৩০.৩.২০১৫ - ৫.৪.২০১৫
পরিবেশসংরক্ষণ
সংক্রান্ত নিয়মকানুন না মানার জন্য হজখাস ভিলেজের বেশ ক’টি দোকানে তালা ঝুলেছে।
বেছে বেছে আমাদের পছন্দসই দোকানগুলোতেই। তাতে আমি বেশ কিছুদিন মনমরা হয়ে ছিলাম। (পছন্দের
দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়াতে এবং পছন্দের দোকানরা যে নিয়ম মানছিল না সেটা জেনেও) কিন্তু
মনের প্লট বেশিদিন ফাঁকা পড়ে থাকে না। ভিতপুজোটুজো সারা, হজ খাসের ফাঁকা জমিতে
হুড়মুড়িয়ে দেওয়াল তুলছে শাহপুর জাট ভিলেজ।
শুনলে মনে হতে পারে
আমরা বুঝি এই সব শহুরে নকল ভিলেজে যেতে দারুণ পছন্দ করি। সে রকম নয়। এই সব ভিলেজের
বেশিরভাগ দোকানপাটেরই দরজা ঠেলে ঢোকার সাহস বা সাধ্য কোনওটাই আমাদের নেই। কিন্তু
মুশকিলটা হচ্ছে জোম্যাটো রেটিংপ্রাপ্ত বেশির ভাগ খাবার দোকানই এই রকম ভিলেজগুলোয়।
আগেরবার শাহপুর জাটে
এসেছিলাম বিহারী খানা খেতে, এবার বিলিতি। পটবেলি রুফটপ দেহাতি ক্যাফের খুব কাছেই
আইভি অ্যান্ড বিন ক্যাফে।
চমৎকার সাজানো
দোকান। বসার জন্য দু’রকম জায়গার ব্যবস্থা। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বদ্ধ ঘর আর আইভিলতার
পাঁচিল দেওয়া খোলা ব্যালকনি।
এই সব শহুরে ভিলেজের
বেশিরভাগ দোকানপাটেই কেনাকাটা খাওয়াদাওয়ার থেকে ‘এক্সপেরিয়েন্স’ কে বেশি গুরুত্ব
দেওয়া হয়। মফস্বল থেকে শহরে এসে যখন প্রথম দেখেছিলাম লোকে গল্পের বই পড়তে ধড়াচুড়ো
পরে, অটো ধরে, কফিশপে যায় – চোখ কপালে উঠেছিল, এখন দেখছি সঙ্গে করে বই আনারও দরকার
নেই। কফিশপেই পড়ার জন্য বইয়ের স্টক থাকে। আর একটা দোকান কাছেই আছে শুনেছি যেখানে
গিয়ে আপনি বই পড়তে শুরু করবেন, আপনাকে এসে একজন জিজ্ঞাসা করবে আপনি কফি খেতে চান
কি না। চাইলে কফি এসে যাবে। মেনু না, দাম না, বিল না, টিপ না। টাকার কথাই তুলবে না
কেউ। ধরে নেবে যে আপনার চোখে চামড়া বলে একটা পদার্থ আছে এবং দোকান ছাড়ার আগে আপনি
বিবেচনামতো একটা মূল্য ধরে দিয়ে যাবেন।
এত হাসির কারণ হচ্ছে একটু আগেই স্টক পরীক্ষা করে
এসেছি। ইংরিজি স্বপনকুমার আর পাণ্ডব গোয়েন্দায় ভর্তি।
আমাদের অবশ্য সে সব
বই নেড়েচেড়ে দেখা হল না, খেতে খেতেই সব সময় চলে গেল। কালামারি উইথ আলুভাজা, ফিশ
অ্যান্ড চিপস, সসেজ অ্যান্ড এগস। শেষে মুখশুদ্ধি হিসেবে আসাম টি আর লেমন অ্যান্ড
মিন্ট আইসড টি। প্রত্যেকটি খাবারই চমৎকার।
আমরা খেতে খেতেই দোকান
বেশ ভরে উঠেছিল। ওঠাই উচিত, এত ভালো দোকান। সে ব্যাপারে আমিও সক্রিয় অংশগ্রহণ
করছিলাম। কোনদিকে যে সিঁড়ি, কোনদিকে যে গেট, সে সব স্পষ্ট করে না দাগিয়ে রাখা এইসব
ভিলেজের দোকানগুলোর একটা বদঅভ্যেস। খেতে খেতে আইভিলতার ফাঁক দিয়ে মাঝেই মাঝেই
