‘হ্যাট্‌ হ্যাট্‌’ বলছে, অমনি সুমো সুড়সুড়িয়ে সরে পড়ছে।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যখন পায়ে ব্যথা হয়ে গেছে, আমি মাঝে মাঝে এক পায়ে দাঁড়িয়ে অন্য পা-টাকে একটু বিশ্রাম দিচ্ছি, এমন সময় একজন দয়ালু দেখতে ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আপলোগ কাঁহা যাইয়েগা?’ বললাম, ‘রামগড়।’ ‘মল্লা ইয়া টল্লা?’ এ প্রশ্নটার উত্তর এখন জানি! যুগ্মকণ্ঠে চেঁচিয়ে বললাম, ‘মল্লা মল্লা!’ ভদ্রলোক আশা দিলেন, মল্লার বাস এই এল বলে। একটু পরে দেখি দূরে ময়ূরকণ্ঠী রঙের একখানা রাজকীয় বাস হেলেদুলে আসছে। আমি হ্যাংলার মতো জুলজুল করে তাকিয়ে আছি, হঠাৎ ভদ্রলোক বলে উঠলেন, ওই তো এসে গেছে মল্লার বাস। আমি খুব করুণ গলায় বলার চেষ্টা করলাম, কই মল্লার বাস তো ধুলোমাখা আর বেঁটেমতো, সে বাসে তো ঘাড় সোজা করে দাঁড়ানো যায় না, এমন সময় কনুইয়ে টান পড়ল। দেখি অর্চিষ্মান অলরেডি বাসের দিকে ছুটবে বলে রেডি হয়েছে।

শিগগিরি চল, সিট খালি আছে এখনও কয়েকটা।

আমার রূপান্তরটা যদি আপনাদের দেখাতে পারতাম। কোথায় গেল সেই কাঁদোকাঁদো ভাব, কোথায় গেল পায়ের ব্যথা। ছুটে অর্চিষ্মানকে ওভারটেক করে, পাহাড়ি বাসের পাহাড়ের মতো উঁচু সিঁড়ি ‘হেঁইও’ বলে চড়ে, মেঝেয় রাখা বস্তার হার্ডল লাফিয়েঝাঁপিয়ে পেরিয়ে, এক রোগা ভদ্রলোককে এক ধাক্কায় জানালার দিকে চেপ্টে দিয়ে সিটের ধার দখল করা দেখে অর্চিষ্মানের চোখ কপালে।

তারপর আরও অন্তত লাখখানেক লোক বাসটায় উঠল। ছেলেবুড়ো, নারীপুরুষ, রোগামোটা, ফর্সাকালো। সবশেষে যখন ভাবছি এবার বাসটা চলতে পারলে হয়, তখন খিলখিল করতে করতে একদল কিশোরী উঠে, তাদের বিরাটবপু স্কুলব্যাগের গুঁতো দিয়ে ভিড় ফাঁক করে আমার আর অর্চিষ্মানের মধ্যবর্তী প্যাসেজটায় এসে দাঁড়াল। দাঁড়িয়েই কথা নেই বার্তা নেই, শুরু হল হাসি। খিলখিল খিলখিল। এ ওর গায়ে গড়িয়ে পড়ে তো ও এর। আধমিনিট কথা, তিন মিনিট হাসি। সেই খিলখিলানি শুনতে শুনতে যখন আবার ভিড় ঠেলে মল্লা বাজারে নামলাম অর্চিষ্মান প্রথমেই জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমিও ওই বয়সে অত হাসতে নাকি? বাপ রে বাপ।’

আমি মুখে একটা খুব স্মাগ লুক ফুটিয়ে বললাম, ‘আমি? ফুঃ। এদের সবার হাসি যোগ করে সেটাকে পঁচিশ দিয়ে গুণ করলে যেটা হবে সেটা আমার হাসির কাছাকাছি আসলেও আসতে পারে, তাও খানিকটা কম পড়বে।’

দিন ফুরিয়ে এল। আমরা হা-ক্লান্ত, কিন্তু সফল। এখন একবার বিছানায় এলিয়ে পড়লে আর উঠতে পারব না, তাই ঘরে যাওয়ার পথেই চা পকোড়ার কথা বলে যাওয়া হল। জানালার কাঁচের বাইরে অন্ধকার জমতে শুরু করেছে। ঝাপসা হয়ে আসছে দৃষ্টি। অদ্যই আমাদের রামগড়ে শেষ রজনী। আর চব্বিশ ঘণ্টা পর এই সময় শতাব্দী দিল্লির দিকে হাফ রাস্তা পেরিয়ে গেছে। পরশু অফিস। ডেডলাইন। টিভিতে খবরের চ্যানেলের চিৎকার। ফ্রিজে জমে যাওয়া মাছের ঝোল। মাগো।

তোমার মন খারাপ হচ্ছে না?

