Posts

Showing posts from December, 2022

ক্রিসমাস ইভ

তিনমূর্তি ভবনের আর্কাইভে গবেষণার কাজে যেত শ্বেতা, খবর দিয়েছিল মাইসোর ক্যাফের। সকালে সাইকেডেলিক শর্টস্‌ পরা সাইক্লিস্ট, উইকডেজের দুপুরে ব্যাকপ্যাক কাঁধে ছাত্র, উইকেন্ডের দুপুরে আণ্ডাবাচ্চা সহযোগে পারিবারিক ভিড়। সস্তায় ভালো খাবারের বিশ্বস্ত ঠেকের খবরাখবর যারা রাখেন দিল্লিতে, মাইসোর ক্যাফে চেনেন। ঢিমেতালের শনিবারে ক্যাফেতে পৌঁছতে বেলা হল। মা বাবা দুই মেয়ের পরিবার খাওয়া সেরে উঠতে টেবিল দখল করতে আরও দেরি। হইহই করে আরও তিনটে পরিবার ঢুকে এল দরজা দিয়ে। ভাগ্যিস সবক’টাই তিনের বেশি সদস্যসম্বলিত, টেবিল ভাগাভাগি করার প্রস্তাব এল না। খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে সাউথ অ্যাভিনিউ লেনের ধুলোতে গড়াগড়ি খাওয়া ঝিরিঝিরি রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে সন্দেহটা সত্যি হল। মেদুবড়া, কফির ওপর মিরচি বড়া, দেখতের তুলনায় যা নিশ্চিতভাবেই খেতে খারাপ, বেশি হয়ে গেছে। উবার বন্ধ করে হাঁটতে শুরু করলাম। পিঠে ল্যাপটপ, মনে উচ্চাশা। ফেরার পথে কফিশপে বসে কাজ করব। কেউ কফি শপে গিয়ে গলাকাটা দামের কফি খেতে খেতে কাজ করে, বই পড়ে শুনলে মনে মনে একসময় তার সম্পর্কে একটা ধারণাটা করতাম। নিজেই সেটায় পরিণত হয়েছি। পিঠে ভার, মনে উচ্চাশা, গায়ে রোদ্দু

দিন ও জীবন

এই সব কাটাঘুড়ি দিনরাতগুলোয় যখন জীবন শুধুই অতীত নয়তো ভবিষ্যৎ, নিচের কথাগুলো বারবার মনে করার। How we spend our days is, of course, how we spend our lives. What we do with this hour, and that one, is what we are doing. A schedule defends from chaos and whim. It is a net for catching days. It is a scaffolding on which a worker can stand and labor with both hands at sections of time. A schedule is a mock-up of reason and order—willed, faked, and so brought into being; it is a peace and a haven set into the wreck of time; it is a lifeboat on which you find yourself, decades later, still living. Each day is the same, so you remember the series afterward as a blurred and powerful pattern. Annie Dillard, The Writing Life

বেয়াল্লিশ

Image
বাবা সেদিন কাকে যেন ফোনে বলছিলেন, আরে বাচ্চা ছেলে! ফিফটি নাইন! ভাবতে পারেন? যাই, তিন্নির পাঠানো কেক খাই।

নতুন টিভি

মাসতিনেক আগে স্ক্রিনের মাঝখান দিয়ে প্রথম সরলরেখাটা আবিষ্কারের সময় থেকেই মন শক্ত করেছিলাম। একমাসের মধ্যে দুটো, পনেরো দিনের মধ্যে আরও তিনটে, পরের ঠিক তেরোদিনের মাথায় সহস্র সরলরেখার বাণে আমার একযুগ পুরোনো টিভি চিরতরে অন্ধ হল। আজকাল কেউ টিভি দেখে না। দেখবে কী করে, কারও বাড়িতে টিভিই নেই। ও রিপু সকলেই জয় করে ফেলেছে, আমি ছাড়া। টিভি ছাড়া জীবন আমার কল্পনার বাইরে। টিভি দেখি মানে ঠিক "টিভি" দেখি না, কারণ কেব্‌ল কানেকশন নেই যা কোনও মহৎ ভার্চুর সিগন্যালিং নয়। প্ল্যান রিনিউ করতে ভুলে যাওয়ার ভাইসের পরিণাম। তাতে একটাই অসুবিধে হয়েছে, নাপতোল দেখা যাচ্ছে না। আর নাপতোল ছাড়া টিভিতে কি সত্যিই কিছু দেখার থাকে? ওয়েল, জ্যোতিষ আর রূপচর্চাও থাকে। মনে থাকলে রিনিউ করিয়ে নেব'খন। তা বলে আমার টিভি অকেজো নয়। ক্রোমকাস্টের পুঁচকে যন্ত্রটা গুঁজে রেখেছি - ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হইচই - হইহই করে বাজতে থাকে। সকাল থেকে রাত। ঝালাপালা হলে ঘরের আলো নিভিয়ে মিউটেড নীল আভায় শুয়ে থাকি। ঘুমোতে যাওয়ার আগে সানডে সাসপেন্স চালাই। ল্যাপটপের থেকে টিভির কণ্ঠস্বর বেটার। টিভি আমার রেডিওর কাজও করে। টিভি