দেখতে পাচ্ছিলাম দু’জন, তিনজন কিংবা চারজনের এক একটা দল হাতে মোবাইল নিয়ে এদিকওদিক
তাকাচ্ছেন। দোতলায় দোকানটা তাঁরা দেখছেন স্পষ্ট কিন্তু
সিঁড়ি দেখতে পাচ্ছেন না। আমি আইভি লতার ফাঁক দিয়ে হাত নেড়ে নেড়ে তাঁদের ঠিক পথে
চালনা করছিলাম। অর্চিষ্মান অবশ্য বলছিল আমার অত উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই, এতখানি
রাস্তা নিজেরাই এসেছেন যখন তখন দোতলায় ওঠার রাস্তাটাও ফিগার আউট করতে তাঁদের
সমস্যা হবে না। তবুও আমার দিক থেকে যতটুকু করা যায় আরকি।
*****
আমরা গিয়েছিলাম সাঁচী ভীমবেটকা, আমার বাবা মা গিয়েছিলেন হরিদ্বার, উত্তরকাশী হয়ে হরশিল। হরশিলের কথা
একজন নাকি বাবাকে বলেছিলেন আজ থেকে কুড়ি বছর আগে। এত দিনে বাবার সময় হল। ভাগ্যিস
হল। না হলে ফেরার পথে ঘণ্টা আষ্টেক আমাদের বাড়িতে কাটিয়ে যাওয়া হত না। মাবাবার
অবশ্য কষ্টই হল হয়তো। এত ঘোরাঘুরির পর, রাত জেগে দেরাদুন থেকে দিল্লি ট্রেনজার্নি
করার পর আবার লৌকিকতা করতে হল। আমার হাতের নুনকটা (এবং সেটা ঢাকার বৃথা চেষ্টায়
একগঙ্গা জল ঢালা) ট্যালটেলে মাছের ঝোল খেয়ে বারবার ‘সত্যি বলছি সোনা, এত ভালো রান্না
কবে খেয়েছি মনে পড়ছে না’ বলতে হল।
কিন্তু আমাদের বেজায়
লাভ হয়েছে। পয়লা বৈশাখের ছুতো করে একগাদা নতুন জামাকাপড় জুটেছে, হরিদ্বার থেকে আনা
বাক্সভর্তি প্যাঁড়া, বরফি, আর কাজু কিশমিশ আমন্ড আখরোট দিয়ে বানানো স্বর্গীয় মোয়া
খেয়ে চলেছি আমরা এখনও। মায়ের ইচ্ছে ছিল একটা তরমুজও সঙ্গে আনার (“ওরা দু’জনেই
ভালোবাসে”) অনেক কষ্টে বাবা আটকেছেন। কথা দিয়েছেন যে দিল্লিতে পৌঁছে তিনি সি আর
পার্কের বাজার থেকেই আমাদের জন্য তরমুজ কিনে আনবেন’খন, হরিদ্বার থেকে বয়ে নিয়ে
যেতে হবে না।
প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে
অর্চিষ্মানকে সঙ্গে নিয়ে বাবা গেলেন তরমুজ কিনতে, আমি আর মা ফ্যানের তলায় বসে আত্মীয়স্বজনের
নিন্দে করতে লাগলাম। খানিকক্ষণ পর বাবা ফিরলেন, চমৎকার একখানা বটলগ্রিন রঙের নিটোল
তরমুজ সঙ্গে নিয়ে। তরমুজখানা তো চমৎকারই, আরও চমৎকার তরমুজের বাহনখানা। আনকোরা
নতুন একখানা সবুজহলুদ ডুরিকাটা বাজারের ব্যাগ।
বাবা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন
না যে বাজারের ব্যাগহীন একটা সংসার গত দু’বছর ধরে চলছে।
আত্মপক্ষ সমর্থন
হিসেবে আমরা এটুকুই বলতে পারি যে বাজারের জন্য যে একটা যে স্থায়ী ব্যাগ কেনা উচিত,
রোজ রোজ নতুন নতুন পলিথিন প্যাকে পুরে জিনিস কিনে আনা যে আমাদের এবং পৃথিবীর
