তখনকার পড়া, এখনকার পড়া
মাঝখানের কয়েকটা বছর বই পড়ার সময়ে টান পড়েছিল। ভেবেছিলাম জীবনে বই পড়ার থেকে গুরুতর যে সব কাজ আছে সব একে একে শেষ করে আবার পড়া শুরু করব। কাজেরা যতদিনে গুরুত্ব হারাল ততদিনে আরও অনেক কাজ জুটে গেছে। যেগুলো সবক’টাই বই পড়ার থেকে সোজা। টিভি দেখা, ইন্টারনেট সার্ফিং, ক্যান্ডি ক্রাশ খেলা। এগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা করলেও বইয়ের কথা একবারও মনে পড়ে না। অথচ বইয়ের চারপাঁচ পাতা পড়তে না পড়তেই এগুলোর কোনও একটা খুলে বসতে মন আনচান করে।
তা বলে বই একেবারেই কি আর পড়তাম না? পড়তাম। ইচ্ছে হলে। মাঝেসাঝে। কিন্তু গোটা একটা দিন, কখনও কখনও পরপর দুই তিন চারদিন বইমুখো না হয়ে কাটিয়ে দেওয়াটা ধাতে সয়ে এসেছিল।
মন খারাপ হত। একটা দামি জিনিস যে হারিয়েছি সেটা সর্বক্ষণ চেতনায় খোঁচা দিত। মনে পড়ত, একসময় বই পড়াটা তেষ্টা পেলে জল খাওয়ার মতোই সোজা ছিল। যখন বই পড়তাম আর যখন বই পড়ছি না, জীবনের এই দুটো পর্বের ভাবগতিকও তুলনা করার জন্য ছিল হাতের সামনেই। কার্যকারণ কে ঠিক করে। হতে পারে শান্তি গেছে বলেই বই পড়ার অভ্যেস গিয়েছিল কিন্তু আমার ভয় হত উল্টোটাই ঘটেছে। বই পড়ছি না বলেই সব অগোছালো হয়ে গেছে।
কেনার অভাবে পড়া হচ্ছিল না তেমন নয়। আমার বই পড়ার অভ্যেস কমা আর বই কেনার অভ্যেস বাড়ার মধ্যে একটি স্পষ্ট সমাপতন লক্ষ করেছি। সমাপতনটার মিল কাক বসা তাল পড়ার থেকে ঝড় ওঠা বক মরার সঙ্গেই বেশি বলে সন্দেহ। বই কিনলে একটা ঘ্রাণেন অর্ধভোজনং ভাব জাগে। কিনে তো রাখাই আছে। সময় করে পড়াটাই যা বাকি। অন্যান্য পদ্ধতিতে বই জমানোরও একই পরিণতি ঘটতে দেখেছি। সের দরে বই ডাউনলোড করছি কিংবা পি ডি এফ জমাচ্ছি এদিকে পড়ছি না এক লাইনও, আকছার ঘটে।
এই প্রসঙ্গে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। এ বছরের দিল্লি বইমেলার শেষ দিনে সাহিত্যিক অমর মিত্রর সাক্ষাৎকার শুনছিলাম। প্রবীণ সাহিত্যিকের ভালো ব্যাপার যেটা লাগল তা হচ্ছে সাহিত্যটা উনি খাতায় কলমেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন, ওঁর কথাবার্তার মধ্যে বিন্দুমাত্র সাহিত্য নেই। সেটা আমাদের সাধারণ লোকের মতোই সোজাসাপটা। কথাপ্রসঙ্গে ইদানীং অনলাইনে পাইকারি দরে নতুন পুরনো বাংলা বইয়ের পি ডি এফ পাওয়া যাওয়ার কথা উঠল। অমর মিত্র বললেন, কী আর করা যাবে। যে যুগের যে চাল। উঠল যে কোনও বইয়ের খবর পেলেই, ‘পি ডি এফ পাওয়া যাবে দাদা?’, বলে ঝেঁকে আসা পাঠ্যানুরাগীদের কথা। সাহিত্যিক বিরক্তি চাপার চেষ্টা করলেন না। বললেন, আরে ধুর ওরা পড়বে নাকি। ওই জমানোই সার।