Do not feed the pigeons

Image
 

দোস্তজী

নেহরু প্লেসে শনিরবি বিকেলের শো-তে চলছিল 'দোস্তজী'। খ্যাতি কানে এসেছিল, গেলাম। হল থেকে বেরিয়ে দোসার দোকান পর্যন্ত হেঁটে এসে, খেতে খেতে ভাবলাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেসুরো চিৎকারের মাঝে আচমকা একটা সুরেলা গান শুনতে পাওয়ার স্বর্গানুভূতি কি গানটার গুণ নাকি চিৎকারগুলোর দোষ? 'দোস্তজী' দেখার ভালোলাগাটা কি 'দোস্তজী'-র কৃতিত্ব? নাকি অন্য ভাষার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এই রকমের সিনেমা হরেদরে? যা আমাদের বসে-দেখা-যায়-না, পাতে-দেওয়া-যায়-না র পাঁকে পঙ্কজ প্রতিভাত হচ্ছে?  বাবরি মসজিদ ভাঙার ছ’মাস কেটেছে। মুর্শিদাবাদের গ্রামে টেনশন বুড়বুড়ি কাটছে। একটি মসজিদের খুনের বদলা আরেকটি মসজিদের জন্ম। আরেকটি মসজিদের জন্মের বদলা কলকাতা থেকে দল এনে রামরাবণের যাত্রাপালা। এর মধ্যে ক্লাস থ্রি-তে পড়া দুটি বালক, শফিকুল আর পলাশ, ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে, বচ্চনের কায়দায় দাঁড়ানো নিয়ে, টকটকি বাজানো নিয়ে মশগুল। 'দোস্তজী' ধীর। এবং একটুও বোরিং না। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারদুটো ইনকমপ্যাটিবল, কিন্তু আসলে নয়। একজন বিখ্যাত লেখক টিপস অ্যান্ড ট্রিকস দিতে গিয়ে বলেছিলেন গল্পের যে জায়গাটা বোরিং লাগছে সেই জায়গাটা স্পিড

খাটুশ্যামজীর ঠেলা

শনিবার সকালে উঠে মনে হয় ভালো কিছু করি। ভালো কিছু দেখি, শুনি, খাই। ভালো খাওয়ার সংজ্ঞা বাকি সমস্ত ভালো জিনিসের মতোই পরিবর্তনশীল। একদিন যা আমোর বিস্ত্রোর নিভুনিভু আলোয় পাঁচশো টাকার পাস্তা, অন্যদিন তা মাইসোর ক্যাফের ফ্যাটফেটে টিউবলাইটে খটখটে টেবিলচেয়ারে কুড়ি টাকার ফিল্টার কফি, দশ টাকার পানিয়ারম। গত তেসরা সকালে সেটা হয়ে গেল খাটুশ্যামজীর ঠেলার পুরিসবজি। মেলাগ্রাউন্ডের গেটের সামনে ঠেলা, ঠেলা ঘিরে দুইচার, দিনের সময় বুঝে চারপাঁচ কি আরও বেশি লোক, একহাত কোমরে রেখে অন্য হাতে সবজির ঝোলে চুবোনো পুরি তুলে মুখে পোরে। চিবোয়। উদাস মুখে মেলা গ্রাউন্ডের দিকে তাকিয়ে থাকে। খেলা হলে খেলা দেখে, না হলে ঘাসওঠা মাঠ। আকাশবাতাস। মুখচোখ দেখে সন্দেহ করার কারণ নেই যে গোটা ব্যাপারটা অখাদ্য লাগছে। আমারও লাগবে না জানি। লাগবেই বা কেন। খাওয়ার আগে রাঁধতে হবে না, খাওয়ার পরে বাসন মাজতে হবে না। আমোর আর মাইসোর ক্যাফের তুলনায় সবথেকে অ্যাডভান্টেজ - চুল না আঁচড়ে, চটি গলিয়ে চলে যাওয়া যাবে। এইটুকু তো রাস্তা, কে আর দেখবে। তবু খাটুশ্যামজীর ঠেলায় আমার যাওয়া হয় না। আরও কত ভালোলাগা গ্যারান্টি জায়গার মতোই। শনিবার যে হল তার ক্রেডিট