স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয় সেটা আমরা দুজনেই জানি। তবুও আমরা বাজারের ব্যাগ
কিনিনি। কেন কিনিনি তার কোনও কারণ নেই। খুব সম্ভবত যে কারণে
গত ছ’মাস ধরে কলিং বেলটা সারানো হচ্ছে না সেই কারণেই।
কিন্তু এখন আমরা
নিয়মিত বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যাই। গম্ভীর মুখে আলু পটল ঢ্যাঁড়স টমেটো তুলে
ব্যাগে পুরি, মাঝেমধ্যে শাকপাতা কিনলে এমন স্ট্র্যাটেজিক্যালি সেটাকে প্লেস করি যে
ব্যাগ থেকে তাদের কচি ডগাগুলো মুখ বার করে হাওয়া খায়। নিজেদের কনফিডেন্সে তো বটেই, আমাদের প্রতি বাজারওয়ালাদের
ভক্তিশ্রদ্ধাতেও বলার মতো তফাৎ টের পাচ্ছি। সেই যে একদিন বাজারে গিয়ে চালকুমড়োকে
লাউ বলে ভুল করেছিলাম, তার পর থেকে আমাদের দেখলেই ভদ্রলোক বেঁকা হাসতেন, আমাদের
দাঁড় করিয়ে রেখে বাকি সবাইকে মালপত্র দিতেন। এখন সে রকম কিছু ঘটছে বুঝলেই ভুরু
কুঁচকে বাজারের ব্যাগটা নাড়াইচাড়াই আর অমনি শুনি, “অ্যায় বাবলু, আড্ডা না মেরে
দিদিভাইয়ের কী কী লাগবে দেখ না।”
সেদিন শুনলাম ফোনে
বাবা অর্চিষ্মানকে পরামর্শ দিচ্ছেন, “বাজারের ব্যাগ হয়ে গেছে, এবার একটা সাইকেল
কিনে ফেল। শনিরবি সকাল সকাল হ্যান্ডেলে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজারে চলে যাবে, জিনিসপত্র
কিনে নিয়ে বাড়ি চলে আসবে। দেখবে কী আরাম। তাড়াতাড়ি হবে, হাঁটুনির খাটুনি থাকবে না
. . . একটা সাইকেল ছাড়া কি সংসার চলে?”
*****
প্রেম ভালোবাসা নিয়ে
মাথা ঘামানোর বয়স ছিল যখন তখন আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছিল সে কোনওদিন প্রেম করবে
না। অন প্রিন্সিপল। বাই চয়েস। আমি তখন হাঁদা ছিলাম, ভাবতাম প্রেম করাটা বুঝি চয়েস
নয়, ওটার জন্য বুঝি কোনও প্ল্যানপ্রোগ্রাম লাগে না, ওটা বুঝি এমনি এমনিই হয়। তাও
আমি ভদ্রতার খাতিরে বলেছিলাম, “কেন রে? প্রেম করবি না কেন?” উত্তরে আমার তেইশ
বছরের বন্ধু বলেছিল, “মা বারণ করেছে।”
আমি হো হো করে হেসে
ওঠায় সে খানিকটা লজ্জা পেয়েই বলেছিল যে ঠিক মায়ের নিষেধের জন্যও নয়, নিষেধের পেছনে
মা যে যুক্তিটা দেখিয়েছেন সেটা মনে ধরেছে বলেই সে ঠিক করেছে এ জীবনে প্রেম করবে
না। জানা গেল মা বলেছেন প্রেম হচ্ছে একটা রোগের মতো। কিন্তু অন্যান্য রোগের সঙ্গে
এর তফাৎ হচ্ছে অন্য রোগ ওষুধে সারে, প্রেম সারে না। ও রোগ একবার ধরল তো জন্মের মতো
হয়ে গেল। তুমি প্রেমে পড়লে, তুমি যার প্রেমে পড়লে সেও তোমার প্রেমে পড়ল, ব্যস্
ল্যাঠা চুকে গেল – ব্যাপারটা অত সরল নয়। প্রেমের ক্ষিদেটা তোমার মধ্যে জেগেই রইল। কিছুদিন
পরেই তোমার আবার নতুন একটা প্রেমে পড়ার জন্য হাঁকপাঁক শুরু হবে। এই না বলে বন্ধু টেবিলে
