Posts

Showing posts from October, 2014

ছত্তিস গুণ ও তেঁতুলের চাটনি

Image
সেদিন আড্ডায় দেখা গেল ঘটনাচক্রে সবাই দম্পতি। রাজনীতি অর্থনীতির পর কথা গার্হস্থ্যনীতির দিকে ঘুরল। সংসার কীসে টেঁকে, কীসে ভাঙে। মন কীসে থাকে, কীসে উড়ু উড়ু হয়। আমরা সিনিকেরা মাথা নেড়ে বললাম, ‘মনের কথা কিছু বলা যায় না। এ ব্যাপারে তার সঙ্গে গেছোদাদার মিল আছে। সেকী, গেছো দাদাকে চেন না? তিনি ভয়ানক ইন্টারেস্টিং মানুষ। এই ধর আজ এক্ষুনি দিল্লিতে আমাদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে ল্যাম্ব বার্গার সাঁটাচ্ছেন, এই হয়তো তিব্বতে বসে লাইকেন চিবোচ্ছেন। মনের মতিগতিও ওই রকম। আজ দিব্যি এর গলা জড়িয়ে ধরে বসে আছে, কাল দেখলে ওর গলায় গিয়ে লটকে গেল। কোনও গ্যারান্টি নেই।’ এক দম্পতি মুচকি হেসে বলল, 'সে তোমাদের গ্যারান্টি না থাকতে পারে, আমাদের আছে। বিয়ের আগেই সব পরীক্ষাটরিক্ষা করিয়ে নিয়েছি। উই আর মেড ফর ইচ আদার। বত্তিস গুণ মিলা থা হামলোগো কা।' জানা গেল প্রতিটি মানুষের আটটি করে গুণ থাকে। বর্ণ, ভাষ্য, তারা, যোনি, মৈত্রী, গণ, ভকুত ও নদী। ওয়ার্ক, ডমিন্যান্স, মেন্টালিটি, ট্যালেন্ট, কমপ্যাটিবিলিটি, লাভ, হেলথ, আর একটা কী যেন ভুলে গেছি। বর্ণের ওয়েট এক, ভাষ্যের ওয়েট দুই ইত্যাদি করে নদীর ওয়েট হল আট, এই করে করে এগ

কুইজঃ ওপেনিং সিকোয়েন্স (উত্তর প্রকাশিত)

ছোটবেলায় আমি ভাবতাম সব সিনেমাই শুরু হয় বৃষ্টি দিয়ে। যে সিনেমাগুলো হয় না, সেগুলোর শুরুর দৃশ্যে হয় একটা রাস্তা থাকে, নয় একটা মোটরগাড়ি। সে মোটরগাড়িই হোক বা বৃষ্টি, সিনেমার শুরুতে এমন কিছু একটা থাকতে হবে যা দর্শককে ধরে মোক্ষম ঝাঁকুনি দেবে। বুঝিয়ে দেবে, এ সিনেমাকে হালকা চালে নেওয়া চলবে না, সিনেমা চলাকালীন পাশের লোকের সঙ্গে ফিসফিসিয়ে গল্প করা চলবে না, ক্যাচরম্যাচর করে পপকর্ন চিবোনো চলবে না, মোবাইলে কথা বলা তো দূর অস্ত। আমার প্রিয় কয়েকটি সিনেমার শুরুর দৃশ্যের বর্ণনা দিলাম আজকের কুইজে। দেখুন তো সিনেমাগুলোকে চিনতে পারেন কি না। পারলেন কি না সেটা বোঝা যাবে চব্বিশ ঘণ্টা পর। ততক্ষণ কমেন্টে পাহারা থাকবে। অল দ্য বেস্ট। ***** 1.    ১.    তুলসীতলার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক মহিলা। আটপৌরে শাড়ি, মাথায় ঘোমটা, এক হাত তুলসীগাছের গোড়ায়, অন্য হাত বাড়ানো হাতের কনুই ছুঁয়ে আছে। একটু পরে কপালে আঙুল ছুঁইয়ে, দু’হাত জড়ো করে নমো করে মাথা নিচু করে নমো করলেন মহিলা। পুজোর থালা হাতে তুলে নিয়েছেন, এমন সময় কী একটা চোখে পড়ল তাঁর। সচকিত হয়ে উঠলেন মহিলা। কে রে কে রে বলতে বলতে ছাদের রেলিং বরাবর হনহনিয়ে এগ