আবার আসব তো। শীতকালে আসব, মুক্তেশ্বরে থাকব। ঘুম থেকে উঠে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বসে বসে দেখব জানালার বাইরে নন্দাদেবী ঝলমল করছেন। জাস্ট ভাবো।

বুকের ভেতর দ্রুত ঘিরে আসা কুয়াশার ভেতর সেই ঝলমলে দৃশ্য প্রাণপণে কল্পনা করতে করতে আমি কচমচ করে পকোড়া খেতে লাগলাম।


                                                                                                                      (চলবে)


Comments

  1. Anekdin por tomar blog e ese Ramgarh kahini pore khooob bhalo laglo , majhkhane bohudin kichu pora hoyni , ektu byasto chilam , kotha diye je somay chole jaay koto manusher somay kata te somossya hoy aar amar sobsomay somay er obhab taai bodh hoy , last porechilaam tomar rohossyo golpo ta , ota niye kichu lekhar o chilo . jaaihok tomar erokom ghure beranor moto bhromon I amar o bhalo lage . think erokom i .

    ReplyDelete
  2. Amar comment er last line e ota think noy theek hobe.

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ, অনিন্দিতা। সময়ের ব্যাপারটাতে তোমার সঙ্গে আমার একটুও মিলল না দেখা যাচ্ছে, আমার হাতে সময় এত বেশি থাকে সবসময়ই যে ক্যান্ডি ক্রাশ খেলে তাকে খরচ করতে হয়।

      Delete
  3. Khub sundor lekha :)

    ReplyDelete
  4. college-er kichhu bondhuder sathey mukteshwar gechhilam. 99-er december-e. shey ek mojaar obhigyota. 5 bondhu - kono planning chharai hoot korey choley giyechhi. kothay thakbo taar-o thik nei. praye 2 ghonta dhorey loop-e "tuje yaad na meri ayi, kisi se ab kya kehna" shuniye trekker-ta obosheshey ekta fnaka chottor-e namiye diye bollo, syar ei eshe gechhi. neme dekhi charidike kono jono manushshi nei. dhu dhu. 3 jon rastar dharey boshlo. baki dujon onek ghurey phirey khobor niye elo je shorkari guest house bondho. thakar aar kono jaiga nei. :)
    mathay haat. er moddhey ekjon jonoiko pothocharir sathey dekha. amra hoi hoi korey takey pakraam. tini khanik amader haaaaa korey dekhlen. tarpor bollen - ekhane keno eshechho? ekhane to dekhar kichhu nei!!!! boley choley gelen.
    hai huku!
    edike shondhey hoy hoy. joi ma kali boley abar du jon beriye porlo. ebar ultodiker rastay. oi animal research centre-er dikey. ettu porey sathey ak gaal hashi niye firlo. research centre-er hostel-er warden bangali. desher chhelera eshechhe shune tini jhotpot amader jonyo duto ghor khule diyechhen. free-te thaka. free-te hostel-er mess-e khawa. aar ki chai?
    and the best part is: porer du din ektuo megh chhilo na :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. বোঝো। কপালে থাকলে কী না হয়, অ্যাঁ? তোমাদের অ্যাডভেঞ্চারের কথা শুনে খুব ভালো লাগল, সোমনাথ। এ'রকম বেড়ানো একটা বয়সের পর আর বোধহয় হয় না, তাই না? ভেবেই আমার মনটা কেমন হয়ে যাচ্ছে।

      যাই হোক। তোমার গল্পের আরেকটা জায়গা আমার মনে ধরেছে বেশ। কোনও জায়গায় 'কিচ্ছু দেখার নেই' শুনলেই আমার আজকাল দৌড়ে সেই জায়গাটায় যেতে ইচ্ছে করে। আমার ভালোলাগা নিশ্চিত করতে ওর থেকে ভালো শর্ত আর কিছু নেই।

      Delete
    2. সেইজন্যই তো আমার কলম্বাস এত ভালো লাগলো। দৌড়ে দৌড়ে সাইট-সীইং করতে হলে শুধু কি কি মিস করে গেলাম সেটাই ভাবতাম ফিরে। আর এখন মনে হচ্ছে যেটুকু দেখেছি সেটুকুই উপরি পাওনা।