বাকিদের কথা জানি না, আমাকে উনি ঠিক চিনেছেন। আমারও কিছু পি ডি এফ জমানো আছে বছরের পর বছর ধরে। পড়া আর হয়ে উঠছে না। বইয়ের অভাব নেই, সময়েরই যা অভাব।
ওই বই না পড়ার সময়টাতে একটা জিনিস টের পেয়েছিলাম। বই পড়া সাঁতার কাটার মতো নয়। সাঁতার একবার শিখে রাখলে আবার যদি কোনওদিন জলে পড়েন, সে যত দিন, যত মাস, যত বছর পরেই হোক না কেন, আপসে হাত পা নড়তে শুরু করবে, মাথা ভেসে থাকবে জলের ওপর। বই পড়া ভোলা বাঁ হাতের খেলা। সাঁতার শিখতে প্রচুর জল খেতে হয়েছিল, বই পড়া শিখতে কোনও কসরৎ করেছি বলে মনে পড়ে না। অথচ ভুলতে দিতে সাঁতার যতখানি নাছোড়, পড়া ততখানিই প্রতিরোধহীন।
ভাবলাম ব্যাপারটাকে সইয়ে সইয়ে ফিরিয়ে আনব। প্রথমবার অভ্যেসটা কীভাবে হয়েছিল মনে করা জরুরি। নিজে থেকে কিছু করেছি বলে তো মনে পড়ল না। যা করার মা করে থাকবেন। কী করেছিলেন মনে করার চেষ্টা করলাম। বই কিনে এনে দিতেন, আর টিভি দেখতে দিতেন না। নিজেও দেখতেন না। এমনকি মহাভারত, চিচিং ফাঁক, ফেলুদা ৩০ ইত্যাদি যা যা আমার দেখার অনুমতি ছিল এবং আমি একটিও এপিসোড বাদ না দিয়ে হাঁ করে গিলতাম সেগুলোও মা দেখতেন না। আপনি আচরি ধর্মের মা মস্ত বড় প্রচারক।
কিন্তু আমি মা নই। অত সংযম আমার সইবে না। ইন্টারনেটের থানে মাথা ঠুকলাম। হাউ টু রিড মোর/ হাউ টু ক্রিয়েট হ্যাবিট অফ রিডিং টাইপ করলাম।
উত্তরটা কি অলরেডি জানা ছিল না? ছিল। পড়ার অভ্যেস ফিরিয়ে আনার এক এবং একমাত্র রাস্তা বই পড়া। নিয়মিত বই পড়া। বেশি বেশি বই পড়া। এই সমস্ত হাবিজাবি সার্চ না করে সেই সময়টা বই পড়া। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে বই পড়ার থেকে নেট ঘাঁটা সোজা, আরও সোজা নিজেকে ফাঁকি মারা। কাজেই।
০.০০০০৫৬৭ সেকেন্ডে সার্থকভাবে হ্যাবিট গড়ে তোলার ৯৮৩৭৬৬২ টি সমাধান বেরিয়ে এল। প্রথম তিনটে পাতা পরীক্ষা করলেই নেক্সট তিরিশ মিনিট বইমুখো না হয়ে পার পাওয়া যাবে। আধঘণ্টা, একঘণ্টা পেরিয়ে দেড়ঘণ্টায় ঠেকল। মোটামুটি যে পরামর্শগুলো ফিরে ফিরে এল আর আমার মনেও ধরল তা হল দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় বই পড়ার জন্য ‘কার্ভ আউট’ করে নেওয়া। ওই সময় বই পড়ুন। অ্যালেক্সাকে বলে রাখুন, মনে করিয়ে দিতে। পরিবারকে জানিয়ে দিন এটা আপনার বই পড়ার সময়। মেলা ঝামেলা না করতে।
