পথে
ইস্তানবুল থেকে বোর্ডিং প্রায় শেষ, সবাই বসে পড়েছে, ওভারহেড বিনগুলো ধপাধপ বন্ধ হওয়ার আওয়াজ কমে এসেছে, আমি একবার মিডিয়া লাইব্রেরি পরীক্ষা করে নিয়েছি, দিল্লি থেকে ইস্তানবুল আসার পথে বার্ডম্যান আর হিডেন ফিগারস দেখা হয়ে গেছে, আমি ভাবছি এবার ‘মার্ডার, শি বেকড’ দেখব না ‘লেগো ব্যাটম্যান’, ভেবে ভেবে লেগো ব্যাটম্যানের দিকেই যখন মন ঝুঁকেছে এমন সময় একটা অস্বস্তি হল।
শারীরিক অস্বস্তি নয়, গরম বা ঠাণ্ডা লাগছে না। মানসিকও যে নয় বোঝাই যাচ্ছে, লেগো ব্যাটম্যান দেখার জন্য তৈরি হচ্ছি যখন। একবার দ্রুত চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম। না, কেউ আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে নেই, যে যার নিজের সামনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
অস্বস্তিটা গেল না। উল্টে একটু একটু তাকে চিনতে পারলাম। একটা কিছু যা আমার সঙ্গে থাকার কথা, কিন্তু না থাকার অস্বস্তি।
ছাতা আনিনি (যদিও বনে বৃষ্টি হবে লিখেছে), রুমাল ব্যাগের ভেতর, টিফিনবাক্সে লুচিআলুভাজা পুরে প্লেনে ওঠার জমানা গেছে, আই কার্ডও ব্যাগ থেকে বার করার প্রয়োজন হয়নি। এসব ছাড়া আর যে জিনিসটা আমার কাছে থাকার কথা, ছিলও এই কিছুক্ষণ আগে, আমার পাঁচ আঙুলে তার ছোঁয়া আমি তখনও স্পষ্ট কল্পনা করতে পারছি, আমার মেরুন কামিজের কোলে শুয়ে থাকা তার অবয়ব স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ঘন নীল, চৌকো, ওপরে সোনালি কালিতে কয়েকটা শব্দ লেখা।
ঘরে আগুন লাগলে কী নিয়ে ছুটে বেরোবো এ প্রশ্ন যখনই উঠেছে, বিনা দ্বিধায় আমি বলেছি, পাসপোর্ট। ভোটার কার্ড না, আধার না, আমার অফিসের আই কার্ড না, এমনকি অর্চিষ্মানও না, পাসপোর্ট। (যদিও লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে এবার থেকে অর্চিষ্মানকে নিয়ে বেরোনোটা পাসপোর্ট নিয়ে বেরোনোর থেকে বুদ্ধিমানের হবে। পাসপোর্ট নিয়ে অর্চিষ্মানকে খুঁজতে বেরোনো অসম্ভব, কিন্তু নতুন পাসপোর্টের জন্য দৌড়োদৌড়ি করার সময় অর্চিষ্মান সঙ্গে থাকলে সুবিধে।)
সেই পাসপোর্ট আমার কাছে নেই। কোথাও আগুন লাগেনি কোথাও, কোনও বিপর্যয় ঘটেনি, আমি জাস্ট বসে বসে, একটুও কাঠখড় না পুড়িয়ে, নিজ দায়িত্বে আমার পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেছি। যেমন করে সবাই ছাতা কিংবা রুমাল কিংবা টিফিন বাক্স হারায়।
ব্যাগে দেখলাম, নেই। সামনের খোপে দেখলাম, নেই। উঠে জামা, চাদর ঝাড়লাম, পাসপোর্ট ঝরে পড়ল না। দু’পাশের সহযাত্রীদের তুলে তাঁদের সিট, সিটের মাঝের ফাঁক চেক করলাম, নেই। আইলে বেরিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়ে যতদূর চোখ যায় প্লেনের মেঝে পরীক্ষা করলাম। নেই। আমার পাসপোর্ট কোথাও নেই। জাস্ট উবে গেছে।
টেক অফের তিন মিনিট আগে যতখানি সাড়া ফেলা যায় (আমার পক্ষে) ফেললাম। প্লেনের সহকারীদের তখন তুঙ্গ ব্যস্ততা। তাঁরা জানালেন এই মুহূর্তে তাঁদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়, যা হওয়ার ল্যান্ডিং-এর পরেই হবে। যদি আমার মনে হয় পাসপোর্ট এয়ারপোর্টে ফেলে এসেছি তাহলে আমি প্লেন থেকে নেমে যেতে পারি।
আমি নামলাম না। কারণ আমি নিরানব্বই শতাংশ নিশ্চিত ছিলাম আমি পাসপোর্ট নিয়ে প্লেনে উঠেছি। আমাকে আরও সাহস দিলেন আমার ডানদিকে বসে থাকা সহযাত্রী। বললেন, ‘আই স ইট ইন ইয়োর হ্যান্ড!’