      Delete
    3. সিরিয়াসলি সুগত। নাইন পয়েন্টস দেখাবে বলে সেভেন অ্যান্ড হাফ পয়েন্টস দেখিয়ে টাকা মারল কি না, এই চিন্তা করব না পয়েন্টসগুলো দেখব বলুন দেখি।

      Delete
  5. তোমার লেখার সাথে বেড়িয়ে এলাম আমিও রামগড়. তবে মনটা বেশ খারাপও হয়ে গেল. কতদিন পাহাড় দেখি না...কোথাও বেড়াতে যাই না. ধুস ভাল্লাগে না........

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে আরে, মন খারাপ করে না দেবশ্রী। এই দেখ, খুব শিগগিরি কোথাও বেড়াতে যাওয়া ঠিক হয়ে যাবে তোমাদের। তুমি পাহাড় দেখ না বলে আফসোস করছ, আমাদের সমুদ্র না দেখে দেখে প্রাণ একেবারে আইঢাই। ভগবানই জানেন কবে দেখব।

      Delete
    2. পাহাড় হোক বা সমুদ্র কিছু একটা খুব শিগ্গির না দেখলে আমি পাগল হয়ে যাব. রোজ সকালে উঠের থেকে খাড়া বড়ি তোড় আর থোড় বড়ি খাড়া করতে করতে আমি বোর হয়ে গেছি

      Delete
  6. থিমের ব্যাপারটা অসামান্য, আর ক্যাশ তোলার অংশটুকু একেবারে যাকে বলে হ্যাডলি চেজ, থুড়ি, ডেড্‌লি চেজ। :)

    এই যে একটা গল্পের মধ্যে নানা ধরণের সাব-গল্প জুড়ে দেন, এতে গোটা ব্যাপারটা এত উপাদেয় হয় যে কি বলব। ঠিক যেন পাঁচ কোর্সের মিল। :) :)

    ভ্রমণ-কাহিনি লেখার একটা সহজাত অনায়াস দক্ষতা আছে আপনার, তাই ও নিয়ে কিছু না বলাই ভাল; ছবি-ড়েস্ক্রিপশান সবকিছুর জন্য উচ্চ পঞ্চ। :)

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাঃ বাঃ, প্রশংসা শুনে খুব খুশি হলাম অরিজিত। থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।

      Delete
  7. পড়তে পড়তে যতটা মন খারাপ হচ্ছিল ততটা আর হলো না| শেষে যখন একটা ছোট্ট করে "(চলবে)" দেখে| এই থিম ব্যাপার টা বেশ ভালো বলেছ| আমি এখন বসে বসে ভাবি আমাদের বাড়ি তে কি থিম| আর ভিউ-এর মহিমা নিয়ে আমিও একমত|
    তোমার লেখা আর ছবি নিয়ে আর কিছু বললাম না| আগের পোস্ট এর কমেন্ট টা আবার পড়ে নিও|
    আর শেষে একটা ছোট্ট প্রশ্ন| এটা তো তোমার চা নয়?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক ধরেছ অপরাজিতা, এটা আমার চা নয়। সকালের চা হিসেবে যদিও বা চলতে পারে, বিকেলের চা তো কোনওমতেই নয়। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে রামগড়ের গেস্টহাউসটি অতটাও ধোপদুরস্ত না। ক্যান্টিনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে। 'আমার দুধ চিনি ছাড়া চাই, আমার বরের দুধ চিনিশুদ্ধু চাই' এত প্যাকনা চলবে না। (অবশ্য আমরা চালাতে যাইনি, কাজেই চলত কিনা জানি না। রকমসকম দেখে মনে হয়েছিল চলবে না, তাই চেষ্টাও করিনি)। ওঁরা দুধটা চায়ে দিয়েই দিতেন, চিনিটা বুদ্ধি করে আলাদা নিয়ে আসতেন। তবে কী জান তো অপরাজিতা, খারাপ লাগত না। অত কড়া, দুধ দেওয়া চা---বাড়িতে খেতে কান্না পাবে, কিন্তু ওখানে যখন দরজায় টোকা মেরে দিয়ে যেত আর আমি লেপের তলা থেকে হাই তুলতে তুলতে বেরিয়ে সে চায়ে চুমুক দিতাম, ঠিক মনে হত অমৃত খাচ্ছি। কাজেই নো নালিশ।

      Delete
  8. Pakora gulo dekhei emon monkamon holo je ei mora apisher food courtey dourey giye ektu ada cha ar bread pakora kheye ashte holo.