ছোটবেলায় আমার একটা বই পড়ার সময় ছিল বটে। সারাদিনের ফাঁকফোকরেও বই পড়া চলত কিন্তু দিনের একটা সময় শুধু বই পড়াই হত, রোজই হত। রাতে খাওয়াদাওয়ার পর। মা বিছানা ঝাঁট দিতেন, মশারি টাঙাতেন, গরমকাল হলে জানালা খুলে পর্দা তুলে দিতেন, শীতকাল হলে সাটিনের ওয়ার দেওয়া লেপ পাততেন। আমি বই মুখে বসে থাকতাম। বাঁদিকে গোদরেজ আলমারি আর ডানদিকে কাঠের আলনার মাঝখানের ফাঁকা জায়গাটায়, দেওয়ালে ঠেস দিয়ে, বাবু হয়ে, কোলের ওপর বই রেখে। ফাল্গুন টু কার্তিক পরনে লালকমলা সুতো দিয়ে আঁকা সাদা টেপফ্রক, ভূমাসন। অগ্রহায়ণ টু মাঘ মায়ের হাতে বোনা সোয়েটার আর তশরিফের নিচে রংচটা ডুরে শতরঞ্চি।
ডায়রিতে লিখলাম, দিনের শেষে একঘণ্টা পড়ব। সপ্তাহে টোটাল সাত ঘণ্টা পড়া হবে। যদিও সাপ্তাহিক টু ডু লিস্টে পড়ার খাতে পাঁচ টু দশ ঘণ্টাই বরাদ্দ করলাম। আনরিয়েলিস্টিক আমাকে বলতে পারবে না কেউ। কোন সপ্তাহে বই পড়ার থেকে বেশি জরুরি কাজ পড়ে যায়, কোন সপ্তাহে গল্পের প্লট জমে ওঠে। অর্চিষ্মান ইয়ারফোন গুঁজে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দ হাসিতে কাঁপছিল। কাঁধে টোকা মারলাম। বললাম, রাত আটটা টু ন’টা আমার গল্পের বই পড়ার সময়। নেহাত এমারজেন্সি না হলে ওই সময়টা মেলা ঝামেলা না করলে বাধিত হব। অর্চিষ্মান চোখ ঘুরিয়ে ইয়ারফোন গুঁজে আবার স্ক্রিনের দিকে ফিরে দাঁত বার করল।
একেবারে যে কাজে দেয়নি বলব না। বই পড়া আগের থেকে অনেক বেড়েছে। রোজ রাতে পড়া হয় না, কিন্তু ধীরে ধীরে দিনের অন্যান্য সময়েও পড়া শিকড় মেলেছে। পাঁচ টু দশের রেঞ্জ পরিস্থিতি ভেদে তিন টু তেরোতেও ঠেকেছে।
তবু আমার মন ভরেছে কি? সব আগের মতো হয়েছে কি? মেঝেয় বসে বই পড়ার আনন্দ ফিরে এসেছে কি? আসেনি।
কেউ বলতে পারে, ওর সঙ্গে ভালোমন্দের কোনও সম্পর্ক নেই। ওটা নস্ট্যালজিয়া যার সঙ্গে যুদ্ধে বাস্তব সর্বদাই হারবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি গোটা ব্যাপারটা স্মৃতিমেদুরতা নয়। তাছাড়াও একটা কারণ আছে। ওই মেঝেতে বসে বই পড়ার সময় বই পড়ার উপযোগিতা সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা ছিল না। বই কেউ লিখেছে, ছেপে বার করেছে, সে বই আমার হাতে এসে পৌঁছেছে, আমি পড়ছি। ব্যস।