রাখা শালপাতার প্লেটে লেগে থাকা সামোসার গুঁড়ো আঙুল দিয়ে তুলে মুখে পুরতে লাগল আর মাঝে মাঝে আমার দিকে অর্থপূর্ণ তেরছা
দৃষ্টিপাত করতে লাগল। আমার তখন সবে প্রথম প্রেমের খাতা বন্ধ হয়ে দ্বিতীয় প্রেমের
খাতা খুলেছে, বুঝলাম মায়ের সতর্কবাণীর এমন হাতে গরম উদাহরণ পেয়ে তার বিশ্বাস আরও
দৃঢ় হয়েছে। এ জন্মের মতো আর সে প্রেমের পথ পাড়াবে না।
ইদানীং মাঝে মাঝে বন্ধুর মায়ের কথাটা মনে পড়ে। ভাবি হয়তো কথাটা একেবারে মিথ্যেও নয়। প্রেমে পড়ার প্রাথমিক
উত্তেজনার স্বাদ যে একবার পেয়েছে সে কি জীবনে কখনও সেটা ভুলতে পারে? সেই বুকের
মধ্যে হৃদপিণ্ডের বদলে ডেথ মেটাল ব্যান্ডের ড্রামের বাদ্যি, পেটের মধ্যে চব্বিশ
ঘন্টা পৃথিবীর সবথেকে উঁচু, সবথেকে ভয়ের রোলার কোস্টারে বসে ফুল স্পিডে নিচে নামার
অনুভূতি, নিজেকে আর নিজের প্রেমটাকে ছাড়া বাকি দুনিয়াটাকে নিতান্ত অপ্রয়োজনীয় বলে
ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়ার স্পর্ধা – সে নেশার স্মৃতি কি বুকের মধ্যে থেকে একেবারে মুছে
ফেলা সম্ভব?
বিশেষ করে যে সব
দিনে বাইরে তাকিয়ে হঠাৎ দেখি রোদের বদলে শহরের আকাশে ভিড় করে এসেছে অসময়ের মেঘ, কংক্রিটের
ছাদের ওপর ঝুঁকে পড়েছে তার কালো ছায়া, গাছের মাথায় মাথায় দুলছে হাওয়া, বন্ধ
জানালার পেরিয়ে সেই হাওয়ার ঝাপট আমার সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে যাচ্ছে। অনেক নিচে
ফুটপাথ ছেয়ে যাচ্ছে নববসন্তের কচি পাতায়, সেই পাতার নকশার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে
দুটো লোক। তাদের জামা, চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ঝড়ে। তাদের মুখ দেখতে পাচ্ছি না,
কিন্তু একে অপরের কনুই জড়িয়ে টলমল পা ফেলার রকম দেখেই বেশ বুঝছি প্রেমের রোগ
জাঁকিয়ে ধরেছে এদের।
আর অমনি আমার ভেতরের
সুপ্ত রোগটাও লাফ মেরে উঠে বসে। ওই ভীষণ ভয়ের রোলার কোস্টারটার সুইচ অন করে দেয় কেউ, সেটা ঘুরতে শুরু করে, খুব আস্তে, কিন্তু অচিরেই গতি নেবে। আমি চ্যাটবাক্স
খুলে “চলো প্রেম করে আসি” টাইপ করতে গিয়েও সামলে নিয়ে লিখি, ‘চল, লাঞ্চে দেখা করি।’
প্রেম করার জন্য
পাহাড় নয়, সমুদ্র নয়, সেরা জায়গা হচ্ছে ঘিঞ্জি শহরের ভিড়ে ঠাসা রাজপথ। এত লোক যে
কেউ তোমার দিকে তাকাবে না, এতই প্রকাশ্য যে তার মধ্যে দিব্যি নিজেদের আড়াল করে
নেওয়া যাবে। কনট প্লেসের গিজগিজে করিডর দিয়ে আমি হেঁটে চললাম, কখনও স্রোতের
পিছুপিছু কখনও উল্টোদিকে, হাতে ধরা গুগল
ম্যাপ যখন যেমন বলল তখন তেমন ডানে বেঁকে, বাঁয়ে মুড়ে, ঘুমন্ত কুকুরের লেজ টপকে,