সাপ্তাহিকী

Image
শিল্পীঃ Vitaly Samartsev You don't have to burn books to destroy a culture. Just get people to stop reading them.                                                                              ---Ray Bradbury শুনেছি বিবেকানন্দ নাকি একবার তাকিয়েই একটা গোটা পাতা পড়ে ফেলতে পারতেন। শুধু পড়তেন না, সে পড়া মনেও রাখতে পারতেন। আপনার পড়ার স্পিড এবং হৃদয়ঙ্গমের ক্ষমতা জানতে চাইলে এইখানে ক্লিক করুন। অ্যাকিনেটর , ওয়েব-সর্বজ্ঞ। আপনি মনে মনে যাঁর নামই ভাবুন না কেন, অ্যাকিনেটর ধরে ফেলবে। অন্তত আমারগুলো ধরে ফেলেছে। অর্চিষ্মানের ভাবা একটা নাম অবশ্য পারেনি। আপনি মহানন্দে চিকেন জংলি স্যান্ডউইচ খাচ্ছেন, ঘুমোচ্ছেন, এদিকে আপনার প্লেনের গায়ে হয়তো একের পর এক বাজ পড়ছে, আপনি জানতেও পারছেন না। অবশ্য আপনি কি সত্যি জানতে চান? এয়ারপ্লেন নিয়ে কথাই হচ্ছে যখন এই লিংকটাও পড়ে দেখুন। এইটাও। আপনি কতক্ষণ শ্বাস না নিয়ে থাকতে পারেন? এই ভদ্রলোক বাইশ মিনিট থাকতে পারেন। এরা দাবি করছে এই যোগব্যায়ামগুলো করলে রাতে ভালো ঘুম হবে। মানুষ যে আর ক’দিন বাদে মহাকাশে বাড়ি বানাবে সে নিয়ে আমার অন

শুভ দীপাবলী

Image
এই মুহূর্তে যদি সবক’টা ফ্লাইওভার আকাশের গা থেকে খুলে নিয়ে যায় কেউ, যদি রাস্তার মাথায় মাথায় সবুজ বোর্ডে সাদা রং দিয়ে লেখা চিরাগ দিল্লি, আশ্রম, ধওলা কুঁয়া লেখা বিরাট বিরাট বোর্ডগুলো নামিয়ে নেওয়া হয়, যদি খোঁড়া রাস্তার ধারে মেট্রোর চিহ্ন আঁকা টিনের পাঁচিল আর একটাও না থাকে, যদি বুলেভার্ডে শুয়ে থাকা ভিখিরিদের ভিড় খালি হয়ে যায় – আর তারপর যদি বলা হয় এইবার, এইবার শুধু আকাশবাতাস গাছপালা দিগন্তের দিকে তাকিয়ে বল দেখি তুমি কোন শহরে আছ, তাহলে সত্যি বলছি আমি দিল্লিকে দিল্লি বলে চিনতে পারব না। এখন দিল্লির হাওয়ায় আর আগুনে ঝাপট নেই, গোড়ালি-ফাটানো শুকনো পাতা-ওড়ানো ধুলোর হাওয়া এখনও বইতে শুরু করেনি। গলির মুখে এখনও মাটিতে শিউলি ফুল ঝরে আছে, এক বাড়ির কাজ সেরে অন্য বাড়ি যাওয়ার পথে উবু হয়ে বসে সে ফুল ওড়নায় কুড়িয়ে নিচ্ছে রোগা মাসিদের দল। এখন দিল্লির প্রতিটি অটোভাইসাবের মেজাজ খুশ। এখন দিল্লির প্রতিটি সওয়ারির দিল দরাজ। এখন দিল্লিকে দেখে সত্যি সত্যি নবাববাদশার শহর মনে হচ্ছে। আর একটু বাদেই দিল্লির পথে পথে, বারান্দায় বারান্দায় যখন আলো জ্বলে উঠবে, তখন তাকে দেখে চোখ না ঝলসে যায়। আপনাদের সবার জ

পুরোনো অবান্তরঃ নামকরণের সার্থকতা

এবারের পুরোনো অবান্তরের মূল পোস্টটির সঙ্গে তার এই মাজাঘষা সংস্করণের মিল এতই কম যে দুটোকে এক বা একরকম বলে চালাতে আমার রীতিমত অসুবিধে হচ্ছে। কিন্তু আইডিয়াটি পুরোনো পোস্ট থেকে নেওয়া। দুয়েকটি ঘটনাও। কাজেই আমি এটাকে পুরোনো অবান্তর হিসেবেই পোস্ট করলাম। ***** আমাদের এক বন্ধু ছিল, সায়ন। ছিল মানে এখনও আছে, শুধু কাছের বদলে দূরে আছে, দিল্লির বদলে ব্যাঙ্গালোরে আছে। সায়নের মতো ভালো ছেলে আমি বেশি দেখিনি। শান্তশিষ্ট, হাসিখুশি, বুদ্ধিমান। আড্ডার তোড়ে ভেসে গিয়ে অনেকেই অনেক কিছু বলে বা করে, বেমক্কা ইয়ার্কি, আলটপকা মন্তব্য – সায়নকে কখনও দেখিনি সে সব করতে। সায়ন বাকি সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজা করত, কিন্তু কখনওই শিষ্টতা বা ঠিকের সীমা অতিক্রম করত না। এত গুণের ওপর সায়নের আরও একটা গুণ ছিল। অদ্ভুত স্মৃতিশক্তি। আড্ডায় ভাঁটা পড়ছে দেখলেই তার একটি বিশেষ নমুনা শোনার জন্য আমরা সায়নকে চেপে ধরতাম। দুয়েকবার গাঁইগুঁই করে হাল ছেড়ে সায়ন শুরু করত। “কালজয়ী নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ার একদা বলেছিলেন যে গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, সে সুন্দর। এ কথা সুগন্ধী কুসুমের ক্ষেত্রে সুপ্রযুক্ত হলেও সাহিত্যের