এখন 'হাতের কাছে পাচ্ছি তাই পড়ছি' এই কারণটা প্রায় উবেই গেছি। এখন আমি বই পড়ি কারণ আমি জানি বই পড়লে মনের জানালা খোলে, বই পড়লে অজানাকে জানা হয়, ইমেজ চকচকে হয়। এখন আমি বুঝে গেছি লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট বলে কিছু হয় না, না মানুষের সঙ্গে, না বইয়ের সঙ্গে। বই পড়াটাও একটা প্র্যাকটিস করার জিনিস, বই পড়াতেও ভালো হওয়ার সুযোগ আছে। প্রথম দর্শনে প্রেমে না পড়া বইয়ের সাধনায় লেগে থাকি। কেবলই হাই ওঠে, চোখ পিছলে যায়, শক্ত অক্ষরে, শক্ত বাক্যে, দুর্বোধ্য বাক্যে ঠোক্কর খায়। মাঝে মাঝে কোনও বইয়ের মাঝপথে ছেড়ে রেখে আবার হাতে তুলে নিতে গিয়ে মনের ভাব, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ভুজঙ্গাসন করতে হবে মনে পড়লে যেমন হয়, তেমন হয়। আমি হাল ছাড়ি না। নিজেকে মনে করাই বই পড়া স্রেফ বিনোদন নয়, বই পড়া একটা মহৎ হবি। আরাম যত কম, উপযোগিতা তত বেশি। বই পড়ায় নিজেকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য গুডরিডসে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ি নিজেকে।
বই পড়ি, কিন্তু আমার এই রকম বই পড়তে ভালো লাগে না। কারণ আমি জানি আরেকরকম করে বই পড়া যায়। যে বইপড়ার কোনও মাপজোপ নেই, যে বইপড়া শিক্ষামূলক হয়ে ওঠার কোনও প্রতিশ্রুতি দেয় না, যে রকম বইপড়ার লজিক বলে কাল বায়োলজি পরীক্ষা তো কী হয়েছে, তা বলে বিষবৃক্ষ অর্ধেক পড়ে ওঠে নাকি কেউ?
সেইরকম বইপড়ার বর্ণনা একজন দিয়ে গেছেন বাংলা ভাষায়। তাঁর থেকে ভালো আমি পারব না, তাই তাঁর কথাই তুলে দিলাম।
"প্রতিদিন দুপুরবেলা আলমারী হইতে বাছিয়া এক-একখানি করিয়া বই সতুর নিকট হইতে চাহিয়া লইয়া যায় বাঁশবনের ছায়ায় কতগুলো শেওড়াগাছের কাঁচা ডাল পাতিয়া তাহার উপর উপুড় হইয়া শুইয়া একমনে পড়ে। বই অনেক আছে - প্রণয়-প্রতিমা, সরোজ-সরোজিনী, কুসুম-কুমারী, সচিত্র যৌবনে যোগিনী নাটক, দস্যু-দুহিতা, প্রেম-পরিণাম বা অমৃতে গরল, গোপেশ্বরের গুপ্তকথা… সে কত নাম করিবে! এক…একখানি করিয়া সে ধরে শেষ না করিয়া আর ছাড়িতে পারে না। চোখ টাটাইয়া ওঠে, রোগ টিপ্ টিপ করে; পুকুরধারের নির্জন বাঁশবনের ছায়া ইতিমধ্যে কখন দীর্ঘ হইয়া মজা পুকুরটার পাটাশেওলার দামে নামিয়া আসে, তাহার খেয়ালই থাকে না কোন্ দিক দিয়া বেলা গেল!