পানের পিক বাঁচিয়ে। ম্যাগাজিন সিডির দোকানের র্যাকে রাখা যোগব্যায়ামের সিডির মলাট
থেকে থেকে পদ্মাসনে বসা শিল্পা শেটি আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন, কানের কাছে চিৎকার
করে হানি সিং গাইতে লাগলেন। হঠাৎ একটা বাঁক মুড়েই দেখি একশো গজ দূরে একটা লোক।
ফুটপাথের ওপর দাঁড়িয়ে হাতের পাঞ্জা দিয়ে রোদ থেকে ফোন আড়াল করে খুব মন দিয়ে সেটার
দিকে তাকিয়ে আছে। গুগল ম্যাপ বলছে আমার গন্তব্য আসেনি এখনও, যেখানে পৌঁছলে মহিলা
বলে উঠবেন, ‘ইউ হ্যাভ অ্যারাইভড।’ কিন্তু মহিলা জানেন না আমার গন্তব্য আসলে ওই লাল
বিন্দুটা নয়, আমার গন্তব্য আসলে ওই লোকটা। আই হ্যাভ অলরেডি অ্যারাইভড।
খেতে খেতেই বাইরে হাওয়ার গতি বাড়ল, ফুটপাথে পাতার সঙ্গে এখন উড়ছে ছেঁড়া পলিথিন, দোমড়ানো কফি
কাপ। কিন্তু আমাদের এখনও আইসক্রিম খাওয়া বাকি। দুটো ব্লক পেরিয়ে আইসক্রিমের দোকানে
পৌঁছে আইসক্রিম হাতে নিয়ে বসে খানিকক্ষণ গুলতানি হল। খদ্দেররা কে কোন ফ্লেভার
অর্ডার করবে সেটা আগে থেকে বলতে পারার কম্পিটিশন। প্রেম পুরোনো হলে কম
স্বার্থপর হয়, নিজেকে ছাড়া বাকি জগতটার দিকে তার মনোযোগ ফেরে। এই ঝুঁটি বাঁধা কানে
দুল হাওয়াই চটি লোকটা, এ নির্ঘাত সীতাফল
শেক অর্ডার করবে, মিলিয়ে নিও। আর এই যে বুর্জোয়া দেখতে মহিলা, ইনি চকো বাইটস।
এইসব করতে করতেই
বাইরে ঝিমঝিম আওয়াজ, তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি। শিগগিরি দৌড়োও। তীরের মতো বৃষ্টি এসে
সারা গায়ে বিঁধছে, একটা মিহি সাদা পর্দা যেন ঝুলিয়ে দিয়েছে কেউ চোখের সামনে, হঠাৎ
সে পর্দা ফুঁড়ে দেখি বেরিয়ে এসেছে একটা প্রকাণ্ড সাদা ঘোড়া, ক্ষুরে বাঁধা ঘুঙুরের
শব্দের তালে তালে তার মুণ্ডু দুলছে। হাঁ করে ভাবছি স্বপ্ন নাকি, এমন সময় দৃষ্টিপথে
একটা দুলন্ত হাওয়াই চটি দেখে ভুল ভাঙল। হাওয়াই চটির মালিক বসে আছেন ঘোড়ার ওপর।
বৃষ্টির বেগ বেড়েছে, কিন্তু এত খাওয়ার পর দৌড়ের বেগ বাড়াতে আমাদের প্রাণ বেরোচ্ছে।
ওই তো দেখা যাচ্ছে মেট্রোর সাইন, গেট নম্বর থ্রি। দৌড়োতে দৌড়োতে শিল্পা শেটির
দোকানটা পেরোতেই একটা চেনা সুর কানে এল। উঁহু, হানি সিং নয়। ম গ রে গ রে সা নি সা ধ নি ম গ রে। নির্ভুল জয়জয়ন্তী। শুনলে! চিনতে পারছ
গানটা! আমার দৌড় থেমে গেছে আপনা থেকেই। কী গান? আরে মেঘ মেদুর বরষায় চালিয়েছে কেউ,
এইখানে, এই সি পি-র ফুটপাথে! তাই তো দেখছি। কিন্তু তুমি এখন চল, মাঝরাস্তায়
দাঁড়িয়ে গান শুনলে ভিজে গোবর হয়ে অফিসে ফিরতে হবে। আমরা দৌড়ে মেট্রোর পেটের তলায়
সেঁধোলাম, পেছনে গাইয়ে গাইতে লাগলেন, ‘ফুল ছড়ায়ে কাঁদে বনভূমি . . .’