সাপ্তাহিকী

Image
আলোকচিত্রীঃ Akos Major A truth that's told with bad intent/  B eats all the lies you can invent.                                                      ---William Blake, Auguries of Innocence আপনি কি আমার মায়ের মতো, মিউজিয়ামের একদিক দিয়ে ঢুকে তিন মিনিটের মধ্যে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে আসেন? নাকি আমার বাবার মতো, প্রতিটি ছবির সামনে তাঁবু খাটিয়ে বসেন? টাইমস রোম্যান কেন টাইমস ইন্ডিয়ান নয়? জর্জিয়া কেন আটলান্টা নয়? আজকাল আর কেউ ভালো, সত্যবাদী, সাহসী হতে চায় না। সকলেই ‘পজিটিভ’ হতে চায়। বি পজিটিভ। তবে খেয়াল রাখবেন, পজিটিভিটি বেশি হয়ে গেলে সেটা আদতে নেগেটিভ হতে পারে। দেখুন তো মোমোকে খুঁজে পান কি না। কুকুরবেড়াল পোষায় আমার আগ্রহ নেই। একটা সিংহ পাই তো পুষি। ঘুমোন ঘুমোন। ভুলেও ঘুমে কার্পণ্য করবেন না। মনে রাখবেন। শীত পড়ছে। হাওয়ায় টান। সকলেই গায়ে মুখে পন্ডস মাখতে শুরু করেছেন নিশ্চয়। বোতলের গায়ে স্পষ্ট বড় বড় করে লেখা ‘ফর এক্সটারনাল ইউজ ওনলি’। আপনি অক্ষরে অক্ষরে সে কথা মেনে চলছেন। গায়ে মাখছেন, চামচে করে গলায় ঢালছেন না। নাকি ঢালছেন? দ্য ইন্টারপ্রেটার। ম

জামা মসজিদ/ করিমস

Image
রবিবার সকালে ঘুম ভেঙে টের পেলাম ঠাণ্ডায় সারা শরীরের রোমকূপ খাড়া, মুখের চামড়ায় টান, খোলা জানালার ধারে রেখে শোওয়া বোতলের জল প্রায় ফ্রিজের মতো ঠাণ্ডা। জানালার বাইরে তখনও ঘুরঘুটে অন্ধকার। মিনিট দশেক মটকা মেরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে উঠে বাথরুম গেলাম। দাঁতটাত মেজে জল খেতে খেতে দেখি বাইরের কালো একটু যেন ফিকে। দরজা খুলে বারান্দায় বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা হাওয়া জাপটে ধরল। এইবেলা চাদরমাদর বার করতে হবে। কোথায় যে আছে ভগবানই জানে। কাবার্ডে থাকলেই মঙ্গল। নাকি আগের বছর বেশি গোছাতে গিয়ে ডিভানের তলায় তুলে রেখেছি? বকেঝকে মনকে ডিভানের ভ্যাপসা গুমোট থেকে বার করে নিয়ে এলাম। কোথাও কোনও শব্দ নেই। একটা হালকা মিষ্টি গন্ধ ভাসছে হাওয়ায়। নিচে তাকিয়ে দেখলাম পাঁচিলের বাইরে গলা বাড়ানো শিউলি ডালের নিচে সাদাকমলা কার্পেট। আকাশের দিকে মুখ তুলে দেখলাম নীল আকাশে ফুটে রয়েছে ফ্যাকাশে চাঁদ। ঘরে এসে অর্চিষ্মানকে ঠ্যালা দিয়ে বললাম, ‘চল কোথাও যাই।’ অর্চিষ্মান ঘুম গলায় ‘সিনেম্‌....’ বলে সবে শুরু করতে যাবে আমি বললাম, ‘যাওয়ার জায়গা খোলামেলা হওয়া চাই, খাওয়াকেন্দ্রিক আউটিং চলবে না, একবেলার মধ্যে ফেরৎ আসতে হবে।’ শর্তের বহর শুনে