কিছু কিছু মানুষ থাকেন যারা যে কোনও পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে ক্রাইসিসের মুহূর্তেও মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেন। আমার এই সহযাত্রী সেই গোত্রের। প্রথমেই তিনি আমাকে স্লো ব্রিদিং-এর পরামর্শ দিলেন, তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, আমি তোমার জিনিসপত্র চেক করতে পারি? মে বি আ সেকেন্ড পেয়ার অফ আইজ…আমি আমার ব্যাগ ওঁর হাতে গুঁজে দিলাম। বাঁচান আমাকে। তারপর দেখলাম সিস্টেমেটিক খোঁজা কাকে বলে। ভদ্রমহিলা আমার শালটা নিয়ে নিজের কোলে পাতলেন, তারপর ব্যাগ থেকে প্রতিটি জিনিস বার করে শালের ওপর ঝেড়ে ঝেড়ে দেখলেন।
পাসপোর্ট বেরোলো না।
‘বাট আই স ইট ইন ইয়োর হ্যান্ড! ইট মাস্ট বি ইনসাইড দ্য প্লেন!’
ততক্ষণে প্লেন মেঘটেঘের দুলুনি পেরিয়ে শান্ত আকাশে ভেসে চলেছে। আমার মাথার ভেতরের পরিস্থিতির সঙ্গে তার চালের কোনও মিল নেই। সিটবেল্ট বাঁধার সাইন অফ করে দেওয়া হয়েছে। আমি উঠে আবার চারদিক খুঁজে দেখলাম। সহযাত্রীরা কেউ সাহায্য করলেন, কেউ সোজা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলেন। পাসপোর্ট নেই।
আমি ফেরত গিয়ে মাথা সিটে হেলিয়ে চোখ বুজলাম। একটু আগের কনভিকশনটা, যে পাসপোর্ট কোথাও যেতেই পারে না, ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে এল। হয়তো আমি পাসপোর্টটা নিয়ে প্লেনে উঠিনি। বোর্ডিং-এর আগের মুহূর্তে বোর্ডিং পাসের সঙ্গে আমার পাসপোর্টটাও চেক করেছিল। তারপর আমি ভেস্টিবিউল দিয়ে দেড়শো পা হেঁটে প্লেনে উঠেছি। হয়তো সেখানে আমার হাত থেকে পাসপোর্ট পড়ে গেছে।
খাবার এল। প্লেনের খাবার সবাই দূরছাই করে, আমার দিব্যি লাগে। বাড়িতে কেমন বোরিং থালাবাটি, এখানে কেমন প্লাস্টিকের বাক্স থেকে প্লাস্টিকের কাঁটা বিঁধিয়ে খাওয়া। কোনওমতে ফয়েল তুলে কাঁটার ডগায় একখানা পাস্তা গেঁথে মুখে পুরলাম। অসম্ভব। আমার সারা শরীর টেনশনে দরজা বন্ধ করে খিল তুলে দিয়েছে, একবাটি তো দূরঅস্ত, একটা পাস্তারও জায়গা নেই।
ফ্রাংকফুর্ট এসে গেল। ওড়ার আগে পাইলট বলেছিলেন মোটে ঘণ্টা আড়াইয়ের মামলা, যদিও আমার মনে হল পাঁচঘণ্টার এক সেকেন্ড কম নয়। সবাই নেমে গেল। ডানপাশের ভদ্রমহিলা আমার হাত চেপে ধরে আমার চোখে চোখ ফেলে বলে গেলেন, ‘ইট ইজ নট লস্ট। নাথিং ইজ এভার লস্ট। রিমেমবার দ্যাট।’ আমার বাঁদিকের মেয়েটি, ওঠার পর থেকে যে জানালার দিকে তাকিয়ে মুখে রুমাল চেপে ক্রমাগত নিঃশব্দে কেঁদেছে, কান্না থামিয়ে আমার পাসপোর্ট খুঁজেছে, খোঁজা শেষ করে আবার মুখ ফিরিয়ে কেঁদেছে, বলে গেল, ‘গুড লাক’।