*****
ওই সপ্তাহেরই কোনও
এক সন্ধ্যেয় ক্যামেরা নিয়ে খুটুরখাটুর করার সময় এই ছবিটা তোলা হয়েছিল। তাই আমি
সাতপাঁচ না ভেবে এটাকেও পোস্টের অন্তর্ভুক্ত করলাম।
দিল্লি দর্শন জোমাটোর হাত ধরে আর জীবন দর্শন আপনার হাত ধরে। সকাল সকাল দিব্যি দিলখুশ হয়ে গেল লেখাটা পড়ে। খাবারের ছবি গুলো দেখেও জান তর হয়ে গেল। শুভ নববর্ষ।
ReplyDeleteআপ্নাকেও আমার আর অবান্তরের তরফ থেকে শুভ নববর্ষের অনেক শুভেচ্ছা জানাই, সোমনাথ। সামনের বছর খুব ভালো কাটুক।
Deleteআপনার লেখাগুলো মনের গভীরে ডুব দিয়ে অনেক হারিয়ে যাওয়া মণিমুক্তো তুলে আনে। বাবার সাইকেলের কথা শুনে মনে পড়ে গেল, বছর কুড়ি আগে দেশে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটি ছোটগল্প বেরিয়েছিল, নাম ছিল সাইকেল। একটা সাইকেল থাকলে কত কি করা যায়...
ReplyDeleteআপনার প্রতিটি অভিজ্ঞতাই অনবদ্য ভাবে প্রেজেন্ট করেছেন, কিন্তু চালকুমড়োকে লাউ বলা শুনে, কেন জানি না, হাহা করে হেসে উঠেছি। কিছু মনে করবেন না।
বুর্জোয়া মনোভাব আরকি, দুটো শাকসবজি চিনে ফেলে ধরাকে সরাজ্ঞান করছে।
আপনার, আপনার প্রিয়জনদের, এবং অবান্তরের সমস্ত পাঠকপাঠিকাদের জন্য নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।
বছরের প্রথম দিন সক্কাল সক্কাল এরকম মন ভালো করা কথাবার্তা শুনতে পেলাম যখন তখনই বুঝে গেলাম ১৪২২ আমার ভালো কাটবে। আমার, আমার বাড়ির লোকের আর অবান্তরের সকলের পক্ষ থেকে আপনাকেও শুভ নববর্ষের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই, দেবাশিস। নতুন বছর আপনার খুব ভালো কাটুক।
DeleteArre, sitaphal shake! Tomrao Naturals ey icecream khete jao naki? :-)
ReplyDeletep.s. Tomar bookshelf ta bhari sundor dekhte toh!
হাহা, বিম্ববতী, ঠিক জানতাম এই ক্লু-টা থেকে কেউ দোকানের নামটা ধরে ফেলবে। আমার বুককেসের চেহারার কৃতিত্ব আমার নয়, পুরোটাই পেপারফ্রাই-এর।
DeleteSubho naba barsho ...darun darun laglo porte...toder bajarer bag er galpo pore khub hashlam :-)
ReplyDeleteToke duto chabitei darun lagche.:-)..ar pichaner uni i toh courier pathe esechen!
Deleteশুভ নববর্ষ, তিন্নি। পেছনের যিনি সবুজ টবে, তিনি কুরিয়ারে এসেছেন, কাঁচের বোতলের উনি বিশুদ্ধ হাতসাফাই-পথে। অফিসের নিচের প্ল্যান্টার থেকে ছিঁড়ে এনেছি।
Deleteনবর্ষের অনেক শুভেচ্ছা রইলো!
ReplyDeleteদিল্লি যে কি রইস জায়গা, তা তোমার এই লেখা এবং ছবিগুলো না দেখলে সত্যি বুঝতে পারতাম না, এ ধরনের stylish কাফে আমি জন্মেও দেখিনি।
নববর্ষের অনেক শুভেচ্ছা রইল এই তরফ থেকেও। আহা, সিয়াটলের লোক দিল্লির ক্যাফের প্রশংসা করবে আর সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে বুঝি? দিল্লি যে দারুণ শহর সে নিয়ে সন্দেহ নেই, তবে কফির লড়াইয়ে সিয়াটলের কাছে হারবে নির্ঘাত।
Deleteকফি র লড়াই এ হয়ত সিয়াটেল জিতবে, কিন্তু ambiance এর লড়াই এ এই কাফে Starbucks কে গুনে গুনে দশ গোল :)
DeleteNababarsher anek shubhechha!