    Daroon hochchhe byapar ta. Ei bracket er modhye "cholbe" kothata Anandamelar kotha mone koriye day. Chhotobelay kotodin je ei "cholbe"r poth cheye katiyechhi! :)

    Porer sonkhyar opekkhay roilam.

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলি বিম্ববতী, আমাদের 'ফুড কোর্টে' (বেসমেন্টের ক্যান্টিন) আজ লাঞ্চে কী ছিল জান? চানে কি দাল আর সিতাফল। সিতাফল। ভাবো একবার। খেতে গিয়ে এমন কান্না পেয়েছে যে দুর্ঘটনাস্থলে বসেই স্থির করে ফেলেছি রাতে বিরিয়ানি খাব। খাবই খাব। কেউ আটকাতে পারবে না।

      Delete
    2. Ekdom thik Bimbabati! Ar porer sonkha te agey sei dharabahik upanyaser patata porte hobe!

      Delete
  9. নন্দাদেবী ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গকে dekha na geleo ja dekhe esechho aha ki darun. chhobi dekhei jete ichhe korchhe. beranor galpo darun hochhe....
    kintu protyekbar ei cha-pakorar chhobite atke jachhi je... :-)

    ReplyDelete
    Replies
    1. পকোড়াগুলো সত্যিই ভালো ছিল, ইচ্ছাডানা। পকোড়া শুনতে তুচ্ছ, কিন্তু ব্যাপারটা কিন্তু টেকনিক্যাল, বলুন? বেশিরভাগ জায়গাতেই বেসন বেশি দিয়ে দেয়। এদের পকোড়া একেবারে পারফেক্ট ছিল। হালকা, মুচমুচে, তেলতেলে নয়।

      Delete
  10. আজ সকালে অফিসে প্রেসেন্টেশন দেওয়ার কথা ছিল, কাল রাত অবধি জেগে সেইটাই তৈরী করছিলাম। তারপর দেখলাম রামগড় ২ এলো, আমিও পেপার পড়া শেষ করে বিছানায় শুয়ে আপনার লেখাটা পড়া শুরু করলাম। সেটা শেষ করলাম অবশ্য ঘন্টা পাঁচেক পরে, কিন্তু তাতে আপনার কোনো দোষ নেই, আমিই খুব ক্লান্ত ছিলাম বলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তবে ঘুম থেকে উঠে অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে দেখেও আগে ব্লগ পড়া শেষ করে তবে অন্য কাজ।

    বেড়ানোর বর্ণনা তো খুব সুন্দর হয়েইছে, তবে তার থেকেও ভালো লেগেছে থিমের গল্পটা। বিদেশে গিয়ে ক্যাশ ফুরিয়ে গেলে মহা বিপদ, আমারও হয়েছে ও জিনিস। বাড়িতে বলার পর কাকিমার কাছে বকুনি খাননি? তবে আপনার সঙ্গে এস বি আই এর প্রেমে পড়তে পারলামনা। তিক্ত অভিজ্ঞতা একটু বেশিই আছে। পরের অংশটার অপেক্ষায় রইলাম। আপনার (আগের) লেখা পড়ে একটা লাভ হয়েছে, ভাওয়ালির নামটা ভুলে গেছিলাম আমাদের বেড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে, সেটা আবার মনে পড়ে গেছে। এখনো মনে পড়ছেনা কেন গেছিলাম, বা আদৌ গেছিলাম কিনা। তবে নামটা চেনা তাতে সন্দেহ নেই। সেই সময়ে একটা খাতায় একটা ছেলেমানুষী ভ্রমণ কাহিনী টাইপের কিছু লিখেছিলাম। এবার বাড়ি গিয়ে সেটা খুঁজে দেখব।

    অফিস আসতে একটু দেরী হয়ে গেল। ছুটতে ছুটতে কনফারেন্স রুমে ঢুকে প্রজেক্টরে ল্যাপটপ লাগিয়ে স্টার্ট করলাম, আর দেয়ালজোড়া স্ক্রীনের ওপর জ্বলজ্বল করে উঠল আপনার চা আর পাকোড়া। আমার বস আর পাঁচজন টীম মেম্বার তার জন্য আমায় কতটা "জাজ" করল কেজানে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. নিজের একখান 'বাড়ি' হওয়ার ওই সুবিধে সুগত। আসল বাড়িতে ফোন করে আর সব খুঁটিনাটি দোষ স্বীকার করতে হয় না, এই 'বাড়ি'র কাছে খোলসা করে বললেই (অবশ্য বলার কিছু নেই, যা হচ্ছে সব সে জানতেই পারছে) মন হালকা।