প্লেন খালি হয়ে গেল। আমি আবার আমার ব্যাগ, সামনের খোপ পরীক্ষা করলাম। সাষ্টাঙ্গ শুয়ে পড়ে প্লেনের মেঝে পরীক্ষা করলাম। যতদূর চোখ যায় কেবল ব্যবহৃত টিসু, বালিশের ছেঁড়া প্লাস্টিক, হেডফোন। আমার পাসপোর্ট নেই।
প্লেনের বাইরে ‘পোলিৎজাই’ লেখা বর্মের মতো কালো জ্যাকেট পরা তিনজন দাঁড়িয়ে ছিলেন, আমাকে বললেন, ‘সো, ম্যাম, ইউ ডু নট হ্যাভ ইয়োর পাসপোর্ট উইথ ইউ?’
‘নো।’ বললাম আমি।
আর বলামাত্র গোটা ঘটনাটা এই এতক্ষণ পর স্বমূর্তিতে প্রতিভাত হল। এতক্ষণ এত খোঁজাখুঁজি যেন একটা ট্রেজার হান্ট, পাসপোর্টটা কোনও খাঁজ থেকে বেরিয়ে এসে পিঠে ধাপ্পা দিলেই খেলা শেষ। কিন্তু শেষ হয়নি। খেলা সবে শুরু হয়েছে। আমি একটা অন্য দেশে এসে নেমেছি, পাসপোর্ট ছাড়া। এখন তিনজন পুলিশ আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
যতক্ষণ আশা থাকে, ততক্ষণই ছটফটানিও থাকে। ওয়ার্স্ট যা হওয়ার হয়ে গেছে, এবার স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কেউ আমাকে আর বাঁচাতে পারবে না। ঘটনাটার হাস্যকরতা, যদি কিছু থেকে থাকে, সেটার ওপর ফোকাস করলাম। পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলাম, এর পর কী কী হবে আমার। প্লেনেও এই প্রশ্নটা করেছি, সহযাত্রী এবং প্লেন কর্তৃপক্ষ কেউই সদুত্তর দিতে পারেননি। নিজেরা তো নয়ই, তাঁরা এর আগে কাউকে দেখেনওনি বা কারও কথা শোনেননি যে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেছে। কাজেই আমার কপালে কী নাচছে সে সম্পর্কে কেউ আমাকে সাবধান করতে পারেননি। একজন বলেছিলেন, সম্ভবত তোমাকে ফিরতি প্লেনে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে, বাট আই ডোন্ট নো।
পুলিশরাও পারলেন না। বলা বাহুল্য, আমার কেস হ্যান্ডল করার জন্য সিনিয়ার অফিশিয়ালদের পাঠানো হয়নি, যারা এসেছে তারা সবাই অল্পবয়সী, নভিস পুলিশ। তাঁরা বললেন, আমরা দেখিনি, কিন্তু হতেই পারে না তোমার আগে আর কেউ কখনও পাসপোর্ট হারায়নি। ইউ আর নট দ্য ফার্স্ট (ইডিয়ট) অ্যান্ড ইউ সার্টেনলি ওন্ট বি দ্য লাস্ট।
এইটুকু সান্ত্বনাই তখন আমার কাছে যথেষ্ট।
বনে আমার পৌঁছনো দরকার সন্ধ্যে ছ’টার আগে। সেই অনুযায়ী টিকিট কাটা হয়েছে, যাতে ফ্রাংকফুর্টে দুপুরবেলা নেমে ট্রেনে চেপে বিকেলের মধ্যে বনে পৌঁছোতে অসুবিধে না হয়। এখন আর সে চান্স নেই। কিন্তু দেরি নিয়ে আমি ভাবছিলাম না। আমি ভাবছিলাম অন্য কথা। মনে পড়ছিল, রওনা দেওয়ার আগের সন্ধ্যেবেলায় অর্চিষ্মানের সঙ্গে দু’নম্বর মার্কেটে দাঁড়িয়ে চা খেতে খেতে হঠাৎ কেমন মনখারাপ হয়েছিল। হলই বা সাত দিন, যে গতিতে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছি তাতে এক্সট্রা সাত দিনের অর্চিষ্মানের সঙ্গের মূল্য না বোঝার মতো বোকা আমি নই। সাত দিন