ReplyDeleteTomar dilkhola hasi dekhe dil khush hoye gelo. Calamari ta kemon chilo? Ami aj obdi je koekbar calamari kheyechi, tene chhirte hoyeche. Ki embarrassing! :D
-Ramyani
হাহা, রম্যাণি, কালামারিতে অনেকসময় এই কেলেংকারিটা হয় বটে। গোটা কালামারিটা মুখে চলে আসে, ব্যাটারের খোলাটা হাতে থেকে যায়। তবু আমার খাবারটা মন্দ লাগে না।
Deleteতোমাকে নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা জানাই। নতুন বছর খুব ভালো কাটুক।
Shubho Nobo Borsho Kuntala di. Prem korata je akta rog, ba manosik nesha seta amio hare hare jani. oi 'butterflies in the stomach' er feeling ta bhoyanok addictive. achhar kheye pore morbo seta jeneo mon barbar chhute chhute jaye.
ReplyDeleteTomar fan er tolaye bose ma'r sathe attiyo-swajon er ninde korar golpo ta amar bhari pochondo hoyeche. kichu kichu jinis ghore ghore common.
Tomar hasi khana boroi sundor by the way.
থ্যাংক ইউ, কুহেলি। নববর্ষের অনেক শুভেচ্ছা জেনো।
Deleteshubho noboborsho Kuntala di, bhari bhalo lage apnar khondo khondo rojnamchar ongshogulo, premta kochi boyesr hole bujhi ektai tofat hoto oi vorpeteo chuppur vijte kono somosya(porbortikaler hachi kashi ba ph kharap ghotito somosya bad dile) hoto na
ReplyDeleteP.s kotooo boi apnar...
Pradipta
শুভ নববর্ষ, প্রদীপ্তা। সেটা তো ঠিকই, বুড়ো বয়সে প্রেম করার সময় অম্বলঅজীর্ণ হাঁচিকাশির দিকে এত খেয়াল রাখতে হয় যে প্রেমটা আর মনোযোগ পায় না।
DeleteShubho nabobarsho Kuntala di.... Puro lekhatai khub pocchondo holo.. Sudhu calamari ta baad... :P last photote tomar hasi r background er eto boi ... Dutoi khub bhalo laglo...
ReplyDeleteকেন রে, কালামারি তো ভালো জিনিস। তোকেও শুভ নববর্ষের অনেক শুভেচ্ছা, ভালোবাসা আর কোলাকুলি জানাই, ঊর্মি।
Deleteami calamari prothom dekhi jyanto obosthay... mane squid ar ki.. keralate... besh daab er sansh er moto .. bhablam kheteo orokom e hobe... otakei bheje diyechilo.. tomader gulo ekta batter coating ache dekhchi... ami kheyechilam sada rubber band er moto dekhte chilo...kheyechilam narkol tel e bhaja calamari :) ... sei je khalam ... sei theke ekhono kono boro restaurant eo try korar sahos paini... tomay dekhe ektu inspired hobo bhabchi...
Deleteএটা আমিও দেখেছি, ঊর্মি, কোনও জিনিস খুব অথেনটিক কায়দায় খেলে সে জিনিসের ওপর ভক্তি চটে যাওয়ার একটা চান্স থাকে। তুই এবার দামি দোকানের মিটমিটে আলোয় গলাকাটা দামের কালামারি খেয়ে দেখিস, মনে হয় ভালোই লাগবে।
DeleteAmar mot a prem er sab cheye kharap side effect holo o-prem. (Hiphen ar bishorgo use korte parle amar bhari anondo hoy).
ReplyDeleteSundar hasi...
Majhe ekdin tarmuj kinte giye bollam ekta bechhe dao. Jeta dilo ante giye Delhi ek side onekta halud. Bollam ETA Ki palte dao. Dokani chheleta bollo - dada, ei to apnader niye muskil...kichhu janen na chestao Korean na...ETA keno halud keno bolun to? School a shalok-sonslesh porechhilen mone achhe? Ei dike surjyer alo payni tai sabuj hoyni, ar tai edikta besi mishti hobe. Hnuh:: Jan niye jan. Hnuh:: .......