এক-একটি অধ্যায় শেষ করিয়া অপুর চোখ ঝাপসা হইয়া আসে - গলায় কি যেন আট্কাইয়া যায়। আকাশের দিকে চাহিয়া সে দুই-এক মিনিট কি ভাবে, আনন্দে বিস্ময়ে, উত্তেজনায় তাহার দুই কান দিয়া যেন আগুন বাহির হইতে থাকে, রুদ্ধনিঃশ্বাসে পরবর্তী অধ্যায়ে মন দেয়। সন্ধ্যা হইয়া যায়, চারিধারে ছায়া দীর্ঘ হইয়া আসে মাথার উপর বাঁশঝাড়ে কত কী পাখীর ডাক শুরু হয়, উঠি-উঠি করিয়াও বইয়ের পাতার এক-ইঞ্চি ওপরে চোখ রাখিয়া পড়িতে থাকে - যতক্ষণ অক্ষর দেখা যায়।"
*****
গত সপ্তাহে স্টেকহোল্ডার কনসাল্টেশন ছিল। গালভরা নাম, কাজ আসলে বোরিং বক্তৃতা শোনা। কনসাল্টেশন হল। টুথপিকে গাঁথা পনীর টিক্কা আর টমেটো সুপের মৃদু নেটওয়ার্কিং হল। একে অপরের চাকরির ঠ্যাকনা হয়ে ওঠা হল। তারপর হাঁফ ছেড়ে হোটেলের ঘরে প্রত্যাবর্তন। ঘোরাঘুরির প্রশ্নই নেই। প্রথম কথা, সময় নেই, দ্বিতীয় কথা, জায়গা আগে দেখা। সবথেকে বড় কথা, রাজপুতানার রোদ চোখের সামনে যা পাচ্ছে পুড়িয়ে ফেলছে। ওর মধ্যে পাগল ছাড়া কেউ বেড়াতে বেরোয় না।
হোটেলের ঘরে গিয়ে লম্বা হলাম। যাঁদের ঘনঘন হোটেলে থাকতে হয় তাঁরা দ্বিমত হবেন হয়তো, আমার হোটেলে থাকতে ভালো লাগে। হোটেলের ঘরে যে নির্জনতাটা, সেটা নিজের বাড়িতে সব রকম আওয়াজ বন্ধ করলেও পাওয়া যায় না। ওই একখানা ঘরের মধ্যে সবটুকু অস্তিত্ব এঁটে যাওয়ার ব্যাপারটা টানে। আর টানে শিকড়হীন, দায়িত্বহীন ভোগের সুখ। বিছানায় শোব কিন্তু চাদর কাচা নিয়ে মাথা ঘামাব না। চা খাব আমি, কাপ ধোবে অন্য কেউ।
সময় কাটানোর জন্য টিভি দেখলেও হত। আমার আবার হোটেলের টিভিতে সি আই ডি-র রি-রান দেখার একটা ঐতিহ্য আছে। কিন্তু এবার দেখলাম না। অন্য বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল ফোনের ভেতর। অ্যান ক্লিভস-এর ভেরা স্ট্যানহোপ সিরিজটার মোট আটখানা বইয়ের সাড়ে পাঁচখানা বই পড়া ছিল। ভেরা স্ট্যানহোপের কথা আগেও লিখেছি অবান্তরে, আবার লেখার ইচ্ছে আছে। উনি হচ্ছে নরদাম্বারল্যান্ড অঞ্চলের গোয়েন্দা পুলিস। পড়তে শুরু করলাম। অর্ধেক পড়া বইটা শেষ করলাম। উঠে চা নিয়ে এলাম এককাপ। পরের গল্পটা যখন শেষ হল ঘড়ির লাল অক্ষরে প'নে দু’টো দপদপাচ্ছে। রাস্তার মৃদু গাড়ির শব্দও পাওয়া যাচ্ছে না আর। আরেক কাপ চায়ের সময় হয়েছে।
সিরিজের শেষ উপন্যাসের শেষ পাতাটা ক্লিক করে বন্ধ করলাম যখন তখন হোটেলের পর্দার ওপাশে সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে।
মাথা দপদপ করছিল। সারারাত জাগার বিস্বাদ মুখের ভেতর। কিন্তু বুকের ভেতর সেই কবেকার মেঝেতে বসে বই পড়ার অনুভূতি। মা শুতে যাওয়ার তাড়া দিচ্ছেন। আমি বলছি, এই তো হয়ে এসেছে, আর মোটে দশ পাতা।
মা নেই, আমিও বদলে গেছি, মেঝেটুকুও কম্পিউটার টেবিল এসে দখল করে নিয়েছে। কিন্তু অনুভূতিটা অবিকল। চিনতে ভুল হয়নি আমার। মনে করে রেখেছি। আবার কবে দেখা পাই না পাই।
মা নেই, আমিও বদলে গেছি, মেঝেটুকুও কম্পিউটার টেবিল এসে দখল করে নিয়েছে। কিন্তু অনুভূতিটা অবিকল। চিনতে ভুল হয়নি আমার। মনে করে রেখেছি। আবার কবে দেখা পাই না পাই।
daroon laglo. aami dekhchii je TV ta baad dilei anekta samay pawa jay. tai aajkal TV main plug ta khule rekhechhi. besh kaaje dichhe!!!