      এস বি আই নিয়ে আপনার মতটা আমি বুঝতে পারছি সুগত। আমারও স্টেট ব্যাংকে খারাপ অভিজ্ঞতা আছে, তবে প্রাইভেট ব্যাংকের অভিজ্ঞতাও বাঁধিয়ে রাখার মতো। প্রাইভেট ব্যাংকের সঙ্গে এস বি আই-এর তফাৎ আমি যা দেখেছি তা মূলত টাই আর হাই হিল, আর বাক্যের শুরুতে, মাঝে, শেষে তিরিশবার 'ম্যাম ম্যাম ম্যাম'। প্রাইভেটে ফাউ পাবেন 'সে কী, মোটে এইটুকু ডিপোজিট রাখলে কী করে চলবে, আরও কিছু ছাড়ুন' ভঙ্গি। এস বি আই-য়ে এ সব নেই, আছে 'যাই করি না কেন চাকরি তো আর যাবে না'র কনফিডেন্স এবং তজ্জনিত বদ্‌ব্যবহার। তবু যখন দেখি হাইরাইজের মই বেয়ে ইঁট পৌঁছে দেওয়া থেকে ঘণ্টাখানেকের ছুটি নিয়ে এসে কেউ এস বি আই-য়ে লাইন দিচ্ছে, নীলকাগজ হাতে নিয়ে কাউন্টারের সামনে 'কেয়া লিখনা হ্যায়?' বলে ঘুরঘুর করছে এবং কাউন্টারের দিদিমণি অত্যন্ত বিরক্ত মুখে, ধমকধামক সহযোগে সে কাগজ ফিলআপ করে দিচ্ছেন, তখন নিজের প্রতি অবিচারগুলোর জ্বালা একটু হলেও যেন কমে।

      আপনার ভ্রমণকাহিনিটা খুঁজে পেলে ব্লগে ছাপতে পারেন, পড়া যাবে বেশ। আমার পকোড়ার ছবি প্রেজেন্টেশনে দেখানো হয়েছে শুনে অত্যন্ত গর্ব অনুভব করছি। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  11. Hu hu kore ek nihswashe pore fellam...prothome vebechilam amar chotobelar bondhu rishir bari je Ramgarh e....RAnchir kache...e bujhi sei Ramgarh....ektu porei uttarakhand er naam peye ektu ashabhong hoyechilo...ranchir RAmgarh eo kichchu nei taai vabchilam tor lekhar doulote chotobelataay arekbaar ghure asha hobe....ei RAmgorh pore obosyo aar thamteo paarini..pahar theke naamteo parini. Ar chotobelay kyano sob belay ei RAmgarh e asha jaaye emon mone hoxhche. Ei ratrer ondhokar kore notun android er subaade ekkebare ekl ekl tor lekha pori .....eta aamar ekhon sobcheye priyo obosorjapon. Khuuub valo lagche....

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ, সাহানা। আরে রামগড় বলে উইকিপিডিয়ায় অন্তত দশখানা লিংক বেরোয়। রাঁচির রামগড়কেও দেখেছি তাদের ভেতর। রামের ফ্যান ফলোয়িং সাংঘাতিক, যেখানে পেরেছে একখানা জায়গার নাম রেখে দিয়েছে।

      প্রবাসে তোর দিন ভালো কাটছে আশা করি। দরিয়ার জন্য অনেক ভালোবাসা পাঠালাম।

      Delete
    2. Probashe din kete jachche . tor lekha aar watsapp e school er bondhuder sathe majhe sajhe adda ekhne aamar bhalo thakar onekta rosod jogaay. Doriya r khola mathe dourodouri korar anondo onek ta amay o bhoriye rekheche...tobe ekdom pran er kotha jodi boli ghure beranor por mon ta sei nijer bari baribi kore...kplkata kolkata monkemon hoy...november e firbo. Abar kajkormo shuru korte parbo eiaob bhebe valoi kete jachche. Khub valo laage...tor lekha. Toke to valo laagei :)

      Delete
  12. আমি ভাবলাম গল্পটা যেভাবে build up করছ , তাতে আগেরবার সেই বেরবনা বেরবনা করেও বাঘ বেরিয়ে পড়ল, এবার বোধহয় মেঘ সরে গিয়ে নন্দাদেবী বেরিয়ে পরবেন! আপাতত অপেক্ষায় রইলাম রামগড় ৩ এ চমক এর জন্য :) 'চলবে' শব্দটা দেখে যা খুশি হই!

