Posts

পার্বতীর পারে ৩

Image
পার্বতী কুটিরের সুদৃশ্য বোর্ডের পাশে গাড়ি থামল। অর্চিষ্মানকে রুম ডেলিভারির অফার ঝালিয়ে, আমাকে আরেকবার নো ক্যান্সারের গ্যারান্টি দিয়ে ভাইসাব চলে গেলেন। তাড়ায় ছিলেন মনে হল। টাকা মিটিয়ে নামছি, এক পা তখনও গাড়ির ভেতরে, গাড়ি নড়ে উঠল। এখানে পার্বতীর গর্জন অবিরাম। সিঁড়ি বেয়ে গর্জনের কাছাকাছি পৌঁছলাম। পরিশীলিত কণ্ঠের মালিক অবশেষে শরীর ধরে বেরিয়ে এলেন। নাম সুযোগ। সুযোগ হাসিমুখে জানালেন আমাদের জন্য একটি অসামান্য সারপ্রাইজ রেডি করে রেখেছেন তিনি। সারপ্রাইজটা হচ্ছে যে আমাদের কোত্থাও যাওয়ার দরকার নেই। টেন্ট আবার অ্যাভেলেবল হয়ে গেছে, আমরা পার্বতী কুটিরেই থাকতে পারি। বাট ইউ মাস্ট ভিজিট গিগলিং গুন সামটাইমস্‌। ইট’স রিয়েলি আ বিউটিফুল প্রপার্টি, ভেরি ওয়েল মেন্টেন্ড। টেন্ট ফাঁকা হলেও এখনও পরিষ্কার হচ্ছে। সুযোগ আমাদের চেক ইনের সুযোগ দেবেন দুপুর একটায়। ততক্ষণ যেন আমরা বাগানে বসে পার্বতীর গান শুনি আর নাচ দেখি। বলে আমার উদ্দেশ্যে বাগানের মাঝখানে পাতা টেবিলের পাশের একটা চেয়ার টেনে দিলেন। অর্চিষ্মান নিজের চেয়ার নিজেই টেনে বসতে যাবে, আমি বললাম ইয়ে মানে যদি ছায়ায় বসার সুযোগ দেন। সুযোগ নিশ্চয় নিশ্চয় বলে

পার্বতীর পারে ২

নৈশাহারের বিরতি শেষ। অর্চিষ্মান মুঠোভরা মৌরি মুখে ছুঁড়তে ছুঁড়তে বাসে উঠল। অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইসাব গুনতি সেরে বাস চালু করার সংকেত দিয়ে ড্রাইভারের কেবিনের পর্দা টেনে দিলেন। বাসের আলো নিভে গেছে। অর্চিষ্মান কানে গান গুঁজে চোখ বুজে হেডরেস্টে মাথা হেলিয়েছে। সামনের রো-এর বেটার এনার্জি অবশেষে ফুরিয়েছে। চারদিক চুপচাপ। খালি ড্রাইভারের কেবিনের কেউ দেড় মিনিট অন্তর সশব্দে কফ তুলে ফেলছেন। হোপফুলি জানালার বাইরে। আমাদের সিটের কোণাকুণি সিটে একটা ছেলে ফোন ঘাঁটছে। চরাচরে ওই একটিমাত্র আলোর আয়তক্ষেত্র। সবকিছু থেকে মন সরিয়ে জানালার বাইরে স্থাপন করলাম। এ প্রাণ রাতের ভলভো। রাস্তার ধারের অন্ধকারে কখনওসখনও দোতলার জানালায় একলা আলো। পরীক্ষার পড়া? ইনসমনিয়া? প্রেমের শুরু? প্রেমের শেষ? রাস্তায় প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা শূন্যে ঠেকেছে, মিছিল করে চলেছে শুধু প্রকাণ্ড পাঞ্জাব লরির দল - মধ্যরাতের হাইওয়ের রিয়েল মাফিয়া। সে মিছিলের ফাঁক গলে গলে লং ড্রাইভের পাহাড়মুখো বাস। পুরুষকণ্ঠ। ড্রাইভারজি ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলছেন। সাক্ষাতে আর ফোনে কথা বলার টোনে কত তফাৎ। এত রাতে কে জেগে আছে ওঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য? নির্ঘাৎ অন্য কোনও ভলভোর