একসঙ্গে থাকা যেত, মিনিমাম চোদ্দ বার একসঙ্গে চা খাওয়া যেত। জেনারেলি এ রকম বোকা বোকা মনখারাপ আমার হয় না, হয়েছিল যখন তখন কি সাবধান হওয়া উচিত ছিল যে সামনে একটা বিপদ আসতে চলেছে? মনে পড়ল ইস্তানবুল এয়ারপোর্ট দিয়ে হাঁটার সময় উল্টোদিক থেকে আসা একজনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে হাতে ধরা পাসপোর্ট, পাসপোর্টের ভেতরের বোর্ডিং পাস সব ছত্রাকার হয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়েছিল, যিনি ধাক্কা দিলেন তিনি পরিণতির দিকে দৃকপাত না করে চলে গেলেন, আর আমি সব কুড়িয়ে কুড়িয়ে তুললাম, তখন লোকের অভদ্রতায় নতুন করে চমৎকৃত হওয়ার থেকে কি অশুভ ইঙ্গিতটা খেয়াল করা উচিত ছিল? যে আমার পাসপোর্ট অচিরেই আমার হাতছাড়া হতে চলেছে?
প্রথমে আমাকে এয়ারপোর্টের ওই তলারই ফেডেরাল পুলিশের শাখা অফিসে নিয়ে যাওয়া হল। ততক্ষণে আমার অন্যান্য পরিচয়পত্র (ভোটার, প্যান কার্ড) তাঁরা হস্তগত করেছেন। সেখানে আমার সমস্যা নিয়ে গুরুতর আলোচনা চলল, বলা বাহুল্য তার একটি বর্ণও আমার বোধগম্য হল না। একে তাকে ফোন করা হল, তারপর আমাকে জানানো হল যে আমাকে এয়ারপোর্টের পুলিশের হেড অফিসে যেতে হবে, সেখানে স্থির হবে আমার কী হিল্লে করা হবে।
রওনা দিলাম। এয়ারপোর্টের মধ্যে দিয়েই রাস্তা, কিন্তু আমার চেনা রাস্তা নয়। যে সব দরজায় লাল রং দিয়ে ‘ডু নট এন্টার’ লেখা থাকে দেখেছি এতদিন, সে সব দরজা পুলিশরা নিজেদের কার্ড দিয়ে খুলে ফেললেন। খাঁ খাঁ করিডর, এদিকের দরজা যতক্ষণ না বন্ধ হয় ওদিকের দরজা খোলে না, এইসব গুরুতর সিকিউরিটি পেরিয়ে পুলিশপরিবৃত হয়ে আমি চললাম। সিঁড়ি চড়লাম, নামলাম, ডায়ে বেঁকলাম, বাঁয়ে বেঁকলাম, আবার সিঁড়ি চড়লাম, আবার নামছি, এমন সময় চোখ গেল সামনে নিচের দিকে একটা ঘরের দিকে। কাচের দরজার ভেতর কোটি কোটি ইউনিফর্ম পরা পুলিশ কিলবিল করছে। নির্দেশ পাওয়া মাত্র হই হই করে ক্রিমিন্যাল নিধনে বেরিয়ে পড়বে। ওর মধ্যে আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গতি আপসে খানিকটা শ্লথ হয়ে এল। আমার সামনের পুলিশ কী হল দেখতে ঘাড় পেছনে ঘোরালেন তাই মিস করে গেলেন, কিন্তু আমি দেখতে পেলাম সামনের ঘরের ভেতর থেকে দরজা ঠেলে একজন নীল জ্যাকেট বেরিয়ে এসেছেন, হাত উঁচু করে ধরা, সে হাতে ছোট নীল রঙের একটা বই, গায়ে সোনালি রঙের ছিটে।
আমি জানি ওগুলো কী। ওগুলো হচ্ছে কয়েকটা শব্দ। রিপাবলিক অফ ইন্ডিয়া।
আমার পাসপোর্ট সবার হাতে হাতে ঘুরল। সবাই পাতা উল্টে উল্টে দেখল যে ওটা আমারই পাসপোর্ট কি না, ছবি তুলে ধরে ভুরু কুঁচকে আমার মুখের সঙ্গে মিলিয়ে দেখল, তারপর নিশ্চিন্ত হয়ে পাসপোর্টটা আমার বাড়ানো হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, ‘ইউ আর ভেরি লাকি।’