ReplyDeleteযে কোনও রকমের আলোকিত স্ক্রিনই ভয়ানক কর্মনাশা, এটা আমি খেয়াল করেছি, শম্পা।
Deleteআমারও বই পড়া কমে গেছে খুব। ফিরিয়ে আনতে হবে । পোস্টটা পড়ে ভালো লাগ্লো খুব।
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত।
DeleteJei kothata first money elo lekhatar last word ta porar por, setai boli ......
ReplyDeleteCONGRATULATIONS :)
r jaeno ei onubhuti ta hariye na jaay apnar jibin theke, ei prarthona e kori
হাহা, থ্যাংক ইউ, অনুরাধা।
DeleteKhub bhalo laglo lekhata. :)
ReplyDeleteBoi pora ki deliverable naki, je roj 3 ghonta kore 90 pata porte hobe? aajker jibone sobkichui ghori dhore korte hoy, ekhon ei boi porar moton anondo-dayok kaaj o jodi somoy mepe korte hoy, tahole to chittir!
ami obosso jontre boi porte ekhono shorogoro noi, tai ekhono prachin mote buk-e balish niye upur hoye boi pori. aar ekbar somyok taan onubhob korle raat kabar hoye jay drawing room e, jar onibarjo fol hoy porer din office late! :)
থ্যাংক ইউ, অরিজিত। ওই রাত কাবার করা বই পড়ার মজাই আলাদা।
Delete"আমার হোটেলে থাকতে ভালো লাগে। হোটেলের ঘরে যে নির্জনতাটা, সেটা নিজের বাড়িতে সব রকম আওয়াজ বন্ধ করলেও পাওয়া যায় না। ওই একখানা ঘরের মধ্যে সবটুকু অস্তিত্ব এঁটে যাওয়ার ব্যাপারটা টানে। আর টানে শিকড়হীন, দায়িত্বহীন ভোগের সুখ। বিছানায় শোব কিন্তু চাদর কাচা নিয়ে মাথা ঘামাব না। চা খাব আমি, কাপ ধোবে অন্য কেউ। " <3 <3 <3
ReplyDeleteহাই ফাইভ, অন্বেষা।
Deleteaha, hotel er ghor. amaro dibyi lage. kintu kaajer jonyo kothao giye hotel ey thakar soubhagyo hoy na, chhuti te giye hoy. tokhon mostly boi er bodole google map songi hoy pordin beranor khoshra korte. ekta gota din shudhu khabo ghumobo boi porbo ar hotel er janala diye pahar dekhbo, ei bashona ta achhe, konodin iye korte hobe ar ki.
ReplyDeleteবেড়াতে গিয়ে আমারও পড়া বিশেষ হয় না, প্রিয়াঙ্কা। তোমার পাহাড় দেখতে দেখতে বই পড়ার বাসনা পূর্ণ হোক, এই কামনা করি।
Deleteখুব সুন্দর লেখা হয়েছে। ধন্য়বাদ।
ReplyDeleteআমি আজকাল পরশুরাম-গল্পসমগ্র পড়ছি। বই টা কেনা হয়েছে ২০১৫ র দুর্গাপুজোর সময়, ব্য়াঙ্গালোরের পুজোর মাঠ থেকে। চার বছর হতে চললো। পড়ার অভ্য়াসটা সত্য়ি ই গেছে। ছোটবেলায়ে আমার বই এর পোকা হিসেবে একটা কুখ্য়াতি ছিল, সেটা বোধহয় ঘুচেছে।
কোনো অনলাইন পরশুরাম ফ্য়ান ক্লাব আছে কি?
সে রকম কিছুর কথা আমার কানে তো আসেনি সম্বরণ। তবে আপনি যারা অনলাইন ফোরামে সক্রিয় তাঁদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন।
Deleteলেখা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম, থ্যাংক ইউ।