পার্বতীর পারে ১

অন্যদিন দু’বার বাজায়, বৃহস্পতিবার অর্চিষ্মান চারবার বেল বাজাল। গুডফ্রাইড ইভে আসন্ন লং উইকেন্ডের উত্তেজনায় নির্ঘাত। এ জুতোর ডগা দিয়ে ও জুতোর গোড়ালিতে চাপ দিতে দিতে বলল, প্রসেনজিৎ চলে গেছে? বললাম, তিরিশ সেকেন্ড আগে এসেছে। লুচি করতে বলবে? লুচি আর সাদা আলুর তরকারি? মানে তোমার যদি অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে না করে? ময়দা আছে কি না-র সাড়ে তিনমিনিটের প্যানিক পেরিয়ে ঘরে এলাম। অর্চিষ্মান নাকের ডগায় ফোন ধরে খাটে চিৎপাত। রোজই চিৎপাত হয় কিন্তু আজকের ভঙ্গিটা সামান্য আলাদা। অন্যদিনের ‘তুলে নে মা’-র বদলে আজ চোখেমুখে শিকারী বাজের তৎপরতা। অর্চিষ্মান নেক্সট তিনদিনের মজা খুঁজছে। প্রসেনজিৎ কোস্টার খুঁজে এনে চায়ের কাপ নামিয়ে রান্নাঘরে ফিরে গেল। অর্চিষ্মান জিয়োহ্‌ বলে শূন্যে মুঠি ছুঁড়ল। অতি উত্তম এসে গেছে নেহরু প্লেসে। ছ’বেলার একবেলা সর্টেড। আরেকবেলা ওই দোকানটায় খাব, আরে ওই যে ওই দোকানটায় অনেকদিন ধরে যাব যাব করছি, আহা বল না, ওই যে ব্যাম্বু না গার্ডেন, আমি বললাম মেনল্যান্ড চায়না, তখন বলল হ্যাঁ হ্যাঁ মেনল্যান্ড চায়নাতে খেতে যাব, তুমি কুংফু পান্ডা ফোর-এর কথা বলছিলে সেটাও যাওয়া যায় আরেকবেলা, আরেকবেলা জামা মসজ

আনরিলেটেবল অতীতচারণা। Happening by Annie Erneux। Scenes from a Childhood by Jon Fosse।

বন্ধু বলল, ফেসবুকের অমুক কবির কবিতা পড়েছিস? স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বানান না জানলেও আমরা সবাই যেমন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচেই থাকি তেমনি ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট না থাকলেও (এবং ফেক থেকে আড়ি পাতায় বহুদিন ক্ষান্ত দিলেও, অন গড ফাদার মাদার) আমরা সবাই আসলে ফেসবুকেই আছি। কাজেই ভদ্রলোকের কবিতা পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। বা, না পড়ে থাকার সুযোগ হয়নি। লোকে হোয়াটস্‌অ্যাপ বায়োতে সেঁটেছে। মাদার্স ডে আর ছটপুজোয় লাগসই লাইন তুলে ফরওয়ার্ড করেছে। তাদের কিছু কিছু আমিও রি-ফরওয়ার্ড করেছি। স্বীকার করলাম। পড়েছি রে।  বিশ্বস্ত লোকজনকে ফরওয়ার্ডও করেছি। হাসির চোটে চোখ থেকে নীল অশ্রু ছিটকে বেরোনো ইমোজি সহযোগে। অনির্বাণ ভট্টাচার্য এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন ভালো অভিনেতা/ পরিচালক হওয়া সত্ত্বেও (ইটালিকসের অংশটা তিনি বলেননি, পরের বাক্যের সঙ্গে সাযুজ্যরক্ষার্থে আমি জুড়েছি) উনি দর্শক হিসেবে জটিল নন। ওঁর সবই ভালো লাগে। আমার আবার ঠিক উল্টো। স্রষ্টা হিসেবে যেমনই হই না কেন ভোক্তা হিসেবে নিক্তি হাতে বসে আছি। মাপ মনের মতো না হলেই নাক কুঁচকে বাতিল করব। বন্ধুর ভঙ্গিতে কবির কবিতা সম্পর্কে আসন্ন অ্যাপ্রিসিয়েশনের আঁচ পেয়ে আগেভাগে নিজে