‘আই নো।’ ছাড়া আর কিছু বলার ছিল না আমার। একবার জিজ্ঞাসা করলাম, কোথা থেকে পেলে? তাতে ‘ইট ওয়াজ ইনসাইড দ্য প্লেন’ ছাড়া আর কিছু জবাব পেলাম না। মারাত্মক কৌতূহল হচ্ছিল প্লেনের এক্স্যাক্টলি কোথায় ছিল পাসপোর্টটা। যে সব জায়গায় আমি পাঁচশোবার করে খুঁজেছিলাম সেখানে? আমার সিটের নিচে? আমার সামনের খোপে? সিটের খাঁজে? সামনের রোয়ের যে লোকটা অত হল্লার মধ্যেও নির্বিকার মুখে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বসে ছিল তার পকেটে? কিন্তু সে সবের উত্তর দেওয়ার সময় কারও ছিল না।
পাসপোর্টটার গায়ে একবার হাত বুলিয়ে ব্যাগে পুরে নিলাম। এখন যে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে, সেমিনার শুনতে শুনতে, ডিনার খেতে খেতে দশ মিনিট অন্তর অন্তর ব্যাগ খুলে পরীক্ষা করে নিচ্ছি সব ঠিকঠাক আছে কি না, তা দেখে নিশ্চয় সবাই আমাকে পাগল ভাবছে। কিন্তু আপনারা নিশ্চয় ভাববেন না।
করেছিলেন কী মশাই ! ওটার একগাদা জেরক্স করে সব ব্যাগে একটা করে পুরে রাখুন| আর আসলটা এমন জায়গায় পুরুন, যে ইচ্ছে করলেও যাতে বের করে দেখতে না পারেন| এক্কেবারে ফিরতি প্লেনে ওঠার সময়ে বের করবেন'খন|
ReplyDeleteওহ, জেরক্স দেখালে কাজ হয় বুঝি? তাহলে তাই করব এখন। থ্যাংক ইউ, অন্বেষা।
Deleteপ্লেনে ওঠার সময়ে আসলটাই দেখাতে হবে, কিন্তু বিদেশবিভুঁয়ে অন্য সময়ে জেরক্স দিয়েও চালানো যাবে যদ্দূর জানি|
Deleteআমার ধারণা নেমেও আসলটাই দেখাতে হয়, না হলে কেউ নিজের দেশে ঢুকতে দেয় না।
Deleteও হ্যাঁ, সে তো বটেই| আমি সেটা ঠিক বলতে চাইনি| আমি বলতে চেয়েছি বিদেশে এমনিতে পরিচয়পত্র হিসেবে পাসপোর্ট সঙ্গে রাখার কথা|
Deleteকি ঘটনাবহুল জীবন আপনার! আমার শ্যালিকারও ঠিক এর'মটাই হয়েছিল, যদিও সেটা ল্যান্ডিং-এর আগেই উদ্ধার করা গিয়েছিল। বাই দ্য ওয়ে, যদি পাসপোর্ট একেবারেই হারিয়ে যেত, তাহলেও আপনাকে ফেরত পাঠানো হত না। আপনাকে নিয়ারেস্ট ইন্ডিয়ান এমব্যাসিতে জমা দেওয়া হত। এই তথ্যটি জেনেছিলাম আমার এক প্রাক্তন সহকর্মীর কাছ থেকে, যে কিনা বিদেশে পাসপোর্ট একেবারেই হারিয়ে ফেলেছিল। তাই আমি কনফিডেন্টলি বলতে পারি - ইউ আর নট দ্য ফার্স্ট (ইডিয়ট নয়, ক্লামসি) অ্যান্ড ইউ সার্টেনলি ওন্ট বি দ্য লাস্ট।
ReplyDeleteওহ, যাক আমার কী হত জেনে শান্তি হচ্ছে। এত ঘটনাবাহুল্যতেই তো চুলগুলো পাকল।
Deleteআপনার পাসপোর্ট ও দেখি আপনার লেখার মত, সুরিএলিস্টিক... আপন খেয়ালে চলে। যাই হোক, শুভেচ্ছা রইল। "দেখেছি, ব্যাগের মধ্যে ঐ পাসপোর্ট কাঁচা সোনা, তারে ধরি ধরি মনে করি, ধরতে গেলে আর পেলাম না"...