Lesson: thikmoto shaloksonshlishto na hole tarmuj pocha hoy...
এই রে, সালোকসংশ্লেষের চ্যাপ্টারটা আমিও বেজায় ফাঁকি দিয়ে পড়েছিলাম। কী হবে। তবে আপনার কমেন্ট পড়ে ভালো হল, তরমুজ কেনার টিপস পেয়ে গেলাম। থ্যাংক ইউ।
Deletenotun bachhorer onek subhechha :-) .
ReplyDeleteKhabar dabar dekhei lobh bere galo. Calamari amar darun pachhonder , kintu prothombar kheyechhilam jakhon Squid janle hoito khetamina, otake chingri bhebe kheye niyechhilam.
Kolkatateo kdin khub bhalo kalboisakhi holo.. ekhon obosso gumot garom... lekha pore darun khusi hoe gelam sokalbela
আপনাকে আর আপনার বাড়ির সবাইকে আমার আর অবান্তরের তরফ থেকে নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা জানাই, ইচ্ছাডানা। নতুন বছর খুব ভালো কাটুক।
Deleteহাহা, ভাগ্যিস না জেনে খেয়েছিলেন, না হলে এমন ভালো একটা জিনিস খাওয়া হত না। কয়েকটা কালবৈশাখী আমাদের দিকে পাঠাবেন সময় হলে।
ah ! what a del------licious picture !
ReplyDeleteনতুন বছরের সার্থক উপহার।
ReplyDeleteহাহা, থ্যাংক ইউ, মালবিকা।
DeleteSubho noboborsher priti o shubhechha Kuntala. Lunch date ka ki ebare kono bolar moton jaygai hoi ni?
ReplyDeleteতোমাকেও শুভ নববর্ষের অনেক প্রীতি আর শুভেচ্ছা জানাই, রুণা। লাঞ্চডেট ভালো জায়গাতেই হয়েছিল, তবে স্টেট ভবনের মতো ভালো জায়গায় না। এটা একটা এমনি দোকান, নাম Zizo. লেবানিস গোছের খাবারদাবার ভালো লাগলে দোকানটা ভালো লাগবে মনে হয়। না গিয়ে থাকলে যেতে পারো। আমাদের খুব ভালো লেগেছে। এই নিচে লিংক দিলাম।
Deletehttps://www.zomato.com/ncr/zizo-connaught-place-new-delhi
Subha Nababarsha Kuntala, notun bochhor bhalo katuk tomader.. as usual khub bhalo lekha, r sotyi bajar er bag chhara songsar 2 yrs chalaano ta besh rohosyer byapar...
ReplyDelete:Papiya
শুভ নববর্ষ, পাপিয়া।। নতুন বছর তোমারও দারুণ কাটুক।
DeleteShubho Naboborsho ...
ReplyDeletehigh five to calamari. lunch date zindabad tomader jonyo :)
tomar chhobi khub pranobonto r book case with books of course lobhoniyo :)
r swapankumar byaparta bujhlam na.. lojjar matha kheye jigges korei fellam.. Bratati.
শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা তোমাকেও্, ব্রততী। স্বপনকুমার বলে একটা থ্রিলার সিরিজ ছিল না, আমি পড়িনি, আমার বাবামা পড়েছেন। একটু আজগুবি মার্কা সিরিজ, স্বপনকুমার একহাতে রিভলবার, অন্য হাতে পিস্তল, তৃতীয় হাতে টর্চ ধরে অন্ধকারে অব্যর্থ টিপে গুলি ছুঁড়ছেন জাতীয় অ্যাকশন সিন থাকত শুনেছি সে সব গল্পে।
DeleteSigh. Had Potol something for Lunch. :/
ReplyDelete‘ফুল ছড়ায়ে কাঁদে বনভূমি . . .’
আহা, পটল তো ভালো জিনিস, তন্ময়। কেমন শান্তশিষ্ট, পেটের খেয়াল রাখা খাবার। আমাকে এক্ষুনি কেউ গরম ভাত আর নরম আলুপটলের ঝোল বানিয়ে ফ্যানের তলায় থালা পেতে খেতে দিলে আমি বর্তে যেতাম।
Delete