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই সেরেছে কাকলি, রামগড় আপাদমস্তক নিরামিষ জায়গা, চমকের চান্সই নেই। তাই ক্যাশ ফুরিয়ে গেল, পকোড়া খেলাম - এই সব আবোলতাবোল লিখে পাতা ভরাচ্ছি।

      Delete
  13. Darun hoyeche... Ami porlam aj prothom bar.. but ebar roj roj porbo.. Onobodyo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. রোজ অবান্তর পড়ার সিদ্ধান্তটা ভালো, মৌসুমী। লেখা ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশি হলাম। আর এতদিন বাদে অবান্তরের পাতায় তোর দেখা পেয়ে আরও বেশি খুশি হলাম। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  14. Replies
    1. খুব সম্ভবত কাল, রুণা।

      Delete
  15. Mukteswar ta hoye gelo tahole :-)

    ReplyDelete
    Replies
    1. তাই তো দেখছি, শর্মিলা। মুক্তেশ্বরের কথা মাথাতেই ছিল না, রামগড়ের কথাই ভাবছিলাম শুধু। কপালে থাকলে কে আটকাতে পারে, বল?

      Delete
  16. tui toh besh sahashi..khader pasei bose achis mone hocche ! 2nd chabita baddo sundar :) - tinni

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ, বোকা সাহসের অভাব আমার নেই তিন্নি। ছবি কেমন জানি না, রামগড় বড্ড সুন্দর।

      Delete
  17. Bhishon hingshe hochhe :(..mone hochhe ekhuni ei Gurgaon theke palai..tumi eto sundor lekho..chokh bujhlei jeno sob dekte pachhi

    ReplyDelete
    Replies
    1. পালাও পালাও, অদ্বিতীয়া। উইকএন্ডে টুক করে ঘুরে এস। লেখা ভালো লেগেছে জেনে খুশি। থ্যাংক ইউ।

      Delete
  18. সিতা ফল মানে তো আতা ...আয়্যাক ..... সে আবার দুপুরের মেনু ... সাধে কি আপনার এরকম অন্য কোথাও চলে যেতে ইচ্ছা করে :)
    ভালো বলে বিরক্ত করছি না .. কিন্তু বাকি ভ্রমন কাহিনী গুলো বাবাকে পরতে গিয়ে দেখি .. ছবি গুলো সব গাযব .. একটু দেখে নেবেন !!

    ReplyDelete
    Replies
    1. Naa naa. Ekhane kumro ke sitaphal bole majhe majhe. Hindi bhari ashchorjo bhasha.

      Delete
    2. আমিও সীতাফল মানে আতা ভেবেছিলাম। কুমড়োকে সীতাফল বলে সেটা আমি জানতামনা। পুরনো পোস্টের ছবি ভ্যানিশ করে যাওয়ার ব্যাপারটা আমিও কদিন আগে লক্ষ্য করেছি। কি হয়েছে দেখবেন তো।

      Delete
    3. আরে ছবি নিয়ে মহা মুশকিলে পড়েছি। কী যে করি। আত্মদীপ, আপনি অবান্তরের এমন প্রচার করছেন দেখে আনন্দ পেলাম। থ্যাংক ইউ। আতা খেতে দিলে আমি ওখানেই কেঁদে ফেলতাম। কুমড়ো বলে তাও কোনওমতে গলাধঃকরণ করা গেছে।

      Delete
  19. বোঝো! আমিও সীতাফল বলতে 'আতা'-ই ভেবেছিলাম। হিন্দি আশ্চর্য ভাষাই বটে!!

    ReplyDelete
    Replies
    1. না না আতা নয়, কুমড়ো কুমড়ো।

      Delete
  20. ei taka furiye jawa, ar akdom last moment e last atm e giye taka tola. ei type er situation gulo kintu hollywood thriller movie r thakurda. jokhon hoy tokhon chokhe ondhokar, but pore relish kore goppo bolte akdom fatafati lage.

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা একদম হক কথা, কুহেলি। এখানে এত খেলিয়ে লিখেছি, তখন টেনশনে যা তা অবস্থা হয়েছিল।

      Delete

Post a Comment