ReplyDeleteহাহা, শুভেচ্ছার জন্য থ্যাংক ইউ, অস্মিতা। খুবই দরকারি জিনিস আমার পক্ষে, বুঝতেই পারছেন।
DeleteBaahbaaa....eto bhalo adventure holo...sabdhane thakben.
ReplyDeleteএমন অ্যাডভেঞ্চার যেন আমার অতি বড় অপছন্দের লোকেরও না হয়, এই কামনা করি, সুস্মিতা।
DeleteEmnitei amar police dekhle hnatu kaanpe aar bhindeshi dirghodehi police dekhle to kothai nei....
DeleteEtai porom nishchinter je passport ti khoya jaini.
সত্যি, সুস্মিতা। আমি সত্যি সত্যি অ্যামেজড যে পাসপোর্টটা এখন আমার ব্যাগের মধ্যে। (দশ মিনিট আগে চেক করেছি।) কোন পুণ্যবলে জানি না। পুলিশে আমারও মারাত্মক ভয়।
Deleteকরেছেন কি! চ্যাটবাক্সে কোলনের পর ও লিখলে যেমন হয় আমার মুখটা সেরকম হয়ে গেছে পড়তে পড়তে। লোকে পাগল ভাবলে ভাববে, আপনি বরং সব চেক করে করেই চলবেন এবার থেকে।
ReplyDeleteসেই তো, সুগত। লোকে তো আর আমাকে চেনে না, না চিনে পাগল ভাবলে ভাবুক গে।
DeleteHey bhogobaan! Passport harano amar jeeboner sobcheye boro duswopno. Ki bheeshon nervous lagchhilo porte porte. Ami hole plane ei kannakati shuru kortam. Bhaggish tomar matha er cheye beshi thanda.
ReplyDeleteহাই ফাইভ, বিম্ববতী। আমারও মনে হত, আমার সব হারিয়ে যায় মানছি, কিন্তু পাসপোর্টটা হারায়নি। ওয়েল, সে গর্ব আর করা যাবে না।
Deleteki sanghatik kando!! ore baba.. ami praay i bag hatre passport dekhi eka berole almost maniac er moton, as if somnath sathe thakle passport harabena othoba harale o khunje debe....tumi jodi jante parte ota plane e exactly kothay chhilo tahole khub helpful hoto- at least for me. amar "bhulo" reputation ta bhakti ache r ki..
ReplyDeleteAmio recent Australia trip e hidden figures, bridge of spies, immortal life of henrietta lacks, the queen dekhlam. - Bratati.
ওরে বাবা বলে ওরে বাবা, ব্রততী। আমিও হারানোয় ওস্তাদ বলে সব ম্যানিয়াকের মতো চেক করি সবসময়, তাতেও শেষরক্ষা হল না। তবে তোমার যেন এ জিনিস কখনও না হয়, সেই কামনা করি।
Delete'Murder she baked' dekhlen? Ota bodhoi Hallmark channel er akta movie series. Orokom arekta series achhe 'Garage sale mysteries'.
ReplyDeleteআরে দেখব দেখব করছিলাম, রণদীপ, তারপর তো যা হল আর কিছু দেখাই হল না। দেখি আবার সুযোগ হলে দেখব।
Deleteসুনীল গঙ্গোপাধ্যায় "বিজনে নিজের সঙ্গে" বইতে পাসপোর্ট হারানো, বদল ইত্যাদি নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছেন, পায়ের তলায় সর্ষে বইতেও লেখাটা আছে|
ReplyDeleteলেখাগুলো পড়তে যতটা মজার, বাস্তবটা ঠিক একশ আশি ডিগ্রী উল্টো| এবারে ভালোভাবে কাজকর্ম সেরে ঘুরে আসুন, আশা করি ক্যামেরা/মোবাইল সঙ্গে আছে কাজেই ছবি চাই| - সৌগত
সে তো বটেই, সৌগত। বাস্তবে ব্যাপারটা আতংকের।
DeleteOrey Baba...porte porte amaari haath pa thanda hoye gechhilo. Pet-er bhetor ta khaali hoye gechhilo
ReplyDeleteপাসপোর্ট হারানোটা সত্যিই হরর স্টোরি, অর্পণ।
Deletekeno jani na, lekha ta pore ami nijer passport ta bag e ache kina ekbar dekhe nilam 0_0 . sml
ReplyDeleteভালোই করেছেন, ও জিনিসকে চোখে চোখে রাখাই ভালো।
Deleteore baba... portei portei khub bhoy korchilo.. jinish harano aamaro obhyesh.. aami o somane bag er moddhe haat diye ba bag khule baar baar check kori.. emon ki bag namiye rakhteo bhoy pai.. bhalo dushawapnor moddhe porechilen..
ReplyDeleteদুঃস্বপ্নই বটে, ইনিয়া। ঘুম যে ভেঙেছে এইটা স্বস্তির।
DeleteKi shanghatik experience! Amaar oi passport haranor ekta phobia ache ... every 5 mins purse khule check kori. Tomar passport bhin deshe ekkebare je haariye jayeni eta jene khushi holam Kuntala.
ReplyDeleteShabdhane theko ar bhaloye bhaloye phire eso.
ঠিকই কর, শর্মিলা। পাসপোর্ট হারানো ইজ দ্য ওয়ার্স্ট। আমার যদিও পুরো হারায়নি, হারালে কী হয় একটু চেখে দেখা গেল আরকি।
Deleteএটা আমার প্রিয় দুঃস্বপ্ন! কথাটা কি কাঁঠালের আমসত্বের মতো শোনাচ্ছে? সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু ব্যাপারটা সত্যি। আমি আজ অবধি অসংখ্যবার এই দুঃস্বপ্নটি দেখেছি যে প্লেন নিচে নামতে শুরু করেছে, এয়ারপোর্ট ও তার বাইরের শহর (দিল্লির অপভ্রংশ, যেহেতু কলকাতা বাদে আকাশপথে ওই শহরেই সবচেয়ে বেশি যেতে হয়েছে) দৃশ্যমান, এবং আমি আবিষ্কার করেছি যে আমার পাসপোর্ট খুঁজে পাচ্ছি না। এটা এতই ভয়াবহ একটা অনুভূতি, যে আমার খুব ভেঙে যায়, আমি নিজেকে নিরাপদ শয্যায় ফিরে পাই, এবং পরম শান্তিতে আবার ঘুমিয়ে পড়ি।
ReplyDeleteজোকস অ্যাপার্ট, এ জিনিস যেন পরম শত্তুরেরো না হয়।
আর হ্যাঁ, পরের বার পাসপোর্ট ও ভিসা'র ফটোকপি করিয়ে, এবং সম্ভব হলে স্ক্যান করে তার সফট কপি মোবাইলে ভরে, তবে প্লেনে চাপবেন।
আমারও ওটাই প্রিয় দুঃস্বপ্ন ছিল এতদিন, ঋজু, এখন বাস্তব, স্যাডলি।
DeleteJiboner prothombarer uraane e passport rekhekhei neme jachhilam Flight theke. Ek sohridoy bideshi bhodrolok kuriye tule diyechhilen hate. Passport sebar hariyei jachchhilo pray. Apnar ghotonata pore chomke uthlam. Khub duschintar muhurto ketechhe apnar.
ReplyDeleteখুব জোর বাঁচিয়েছিলেন ভদ্রলোক আপনাকে, সায়ন।
DeleteAmar almost erom byapar hoyechilo ei bochorer gorai .... Amsterdam theke San Francisco flight .... bari theke berobo, dakhi passport nei ... kothao pelam na .... flight cancellation. seta abar Saturday. Monday Indian embassy te jaabo Passport apply korte notun kore, sokale phone local council theke ... rastai pore chilo amar passport, ekhjon peye ferot diye gache ... se je ki shanti ....
ReplyDeleteহোয়াট! এটা আমার কেলেঙ্কারিটার থেকেও সাংঘাতিক মনে হচ্ছে। রাস্তায় গেল কী করে পাসপোর্ট!
DeleteKuntala-debi, khub jor b(n)ache gachen. Ei passport harano ta amar o duswapno -- sob kichu i harai ki na. Apnar passport er sob pata-r ekta photocopy kore nijer kache rakhben, othoba scan kore dropbox/google-drive e vore rakhben. Tahole je kono jaiga te access korte parben. Passport harale embassy bole harano passport er photocopy diye abedon korte. Fole passport harabar age i tar photocopy kore nin. Good luck, apna bon-vromon sukher houk.
ReplyDeleteধন্যবাদ, ঘনাদা। পাসপোর্ট হারানোটা সকলেরই দুঃস্বপ্ন দেখা যাচ্ছে। কামনা করি আপনাদের এই স্বপ্নটা অধরা থাক।
Deletepassport haranota shotyii dusswopner, kintu sei songe etao bolte badhyo hocchi je jodi jinishta ei samanyo samayer jonyo apnar hatchhara na hoto, ta hole ei lekhata hoto na.
ReplyDeletekhub upobhogyo lekha, songe tan-tan uttejona. :) :)
Seshe ektu serious kotha boli - passport er moton jinish khub, khub sabdhane rakhben, parle ebar theke golay jhuliye niye beroben. :)
Bonn-bash bhalo katuk. :)
গলায় ঝোলানোর ব্যাপারটা আমার মাথাতেও এসেছিল, অরিজিত, এই দুর্ঘটনার পর। আপাতত ব্যাগেই রেখেছি। সত্যি আমার আরও অনেক বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার।
DeletePasspoRt harano .. ek jug age bor sotyi hari ye chhilo. Seta canaday immigration er por. Notun jaigay ese dekhe nei.. tokhoni airport e giye o paini. Sesh e abar apply kore paai canadar indian embassy thek. Seta 1 yr er jonyo. Pore sei passport renew korate delhi passport office e anek bar jete hoyechhilo. But toronto thek kono info patha ni, tai renew hochhilo na. Sesh e ekjon Mrs sharma naam office er ekjon nije giye tokhonkar passport officer k special kore likhiye passport extend Koran. Eta amader Ekta Boro lesson. Tai last 12 yr dhore kothao gele sudhu passport I check kori. Aaj o jokhon airport e passport paoa gechhe announced hoi, Amar bor er sei dukher memory ase. Jodi Amar tao keu joma diye jeto.
ReplyDeleteযাক, একজনকে পাওয়া গেল যে সত্যি হারিয়েছে। সত্যি, এ বড় মাথাব্যথা।
DeleteKi sanghatik re.bechara tui.
ReplyDeleteবেচারা কিছুই না, যেমন কর্ম তেমন ফল। এত ট্যালা হওয়ার তো কোনও কারণ নেই।
Deleteএহে এটা খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়ে গেলো ...তোমার ওই সময়ের অবস্থাটা বুঝতে পারছি ।এরকম কিছু আমার সাথে হলে আমি ভয়ানক ভয় পেতাম এটা নিশ্চিত । দেশে ফিরেছ? ফেরাটা শান্তির হোক, আর কোনো চাপ না হোক । -প্রদীপ্ত
ReplyDeleteশুভেচ্ছার জন্য অনেক ধন্যবাদ, প্রদীপ্ত। দেশে ফিরেছি, নিরাপদেই ফিরেছি।
Deleteuff Kuntaladi..adbhut experience aar jathariti adbhut bhalo lekha..last e mone hocchilo sottie pulish petabe:)
ReplyDeleteথ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ, অর্ক।
Delete